উইকিভ্রমণ থেকে


গোরুমারা জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত।

বিবরণ[সম্পাদনা]

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের পথ

ইতিহাস[সম্পাদনা]

গোরুমারা বনাঞ্চলটি ১৯৪৯ সালে একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং ১৯৯২ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হয়।

পরিবেশ[সম্পাদনা]

গোরুমারা জাতীয় উদ্যান ডুয়ার্স অঞ্চলে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। মূর্তি নদী ও রায়ডাক নদ এই উদ্যানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীতীরবর্তী তৃণভূমি এই সাভানা বনভূমির মাঝে মাঝে পরিকীর্ণ। বনভূমির অধিকাংশই আর্দ্র পর্ণমোচী উদ্ভিদে পূর্ণ। যে গাছটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, সেটি হল শাল। এছাড়াও সেগুন, শিমুল, শিরিষ, খয়ের ইত্যাদি দেখা যায়।

প্রাণী[সম্পাদনা]

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে ৫০টি নথিবদ্ধ স্তন্যপায়ী প্রজাতি, ৩০০টি পাখির প্রজাতি, ২০টি সরীসৃপের প্রজাতি এবং ৩০টি উভচর প্রজাতি পাওয়া যায়।

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে কুনকি হাতি

স্তন্যপায়ী: গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে ভারতীয় গণ্ডার, গৌর, এশীয় হাতি, শ্লথ ভাল্লুক, চিতল ও সম্বর হরিণের মতো বড়ো আকারের তৃণভোজী প্রাণী প্রচুর দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে বড়ো আকারের মাংসাশী প্রাণীর অভাব রয়েছে। ব্যাঘ্র প্রজাতির একমাত্র চিতাবাঘই এখানে পাওয়া যায়। কিন্তু বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় বুনো কুকুর বা ভারতীয় নেকড়ের মতো প্রজাতি এখানে পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে অবশ্য বাঘের সন্ধান মেলে। তবে বিভিন্ন ধরনের ভাম, নেউল ও ছোটো বিড়াল দেখা যায়। এই উদ্যানে প্রচুর বুনো শুয়োর দেখা যায়। এছাড়া অতিবিপন্ন বেঁটে শুয়োরও এখানে দেখা গিয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া বড়ো কাঠবিড়ালিসহ তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণীও দেখা যায়। জানা গিয়েছে যে, এই উদ্যানে দুষ্প্রাপ্য হিসপিড খরগোশও রয়েছে।

পাখি: গোরুমারা জাতীয় উদ্যান প্রচুর সংখ্যক পাখির জন্যও বিখ্যাত – যার মধ্যে আলতাপরি, মৌটুসি, শাহ-বুলবুল, কেশরাজ ও রাজ ধনেশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অসংখ্য কাঠঠোকরা ও মথুরা পাখিও এই উদ্যানে বাস করে। ময়ূর প্রচুর দেখা যায়। চখাচখিসহ বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখিও এই উদ্যানে নিয়মিত আসে।

সরীসৃপ ও উভচর: এই জাতীয় উদ্যানে বহু সংখ্যক বিষধর ও বিষহীন সাপ দেখা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাপ ভারতীয় অজগর ও বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপগুলির অন্যতম গোখরো।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

এখানে আসুন[সম্পাদনা]

  • আকাশপথে - বাগডোগরা (শিলিগুড়ি থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) এই জাতীয় উদ্যানের নিকটতম বিমানবন্দর।
  • রেলপথে – নিকটবর্তী রেল স্টেশনটি হল নিউ ময়নাগুড়ি (২০ কিলোমিটার) ও নিউ মাল (৩০ কিলোমিটার)। এছাড়া শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার রেল স্টেশন থেকেও জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার লাটাগুড়িতে ৩১ নং জাতীয় সড়ক ধরে জিপ বা গাড়িতে উপস্থিত হওয়া যায়। উত্তরে চালসা ও দক্ষিণে ময়নাগুড়ি হল নিকটবর্তী রেল স্টেশন। জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নিকটতম রেল স্টেশন মাদারিহাট। যদিও যে নিকটতম স্টেশনে দূরপাল্লার মেল/এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি থামে সেটি হল মাল জংশন।
  • সড়কপথে : শিলিগুড়ি ও গুয়াহাটি শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ৩১ নং জাতীয় সড়ক গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের কাছে লাটাগুড়ি (শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত), চালসা ও নাগরাকাটার উপর দিয়ে গিয়েছে। লাটাগুড়ি থেকে গোরুমারার দূরত্ব ১ কিলোমিটার এবং চালসা থেকে ১০ কিলোমিটার। জাতীয় উদ্যানে ঢুকতে চালসা বা লাটাগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করলে ভালো হয়।

প্রবেশমূল্য ও ছাড়পত্র[সম্পাদনা]

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে প্রবেশে জন প্রতি প্রবেশমূল্য ৪০ টাকা। এছাড়া গাইড ও পার্কিং ফি আলাদা। বৃহস্পতিবার জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকে।

আশেপাশে দেখুন[সম্পাদনা]

  • 1 ভারত-ভুটান সীমান্ত (Q2749121)
  • 2 জলঢাকা নদী উইকিপিডিয়ায় জলঢাকা নদী (Q6126710)
  • 3 লাটাগুড়ি উইকিপিডিয়ায় লাটাগুড়ি (Q15241808)
  • 4 মূর্তি নদী (Q112603985)
  • 5 রায়ডাক নদী (রায়ডাক নদ)। উইকিপিডিয়ায় রায়ডাক নদী (Q3647339)
  • 6 তিস্তা নদী উইকিপিডিয়ায় তিস্তা নদী (Q907883)

দেখুন[সম্পাদনা]

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের শ্রেষ্ঠ উপায় হল শক্তিশালী দূরবীনের ব্যবহার। এছাড়া রাত্রিকালীন সার্চলাইট এবং অসংখ্য ওয়াচটাওয়ারের সুবিধাও এই উদ্যানে পাওয়া যায়। ওয়াচটাওয়ারগুলি হল:

  • চন্দ্রচূড় ওয়াচটাওয়ারমূর্তি ফরেস্ট বাংলোর কাছে
  • চুকচুকি বার্ড-ওয়াচিং পয়েন্টপাখি পর্যবেক্ষণের পক্ষে ভালো
  • যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচটাওয়ারএকটি স্বনামধন্য হাতির নামাঙ্কিত
  • মেদলা ওয়াচটাওয়ার
  • রাইনো অবজারভেশন পয়েন্টগোরুমারা বন বাংলোর সম্মুখবর্তী ওয়াচটাওয়ার

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে রেঞ্জার-পরিচালিত বা অন্য কোনও রকম ভাবে যানবাহন বা হস্তীপৃষ্ঠে সাফারির বন্দোবস্ত নেই। পাকা রাস্তায় হাইকিং-এর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এই অরণ্যে হাতি, গৌর ও গণ্ডারের সংখ্যাধিক্যের কারণে তা নিরাপদ নয়। বর্ষাকালে (সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত) জাতীয় উদ্যানটি বন্ধ থাকে।

করুন[সম্পাদনা]

কিনুন[সম্পাদনা]

আহার করুন[সম্পাদনা]

পান করুন[সম্পাদনা]

  • দ্যা সল্ট পিট, চক মৌলানি, লাটাগুড়ি, +৯১ ৯৭৩ ৩৫০৮৬০০, +৯১ ৯৭৩ ৩৫৩৮৬৬৬
  • জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ, মাদারিহাট