চীনে গোল্ডেন উইক ছুটিগুলি জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে এবং অক্টোবরের শুরুতে পড়ে।
বোঝা
[সম্পাদনা]- এই প্রবন্ধে ব্যবহারিক তথ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক বর্ণনার জন্য দেখুন চীনা নববর্ষ।
গোল্ডেন উইক ছুটিগুলি ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় সময়। উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি খরচ থাকা সত্ত্বেও ট্রেন, বিমান এবং হোটেল প্রায়শই পুরোপুরি বুক হয়ে যায়। ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয় স্থানগুলি গোল্ডেন উইকের সময় আরও বেশি ভিড় হবে।
চীন গণপ্রজাতন্ত্রী প্রতি বছর দুটি গোল্ডেন উইক পালন করে:
- চীনা নববর্ষ গোল্ডেন উইক জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল্ডেন উইক। যেখানে শত শত মিলিয়ন মানুষ পরিবারে সময় কাটাতে নিজ শহরে ফিরে যায়। আরও অনেকে পর্যটক হিসেবে ভ্রমণে যায়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ষিক মানব অভিবাসন। অনেক মানুষের গোল্ডেন উইকের বাইরে অতিরিক্ত ছুটি থাকে।যার মানে ভ্রমণের মৌসুম প্রায় ৪০ দিন ধরে চলে—চীনা নববর্ষের ১৫ দিন আগে থেকে ২৫ দিন পরে পর্যন্ত। এই ৪০ দিনে পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত ভিড়াক্রান্ত হয় এবং টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি অনেক আগেই বুক করলেও দেখা যায় ট্রেনের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সত্য, যদিও বিমানের ক্ষেত্রে প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম।
- ২০২২ নববর্ষ: ফেব্রুয়ারি ১; ছুটি: জানুয়ারি ৩১ – ফেব্রুয়ারি ৬; ভ্রমণ মৌসুম: জানুয়ারি ১৭ – ফেব্রুয়ারি ২৫
- ২০২৩ নববর্ষ: জানুয়ারি ২২
- ২০২৪ নববর্ষ: ফেব্রুয়ারি ১০
- জাতীয় দিবস গোল্ডেন উইক প্রতি বছর ১ অক্টোবর শুরু হয়, এবং ৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলে (কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির ওপর নির্ভর করে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত)। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এই সময় প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ ভ্রমণ করে — যা চীনের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক! (এখানে কিছু দ্বিগুণ গণনা রয়েছে, কারণ একজন ব্যক্তি দুটি ভ্রমণ করতে পারে।)
প্রতিটি গোল্ডেন উইকের জন্য, দেশটি তিন দিনের বেতনের জাতীয় ছুটি পালন করে। আশেপাশের সাপ্তাহিক ছুটি পুনর্বিন্যাস করা হয় যাতে কর্মীরা টানা সাত দিন ছুটি পান। বিদ্যালয় ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ছুটি দিতে পারে। অধিকাংশ কর্মজীবী চীনা মানুষের জন্য এগুলোই ভ্রমণের প্রধান এবং কখনো কখনো একমাত্র সুযোগ।
চীন তার পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ মোকাবিলা করার জন্য পদক্ষেপ নেয়।যেমন অতিরিক্ত ট্রেন পরিষেবা চালু করা এবং টোল স্থগিত রাখা। বড় শহরগুলিকে সংযোগকারী মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানবাহনের সারি আশা করুন এবং পেট্রোল পাম্পেও ভিড় হবে। বাসযাত্রার সময় তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ে যায়।মহাসড়কের জটের কারণে কিছু যাত্রা বাতিল হতে পারে। একইভাবে, জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলোতে ভিড় হবে এবং রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলো অত্যন্ত ব্যস্ত থাকবে।
ভ্রমণ পরামর্শ
[সম্পাদনা]সম্ভব হলে, গোল্ডেন উইকের সময় চীনে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে ভ্রমণকে সহজ করার জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো বিবেচনা করুন:
- আগে থেকেই সংরক্ষণ করুন। এর মধ্যে সংরক্ষিত ট্রেনের আসন, বিমানের টিকিট, হোটেল এবং ভ্রমণ সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত।
- অতিরিক্ত ভ্রমণ সময় রাখুন। দীর্ঘ লাইন বা বিলম্বের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই ভ্রমণের জন্য অতিরিক্ত সময় হাতে রাখুন।
- স্থানীয় জিনিস উপভোগ করুন। ভিড় এড়ানোর একটি উপায় হলো মহাসড়ক, গণপরিবহন এবং পর্যটন আকর্ষণ থেকে বিরত থাকা। এর পরিবর্তে, আপনার থাকার জায়গার আশেপাশের হাঁটা দূরত্বের মধ্যে কার্যক্রম পরিকল্পনা করুন।
প্রবাসী
[সম্পাদনা]প্রবাসীরাও চীনের অন্যদের মতো একই গোল্ডেন উইক সমস্যার সম্মুখীন হন।টানা কয়েকদিনের ছুটি একটি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়।কিন্তু যখন পুরো দেশ ছুটি নিচ্ছে তখন পরিবহন ও আকর্ষণগুলো ভয়ানক ভিড়াক্রান্ত হয়ে ওঠে।
জাতীয় দিবসের সময় চীনের মহাপ্রাচীর বা নিষিদ্ধ নগরীতে যাওয়ার কথা ভুলে যান। যেকোনো বিখ্যাত আকর্ষণীয় স্থান অসহনীয় ভিড়ে ভরে উঠবে। এমনকি স্থানীয় পার্কও যথেষ্ট ভিড় হতে পারে। আদর্শভাবে, ছুটি সরিয়ে নিয়ে ছুটির আগে বা পরে ভ্রমণের চেষ্টা করুন। বেসরকারি শিক্ষা খাতে এটি কখনো কখনো সম্ভব – আপনার নিয়োগকর্তাকে জিজ্ঞাসা করুন।
চীনা নববর্ষের সময়, পরিস্থিতি আরও জটিল। ছুটির মৌসুম আসলে এক সপ্তাহের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলে।যা কিছুটা ভিড় ছড়িয়ে দেয়, কিন্তু অনেক বেশি যাতায়াতও হয়। ট্রেনের টিকিট প্রকাশের সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায়। বিমানের টিকিট তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যায় তবে দাম বেড়ে যায়। (তবে মনে রাখবেন বেশিরভাগ মানুষ বড় শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে এবং পরে ফিরে আসছে—যদি আপনি বিপরীত দিকে যান, তবে টিকিট পাওয়া সহজ হবে।) বিখ্যাত আকর্ষণীয় স্থানগুলো তখনও ভিড়াক্রান্ত হবে। তবে জাতীয় দিবসের তুলনায় কিছুটা কম। কারণ বেশিরভাগ মানুষ পরিবারে ফিরছে। এদিকে, বড় অভিবাসী শহরগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে যাবে—যা ভালো মনে হতে পারে যদি ভিড় পছন্দ না করেন। কিন্তু সমস্যা হলো প্রায় সবকিছুই বন্ধ থাকবে। এমনকি মুদি দোকানগুলোও বন্ধ থাকবে বা সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিকল্প হলো যদি আপনার কোনো ঘনিষ্ঠ চীনা বন্ধু থাকে সেক্ষেত্রে তার নিজ শহরে গিয়ে তাদের পরিবারের সাথে নববর্ষ পালন করা—হ্যাঁ, পথে ভয়ানক ভিড়ের মুখোমুখি হতে হবে। তবে এর বিনিময়ে আপনি চীনা উৎসব ও পারিবারিক জীবনের একটি অনন্য ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা পাবেন।
অনেক প্রবাসীর জন্য, গোল্ডেন উইকের সময় ভ্রমণের সেরা উপায় হলো অন্য দেশে বেড়াতে যাওয়া। নিজ দেশে ফিরে যান, অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো স্থানে যান। চীন থেকে বের হওয়ার বিমানের ভাড়া এই ছুটিগুলোর সময় বেশি হবে। বিশেষ করে জাতীয় দিবসে, তাই আগে থেকেই বুক করুন। গন্তব্য বাছাইয়ে সতর্ক থাকুন: ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং তাইওয়ানও চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন করে (কিন্তু জাতীয় দিবস নয়), তাই সেখানেও অনেক আকর্ষণ বন্ধ থাকতে পারে। অন্য নিকটবর্তী দেশগুলোতেও চীনা পর্যটকের ভিড় হতে পারে; নিচে দেখুন।
অন্য দেশ
[সম্পাদনা]চীনের কাছাকাছি দেশগুলোও এই সময় পর্যটকের ভিড়ে ভরে যায়। কারণ চীনের প্রবাসী ও সচ্ছল নাগরিকরা ছুটির সুযোগ নিয়ে ভ্রমণে বের হয়। হংকং এবং মাকাউ মূল ভূখণ্ড চীনের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য। চীনের মানুষ প্রায়ই থাইল্যান্ড বা জাপান ভ্রমণে যায়।
চীনের বাইরে, যেখানে বড় জাতিগত চীনা জনসংখ্যা রয়েছে।সেসব দেশেও চীনা নববর্ষ উদযাপিত হয়। যার মধ্যে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশে কিছু ব্যবসা বন্ধ থাকবে এবং ভ্রমণ ব্যস্ততাপূর্ণ হতে পারে। যদিও ব্যাঘাত চীনের মতো এতটা মারাত্মক হবে না।