বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে

স্যাটেলাইট নেভিগেটর, যেমন জিপিএস ডিভাইস, আপনার অবস্থান জানতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। এই ডিভাইসগুলো প্রায়ই মানচিত্রসহ আসে এবং আপনাকে আপনার পরিকল্পিত রুট জানাতে বা আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য রুট গণনা করতে সাহায্য করতে পারে। এখানে আমরা "জিপিএস" শব্দটি ব্যবহার করছি, যদিও কিছু ডিভাইস অন্যান্য স্যাটেলাইট ব্যবহার করে, প্রায়শই জিপিএস-এর সাথে মিলিতভাবে।

বুঝুন

[সম্পাদনা]

প্রযুক্তির একটি বিশ্ব

যদি আপনি বিশেষ ব্যবহারের জন্য একটি GPS ডিভাইস কিনতে চান, তবে কিছু সংক্ষিপ্ত রূপ এবং প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়া সহায়ক হতে পারে।

  • GNSS (গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম) — একটি সাধারণ শব্দ যা বর্তমানে ব্যবহৃত সমস্ত নেভিগেশন সিস্টেমকে অন্তর্ভুক্ত করে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের GPS, রাশিয়ার GLONASS, চীনের BeiDou (BDS), এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের Galileo।
  • A-GPS (অ্যাসিস্টেড GPS) — সেলুলার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে দ্রুত বা আরও সঠিকভাবে অবস্থান নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
  • WAAS (ওয়াইড এরিয়া অগমেন্টেশন সিস্টেম) অথবা SBAS (স্যাটেলাইট-ভিত্তিক অগমেন্টেশন সিস্টেম) — এই সিস্টেমগুলি একটি বড় অঞ্চলে সঠিকতা উন্নত করতে ডেটা সম্প্রচার করে, সাধারণত একটি দেশের বা মহাদেশের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে। এটি বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার মতো ফ্যাক্টরগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সঠিকতা উন্নত করে। সাধারণত এটি ৫–১৫ মি (১৬–৪৯ ফু) থেকে প্রায় ১–৩ মি (৩–১০ ফু) পর্যন্ত সঠিকতা বাড়ায়। যেহেতু এগুলো পজিশনিং স্যাটেলাইটগুলির মতো একই রেডিও স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, তাই প্রস্তুতকারকদের জন্য এটি যোগ করা সহজ হয়েছে এবং এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মান হয়ে গেছে।

    এসব সিস্টেমের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের WAAS, রাশিয়ার SDCM, ইউরোপীয় ইউনিয়নের EGNOS, জাপানের MSAS এবং QZSS, এবং ভারতের GAGAN অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

  • LAAS (লোকাল-এলাকা অগমেন্টেশন সিস্টেম), GBAS (গ্রাউন্ড-বেসড অগমেন্টেশন সিস্টেম), এবং DGPS (ডিফারেনশিয়াল GPS) — এই সিস্টেমগুলো ছোট অঞ্চলের জন্য সঠিকতা উন্নত করতে ডেটা সম্প্রচার করে। এরা মূলত বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সঠিকতা ১ মি (৩ ফু) এর কম এবং ১০ সেমি (৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত কমিয়ে আনে।
  • ডেড রেকনিং — যখন সংকেত হারিয়ে যায়, যেমন টানেলে গাড়ি চালানোর সময়, তখন অবস্থান অনুমান করা। একটি সহজ বাস্তবায়ন কেবল গতি ধরে নিয়ে চলে; আরও উন্নত ডিভাইসগুলি অ্যাক্সেলরোমিটার বা গাড়ির স্পিডোমিটার এবং স্টিয়ারিং হুইল অবস্থান ব্যবহার করে আরও সঠিকভাবে অনুমান করতে পারে।
  • WGS84 — GPS দ্বারা ব্যবহৃত কোঅর্ডিনেট সিস্টেম।

বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাড়ির এলাকার জিপিএস নেভিগেশন ব্যবহারে পরিচিত, কিন্তু ভ্রমণের সময় জিপিএস নেভিগেশন সহজেই আপনার সবচেয়ে কার্যকরী যন্ত্রে পরিণত হতে পারে। গাড়ি চালানোর সময়, হিচহাইকিং, সাইকেল চালানো, হাইকিং, হাঁটা বা জনসাধারণের পরিবহনের জন্য ধরণের জন্য এটি লাইভ নির্দেশনা দিতে পারে। এগুলো আপনাকে পরিচিত পথে থাকতে সাহায্য করে। তবে আরও ভালো হচ্ছে, এগুলো আপনাকে কোথায় আছেন তা জানাতে পারে, যেমন মারাকেশ এর মেডিনায় হারিয়ে গেলে আপনাকে বের হতে সাহায্য করতে পারে। অথবা আপনাকে সাইকেল চালানোর সময় রালারভেগেন-এ যে ছোট গির্জাটি পার হয়ে যাচ্ছেন, সেটির নাম জানাতে পারে। অথবা যারা প্রতিটি মুহূর্তের পরিকল্পনা করেন, তারা তাদের দৈনিক দর্শনীয় স্থানগুলোর রুট লোড করতে পারেন এবং নিশ্চিত করতে পারেন যে সময়সীমা মেনে চলছেন। এগুলো আপনাকে অনুসন্ধান করতে উৎসাহিত করে!

এখনকার দিনে, প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন (এমনকি কিছু ফিচার ফোনও) জিপিএস অফার করে। অনেক গাড়িতেও একটি ট্রিম প্যাকেজ থাকে যাতে বিল্ট-ইন নেভিগেশন অন্তর্ভুক্ত থাকে, এবং অ্যান্ড্রয়েড অটো বা অ্যাপল কারপ্লে এর মাধ্যমে নতুন গাড়িগুলো প্রায়ই আপনার ফোনের নেভিগেশন অ্যাপগুলো স্ক্রীনে প্রদর্শন করতে পারে। আপনি ড্রাইভিং, হাইকিং বা নৌকো চালানোর জন্য ডিজাইন করা স্ট্যান্ড-অলোন ডিভাইসও ব্যবহার করতে পারেন।

সেলুলার বা ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত জিপিএস ডিভাইসগুলো চালু হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে, নিকটবর্তী সেল টাওয়ার বা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রাথমিক অবস্থান পেতে এবং স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের সম্পর্কে ডেটা ডাউনলোড করতে। কিন্তু স্ট্যান্ড-অলোন ডিভাইসগুলোকে স্যাটেলাইটগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সব ডেটা ডাউনলোড করতে হয়; যদি ডিভাইসটি শেষ ব্যবহার হওয়ার পর থেকে কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হয়, তবে এটি ৩০ সেকেন্ড (বা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে অনেক বেশি) সময় নিতে পারে, যেমন আকাশের ভালো দৃশ্য না থাকলে বা দ্রুত গতিতে চললে।

জিপিএস ডব্লিউজিএস৮৪ কোঅর্ডিনেট সিস্টেম ব্যবহার করে। অন্যান্য সিস্টেমও ব্যবহৃত হয়। ইটিআরএস৮৯, যা ইউরোপের অধিকাংশে ব্যবহৃত হয়, এটি ইউরোপীয় মহাদেশীয় প্লেটগুলির উপর ভিত্তি করে চলে, গ্লোবাল গড়ের পরিবর্তে; এটি এখনও নেভিগেশন উদ্দেশ্যে যথেষ্ট নিকটবর্তী (অবশিষ্ট পার্থক্য এক মিটারের কম)। কিছু দেশে, বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, যেমন চীনের মানচিত্রে ব্যবহৃত কোঅর্ডিনেট ডব্লিউজিএস৮৪ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। এছাড়াও, কখনও কখনও কার্টেসিয়ান কোঅর্ডিনেট ব্যবহার করা হয় যা জিপিএস এর কোণভিত্তিক ব্যবহারের পরিবর্তে। যদি আপনি আপনার কোঅর্ডিনেট অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তাহলে নিশ্চিত করুন তারা বোঝে যে আপনি জিপিএস থেকে কোঅর্ডিনেট জানাচ্ছেন। এছাড়াও, কাগজের মানচিত্র ব্যবহার করার সময় নিশ্চিত করুন আপনি মানচিত্রে আপনার অবস্থান জানাতে জিপিএস ব্যবহার করতে জানেন।

স্মার্টফোন অ্যাপস

[সম্পাদনা]
গাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি জিপিএস

আপনি যখন বিদেশ ভ্রমণে যাবেন, তখন আপনার স্মার্টফোনের নেভিগেশন অ্যাপই হতে পারে আপনার সেরা সহচর। এটি একটি স্ট্যান্ড-অলোন জিপিএস ডিভাইস কেনার চেয়ে অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের। এছাড়া, গাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় একটি ডিভাইস ভাড়া নেওয়ার ঝামেলা থেকেও আপনি মুক্তি পাবেন।

এই অ্যাপগুলি সাধারণত ওয়াই-ফাই সিগন্যাল ব্যবহার করে আপনার অবস্থান অনুমান করতে পারে, বিশেষ করে যখন স্যাটেলাইট সংকেত পাওয়া যায় না। তবে, যদি আপনার ফোনে কোনো ডেটা সংযোগ না থাকে বা আপনি কোনো দূরবর্তী এলাকায় থাকেন, তাহলে এই অ্যাপগুলি কাজ নাও করতে পারে।

যদি আপনার অ্যাপ নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সম্ভবত কোনো সমস্যা হচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, একটি ফিজিক্যাল বোতামযুক্ত জিপিএস ডিভাইস স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য হতে পারে।

অনেক অ্যাপ আপনাকে যাত্রার আগে বা ওয়াই-ফাই সংযোগ থাকাকালীন মানচিত্র ডাউনলোড করতে দেয়। এর ফলে আপনি যাত্রাকালে লাইভ ডেটা সংযোগের উপর নির্ভর করতে বা মোবাইল ডেটা ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন না। তবে, আপনার ফোনে যথেষ্ট স্টোরেজ স্পেস থাকা জরুরি।

যদি আপনার ওয়াই-ফাই সংযোগ খুব দুর্বল হয়, তাহলে আপনি এটি বন্ধ করে সেলুলার ডেটা ব্যবহার করতে পারেন।

বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন কারণে নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। আসুন দেখি, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এই বিষয়ে কী ধরনের নিয়ম কানুন প্রযোজ্য:

  • চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া: জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, এই দুই দেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করাই বাধ্যতামূলক। চীনে বাইদু ম্যাপস এবং অ্যাম্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয়, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নাভের ম্যাপ এবং কাকো ম্যাপস বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • রাশিয়া: যদিও পশ্চিমী জিপিএস অ্যাপগুলি রাশিয়ায় নিষিদ্ধ নয়, তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো হয়তো সর্বশেষ আপডেট নাও থাকতে পারে। ফলে রাশিয়ানরা সাধারণত ইয়ানডেক্স ম্যাপ ব্যবহার করে।
  • হংকং এবং ম্যাকাও: এই দুটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে চীনের মূল ভূখণ্ডের মতো কঠোর নিয়ম নেই। ফলে এখানে সাধারণ পশ্চিমী নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।

বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেম:

যদিও এই সিস্টেমগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও, সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে সেগুলোর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য বোঝা যায় না।

ওএসএমএ্যান্ড

[সম্পাদনা]
ওএসএসএ্যান্ড নেভিগেশন অপশন।

ওএসএমএ্যান্ডঅ্যাপ একটি মুক্ত উৎসের অ্যাপ যা ওপেনস্ট্রিটম্যাপ (ওএসএম) দ্বারা অফলাইন মানচিত্র এবং নেভিগেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি গাড়ি, সাইকেল, এবং পায়ে হাঁটা সহ বিভিন্ন ধরনের নেভিগেশনে জিপিএস এবং ফোনের অন্যান্য সিস্টেম ব্যবহার করে। পাবলিক ট্রানজিট, নৌকা এবং স্কি নেভিগেশনের জন্যও কিছু সহায়তা রয়েছে। গাড়ি নেভিগেশনের ক্ষেত্রে গুগল ম্যাপসের সাথে তুলনা করা কঠিন হলেও, অ-গাড়ি নেভিগেশনের ক্ষেত্রে এটি অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে ট্র্যাক এবং ট্রেইলের ক্ষেত্রে বিশ্বের বেশিরভাগ স্থানে এটি অতুলনীয়। অফলাইন কার্যকারিতা, জিপিএক্স ফাইল আমদানি ও রপ্তানি, এবং উচ্চতার তথ্যের বিকল্প ব্যবহারের সুবিধা বিশেষ করে হাইকিং এবং বাইকিং ভ্রমণের জন্য সুবিধাজনক। এটি মূল ভূখণ্ড চীনে যে কয়েকটি বিদেশী অ্যাপ মোটামুটি কাজ করে তাদের মধ্যে একটি।

ওএসএমএ্যান্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর অফলাইন কার্যকারিতা। আপনি যে কোনো এলাকার মানচিত্র ডাউনলোড করে ফোনে সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল ম্যাপসের মতো এতে রিয়েল-টাইম ট্রাফিক তথ্য না থাকলেও, ট্র্যাক এবং ট্রেইলের বিস্তারিত তথ্যের জন্য এটি অন্যতম ভালো অ্যাপ। জিপিএক্স ফাইল সাপোর্টের কারণে অন্যান্য নেভিগেশন অ্যাপের সাথে তথ্য শেয়ার করা সহজ। উচ্চতার তথ্য ব্যবহার করে আপনাকে চারপাশের ভূখণ্ডের সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা দিতে পারে।

ওএসএমএ্যান্ড ইনস্টল করার কয়েকটি উপায় রয়েছে। আপনার জন্য কোনটি সেরা তা আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার উপর নির্ভর করবে।

সবচেয়ে সহজ উপায় হল গুগল প্লে স্টোর বা আইওএস অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করা। এই দুটি স্টোরে গিয়ে ওএসএমএ্যান্ড সার্চ করে ইনস্টল করে নিন। তবে, এটির বিনামূল্যে সংস্করণে মানচিত্র ম্যানুয়ালি ডাউনলোড সংখ্যা সীমিত থাকে। পূর্ণ ফিচারের জন্য প্রিমিয়াম সংস্করণ কিনতে হতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিকল্প হল F-Droid। এটি একটি বিনামূল্যের অ্যাপ স্টোর যা মুক্ত ও উন্মুক্ত সোর্স অ্যাপগুলি বিতরণ করে। এখান থেকে আপনি ওএসএমএ্যান্ড-এর সম্পূর্ণ ফিচারযুক্ত সংস্করণ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেতে পারেন। তবে, কিছু ব্যবহারকারীর জন্য F-Droid স্টোরটি খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।

যদি আপনি প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন, তাহলে আপনি ওএসএমএ্যান্ড-এর সোর্স কোড ডাউনলোড করে নিজেই অ্যাপটি কম্পাইল করে ইনস্টল করতে পারেন। এটি আপনাকে অ্যাপটি কাস্টমাইজ করার সুযোগ দেয়। তবে, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এর জন্য কিছু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন।

যদি আপনি ওপেনস্ট্রিটম্যাপে অবদান রাখেন এবং এডিটিং প্লাগইন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি ওএসএমএ্যান্ড-এর মৌলিক সংস্করণেও ইচ্ছামতো মানচিত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

মানচিত্র ডাউনলোড:

ওএসএমএ্যান্ড-এর মূল কাজই হল আপনাকে ইন্টারনেট ছাড়াও মানচিত্র ব্যবহার করতে দেওয়া। তাই আপনাকে আগে থেকেই আপনার প্রয়োজনীয় মানচিত্রগুলি ডাউনলোড করে রাখতে হবে। এই মানচিত্রগুলি আপনার ফোনেই সংরক্ষিত থাকবে। তবে মনে রাখবেন, কিছু দেশের মানচিত্র অনেক বড় হতে পারে, তাই ডাউনলোড করার আগে আপনার ফোনে যথেষ্ট জায়গা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। বিশেষ করে, হিলশেড এবং উচ্চতা লাইনের মানচিত্রগুলি অনেক বেশি স্পেস নেয়।

মানচিত্র আপডেট:

ওএসএমএ্যান্ড-এর মানচিত্রগুলি সাধারণত মাসে একবার আপডেট হয়। যদি আপনি সবসময় সর্বশেষ তথ্য পেতে চান, তাহলে ওএসএমএ্যান্ড Live নামে একটি সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা রয়েছে। এই পরিষেবাটির মাধ্যমে আপনি প্রতি ঘন্টায় মানচিত্র আপডেট পেতে পারবেন। এই সাবস্ক্রিপশন ফির আংশিকভাবে ওপেনস্ট্রিটম্যাপ-এ কাজ করা ম্যাপারদের সমর্থন করতে ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

ওএসএমএ্যান্ড শুধু নেভিগেশনের জন্যই নয়, আরও অনেক কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়। এটিতে রয়েছে:

  • ট্রিপ রেকর্ডিং: আপনার যাত্রাপথ রেকর্ড করে রাখতে পারেন এবং পরে তা পর্যালোচনা করতে পারেন।
  • রুট পরিকল্পনা: আপনি নিজে নিজে রুট তৈরি করতে পারেন এবং সেই রুট অনুসারে নেভিগেট করতে পারেন।
  • উচ্চতা প্রোফাইল: আপনার যাত্রাপথের উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য দেখতে পারেন।
  • বিভিন্ন ধরনের মানচিত্র: ওএসএমএ্যান্ড-এ আপনি বিভিন্ন ধরনের মানচিত্র ব্যবহার করতে পারেন, যেমন স্যাটেলাইট ইমেজ, সাইকেল মানচিত্র ইত্যাদি।
  • পার্কিং স্থান: আপনি যেখানে গাড়ি পার্ক করেছেন সেই জায়গাটি মনে রাখতে ওএসএমএ্যান্ড আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
  • উইকিপিডিয়া: অনেক জায়গার জন্য উইকিপিডিয়া নিবন্ধ অফলাইনে পড়তে পারবেন।

অন্যান্য ওপেনস্ট্রিটম্যাপ ভিত্তিক অ্যাপ

[সম্পাদনা]
  • Mapy.cz – এটি একটি জনপ্রিয় অ্যাপ এবং ওএসএমAnd-এর মতো, কিন্তু ওপেন সোর্স নয়। এটি প্রায় একই সময়ে চালু হয়েছে এবং সমান উৎসাহী ব্যবহারকারী ও সমর্থকদের একটি ভিত্তি পেয়েছে।
যদি ওএসএমAnd আপনার চাহিদা পূরণ না করে বা খুব জটিল মনে হয়, তবে এই অ্যাপটি চেষ্টা করুন। তাদের অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সংস্করণও রয়েছে: Mapy.cz
  • Organic Maps – ২০২৩ সালের নতুন একটি অ্যাপ, যা Maps.Me-এর মূল ডেভেলপার টিম দ্বারা তৈরি। কার্যকারিতা এবং মানচিত্রের বিশদ সীমিত, তবে এটি ওপেনস্ট্রিটম্যাপ তথ্যের ভিত্তিতে সহজে নেভিগেট করা যায়।
গাড়িতে এবং পায়ে নেভিগেশনের জন্য জিপিএস সমর্থন করে এবং সীমিত ওপেনস্ট্রিটম্যাপ সম্পাদনা করতে পারে। তবে দুর্গম অঞ্চলে এবং বাইরের কার্যকলাপের জন্য, এই অ্যাপটি ব্যবহার না করাই ভালো।
  • Maps.Me – এটি আর সক্রিয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না, তবে এখনও কাজ করে। এবং যেহেতু ডাউনলোডযোগ্য মানচিত্রগুলি ওপেনস্ট্রিটম্যাপ থেকে আসে, সেহেতু এটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণে অ্যাপের নির্ভরযোগ্যতার উপর প্রভাব ফেলবে না।

গুগল ম্যাপস

[সম্পাদনা]

গুগল ম্যাপস আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় মানচিত্র অ্যাপ্লিকেশনগুলির মধ্যে অন্যতম। এর বিস্তৃত কার্যকারিতা এবং ব্যবহার সহজতার কারণে এটি সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। গুগল ম্যাপস আপনাকে প্রায় যে কোনো জায়গার মানচিত্র দেখতে, টার্ন-বাই-টার্ন দিকনির্দেশ পেতে এবং অফলাইনে মানচিত্র ডাউনলোড করতে দেয়। এমনকি যদি আপনার ডেটা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তবুও গুগল ম্যাপস আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে।

গুগল ম্যাপসের আরও একটি সুবিধা হল এর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, গুগল ম্যাপস গো। এই অ্যাপটি কম শক্তিশালী ডিভাইসের জন্য উপযোগী, এবং এটি কম ডেটা ব্যবহার করে। তবে, গুগল ম্যাপস গো ব্যবহার করার জন্য আপনার একটি আলাদা নেভিগেশন অ্যাপও ইনস্টল করতে হবে।

যদিও গুগল ম্যাপসের অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গুগল ম্যাপস মূলত শহর এবং গাড়ি চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। হাইকিং ট্রেইল বা অফ-রোড রাস্তাগুলির জন্য গুগল ম্যাপসের তথ্য সবসময় নির্ভরযোগ্য হয় না। এছাড়াও, গুগল ম্যাপসের পরিবহন এবং হাঁটার দিকনির্দেশগুলি সবসময় সঠিক হয় না, বিশেষ করে জনবহুল এলাকায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, দূরবর্তী এবং অজানা এলাকায় গুগল ম্যাপসের উপর নির্ভর করা বিপজ্জনক হতে পারে। গুগল ম্যাপস সোজা রাস্তা দেখাতে পারে, যা প্রকৃতপক্ষে খুব বিপজ্জনক হতে পারে। অতএব, যদি আপনি কোনো অজানা এলাকায় ভ্রমণ করেন, তাহলে সর্বদা একটি ভাল মানচিত্র এবং কম্পাস বহন করুন।

সর্বোপরি, গুগল ম্যাপস একটি দুর্দান্ত অ্যাপ যা আপনাকে সারা বিশ্বে নেভিগেট করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি একটি নিখুঁত অ্যাপ নয় এবং এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ওয়েজ

[সম্পাদনা]

গুগল ম্যাপসের জনপ্রিয়তার মধ্যেও, অনেক মানুষ ওয়েজ নামে একটি বিকল্প নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এই অ্যাপটি গুগল প্লে এবং আইওএস অ্যাপ স্টোর এ বিনামূল্যে উপলব্ধ। ওয়েজকে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রাউডসোর্সড নেভিগেশন সিস্টেম বলা হয়, কারণ এটি ব্যবহারকারীদের প্রত্যক্ষ অবদানের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, ওয়েজ ব্যবহারকারীরা নিজেরা রাস্তার তথ্য আপডেট করতে পারেন, যেমন নতুন রাস্তা, একমুখী রাস্তা, বা ট্রাফিক জ্যাম।

ওয়েজের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

  • রাস্তার বিপদ ও পুলিশ কার্যকলাম সম্পর্কে সতর্কতা: ওয়েজ ব্যবহারকারীরা রাস্তায় বিপদ, যেমন দুর্ঘটনা, পুলিশের চেকপোস্ট ইত্যাদি সম্পর্কে অন্য ব্যবহারকারীদের সতর্ক করতে পারেন।
  • ফুয়েল মূল্যের তথ্য: ওয়েজ আপনাকে আপনার এলাকার বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে ফুয়েলের দাম সম্পর্কে তথ্য দেয়।
  • গুগলের স্যাটেলাইট মানচিত্রের ব্যবহার: যদিও ওয়েজ গুগলের মালিকানাধীন, তবুও ওয়েজ মানচিত্র সম্পাদকরা মানচিত্রের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য গুগলের স্যাটেলাইট মানচিত্র ব্যবহার করতে পারেন।

গুগল ম্যাপসের সাথে তুলনা:

ওয়েজ গুগল ম্যাপসের মতোই একটি জনপ্রিয় নেভিগেশন অ্যাপ, তবে এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। গুগল ম্যাপস সাধারণত ট্রাফিক জ্যাম এবং সঠিক মানচিত্রের তথ্যের ক্ষেত্রে ওয়েজের চেয়ে ভালো। তবে, ওয়েজ রাস্তার বিপদ এবং পুলিশ কার্যকলাম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।

ওয়েজ ব্যবহারের কিছু বিষয়:

  • অফলাইন ব্যবহার: ওয়েজকে অফলাইনে ব্যবহার করা সম্ভব, তবে দীর্ঘ যাত্রার জন্য এটি সুপারিশ করা হয় না। সংক্ষিপ্ত যাত্রার জন্য, ওয়েজ অফলাইনেও ভালো কাজ করে।
  • প্রাথমিক ওয়াই-ফাই সেটআপ: ওয়েজ ব্যবহারের আগে একটিবার ওয়াই-ফাই সংযোগের মাধ্যমে সেটআপ করলে পরবর্তীতে অনেক কম ডেটা ব্যবহার হয়।

সার্বিকভাবে, ওয়েজ একটি দুর্দান্ত বিকল্প যারা গুগল ম্যাপসের চেয়ে আরও বিস্তারিত রাস্তার তথ্য এবং স্থানীয় ব্যবহারকারীদের তথ্যের উপর নির্ভর করতে চান।

অ্যাপল ম্যাপস

[সম্পাদনা]

অ্যাপল ম্যাপস প্রতিটি আইফোনে পূর্বনির্ধারিতভাবে ইনস্টল থাকে। প্রথম প্রকাশের সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হলেও, ক্রমান্বয়ে আপডেটের মাধ্যমে এটি অনেক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিতে এটি গুগল ম্যাপসের সমান স্তরে পৌঁছেছে। আইওএস ১৭ থেকে অফলাইন মানচিত্র ডাউনলোড করার সুবিধা যোগ হওয়ায় এটি আরও জনপ্রিয় হয়েছে।

কোপাইলট জিপিএস

[সম্পাদনা]

কোপাইলট জিপিএস একটি জনপ্রিয় নেভিগেশন অ্যাপ যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়। এই অ্যাপটির একটি দেশের মানচিত্র বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। তবে, টার্ন-বাই-টার্ন নেভিগেশন এবং অন্যান্য অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করার জন্য সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। কোপাইলট জিপিএস বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের জন্য, যেমন ট্রাক, কারাভান ইত্যাদির জন্যও বিশেষ নেভিগেশন সরবরাহ করে।

ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, বলকান, বেনেলাক্স, রাশিয়া, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ, ডাচ, ফ্রান্স, গ্রীস, আইবেরিয়া, ইতালি, নর্ডিক, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, লেসোথো, সোয়াজিল্যান্ড, নামিবিয়া এবং বতসোয়ানা। মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র (বাহরাইন, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, ইউএই)।

নাভমি

[সম্পাদনা]

নাভমি একটি ওপেন সোর্স নেভিগেশন অ্যাপ যা ওপেনস্ট্রিটম্যাপ ডেটা ব্যবহার করে। এই অ্যাপটি শুধুমাত্র আইফোনের জন্য উপলব্ধ। নাভমি বেসিক মানচিত্র বিনামূল্যে প্রদান করে, তবে টার্ন-বাই-টার্ন নেভিগেশন এবং অন্যান্য অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য ইন-অ্যাপ পার্চেজ করতে হয়।

স্বতন্ত্র জিপিএস নেভিগেটর

[সম্পাদনা]

স্মার্টফোনের তুলনায় স্বতন্ত্র জিপিএস নেভিগেটরের অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এই ডিভাইসগুলি কেবল নেভিগেশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, ফলে এগুলিতে নানা ধরনের অতিরিক্ত ফিচার থাকে যেমন, ভয়েস কমান্ড, রাস্তার অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য, এবং বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের জন্য বিশেষ সেটিংস। দ্বিতীয়ত, স্মার্টফোনের তুলনায় জিপিএস ডিভাইসের ব্যাটারি সাধারণত বেশি চলে। দীর্ঘ যাত্রায় বা দূরবর্তী এলাকায় যাওয়ার সময় এটি খুবই উপকারী। তৃতীয়ত, অনেক জিপিএস ডিভাইস জলরোধী হয় এবং বাইকিং, হাইকিং ইত্যাদির মতো আউটডোর অ্যাক্টিভিটির জন্য উপযুক্ত। চতুর্থত, যদি আপনার স্মার্টফোন হারিয়ে যায়, তাহলে আপনার অনেক ব্যক্তিগত তথ্যও হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটি জিপিএস ডিভাইস হারিয়ে গেলে আপনার অন্য কোনো তথ্যের ক্ষতি হবে না।

জিপিএস ডিভাইস কীভাবে কাজ করে?

জিপিএস ডিভাইসটি সেট আপ করার পর, আপনাকে শুধু আপনার গন্তব্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিভাইসটি তারপর উপগ্রহ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং আপনার অবস্থান নির্ধারণ করে। এরপর এটি আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে ভালো রাস্তা দেখায়।

জিপিএস ডিভাইস কেনার আগে বিবেচনা করার বিষয়

জিপিএস ডিভাইস কেনার আগে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। প্রথমত, নিশ্চিত করুন যে ডিভাইসটি আপনার যাত্রার এলাকার মানচিত্র সাপোর্ট করে। দ্বিতীয়ত, আপনার জন্য কোন ফিচারগুলি গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ভয়েস কমান্ড, রাস্তার অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য ইত্যাদি। তৃতীয়ত, আপনার বাজেটের মধ্যে কোন ডিভাইসটি পাবেন তা দেখে নিন।

জিপিএস নেভিগেটর ব্যবহার

[সম্পাদনা]

আপনি যখন একটি নতুন জিপিএস ডিভাইস কিনবেন, তখন সবচেয়ে প্রথম কাজ হবে এটিকে আপনার যানবাহনে সেট আপ করা। এই সেটআপ প্রক্রিয়াটি ডিভাইসের মডেল অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত এতে আপনার গন্তব্য নির্ধারণ করা, মানচিত্র লোড করা এবং কয়েকটি সেটিংস কাস্টমাইজ করা জড়িত থাকে।

জিপিএস কীভাবে কাজ করে?

একবার আপনি আপনার গন্তব্য নির্ধারণ করে দিলে, জিপিএস ডিভাইসটি উপগ্রহ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং আপনার বর্তমান অবস্থান নির্ধারণ করে। এরপর এটি আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে ভালো রাস্তা দেখায়। এটি মূলত আপনার গাড়ির স্ক্রিনে একটি মানচিত্র দেখায় এবং আপনাকে কখন বাঁক নিতে হবে, কখন ডানে বাঁয়ে ঘুরতে হবে তা নির্দেশ করে।

জিপিএস ডিভাইস কাস্টমাইজ করার টিপস

  • রুট নির্বাচন: আপনি যে রাস্তা দিয়ে যাবেন তা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনার কাছে কয়েকটি বিকল্প থাকবে। আপনি সবচেয়ে দ্রুত রাস্তা, সবচেয়ে ছোট রাস্তা বা সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা চয়ন করতে পারেন।
  • অতিরিক্ত সেটিংস: অনেক জিপিএস ডিভাইসে আপনি অতিরিক্ত সেটিংস পরিবর্তন করতে পারেন, যেমন ভয়েস নির্দেশনা, স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা এবং ইউনিট।
  • আপডেট: আপনার জিপিএস ডিভাইসের মানচিত্র এবং সফ্টওয়্যার নিয়মিত আপডেট করা উচিত। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি সবচেয়ে সঠিক তথ্য পাবেন।

নতুন জিপিএস ব্যবহারের টিপস

  • পরিচিত এলাকায় প্র্যাকটিস: নতুন জিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করার আগে, আপনি পরিচিত কোনো এলাকায় এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে করে আপনি ডিভাইসটি কীভাবে কাজ করে তা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
  • সাহায্যের জন্য ম্যানুয়াল দেখুন: যদি আপনার কোনো সমস্যা হয়, তাহলে ডিভাইসের ম্যানুয়াল দেখুন।
  • অনলাইনে সাহায্য নিন: আপনি ইন্টারনেটে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ করেও সাহায্য পেতে পারেন।

সুরক্ষা টিপস

  • চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা: জিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • নিয়মিতভাবে আপনার চারপাশের পরিবেশের দিকে নজর রাখুন: জিপিএস ডিভাইসের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, সর্বদা আপনার চারপাশের পরিবেশের দিকে নজর রাখুন।
  • যদি হারিয়ে যান তাহলে: যদি আপনি হারিয়ে যান, তাহলে শান্ত থাকুন এবং জিপিএস ডিভাইসের নির্দেশ অনুসরণ করুন।

মোকাবিলা

[সম্পাদনা]

জিপিএস নেভিগেটর আমাদের যাত্রাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে, সবসময় এটি নির্ভুল নির্দেশনা দেয় না। অনেক সময়, জিপিএস-এ দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

একটি সাধারণ সমস্যা:

ধরুন আপনি পিটসবার্গ থেকে ফিলাডেলফিয়া যাচ্ছেন। আপনি আপনার জিপিএসে "ফিলাডেলফিয়া" লিখলেন। এখন জিপিএস আপনাকে ফিলাডেলফিয়ায় নিয়ে যাবে, কিন্তু সমস্যা হল, জিপিএস হয়তো আপনাকে শহরের কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায়, যেমন শহরের ঠিক মাঝখানে নিয়ে যাবে। এতে করে আপনাকে হয়তো অনেক অতিরিক্ত ঘুরতে হবে বা কোনো অজানা গলির মধ্যে ঢুকে যেতে হবে।

এর কারণ কি?

এর কারণ হল, জিপিএস শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানের নাম বুঝতে পারে। এটি সেই স্থানের সম্পর্কে আর কোনো অতিরিক্ত তথ্য জানে না, যেমন আপনি কোন জায়গায় যেতে চান।

এ সমস্যার সমাধান:

এই সমস্যা এড়াতে, আপনাকে জিপিএসে একটি সঠিক এবং বিস্তারিত ঠিকানা দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি "123 Main Street, Philadelphia, PA" লিখতে পারেন। এতে করে জিপিএস আপনাকে সরাসরি আপনার গন্তব্যে নিয়ে যাবে।

ভূগোল এবং নির্ভুলতা

[সম্পাদনা]

জিপিএস প্রযুক্তি যদিও আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে, কিছু পরিস্থিতিতে জিপিএস সিগন্যাল দুর্বল বা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, ফলে নেভিগেশন অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা:

  • বন্ধ স্থান: ভবনের ভিতরে, গ্যারেজে বা গুহায় জিপিএস সিগন্যাল পৌঁছাতে পারে না। এই জায়গাগুলিতে স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য পর্যাপ্ত খোলা আকাশ না থাকায় জিপিএস কাজ করতে পারে না।
  • সরু রাস্তা এবং ঘন জঙ্গল: ঘন জঙ্গল, উঁচু ভবন বা পাহাড়ের মতো ভৌগোলিক অবস্থান জিপিএস সিগন্যালকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  • খারাপ আবহাওয়া: মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি বা তুষারপাত জিপিএস সিগন্যালকে দুর্বল করে দিতে পারে।

জিপিএস কাজ করার জন্য কী প্রয়োজন:

  • খোলা আকাশ: জিপিএস ডিভাইসকে স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি পরিষ্কার দৃশ্যমান আকাশের প্রয়োজন।
  • কম বাধা: উঁচু ভবন, গাছ বা অন্যান্য বাধা জিপিএস সিগন্যালকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

অফ-রোড নেভিগেশন:

  • সীমিত নির্ভুলতা: অফ-রোড অঞ্চলে, যেমন পাহাড় বা জঙ্গলে, জিপিএস সিগন্যাল অস্থির হতে পারে এবং নির্ভুলতা কম হতে পারে।
  • ড্রাইভিং মোডের সীমাবদ্ধতা: যদি আপনি একটি ড্রাইভিং মোড ব্যবহার করেন, তাহলে জিপিএস অনুমান করবে যে আপনি একটি রাস্তায় চলছেন, যা অফ-রোডে সঠিক নাও হতে পারে।

সমাধান:

  • বহুবিধ ডিভাইস ব্যবহার: বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন ধরনের জিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, ড্রাইভিংয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র জিপিএস ডিভাইস, হাইকিংয়ের জন্য একটি জলরোধী ডিভাইস এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য একটি স্মার্টফোন।
  • মানচিত্র এবং কম্পাস ব্যবহার: জিপিএসের পাশাপাশি একটি মানচিত্র এবং কম্পাস ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে জিপিএস ব্যর্থ হলেও নিজের পথ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
  • অফলাইন মানচিত্র ডাউনলোড করুন: যদি আপনি কোনো দূরবর্তী এলাকায় যাত্রা করেন, তাহলে সেই এলাকার মানচিত্র অফলাইনে ডাউনলোড করে রাখুন। এটি আপনাকে সেলুলার নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর না করে নেভিগেট করতে সাহায্য করবে।

সময় অঞ্চল

[সম্পাদনা]

আমরা যখন কোনো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করি, বিশেষ করে যখন সময় অঞ্চল পরিবর্তন হয়, তখন জিপিএস নেভিগেশন সিস্টেমের সাথে একটি সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হই।

সমস্যাটি কী?

জিপিএস সিস্টেম সাধারণত আপনার বর্তমান অবস্থানের সময় অঞ্চলকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সময় প্রদর্শন করে। কিন্তু যখন আপনি একটি ভিন্ন সময় অঞ্চলে অবস্থিত গন্তব্যের জন্য একটি রুট সেট আপ করেন, তখন আপনার আনুমানিক আগমনের সময় (ETA) সাধারণত আপনার বর্তমান সময় অঞ্চলের অনুযায়ীই প্রদর্শিত হয়।

একটি উদাহরণ:

ধরুন আপনি শিকাগো থেকে ডেট্রয়েট যাচ্ছেন। শিকাগোতে সময় সেন্ট্রাল স্ট্যান্ডার্ড টাইম (CST) এবং ডেট্রয়েটে ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম (EST)। আপনার ডেট্রয়েটে বিকেল ৩ টায় পৌঁছাতে হবে। আপনি যখন শিকাগোতে থাকাকালীন আপনার জিপিএস-এ গন্তব্য সেট করেন, তখন জিপিএস আপনাকে একটি ETA দেবে যা CST অনুযায়ী হবে। ফলে, যদি ETA ২:০০ PM CST এর পরে হয়, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি ডেট্রয়েটে আপনার নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছাতে পারবেন না।

সমাধান:

  • সিস্টেমের সতর্কতা: কিছু জিপিএস সিস্টেম আপনাকে এই সময় অঞ্চলের পার্থক্য সম্পর্কে সতর্ক করে। যেমন, এটি আপনাকে বলতে পারে যে আপনার গন্তব্যের সময় অঞ্চল আপনার বর্তমান অবস্থানের সময় অঞ্চলের থেকে ভিন্ন।
  • কাঙ্ক্ষিত আগমনের সময় সেট করা: আরও উন্নত জিপিএস সিস্টেমে আপনি আপনার গন্তব্যের সময় অঞ্চলের অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোর জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত আগমনের সময় সেট করতে পারেন। সিস্টেমটি তারপর আপনার যাত্রাপথ এবং গতি অনুযায়ী আপনার জন্য একটি নতুন রুট এবং সময়সূচি নির্ধারণ করবে।

কেন এই সমস্যাটি ঘটে?

এই সমস্যাটির মূল কারণ হল জিপিএস সিস্টেমগুলি প্রাথমিকভাবে আপনার বর্তমান অবস্থানের সময় অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যদিও এগুলি সময় অঞ্চলের পরিবর্তন সনাক্ত করতে পারে, তবে গন্তব্যের সময় অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত গণনা করতে সবসময় সক্ষম হয় না।

চীনে ভ্রমণ করলে জিপিএস ব্যবহার করে নেভিগেট করা অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা জটিল হতে পারে। এর কারণ হল চীন সরকার তাদের নিজস্ব ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবহৃত মানক ব্যবস্থা থেকে আলাদা।

চীনের ভিন্ন ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা

চীন তাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একটি অনন্য ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত WGS84 (World Geodetic System 1984) ব্যবস্থার থেকে কিছুটা ভিন্ন। ফলে, চীনের ভিতরে এই দুটি ব্যবস্থার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়।

জিপিএস নেভিগেশনে এর প্রভাব

  • অসঠিক অবস্থান: চীনে ব্যবহৃত অনেক জিপিএস অ্যাপ বা ডিভাইস চীনের এই অনন্য ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে। ফলে, আপনার অবস্থানটি মানচিত্রে প্রায় ১০০ থেকে ৭০০ মিটার পর্যন্ত ভুল দেখানো হতে পারে।
  • উইকিভয়েজ এবং অন্যান্য মানচিত্রের সাথে অসঙ্গতি: উইকিভয়েজ সহ অনেক মানচিত্র এবং নেভিগেশন সাইট WGS84 ব্যবস্থা ব্যবহার করে। ফলে, চীনের জন্য উইকিভয়েজে দেওয়া কোঅর্ডিনেটগুলি চীনা মানচিত্র অ্যাপে সঠিকভাবে প্রদর্শিত নাও হতে পারে।
  • হংকং এবং ম্যাকাও: হংকং এবং ম্যাকাও যদিও চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, তবে তারা WGS84 ব্যবস্থা ব্যবহার করে। তবে, কিছু মানচিত্র অ্যাপ এখনও এই অঞ্চলেও সঠিক অবস্থান দেখাতে ব্যর্থ হতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি মূল ভূ-চীনের কাছাকাছি এলাকা।

ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ

  • একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করুন: চীনে ভ্রমণের সময় একাধিক জিপিএস অ্যাপ ব্যবহার করুন এবং তাদের প্রদর্শিত তথ্যের সাথে তুলনা করুন।
  • অফলাইন মানচিত্র ডাউনলোড করুন: চীনে ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত হতে পারে। তাই অফলাইন মানচিত্র ডাউনলোড করে রাখুন।
  • স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করুন: যদি আপনি কোনো জায়গা খুঁজে না পান, তাহলে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে সঠিক দিক দেখাতে সাহায্য করতে পারবেন।
  • সতর্ক থাকুন: চীনে জিপিএস ব্যবহার করার সময় সবসময় সতর্ক থাকুন এবং আপনার পরিবেশের উপর নজর রাখুন।

স্ক্র্যাম্বলিং, জ্যামিং এবং স্পুফিং

[সম্পাদনা]

আমরা প্রায়শই জিপিএসকে স্বাভাবিক বলে মনে করি, কিন্তু এর নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। জিপিএস সিগন্যাল জ্যামিং হলো এমন একটি কৌশল যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে জিপিএস সিগন্যালকে ব্যাহত করা হয় যাতে ডিভাইস সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে না পারে। এই হামলার ফলে নেভিগেশন ব্যবস্থা ব্যর্থ হতে পারে, যা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

জিপিএস জ্যামিং কীভাবে কাজ করে?

স্যাটেলাইটের সরবরাহকারীরা ইচ্ছেমতো আপনার ডিভাইসের নির্ভুলতা কমাতে পারে। এছাড়াও, যে কেউ একটি সাধারণ ডিভাইস ব্যবহার করে জিপিএস সিগন্যালকে জ্যাম করতে পারে। আরও উন্নত হামলাকারীরা ভুয়া জিপিএস সিগন্যাল পাঠাতে পারে, ফলে আপনার ডিভাইস ভুল অবস্থান দেখাবে।

এর ফলাফল কী হতে পারে?

  • নিরাপত্তা ঝুঁকি: ভুল অবস্থানের কারণে আপনি বিপজ্জনক এলাকায় চলে যেতে পারেন।
  • সড়ক দুর্ঘটনা: ভুল নেভিগেশনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
  • সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব: জিপিএস জ্যামিং সামরিক অভিযান এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই সমস্যাটি কতটা সাধারণ?

জিপিএস জ্যামিং একটি বাস্তব সমস্যা। এটি বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিনল্যান্ডের বিমানবন্দরের কাছে বারবার জ্যামিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

আপনি নিজেকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন?

  • অফলাইন মানচিত্র ব্যবহার করুন: জিপিএস সিগন্যাল না থাকলেও অফলাইন মানচিত্রের সাহায্যে আপনি নিজের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারবেন।
  • প্রথাগত নেভিগেশন ব্যবহার করুন: কম্পাস, মানচিত্র এবং অন্যান্য প্রথাগত নেভিগেশন সরঞ্জামগুলি শিখুন।
  • সতর্ক থাকুন: যদি আপনি কোনো সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে ভ্রমণ করেন, তাহলে সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং আপনার সঙ্গে একটি ব্যাটারি চালিত রেডিও রাখুন।

নিরাপদ থাকুন

[সম্পাদনা]

জিপিএস নেভিগেশন যদিও আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, তবুও এটি নিখুঁত নয়। বিশেষ করে অজানা বা দুর্গম এলাকায় যাত্রা করার সময়, জিপিএস-এর সীমাবদ্ধতাগুলি মনে রাখা জরুরি।

গাড়ি চালানোর সময়, জিপিএস সবসময় রাস্তার সকল অবস্থা বিবেচনা করে না। পাহাড়ি রাস্তা, নদী পারাপার বা খারাপ রাস্তাগুলি জিপিএসে সঠিকভাবে প্রতিফলিত নাও হতে পারে। সবচেয়ে ছোট রুট সবসময় নিরাপদ বা সবচেয়ে উপযুক্ত নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া রাস্তা একটি দ্রুত রুট হতে পারে, কিন্তু এটি ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়তে পারে। তাই, জিপিএসের নির্দেশ অনুসরণ করার আগে সর্বদা নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করুন। রাস্তার মানচিত্র দেখুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি সঠিক পথে যাচ্ছেন। যদি আপনার গাড়িতে বাইক রাখা থাকে, তাহলে নিচু সেতু বা সরু রাস্তা এড়িয়ে চলুন, যদিও জিপিএস আপনাকে সেই পথে নির্দেশ করছে।

হাইকিংয়ের সময়, ওপেন সোর্স মানচিত্রগুলি সবসময় সঠিক এবং আপডেট থাকে না। কখনও কখনও ট্রেইলগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। জিপিএস সরাসরি আপনার সামনে কী আছে তা দেখাতে পারে না। খাড়া ঢাল, নদী বা অন্যান্য বাধাগুলি আপনাকে থামাতে পারে। জিপিএস ডিভাইসগুলিও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্সের মতোই ব্যর্থ হতে পারে। তাই, সবসময় একটি ব্যাকআপ প্ল্যান থাকা উচিত। বিভিন্ন মানচিত্রের মধ্যে স্কেল এবং কোঅর্ডিনেট সিস্টেমের পার্থক্য থাকতে পারে।

নৌকা চালানোর সময়, নৌকা চালানোর জন্য বিশেষ জিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত। সাধারণ গাড়ির জিপিএস সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। জিপিএস আপনাকে জলের গভীরতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারে না। জিপিএস অন্যান্য সম্ভাব্য বিপদ যেমন চটকান, পাথর বা অন্যান্য নৌকা সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে না।

সাধারণভাবে, জিপিএস ডিভাইসগুলি বেশি ব্যাটারি খরচ করে। তাই, একটি অতিরিক্ত ব্যাটারি বা পাওয়ার ব্যাঙ্ক বহন করুন। খারাপ আবহাওয়ায় জিপিএস সিগন্যাল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সবসময় একটি কাগজের মানচিত্র এবং কম্পাস বহন করুন।

সর্বশেষে, জিপিএস একটি দুর্দান্ত সরঞ্জাম, কিন্তু এটি আপনার একমাত্র নির্ভরযোগ্য সরঞ্জাম হওয়া উচিত নয়। সবসময় সতর্ক থাকুন এবং নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করুন।

গোপনীয়তা

[সম্পাদনা]

আপনি যখন জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করেন, তখন আপনার অবস্থান সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রকাশ করতে পারেন। এটি আপনার গোপনীয়তা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়ার একটি বৈধ কারণ। আসুন এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানি।

পুরানো জিপিএস ডিভাইস এবং গোপনীয়তা:

একটি সাধারণ জিপিএস ডিভাইস, যেমন আপনি একটি গাড়িতে ব্যবহার করেন, মূলত একটি একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্যাটেলাইট আপনার ডিভাইসে সিগন্যাল পাঠায়, এবং আপনার ডিভাইস সেই সিগন্যাল ব্যবহার করে আপনার অবস্থান নির্ধারণ করে। এটি কোনো তথ্য আপনার কাছ থেকে স্যাটেলাইটে ফেরত পাঠায় না। অর্থাৎ, এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করে আপনার অবস্থান ট্র্যাক করা সম্ভব নয়।

স্মার্টফোন এবং গোপনীয়তা:

যখন আপনি আপনার স্মার্টফোনে নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করেন, তখন পরিস্থিতি আলাদা হয়। এই অ্যাপগুলি আপনার অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে এবং এমনকি তা পরিষেবা সরবরাহকারীর সাথে ভাগ করে নিতে পারে। এটি আপনার গতিবিধির একটি বিস্তারিত ইতিহাস তৈরি করতে পারে, যা আপনার গোপনীয়তার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।

আপনি কী করতে পারেন:

  • অ্যাপের অনুমতি সীমিত করুন: আপনার ফোনের সেটিংসে গিয়ে, আপনি কোন অ্যাপগুলি আপনার অবস্থান অ্যাক্সেস করতে পারে তা নির্দিষ্ট করতে পারেন।
  • অবস্থান ইতিহাস বন্ধ করুন: বেশিরভাগ ফোনে একটি অবস্থান ইতিহাস সেটিংস থাকে যা আপনি বন্ধ করতে পারেন।
  • ভিপিএন ব্যবহার করুন: একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) আপনার ইন্টারনেট কানেকশন এনক্রিপ্ট করতে পারে এবং আপনার অনলাইন কার্যকলাপকে ট্র্যাক করা কঠিন করে তুলতে পারে।
  • তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ এড়িয়ে চলুন: যতটা সম্ভব সরকারী অ্যাপ ব্যবহার করুন। তৃতীয় পক্ষের অ্যাপগুলি আপনার ডেটা সংগ্রহ করে এবং বিক্রি করতে পারে।

ভবিষ্যৎ

[সম্পাদনা]

জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে এল৫ সিগন্যাল একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই নতুন সিগন্যালটি জিপিএসের নির্ভুলতা আরও বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এর ব্যবহারকে আরও বিস্তৃত করেছে।

এল৫ সিগন্যাল কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

এল৫ সিগন্যাল হল জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো একটি নতুন ফ্রিকোয়েন্সি। এই ফ্রিকোয়েন্সিটি প্রচলিত জিপিএস সিগন্যালের তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং হস্তক্ষেপের প্রতি কম সংবেদনশীল। ফলে, এল৫ সিগন্যাল ব্যবহার করে জিপিএস ডিভাইসগুলি আরও নির্ভুল অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে, শহরের মতো ঘন নির্মাণাধীন এলাকা বা গাছপালাঘেরা অঞ্চলে, যেখানে জিপিএস সিগন্যাল হস্তক্ষেপের সম্মুখীন হয়, এল৫ সিগন্যাল অনেক ভালো কাজ করে।

এল৫ সিগন্যালের সুবিধা:

  • উচ্চ নির্ভুলতা: এল৫ সিগন্যালের সাহায্যে জিপিএস ডিভাইসগুলি কয়েক সেন্টিমিটারের মধ্যে অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
  • হস্তক্ষেপের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা: এল৫ সিগন্যাল অন্যান্য বৈদ্যুতিক সংকেতের হস্তক্ষেপের প্রতি কম সংবেদনশীল।
  • বিস্তৃত ব্যবহার: এল৫ সিগন্যালের কারণে জিপিএসের ব্যবহার আরও ব্যাপক হয়েছে। এটি স্বায়ত্তশাসিত গাড়ি, ড্রোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়।

চ্যালেঞ্জ:

যদিও এল৫ সিগন্যাল জিপিএস প্রযুক্তিকে অনেক উন্নত করেছে, তবে এটির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল সিগন্যাল জ্যামিং। আন্তর্জাতিক সংঘাতের সময়, জিপিএস সিগন্যালকে জাম করা হয় যাতে শত্রুদের নেভিগেশন ব্যবস্থা ব্যাহত করা যায়। এটি সামরিক অভিযান এবং সাধারণ মানুষের জীবনকেও প্রভাবিত করতে পারে।

ভবিষ্যৎ:

এল৫ সিগন্যালের সাথে জিপিএস প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। ভবিষ্যতে, আমরা আরও নির্ভুল এবং নিরাপদ নেভিগেশন সিস্টেমের প্রত্যাশা করতে পারি। তবে, সিগন্যাল জ্যামিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং কৌশল উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।

সার্বিকভাবে, এল৫ সিগন্যাল জিপিএস প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও নির্ভুল এবং নিরাপদ নেভিগেশন সরবরাহ করতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তির সম্পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা প্রয়োজন।

এছাড়াও দেখুন

[সম্পাদনা]
এই নমুনা জিপিএস নেভিগেশন একটি ব্যবহারযোগ্য নিবন্ধ লেখা১ একজন রোমাঞ্চকর ব্যক্তি এই নিবন্ধটি ব্যবহার করতে পারেন, তবে অনুগ্রহ করে পাতাটি সম্পাদনা করে উন্নত করতে নির্দ্বিধায় সহায়তা করতে পারেন।

{{#assessment:প্রসঙ্গ|ব্যবহারযোগ্য}}