অনুরাধাপুর শ্রীলঙ্কার উত্তর মধ্য প্রদেশের একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত শহর।
জানুন
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিক এই অঞ্চল শহরের উত্তর-পশ্চিমে একটি বৃহৎ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত যেখানে অনেক প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এটি এখনও গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। বিদেশী পর্যটকদের পরিবর্তে তুলনায় এখানে সাদা পোশাক পরিহিত শ্রীলঙ্কান তীর্থযাত্রী এবং দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি। তাই সিগিরিয়া এবং পোলোনারুয়ার তুলনায় এখানে পর্যটকদের ভীড় কম এবং ভ্রমনার্থীদের জন্য পরিবেশ কম হয়রানিমূলক।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]- অনুরাধাপুর শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাচীন শহর। দেশে প্রথম এখানেই বৌদ্ধধর্মের সূচনা হয়েছিল। বিভিন্ন প্রাচীন প্রাসাদ এবং মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান ও প্রাচীন ঐতিহ্যের জন্য এই স্থান পরিচিত। এটি শ্রীলঙ্কার আটটি পবিত্র স্থানের মধ্যে একটি।
প্রবেশ করুন
[সম্পাদনা]বিমানপথে
[সম্পাদনা]- অনুরাধাপুর বিমানবন্দর
- ফার্স্ট এয়ার - কলম্বো-রাতমালানা থেকে চার্টার ফ্লাইট
সড়কপথে
[সম্পাদনা]এ নাইন সড়কপথ ধরে বাসে সহজেই অনুরাধাপুর পৌঁছে যাওয়া যায়। অনুরাধাপুরের বাস্তিয়ান মাওয়াথা টার্মিনালের থেকে কলম্বো যাওয়া ও আসার বাস পাওয়া যায়। সড়কপথে কলম্বো ও অনুরাধাপুরের দূরত্ব ৫ ঘন্টা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন সাধারন বাসের খরচ প্রায় ৩৫০ রুপি। এছাড়াও ক্যান্ডি, ডাম্বুলা, ত্রিনকোমালি এবং অন্যান্য অনেক শহরের সাথে অনুরাধাপুরের বাস যোগাযোগ আছে। এ নাইন সড়কপথ ধরে ক্যান্ডি থেকে অনুরাধাপুরার দূরত্ব ১৬৬ কিমি।
রেলপথে
[সম্পাদনা]অনুরাধাপুর এবং এর আশেপাশে দুটি ট্রেন স্টেশন রয়েছে যেখান থেকে কলম্বো যাতায়ত করার ট্রেন পাওয়া যায়। ট্রেনে কলম্বো ও অনুরাধাপুরের দুরত্ব সাড়ে চার ঘন্টা এবং ট্রেনে একটি প্রথম শ্রেণীর টিকিটের আসনের দাম প্রায় ৫০০ টাকা। এছাড়াও ক্যান্ডি, মাতারা, গালে থেকে অনুরাধাপুর পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা চলে।
২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কলম্বো এবং অনুরাধাপুরের মধ্যে ট্রেন যাতায়ত বিশেষ কারনে বন্ধ ছিল।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]শহরের আসেপাসে ঘুড়ে দেখার জন্য প্রচুর টুক টুক এবং বাস আছে। নতুন শহরাঞ্চল তুলনামূলকভাবে ছোট, এবং আধ ঘন্টার মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে যাওয়া যায়। পুরানো শহর (প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল) বেশ বড়, এবং টুক টুক করে ঘোরা যায়।
দেখুন
[সম্পাদনা]প্রাচীন শহর অনুরাধাপুরে প্রথম বসতি স্থাপন করা হয়েছিল ৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং ১১০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই স্থান সিংহলী রাজ্যের রাজধানী ছিল। এই শহরে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা ও দর্শনীয় পুরাতন স্থল বর্তমান।
একটি বিশেষ ইউ ডি ২৫ টিকিটের মাধ্যমে অনুরাধাপুরার সমস্ত দর্শনীয় স্থলে (ইসুরুমুনিয়ার মতো কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) প্রবেশ করা যায়। দক্ষিণ এশীয় নাগরিকরা এই দর্শনীয় স্থলে প্রবেশের সময় বিশেষ ছাড় পান তাই কোন ভ্রমনার্থীর যদি দক্ষিণ এশীয় পাসপোর্ট থাকে তাহলে এই সফরে সেটি অবশ্যই সঙ্গে রাখা উচিত।দর্শনীয় স্থলে প্রবেশের টিকিট প্রত্নতত্ত্ব যাদুঘরে বা তার প্রবেশদ্বার থেকে সংগ্রহ করা যাবে। দর্শনীয় স্থল ভ্রমণের সমস্ত বিষয় ভ্রমণ বিষয়ক সাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনেক দর্শনীয় স্থলে বিনামূল্যে প্রবেশ করা যায়।
বেশিরভাগ টুক টুক চালক ভ্রমনার্থীদের টিকিট না নিয়ে প্রবেশ করার জন্য অথবা তাদের মধ্যে কেউ কেউ টিকিটের মূল্যের চেয়ে কম দামে আপনাকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার এবং ঘুরে দেখানোর প্রস্তাব দিতে পারে যা বে আইনি। সেই বিষয়ে পর্যটকদের সচেতন থাকা উচিত। এমনও হতে পারে যে টুক টুক চালক শুধুমাত্র বিনামুল্যে প্রবেশ করা যায় এমন কয়টি দর্শনীয় স্থল পরিভ্রমন করিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থলগুলি বাদ দিয়ে দিতে পারে। ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলির (আশা করি) রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে সরকারীভাবে আইনি পথে উপযুক্ত মূল্যের টিকিট ক্রয় করে ভ্রমণ করাই পর্যটকদের কাছে কাম্য। পর্যটক যদি টিকিটের জন্য অর্থ প্রদান করতে চান তবে টিকিটটি আসলে কেনা হয়েছে কিনা তা অবশ্যই সাইটের মাধ্যমে পরীক্ষা করা উচিত। এই অঞ্চলে বাস স্ট্যান্ডে প্ররোচানামূলক বন্ধুত্বপূর্ণ টুক টুক ড্রাইভারদের থেকে সাবধান থাকা কাম্য।
পুরানো শহর অঞ্চল বেশ বড়। সমস্ত দর্শনীয় স্থান একদিনে ঘুড়তে হলে একটি টুক-টুক ভাড়া করা যায় (২০২৩ সালে শহর পরিভ্রমনের মুল্য ৩৫০০-৪৫০০)। বিকল্পভাবে, অনুরাধাপুরার কিছু হোটেল আপনাকে একটি সাইকেল (২০২৩ সালে প্রতিদিন ১০০ টাকা মূল্যে) বা মোটরসাইকেল (২০২৩ সালে প্রতিদিন ২০০০ টাকা মূল্যে) ভাড়া দিতে পারে, যাতে ভ্রমনার্থী নিজেই শহরের দর্শনীয় স্থল ঘুরে দেখতে পারেন। পুরানো শহর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত।
শহরের কিছু বিখ্যাত প্রত্নতাত্বিক দর্শনীয় স্থলের পরিচিতি নিচে দেওয়া হল,
- বোধি বৃক্ষ মন্দির(শ্রী মহা বোধিয়া): শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সবচেয়ে পবিত্র স্থান, ক্যান্ডিতে শ্রী দালাদা মালিগাওয়া (দাঁতের মন্দির) -এর পরেই এর উল্লেখ করা হয়। এটি শ্রীলঙ্কার আটটি পবিত্র স্থানের একটি। কথিত আছে যে এই স্থানে যে বোধি বৃক্ষটি আছে তা মূল বোধি বৃক্ষ অর্থাৎ যার নীচে বুদ্ধ জ্ঞান বা বোধি লাভ করেছিলেন তার একটি কাটা ডাল থেকে উতপন্ন হয়েছে। এই গাছ ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্ষা করা হয়েছে। এটিকে বিশ্বের প্রাচীনতম ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণীকৃত গাছ হিসাবে স্বীকৃত। মন্দির চত্বর দেয়াল দিয়ে ঘেরা এবং ব্যস্ত সন্ন্যাসী এবং উপাসকদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। ১৯৮০-এর দশকে কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর মন্দির পর্যন্ত গাড়ি চালাতে দেওয়া হয়না এবং মন্দির চত্বরে প্রবেশের আগে পর্যটককে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হয় ও তার ব্যাগ চেক করা হবে। জুতা প্রবেশদ্বার কাছাকাছি ছেড়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়।
- রুয়ানওয়েলিসায়: অনুরাধাপুরার প্রাচীনতম স্থান। এই অঞ্চলে আছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় স্তূপ যা সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এই স্তুপে সাদা রঙ করা হয়েছে এবং এটি উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু। শ্রী মহা বোধিয়া থেকে হেঁটে ব্রজেন প্রাসাদ (একটি প্রাচীন প্রাসাদ যা একসময় ব্রোঞ্জের ছাদ দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল) এবং স্তূপ পর্যন্ত যাওয়া যায়। স্তূপে বেশ কয়েকটি ছবি ঘর রয়েছে। পাশাপাশি চত্বরের চার কোণায় চারটি ছোট স্তূপ রয়েছে। এই উপাসনা চত্বরের উপাসক ও তাদের রীতিনীতিকে সম্মান করা প্রত্যেক ভ্রমনার্থীর কাছে কাম্য। এটি শ্রীলঙ্কার আটটি পবিত্র স্থানের মধ্যে একটি।
- অভয়গিরি বিহার: থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের একটি মঠ।
- প্রত্নতত্ত্ব যাদুঘর: পুরাতন কালের অনেক নিদর্শন গহনা এবং রত্ন থেকে কয়েন এবং মৃৎপাত্র এই স্থানে প্রদর্শনী হিসাবে রাখা আছে৷ জাদুঘরটিতে মূলত ধর্মীয় এবং অভিজাত বস্তুর সংগ্রহ বেশি, যদিও কিছু সাধারণ নিদর্শনও রাখা আছে।
- লোক জাদুঘর : অনুরাধাপুরের প্রত্নতত্ত্বকে লোক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রদর্শন করে।
- জেতবনা বা জেতবনারমায়া: এটি এক বৃহৎ স্তূপ ও বৌদ্ধ উপাসনা কাঠামো। এটি দাগোবা নামেও পরিচিত। বর্তমানে পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। এটি জেতবনা মঠের অংশ। এটি প্রায় ১২০ মিটার (৪০০ ফুট) লম্বা। এটি ছিল প্রাচীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কাঠামো (গিজার গ্রেট পিরামিডের পরে) এবং শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম। এটি শ্রীলঙ্কার আটটি পবিত্র স্থানের মধ্যে একটি ।
- সিটাডেল: এটি ছিল শহরের ধর্মনিরপেক্ষ কেন্দ্র। এখানকার অন্যতম দ্রষ্টব্য হল পুরানো শহরের দেয়াল এবং কিছু প্রাসাদ।
- মুনস্টোন: অনুরাধাপুরার প্রায় সমস্ত মঠগুলির প্রবেশদ্বারে এই বিশেষ পাথপ্র খোদাই করা থাকে। এই পাথপর ধর্মনিরপেক্ষতা ও পবিত্র বিশ্বের আন্দোলনের প্রতীক। এই মুনস্টোন এর আকার এবং চিত্তাকর্ষক সাজসজ্জার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
- পশ্চিমী মঠ : এই মঠগুলি বুদ্ধের উপাসনাক্ষেত্র। প্রাচীন শহরের প্রধান অংশে এগুলি অবস্থিত। ঐশ্বর্যশালী এবং সুসজ্জিত অন্যান্য অনেক মঠের পাসে পশ্চিমী মঠগুলি প্রাচীন রীতির অনুসারী ও মঠের অভ্যন্তরে কোন প্রকার বিসেষ সাজসজ্জা দেখা যায়না।
- লোভমহাপায়া: এটি ১৬০০ টি পাথরের স্তম্ভ যা একটি বিশাল ভবনের অবশিষ্টাংশ। এটি ব্রজেন প্রাসাদ নামেও পরিচিত। এই নয় তলা মঠে একসময় এক হাজার ভিক্ষুর বাসস্থান ছিল, যাদের দায়িত্বের মধ্যে ছিল পবিত্র বো গাছের দেখাশোনা করা, যেটি ভবনের ঠিক পাশেই বেড়ে উঠেছে। রাজা দুতুগেমুনু (প্রাসাদের প্রতিষ্ঠাতা) -এর আমলে লোভামহাপায়ার ছাদটি ব্রোঞ্জ টাইলস দ্বারা আবৃত ছিল এবং এর দেয়ালগুলি রূপা এবং মূল্যবান পাথর দিয়ে সজ্জিত ছিল।
- ইসুরুমুনিয়া বৌদ্ধ মন্দির (ইসিরুমুনি রাজা মহা বিহারায়): টিসা ওয়েওয়া (তিসা ট্যাঙ্ক) এর কাছে অবস্থিত। এই বিহারে বিশেষ চারটি প্রস্তর ভাস্কর্য রয়েছে যারা হলেন ইসুরুমুনিয়া প্রেমিক, হাতির পুকুর এবং রাজকীয় পরিবার। অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে এখানে প্রবেশ করতে হয়।
করনীয়
[সম্পাদনা]প্রাচীন শহরের প্রত্নতত্ত্ব দেখা ছাড়াও কাছাকাছি এলাকা ঘুড়ে বেড়ানো এবং অনুরাধাপুর নতুন শহরে সময় কাটানো যায়। নতুন অনেক দোকান আছে, সেইসাথে একটি বাজার আছে যেখানে আগ্রহী ভ্রমনার্থীরা ঘুড়ে বেড়াতে পারে।
এয়ার বিএনবি -এর মতো কিছু বেসরকারী সংস্থা উপযুক্ত নির্দেশনাসহ সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে শহর পরিভ্রমণের বিশেষ ব্যবস্থা করে দেয়।এয়ারবিএনবি
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]অনুরাধাপুরা পুরাতন শহরের মধ্যে এবং সেইসাথে মিহিনতালে জনপ্রিয় প্রত্নস্থলে অসংখ্য স্মারক বিক্রেতাদের আনাগোনা লেগে থাকে যাদের কাছে আপনি পোস্টকার্ড, প্রতিরূপ শিল্পকর্ম, খোদাই করা কাঠের মূর্তি, কানের দুল, মুখোশ এবং অন্যান্য যেকোন বস্তু কেনা যায়। বিক্রেতারাও প্রায়শই ভ্রমনার্থীদের অনুসরণ করে এবং ভ্রমনার্থীদের বারন স্বত্বেও তাদের পিছু ছাড়েনা। কিছু বিক্রেতা প্রামাণিক প্রাচীন নিদর্শন বিক্রি করার চেষ্টা করে। দেশ থেকে ১০০ বছরের বেশি পুরানো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সরানো বেআইনি, এবং যদি কেউ তা কেনার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পরে তবে তাকে তিন বছর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কারাগারে থাকতে হতে পারে৷ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুণ্ঠনের ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস হতে পারে, গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হারিয়ে যেতে পারে। ভ্রমনার্থীদের কাছে খাঁটি নিদর্শন ক্রয় না করা এবং লুটপাট সমর্থন না করাই কাম্য। বিক্রেতাকে নিশ্চিত করা উচিত যে তারা যা বিক্রি করছে তা কেবল প্রতিলিপি মাত্র এবং তার মূল্য অযাচিত নয়।
অনুরাধাপুরের নতুন শহরে অসংখ্য দোকান রয়েছে। খাবারের দোকান ছাড়াও রয়েছে ছবির দোকান, শাড়ির দোকান এবং বেশ কিছু অন্যান্য দোকান। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কার্গিলস ফুড সিটি থেকে কেনা যায় এবং সেখানে একাধিক ওষুধের দোকান আছে।
খাবার
[সম্পাদনা]অনুরাধাপুরে নতুন শহরে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে যেগুলি সাশ্রয়ী মূল্যে খাঁটি শ্রীলঙ্কার খাবার পরিবেশন করে। ছোট কিছু দোকান হালকা খাবার যেমন মিষ্টি এবং রোল বিক্রি করে, যা খুবই সুস্বাদু এবং সস্তা। আলুর চিপস, চকলেট বার এবং বাদামের মতো স্ন্যাকস এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস প্রায়ই নতুন শহর এবং আশেপাশের এলাকার দোকান এবং ছোট বাজারে বিক্রি হয়। কিছু জায়গায় তাজা রুটি বিক্রি হয় এবং অনেক বাজারে তাজা ফল বিক্রি হয়।শ্রীলঙ্কার বিশেষ দুপুরের খাবার বেন্টো বক্স, সাধারণত সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে বিক্রি হয়। এটি দুপুরের খাবারের জন্য উপযুক্ত। খাঁটি শ্রীলঙ্কার খাবার খুব মশলাদার। কেউ যদি মশলা পছন্দ না করেন তাহলে দোকানের কর্মীদের খুব বেশি মশলা না দিতে অনুরোধ করা উচিত।
নুওয়ারা ওয়েওয়া গেস্ট হাউস খুব ভালো, তবে তারা পশ্চিমা খাবারও পরিবেশন করে। অ-অতিথিরাও রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। অনেক অতিথিশালা আছে কিন্তু তিসা ওয়েয়া অতিথি নিবাসের বেশ নামডাক। এছাড়াও শালিনী হোটেলে সুস্বাদু ভাত এবং তরকারি পাওয়া যায়।
কার্গিল ফুড সিটি হল একটি ছোট মুদি দোকান যা অনেক পশ্চিমা পণ্যের পাশাপাশি তাজা পণ্য এবং মাংস বিক্রয় করে। এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়।
পানীয়
[সম্পাদনা]জনসমক্ষে মদ্যপান শ্রীলঙ্কায় বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। শহরের জনবহুল স্থানে সেরকম পানশালা নেই। যেগুলি আছে সেগুলি শহর থেকে বাইরে নির্জন স্থানে অবস্থিত। পশ্চিমী অতিথিশালায় কিছু পানশালা রয়েছে। লায়ন এবং কার্লসবার্গ হল সবচেয়ে পরিচিত সংস্থা। অনুরাধাপুরের নতুন শহরে দুটি অ্যালকোহলের দোকান রয়েছে, যেখানে আপনি অ্যারাক নামক পানীয় পাওয়া যায়। এটি নারকেল থেকে তৈরি একটি স্পিরিট জাতীয় পানীয় যা সারা শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয়, সেইসাথে রাম, হুইস্কি, বিয়ার, ওয়াইন ইত্যাদি পানীয় সেই স্থানে পাওয়া যায়।
কোকা-কোলা, পেপসি কোলা ইত্যাদি সাধারণ পানীয়গুলি সর্বত্র ছোট ছোট দোকানে বিক্রি হয় এবং জল সরবত এবং অন্যান্য পানীয়ও পাওয়া যায়৷ কলের জল পান না করাই শ্রেয়।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]অনুরাধাপুরে নতুন শহরে অসংখ্য অতিথিশালা এবং স্বল্পমূল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক হোস্টেল বা অস্থায়ী আবাসের ভাড়া এক রাতের জন্য ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
যদি পর্যটকরা আগে থেকে থাকার জায়গা নির্ধারণ না করে আসে সেক্ষেত্রে কোন টুক-টুক ড্রাইভার তাদেরকে উপযোগী অতিথিশালা খুজতে সাহায্য করে। দেখেশুনে চোখ কান খোলা রেখে তাদের উপদেশ গ্রহন করা উচিত।
শহরের কিছু জনপ্রিয় অতিথিশালা হল;
- নুওয়ারা ওয়েওয়া গেস্ট হাউসঃ এই জনপ্রিয় অতিথিসালাটি বেশ সুন্দর। এখানে একটি সুইমিং পুল আছে এবং নুওয়ারা ওয়েওয়ার চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। নুওয়ারা ওয়েওয়ার হল যা একটি বড় হ্রদ যা সেচের কাজে ব্যবহার হয়। এখানে একটি রেস্তোরাঁও রয়েছে যাতে খাবারের মূল্য বেশ যুক্তিসঙ্গত।
- মিরিদিয়া লেক রিসোর্টঃ ( গালওয়ে মিরিডিয়া লজ) এটি নুওয়ারা ওয়েওয়ার হ্রদের কাছে এবং প্রাচীন দর্শনীয় স্থাঙ্গুলির খুব কাছে এর অবস্থান। এতে ৩৯ টি স্ট্যান্ডার্ড এবং ডিলাক্স রুম আছে যাতে আধুনিক সমস্ত সুবিধা উপলব্ধ। এখানে অভ্যন্তরীণ রেস্তোরাঁ, পানশালা, সুইমিং পুল এবং মেডিটেশনের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এরা পর্যটন স্থানে ভ্রমণের ব্যবস্থাও করে দেয়।
- মিলানো পর্যটক বিশ্রামঃ এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ভাল রক্ষণাবেক্ষণসহ এই অতিথিশালাটি বাগান দ্বারা বেষ্টিত। এতে এসি, গরম জল, স্যাটেলাইট টি/ভি এবং টেলিফোন সুবিধা সহ ১৬ টি পরিষ্কার প্রশস্ত কক্ষ রয়েছে। এখানে ইন্টারনেট/ইমেল সুবিধা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
- হোটেল শালিনীঃ এটি পুরানো বাস স্টেশন থেকে ০.৫ কিমি, রেলওয়ে স্টেশন থেকে এক কিমি এবং নতুন বাস/নতুন রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরে অবস্থিত। প্রাচীন শহর থেকে এর দূরত্ব ২ কিমি। এই অতথিসালার বিশেষত্ব হল এর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক-শৈলীর ভবনে অবস্থিত টেরেস রেস্তোরাঁ যাতে খাঁটি এবং সুস্বাদু শ্রীলঙ্কার ভাত এবং তরকারি সহ উচ্চ মানের পাশ্চাত্য শৈলীর খাবার এবং পাশাপাশি চাইনিজ খাবারও পাওয়া যায়।
সম্মান
[সম্পাদনা]ধর্মীয় রীতির সম্মান রক্ষার্থে বৌদ্ধ উপাসনার স্থানগুলির চারপাশে হাঁটার সময় জুতা এবং টুপি অপসারণ করা আবশ্যিক। উপাসনাস্থল বা স্তুপগুলি ডানদিকে দিয়ে প্রদক্ষিণ শুরু করা উচিত সবসময়। প্রদক্ষিনা করার সময় ব্যাক্তির ডান হাত, যা পরিষ্কার হাত হিসাবে বিবেচিত হয় তা যেন সবসময় স্তুপের দিকে মুখ করে থাকে এই কথা খেয়াল রাখা উচিত। বৌদ্ধ উপাসনা স্থানগুলিতে ভ্রমণ করার সময় মহিলাদের কাঁধ ঢেকে রাখা উচিত এবং সম্মানজনক পোশাক পরিধান করা উচিত
সাধারণত ধর্মীয় স্থানের ছবি তোলা যায়, তবে ভগবান বুদ্ধের মূর্তির ছবি তোলার সময় সামনে যেন কোন মানুষ না থাকে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]স্থানীয় বানর থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যিক। বানর, বিশেষ করে ম্যাকাক (ছোট, লাল মুখের বানর) বেশ আক্রমণাত্মক হতে পারে, এবং তারা অযৌক্তিক ব্যক্তিগত জিনিসপত্র চুরি করে পর্যটকদের বিরক্ত করতে পারে।
সুস্থ থাকুন
[সম্পাদনা]ডব্লিউএইচও ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কাকে ম্যালেরিয়া মুক্ত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেছিল কিন্তু, স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
এছাড়াও, সাপের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভ্রমণকালে অন্ধকার বা আবছা গর্ত থেকে দূরে থাকা উচিত এবং ভ্রমনের সময় সঠিক পোশাক পরিধান করা উচিত।
সংযোগ
[সম্পাদনা]অনুরাধাপুরের নতুন শহরে অনেক ইন্টারনেট ক্যাফে আছে । অনুরাধাপুর নতুন শহর এবং শহরতলীগুলিতে শ্রীলঙ্কার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বর্তমান। নির্ভরযোগ্য ও কম খরচে, উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ অনেক জায়গায় পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক ফোন কল করার ব্যবস্থাও আছে এখানে। এর জন্য আই ডি ডি চিহ্ন সন্ধান করতে হত। অনুরাধাপুরে একটি পোস্ট অফিসও আছে।
শ্রীলঙ্কায় প্রি-পেইড সিম কার্ডগুলি প্রায় বিনামূল্যে এবং সস্তায় রিচার্জ করা যায়। এটি আই ডি ডি র সুবিধাসহ ফোন কল এবং উচ্চ গতির ইন্টারনেটে পরিষেবা প্রদান করে।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]- তিসাওয়েওয়া: এই বৃহৎ কৃত্রিম জলাশয়টি মূলত প্রাচীনকালে নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু অব্যবহারে এটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সেচের উদ্দেশ্যে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।
- মিহিনতালে: অনুরাধাপুরার পূর্বে প্রায় ১০ কিমি (৬.২৫ মাইল) দূরে অবস্থিত মিহিনতালে একটি বড় শিলা যা প্রায় ৩০৫ মিটার (১০০০ ফুট) উঁচু। ৩০ মিনিটের মধ্যে বাসে পৌঁছান যায় সেখানে। সেখান থেকে ফেরার সময় অনুরাধাপুরের শেষ বাসটি যাতে না ছেরে যায় সেই পর্যটকদের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। যেখানে বাস যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে যায় সেখান থেকে মূল পর্যটন স্থান সামান্য দূরে এবং সেখানে যাওয়ার দিকনির্দেশ দেওয়া আছে। পায়ে হেটে শিলার উপরে উঠতে হয়। এখানে দুটি স্তূপ, শিলালিপি সহ একটি পাথর, একটি বড় বুদ্ধমূর্তি সহ একটি মন্দির এবং একটি প্রাচীন হাসপাতাল রয়েছে। শিলার উপর থেকে আশেপাশের এলাকার চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। এখান থেকে বনের পশ্চিমদিকে স্থিত অনুরাধাপুরের তিনটি বৃহত্তম স্তূপ দেখা যায়। এখানে বিস্তৃত সমতলভূমি, বড় বড় পাথরের শিলা এবং ছোট ছোট পর্বতের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ের নীচে গাড়ী রাখার জায়গা। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি যেখানে রয়েছে সেখানে পৌঁছানোর জন্য প্রচুর সংখ্যক সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়।
- রিতিগালা: এটি অনুরাধাপুরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। অনুরাধাপুর থেকে হাবরানা রোডে প্রায় ৪০ কিমি (২৫ মাইল) দূরে এর অবস্থান। রিতিগালা হল একটি ছোট পর্বত যার উচ্চতা প্রায় ৭৬৫ মিটার (২,৫১৪ ফুট)। উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অনন্য জলবায়ুর কারণে পর্বতের শীর্ষটি এক চমৎকার প্রকৃতির সংরক্ষণাগার হয়ে উঠেছে। পর্বতটি বন মন্ত্রণালয়ের অধীন। পাহাড়ের তলদেশে গাড়ী রাখার জায়গা রয়েছে। দর্শনার্থীরা পাহাড়ের পথ ধরে বিভিন্ন স্তর এবং স্থানে যেতে পারেন। একটি অনন্য বন পরিবেশের মধ্য দিয়ে হাঁটা বেশ সুন্দর উপল্বব্ধি প্রদান করে। দর্শনার্থীরা বেশ সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করে, বিশেষ করে যখন তারা উপত্যকাগুলি অতিক্রম করে। এই স্থান অনুরাধাপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের তুলনায় অনেক শান্ত এবং কম কোলাহলপূর্ণ। বনের পরিবেশ, শিলা কাঠামো, দীর্ঘ পথ ইত্যাদি পরিদর্শনের জন্য নিখুঁত পরিবেশ পাওয়া যায় এখানে।
- ডাম্বুলা
অনুরাধাপুরার আশেপাশে আরও অনেক ছোট শহর এবং গ্রাম রয়েছে। অনেক আধুনিক মঠ এবং মন্দির আছে যাতে ঘুরে আসা যায়। অনুরাধাপুরার আশেপাশে কিছু সুন্দর এবং মনোরম এলাকা রয়েছে যা ঘুরে দেখার মতো।
{{#মূল্যায়ন:শহর|ব্যবহারযোগ্য}}