তাজারা রেলওয়ে আফ্রিকার সবচেয়ে অসাধারণ রেলযাত্রা। হ্যাঁ, এর দুটি গন্তব্য রয়েছে – একটি [[কাপিরি ম্পোশি] নামের শহর জাম্বিয়া দেশে এবং আরেকটি দার এস সালাম নামের শহর তাঞ্জানিয়া দেশে – অথবা এর মাঝখানের কোনো জায়গা। শেষ পর্যন্ত আপনি সেখানেই পৌঁছাবেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোটাই আসল উদ্দেশ্য নয়। তাজারায় চড়া মানে তাজারার অদ্ভুত অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করা। আর এই যাত্রায় আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী আর অদ্ভুত সুন্দর অনেক জায়গার ভেতর দিয়ে যাবেন।
জানুন
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ শতকের শেষ দিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরে একটি রেলপথ নির্মাণের আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, মূলত ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে। তবে কার্যত তেমন কিছু করা হয়নি, যতক্ষণ না ১৯৬১ সালে জুলিয়াস নিয়েরারে নেতৃত্বে তাঞ্জানিয়া স্বাধীন হয় এবং ১৯৬৪ সালে কেনেথ কাউন্ডার নেতৃত্বে জাম্বিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ধারণা করা হয়েছিল, একটি রেলপথ দক্ষিণ-পশ্চিম তাঞ্জানিয়া ও উত্তর-পূর্ব জাম্বিয়ার কৃষিভিত্তিক অঞ্চলের উন্নয়নে সহায়ক হবে। তখনকার দিনে চীন এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল, এই প্রকল্পে জড়িত হয় এবং অর্থ ও কর্মী সরবরাহ করে। রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭০ সালে। কাজটির মধ্যে ছিল ৩,৩০,০০০ টন রেললাইন বসানো, ৮ কোটি ৯০ লক্ষ ঘনমিটার মাটি ও পাথর সরানো, ৯৩টি স্টেশন, ৩২০টি সেতু, ২২টি সুড়ঙ্গ এবং ২,২২৫টি ড্রেন নির্মাণ। প্রায় সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, এমনকি বিপুল পরিমাণ খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামও চীন থেকে আনা হয়েছিল। অবশেষে ২৪ অক্টোবর, ১৯৭৫ সালে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন দার এস সালামে পৌঁছায়।
কামরাগুলো বেশ পুরনো – আর এজন্যই অনেক মজার। কিছু অংশে অনেক আরামদায়ক... বিছানাগুলো স্পঞ্জের মত নরম... জানালা নামিয়ে মাথা বের করে আপনার মতো করে যা করতে চান করুন। এটাই তাজারার মায়াবী আকর্ষণের একটা বড় অংশ। যাত্রীর সাথেই থাকা ট্রেন কর্মকর্তা সারাক্ষণ অপরূপ মেজাজে থাকেন, তিনি সিগারেট চাওয়ার কথাও বলতে পারেন যেমন টিকিট পরীক্ষা করতেও পারেন। কিন্তু সতর্ক থাকুন, হয়তো এই অবস্থা অনেকদিন থাকবে না। চীন আবারও এই অঞ্চলে আগ্রহ দেখাচ্ছে, আর ২০২৩ সালের হিসেবে রেললাইন উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আপনি যেখানেই যেতে চান সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি এবং এক্সপ্রেস পরিষেবার কথা ভাবুন - অনেকটা কেনিয়ার "লুনাটিক এক্সপ্রেস"ের মৃত্যুর মতো। স্থানীয়দের জন্য ভালো হতে পারে; পর্যটকদের জন্য খুব মজার নাও হতে পারে। তাই, যতদিন পারেন তাতে উপভোগ করুন। এখনো পর্যন্ত তাজারা রেলওয়েই আফ্রিকার দীর্ঘ পথের সেরা ট্রেন যাত্রা হিসেবেই রয়ে গেছে।
প্রস্তুতি
[সম্পাদনা]
ট্রেন যথাযথ সময়েই ছাড়বে। টিকিট ও সঠিক সময়েই বিক্রি হবে। এটা আফ্রিকা। যদি ট্রেন স্টেশনের লাইনে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে না চান, তাহলে আপনার হোটেলে জানিয়ে দিন যে আপনি টিকিট চাইছেন। বেশির ভাগ সময় তারা কাউকে দিয়ে টিকিট আনা-নেয়ার জন্য পাঠিয়ে দেবে। বড় কোনো ভ্রমণ পরিকল্পনা (সাফারি ইত্যাদি) ট্রেন পৌঁছানোর সময় করবেন না। ট্রেনের একটি সময়সূচী আছে, অবশ্যই আছে, তবে এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আফ্রিকান ট্রেন ধীর গতিতে চলে... এটাই উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
সরঞ্জাম কিনে রাখুন। খাবার, ট্রেনে এবং রাস্তার ধারে বিক্রেতাদের কাছে পাওয়া যায়, তবে উপকূল থেকে দূরে দক্ষিণ আফ্রিকার খাবার একদম ভালো না। অনেক উগালি খেতে হবে ভেবেই নিতে হবে। আসলে শুধু উগালি এই খাবেন ভাববেন আর যদি কখনো ডাল বা শিম (বিনস) পান তাহলে ভাগ্যবান মনে করবেন। মূল কথা হল, নিজের জন্য খাবার নিয়ে নেবেন। (এবং পানি-ও নেবেন... কারণ যাত্রা অনেক দীর্ঘ)
যদি আপনি দার থেকে আসছেন, তাহলে শহরের দক্ষিণে বড় একটি "ইউএসএ স্টোর" আছে, যেখানে পশ্চিমী ধরনের প্রায় সব সরঞ্জাম পেতে পারেন, অথবা অন্তত দেখতে পশ্চিমী, বড় বড় আমেরিকান পতাকার সঙ্গে চিহ্নিত ভেজাল জিনিসপত্র পাবেন। আর যদি জাম্বিয়া থেকে আসেন, তাহলে কাপিরি ম্পোশিতে প্রায় কিছুই নেই, তাই আপনাকে লুসাকায় আগে থেকেই কিনে রাখতে হবে।
প্রবেশ করুন
[সম্পাদনা]তাজারা ট্রেন যাত্রার একটা সহজ উপায় আর একটা কঠিন উপায় আছে। সহজ উপায় হলো: একটি পুরো কেবিন কিনে নেওয়া – আসলেই, পুরো কেবিন। তারপর আপনি ১) বিশ্বাসযোগ্য যাত্রীদের কাছে আপনার বিছানা গুলো বিক্রি করতে পারেন এবং ২) আপনার কেবিনের ভালোভাবে রক্ষা করতে পারেন। আর কঠিন উপায় হলো: একটি নির্দিষ্ট আসন বা বিছানা সংরক্ষন করা। যদি আপনি দ্বিতীয় উপায় বেছে নেন, তবে দাদিমার পুরনো ঐতিহ্যবাহী মূল্যবান জিনিস আনবেন না। এটা খুব বড় কোনো বিষয় নয়, তবে যদি আপনার ত্বকের রঙ আফ্রিকান না হয় বা আপনার কথা বলার স্বর আফ্রিকান না হয়, তাহলে চুরি খুবই স্বাভাবিক এবং লোকেরা আপনাকে লক্ষ্য করবে।
যাত্রা শুরু
[সম্পাদনা]
আরাম করে বসুন এবং উপভোগ করুন। সাভানার প্রাকৃতিক ধ্বনি শুনুন। রাত্রে হাতির ডাক শুনতে পাবেন। দুঃখজনক হলেও ট্রেন মাঝে মাঝে হাতির সঙ্গে সংঘর্ষ করে, যার ফলে কয়েক ঘণ্টার বিলম্ব হতে পারে। তবে তাজারায় আপনি পুরো পৃথিবী নিজের মনে করবেন। আপনি প্রায় যাই ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। জানালা নামিয়ে তাজা বাতাস নিন। এমন অনেক গ্রাম ঘুরে যাবেন যা অবিশ্বাস্যভাবে দূরবর্তী। মাটির কুঁড়েঘর দেখতে পাবেন পাশ থেকে। যেখানে থামবেন, সেখান থেকে কলা বা অন্য কিছু কিনে নিতে পারেন। অনেক সময় এমন জিনিস যা শুধুমাত্র উপকূলীয় এলাকায় দেখা যায়, যেমন বোতল, গ্রামীন শিশুরা খুব পছন্দ করে; যদি আপনার কাছে খালি কাঁচের বোতল (মদ বা অন্য যেকোনো) থাকে, সেগুলো দিয়ে দিতে পারেন। আপনার যাত্রা তিন দিন বা পাঁচ দিন পর্যন্ত হতে পারে – তাজারায় কখনো সঠিক তথ্য জানাই যায় না – কিন্তু এতে বিব্রত হবেন না। এই অভিজ্ঞতাটি উপভোগ করুন। খুব কম পর্যটকই এসব দেখতে পায়।
ট্রেন যখনই কাপিরি ম্পোশি বা দার এস সালামে পৌঁছাবে, আপনাকে সেখানে ওঠানামার সময় কোনো সম্প্রীতি বা ভদ্রতার ছাড় না দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হবে, সেটা হোক দুপুরের ৩টা বা ভোর ৩টা। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে ভোরের দিকে ট্রেন থেকে নামতে হয়, আপনি দেখতে পাবেন স্থানীয়রা রেলস্টেশনেই ঘুমাতে থাকা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা আপনি কীভাবে করবেন তা আপনার নিজের ব্যাপার। যদি আপনি আগে থেকেই কোনো হোটেলে ফোন করে রাখেন, তবে হয়তো কেউ আপনাকে সেখানে পৌঁছে দিতে আসতে পারে। যাই হোক, এটাই তাজারার মজা। রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে দেখে নিন কোথাও হোটেলে যাওয়ার জন্য ভাড়া পাওয়া যায় কিনা। দুটো প্রান্তের মানুষই খুব সদয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ, আর সম্ভবত আপনি একটু বেশি ভাড়া দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি নিয়ে যাবেন, যা পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বাভাবিকই হবে।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]আপনি শারীরিকভাবে নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু যদি আপনি বিদেশী হন, তাহলে ১০০% সম্ভাবনা আছে যে আপনি চুরির লক্ষ্যে পরবেন। যদি আপনি যৌথ ভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছেন আর আপনার কিছু মূল্যবান জিনিস থাকে, তবে একা থাকলে সবসময় আপনার জিনিসপত্রের কাছে থাকতে হবে, বা কারো সাথে বন্ধুত্ব করে সেখানে নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি আপনি নিজের জন্য একটি ব্যক্তিগত কামরা সংরক্ষন করে থাকেন, তাহলে "এই বিছানা খালি আছে?" এই ঠকবাজি পেলে বিশ্বাস করবেন না। না, সেটা কখনো খালি থাকে না। শৌচাগারে খুব বেশি সময় কাটাবেন না (আপনি সম্ভবত খুব বেশি যেতে চাইবেন না, যদিও রেল লাইনের ভালো দৃশ্য পাবেন)। এখানে ব্যাপক দেহ ব্যবসাও আছে, বিশেষ করে যদি আপনি একজন বিদেশী পুরুষ হন, কিন্তু এ নিয়ে আপনি আপনার মতো বিচার করে চলে যাবেন। সাধারণত দেহ ব্যবসায়ীরা চুরি করার ছক কষে না, তারা কেবল দয়া করে তাদের কাজ করে, তবে যত্নবান থাকা উচিত।
পরবর্তী ভ্রমণ
[সম্পাদনা]- জাঞ্জিবার যদি আপনি দার এস সালাম শহরে পৌঁছান
- লুসাকা এবং লিভিংস্টোন যদি আপনি জাম্বিয়ায় যান
{{#assessment:ভ্রমণপথ|রূপরেখা}}