আইসফিল্ডস পার্কওয়ে, হলো একটি মহাসড়ক (যেটিকে মহাসড়ক ৯৩ নামেও ডাকা হয়) যা লুইস হ্রদ থেকে জ্যাসপার পর্যন্ত গেছে। এটি আলবার্টা রকি পর্বতমালার ভেতর দিয়ে কানাডা পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণ দিকের প্রধান রাস্তা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার দর্শনীয় ভ্রমণপথগুলোর মধ্যে এটিও একটি। ২৩২-কিলোমিটার[রূপান্তর: অজানা একক] লম্বা এই রাস্তা জ্যাসপার জাতীয় উদ্যান আর ব্যান্ফ জাতীয় উদ্যান এই দুই জাতীয় উদ্যানের মাঝ দিয়ে জ্যাসপার থেকে লুইস হ্রদ পর্যন্ত গেছে। পাহাড় দেখার এক দারুণ উপায় এই রাস্তা, আর ভ্রমণে এ একেবারেই “অবশ্যক”।

জানুন
[সম্পাদনা]
রাস্তা সারাবছর খোলা থাকে, তবে শীতকালে এখানে প্রচণ্ড তুষারপাত হয় এবং রাস্তার ধারে থাকা কোনো পর্যটন আকর্ষণই খোলা থাকে না বা ঘোরা সম্ভব হয় না। পেট্রল পাম্প, দোকান আর পর্যটন কেন্দ্র—সবই শীতকালে বন্ধ থাকে, তাই সেই সময় পার্কওয়েতে খাবার বা জ্বালানি পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আসলে, শীতের সময় আবহাওয়ার কারণে এই রাস্তা প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই ভ্রমণে যাওয়ার আগে অবশ্যই উদ্যান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাস্তার অবস্থা জেনে নিতে হবে এবং শীতের পরিবেশে ভ্রমণের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]এই পথ প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৮৪ সালে, আর পুরো রাস্তা তৈরি শেষ হয় ১৯৪০ সালে।
প্রাকৃতিক দৃশ্য
[সম্পাদনা]রাস্তা একটি ইউ-আকৃতির হিমবাহের উপত্যকার সমতলভূমি দিয়ে চলে, দক্ষিণ আর উত্তর প্রান্ত থেকে উঠে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছায়। উত্তর অংশে আথাবাস্কা আর সানওয়াপ্টা নদী উত্তরের দিকে বয়ে গেছে, দক্ষিণ অংশে বো নদী দক্ষিণ দিকে, আর মাঝের অংশে মিস্টায়া আর উত্তর সাসকাচেওয়ান নদীর উৎপত্তি হয়েছে, যেগুলো প্রথমে উত্তর, পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। রাস্তার দুইপাশে বেলেপাথর (আর কিছুটা চুনাপাথরেরও) পাহাড় উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে চমৎকার স্তরিত শিলা আর হিমবাহের গঠন দেখা যায়। পশ্চিম দিকের পাহাড়ের পর্বতশ্রেণি মহাদেশীয় বিভাজন রেখা তৈরি করেছে।
উদ্ভিদ ও প্রাণী
[সম্পাদনা]এলাকাটি মূলত উঁচু পাহাড়ি (আল্পাইন) আর তার নিচের অংশের উপ-পাহাড়ি (সাব-আল্পাইন) প্রকৃতির পরিবেশতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। এখানে কালো ভাল্লুক ও এল্ক (এক ধরনের হরিণ) দেখার সম্ভাবনা ভালোই থাকে, এছাড়াও পর্বতের ছাগল আর টাক ঈগলও (বোল্ড ঈগল) দেখা যেতে পারে।
প্রস্তুতি
[সম্পাদনা]জ্যাসপার, লুইস হ্রদ আর ব্যান্ফ–এই জায়গাগুলোতে জ্বালানি ভরার স্টেশন আছে। গ্রীষ্মকালে সাসকাচেওয়ান নদীর সংযোগস্থলে একটি স্টেশন চালু থাকে। এলাকায় ঢোকার আগে ট্যাঙ্ক ভরে নেওয়াই ভালো, কারণ এখানে জ্বালানির দাম অনেক বেশি। জ্যাসপার আর ক্যালগারিতে জ্বালানির দাম ক্যানমোর, লুইস হ্রদ আর ব্যান্ফের তুলনায় সস্তা।
প্রবেশমূল্য এবং অনুমতি
[সম্পাদনা]আপনি যেহেতু দুইটি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করবেন, তাই উদ্যানের প্রবেশমূল্য দিতে হবে এবং সেই টিকিট দেখাতে হবে। তবে উদ্যানে প্রবেশ করার পর আলাদা করে গাড়ি পার্কিং বা দর্শনীয় স্থানে ঢোকার কোনো প্রবেশমূল্য নেই (শুধুমাত্র ব্রুস্টার আকর্ষণীয় স্থানগুলো আর লুইস হ্রদ এর ব্যতিক্রম)। জ্যাসপারের ঠিক দক্ষিণে একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, যেখানে জাতীয় উদ্যানের অনুমতিপত্র কেনা ও পরীক্ষা করা হয়। দক্ষিণ দিক থেকে আসলে, যদি আপনি কানমোর-ব্যান্ফ প্রবেশপথে আগে থেকেই উদ্যানের অনুমতিপত্র না কিনে থাকেন, তবে ব্যান্ফ আর লুইস হ্রদের দর্শনার্থী কেন্দ্র থেকেও তা কিনতে পারবেন।
কানাডা উদ্যানের প্রবেশপত্রসমূহ
বার্ষিক প্রবেশপত্র আপনাকে কানাডার ৮০টিরও বেশি উদ্যানে (যেখানে প্রতিদিনের প্রবেশমূল্য দিতে হয়) পুরো এক বছরের জন্য সীমাহীন প্রবেশের সুযোগ দেয়। এটি ব্যবহার করলে দ্রুত প্রবেশ করা যায় এবং কেনার তারিখ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত এটি বৈধ থাকে।
২০২৪ সালের মূল্য (করসহ):
- পরিবার/দল (একটি গাড়িতে সর্বোচ্চ ৭ জন): ১৫১.২৫ ডলার
- শিশু ও কিশোর-কিশোরী (০–১৭ বছর): বিনামূল্যে
- প্রাপ্তবয়স্ক (১৮–৬৪ বছর): ৭৫.২৫ ডলার
- প্রবীণ (৬৫ বছর বা তার বেশি): ৬৪.৫০ ডলার
সাংস্কৃতিক প্রবেশপত্র: যারা গত এক বছরের মধ্যে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারা কিছু স্থানে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পেতে পারেন।
প্রবেশের উপায়
[সম্পাদনা]
আইসফিল্ডস পার্কওয়ে ব্যান্ফ থেকে পশ্চিমে মাত্র পঞ্চাশ মিনিটের পথ, ক্যালগারি থেকে মহাসড়ক ১ (যেটি ট্রান্স-কানাডা মহাসড়ক নামে পরিচিত) ধরে পশ্চিমে প্রায় আড়াই ঘণ্টার রাস্তা, আর এডমন্টন থেকে মহাসড়ক ১৬ (যেটি ইয়েলোহেড মহাসড়ক নামে পরিচিত) ধরে পশ্চিমে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ। দক্ষিণ দিক থেকে প্রবেশ করতে হলে মহাসড়ক ১–এর ৯৩ নম্বর নির্গমন পথ ধরতে হবে, যা লুইস হ্রদ নির্গমন পথের প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে। দিক-নির্দেশক ফলকে আইসফিল্ড কেন্দ্র আর জ্যাসপারের নাম লেখা থাকবে। উত্তর দিক থেকে প্রবেশ করতে চাইলে জ্যাসপার শহর থেকে পশ্চিম দিকে বের হয়ে মহাসড়ক ১৬ পার হয়ে দক্ষিণে নামতে হবে।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]পার্কওয়েটি প্রায় ২৩০ কিলোমিটার (১৪৩ মাইল) লম্বা এবং পুরোটা চালাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লাগে। তবে দৃশ্য উপভোগ করার জন্য যতটা সম্ভব সময় নেওয়াই ভালো। সবচেয়ে বেশি থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায় লুইস হ্রদ আর জ্যাসপার শহরে। পথে কিছু বিশ্রামাগার, ছাত্রাবাস এবং শিবির করার স্থানও রয়েছে। রাস্তা বেশিরভাগ জায়গায় একমুখী একটি করে পথ, তবে ধীরগতির গাড়ি ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য কিছু অংশে দ্বিমুখী পথ রয়েছে। গতি সীমা ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। রাস্তার মান মোটের ওপর ভালোই, যদিও কিছু কিছু জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। পথে অনেক জায়গায় থামার স্থান আর দিনের জন্য গাড়ি রাখার জায়গা আছে।
গাড়ি করে যেসব জায়গায় যেতে পারবেন
[সম্পাদনা]- 1 অ্যাথাবাস্কা জলপ্রপাত। অ্যাথাবাস্কা নদী একটি সংকীর্ণ খাঁড়ির মধ্য দিয়ে গর্জন করে বয়ে যায়, যেখানে খাঁড়ির প্রাচীরগুলো মসৃণ হয়ে গেছে এবং বালি ও পাথর বহনকারী প্রবাহমান জলের শক্তিতে গর্ত তৈরি হয়েছে। এখানে পার্কিং এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। পাকা পথ এবং পিকনিক করার স্থানও আছে। জলপ্রপাতের দৃশ্যের পাশ দিয়ে নদী খোদাই করা পথ ধরে হাঁটা যায়।
- 1 ছাগল দেখার স্থান (কেরকেসলিন পর্বত দর্শন–স্থলের পার্কিং এলাকার পাশে)। রাস্তার ধারে পাহাড়ি ছাগল দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।
- 1 সানওয়াপটা জলপ্রপাত রকি পর্বতের অতিথিশালা (আইসফিল্ডস পার্কওয়ে, জ্যাসপার ও কলম্বিয়া হিমবাহের মাঝামাঝি), ☏ +১ ৭৮০-৮৫২-৪৮৫২। এখানে থাকার ব্যবস্থা, রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন এবং উপহার সামগ্রীর দোকান আছে।
- 2 সানওয়াপটা জলপ্রপাত (অতিথিশালার মধ্যে প্রবেশ, প্রধান সড়ক থেকে ১ কিমি দূরে পার্কিং)। ছোট জলপ্রপাত হলেও দেখার যোগ্য। গাড়ি পার্কিং থেকে হাঁটা খুবই ছোট।
- 3 ট্যাঙ্গল জলপ্রপাত। দৃশ্য সুন্দর হলেও রাস্তার পাশে অবস্থিত।
- 4 কলম্বিয়া আইসফিল্ড। আইসফিল্ডস পার্কওয়ের প্রধান আকর্ষণ। বিশেষ বরফগাড়িতে (স্নোকোচ) চেপে সরাসরি হিমবাহের ওপর পৌঁছানো যায়, গাড়ি থেকে নেমে বরফের উপর দিয়ে হাঁটাও করা যায়। গ্রীষ্মকালে প্রশিক্ষিত পথপ্রদর্শকের সঙ্গে ৩–৫ ঘণ্টার হাঁটার ব্যবস্থা থাকে, তবে তখনই সম্ভব যখন হিমবাহে বরফের আবরণ না থাকে। মৌসুমের শুরুতে হিমবাহ প্রায় সাদা তুষারের চাদর থাকে, নিচের বিপজ্জনক ফাটলগুলো দেখা যায় না। চাইলে গাড়ি পার্ক করে হিমবাহের গোড়া পর্যন্ত খাড়া পথ দিয়ে হাঁটাও করা যায় (নির্দিষ্ট পথ ধরে যেতে হবে ফাটলের কারণে)।
- 5 বড় বাঁক। রাস্তার বড় বাঁক, ঢালু অংশের দক্ষিণে। ওপরে–নিচে থামার স্থান আছে এবং দৃশ্য দেখার সুযোগ আছে।
- 6 কান্নার প্রাচীর। প্রায় উল্লম্ব পাহাড়ের দেয়াল বরাবর জল নেমে আসে।
- 2 দি ক্রসিং রিসোর্ট (সাসকাচেভান রিভার ক্রসিং), ☏ +১ ৪০৩-৭৬১-৭০০০।
এপ্রিল থেকে অক্টোবর। রাত যাপনের জন্য থাকার ব্যবস্থা, সাধারণ খাবারের ক্যাফে, রেস্তোরা আছে। ছোট খাট জিনিসপত্রের দোকান এবং জ্বালানি নেওয়ার স্টেশনও আছে। - 7 পেইটো হ্রদ। আইসফিল্ডস পার্কওয়ের এক চমৎকার স্থান, লুইস হ্রদ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিমি উত্তরে। দর্শনীয় স্থান পার্কওয়ের পাশেই, ফলক দিয়ে নির্দেশ দেওয়া আছে। সামান্য উঁচুতে উঠলেই চোখে পড়ে এক অসাধারণ দৃশ্য। উপত্যকা ও পাহাড়ে ঘেরা হ্রদটি পেইটো হিমবাহ থেকে জল পায়, যার কারণে গ্রীষ্মকালে খনিজ পদার্থের কারণে পানির রঙ অপূর্ব নীলচে হয়।
- 2 বো হ্রদের ধারের অতিথিশালা। এখানে থাকার ব্যবস্থা, খাবারঘর, কফিশপ এবং সুভেনির দোকান রয়েছে।
- 1 ক্রোফুট হিমবাহ ও বো হিমবাহের দর্শনীয় স্থান।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]
এ অঞ্চলটি ভালুকের আবাসস্থল; যদি কোনো ভালুক দেখেন, গাড়ির ভিতরে থাকুন।
রাস্তার পাশে অন্যান্য প্রাণীর দিকে নজর রাখাও জরুরি, যেমন হরিণ বা মূস। মাঝে মাঝে কিছু উন্মাদ সাইকেল আরোহীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে যারা একই পথে ভ্রমণ করছে।
পথের মধ্যে কোনো বড় চিকিৎসা কেন্দ্র নেই, তবে লুইস হ্রদ এবং জ্যাসপারে ছোট হাসপাতাল রয়েছে।
সানওয়াপটা আবাস্থলে, কলাম্বিয়া আইসফিল্ড সেন্টার, স্যাসকাচেওয়ান ক্রসিং এবং নাম-টি-জাহ আবাস্থলে শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে । এছাড়াও, দিনের পার্কিং এলাকাগুলো এবং প্রধান দর্শনীয় স্থানে ছোট ছোট শৌচাগার আছে, যা সাধারণত ভালো ভাবে পরিস্কার রাখা হয়।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]- যদি একটু দুর্গম রাস্তায় ভ্রমণ করতে চান, তাহলে স্প্রে লেকস রোড/স্মিথ-ডরিয়েছা মহাসড়ক দিয়ে কানানাসকিস কাউন্টির মধ্য দিয়ে যান।
- পার্কওয়ের বিকল্পর পথ হলো ৯৩এ রাস্তা, যা জ্যাসপার এবং অ্যাথাবাস্কা জলপ্রপাতের মধ্যে রয়েছে। এটি একটি সংকীর্ণ এবং খাঁজযুক্ত রাস্তা, যেখানে গাড়ির গতি সীমা কম, তবে এখানে আপনি কালো ভালুক এবং গ্রেট নর্দার্ন লুনের মতো বন্যপ্রাণী দেখার ভালো সুযোগ পাবেন।
{{#assessment:ভ্রমণপথ|ব্যবহারযোগ্য}}

