সামতাবেড় হল ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ অঙ্গরাজ্যের হাওড়া জেলার একটা বর্ধিষ্ণু গ্রাম। যেখানে বাংলার স্বনামধন্য কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর মধ্যজীবনে এক স্থায়ী আস্তানা গড়ে বসবাস করতে শুরু করেন। রূপনারায়ণ নদের পূর্ব কূলে এই সামতাবেড় গ্রামেই শরৎচন্দ্রের বসতবাড়ি আছে। অনেকটা জমির ওপর ইঁটের ভিত দেওয়া দোতলা মাটির দেওয়ালের বাড়ি। কাঠের কাঠামোর ওপর টিনের ছাউনি। পুরো বাড়িটা বাগান দিয়ে ঘেরা। সামনের দিকে আম, পেয়ারা, ডালিম ইত্যাদি ফলের গাছ; আর পিছনে বাঁশ বাগান। বাড়ির লাগোয়া দক্ষিণ দিকে দু-দুটো বড়ো আকারের ঘেরা পুকুর। তাতে খিলখিল করে ছোটোবড়ো নানারকম মাছ; আবার জলতলের ওপরে সারি বাঁধা হাঁস এবং পানকৌড়ির অবাধ যাতায়াত। একটা পুকুর চান করার জন্যে; অন্যটা পানীয় জলের পুকুর। তাতে নামা নিষেধ! একেবারে আদর্শ গ্রাম বলতে যা বোঝায়, তার সব উপাদানই সামতাবেড়ে মজুত। ঠিক এই অবস্থাটা অনেক যুগ বজায় ছিল। কিন্তু ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঘরভাঙানি বন্যা এই অঞ্চলের প্রায় সব মাটির বাড়িই ভেঙে মাঠ করে দিলেও শরৎচন্দ্রের দোতলা মাটির বাড়িটার অস্তিত্ব মুছে যায়নি! তবে খানিকটা বন্যাবিধ্যস্ত করে দিয়েছিল। বন্যার পর তৎকালীন রাজ্য সরকার শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়িটা সন্তর্পণে মেরামত করে সংরক্ষণ করেছিল। বর্তমানে রাজ্য সরকারের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন শরৎচন্দ্রের বাড়িটাকে ভ্রমণপিপাসুদের জন্যে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একসময় বাড়ির আঙিনায় একজোড়া ময়ূর ছিল। এছাড়া ছোটো রংবেরংয়ের বাহারি গাছ দিয়ে বাগানের মাঝখানে লেখা থাকত 'শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়'।
সামতাবেড় এবং আশেপাশের গ্রাম হল শরৎময়। পাশের গ্রাম পানিত্রাস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে শরৎস্মৃতি পল্লী পাঠাগার তারই সাক্ষ্য বহন করে।
শরৎমেলা
[সম্পাদনা]প্রত্যেক বছর মাঘ মাসের ২ তারিখ থেকে স্থানীয় পানিত্রাস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শরৎচন্দ্রের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শরৎমেলা বসে। কয়েকদিন ধরে মেলাতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা শরৎ অনুরাগীদের ভিড়ে মেলামাঠ জমজমাট হয়ে ওঠে।
কীভাবে যাবেন?
[সম্পাদনা]- কলকাতা (হাওড়া স্টেশন) থেকে দক্ষিণপূর্ব রেলের লোকাল ট্রেনে দেউলটি স্টেশনে নেমে উত্তর দিকে ছ-নম্বর জাতীয় সড়কের আন্ডারপাস পার হয়ে অটোরিকশা কিংবা সাইকেল ভ্যানে শরৎ রোড ধরে চার কিলোমিটার উত্তরে গেলেই সামতাবেড় শরৎচন্দ্রের বাড়ি।
- কলকাতার সিদো-কানহু ডহর (এসপ্ল্যানেড) থেকে মেদিনীপুর, হলদিয়া, ঝাড়গ্রাম, দিঘাগামী যেকোনো দূর পাল্লার সাধারণ/বাতানুকূল বাসে ছ-নম্বর জাতীয় সড়কের দেউলটি স্টপেজে নেমে অটোরিকশা করে শরৎচন্দ্রের বাড়ি, সামতাবেড়।
- নিজের গাড়িতে কলকাতা থেকে কোনা এক্সপ্রেস, ছ-নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সাঁতরাগাছি, ধুলাগড়, উলুবেড়িয়া, বাগনান, দেউলটি হয়ে সামতাবেড় আনুমানিক সত্তর কিলোমিটার পথ।