বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে
এশিয়া ও ওশেনিয়ার রান্না
অস্ট্রেলীয়বার্মিজকম্বোডীয়চীনাফিলিপিনোইন্দোনেশিয়ানজাপানিকোরিয়ানমালয়েশিয়ান, সিঙ্গাপুরিয়ান এবং ব্রুনেইয়ানমধ্যপ্রাচ্যেরদক্ষিণ এশিয়ারথাইভিয়েতনামী

বার্মিজ রন্ধনশৈলী হলো মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত খাদ্য রন্ধন ও পরিবেশনের শৈলী। এই শৈলী মিয়ানমারের ইতিহাস, জাতিগত এবং জলবায়ু বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। প্রতিবেশী দেশ চীন, ভারত এবং থাইল্যান্ডের রন্ধনশৈলীর তুলনায় বার্মিজ রন্ধনশৈলী কম পরিচিত। বার্মিজ রন্ধনশৈলী মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে তার অনেক বৈশিষ্ট্য ভাগ করে নেয়। স্থানীয় সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর অবদানে মিয়ানমারের রন্ধনশৈলী সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। বার্মিজ রন্ধনশৈলীতে তৈরি খাবারে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। মিয়ানমারের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, বার্মিজ রন্ধনপ্রণালীতে চীনা রান্না, ভারতীয় রান্না এবং থাই রান্নার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

জানুন

[সম্পাদনা]

উপকরণ

[সম্পাদনা]
ঘরে তেঁতুলের তৈরি নগাপি
  • ভাত হলো বার্মিজ রন্ধনশৈলীর প্রধান উপকরণ এবং প্রতিটি খাবারের মূল অংশ। পাও সান হ্মওয়ে বা "মুক্তো চাল" হলো ইরাবতী বদ্বীপ অঞ্চলে চাষ করা সুগন্ধি ধানের একটি মূল্যবান জাত। এর থেকে তৈরি চালের ভাত নরম, তুলতুলে এবং সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত।
  • নগাপি হলো ঐতিহ্যবাহী গাঁজানো মাছ বা চিংড়ির লেই, যা মায়ানমারের দক্ষিণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের রন্ধনশৈলীর একটি প্রধান উপাদান। এটি স্যুপ এবং তরকারির মতো খাবারের মশলা এবং সংযোজনকারী উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। ইরাবতী বদ্বীপ অঞ্চলের তৈরি নগাপিতে আঞ্চলিক রন্ধনশৈলীর বৈচিত্র্য রয়েছে। এখানে এটি স্বাদু জলের মাছ এবং বেশি পরিমাণে লবণ দিয়ে তৈরি করা হয়। অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যে তৈরি নগাপিতে সামুদ্রিক মাছ এবং সামান্য লবণ ব্যবহার করা হয়।
  • মেরিয়ান প্লাম হলো মিয়ানমারের একটি রসালো ফল। এর স্বাদ পার্সিমন, আম এবং এপ্রিকটের মিশ্রণের মতো।

খাবার

[সম্পাদনা]
ভাজা দিয়ে পরিবেশিত মোহিঙ্গা
লাহপেট থোকের একটি পরিবেশন।
খো সুই
  • মোহিঙ্গা হলো ভাতের নুডলস দিয়ে তৈরি একটি মাছের স্যুপ, যা সাধারণত সকালের নাস্তায় পরিবেশন করা হয়। লেমনগ্রাস, রসুন এবং মাছের সস দিয়ে এর স্বাদ সমৃদ্ধ করা হয়। এটি প্রায়শই ডিম, ধনেপাতা ইত্যাদি দিয়ে রান্না করা হয়। মোহিঙ্গা মিয়ানমারের জাতীয় খাবার। এটি দেশের বেশিরভাগ অংশে সহজেই পাওয়া যায়। এটি নদীর ক্যাটফিশ দিয়ে তৈরি করা হয়। মিয়ানমামার জুড়ে বিভিন্ন ধরণের মোহিঙ্গা রয়েছে যা উপকরণের প্রাপ্যতা এবং রান্নার পছন্দের উপর নির্ভর করে। এই রকম কয়েকটি হলো:বোগালে মোহিঙ্গা, মায়াউংমিয়া মোহিঙ্গা, পাইপন মোহিঙ্গা, পাথেইন মোহিঙ্গা, রেঙ্গুন মোহিঙ্গা, হিনথাডা মোহিঙ্গা, মাদাউক মোহিঙ্গা, দাওয়েই মোহিঙ্গা, কাইন মোহিঙ্গা প্রভৃতি। মায়াউংমিয়া মোহিঙ্গা তিন ধরণের মাছ দিয়ে রান্না করা হয়, যেমন ব্যান্ডেড স্নেকহেড, ওয়াকিং ক্যাটফিশ এবং হ্যামিল্টন'স কার্প। আবার রেঙ্গুন মোহিঙ্গা রন্ধনশৈলীতে বাদামের ঝোলের সঙ্গে থাকে ক্যাটফিশ। অন্য দিকে হিনথাডা মোহিঙ্গায় ক্যাটফিশের পরিবর্তে ইলিশ দিয়ে রান্না করা হয়।
  • লাহপেট থোক হলো আচারযুক্ত চা পাতার সালাদ। মিয়ানমারের কয়েকটি রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্যের মধ্যে এটি একটি যেখানে চা পাতা খাওয়া হয়। কেবল পানীয়তে মিশ্রিত করা হয় না। লাহপেট থোক তৈরি করতে, আচারযুক্ত চা পাতার সঙ্গে মটর, ভাজা তিল, চিনাবাদাম, শুকনো চিংড়ি, টমেটো, বাঁধাকপি, তেল, মাছের সস এবং লেবুর রস সাথে মিশ্রিত করা হয়। গৃহস্থ অতিথিদের লাহপেট দেওয়া বার্মিজ সংস্কৃতিতে আতিথেয়তার প্রতীক।
  • খো সুই বা খাও সোই বা খাও সোয় হলো একটি ডিমের নুডলস স্যুপ যার মধ্যে নারকেলের দুধ, সুগন্ধি ভেষজ এবং মশলা মেশানো থাকে। স্যুপ পরিবেশনের সময় উপরে মাংস, টোফু, ভাজা রসুন, ধনে পাতা এবং পেঁয়াজ কুচি দেওয়া হয়। খাও সোই এর বেশ কয়েকটি সাধারণ সংস্করণও রয়েছে। সেগুলি হলো: লাও খাও সোই, নর্দার্ন থাই খাও সোই বা খাও সোই ইসলাম এবং শান খাও সোই।

পানীয়

[সম্পাদনা]

বর্মীদের প্রিয় পানীয় সবুজ চা।

সম্মান

[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যগতভাবে বর্মীরা বাঁশের মাদুরে বসে নিচু টেবিল থেকে খাদ্যগ্রহণ করে। একসাথে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বাড়িতে খাওয়ার সময়, খাবারের সাথে পান না করার রীতি আছে। খাবারের সাথে হালকা স্যুপের ঝোল হল স্বাভাবিক তরল খাবার।

খাবার পরিবেশন করার সময় প্রবীণদের সর্বদা প্রথমে পরিবেশন করা হয়। যখন কোনও প্রবীণ উপস্থিত থাকেন না তখন একটি রীতি হলো উ চা (প্রথমে পরিবেশন)। সেই রীতি অনুসারে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে তাদের নামে একটি পাত্রে ভাত আলাদা করে রাখা হয়।

কাঁটাচামচ এবং চামচের মতো কাটলারির ব্যবহার এখন অনেক সাধারণ হয়ে উঠেছে কিন্তু অনেকেই এখনও হাত দিয়ে খান। হাত দিয়ে খাবার সময় ডান হাতের শুধুমাত্র পাঁচটি আঙুল ব্যবহার করা হয় (অর্থাৎ আপনার হাতের তালু খাবারে স্পর্শ করতে দেবেন না)। আসলে খাবার খাওয়ার জন্য ছুরির কোনও প্রয়োজন নেই কারণ মাংস ছোট ছোট টুকরো করে কাটা অবস্থায় থাকে। নুডলস জাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা অবশ্য চপস্টিকস এবং কাঁটাচামচ ব্যবহার করে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]