নিওম (Niyūm, শৈলীগতভাবে NEOM হিসাবে) একটি ভবিষ্যতবান্ধব মেগাসিটি যা উত্তর সৌদি আরবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বিলাসিতা বছর আগে থেকেই প্রচার করা হচ্ছে, তবে প্রথম পর্যটক সুবিধাগুলি ২০২৪ সালে খোলার কথা রয়েছে।
অনুধাবন
[সম্পাদনা]- "জানাডুতে কুবলাই খান / এক রাজকীয় আনন্দদায়ক গম্বুজ গড়ার আদেশ দিলেন . . ."
প্রতি বছর সৌদি আরবে ৩০ লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী ও হাজার হাজার ব্যবসায়িক ভ্রমণকারী আসেন, তবে ধর্মনিরপেক্ষ পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অনেকটাই সীমিত ছিল, এবং পর্যটন ভিসা পাওয়াটাও ছিল বেশ কঠিন। এরই মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো—মিশর, জর্ডান ও উপসাগরীয় দেশগুলো পর্যটন থেকে অনেক বড় আয় করছে। তাই সৌদি আরবও পর্যটকদের আকর্ষণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে, আর নিওম হলো এই চেষ্টার সর্বশেষ এবং সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটি প্রকল্প। তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে একটি কার্বন-নিরপেক্ষ অর্থনীতির দিকে যেতে চায় তারা, এবং তাদের মতে এর উপায় হলো পর্যটকদের হাজার হাজার মাইল উড়িয়ে এনে সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানানো, যেখানে শুষ্ক মরুভূমিতে জলসফর ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ঠান্ডা পরিবেশে গ্রীষ্মকাল কাটানো সম্ভব।
লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগরের উপকূলজুড়ে অনেকগুলি প্রাথমিক পর্যায়ের প্রকল্পের কাঠামো পড়ে আছে, যেগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। নিওম সেই ভাগ্য বরণ করতে পারে; তবে এটি বিশাল তেল বাজেট এবং শীর্ষ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে। এই শহরের নাম এসেছে Neo (নতুন) এবং M থেকে, যা ক্রাউন প্রিন্স ও সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানকে নির্দেশ করে, যিনি এই প্রকল্পটি ২০১৭ সালে চালু করেন। "এখানে তৈরি করো" বললে বিরোধিতা না করাই ভালো, যেমন এই এলাকার পূর্ববর্তী বাসিন্দা হাওয়াইতাত গোত্র বুঝতে পেরেছিল।
নিওম ইতিমধ্যেই একটি ক্রীড়া ইভেন্ট, ২০২৩ সালে একটি আলট্রাম্যারাথন আয়োজন করেছে, যখন সেখানে মাত্র দুটি ভবন নির্মিত হয়েছিল। তবে ভ্রমণকারীদের রিপোর্ট এখনও বিরল, যেমনটি মক্কার ক্ষেত্রে ছিল, যখন বার্টন ১৮৫৩ সালে সেখানে গোপনে গিয়ে বের হয়ে আসেন। "নিওম" মূলত রিসোর্ট শহরটিকে বোঝায়, আর সবচেয়ে চমকপ্রদ উপাদান হলো "দ্য লাইন"—১৭০ কিমি দীর্ঘ, ৫০০ মিটার উঁচু এবং ২০০ মিটার চওড়া একটি শহর, যেখানে একটি উচ্চগতির ট্রেন চলবে মাঝ বরাবর। আরও রয়েছে অক্সাগন, একটি ২৫০ বর্গকিমি ভাসমান শিল্প শহর, এবং মরুভূমির মাঝে ট্রোজেনা স্কি রিসোর্ট। এর প্রতিটি একটি মেগা-প্রকল্প, আর পুরো প্রকল্পকে বর্ণনা করতে "গিগা-প্রকল্প" শব্দটি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে কতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তা এখনও দেখার বিষয়, তবে অন্তত কৃত্রিম চাঁদটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেই।
সৌদি-মিশর সংযোগ সেতু এই প্রক্রিয়ার শেষ বড় অংশ, যা তিরান প্রণালীতে মিশরের শার্ম-এল-শেখ থেকে ১৫ কিমি দীর্ঘ সেতুর পরিকল্পনা করেছে, যা উপকূল বরাবর জর্ডানের সাথে সংযুক্ত হবে। এতে নিওম একটি ত্রি-রাষ্ট্রের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে, এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রমণের চিত্র পাল্টে যাবে। তবে এই "পরিকল্পনা" মূলত শাসকদের মধ্যে একটি সম্মতিতে সীমাবদ্ধ, এবং ২০২৪ পর্যন্ত এর কোনো নকশা বা সময়সূচি নির্ধারিত হয়নি, এমনকি নির্মাণ কাজও শুরু হয়নি।
তবুও, বিনোদনমূলক ভ্রমণ সবসময় আকাঙ্ক্ষার বিষয়, আর টিভি বিজ্ঞাপনগুলোতে যা প্রদর্শিত হচ্ছে তা আকর্ষণীয়। এসব বিজ্ঞাপন সৌদি আরব, নিওম শহর এবং এর নির্দিষ্ট রিসোর্ট কমপ্লেক্সগুলোর প্রচার করে, যা প্রায়শই ক্রুজ শিপ বিজ্ঞাপনের মতো মনে হয়, যেখানে কয়েকজন বিলাসবহুল জীবনযাপনে মগ্ন থাকে। বাস্তবে হয়তো মধ্যম আয়ের পর্যটকের ভিড় দেখা যাবে। সৌদি আরবের কঠোর প্রথা এবং আইন এই অঞ্চলে কতটা শিথিল হবে? না হলে সম্ভাব্য পর্যটকরা হয়তো থাইল্যান্ড বা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলকেই বেছে নেবে। আর যদি শিথিল হয়, তবে তা ধর্মীয় রক্ষণশীলদের ক্ষোভের কারণ হতে পারে। এখানে নিরাপত্তা ও পরিষেবা প্রদানে রোবট ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে জঙ্গিরা এর মধ্যেই হয়তো রোবটগুলোতে প্রবেশ বা তাদের প্রভাবিত করার উপায় খুঁজতে শুরু করেছে।
যাতায়াত
[সম্পাদনা]- প্রবেশের শর্তাবলী: দেখুন সৌদি আরব#প্রবেশ করুন। বেশিরভাগ পশ্চিমা পাসপোর্টধারী ই-ভিসা বা ভিসা-ওয়েভার পেতে যোগ্য, এবং নিওমে প্রবেশের জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম নেই।
- 1 নিওম বে বিমানবন্দর (NUM আইএটিএ), ☎ +৯৬৬ ৮০০ ১১৬ ৮৮৮৮। এখানে রিয়াদ, জেদ্দা এবং দাম্মাম থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এবং দোহা ও দুবাই থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আসে। পরবর্তী গন্তব্যের জন্য আপনার আবাসস্থলের মাধ্যমে ট্যাক্সি ভাড়া করাই সবচেয়ে ভালো।
- সড়ক পথে: নিওম রিয়াদ থেকে ১৬০০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে, যা প্রায় ৯ ঘণ্টার পথ। সৌদি আরবের বিস্তৃত বাস নেটওয়ার্ক এই অঞ্চলে যায় না এবং রিয়াদ-জর্ডান রেলপথ পূর্ব দিক দিয়ে অনেক দূরে চলে যায়। সুতরাং, আপনাকে গাড়ি ভাড়া করতে হবে, নাহলে এটি খুব ব্যয়বহুল ট্যাক্সি ভ্রমণ হবে।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]এটা নিয়ে ভাবারও প্রয়োজন নেই। বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, সুইমিং পুল এবং "স্বাস্থ্যসেবা" এর মধ্যে আবদ্ধ রাখা, যেন আপনি অন্য কোথাও খরচ বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা চিন্তাও না করেন, এবং গলফ কার্টের পরিসীমার বাইরেও না যান।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- 1 সিন্দালাহ দ্বীপ। এটি প্রথম চালু হওয়া রিসোর্ট এলাকাগুলোর একটি, যেখানে ২০২৪ সালে বেশিরভাগ সুবিধা চালু হয়েছে।
- 2 লাইন। নিওমের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্প, একটি সরলরেখার মতো শহর যা ৫০০ মিটার উঁচু এবং ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্য দিয়ে একটি উচ্চগতির ট্রেন চলবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ২.৪ কিমি দৈর্ঘ্যে আনা হবে, তবে ২০২৪ পর্যন্ত এটি কেবল একটি খননকৃত চতুর্ভুজাকার স্থান এবং এটি পর্যটকদের জন্য বন্ধ রয়েছে কারণ এটি এখনো নির্মাণাধীন।
কি করবেন
[সম্পাদনা]এই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে ক্রীড়া বিশাল ভূমিকা রাখবে, শুধু বিভিন্ন সুবিধা ও টুর্নামেন্টই নয়, বরং জনপ্রিয় খেলাগুলোর ক্ষেত্রে সৌদি আরবের প্রভাবও লক্ষ্যণীয়। এই বিশাল প্রকল্পটি বক্সিং, টেনিস, ফর্মুলা ওয়ান মোটর রেসিং এবং ফুটবলে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর হয়েছে, এবং গলফে অনেকটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে: এলআইভি গলফ যথেষ্ট সংখ্যক তারকা খেলোয়াড়কে নিয়ে তাদের নিজস্ব খেলার কাঠামো গড়েছে, যা বিদ্যমান পিজিএ এবং আর অ্যান্ড এ'র সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম এবং পরবর্তীতে এগুলোকে একীভূত করতে পারে। এটিকে "স্পোর্টস-ওয়াশিং" বলা হয় যেন এটি শুধুই একটি প্রচারণামূলক উদ্যোগ, তবে সৌদি আরবের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এর চেয়েও অনেক বড়।
- গলফ: শারমাতে একটি একক গলফ কোর্স তৈরি করা হয়েছে যা বেশ সবুজ, তবে গর্তের দৈর্ঘ্য এবং অন্যান্য তথ্য এখনও প্রকাশিত হয়নি। সিনদালা দ্বীপে আরেকটি গলফ কোর্স প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে।
- ইয়টিং: সিনদালা দ্বীপে একটি মেরিনা নির্মাণাধীন রয়েছে।
- 1 'স্কিইং' এবং শীতকালীন খেলাধুলা। পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রোজেনা ২০২৯ সালের এশিয়ান উইন্টার গেমস আয়োজন করবে। হ্যাঁ, এখানে মাঝে মাঝে বরফ পড়ে, ঠিক যেমনভাবে জারমাটে মাঝে মাঝে তাপপ্রবাহ হয়, তাই বেশিরভাগ সময় কৃত্রিম বরফের সাহায্যে স্কি করা হবে।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]এখনও কিছু নেই, তবে আরব অঞ্চলে কেনাকাটার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে দুবাই, এবং নিওমে এর চেয়েও উচ্চমানের কিছু করার লক্ষ্য নিয়েছে।
খাবার
[সম্পাদনা]হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোই এখানে একমাত্র খাবারের ব্যবস্থা। সমস্ত খাদ্য পরিবেশনই হবে হালাল।
পানীয়
[সম্পাদনা]রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]ঘুমানোর জন্য শুভকামনা রইল: দিন-রাত চলছে খনন যন্ত্র, ড্রিল, সিমেন্ট মিক্সার এবং জেনারেটরের আওয়াজ। নির্মাণকর্মীদের জন্য অস্থায়ী গ্রাম তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তারা অবস্থান করছে। উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপকরা কয়েকটি বিদ্যমান হোটেলে দীর্ঘ সময় থাকেন, তাই সেখানে অন্যদের জন্য প্রায়ই খালি জায়গা থাকে না।
ম্যারিয়ট ২০২৪ সালেই [সিনদালা দ্বীপে] প্রথম তিনটি হোটেল খুলবে। তবে আপাতত, আপনার একমাত্র বিকল্প মূল ভূখণ্ডের হোটেলগুলো।
- 1 হিল্টন শর্মার হ্যাম্পটন। নিওমে প্রথম খোলা হোটেলটি এই হ্যাম্পটন ইন, যার রুম ভাড়া $৬০০/রাত। তবে আমন্ত্রণ ছাড়া এখানে থাকা নিষিদ্ধ।
- 2 রয়্যাল টিউলিপ শর্মা রিসোর্ট, তাবুক, ☎ +৯৬৬ ১৪ ৪৩৫ ১০০০। এলাকার কয়েকটি পুরনো হোটেলের মধ্যে এটি একটি। তবে এখানে অবস্থান করাও বেশ কঠিন, কারণ নির্মাণ প্রকল্পের কর্মীরা দীর্ঘ সময় ধরে এটি প্রায় পুরোপুরি বুক করে রেখেছে।
- লা'জুর বিচ অ্যান্ড রিসোর্ট রয়েল টিউলিপের ২ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত, তবে ২০২৪ সালে এটি নির্মাণকর্মীদের জন্যই প্রায় পুরোপুরি বুক করা।
জায়নর (২০২৭ সালে উদ্বোধন), লেইজা, এপিকন, সিরানা, উতামো, নরলানা, অ্যাকুয়েলাম এবং জারডুনের রিসোর্টগুলো এখনও নির্মাণাধীন বা কেবল প্রচার ভিডিওতেই সীমাবদ্ধ।
সংযোগ
[সম্পাদনা]ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত, নিওম এবং এর আশেপাশের মহাসড়কগুলোতে মোবিলি এবং এসটিসি'র ৫জি এবং জেইন'র ৪জি সেবা রয়েছে।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]- মক্কা প্রায় ১০০০ কিমি দক্ষিণে, জেদ্দার মাধ্যমে সড়ক পথে পৌঁছানো যায়।
- জর্ডানের আকাবা ৩৮০ কিমি উত্তরে, সড়কপথে চার ঘণ্টারও কম সময় লাগে, তবে সীমান্ত পারাপারে কিছুটা সময় লাগতে পারে। আকাবা থেকে দিনের সফরে দর্শনীয় পেত্রার প্রাচীন শহরটি দেখে আসা সম্ভব।
{{#assessment:শহর|ব্যবহারযোগ্য}}