বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে
আর্জেন্টিনার পতাকা – নীল-সাদা রঙের এই পতাকা সূর্যের উদয়কে প্রতীক করে, যা দেশের স্বাধীনতা আর আশার গল্প বলে
বুয়েনস আয়ার্সের রাজপথ – ইউরোপীয় স্থাপত্য আর ল্যাটিন জীবনের মিশেল, যেন একটা জীবন্ত পোস্টকার্ড

আর্জেন্টিনা (স্প্যানিশ: Argentina, উচ্চারণ: আর-হেন-TEE-nah) দক্ষিণ আমেরিকার একটা জাদুর দেশ – এখানে আন্দেজের তুষারমোড়া চূড়া থেকে আটলান্টিকের নোনা হাওয়া, প্যাটাগোনিয়ার নির্জন হিমবাহ থেকে বুয়েনস আয়ার্সের ট্যাঙ্গো-ভরা রাত, সবকিছু মিলে একটা অদ্ভুত মোজাইক। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ হিসেবে এর আয়তন ২.৭৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, আর এখানে আপনি এক সপ্তাহে মরুভূমি, জঙ্গল, সমুদ্র আর পর্বত – সব ট্রাভার্স করতে পারেন। আমি যখন প্রথম বুয়েনস আয়ার্সে নামি, তখন রাস্তায় ট্যাঙ্গোর সুর আর গরুর মাংসের গন্ধ মিলে মনে হলো, এখানে সময়টা একটু অন্যরকম চলে। এই দেশটা শুধু ভ্রমণ নয়, একটা অনুভূতি – যেখানে প্রকৃতি আপনাকে চুপ করিয়ে দেয়, আর সংস্কৃতি আপনাকে নাচতে বাধ্য করে।

অনুধাবন

[সম্পাদনা]

আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ কোনায় বসে আছে, পশ্চিমে চিলি, উত্তরে বলিভিয়া আর প্যারাগুয়ে, পূর্বে ব্রাজিল আর উরুগুয়ে – আর পূর্বদিকে আটলান্টিকের বিশালতা। এখানকার ভূগোল এতটাই বৈচিত্র্যময় যে, একদিনে আপনি আন্দেজের ৬,৯৬০ মিটার উঁচু আকনকাগুয়ায় দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতে ভুলে যান, পরের দিন প্যাটাগোনিয়ার হিমবাহের নিচে পেঙ্গুইনের সাথে সেলফি তুলতে পারেন। জলবায়ু? উত্তরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গরম, দক্ষিণে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা – গ্রীষ্ণকালে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) প্যাটাগোনিয়া যাওয়াই বেস্ট, তখন দিন লম্বা আর হাইকিং-এর জন্য পারফেক্ট।

রাজধানী: বুয়েনস আয়ার্স – "দক্ষিণের প্যারিস" নামে পরিচিত, ৩ মিলিয়ন লোকের এই শহর রাতের বেলা জেগে ওঠে ট্যাঙ্গো আর স্টেকের গন্ধে।
ভাষা: স্প্যানিশ (রিওপ্লাতেন্সে ভেরিয়েন্ট) – "শ" এর বদলে "জ" উচ্চারণ, আর "vos" দিয়ে তুমি বলা। ইংরেজি শহরে চলে, কিন্তু গ্রামে "che" বলে শুরু করলে সবাই হাসবে।
মুদ্রা: আর্জেন্টাইন পেসো (ARS) – ইনফ্লেশনের কারণে দাম বদলায়, "দোলার ব্লু" রেটে ডলার এক্সচেঞ্জ করলে সস্তায় ঘুরতে পারবেন।
সময় অঞ্চল: ART (UTC−3) – বাংলাদেশের থেকে ৯ ঘণ্টা পিছিয়ে, কোনো ডে-লাইট সেভিং নেই।
জনসংখ্যা: ~৪৭ মিলিয়ন (২০২৫ অনুমান) – ৯৭% ইউরোপীয় (ইতালীয়, স্প্যানিশ) বংশোদ্ভূত, আর বাকিরা ইন্ডিজেনাস আর মেস্তিজো। 
অর্থনীতি: গরু, সয়াবিন, ওয়াইন আর লিথিয়াম – কিন্তু ইনফ্লেশন ২০০% ছাড়িয়ে যায়, তাই ক্যাশ নিয়ে যান।
ধর্ম: ৭৬% ক্যাথলিক, কিন্তু ধর্মটা এখানে উৎসবের অছিলা – কার্নিভালে সবাই একসাথে নাচে।

অঞ্চল

[সম্পাদনা]

আর্জেন্টিনাকে পাঁচটা ভ্রমণ-অঞ্চলে ভাগ করলে ঘুরতে সুবিধা হয় – প্রত্যেকটা যেন একটা আলাদা দেশ।

উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা আন্দেজের লাল মরুভূমি আর রঙিন পাহাড়। সালতা থেকে কুইব্রাদা দে উমায়াকা দেখলে মনে হবে মঙ্গল গ্রহে এসেছি। কাফায়াতে প্রাচীন ইনকা ধ্বংসাবশেষ, আর পুরমামার্কায় সাত রঙের পাহাড় – সূর্যাস্তে ছবি তুললে ইনস্টাগ্রাম ফেটে যাবে। এখানে আলটিপ্লানোর উঁচু সমতল, লবণের মরুভূমি আর ক্যাকটাসের জঙ্গল আর রাতে তারার নিচে কুইনোয়া স্যুপ খেয়ে ঘুমানো।

উত্তর-পূর্ব আর্জেন্টিনা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গল আর ইগুয়াসু জলপ্রপাত। মিশনেস প্রদেশে ইয়েরবা মাতে বাগান, আর সান ইগনাসিওতে জেসুইট ধ্বংসাবশেষ ইতিহাস আর প্রকৃতির মিশেল। গরমে ঘাম ঝরবে, কিন্তু জঙ্গলে জাগুয়ারের গর্জন শুনলে সব ভুলে যাবেন। পাম্পাস গাউচোদের সমভূমি। এখানে গরুর খামার (এস্তান্সিয়া) আর অসীম সবুজ সান আন্তোনিও দে আরেকোতে গাউচো ফিয়েস্তায় ঘোড়ায় চড়ে মাংস খান। এখানকার মাটি এত উর্বর যে, বিশ্বের ৮০% সয়াবিন এখান থেকে আসে।

  • প্যাটাগোনিয়া বরফের রাজ্য। এল কালাফাতে থেকে পেরিতো মোরেনো হিমবাহ দেখলে মনে হবে পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। বারিলোচে হ্রদের চকোলেট, উশুয়াইয়া থেকে অ্যান্টার্কটিকা ক্রুজ আর রুটা ৪০ ধরে গাড়ি চালালে বাতাস আপনাকে গান শোনাবে। শীতে -১৫°C, কিন্তু পেঙ্গুইনের সাথে সেলফি তুললে ঠান্ডা ভুলে যাবেন।
  • বুয়েনস আয়ার্স শহরটা আলাদা অঞ্চল। সান তেলমোর কাঁচাবাজার, রেকোলেতার কবরস্থানে এভিতার সমাধি আর রাতে লা বোকার ট্যাঙ্গো। এখানে ইউরোপ আর ল্যাটিন আমেরিকা একসাথে মিশে গেছে।
আর্জেন্টিনার ভূ-প্রকৃতি মানচিত্র – আন্দেজ থেকে পাম্পাস, সবকিছু এক ফ্রেমে

আর্জেন্টিনার শহরগুলো যেন বিভিন্ন চরিত্র কোথাও ইতিহাস, কোথাও ওয়াইন, কোথাও হ্রদ।

  • কর্ডোবা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, ১.৫ মিলিয়ন লোক। ১৬১৩ সালের জেসুইট বিশ্ববিদ্যালয়, আর চে গুয়েভারার বাড়ি-মিউজিয়াম। রাতে গুয়েমেস জেলায় লাইভ মিউজিক আর ফের্নেট-কোলা ছাত্র শহরের এনার্জি আলাদা।
  • মেন্দোজা ওয়াইনের রাজধানী, আন্দেজের পাদদেশে। মালবেকের ১,৫০০ বোদেগা বাইক নিয়ে লুজান দে কুয়ো ঘুরলে দিন শেষে সূর্যাস্তে ওয়াইন গ্লাস হাতে দাঁড়াবেন। আকনকাগুয়া ট্রেকিং-এর বেস ক্যাম্প, আর গরম ঝরনায় স্নান।
  • রোসারিও পারানা নদীর তীরে বন্দর শহর, চে গুয়েভারার জন্মস্থান। নদীর ধারে ফ্ল্যাগ মনুমেন্ট, আর রাতে পিচিনচা জেলায় লাইভ ব্যান্ড। গ্রীষ্মে নদীতে কায়াক, আর স্ট্রিট আর্টে শহরটা রঙিন।
  • বারিলোচে প্যাটাগোনিয়ার সুইস-ধাঁচের শহর, নাহুয়েল হুয়াপি হ্রদের ধারে। চকোলেটের দোকানে লাইন, শীতে সেরো কাতেদ্রাল স্কি রিসর্ট, গ্রীষ্ণে কায়াক। সার্কুইটো চিকো ড্রাইভ করলে লেক ভিউতে ছবি তুলতে ভুলবেন না।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য: সালতা (কলোনিয়াল আর্কিটেকচার), উশুয়াইয়া (বিশ্বের দক্ষিণতম শহর, অ্যান্টার্কটিকা গেটওয়ে), মার দেল প্লাতা (সমুদ্র সৈকত আর সীফুড)।

প্রাকৃতিক আকর্ষণ

[সম্পাদনা]

আর্জেন্টিনার প্রকৃতি যেন একটা জীবন্ত ডকুমেন্টারি এখানে প্রতি কোণায় একটা আশ্চর্য।

ইগুয়াজু জলপ্রপাত

[সম্পাদনা]
ইগুয়াজু জলপ্রপাত – ২৭৫টা ঝর্ণার গর্জন, যেন পৃথিবী ফেটে জল বেরোচ্ছে

বিশ্বের বৃহত্তম জলপ্রপাত সিস্টেম, ২৭৫টা ঝর্ণা মিলে ২.৭ কিমি জুড়ে। ডেভিলস থ্রোটে দাঁড়ালে জলের গর্জনে কানে তালা লাগে, আর রংধনু দেখে মনে হয় স্বর্গ নেমে এসেছে। আর্জেন্টিনা সাইড থেকে ক্লোজ-আপ, ব্রাজিল সাইড থেকে প্যানোরামা দুদিকই দেখুন। গ্রান অ্যাডভেঞ্চার বোট ট্যুরে ভিজে যান, আর জঙ্গলে কোয়াতি (র‍্যাকুনের মতো) আপনার খাবার চুরি করবে। বর্ষায় (নভেম্বর-মার্চ) জলের পরিমাণ বেশি, কিন্তু পিচ্ছিল – রেইনকোট ভুলবেন না। UNESCO সাইট, আর পাশে ইগুয়াজু ন্যাশনাল পার্কে জাগুয়ার ট্র্যাকিং।

আকনকাগুয়া

[সম্পাদনা]
আকনকাগুয়া পশ্চিম গোলার্ধের ছাদ, ৬,৯৬০ মিটার

আন্দেজের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, "সেন্টিনেল অফ স্টোন" নামে পরিচিত। মেন্দোজা থেকে বেস ক্যাম্প প্লাজা দে মুলাস (৪,৩০০ মিটার) পর্যন্ত ৩ দিনের ট্রেক শ্বাসকষ্ট হবে, কিন্তু সূর্যোদয়ে চূড়া দেখলে সব ভুলে যাবেন। এক্সপেডিশন করতে পারলে ২ সপ্তাহ লাগে, পারমিট $৮০০ কিন্তু শুধু হাইক করলেও যথেষ্ট। শীতে তুষারঝড়, গ্রীষ্ণে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) যান।

প্যাটাগোনিয়া

[সম্পাদনা]
পেরিতো মোরেনো হিমবাহ – নীল বরফের দেয়াল, যেন সময় থেমে গেছে

দক্ষিণের বরফের রাজ্য লস গ্লাসিয়ারেস ন্যাশনাল পার্কে পেরিতো মোরেনো হিমবাহ, ২৫০ বর্গকিমি বিস্তৃত, প্রতি কয়েক ঘণ্টায় বরফ খণ্ড পড়ে গর্জন করে। এল চালতেন থেকে ফিটজ রয় ট্রেক (৫ দিন) করলে গ্রানাইট চূড়া আর হিমবাহ লেক দেখবেন। ভালদেস উপদ্বীপে জুন-ডিসেম্বরে সাউর্ন রাইট তিমি লাফায়, আর পুয়ের্তো মাদ্রিন থেকে স্নরকেল করলে পেঙ্গুইনের সাথে সাঁতার। টিয়েরা দেল ফুয়েগোতে বিগল চ্যানেল ক্রুজ সীল আর সমুদ্র সিংহের কলোনি।

ভালদেস উপদ্বীপ

[সম্পাদনা]

আটলান্টিক উপকূলে UNESCO সাইট জুন-ডিসেম্বরে তিমি দেখার বেস্ট জায়গা। পুয়ের্তো পিরামিদেস থেকে বোট ট্যুরে তিমির লেজের ছবি তুলুন, আর সৈকতে এলিফ্যান্ট সীলের সাথে সেলফি। অর্কা (কিলার তিমি) শিকার দেখা যায় মার্চ-এপ্রিলে পেনসুলা ভালদেস সাফারি ট্যুর বুক করুন।

অন্যান্য: সালার দে আতাকামা (লবণ মরুভূমি), তালাম্পায়া ক্যানিয়ন (ডাইনোসর ফসিল), ফিটজ রয় (গ্রানাইট চূড়া)।

সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

আর্জেন্টিনার সংস্কৃতি যেন একটা ট্যাঙ্গো আবেগ, নাটক আর অপ্রত্যাশিত মোড়।

ট্যাঙ্গো – পায়ের নিচে আগুন, চোখে আবেগের ঝড়
  • নাচ: ট্যাঙ্গো ১৮৮০ সালে বুয়েনস আয়ার্সের বন্দরে জন্ম ইতালীয়, স্প্যানিশ আর আফ্রিকান ছন্দের মিশ্রণ। সান তেলমোর মিলংগায় (ট্যাঙ্গো হল) $২০-তে লেসন নিন, আর রাতে লা কাতেদ্রালে অপরিচিতের সাথে নাচুন। আগস্টে বুয়েনস আয়ার্স ট্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ দেখুন।
  • খেলাধুলা: ফুটবল ধর্ম Messi|লিওনেল মেসি আর Maradona|দিয়েগো মারাদোনা দেশের দেবতা। বোকা জুনিয়র্স vs রিভার প্লেট ম্যাচে লা বোম্বোনেরায় গেলে গোলের সাথে আতশবাজি ফুটবে। পোলো বিশ্বের বেস্ট নভেম্বরে পালের্মো ওপেন দেখুন।
  • সাহিত্য: হোর্হে লুইস বোর্হেস-এর "দ্য আলেফ" পড়ে শহর ঘুরলে প্রতি রাস্তা গল্প বলবে। এল আতেনেও বুকশপে বসে কফি খান বোর্হেসের ভূত এখনো ঘুরে বেড়ায়।
  • উৎসব: ফেব্রুয়ারিতে গুয়ালেগুয়াইচু কার্নিভাল রিওের মতো কিন্তু সস্তা। মেন্দোজায় মার্চে ভেন্ডিমিয়া (ওয়াইন হার্ভেস্ট) ওয়াইন কুইন নির্বাচন আর ফ্রি টেস্টিং। অক্টোবরে বুয়েনস আয়ার্সে ট্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল, আর জুনে ইনডিপেন্ডেন্স ডে-তে আসাদো পার্টি।
  • গাউচো ঐতিহ্য: পাম্পাসে এস্তান্সিয়ায় রাত কাটান ঘোড়ায় চড়ে, গিটারের সুরে গাউচো গান শুনে, আর তারার নিচে আসাদো খান।

খাবার

[সম্পাদনা]

আর্জেন্টিনার খাবার মানে মাংস, ওয়াইন আর আবেগ এখানে খাওয়া শুধু পেট ভরানো নয়, একটা সামাজিক রীতি।

আসাদো গরুর মাংসের ধোঁয়া ওঠা গ্রিল, যেন আগুনের উৎসব
  • আসাদো (Asado): ঐতিহ্যবাহী বারবিকিউ রিবস, সসেজ (চোরিজো), সুইটব্রেড (মোল্লেজাস) কয়লায় সেঁকা। ডন জুলিও (বুয়েনস আয়ার্স)তে $৫০-তে ফুল কোর্স চিমিচুরি সস আর মালবেক ওয়াইন ছাড়া অসম্পূর্ণ। রবিবার পারিভার আসাদো পরিবারের সাথে গল্প করতে করতে খান।
  • এমপানাদা (Empanada): মাংস, চিজ বা পালং শাক ভরা পাই সালতার স্পাইসি ভার্সন বেস্ট। স্ট্রিট কর্নারে $১-তে দুটো খেয়ে বাকি দিন চালান।
  • মাতে (Mate): ইয়েরবা মাতে চা, গরম জলে ভরা কাপ (মাতে) থেকে বোম্বিলা (স্ট্র) দিয়ে চুমুক। সামাজিক পানীয় বন্ধুরা এক কাপ শেয়ার করে। তিক্ত, কিন্তু আসক্তি পার্কে বসে স্থানীয়দের সাথে শেয়ার করুন।
  • ডুলসে দে লেচে: কনডেন্সড মিল্কের ক্যারামেল আলফাহোরেস (কুকি স্যান্ডউইচ) বা প্যানকেকে। হাভানা কফি শপে $২-তে খান।
  • ওয়াইন: মেন্দোজার মালবেক বিশ্বের বেস্ট। বোদেগা ট্যুরে $২০-তে ৫ রকম টেস্ট করুন। চকোলেট বারিলোচেতে রাপা নুই চকোলেট ফ্যাক্টরি ভিজিট করুন। প্রোভোলেতা (গ্রিলড চিজ), চোরিপান (সসেজ স্যান্ডউইচ) স্ট্রিট ফুড।

ভেজিটেরিয়ান? কুইনোয়া সালাদ, পাম্পাসে গ্রিলড ভেজিস কিন্তু মাংস ছাড়া আসাদো মিস করবেন।

করণীয়

[সম্পাদনা]

আর্জেন্টিনায় সময় কাটানোর ১০০১ উপায় এখানে কিছু হাইলাইটস যা আপনার ট্রিপ লিজেন্ডারি করে তুলবে।

  • বুয়েনস আয়ার্সে ট্যাঙ্গো শো: লা ভেন্তানাতে ডিনার+শো ($৮০) নৃত্যশিল্পীরা আপনাকে নাচ শেখাবে। তারপর সান তেলমোর রাস্তায় ফ্রি মিলংগা।
  • মেন্দোজায় ওয়াইন টেস্টিং: বাইক ভাড়া করে মাইপু ভ্যালি ঘুরুন ৫টা বোদেগা, ফ্রি টেস্টিং, আর আন্দেজ ব্যাকড্রপ। রাতে স্টেক আর মালবেক।
  • আন্দেজে হাইকিং: আকনকাগুয়া বেস ক্যাম্প (৩ দিন) বা সালতার কুইব্রাদা দে কাফায়াতে (১ দিন) লামা আর কন্ডরের সাথে।
  • প্যাটাগোনিয়ায় হিমবাহ ভ্রমণ: পেরিতো মোরেনোতে আইস ট্রেকিং ($১৫০) ক্রাম্পন পরে নীল বরফে হাঁটুন, হুইস্কি দিয়ে টোস্ট।
  • ভালদেসে তিমি দেখা: জুন-ডিসেম্বরে বোট ট্যুর ($১০০) তিমির লেজের ছবি তুলুন, আর সৈকতে পেঙ্গুইনের সাথে সেলফি।
  • গাউচো এস্তান্সিয়া: পাম্পাসে রাত কাটান ($১২০) ঘোড়ায় চড়া, ফোকলোর শো, আসাদো ডিনার।
  • ইগুয়াজুতে বোট সাফারি: গ্রান অ্যাডভেঞ্চার ($৫০) জলপ্রপাতের নিচে ভিজে যান, আর জঙ্গলে ট্রেক।
  • বারিলোচে চকোলেট ট্যুর: সার্কুইটো চিকো ড্রাইভ, চকোলেট ফ্যাক্টরি, আর কায়াক।
  • উশুয়াইয়া থেকে অ্যান্টার্কটিকা ক্রুজ: ১০ দিনের ট্যুর ($৫,০০০) পেঙ্গুইন কলোনি আর আইসবার্গ।
  • রুটা ৪০ ড্রাইভ: বুয়েনস আয়ার্স থেকে উশুয়াইয়া ৫,০০০ কিমি, ২ সপ্তাহ, ক্যাম্পিং আর তারার নিচে ঘুম।

যাওয়ার উপায়

[সম্পাদনা]
  • ভিসা: বাংলাদেশি পাসপোর্টে ই-ভিসা ($৫০, অনলাইনে আবেদন) বা ট্যুরিস্ট ভিসা (৯০ দিন)। ইউরোপ/আমেরিকান পাসপোর্টে ভিসা-ফ্রি। COVID রুলস চেক করুন।
  • ফ্লাইট: ঢাকা থেকে বুয়েনস আয়ার্স (EZE) দোহা/দুবাই হয়ে ২৪ ঘণ্টা, $১,৫০০। ইন্টারনাল ফ্লাইট AEROLINEAS ARGENTINAS কর্ডোবা $৫০, ইগুয়াজু $৮০।
  • বাস: দূরপাল্লার বাস (কামা সুইট) আরামদায়ক বুয়েনস আয়ার্স থেকে মেন্দোজা ১৪ ঘণ্টা, $৫০, ওয়াইফাই+ডিনার।
  • গাড়ি ভাড়া: আন্তর্জাতিক লাইসেন্স লাগে, প্যাটাগোনিয়ায় 4x4 নিন। পেট্রল $১/লিটার।
  • ট্রেন: ট্রেন আছে কিন্তু ধীর, ট্রেন টু দ্য ক্লাউডস (সালতা) ট্যুরিস্ট ট্রেন, $১৫০।

সেরা সময়: অক্টোবর-এপ্রিল (বসন্ত-গ্রীষ্ম) প্যাটাগোনিয়া খোলা, কিন্তু বুয়েনস আয়ার্স গরম। শীতে (জুন-আগস্ট) স্কি আর কম ভিড়।

  • বুয়েনস আয়ার্স: পালের্মোতে বুটিক হোটেল ($৮০/রাত), সান তেলমোতে হোস্টেল ($১৫ বেড)। Airbnb-এ অ্যাপার্টমেন্ট $৫০।
  • প্যাটাগোনিয়া: বারিলোচে লেক ভিউ ক্যাবিন ($১২০), এল কালাফাতে গ্ল্যাম্পিং ($২০০)।
  • মেন্দোজা: ওয়াইনারি লজ ($১৫০, ফ্রি ওয়াইন)।
  • ইগুয়াজু: জঙ্গল লজ ($১০০, পুল+ব্রেকফাস্ট)।

বুকিং: Booking.com বা Despegar। ক্যাম্পিং প্যাটাগোনিয়ায় ফ্রি, কিন্তু পারমিট লাগে।

সেফটি ও টিপস

[সম্পাদনা]
  • ক্রাইম: বুয়েনস আয়ার্সে পকেটমার পাসপোর্ট হোটেলে রাখুন, উবার নিন। রাতে লা বোকা এড়িয়ে চলুন।
  • স্বাস্থ্য: উচ্চতা অসুস্থতা (আকনকাগুয়া) ডায়মক্স খান। হলুদ জ্বর ভ্যাকসিন ইগুয়াজুর জন্য। মশা প্রতিরোধক।
  • ইনফ্লেশন: ক্যাশ (USD) নিয়ে যান, Western Union-এ এক্সচেঞ্জ করলে ভালো রেট। কার্ডে ২১% ট্যাক্স।
  • পরিবেশ: প্লাস্টিক কমান রিফিলেবল বোতল নিন। ন্যাশনাল পার্কে ট্রেইল ফলো করুন, বন্যপ্রাণীকে খাওয়ান না।
  • ইমার্জেন্সি: 911 (পুলিশ), 107 (অ্যাম্বুলেন্স)। ট্যুরিস্ট পুলিশ বুয়েনস আয়ার্সে 24/7।

আর্জেন্টিনা শুধু একটা দেশ নয়, একটা অনুভূতি যেখানে প্রতি মুহূর্তে আপনি বাঁচতে শিখবেন। ট্যাঙ্গোর ছন্দে পা মিলিয়ে, হিমবাহের নিচে শ্বাস নিয়ে, আর মাতের কাপে বন্ধুত্ব গড়ে এখান থেকে ফিরে এলে আপনার গল্প হবে অসীম। প্যাক করুন, আর ঘুরে আসুন আর্জেন্টিনা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]