


বৈকাল হ্রদ (রুশ: Байка́л, উচ্চারণ: বাই-কাল) রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ায় অবস্থিত এক সুবিশাল জলাধার বা প্রাকৃতিক হ্রদ, যা পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম স্বাদুজলের হ্রদ হিসেবে পরিচিত। বৈকাল হ্রদ
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
জানুন
[সম্পাদনা]
বৈকাল হ্রদ পূর্ব সাইবেরিয়ায় অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিমে ইরকুতস্ক ওবলাস্ত এবং দক্ষিণ-পূর্বে বুরিয়াতিয়া -এই দুই স্থানের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বৈকাল হ্রদের বিস্তার। বৈকাল পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর (১৬৩৭ মিটার) ও প্রাচীনতম স্বাদুজলের হ্রদ এবং জলধারণ ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম। পৃথিবীর মোট স্বাদুজলের এক-পঞ্চমাংশ এই হ্রদে সঞ্চিত রয়েছে। বৈকাল নামটির উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে সেই বিষয়ে সঠিক ব্যাখা এখনও পাওয়া যায়নি, তবে এই সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিক ধারণা বর্তমান, যেমন: ইয়াকুত ভাষায় বৈকাল শব্দের অর্থ গভীর জল, তুর্কি ভাষায় অর্থ সমৃদ্ধ হ্রদ, মঙ্গোলীয় ভাষায় অর্থ সমৃদ্ধ আগুন এবং চীনা ভাষায় এর অর্থ উত্তর সাগর। বিশালতা ও বিস্তারের কারণে রুশরা প্রায়ই এই হ্রদকে বৈকাল সাগর বলেও অভিহিত করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]প্রায় ২০–২৫ মিলিয়ন বছর আগে মেসোজোয়িক যুগে বৈকাল হ্রদের ভূতাত্ত্বিক গঠনপ্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল। আজও এই হ্রদ আকারে ও আয়তনে প্রতি বছর প্রায় ২ সেন্টিমিটার প্রসারিত হচ্ছে। খ্রিস্টপূর্ব ১১০ সালে প্রাচীন চীনা লেখনিতে প্রথম এই হ্রদের উল্লেখ পাওয়া যায় যেখানে বৈকাল হ্রদকে বেইহাই (উত্তর সাগর) নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে হ্রদের তীরে নানা সভ্যতা-সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৮ শতকের বুরিয়াত জাতিসত্তার আত্মপ্রকাশ উল্লেখযোগ্য। রুশ ইতিহাসে বৈকাল নামটির প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ১৬৪০ সালে। এরপর রুশদেশীয় অনুসন্ধানকারীরা হ্রদটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিস্তারিত বিবরণ নথিবদ্ধ করেছেন, যার উপর ভিত্তি করে ১৭২৩ সালে বৈকাল হ্রদের প্রথম বৈজ্ঞানিক অভিযান আয়োজিত হয়। ১৯০৫ সালের ১৩ অক্টোবর চালু হয় সার্কাম-বৈকাল রেলপথ, যা হ্রদের তীরবর্তী অঞ্চলসমূহের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। ১৯১৬ সালে হ্রদ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বার্গুজিনস্কি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, যা হ্রদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯০ সালে রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়ার প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত উইন্ডসার্ফার ক্রীড়াবিদরা প্রথমবার হ্রদের সবচেয়ে প্রশস্ত অংশ অতিক্রম করতে সক্ষম হন। ১৯৯১ সালে হ্রদের তলদেশের গভীরতম বিন্দুতে পৌঁছানো সম্ভব হয়। ১৯৯৬ সালে বৈকাল হ্রদকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০০৩ সালে পর্যটকদের বৈকাল হ্রদে ভ্রমনের সুবিধার্থে সেভান নামক জাহাজ চালু করা হয়।
প্রাকৃতিক দৃশ্য
[সম্পাদনা]
বৈকাল হ্রদকে ঘিরে রয়েছে বিস্তৃত উপত্যকা ও পর্বতশ্রেণি, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। হ্রদের পশ্চিমে বিস্তৃত বৈকাল পর্বতমালা আর পূর্বে অবস্থিত জাবাইকালস্কি পর্বতশ্রেণি। এই হ্রদের সাথে সংযুক্ত একমাত্র জলপ্রবাহ হলো আঙ্গারা নদী। বৈকাল হ্রদ থেকে নিঃসৃত আঙ্গারা নদীর মাধ্যমে হ্রদের জল প্রবাহিত হয় দূরবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে। পর্বত, নদী ও উপত্যকার এই সম্মিলিত ভূদৃশ্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত
[সম্পাদনা]- বৈকাল সীল
জলবায়ু
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের বিশাল জলরাশি তার তীরবর্তী অঞ্চলের জলবায়ুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শীতকাল এখানে তুলনামূলকভাবে কোমল আর গ্রীষ্মকাল শীতল ও স্নিগ্ধ। এখানে বসন্ত ঋতুর আগমন হয় অনেক বিলম্বে। রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন পরে এই অঞ্চলে বসন্তের সূচনা হয়। এই অঞ্চলের শরৎকাল দীর্ঘস্থায়ী ও মনোরম। এই এলাকায় সূর্যালোকের স্থায়িত্ব রাশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ, যা বৈকাল হ্রদ ও আশেপাশের অঞ্চলকে এক অনন্য সূর্যালোকিত অঞ্চলে পরিণত করেছে। এখানকার জলবায়ুকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে কিছু বিশেষ আঞ্চলিক বায়ুপ্রবাহ, যাদের স্থানীয় নাম -বারগুজিন, সারমা, ভারখোভিক ও কুলতুক। সাধারণভাবে মনে করা হয়, জুলাই মাসই বৈকাল ভ্রমণের জন্য সর্বোত্তম, কারণ তখন তাপমাত্রা ও বাতাসের গতি পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক থাকে। গ্রীষ্মকালেও হ্রদের জল থাকে শীতল। আঞ্চলিক তাপমাত্রা সাধারণত ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি থাকে। তবে উপসাগরীয় অঞ্চলে তা ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই জল এতটাই স্বচ্ছ যে ৪০ মিটার গভীর পর্যন্ত তলদেশ দেখা যায়।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]বিমানে
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানবন্দরটি ইরকুতস্কে অবস্থিত। মস্কোর ডোমোদেদোভো বা শেরেমেতিয়েভো-১ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিমানের মাধ্যমে এখানে পৌঁছানো যায়। পর্যটকদের সুবিধার্থে ব্যাংকক থেকে বিভিন্ন ভ্রমন সংস্থা ইরকুতস্ক বিমানবন্দর অবধি বিমান পরিষেবা পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে বৈকাল হ্রদ ভ্রমনের জন্য এটি একটি সহজ বিকল্প।
রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিমানের মাধ্যমেও ইরকুতস্কে পৌঁছানো যায়। রাশিয়ার বিভিন্ন বিমানবন্দর যেমন, খাবারোভস্ক, ভ্লাদিভোস্তক, ক্রাসনয়ার্স্ক, নভোসিবির্স্ক, মাগাদান, ইয়াকুতস্ক, ইয়েকাতেরিনবার্গ, সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং সোচি থেকে এই বিমানগুলি ছাড়ে। এই বিমান বিস্তৃত সংযোগব্যবস্থা বৈকাল হ্রদকে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করেছে।
ট্রেনে
[সম্পাদনা]ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথের অন্যতম মনোরম অংশ হলো বৈকাল হ্রদের তীরবর্তী অঞ্চল। দেশের পশ্চিম অঞ্চল থেকে পূর্বগামী এই ট্রেন ইরকুতস্ক পেরিয়ে রেলপথের সর্পিল বাঁক ধরে নেমে আসে হ্রদের ধারে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম তীরবর্তী রেলপথ ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে থাকে তার শেষ গন্তব্য উলান উদে পর্যন্ত। এই যাত্রাপথ মনোরম দৃশ্যপটে সমৃদ্ধ। প্রথমবারের মতো কেউ যদি ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথে ভ্রমণ করেন তাহলে দিনের বেলায় যাত্রা করাই শ্রেয়, তাহলে রেলপথের প্রতিটি বাঁকে হ্রদের সৌন্দর্য চোখে পড়বে। হ্রদের সংলগ্ন স্টেশনগুলোর মধ্যে ট্রেনটি স্লিউদিয়াঙ্কা স্টেশনে কিছুক্ষণ থামে।
এছাড়াও প্রধান বৈকাল-আমুর রেলপথটি সেভেরোবৈকালস্ক থেকে শুরু করে হ্রদের তীর বরাবর বিস্তৃত হয়ে উত্তরমুখে গমন করেছে।
বাসে
[সম্পাদনা]ইরকুতস্ক বাস স্টেশন থেকে সারাদিন ধরেই বৈকাল হ্রদের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই সফরে বেশ কয়েকটি ছোট ভ্রমনস্থান রয়েছে, যা এই যাত্রাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। বাসের শেষ গন্তব্য হলো লিস্টভিয়াঙ্কা। এটি বৈকাল হ্রদের তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]লিস্টভিয়াঙ্কা থেকে নৌকায় চেপে পৌঁছানো যায় বলশোই কোটি শহরে, যা বৈকাল জাতীয় উদ্যানের কেন্দ্রবিন্দু। নৌকায় একমুখী যাত্রার খরচ ১৮০ রুবেল। ইরকুতস্ক হোটেলের ভিতরের অফিস থেকে নৌকা ভ্রমনের জন্য টিকিট কেনা যায়। বৈকাল হ্রদের যাত্রাপথের মূল তিনটি স্থান হল ইরকুতস্ক, লিস্টভিয়াঙ্কা ও বলশোই কোটি। লিস্টভিয়াঙ্কা থেকে প্রথম নৌকা সকাল ১০ টায় ছাড়ে, আর শেষ নৌকা বিকেল ৪ টায় ছাড়ে। বলশোই কোটি থেকে ফেরার জন্য সন্ধ্যা ৬ টায় নৌকা পাওয়া যায়। চাইলে আপনি ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বৈকাল ভ্রমন পথ ধরে হেঁটে হ্রদের তীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এই ভ্রমন পথের বেশিরভাগ অংশ হ্রদের তীর বরাবর বিস্তৃত। দুই দিনের হাঁটাপথে আপনি বৈকালের তীরবর্তী অঞ্চল ঘুড়ে দেখতে পারেন। সম্পূর্ণ ভ্রমনের জন্য প্রথম দিন ২৫ কিমি আর দ্বিতীয় দিন ৩০ কিমি হেঁটে যাত্রা সম্পন্ন করা যায়।
হ্রদ ভ্রমনের জন্য আরও একটি আকর্ষণীয় পরিকল্পনা হল: সকাল ৯ টায় ইরকুতস্ক হোটেল থেকে টিকিট কেটে বাসে লিস্টভিয়াঙ্কা পৌঁছানো, তারপর ৫–৮ ঘণ্টা হেঁটে বৈকালের ভ্রমন পথের প্রথম অংশ অতিক্রম করে সন্ধ্যা ৬ টায় নৌকায় ইরকুতস্কে ফিরে আসা। তবে পরিপূর্ন ভ্রমনের জন্য হাঁটার গতি দ্রুত রাখতে হবে।
শীতকালে লিস্টভিয়াঙ্কা থেকে বলশোই কোটি পর্যন্ত হ্রদের জল জমে বরফ হয়ে একটি হিমায়িত প্রাকৃতিক পথ তৈরি করে।
ভ্রমণার্থীরা লিস্টভিয়াঙ্কা থেকে আঙ্গারা নদীর বিপরীত তীরে অবস্থিত বৈকাল বন্দরেও ঘুরতে যেতে পারেন। নৌকা ভাড়া ৩৪ রুবেল। নৌকাটি বৈকাল জলজ বাস্তুতন্ত্র সংগ্রহশালার নিকটবর্তী জেটি থেকে ছাড়ে, যা মাত্র ৫ মিনিটে গন্তব্যে পৌছে দেয়। যদিও এই পথে যাওয়ার চেয়ে বৈকাল বন্দর থেকে লিস্টভিয়াঙ্কা অভিমুখী জলপথটি বেশি সুপারিশযোগ্য।
বৈকাল বন্দর পর্যন্ত ট্রেনেও যাওয়া যায়। ট্রেনটি স্লিউদিয়াঙ্কা থেকে ছাড়ে। যাত্রার সময় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা। এই ট্রেন শতাব্দী প্রাচীন বৈকাল রেলপথ ধরে অগ্রসর হয়। ট্রেনটি ধীরগতির হলেও হ্রদের তীরভূমির দৃশ্যপট উপভোগ করার জন্য আদর্শ।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- ওলখোন, হ্রদের সবচেয়ে বড় দ্বীপ
ইরকুতস্ক ওবলাস্তে (হ্রদের পশ্চিমে):
- ভিতিমস্কি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র
- বৈকালো-লেনস্কি সংরক্ষণ কেন্দ্র
বুরিয়াতিয়ায় (হ্রদের পূর্বে):
- বৈকালস্কি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র
- বার্গুজিনস্কি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র
- জারগিনস্কি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র
করনীয়
[সম্পাদনা]স্থানীয় অঞ্চলে জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক ছয় দিনের দৌড় প্রতিযোগিতা ট্রান্সবাইকাল–২০এক্সএক্স। প্রায় ৪৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ১০,০৬০ মিটার লম্বা উঁচু-নিচু ভূপ্রাকৃতিক বাঁধাসম্পন্ন এক দুর্গম পথ পেরিয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌছায়। দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয় বুগুলদেইকা গ্রাম থেকে। এরপর দুই দিনের যাত্রা করে প্রতিযোগিরা পৌঁছান ওলখোন দ্বীপে। প্রতিযোগিতার শেষ গন্তব্য ইয়েলানৎসি, যা হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত।
ভ্রমণপথ
[সম্পাদনা]- ভবিষ্যতের বৈকাল হ্রদ ভ্রমনপথের অংশ হিসেবে ফ্রোলিখা অ্যাডভেঞ্চার কোস্টলাইন ট্র্যাক[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] নির্মান করা হচ্ছে।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের তীরে ওমুল মাছ বিক্রেতারা মাছের সাথে সাথে নানা ধরনের স্যুভেনির বা স্মৃতিচিহ্ন বিক্রি করে, যেগুলির দাম রাশিয়ার অন্যান্য শহরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়। হ্রদের প্রধান জেটিঘাটে বেশ কয়েকটি নৌকা থাকে। নৌকাচালকরা মাছ ধরার ফাঁকে পর্যটকদের নিয়ে হ্রদ ভ্রমণে বের হয়। তাদের সাথে দর কষাকষি করে নৌকা ভ্রমনের ভাড়া নির্ধারণ করা যায়। তাই যদি একসঙ্গে আরও পর্যটক থাকে, তাহলে বড় দল বানিয়ে কম খরচে নৌকা ভ্রমন করা বেশ লাভজনক। মাঝে মাঝে স্থানীয় অল্পবয়স্ক বালকেরা (ভাঙা ইংরেজি কথার মাধ্যমে) দোভাষীর ভূমিকা পালন করে।
আহার
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের তীরে একসময় বিক্রি হতো সুস্বাদু ধূমায়িত ওমুল মাছ, যা স্থানীয় মাছ বিক্রেতাদের দোকানে সহজেই পাওয়া যেত। হ্রদের ধারে একটি রেস্তোরায় বেশ ভালো মানের মাছ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি পানশালা ও ছোট মুদি দোকান। তবে ২০১৮ সালে ওমুল মাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় প্রজনন মৌসুমে এই মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়, ফলে এখন আর সহজে ওমুল মাছ কিনতে পাওয়া যায় না।
লিস্টভিয়াঙ্কার প্রতিটি দর্শনীয় স্থান হাঁটাপথে ঘুরে দেখা যায়। এখানে একটি ছোট পোস্ট অফিসও রয়েছে।
ভ্রমণের স্বাদকে পূর্ণতা দিতে স্থানীয় বুরিয়াত ডাম্পলিং বুজি চেখে দেখতে ভুলবেন না, যা এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও খাদ্য-সংস্কৃতির প্রতীক।
পানীয়
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের জল পান করা যায়। হ্রদের জল পাতনযোগ্য। এই জলে খনিজ লবণের পরিমাণ অসীম।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]আপনি ইরকুতস্ক অথবা উলান-উদে থেকে একদিনের মধ্যে বৈকাল হ্রদে ভ্রমণ সেরে সহজেই ফিরে আসতে পারেন।
হ্রদের ধারে অবস্থিত শহরসমূহ:
- লিস্টভিয়াঙ্কা, ইরকুতস্ক ওবলাস্ত — এগুলি সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। এইসকল স্থানে বহু হোটেল রয়েছে।
- সেভেরোবাইকালস্ক, বুরিয়াতিয়া — হ্রদের উত্তর কূলের একটি শহর, এখানেও অনেক হোটেল আছে।
- সলিউদিয়াঙ্কা — এটি এই অঞ্চলের দক্ষিণতম গ্রাম
দ্বীপপুঞ্জ:
- ওলখোন
বিশ্রামস্থল
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের তীরবর্তী অঞ্চলের রেস্ট বেস বা বিশ্রামকেন্দ্রগুলি মূলত রাশিয়ান গ্রামীণ ধাঁচের কাঠের বাড়ি, যেখানে পর্যটকদের জন্য স্থানীয় দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের সুযোগসহ নানা সুবিধা প্রদান করা হয়। এই ঘরগুলি সাধারণত গ্রামের ভিতরে বা তার আশেপাশে অবস্থিত।
পূর্ব তীর
[সম্পাদনা]- বারগুজিন উপসাগর এবং সেন্ট নোজ অন্তরীপ
- চিভিরকুইস্কি উপসাগর
- মাকসিমিখা গ্রাম
- সুখায়া গ্রাম
পশ্চিম তীর
[সম্পাদনা]- সেভেরোবাইকালস্ক
- মালোয়ে সাগর
- এমআরএস (এমপিসি)
- ক্রেস্টোভস্কি অন্তরীপ
- বুগুলদেইকা
- বলশাই গোলাউস্তনোয়ে
- বলশাই কোটি
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদ ঘুরতে গেলে কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন, বিশেষ করে তুষার ঝড় বিপজ্জনক হতে পারে। তাই গরম কাপড় ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে রাখা উচিত। শীতকালে হ্রদের উপর যে বরফের আস্তরন পরে তা সব জায়গায় সমান থাকেনা। তাই বরফের উপর হাঁটার অযথা ঝুঁকি না নিয়ে স্থানীয় নির্দেশনা মেনে চলা ভালো। এছাড়াও, অনেক এলাকায় জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসা পরিষেবা সহজে পাওয়া যায় না, তাই ভালোভাবে প্রস্তুত থাকা অপরিহার্য। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন, কিন্তু সচেতন থাকুন—নিরাপত্তাই আনন্দের প্রথম শর্ত।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]বৈকাল হ্রদের নিকটবরতী সবচেয়ে বড় শহর ইরকুতস্ক। বৈকাল-আমুর রেলপথ এবং ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথের মাধ্যমে সহজেই আপনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়ত করতে পারেন।