গৌরারং জমিদার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান। এটি সিলেটের সুনামগঞ্জ সদরের অন্তর্গত গৌরারং গ্রামে অবস্থিত। এটি সুনামগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত এই জমিদারির নিদর্শন হিসাবে আজও দাড়িয়ে আছে সামন্ত শাসক রাম গোবিন্দ চৌধুরীর প্রাসাদ। এটি সুনামগঞ্জ শহরের জিরো পয়েন্টের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।
বিশেষত্ব
[সম্পাদনা]২০০ বছরের পুরনো গৌরারং জমিদার বাড়ি ৩০ ত্রকর জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে। সুনামগঞ্জ, তথা গৌরারং রাজ্যের প্রতাপশালী জমিদার রাম গোবিন্দ চৌধুরী, ১৮০০ সালের শুরুর দিকে এই জমিদারির প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রয়েছে ৬ টি আলাদা ভবন।
রঙমহল ভবনের সম্মুখভাগে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি পুকুর যা প্রাসাদ এর সৌন্দর্যকে আরও একধাপ বারিয়ে দিয়েছে। মূলভবনের ডান পাশে রয়েছে আরও একটি দীঘি যেখানে জমিদার বাড়ির নারীরা গোসল করতেন; যাতায়াতের জন্য রয়েছে জল বারান্দা। দেয়াল বেষ্টিত দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখা যায় এখানে। রঙমহলের দেয়ালে নর-নারী, লতাপাতার বিভিন্ন চিত্রের দেখা মেলে।
কীভাবে যাবেন?
[সম্পাদনা]শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এখানে যেতে হলে যেকোনো মাধ্যমে সুনামগঞ্জ সদরে আসতে হবে; তারপর সেখান হতে ওয়েজখালী হয়ে নৌকাযোগে টুকের বাজার এসে রিক্সা, মোটরসাইকেল, সিএনজি, ইজিবাইক ইত্যাদি যোগে আসতে হবে।
স্থলপথে
[সম্পাদনা]সড়কপথে ঢাকা হতে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ২৯৬ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার; এখানে রেল যোগাযোগ নেই বিধায়, প্রথমে সিলেট এসে তারপর সুনামগঞ্জ আসতে হয়।
সড়কপথ
[সম্পাদনা]ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সুনামগঞ্জে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৫.৩০ হতে ৮ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে মামুন, শ্যামলী, এনা, নূর, একতা, সাউদিয়া, নিউ লাইন, মিতালি প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ঘণ্টায়। এছাড়াও বিআরটিসি (কুমিল্লা হতে), নাসিরাবাদ (ময়মনসিংহ হতে) পরিবহন কোম্পানীর বাসে আসা যায়।
- মামুন পরিবহন: ☎ ০৮৭১-৬১১৬৭ (সুনামগঞ্জ), ০১৭১৮-৪৩৮ ৭৩২ (ফকিরাপুল), ০১৭১১-৩৩৭ ৮৫১ (সায়েদাবাদ);
- এনা পরিবহন: মোবাইল: ০১৭৭৬-১৯১ ৪১৮;
- শ্যামলী পরিবহন: ☎ ০৮৭১-৬১৪৯৮ (সুনামগঞ্জ), ০১৭১৪-৫৩৭ ৯১৬ (গাবতলী)।
- ঢাকা-সুনামগঞ্জ রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলোঃ
- এসি বাসে - ৯০০/- এবং
- নন-এসি বাসে - ৫৫০/-।
রেলপথ
[সম্পাদনা]সুনামগঞ্জ আসার জন্য সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই; রেলপথে কেবল মাত্র ছাতক আসার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া জংশন স্টেশন থেকে।
তবে, ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন বা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি সিলেট এসে সেখান থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জ আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা – সিলেট এবং চট্টগ্রাম – সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলোঃ
- ৭১০ পারাবত এক্সপ্রেস - সিলেট হতে দুপুর ০৩ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় রাত ০৯ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে (মঙ্গলবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে ভোর ০৬ টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে দুপুর ০১ টা ৪৫ মিনিটে (মঙ্গলবার বন্ধ);
- ৭১৮ জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস - সিলেট হতে সকাল ০৮ টা ৪০ মিনেটে ছাড়ে এবং ঢাকায় বিকাল ০৪ টায় পৌছে (বৃহস্পতিবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে দুপুর ১২ টায় ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে সন্ধ্যা ০৭ টা ৫০ মিনিটে (কোন বন্ধ নেই);
- ৭২০ পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস (শনিবার বন্ধ) সিলেট হতে সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে এবং চট্টগ্রামে রাত ০৭ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে;
- ৭২৪ উদয়ন এক্সপ্রেস (রবিবার বন্ধ) সিলেট হতে রাত ০৭ টা ২০ মিনিটে ছাড়ে এবং চট্টগ্রামে ভোর ০৫ টা ৫০ মিনিটে পৌছে;
- ৭৪০ উপবন এক্সপ্রেস - সিলেট হতে রাত ১০ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় ভোর ০৫ টা ১০ মিনিটে পৌছে (কোন বন্ধ নেই) ও ঢাকা থেকে রাত ০৯ টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে (বুধবার বন্ধ);
- ৭৭৪ কালনী এক্সপ্রেস - সিলেট হতে সকাল ০৭ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় দুপুর ০১ টা ২৫ মিনিটে পৌছে (শুক্রবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে বিকাল ০৪ টায় ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে (শুক্রবার বন্ধ)।
ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী রেলে ঢাকা হতে সিলেট আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো -
- ২য় শ্রেণির সাধারণ - ৮০ টাকা;
- ২য় শ্রেণির মেইল - ১১০ টাকা;
- কমিউটার - ১৩৫ টাকা;
- সুলভ - ১৬০ টাকা;
- শোভন - ২৬৫ টাকা;
- শোভন চেয়ার - ৩২০ টাকা;
- ১ম শ্রেণির চেয়ার - ৪২৫ টাকা;
- ১ম শ্রেণির বাথ - ৬৪০ টাকা;
- স্নিগ্ধা - ৬১০ টাকা;
- এসি সীট - ৭৩৬ টাকা এবং
- এসি বাথ - ১,০৯৯ টাকা।
ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:
- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৯৩৫৮৬৩৪,৮৩১৫৮৫৭, ৯৩৩১৮২২, মোবাইল নম্বর: ০১৭১১৬৯১৬১২
- বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৮৯২৪২৩৯
- ওয়েবসাইট: www.railway.gov.bd
আকাশপথে
[সম্পাদনা]সুনামগঞ্জ আসার জন্য সরাসরি বিমান যোগাযোগ নেই; ঢাকা থেকে সিলেটে সরাসরি বিমানে এসে সেখান থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জে আসতে হয়। ঢাকা থেকে সিলেটে আসার জন্য বাংলাদেশ বিমান, জেট এয়ার, নোভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়আর - প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি করে ফ্লাইট সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা- সিলেট ও সিলেট-ঢাকা রুটে চলাচল করে; ভাড়া লাগবে একপথে ৩,০০০/- এবং রিটার্ণ টিকিট ৬,০০০/-। সময়সূচী হলোঃ
- ঢাকা হতে সিলেট - শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি - সকাল ১১ টা ২০ মিনিট এবং দুপুর ১২ টায়।
- সিলেট হতে ঢাকা - শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি - দুপুর ১২ টা ২০ মিনিট এবং দুপুর ০১ টায়।
এই সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:
- কর্পোরেট অফিস: উত্তরা টাওয়ার (৬ষ্ঠ তলা), ১ জসিম উদ্দিন এভিনিউ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, ☎ ০২-৮৯৩২৩৩৮, ৮৯৩১৭১২, ইমেইল: info@uabdl.com, ফ্যাক্স: ৮৯৫৫৯৫৯
- ঢাকা এয়ারপোর্ট সেলস অফিস: ডমেস্টিক উইং কুর্মিটোলা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-১২৩০, ☎ ০২৮৯৫৭৬৪০, ৮৯৬৩১৯১, মোবাইল: ০১৭১৩-৪৮৬৬৬০
- ওয়েবসাইট: www.uabdl.com
জলপথে
[সম্পাদনা]হাওড় বেষ্টিত জেলা হওয়া সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে এ জেলার নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রচলন নেই বললেই চলে; কেবলমাত্র সিলেট ও হবিগঞ্জের কিছু এলাকা থেকে সরাসরি নৌপথে আসা যায়।
অপরদিকে, হাওড় এলাকায় যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌযান। হাওর বেষ্টিত অঞ্চল বিধায় সুনামগঞ্জ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নৌপথ কেন্দ্রিক। এ জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৬টি উপজেলা (ছাতক, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর) থেকে জেলা সদরে সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে। অবশিষ্ট ৪টি উপজেলার (বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার) সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই; নৌপথে চলাচল করতে হয়। আবার, সরাসরি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা বা অন্যান্য কারণে বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌপথই একমাত্র অভ্যন্তরীন যোগাযোগের মাধ্যম।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
[সম্পাদনা]- হাসন রাজার বাড়ি (হাছন রাজা জাদুঘর);
- সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘর;
- সুরমা নদী;
- ডলুরা শহীদ মিনার।
খাওয়া দাওয়া
[সম্পাদনা]সুনামগঞ্জে স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। এছাড়াও স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঠালের দারুণ সুখ্যাতি রয়েছে। আরও রয়েছে চা-পাতা। হাওড় এলাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং খামার ভিত্তিক হাঁস পালন করা হয়। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান
[সম্পাদনা]সুনামগঞ্জে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস ও মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে, যেখানে ৪০০ থেকে ২,০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাওয়া যায়। এসব হোটেলের মধ্যে রয়েছে -
- হোটেল নূর : পূর্ববাজার, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫২২৫, মোবাইল: ০১৭১৮-৬৩০ ৮৮৭;
- হোটেল সারপিনিয়া : জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫২৭৮;
- হোটেল নূরানী : পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫৩৪৬, মোবাইল: ০১১৯৬-১৪২ ৯৩৯;
- হোটেল মিজান : পূর্ববাজার, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ, ☎ ০৮৭১-৫৫৬৪০।