বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে
ভ্রমণ প্রসঙ্গ > সাংস্কৃতিক আকর্ষণ > ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা > বৌদ্ধধর্ম

বৌদ্ধধর্ম

পরিচ্ছেদসমূহ

বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর অন্যতম বিস্তৃত একটি ধর্ম। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচলিত। আবার দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং রাশিয়ার কিছু অঞ্চলেও এর প্রভাব রয়েছে। বৌদ্ধরা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বসবাস করে। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিক থেকে ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলোতেও বৌদ্ধধর্মের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়।

জানুন

[সম্পাদনা]
চিশাকু-ইন কিয়োটোতে, শিংগন-শু চিজান-হা বৌদ্ধধর্মের প্রধান মন্দির
বোধগয়ায় মহাবোধি মন্দির

ইতিহাস ও দর্শন

[সম্পাদনা]

বৌদ্ধধর্ম খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-৫০০ সালের মধ্যে শাক্যমুনি বুদ্ধের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্ম। প্রথাগত কাহিনি অনুযায়ী, রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম (বুদ্ধে র প্রাক-নাম) লুম্বিনীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাক্য রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে (বর্তমান নেপালের অন্তর্গত, ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি)। তিনি প্রাসাদে বিলাসবহুল পরিবেশে লালিত হয়েছিলেন, যেখানে রাজা পিতা তাকে বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। এক রাতে তিনি গোপনে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যান এবং চারটি দৃশ্য দেখেন, যা তার জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে: এক বৃদ্ধ, এক অসুস্থ ব্যক্তি, এক মৃতদেহ এবং এক সন্ন্যাসী। এই দৃশ্য দেখে তিনি উপলব্ধি করেন যে বিলাসবহুল জীবন মানসিক শান্তি আনে না এবং ধনী-গরিব নির্বিশেষে মানুষ বার্ধক্য, অসুস্থতা ও মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করে। তাই তিনি রাজপদ ও ধন-সম্পদ ত্যাগ করে এমন এক পথ অনুসন্ধানে বের হন, যা সব প্রাণীর দুঃখমুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। ছয় বছর ধরে তিনি বিভিন্ন প্রচলিত সাধনার পদ্ধতি অনুশীলন করেন, কিন্তু কোনো ফল পাননি। অবশেষে ৩৫ বছর বয়সে বোধগয়ায় বোধিবৃক্ষের নিচে ধ্যান করতে করতে তিনি সেই প্রজ্ঞায় জাগ্রত হন, যা তিনি খুঁজছিলেন। বুদ্ধের এই আবিষ্কারের মূল শিক্ষা তিনি প্রথমবার সারনাথে মৃগদায়ে পাঁচজন সন্ন্যাসীকে দেন, যা চার আর্যসত্য নামে পরিচিত। জীবনের বাকি সময় তিনি শিক্ষা প্রচারে ব্যয় করেন এবং শেষ পর্যন্ত কুশীনগরে শালবনের মধ্যে আমাশয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স তখন ৮০ বছরেরও বেশি ছিল বলে ধারণা করা হয়।

অনেক শতাব্দী ধরে ভারতে বৌদ্ধধর্ম প্রধান ধর্ম হিসেবে বিদ্যমান ছিল এবং বহু মহৎ সম্রাট একে সমর্থন করেছিলেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান ছিলেন অশোক (খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩–২৩২), মৌর্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। তিনি তার রাজধানী পাটলিপুত্র (বর্তমান পাটনা) থেকে প্রায় সমগ্র উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন। কিছু বর্ণনা অনুযায়ী, ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তিনি ছিলেন এক নিষ্ঠুর ও রক্তপিপাসু সম্রাট। কিন্তু কলিঙ্গ বিজয়ের পর অশোক অনুতপ্ত হন, কারণ বিপুল প্রাণহানিতে তিনি সাম্রাজ্যবাদের পথ ত্যাগ করে পৃথিবীর মঙ্গল সাধনে মনোনিবেশ করেন। তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং ধর্মনীতির (সদাচরণ, প্রাচীন গ্রিকে ευσεβεία অর্থাৎ মানবদুঃখের প্রতি শ্রদ্ধা) অনুসারী হন। অশোক শিলালিপি ও স্তম্ভে বহু ফরমান লিখে রেখে যান, যেমন আচেমেনীয় শাসকেরা ইরানে করেছিলেন। এসব লিপিতে বৌদ্ধ ধর্মনীতির প্রতিফলন পাওয়া যায়। তিনি মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেন, সমস্ত জীবের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন, নিরামিষভোজী হন এবং প্রাণী হত্যাকে ধর্মনীতির পরিপন্থী ঘোষণা করেন।

দিল্লির তোপরা স্তম্ভে অশোকের লিপি তার ধর্ম প্রচার ও দূত প্রেরণের প্রচেষ্টার সারসংক্ষেপ দেয়, যার মাধ্যমে তিনি তার সাম্রাজ্য ও সাম্রাজ্যের বাইরে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকদের শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন, মঙ্গোলিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিরিয়া, ইরান, মিশর, গ্রিস, ইতালি এবং তুরস্কে পাঠান। তার শিলালিপিযুক্ত স্তম্ভগুলির মধ্যে ১৯টি আজও টিকে আছে, যেমন সারনাথপ্রয়াগরাজে। ভারতের ইতিহাসে বৌদ্ধধর্মের উত্থান-পতন ঘটেছে, তবে ১১৯৩ সালে নালন্দার মহাবিদ্যালয় তুর্কি মুসলিম আক্রমণকারীরা জ্বালিয়ে দিলে ভারতে এর বড় ধাক্কা লাগে। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষে সমতল অঞ্চলে প্রায় বিলুপ্ত হলেও এটি হিমালয়ে এবং শ্রীলঙ্কায় টিকে ছিল। পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মে বুদ্ধকে হিন্দুদের বিষ্ণুর এক অবতার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ভারত থেকে প্রথম খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতকে অশোকের পুত্র মহিন্দ বৌদ্ধধর্ম শ্রীলঙ্কায় নিয়ে যান। পরে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শতাব্দীতে এটি মিয়ানমার হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর দিকে এটি বর্তমান পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় বিস্তৃত হয় এবং সিল্ক রোড ধরে খ্রিষ্টীয় ১ম শতকে চীনে পৌঁছায়। পরবর্তী সময়ে চীনা ভিক্ষুরা, বিশেষত জিন রাজবংশের ফা-সিয়েন ও তাং রাজবংশের হুয়েন সাং ভারতে এসে শাস্ত্র সংগ্রহ করেন। বর্তমানে চীনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছে। চীন থেকে ৪র্থ শতকে বৌদ্ধধর্ম কোরিয়ায় এবং ২য় শতকে ভিয়েতনামে প্রবেশ করে। জাপানে এটি ৬ষ্ঠ শতকে কোরিয়া থেকে গিয়েছিল, যদিও পরে তাং যুগে জাপানি ভিক্ষুরা চীনে গিয়ে অধ্যয়ন করেন। তিব্বতে ৭ম শতকে বৌদ্ধধর্ম প্রবেশ করে এবং ১৩শ শতকে মঙ্গোলিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

বৌদ্ধ দর্শন ও ধর্মকে প্রধানত দুটি ধারায় ভাগ করা যায়: থেরবাদ ও মহাযান। থেরবাদ থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কাচীনের দাই জাতিগোষ্ঠীতে প্রচলিত এবং ব্যক্তিগত মুক্তিকে গুরুত্ব দেয়। মহাযান চীন, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়াভিয়েতনামে বেশি প্রচলিত এবং সবার মুক্তিকে প্রধান লক্ষ্য করে। বজ্রযান তিব্বত, ভুটান, মঙ্গোলিয়ারাশিয়ার কালমাইকি, বুরিয়াতিয়াতুভা অঞ্চলে প্রচলিত, যা মূলত মহাযানের একটি শাখা। সব ধারার মিলিত লক্ষ্য জ্ঞানচর্চা, জীবের প্রতি করুণা ও অহিংসা। সব বৌদ্ধধর্মই কর্মফল ও সংসারকে স্বীকার করে এবং সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে। বুদ্ধ নিজেও নিজেকে দেবতা হিসেবে অস্বীকার করেছিলেন। বৌদ্ধধর্ম মধ্যপথ অনুসরণ করে, অর্থাৎ আত্মনিগ্রহ ও ভোগলালসা দুই-ই পরিহার করে। এই ধর্মের সবকটি ধারার চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্বাণ লাভ।

বৌদ্ধ ধারাগুলির মধ্যে সম্পর্ক সাধারণত শান্তিপূর্ণ, এবং তাদের মধ্যে কোনো সশস্ত্র সংঘর্ষের ইতিহাস নেই। অনুসারীরা প্রায়শই অন্য ধারার মন্দিরে প্রার্থনা ও অধ্যয়নে যান। বিভিন্ন ভিক্ষু অন্য দেশের মঠে অতিথি হিসেবে থাকেন, যেমন থাই মঠে চীনা ভিক্ষুরা।

অন্য অনেক ধর্মের মতো বৌদ্ধধর্মে বাইবেল, কোরআন বা বেদসম গ্রন্থ নেই। বিভিন্ন ধারা ভিন্ন ভিন্ন শাস্ত্র ব্যবহার করে। থেরবাদীরা পালি ত্রিপিটক ব্যবহার করে, যার তিন ভাগ: বিনয় পিটক (ভিক্ষুদের নিয়ম), সূত্র পিটক (বুদ্ধ ও শিষ্যদের বাণী) ও অভিধর্ম পিটক (বুদ্ধবাণীর বিশ্লেষণ)। পূর্ব এশীয় মহাযান বৌদ্ধধর্মে চীনা ক্যানন ব্যবহৃত হয়, যেখানে পালি গ্রন্থগুলির অনুবাদ ও অতিরিক্ত মহাযান সূত্র আছে। বজ্রযানীরা তিব্বতি ক্যানন ব্যবহার করে, যেখানে মহাযান সূত্রের সঙ্গে প্রচুর তন্ত্রশাস্ত্রও অন্তর্ভুক্ত।

বৌদ্ধধর্ম একচেটিয়া অনুসরণ দাবি করে না। বহু স্থানে এটি স্থানীয় ধর্মের সঙ্গে মিশে গেছে।

তিব্বতি বৌদ্ধদের মতো কিছু সম্প্রদায়ে লামার শ্রেণিবিন্যাস আছে, তবে বৌদ্ধধর্মে কোনো কেন্দ্রীয় ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ নেই এবং কোনো একক পোপসদৃশ নেতাকেও অধিকাংশ বৌদ্ধ অনুসারীরা মানেন না।

প্রচলিত প্রতীক ও চিত্র

[সম্পাদনা]
আট-স্পোক বিশিষ্ট ধর্মচক্র বুদ্ধ প্রদত্ত আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গকে নির্দেশ করে
  • বুদ্ধ শাক্যমুনি : বৌদ্ধ মঠে সবচেয়ে প্রচলিত প্রতীক। বিভিন্ন ভঙ্গিতে তার মূর্তি তৈরি হয়, তবে সবচেয়ে সাধারণ ভঙ্গি হলো পদ্মাসনে বসা, যেখানে ডান হাতের আঙুলের ডগা ভূমিকে স্পর্শ করছে।
  • পদ্মসম্ভব: যিনি গুরু রিনপোছে নামেও পরিচিত (শুধু বজ্রযান মঠে, বিশেষত ন্যিংমা সম্প্রদায়ে)। অষ্টম শতকের এই মহাপুরুষ বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক হিসেবে খ্যাত। তার মূর্তিতে সাধারণত তাকে আসনে বসা অবস্থায়, জটিল নকশার টুপি পরে, ডান পা সামান্য নিচে রাখা ভঙ্গিতে চিত্রিত করা হয়। তার চোখ বড় করে খোলা এবং দূরে চেয়ে থাকার মতো দেখানো হয়।
  • প্রার্থনা চাকা (তিব্বতি: মানি) (শুধু বজ্রযান মঠে) : প্রার্থনা চাকার বিভিন্ন ধরন আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো মঠ ও স্তূপার চারপাশের প্রাচীরে বসানো তামার চাকা এবং মঠের প্রবেশদ্বারের পাশে রাখা বড় কাঠের চাকা। এছাড়া ভক্তদের হাতে বহনযোগ্য ছোট প্রার্থনা চাকা থাকে। সব প্রার্থনা চাকা ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরানো হয় এবং সব প্রাণীর মঙ্গল কামনায় তা করা হয়। এভাবে এগুলো উদার ও পবিত্র মন গড়ে তুলতে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়।
  • স্বস্তিকা: মন্দিরে প্রচলিত প্রতীক, যা বৌদ্ধধর্মে শান্তি ও ধর্মের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও পাশ্চাত্যে স্বস্তিকা নাৎসিবাদের সঙ্গে যুক্ত, বৌদ্ধধর্মে এর ব্যবহার নাৎসি দলের জন্মের হাজার বছর আগেই শুরু হয়েছিল। আজও এশিয়ার বহু স্থানে এটি পবিত্র প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • তারা (শুধু বজ্রযান মঠে): এই নারী দেবীকে নানা রঙে চিত্রিত করা হয়, তবে সবুজ বা সাদা সবচেয়ে প্রচলিত। সবুজ রং দিয়ে তারা বুদ্ধের জ্ঞানময় কর্মকে এবং সাদা রং দিয়ে তারা করুণাকে প্রকাশ করে।

সব ধারায়

[সম্পাদনা]
  • বৈশাখ পূর্ণিমা (বেসাক/ওয়েসাক) (সংস্কৃত: বৈশাখ; পালি: বেসাখ) হলো বৌদ্ধদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। থেরবাদ ধারায় এটি বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপরিনির্বাণকে স্মরণ করে পালিত হয়। মহাযান ধারায় এটি মূলত বুদ্ধের বোধিলাভকে স্মরণ করে, আর জন্ম ও মহাপরিনির্বাণ আলাদা দিনে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠান চন্দ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়:সাধারণত এপ্রিল বা মে মাসে, তবে দক্ষিণ কোরিয়াচীনে এটি নির্দিষ্ট দিনে হয়। মালয়েশিয়াসিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে এ দিন সরকারি ছুটি থাকে।

বজ্রযান ধারা

[সম্পাদনা]
  • নববর্ষ : বছরের প্রথম পূর্ণিমা (সাধারণত ফেব্রুয়ারি)।
  • মোডলাম চেনমো : চন্দ্র নববর্ষের ৮ম–১৫তম দিন।
  • গুরু রিনপোছের জন্মদিন : ষষ্ঠ চন্দ্র মাসের ১০ম দিন।
  • চোখোর দুচেন : ষষ্ঠ চন্দ্র মাসের ৪র্থ দিন (সাধারণত জুলাই)। এই দিনে শাক্যমুনি বুদ্ধ বোধিলাভের পর প্রথম ধর্মদেশনা দিয়েছিলেন।

থেরবাদ ধারা

[সম্পাদনা]
  • আষাঢ় পূর্ণিমা (আসালহা) : অষ্টম চন্দ্র মাসের প্রথম পূর্ণিমা (সাধারণত জুলাই)। এই দিনে শাক্যমুনি বুদ্ধ বোধিলাভের পর প্রথম ধর্মদেশনা দিয়েছিলেন।

মহাযান ধারা

[সম্পাদনা]
  • বুদ্ধের জন্মদিন : চীন, কোরিয়াভিয়েতনামে পালিত হয় চীনা বর্ষপঞ্জির ৪র্থ মাসের ৮ম দিনে। জাপানে ৮ এপ্রিল বা ৮ মে পালিত হয়, আর তাইওয়ানে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার উদযাপিত হয়।
  • গুয়ান ইয়িন উৎসব : চীনে বছরে চারবার পালিত হয়, চীনা চান্দ্র বর্ষপঞ্জির দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, নবম ও একাদশ মাসের ১৯ তারিখে। এটি বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের সম্মানে পালিত হয়। এ দিন অনেক চীনা বৌদ্ধ, যারা সাধারণত নিরামিষভোজী নন, কেবল নিরামিষ খাবার গ্রহণ করেন। চীনা বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে উৎসব হয়, যেখানে নিরামিষ খাবারের দোকানও বসে।

শহর ও অন্যান্য স্থান

[সম্পাদনা]

দক্ষিণ এশিয়া

[সম্পাদনা]
ভুটানের পারোতে তাক্‌সাং মঠ

নীচে উপমহাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থান উল্লেখ করা হলো।

বৌদ্ধ সার্কিট হলো এক তীর্থপথ, যা গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান থেকে শুরু হয়ে তার মহাপরিনির্বাণস্থলে গিয়ে শেষ হয়।

  • বোধগয়া, বিহার : এখানে শাক্যমুনি বুদ্ধ জ্ঞানপ্রাপ্তি অর্জন করেছিলেন।
  • ডায়মন্ড ট্রায়াঙ্গল (ওড়িশা) : রত্নগিরি, উদয়গিরি ও ললিতগিরি সহ কয়েকটি ছোট স্থাপনার সমন্বয়ে গঠিত একটি বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমূহের সমাহার।
  • এলোরাঅজন্তা, মহারাষ্ট্র, ভারত : বিস্ময়কর পাথরকাটা গুহা-বিহার ও মন্দিরসমূহ, যা বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু:তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র স্থান।
  • কুশীনগর, উত্তর প্রদেশ : যেখানে বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করেন এবং তার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
  • নালন্দা : ৫ম থেকে ১৩শ শতক পর্যন্ত বিদ্যমান এক বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান। একসময় এখানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার ছিল।
  • রাজগির, বিহার : এখানে অবস্থিত গৃধ্রকূট পর্বত, যেখানে বুদ্ধ ধর্মচক্রের দ্বিতীয় আবর্তন করেছিলেন।
  • রেওয়ালসার, হিমাচল প্রদেশ : পদ্মসম্ভব নামক তান্ত্রিক বৌদ্ধ যোগীর সঙ্গে সম্পর্কিত এক পবিত্র হ্রদ। এটি তিব্বতি বৌদ্ধদের এক জনপ্রিয় তীর্থস্থান।
  • সারনাথ, উত্তর প্রদেশ : যেখানে বুদ্ধ প্রথমবার ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন।
  • অনুরাধাপুর : শ্রীলঙ্কার প্রথম রাজধানী, বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, এবং দীর্ঘদিন থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র। এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে মিহিনতলে গ্রামে অশোক সম্রাটের পুত্র থের মহিন্দ সিংহলি রাজা দেবানাম্পিয় তিস্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেন।
  • পোলোননারুয়া : প্রাচীন শহর, ১০৭০ থেকে ১২৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শক্তিশালী সিংহলি সাম্রাজ্যের রাজধানী। এর ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদ ও মন্দিরসমূহ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত, যা মধ্যযুগে বৌদ্ধধর্মের গৌরব প্রকাশ করে।
  • দাঁতের মন্দির, ক্যান্ডি : এখানে বুদ্ধের দাঁতের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত আছে। এটি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত।
  • তক্ষশীলা, পাঞ্জাব - বুদ্ধের দেহাবশেষ, যেমন দাঁত ও অস্থি খণ্ডসহ বহু স্তূপ ও বিহারসমৃদ্ধ একটি প্রধান স্থান


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

[সম্পাদনা]
ওয়াত ফো
  • আয়ুথিয়া : প্রাক্তন রাজধানী, যা ১৭৬৭ সালে বার্মিজদের আক্রমণে ধ্বংস হয়। বর্তমানে পর্যটকরা এখানকার মন্দিরগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মন্দির হলো ওয়াত ফ্রা সি সানফেত (วัดพระศรีสรรเพชญ์), যা রাজধানীর সময়ে রাজকীয় মন্দির ছিল, এবং ওয়াত মহাথাত (วัดมหาธาตุ), যেখানে বটগাছের শিকড়ের মধ্যে আটকানো বুদ্ধমূর্তির মাথা সবচেয়ে বিখ্যাত।
  • ব্যাংকক : এখানে রয়েছে ওয়াত ফোর (วัดโพธิ์) শায়িত বুদ্ধমূর্তি, যা বিশ্বের বৃহত্তম শায়িত বুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও রাজকীয় মন্দির ওয়াত ফ্রা কেও (วัดพระแก้ว)-তে পান্না বুদ্ধ (আসলে জেড পাথরে তৈরি) রয়েছে, যা থাইল্যান্ডের সবচেয়ে পবিত্র বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে ধরা হয় এবং তীর্থযাত্রীদের অন্যতম গন্তব্য। থনবুরির চাও ফ্রায়া নদীর ওপারে অবস্থিত ওয়াত আরুন (วัดอรุณ), যা রঙিন চীনা চীনামাটির টুকরো দিয়ে সাজানো মূল স্তূপের জন্য বিখ্যাত। ব্যাংককে আরও বহু চীনা ধাঁচের বৌদ্ধ মন্দির আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতনামা ওয়াত মাংকন কামলাওয়াত (วัดมังกรกมลาวาส)। চায়না টাউন এলাকায় অবস্থিত ওয়াত ট্রাইমিত (วัดไตรমิตรวิทยารามวรวิหาร) নামক একটি থাই বৌদ্ধ মন্দিরে বিশ্বের বৃহত্তম সোনার বুদ্ধমূর্তি রয়েছে।
  • চিয়াং মাই : প্রাক্তন লান্না রাজ্যের রাজধানী এবং বহু ঐতিহাসিক মন্দিরের কেন্দ্র।
  • ফ্রা পাঠমচেদি : থাইল্যান্ডের সবচেয়ে প্রাচীন স্তূপ। নামের অর্থ “এই ভূমির প্রথম তীর্থস্থান”। বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এই মন্দির খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৩ সালে নির্মিত হয়েছিল, অশোক সম্রাট সুবর্ণভূমি (বর্তমান থাইল্যান্ড) অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মপ্রচার শুরু করার প্রায় ২০ বছর পরে।
  • সুখোথাই
  • বাগান : বাগান রাজ্যের প্রাক্তন রাজধানী, যা আধুনিক মিয়ানমারের অধিকাংশ অঞ্চলকে একীভূত করেছিল। যদিও ১৪শ শতকের শুরুতে মঙ্গোলরা একে পরাজিত করে, তবুও ভূদৃশ্যে এখনো হাজারো মন্দির ছড়িয়ে আছে, যা সে সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আনন্দ মন্দির (အာနန္ဒာ ဘုရား), যা বুদ্ধের প্রধান শিষ্যের নামে নামকরণ করা, এবং সোনালি রঙের মনোরম শ্বেজিগন প্যাগোডা (ရွှေစည်းခုံဘုရား)।
  • পেগু : প্রাক্তন মন হন্থাওয়াদি রাজ্যের রাজধানী। বর্তমানে এখানে অবস্থিত শ্বেমোদো প্যাগোডা (ရွှေမောဓော ဘုရား), মিয়ানমারের সবচেয়ে উঁচু স্তূপ, এবং বিখ্যাত শায়িত বুদ্ধমূর্তি সহ শ্বেতাল্যাউং মন্দির (ရွှေသာလျှောင်းဘုရား)।
  • কাক্কু : কাক্কু প্যাগোডার জন্য পরিচিত, যেখানে প্রায় ২,৪০০টিরও বেশি স্তূপ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। এটি পা-ও জাতিগোষ্ঠীর কাছে একটি প্রধান তীর্থস্থান। সব দর্শনার্থীদের স্থানীয় পা-ও গাইডের সঙ্গে যেতে হয়, যাদের তাউংগিতে ভাড়া করা যায়।
মান্দালয়ের মহামুনি মন্দিরে পূজারীরা সোনার প্রলেপ দিচ্ছেন
  • মান্দালয় : এখানে বহু বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শ্বেনানদ মঠ (ရွှေနန်းတော်ကျောင်း), যা রাজপ্রাসাদের অংশ ছিল এবং পরে বর্তমান স্থানে সরিয়ে এনে বৌদ্ধ মঠে রূপান্তরিত করা হয়। এটি সূক্ষ্ম সেগুন কাঠের খোদাইয়ের জন্য পরিচিত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো কুথোদাও প্যাগোডা (ကုသိုလ်တော်‌ဘုရား), যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম বই সংরক্ষিত, এবং মহামুনি মন্দির (မဟာမုနိဘုရားကြီး), মান্দালয়ের সবচেয়ে পবিত্র মন্দির, যেখানে সোনালি প্রলেপে আচ্ছাদিত একটি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা দেশটির সবচেয়ে পূজিত মূর্তি।
    • মান্দালয়ের পাশের শহরগুলো:সাগাইং, আমরাপুরা, ইনওয়া ও মিংগুনেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্দির আছে।
  • ম্রাউক উ : রাখাইন রাজ্যের প্রাক্তন রাজধানী, যেখানে অনেক বৌদ্ধ মন্দির ছড়িয়ে রয়েছে।
  • পিন্দায়া : পিন্দায়া গুহার জন্য বিখ্যাত, যা এক বিশাল চুনাপাথরের গুহা এবং অসংখ্য বুদ্ধমূর্তি দ্বারা পূর্ণ। এটি দানো জাতিগোষ্ঠীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
  • ইয়াঙ্গুন : এখানে অবস্থিত বিখ্যাত শ্বেদাগন প্যাগোডা (ရွှေတိဂုံဘုရား), যা মিয়ানমারের সবচেয়ে পবিত্র বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে ধরা হয় এবং একটি প্রধান তীর্থগন্তব্য। ছোট আকারের সুলে প্যাগোডা (ဆူးလေဘုရား) শহরের ব্যস্ত এলাকায় এক শান্তির দ্বীপ হিসেবে বিবেচিত। অন্য একটি উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো চাউক্তাটজি মন্দির (ခြောက်ထပ်ကြီးဘုရားကြီး), যেখানে দেশের অন্যতম বিখ্যাত শায়িত বুদ্ধমূর্তি রয়েছে।
  • হ্যানয় : স্থাপত্যগত দিক থেকে অনন্য ওয়ান পিলার প্যাগোডা (Chùa Một Cột) এখানে অবস্থিত। শহরের বাইরের গ্রামে রয়েছে পারফিউম প্যাগোডা (Chùa Hương), যা ভিয়েতনামের সবচেয়ে পবিত্র বৌদ্ধ তীর্থস্থান হিসেবে ধরা হয় এবং তীর্থযাত্রীদের জনপ্রিয় গন্তব্য।
  • হোই আন
  • হো চি মিন সিটি : এখানে সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির হলো জেড সম্রাট প্যাগোডা (Chùa Ngọc Hoàng)। যদিও এটি নামমাত্র তাওবাদী মন্দির, তবুও এখানে বৌদ্ধ দেবতাদেরও বেদী রয়েছে, যেমন চিকিৎসা বুদ্ধ এবং অবলোকিতেশ্বর বোধিসত্ত্ব। শহরের চায়না টাউন এলাকা চোলনে অবস্থিত বেশ কয়েকটি চীনা মন্দিরের মধ্যে অন্যতম হলো কুয়ান আম প্যাগোডা (Chùa Quan Âm), যা অবলোকিতেশ্বর বোধিসত্ত্বকে উৎসর্গীকৃত।
  • হুয়ে
  • বোরোবুদুর : এক বিস্ময়কর প্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্সের স্থান।

পূর্ব এশিয়া

[সম্পাদনা]
  • দাজু শিলালিপি, চোংকিংয়ের নিকটে : ৭ম থেকে ১৩শ শতকের মধ্যে নির্মিত।
  • লাসা, তিব্বত : ১৬৪৯ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত দালাই লামার আবাসস্থল, বর্তমানে জাদুঘর ও বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
  • স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ, লুশান কাউন্টি, হেনান : ১২৮ মিটার উঁচু, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মূর্তি।
  • গুরুমে, লাসার উপকণ্ঠের এক গ্রাম : কামারপার আসন, যিনি দালাই লামা ও পানচেন লামার পর তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
  • শিগাতসে, তিব্বত : পানচেন লামার ঐতিহ্যবাহী আসন, যিনি তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের দ্বিতীয় প্রধান নেতা।
  • বৌদ্ধধর্মের চারটি পবিত্র পর্বত
  • ইউনগাং গুহা, শানসি প্রদেশ : ১,৫০০ বছর পুরনো ৫১,০০০-রও বেশি বৌদ্ধ খোদাই, যা ইয়ানগাং উপত্যকার গুহা ও পাহাড়ের ঢালে সংরক্ষিত।
  • বেইজিং : মানচু চিং রাজবংশের সম্রাটদের প্রিন্স আবাস হিসেবে নির্মিত, পরে বৌদ্ধ মন্দিরে রূপান্তরিত। এর স্থাপত্যশৈলী চীনা ও তিব্বতি ঐতিহ্যের এক অনন্য সংমিশ্রণ।
  • শিশুয়াংবান্না : দাই জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যারা মূলত থেরবাদী বৌদ্ধ এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। এখানে চীনের অন্যতম বৃহৎ থেরবাদী বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে।
  • তিয়ান তান বুদ্ধ, নং পিং, লানতাউ : ২৪০ ধাপের ওপরে অবস্থিত এক বিশাল ব্রোঞ্জের বসা বুদ্ধমূর্তি।
  • পো লিন মঠ, নং পিং, লানতাউ : ১৯০৬ সালে জিয়াংসু প্রদেশ থেকে আগত তিন ভিক্ষু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। প্রধান মন্দির ভবনে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বুদ্ধের তিনটি ব্রোঞ্জ মূর্তি রয়েছে।
  • ১০,০০০ বুদ্ধ মঠ, শা টিন, নিউ টেরিটরিজ : ১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আধুনিক মন্দির, যার মূল হলে ১২,৮০০-রও বেশি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। এখানে নয়তলা বিশিষ্ট এক স্তূপ ও আরও কিছু ছোট মন্দিরও রয়েছে।
  • চি লিন নানারি, ডায়মন্ড হিল, কোলুন : ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক মন্দির, ১৯৯৮ সালে তাং রাজবংশীয় স্থাপত্যে পুনর্নির্মিত। এর নান লিয়ান বাগানও তাং যুগের জাপানি বাগানশৈলীর আদলে তৈরি।

জাপানে মেইজি যুগের সংস্কারের ফলে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিয়ে করতে ও সন্তান জন্ম দিতে পারেন, এবং মন্দিরের প্রধানত্ব পিতার পর পুত্রের হাতে চলে যায়। সংস্কারগুলি ভিক্ষুদের ঐতিহ্যগত খাদ্যসংযমও বাতিল করে দেয়, ফলে অধিকাংশ জাপানি ভিক্ষুই মাংস খেয়ে থাকেন ও মদ পান করেন। ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ নিরামিষ খাদ্য শোজিন রিওরি (精進料理) এখনও বিদ্যমান, তবে এটি মূলত অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংরক্ষিত। এটি বর্তমানে জাপানে উৎকৃষ্ট খাদ্যরূপে বিবেচিত হয় এবং তাই সাধারণত বেশ ব্যয়বহুল।

  • দাইবুতসু, তোদাই-জি, নারা : জাপানের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। নির্মাণকাল ৭৫২ খ্রিষ্টাব্দ।
  • কামাকুরা দাইবুতসু, কামাকুরা, কানাগাওয়া : ১৩শ শতকে নির্মিত। পূর্ব জাপানে কামাকুরা শহরটি মন্দিরের জন্য পরিচিত।
  • উশিকু দাইবুতসু, উশিকু, ইবারাকি : ১৯৯৩ সালে নির্মিত, জোদো শিনশু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা শিনরানের জন্ম স্মরণে।
  • কিয়োটো : জাপানের প্রাক্তন রাজধানী এবং বৌদ্ধ মন্দিরের এক বৃহৎ কেন্দ্র। উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণ হলো কিয়োমিজু-দেরা (清水寺) ও কিনকাকু-জি (金閣寺)।
  • মাউন্ট কোয়া : এখানে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে এবং বিদেশিবান্ধব মন্দিরে থাকার (宿坊 শুকুবো) ব্যবস্থা আছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী জাপানি বৌদ্ধ নিরামিষ খাদ্যের অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়। কোঙ্গোবু-জি, শিংগন সম্প্রদায়ের প্রধান মন্দির, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান স্বীকৃত।

মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রধান ধর্ম হলো তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম, যদিও কমিউনিস্ট শাসনের মূর্তিভঞ্জন পর্বে এর অধিকাংশ ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধ সম্প্রদায় হলো জগিয়ে সম্প্রদায়, যারা টেম্পল স্টে কর্মসূচি পরিচালনা করে। এখানে দর্শনার্থীরা একরাত বৌদ্ধ মন্দিরে থাকতে পারেন। এতে সাধারণত বৌদ্ধ নিরামিষ খাবার পরিবেশিত হয় এবং ভিক্ষুদের সঙ্গে সঙ্গীতগান বা ধ্যানের মতো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।

  • চুং তাই চ্যান মন্দির (বা চুং তাই চ্যান সি), পুলি ত্রিশতলবিশিষ্ট এক মহিমান্বিত জেন মন্দির
  • ধর্ম ড্রাম মাউন্টেন, জিনশান, নিউ তাইপেই একটি বৃহৎ বৌদ্ধ মহাবিদ্যালয় ও জেন মঠ
  • ফো গুয়ান শান, দাশু, কাওশিয়ুং একটি বৃহৎ জেন মঠ, সঙ্গে জাদুঘর
খ্রিষ্টাব্দ ৭১৩ সালের লেশান মহাবুদ্ধ

মধ্য এশিয়া

[সম্পাদনা]
  • বামিয়ান, আফগানিস্তান : একসময় বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি, দুটি ৬ষ্ঠ শতকের ভাস্কর্য যেগুলি পাহাড় খোদাই করে নির্মিত হয়েছিল। ২০০১ সালে তালেবানের মূর্তিভঞ্জন আন্দোলনে এগুলি ধ্বংস হয়। অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ আজও এই অনিরাপদ অথচ মনোরম অঞ্চলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
  • তেরমেজ, উজবেকিস্তান : কুষাণ যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় থেকে ১ম শতক) প্রাচীন বাক্ট্রিয়ার বৌদ্ধধর্মের প্রধান কেন্দ্র। পুনর্নির্মিত ফায়াজ তেপে মন্দির এবং কারা তেপে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনও মরুভূমির এই শহরে বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে।
  • বুরিয়াতিয়া : দক্ষিণে মঙ্গোলিয়ার সীমান্তসংলগ্ন এই অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে মঙ্গোলিয়ার মিল রয়েছে। আর্শানের মঙ্গোলীয় ধাঁচের মন্দির, যা সাইবেরিয়ার মনোরম অরণ্যে অবস্থিত, অবশ্যই দেখার মতো।
  • কালমিকিয়া : ১৭শ শতকে মঙ্গোলিয়া থেকে আগত কালমিক জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা গঠিত এই স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রটি ক্যাসপিয়ান সাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইউরোপের একমাত্র বৌদ্ধ জাতি হিসেবে বিবেচিত। সোভিয়েত আমলের নিধনযজ্ঞে এর অধিকাংশ ঐতিহ্য ধ্বংস হয়েছিল, তবে বর্তমানে এখানে নতুন মন্দির ও বিহার নির্মিত হয়েছে। রাজধানী এলিস্তায় ২০০৫ সালে নির্মিত এক বিশাল মন্দির বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
  • তুভা : সাইবেরিয়ার এই অঞ্চলে প্রধান ধর্ম হলো তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম, যা স্থানীয় শামানধর্মের সঙ্গে মিশ্রিত। এখানকার বিখ্যাত কণ্ঠসঙ্গীত "থ্রোট সিংগিংয়ের" জন্য অঞ্চলটি পরিচিত, যেখানে একসঙ্গে একাধিক সুর তোলা হয়। এখানে নিয়মিতভাবে বড় আকারের বৌদ্ধ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে সাধারণ মানুষও অংশ নিতে পারে।

ঐতিহাসিক বুদ্ধ যে ভাষায় কথা বলেছেন বলে মনে করা হয়, সেটি একটি বিলুপ্ত প্রাচীন ইন্দো-আর্য ভাষা, যার নাম মাগধী প্রাকৃত। ধারণা করা হয়, জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর, যিনি বুদ্ধের প্রায় সমসাময়িক ছিলেন, তিনিও এই ভাষাকেই মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করতেন।

অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যে দেশে বা অঞ্চলে বসবাস করেন, সেখানকার স্থানীয় ভাষাতেই কথা বলেন। তবে ধর্মীয় ধারণাগুলো প্রায়শই সেই ভাষা থেকেই ধার করা শব্দে প্রকাশিত হয়, যেখানে ধারণাটির উৎপত্তি ঘটেছিল। অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থের মূল সংস্করণ প্রাচীন ভারতীয় ভাষা [সংস্কৃত]]পালি ভাষায় রচিত। বৌদ্ধ প্রার্থনাগুলি সাধারণত পালি বা সংস্কৃত ভাষা থেকে স্থানীয় ভাষায় কেবল ধ্বনিগত রূপে রূপান্তরিত হয়।

তবে ভারতের বিভিন্ন যুদ্ধের কারণে মহাযান ও বজ্রযান বৌদ্ধ গ্রন্থগুলির মূল সংস্কৃত সংস্করণ হারিয়ে গেছে। এগুলো কেবল তাদের চীনাতিব্বতি অনুবাদ এবং/অথবা ধ্বনিগত রূপান্তরের মাধ্যমে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু এসব চীনা ও তিব্বতি ভাষা শাস্ত্রীয় রূপে রচিত, যা সেই ভাষার স্থানীয় বক্তাদের পক্ষেও বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া বোঝা কঠিন।

আধুনিক যুগে, যেসব বৌদ্ধ গ্রন্থের অর্থ জানা আছে, সেগুলি ইংরেজি ও অন্যান্য প্রধান বিশ্বভাষায় অনূদিত হয়েছে। যেসব মন্দির ও ধ্যানকেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক বিদেশি তীর্থযাত্রী আসেন, সেখানে প্রায়ই ইংরেজি ভাষার ক্লাসের ব্যবস্থা থাকে।

যা করবেন

[সম্পাদনা]

আধ্যাত্মিক রিট্রিট ভ্রমণ হলো অবসর ভ্রমণের একটি শাখা। সেখানে মানুষ ধ্যান করতে যায় তাদের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে, মানসিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে, আত্ম-উপলব্ধি অর্জন করতে এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে।

উদাহরণস্বরূপ, বিপাসনা ধ্যান থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে যুক্ত একটি অনুশীলন। "বিপাসনা" শব্দটির অর্থ সংস্কৃত থেকে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় "সুস্পষ্ট দেখা"। রিট্রিট কেন্দ্রগুলো সাধারণত সুন্দর পরিবেশ ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলীতে স্থাপিত হয়। কেরলশ্রীলঙ্কার কিছু বিলাসবহুল হোটেল আয়ুর্বেদ প্যাকেজের পরিপূরক হিসেবে কিছু বিপাসনা রিট্রিটের ব্যবস্থা রাখে। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধ্যানকেন্দ্রগুলো সাধারণত অল্প টাকার বিনিময়ে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে। এদের অধিকাংশই দান-ভিত্তিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। যারা বৌদ্ধ মঠ বা ধ্যানকেন্দ্রে থাকতে চান, তাদের চাদর, তোয়ালে, ব্যবহার্য সামগ্রী সঙ্গে আনতে হয়, কারণ এগুলো রিট্রিটের বাইরে সাধারণত পাওয়া যায় না। বৌদ্ধ মঠগুলো সাধারণত নীরব পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য এগুলো চমৎকার বিকল্প হলেও, কেবল আরামপ্রিয় ছুটি কিংবা বিলাসিতায় অভ্যস্ত ভ্রমণকারীদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে। অংশগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা বিধি ও কঠোর দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলতে হয়।

থেরবাদ বৌদ্ধ সমাজে পুরুষদের জীবনে অন্তত একবার সন্ন্যাসী হিসেবে কিছু সময় কাটানো প্রচলিত রীতি। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের মতো কিছু দেশ বিশেষ ভিসা প্রদান করে বিদেশি পুরুষদের জন্য, যারা সন্ন্যাসী হিসেবে থেকে বৌদ্ধধর্ম অধ্যয়ন করতে চান। এই ভিসার জন্য যোগ্য হতে হলে একটি মঠের স্পন্সরশিপ এবং সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে এটি হঠাৎ নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়, কারণ আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি যে মঠে থাকতে চান, তার কাছে আপনার আন্তরিকতা রয়েছে। সন্ন্যাসজীবনের সময় আপনাকে কঠোর নিয়ম মানতে হবে এবং ভোগবিলাস থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে মহিলারা সন্ন্যাসিনী হিসেবে দীক্ষা নিতে পারেন না, তাই মহিলাদের জন্য এই সুযোগ নেই।

অন্যদিকে, মহাযান বৌদ্ধ সমাজ মহিলাদের সন্ন্যাসিনী হিসেবে দীক্ষা নিতে অনুমতি দিলেও, সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনী হওয়া সাধারণত আজীবন প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই অস্থায়ীভাবে সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে কিছু মহাযান বৌদ্ধ মঠে তাদের সাধারণ অনুসারীদের জন্য টেম্পল স্টে প্রোগ্রাম থাকে, যেখানে তারা কিছু সময় মঠে থেকে বৌদ্ধধর্ম অধ্যয়ন করতে পারেন। এই সময়ে তাদের সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের রুটিন অনুসরণ করতে হয়। জাপানদক্ষিণ কোরিয়ার কিছু মন্দির পর্যটকদের জন্য টেম্পল স্টে প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। তবে অংশগ্রহণ করতে হলে তাদের মঠের রুটিন মানতে হবে, যেমন ভোরে প্রার্থনার জন্য উঠতে হবে এবং কাজের ভাগ নিতে হবে।

গৃহী অনুসারীরা সবসময় নিয়মিত প্রার্থনাসভায় সন্ন্যাসীদের সঙ্গে জপে যোগ দিতে পারেন। অ-বৌদ্ধ দর্শনার্থীরাও এতে যোগ দিতে স্বাগত, তবে শালীন আচরণ করতে হবে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

কেনাকাটা

[সম্পাদনা]
  • বুদ্ধের মূর্তি ও অন্যান্য পবিত্র প্রতিমা বৌদ্ধ অঞ্চলের অনেক দোকানে পাওয়া যায়।
  • মালা বা জপমালা, যা ধ্যান ও পাঠের সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বৌদ্ধ গোম্পা ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাওয়া যায়।
  • পবিত্র বস্তু ও গ্রন্থ আবৃত করার জন্য কাপড়।
  • পূজার জন্য ধূপ।
  • বৌদ্ধধর্মের ধারাবাহিকতা বা নির্দিষ্ট শাখার সঙ্গে সম্পর্কিত বইপত্র।

খাওয়া-দাওয়া

[সম্পাদনা]
বুদ্ধের ডিলাইটের অনেক রকমভেদ রয়েছে

ইহুদিধর্ম, ইসলাম বা হিন্দুধর্মের মতো বৌদ্ধধর্মে কঠোর খাদ্যবিধি নেই। তবে অধিকাংশ মহাযান বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের নিরামিষভোজী হতে বাধ্য করে এবং গৃহী অনুসারীদেরও নিরামিষ খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। এমনকি অনেক অ-নিরামিষ বৌদ্ধও নির্দিষ্ট বৌদ্ধ উৎসবের সময় নিরামিষভোজী হয়ে থাকেন।

  • বুদ্ধের ডিলাইট : প্রচলিত চীনা বৌদ্ধ নিরামিষ খাবার।
  • নিরামিষ রান্না : যা মহাযান বৌদ্ধ মঠগুলোতে ভিক্ষু, ভিক্ষুণী ও দর্শনার্থীদের পরিবেশন করা হয়। এতে সয়াবিন বা গমের গ্লুটেন দিয়ে তৈরি মাংসের মতো কৃত্রিম খাদ্য থাকতে পারে।

অধিকাংশ পূর্ব এশীয় দেশে বৌদ্ধ নিরামিষ রেস্তোরাঁ রয়েছে। এগুলো কেবল মাংস-মুক্ত নয়, বরং "পাঁচটি তীব্র সবজি" থেকেও মুক্ত থাকতে হয়—যথা পেঁয়াজ, রসুন, পেঁয়াজপাতা, শ্যালট ও লিক। মহাযান বৌদ্ধ দর্শনে এগুলোকে কামোদ্দীপক মনে করা হয় এবং তাই ধর্মে ধ্যানের ক্ষমতা ব্যাহত করে। ডিম খাওয়া যাবে কি যাবে না, তা নির্ভর করে সম্প্রদায়ভেদে; কিছু সম্প্রদায় নিষিক্ত নয় এমন ডিম ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের খাওয়ার অনুমতি দেয়, আবার কিছু সম্প্রদায় পুরোপুরি ডিম খাওয়া নিষিদ্ধ করে। জাপানদক্ষিণ কোরিয়ায় এই ধরনের রান্না সাধারণত বিশেষায়িত আড়ম্বরপূর্ণ ভোজনালয়ে পরিবেশন করা হয় এবং তাই খুব ব্যয়বহুল। অন্যদিকে তাইওয়ান, হংকং, চীন, ভিয়েতনামসিঙ্গাপুরের মতো জায়গায় নিরামিষ খাবারের বিকল্প রয়েছে—সস্তা ও পরিপূর্ণ রাস্তার খাবার থেকে শুরু করে অতিবিলাসবহুল খাবার পর্যন্ত এবং মাঝামাঝিও অসংখ্য বিকল্প।

পানীয়

[সম্পাদনা]
  • অধিকাংশ বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানেই চা-পানের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

রাত্রিযাপন

[সম্পাদনা]

অনেক বৌদ্ধ মন্দির এমন অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করে, যারা মন্দিরের শান্ত পরিবেশে ধ্যান ও মনন করতে চান। তবে এই বিকল্প বেছে নিতে হলে অতিথিদের সাধারণত অগ্রিম বুকিং করতে হয় এবং কঠোর রুটিন মেনে চলতে হয়। একই সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হয়।

লেখাপড়া

[সম্পাদনা]

বৌদ্ধ মন্দির ও ধ্যানকেন্দ্র সব ধর্মের মানুষকে স্বাগত জানায়। এগুলো কেবল বৌদ্ধ দেশেই নয়, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপসহ অনেক বড় শহরে এবং এমনকি কিছু ছোট শহরেও বিদ্যমান।

নিরাপত্তা

[সম্পাদনা]

পাশ্চাত্য দেশগুলোতে বৌদ্ধধর্ম খুব প্রচলিত নয়, তাই অনেক প্রতারণা রয়েছে যা পর্যটকদের বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে অজ্ঞতাকে কাজে লাগায়। নিচে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো, যাতে কয়েকটি সাধারণ প্রতারণা এড়ানো যায়।

  • ভিক্ষুরা কোনো ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রি করেন না। মন্দিরের দোকানে যে ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রি হয়, সেগুলো সবসময় গৃহীরা পরিচালনা করেন, ভিক্ষুরা নয়।
  • মহাযান বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ভিক্ষা সংগ্রহে বের হন না। পরিবর্তে, তারা হয় নিজেরাই খাদ্য উৎপাদন করেন অথবা মন্দিরে আসা দানের টাকা দিয়ে তা কেনেন। চীনা, কোরীয় ও ভিয়েতনামী প্রথার ভিক্ষুরা অবশ্যই নিরামিষভোজী হতে বাধ্য।
  • থেরবাদ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা টাকা স্পর্শ করতে পারেন না, এবং ভিক্ষুকে টাকা দেওয়া অশ্রদ্ধারূপে গণ্য হয়। ভিক্ষার পাত্র কেবল খাদ্য সংগ্রহের জন্যই ব্যবহার করা হয়।
  • থেরবাদ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কেবল সকালে ভিক্ষা সংগ্রহ করেন এবং দুপুরের পর আর খাওয়া তাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাদের খাবার বাছাই করার অনুমতি নেই এবং যা দেওয়া হয় তাই খেতে হয়।
  • মন্দিরগুলোতে দানবাক্স থাকে যেখানে অনুসারীরা তাদের আর্থিক অনুদান রাখতে পারেন। মন্দির কখনো জোর করে দান আদায় করে না, বরং পুরোপুরি ব্যক্তির উপর ছেড়ে দেয় তিনি কতটা দান করতে চান বা আদৌ করবেন কি না।
  • আপনাকে খাঁচাবন্দি পাখি বা অন্যান্য প্রাণী মুক্ত করার জন্য টাকা দিতে বলা হতে পারে। এই প্রথাকে "জীব মুক্তি" বলা হয় এবং এটি প্রদানকারীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনে বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে এসব প্রাণী ইচ্ছাকৃতভাবে ধরাও হতে পারে কেবল মুক্ত করার উদ্দেশ্যে, এবং প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখা হয়। বিদেশি প্রাণীকে পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া গুরুতর পরিবেশগত ক্ষতি করে, এবং এতে অংশগ্রহণকারীরা অনুপ্রবেশকারী প্রজাতি ছেড়ে দেওয়া বা প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার জন্য আইনত দণ্ডিত হতে পারেন।

শ্রদ্ধা

[সম্পাদনা]
ভিক্ষুদের দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ভিক্ষা-সামগ্রী

সব বৌদ্ধ মন্দির সব ধর্মের মানুষকে স্বাগত জানায়, তবে প্রত্যেকের কাছ থেকেই আশা করা হয় যে মন্দির প্রাঙ্গণে যথাযথ শ্রদ্ধাশীল আচরণ করবেন।

  • এমন পোশাক পরুন যা স্থানের পবিত্রতাকে শ্রদ্ধা করে। অর্থাৎ কাঁধ ও পেট ঢাকা থাকতে হবে এবং স্কার্ট বা প্যান্ট হাঁটুর নিচে নামতে হবে।
  • প্রধান মন্দির/স্তূপ প্রাঙ্গণে খালি পায়ে প্রবেশ করুন।
  • স্তূপ ও অন্যান্য পবিত্র বস্তু ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রদক্ষিণ করুন।
  • প্রার্থনা চাকা ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরান।
  • শান্তি ও নীরবতা বজায় রাখুন।
  • মূর্তি বা অন্য পবিত্র বস্তুর উপর উঠবেন না।
  • মন্দিরের মূর্তির সামনে সেলফি তুলবেন না।
  • কোনো শিক্ষক (যদি বক্তৃতা/অনুষ্ঠানে অংশ নেন) বা বুদ্ধের প্রতিমা—হোক তা মূর্তি বা ছবি—সামনে বসে পায়ের তলা দেখাবেন না (সব বৌদ্ধ মন্দিরেই এটি গুরুত্বপূর্ণ)।
  • মূর্তির দিকে তর্জনী আঙুল নির্দেশ করবেন না। পরিবর্তে বুড়ো আঙুল বা খোলা হাত ব্যবহার করুন।
  • মূর্তির সঙ্গে ছবি তোলার জন্য বেদীতে উঠবেন না, এটি অত্যন্ত অশ্রদ্ধাজনক বলে বিবেচিত হয়।

বুদ্ধের প্রতিমূর্তি

[সম্পাদনা]

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব এশিয়ায় ভ্রমণকারীরা প্রায়ই বুদ্ধমূর্তি কেনেন, তবে তারা হয়তো জানেন না বৌদ্ধদের কাছে বুদ্ধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধমূর্তি কেনা বা বাড়িতে রাখা কোনো ভুল নয়, তবে অনেক বৌদ্ধ মনে করেন বুদ্ধকে কোনোভাবে অনুপযুক্তভাবে উপস্থাপন করা চরম অশ্রদ্ধাজনক।

বুদ্ধধর্মের পবিত্রতা বজায় রাখতে বুদ্ধের চিত্রায়ন ও "বুদ্ধ" শব্দ ব্যবহারে নিম্নলিখিত পরামর্শ মানা উচিত।

  • বুদ্ধ বা বৌদ্ধ প্রতীকযুক্ত পোশাক পরবেন না; এটি থেরবাদ দেশগুলোতে অশ্রদ্ধাজনক গণ্য হয়, এবং মিয়ানমারে বেআইনি।
  • বুদ্ধ বা বৌদ্ধ প্রতীকযুক্ত উল্কি করাবেন না; এটি থেরবাদ দেশগুলোতে অশ্রদ্ধাজনক গণ্য হয়, এবং মিয়ানমারেশ্রীলঙ্কায় বেআইনি। তবে বজ্রযান দেশগুলোতে শরীরের উপরের অংশে বুদ্ধ-সম্পর্কিত উল্কি রাখা গ্রহণযোগ্য।
  • বুদ্ধকে অনুপযুক্তভাবে উপস্থাপন করবেন না; ২০০৪ সালে "হলিউড বুদ্ধ" চলচ্চিত্রের পোস্টারে একটি বুদ্ধমূর্তির মাথার উপর একজনকে বসানো অবস্থায় দেখানো হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
  • বুদ্ধের নাম অনুপযুক্ত বা অশ্রদ্ধাজনকভাবে ব্যবহার করবেন না। আপনার পোষা প্রাণীর নাম "বুদ্ধ" রাখা উচিত নয় এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের নামও "বুদ্ধ" রাখা উচিত নয়। এটি বুদ্ধ ও তার শিক্ষাকে হেয় করার সমান।
  • বুদ্ধমূর্তি কখনোই বাথরুমে বা বারে রাখবেন না; মেঝেতে বা উপরে সাধারণ জিনিসপত্র রেখে দেবেন না। বৌদ্ধরা এটিকে অশ্রদ্ধাজনক মনে করেন।
  • নিয়মিত বুদ্ধমূর্তি পরিষ্কার করুন; এটি না করা অশ্রদ্ধারূপে গণ্য হয়।
  • বুদ্ধমূর্তির দিকে পেছন ফিরিয়ে ছবি তুলবেন না; এটি অত্যন্ত অশ্রদ্ধাজনক। তবে বুদ্ধমূর্তির ছবি তোলা গ্রহণযোগ্য, যদি না কোনো নিষেধাজ্ঞার সাইন থাকে।
  • আপনার বুদ্ধমূর্তিকে এমনভাবে স্থাপন করার কথা ভাবতে পারেন যাতে এটি আপনার বাড়ির প্রধান দরজার দিকে মুখ করে থাকে; কিছু বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে এটি শুভ বলে বিবেচিত হয়।

ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী

[সম্পাদনা]

থেরবাদ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে কোনো শারীরিক সংস্পর্শ রাখা নিষিদ্ধ, এমনকি তাদের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গেও নয়। কোনো মহিলা যদি ভিক্ষুকে খাবার দিতে চান, তবে তা ভিক্ষুর মাটিতে রাখা কাপড়ের উপর রাখতে হবে, অথবা একজন পুরুষকে দিয়ে দিতে হবে, যিনি ভিক্ষুর হাতে পৌঁছে দেবেন। জাপান ব্যতীত, যেখানে ভিক্ষুরা বিয়ে করতে পারেন, অন্যান্য সব ধারার ভিক্ষুরা যেকোনো ধরনের যৌন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য।

ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের সম্বোধন

[সম্পাদনা]

বৌদ্ধ সংস্কৃতির ভাষাগুলোতে ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের জন্য নির্দিষ্ট সম্বোধন ও সম্ভাষণ প্রচলিত।

চীনা ভাষায়, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের সাধারণত শিফু (師父/师父) বলে সম্বোধন করা হয় এবং এমি-তো-ফো (阿彌陀佛/阿弥陀佛) উচ্চারণ করে অভিবাদন জানানো হয়। এই সময়ে হাত দুটি বুকের কাছে জোড়া দিতে হয়, আঙুলগুলো একসঙ্গে রেখে উপরের দিকে নির্দেশ করতে হয় এবং মাথা সামান্য নিচু করতে হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
This TYPE বৌদ্ধধর্ম has ব্যবহারযোগ্য অবস্থা TEXT1 TEXT2

{{#assessment:প্রসঙ্গ|ব্যবহারযোগ্য}}

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন