কৈলাস পর্বত (তিব্বতি: কাং রিনপোচ) তিব্বতের সুদূর পশ্চিমে অবস্থিত একটি পবিত্র পর্বত।
জানুন
[সম্পাদনা]এই পর্বতকে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র বলে মনে করে। প্রাচীন গ্রন্থে একে বিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণটি স্থানটির ভৌগোলিক তাৎপর্য থেকে বোঝা যায়: পর্বতটির ৩০ মা (৪৮ কিমি) ব্যাসার্ধের মধ্যে উত্তরে শক্তিশালী নদী ইন্দুস (ভারতে যাকে "সিন্ধু" বলা হয়), পশ্চিমে সুতলজ, পূর্বে ব্রহ্মপুত্র (ইয়ারলুং সাং-পো) এবং দক্ষিণে কর্নালি (গঙ্গার বৃহত্তম উপনদী) অবস্থিত।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]হিন্দুরা শিখরটিকে শিবের প্রতীকী 'লিঙ্গ' বলে মনে করে এবং কৈলাস পর্বতের পূজা করে। কৈলাস হলো পর্বতটির সংস্কৃত নাম। বন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে যে, পবিত্র পর্বতটি সেই জায়গা যেখানে বন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা আকাশ থেকে অবতরণ করেছিলেন। তিব্বতীয় বৌদ্ধরা কাং রিনপোচে বিশ্বাস করে, যার অর্থ মূল্যবান তুষার পর্বত, একটি প্রাকৃতিক মন্ডল যা পৃথিবীতে বৌদ্ধ সৃষ্টিতত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। জৈনরা বিশ্বাস করে যে, এটি সেই জায়গা যেখানে তাদের ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্মিকভাবে জাগ্রত হয়েছিল।
পুরাণ ও কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]কৈলাস পর্বতকে ঘিরে অনেক পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তি রয়েছে। এটি একটি অতুলনীয় সুন্দর ভূ-দৃশ্যের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে অন্য কোন স্থাপনা এর উপরে উঠে না। কৈলাস পর্বতকে হিন্দুরা তাদের চিরন্তন ধ্যানে শিবের আসন বলে বিশ্বাস করে।
যাতায়াত
[সম্পাদনা]কৈলাস পর্বতে পৌঁছানোর জন্য মাত্র চারটি স্থলপথ রয়েছে।
- জিগাটসে থেকে (লাসা বা কাঠমান্ডু থেকে প্রবেশযোগ্য) - সাগা - মানসরোবর (ভাড়া করা জীপে ৪ দিন, গণপরিবহন এবং হিচহাইকিংয়ে আরও বেশি সময় লাগতে পারে) বা জিগাটসে - আলী - দারচেন (জীপে ৬ দিন লাগবে)
- উত্তরকাশীর নিকটবর্তী ভারতীয় সীমান্ত থেকে (প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে খুবই সীমিত সংখ্যক ভারতীয় নাগরিককে বাছাই করা হয়)।
- কাশগর থেকে আলি হয়ে
- নেপালের সিমিকোট/হিলশা থেকে পুরাং হয়ে (হিলশা থেকে হেলিকপ্টারে করে দ্রুত আসা যাবে, কিন্তু সেটা ব্যয়বহুল হবে)।
কৈলাস পর্বতে প্রবেশের স্থান হল দারচেন। এটি কৈলাস পর্বতের ঠিক সামনে অবস্থিত, যা খোরায় যাওয়া তীর্থযাত্রীদের জন্য শুরুর স্থান।
ফি ও অনুমতি
[সম্পাদনা]জনপ্রতি ¥৫০, এক ভ্রমণে পর্যটকরা যতবার পর্বত প্রদক্ষিণ করুক না কেন। কুলি বা ইয়াকের জন্য প্রতিদিন প্রায় ¥৬৫ খরচ হবে।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]পর্বতের প্রধান আকর্ষণ হলো এর চারপাশ ঘিরে তীর্থযাত্রা। এটি সাধারণত ৩ দিন সময় নেয়। তবে শুধুমাত্র ভালোভাবে প্রস্তুত এবং সবল থাকলেই তীর্থযাত্রায় অংশ নেওয়া উচিত।
ভ্রমণপথ
[সম্পাদনা]- কৈলাশ পর্বত খোরা (তীর্থযাত্রা চক্র) - কৈলাস পর্বতের তীর্থযাত্রায় পবিত্র পর্বতের চারপাশে চক্র তৈরি করার চেয়ে কম বা বেশি কিছুই জড়িত নয়। তীর্থযাত্রার বাইরের চক্র (চিখোর) প্রায় ৫২ কিলোমিটার। তিব্বতিদের একটি চক্র সম্পন্ন করতে মাত্র একদিন লাগে। অধিকাংশ তীর্থযাত্রীরা সম্ভব হলে ১৩টি চক্র সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। কিছু তীর্থযাত্রী ক্যাংচা (প্রণাম) করে একটি পরিক্রমা করেন। যদিও গড় চক্র সম্পন্ন হতে প্রায় ১৪ ঘন্টা সময় নেয়, কিন্তু যারা প্রণাম করে তাদের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। যারা নিজেদের আলোকিত হওয়ার পথ নিশ্চিত করতে চায় তারা ১০৮টি চক্রের জন্য চেষ্টা করে। বৌদ্ধ ও হিন্দুরা পর্বতের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার দিকে ভ্রমণ করে, যেখানে বন ধর্মাবলম্বীরা ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ভ্রমণ করে। বেশিরভাগ ভ্রমণকারীরা একটি চক্র সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় নেয়।
- ১ম দিন - দারচেন - দ্রিরাপুক গোম্পা
- দারচেন - চোগু (চুকু) গোম্পা (৩-৪ ঘন্টা), চোগু (চুকু) গোম্পা - দ্রিরাপুক গোম্পা (৩-৪ ঘন্টা)
- ২য় দিন - দ্রিরাপুক গোম্পা - দোলমা লা - জুত্রুলপুক গোম্পা
- দ্রিরাপুক গোম্পা - জুত্রুলপুক গোম্পা (৭-৮ ঘন্টা)
- ৩য় দিন - জুত্রুলপুক গোম্পা - দারচেন
- জুত্রুলপুক গোম্পা - দারচেন (৩ ঘন্টা)
- হ্রদ মানসরোবর খোরা (তীর্থযাত্রা চক্র) - কৈলাস পর্বতের পাশাপাশি মানসরোবর হ্রদও একটি তীর্থস্থান। হ্রদের চারপাশে একটি তীর্থযাত্রার পথ রয়েছে এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ একটি চক্রাকার পথ রয়েছে, যা সম্পন্ন করতে ৪-৫ দিন সময় লাগে। দারচেন থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে চিউ গোম্পা হ্রদের চারপাশে চক্রের জন্য এটি একটি ভাল সূচনা স্থান।
- ১ম দিন - চিউ গোম্পা - ল্যাংবোনা গোম্পা
- ২য় দিন - ল্যাংবোনা গোম্পা - সেরালাং গোম্পা
- ৩য় দিন - সেরালাং গোম্পা - ট্রুগো গোম্পা
- ৪র্থ দিন - ট্রুগো গোম্পা - চিউ গোম্পা
করুন
[সম্পাদনা]- কৈলাশ পর্বত খোরা - তীর্থযাত্রা চক্র
- হ্রদ মানসরোবর খোরা - আরেকটি তীর্থযাত্রা চক্র
পানীয়
[সম্পাদনা]ঝর্ণা হতে প্রবাহিত পানি খুবই সতেজ, কারণ এতে খনিজ উপাদান রয়েছে।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]আবহাওয়ার অবস্থা এখানে দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে এবং আপনাকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
উচ্চতায় উঠার পর আপনার শ্বাসকষ্ট এবং অভ্যস্ততার চেয়ে কম শক্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আপনি চূড়ায় আসার জন্য বেশ কিছু সময় ধরে উচ্চতায় ছিলেন। যাইহোক, উচ্চতাজনিত অসুস্থতা অপ্রত্যাশিত এবং প্রয়োজন হলে নিজেকে একদিন বিশ্রামের জন্য সময় দেওয়ার জন্য আপনার পরিকল্পনাগুলোকে যথেষ্ট নমনীয় রাখতে হবে।
মেনে চলুন
[সম্পাদনা]- পবিত্র স্থানে বসবেন না বা আরোহণ করবেন না।
- মণি পাথর ডানদিক দিয়ে অতিক্রম করুন।
- প্রার্থনার চাকা ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরান।
{{#মূল্যায়ন:ভ্রমণপথ|রূপরেখা}}