বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এর একটি উল্লেখযোগ্য শহর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এর একটি জেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আয়তন ১৯২৭.১১ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও হবিগঞ্জ এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অবস্থান।

কীভাবে যাবেন?

[সম্পাদনা]

আকাশপথ

[সম্পাদনা]

এখানে কোন বিমানবন্দর না থাকায় সরাসরি আকাশপথে ভ্রমণ সম্ভব নয়।

সড়কপথ

[সম্পাদনা]

ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে সড়ক ও রেল উভয় পথেই যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। সড়ক পথের চেয়ে রেল পথে যাতায়াতই সুবিধাজনক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসগুলো প্রধান সায়েদাবাদ ও কমলাপুর থেকে ছাড়ে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আরও কিছু কাউন্টার রয়েছে। তবে সায়েদাবাদের চেয়ে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর যাত্রীসেবার মান ভালো।

ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের নির্দিষ্ট কোনো ট্রেন নেই। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী রুটের ট্রেনগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করিয়ে থাকে।

এখানে কোন আন্তঃজেলা নৌ যোগাযোগ নেই।

দেখুন

[সম্পাদনা]
মানচিত্র
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানচিত্র
  • 1 হাতির পুল ঢাকা সিলেট বা কুমিল্লা সিলেট রোডের সংলগ্ন স্থানে অর্থ্যাৎ সরাইল থানার বারিউরা নামক বাজারের প্রায় একশত গজ দূরে ইট নির্মিত একটি উঁচু পুল বিদ্যমান। পুলটি সংস্কার করার ফলে এখন অনেক বেশি আকর্ষণীয়। বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে পুলটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলটির হাতির পুল নামে পরিচিত। দেওয়ান শাহবাজ আলী সরাইলে দেওয়ানী লাভের পর বর্তমানে শাহবাজপুরে তাঁর কাচারী প্রতিষ্ঠা করেন। শাহবাজ আলী সরাইলের বাড়ি এবং শাহবাজপুর যাতায়াতের জন্য সরাইল থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। রাস্তাটি ১৬৫০ খ্রিঃ দিকে নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। উক্ত রাস্তাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় কুট্টা পাড়ার মোড় থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত এখনও টিকে আছে। রাস্তাটিকে স্থানীয়রা জাঙ্গাল বলে থাকে। দেওয়ান শাহবাজ আলী এবং হরষপুরের জমিদার দেওয়ান নুরমোহাম্মদের সঙ্গে আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করে। ফলে উভয় পরিবারের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে উক্ত জাঙ্গালটি ব্যবহৃত হতো বলে মনে করা হয়। উক্ত জাঙ্গালটির উপরে পুলটি অবস্থিত। শুধু মাত্র হাতির পিটে চড়ে দেওয়ানদের চলাচল আবার কথিত আছে পুলটির গোড়ায় হাতি নিয়ে বিশ্রাম দেওয়া হতো বলে পুলটিকে হাতির পুল নামে অভিহিত করা হয়। পুলটির গায়ে অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য করা ছিল। সংস্কারের সময কিছু কারুকার্য নতুন করে তৈরী করা হয়েছে। জাঙ্গাল এবং হাতির পুলের পাশ দিয়ে বর্তমান ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রাম সিলেট রোড চলে গেছে। সরাইল হরষপুর জাঙ্গাল দিয়ে কবে থেকে লোক চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। হাতির পুলের নিচে দিয়ে ইংরেজ আমলেও নৌকা চলাচল করত বলে জানা যায়। উইকিপিডিয়ায় হাতিরপুল (Q5681649)
  • 2 গঙ্গাসাগর দিঘী অতীতে নৌ-পথের গুরুত্ব যখন অধিক ছিল, তখন হাওড়া নদীর তীরবর্তী গঙ্গাসাগর ছিল মূলত আগরতলার নদী-বন্দরস্বরূপ। গঙ্গাসাগরের পূর্বনাম ছিল রাজদরগঞ্জ বাজার। এ বাজার তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট ব্যাংক ‘দি এসোসিয়েটেড ব্যাংক লিঃ অফ ত্রিপুরা’র প্রধান অফির স্থাপিত হয়েছিল। তখনো উপমহাদেশে ব্যাংকের প্রচলন সঠিকভাবে হয়নি। এ অবস্থায় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান অফিস স্থাপনা উল্লেখিত স্থানের ঐতিহাসিকতাকেই উজ্জ্বল করে বৈকি। তাছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের ভাটি অঞ্চলের খাজনা আদায়ের মহল অফিসও এ রাজদরগঞ্জ বাজারেই ছিল। রাজদরগঞ্জ বাজারের পরবর্তী নাম মোগড়া বাজার। এখানে ‘সেনাপতি বাড়ি’ নামে একটি জায়গা আছে। তাই মনে করা হয়ে থাকে যে, ত্রিপুরা-রাজ্যের কোন এক সেনাপতি এখানে বসবাস করতেন স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে। ত্রিপুরা-রাজ্য এখানে একটি বিরাট দীঘি খনন করান। গঙ্গা দেবীর নামানুষারে দীঘির নামকরণ করেন ‘গঙ্গাসাগর দীঘি’। সেই থেকেই জায়গাটির নাম গঙ্গাসাগর হয়। উইকিপিডিয়ায় গঙ্গাসাগর দিঘি (Q16345321)
  • 3 খড়মপুর মাজার শরীফ (কেল্লা শহীদ মাজার)। আখাউড়ার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ যা কেল্লা শহীদের দরগাহ নামে সমগ্র দেশে পরিচিত। কেল্লা শহীদের দরগাহ সর্ম্পকে যে কাহিনী প্রচলিত আছে তা হচ্ছে এই যে, সে সময় খড়ম পুরের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরত। একদিন চৈতন দাস ও তার সঙ্গীরা উক্ত নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে একটি খন্ডিত শির আটকা পড়ে যায়। তখন জেলেরা ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে এবং খন্ডিত শিরটি উঠাতে গেলে আল্লাহর কুদরতে খন্ডিত শির বলতে থাকে ‘‘একজন আস্তিকের সাথে আর একজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত কলেমা পাঠ করে মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না।’’ খন্ডিত মস্তকের এ কথা শুনে মস্তকের কাছ থেকে কলেমা পাঠ করে চৈতন দাস ও সঙ্গীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যায়। মস্তকের নির্দেশ মোতাবেক ইসলামী মতে খড়ম পুর কবরস্থানে মস্তক দাফন করে। ধর্মান্তরিত জেলেদের নাম হয় শাহবলা, শাহলো, শাহজাদা, শাহগোরা ও শাহরওশন। তাঁরাই এ দরগাহের আদিম বংশধর। এই দরগাহের খ্যতি ধীরে ধীরে চর্তুদিঁকে ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকেই শাহ পীর সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ওরফে কেল্লা শহীদের পবিত্র মাজার শরীফ নামে পরিচিতি লাভ করে। ২৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত দরগা শরীফের জায়গা তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দান করেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে, আওলিয়া হজরত শাহ জালাল (রঃ) এক সঙ্গে সিলেটে যে ৩৬০ জন শিষ্য এসেছিলেন হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তরফ রাজ্যেও রাজা আচক নারায়নের সঙ্গে হজরত শাহজালালের প্রধান সেনাপতি হজরত সৈয়দ নাসিরউদ্দিন যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন সে যুদ্ধে হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ শহীদ হন এবং তাঁর মস্তক তিতাস নদীর স্রোতে ভেসে আসে। প্রতি বছর ওরসে কেল্লা শতীদের মাজারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। উইকিপিডিয়ায় খড়মপুর মাজার শরীফ (Q17007397)
  • 4 কালভৈরব মন্দির, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরের অদূরে মেড্ডা এলাকায় (সরাইল বিশ্বরোড থেক রিকশা বা সিএনজির মত স্থানীয় পরিবহণে এখানে আসা যায়)। শ্রীশ্রী কালভৈরব হচ্ছে হিন্দু দেবতাবিশেষ। শিবের অংশ বা দেহ থেকে জাত ভৈরববিশেষ। মন্দিরটির প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে কালভৈরব বা শিব মূর্তি। সুবিশাল মূর্তিটির উচ্চতা ২৮ ফুট। বিশাল আকৃতিবিশিষ্ট ও চোখ ধাঁধানো মূর্তিটি ১৯০৫ সালে তৈরী করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দর্শনে যে কেউই ভয় পেয়ে যেতে পারেন বিরাট আকারের মূর্তি দেখে। মূর্তিটির ডান পাশে রয়েছে একটি কালী মূর্তি এবং বাম পাশে পার্বতী দেবী। এছাড়াও, শ্রীশ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ, সরস্বতী দেবী প্রভৃতি মূর্তি রয়েছে। কালের স্বাক্ষী হিসেবে রযেছে সুদৃশ্যমান এক জোড়া মঠ। শ্রীশ্রী কালভৈরব নাটমন্দির, দূর্গামন্দির ইত্যাদি।

    সাংবার্ষিক ফাল্গুনী শুক্লা সপ্তমী তিথিতে চার দিনব্যাপী পূজা, হোমযজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠা উৎসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। পূজা অনুষ্ঠানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইংল্যান্ড, জাপান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পূজারীরা ভিড় জমান। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটকও এখানে ভিড় করেন এ সময়। উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, প্রতিদিনই দর্শনার্থী ও পূজারীদের ভিড় লেগেই থাকে। উইকিপিডিয়ায় কালভৈরব মন্দির, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া (Q62495)

খাওয়া দাওয়া

[সম্পাদনা]

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মিষ্টান্নের মধ্যে ছানামুখী অন্যতম, যা দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে তেমন প্রচলিত নয়। এছাড়া তালের রস দিয়ে তৈরি আরেকটি মিষ্টান্ন তালের বড়া ও রসমালাই বিখ্যাত।

রাত্রি যাপন

[সম্পাদনা]