বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে

উদাওয়ালাৱে হল একটি জাতীয় উদ্যান, যা শ্রীলঙ্কার সাবারাগামুওয়া এবং উভা প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত। এটি এর বিশাল বন্য হাতির জনসংখ্যার জন্য বিখ্যাত, যা এটিকে সাফারি-শৈলীর ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য করে তুলেছে।

অনুধাবন

[সম্পাদনা]

উদাওয়ালাৱে জাতীয় উদ্যান হলো একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যা  উদাওয়ালাৱে জলাধার নির্মাণের সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রাণীদের সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হলেও, এখানে সহজেই জিপ সাফারি করা যায়, যা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ দেয়।     উদাওয়ালাৱে জাতীয় উদ্যান শ্রীলঙ্কার তৃতীয় সর্বাধিক পরিদর্শিত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।

ভূপ্রকৃতি

[সম্পাদনা]

উদাওয়ালাৱে উদ্যানটি শ্রীলঙ্কার শুষ্ক এবং আর্দ্র অঞ্চলের সীমান্তে অবস্থিত এবং এর আয়তন ৩০৮.২ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। বেশিরভাগ ভূমি সমতল, তবে পার্কের কিছু অংশে পাহাড়ি বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়। পার্কের সর্বোচ্চ স্থান হল উলগালা, যেটিকে "পয়েন্টেড রক" বা তীক্ষ্ণ শিলা নামে ডাকা হয়, যার উচ্চতা ৩৭৩ মিটার। বর্ষা এবং শুকনো মৌসুমে পার্কের প্রাকৃতিক দৃশ্য হলুদ থেকে সবুজ রঙে পরিবর্তিত হয়। পার্কে অনেক ছোট ছোট জলাশয় রয়েছে, যেমন পুকুর এবং কৃত্রিম জলাধার, যা বন্যপ্রাণীকে আকর্ষণ করে। সমতল ভূপ্রকৃতির কারণে এখানে চার চাকার গাড়ির জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা আছে, যা বন্যপ্রাণী খুঁজে বের করতে উদ্যান জুড়ে ঘুরে বেড়ানো সহজ করে তোলে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

উদাওয়ালাৱে জাতীয় উদ্যান ৩০ জুন ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পার্ক ঘোষণার আগে, এই জমি শেনা চাষের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো। উদ্যান প্রতিষ্ঠার ফলে স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমি হারায়, কারণ এই জমি প্রকৃতির জন্য সংরক্ষিত হয়। উদ্যানের চারপাশের এলাকা চাষযোগ্য জমি দ্বারা ঘেরা।

উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ

[সম্পাদনা]

উদ্ভিদজগৎ

উদ্যানটিতে চিরসবুজ বনাঞ্চল এবং দুটি স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। উদ্যানের সাধারণত দেখা যায় এমন উঁচু গাছের মধ্যে রয়েছে ক্লোরোক্সিলন সুইটেনিয়া, বেরিয়া কর্ডিফোলিয়া, ডায়োস্পাইরোস এবেনাম, এডিনা কর্ডিফোলিয়া, ভিটেক্স পিনাটা, শ্লেইকেরা ওলিওসা, এবং ডায়োস্পাইরোস ওভালিফোলিয়া। যদিও এটি একটি বনাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত, উদ্যানের অধিকাংশই তৃণভূমি এবং খোলা সমতলভূমি দিয়ে ঢাকা।

প্রাণীজগৎ

উদাওয়ালাৱে বিশেষভাবে এর হাতির জন্য বিখ্যাত। অনেক হাতি উদ্যানজুড়ে অবাধে ঘুরে বেড়ায়, এছাড়া হরিণ, মহিষ এবং সোনালি শেয়ালও এখানে দেখা যায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর পাশাপাশি ইউরোপীয় রোলার এবং কালো-গলাযুক্ত সারসের মতো বিরল পাখিও এখানে দেখা যায়। সরীসৃপের মধ্যে, মগার কুমির এবং মনিটর টিকটিকি দেখতে পাওয়া যায়। কুমিরগুলো সাধারণত বিকেলে রোদ পোহাতে বের হয়। সাফারি চলাকালীন ফটোগ্রাফির অনেক সুযোগ রয়েছে।

জলবায়ু

[সম্পাদনা]

শুষ্ক মৌসুমি বনাঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫০০ মিমি অতিক্রম করে, এবং গড় তাপমাত্রা ২৪-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।

প্রবেশ করুন

[সম্পাদনা]

বাস ও ট্যাক্সি দ্বারা যাতায়াত

শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন স্থান থেকে উদাওয়ালােৱে যাওয়ার জন্য নিয়মিত বাস চলাচল করে:

কলম্বো থেকে:

  • কলম্বোর বাসটিয়ান মাওয়াথা বাস টার্মিনাল থেকে এমবিলিপিটিয়া পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট সময় লাগে এবং ভাড়া ১৭৫-৩৫০ রুপি।
  • সেখান থেকে  উদাওয়ালােৱে যাওয়ার জন্য একটি বাস ধরুন (স্থানীয়রা আপনাকে বাস চিনিয়ে দেবে)।
  • বিকল্পভাবে, এমবিলিপিটিয়া থেকে ট্যাক্সি নিতে পারেন, যা ১ ঘণ্টা সময় নেবে এবং খরচ পড়বে ৩৫০০-৫৩০০ রুপি।

এলা থেকে:

  • প্রধান সড়কের বাস স্টপ থেকে যেকোনো দক্ষিণমুখী (ওয়েল্লাওয়া যাওয়ার) বাস ধরুন। বাসটি ওয়েল্লাওয়া বা সরাসরি থানামালৱিলায় যাবে (প্রতি ব্যক্তির ভাড়া ১২৩ রুপি)।
  • যদি বাসটি কেবল ওয়েল্লাওয়া পর্যন্ত যায়, তাহলে ওয়েল্লাওয়া বাস স্টেশনে পৌঁছে থানামালৱিলা-গামী অন্য একটি বাস ধরুন।
  • থানামালৱিলায় পৌঁছে, বাস স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তা পার হয়ে ৯৮ নম্বর বাসে উঠুন, যা উদাওয়ালােৱে জাতীয় উদ্যান এবং উদাওয়ালােৱে জংশন উভয় স্থানে থামবে (ভাড়া ১০০ রুপি)।
  • পুরো যাত্রাটি ৩ ঘণ্টারও কম সময়ে শেষ হয় (জানুয়ারি ২০২০ অনুযায়ী) এবং ভাড়া মাত্র ২২০ রুপি, যা ট্যাক্সির তুলনায় অনেক সস্তা (প্রতি ব্যক্তি প্রায় ২০০০ রুপি)।

ট্রেন ও ট্যাক্সি দ্বারা:

  • ফোর্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠুন। যাত্রায় প্রায় ৭ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লাগবে।
  • হাপুটালে স্টেশনে নেমে একটি ট্যাক্সি নিতে হবে। পুরো যাত্রাটি প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নেবে।

প্রবেশ ফি ও পারমিট

বিদেশিদের জন্য প্রবেশ ফি প্রায় ৩০০০-৫০০০ রুপি (জানুয়ারি ২০২০ অনুযায়ী)। ফি হিসাব করা হয় বেশ জটিল পদ্ধতিতে: প্রতি বিদেশি দর্শনার্থীর জন্য $১৫ + সেবা চার্জ $৮ + গাড়ির ফি ২৫০ রুপি + ভ্যাট ৮%। তারপর মোট ফি নির্ধারিত দিনে মার্কিন ডলার থেকে রুপি হিসাবে রূপান্তরিত হয়।

প্রবেশের জন্য কোনো পারমিটের প্রয়োজন নেই, তবে সতর্কতার জন্য পাসপোর্ট সঙ্গে রাখুন। প্রবেশপথের কাছাকাছি থাকা বিক্রেতাদের কাছ থেকে টিপস, স্মারক, টুপি, পানি ইত্যাদি কেনার জন্য কিছু অতিরিক্ত নগদ সঙ্গে রাখুন।

জিপ এবং ড্রাইভার

উদাওয়ালােৱে শহরে গাড়ি ও ড্রাইভার ভাড়া করতে পারেন, অথবা অনলাইনে বা আপনার থাকার জায়গা থেকে এটি ব্যবস্থা করতে পারেন।

বাস থেকে নামার পর, অনেক গাইড আপনার কাছে এসে সাফারি বিক্রির চেষ্টা করবে। এসময় দর কষাকষি করতে হবে এবং আপনি সাধারণত তালিকাভুক্ত মূল্য থেকে কমে পেতে পারেন। তবে ড্রাইভার বা স্পটারের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হতে পারে: যদি তারা সঠিকভাবে প্রাণী খুঁজে না পায় বা তাদের খুব কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে আপনার বা প্রাণীদের অভিজ্ঞতা ভালো নাও হতে পারে।

অনলাইনে বুকিং বা অতিথিশালা থেকে বুকিং করলে আপনি অন্যান্য ভ্রমণকারীদের রিভিউ পড়তে পারবেন, যা বেশি নির্ভরযোগ্য।

অনলাইনে বুকিংকৃত সাফারিগুলোর দাম দুইজনের জন্য গাড়ি, ড্রাইভার ও প্রবেশ ফিসহ আধা-দিনের জন্য প্রায় $১০০ (৬ ঘণ্টা) থেকে শুরু হয়।

অতিথিশালাগুলো ৬ ঘণ্টার সাফারি ইংরেজিভাষী ড্রাইভার, ছয় সিটের গাড়ি এবং পার্কে প্রাতঃরাশসহ প্রায় ৮৫০০ রুপিতে (জানুয়ারি ২০২০) ব্যবস্থা করতে পারে। প্রবেশ ফি আলাদাভাবে প্রদান করতে হবে।

উদ্যানের ভেতরে চলাচল

উদ্যানের ভেতরে চলাচল কেবল গাড়ি দিয়ে করা সম্ভব। আপনি নিজে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন বা অনুমোদিত গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। সাফারির যাত্রা কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং আপনার সঙ্গে গাইড নেওয়ার সুযোগও থাকে। যাত্রার সময় যেকোনো সময় গাড়ি থামাতে পারেন এবং ড্রাইভার বা গাইডের অনুমতিতে গাড়ি থেকে নেমে ঘোরাঘুরি করতে পারেন।

দেখুন

[সম্পাদনা]

উদাওয়ালেৱে জাতীয় উদ্যান হিসেবে, উদাওয়ালেৱে জলাধার ছাড়া তেমন নির্দিষ্ট কোনো দর্শনীয় স্থান নেই।

পাখি দেখা: উদাওয়ালেৱে জাতীয় উদ্যান জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য আপনার সঙ্গে দূরবীন আনতে ভুলবেন না।

প্রাণীবিজ্ঞান: উদ্যানে প্রচুর সংখ্যক প্রাণী রয়েছে, তাই আপনি সহজেই এই কার্যকলাপে জড়িত হতে পারেন।

কেনাকাটা

[সম্পাদনা]

একটি ছোট দোকান প্রবেশদ্বারের কাছে অবস্থিত। এখানে আপনি স্যুভেনির, যেমন কী চেইন, বই এবং স্টেশনারি কিনতে পারেন।

এই যাত্রার জন্য খাবার সঙ্গে নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি একটি প্যাকেটবন্দী লাঞ্চ নিয়ে আসতে পারেন। খাবার শুধুমাত্র বায়োডিগ্রেডেবল উপাদানে (যেমন কাগজ বা নিষ্পত্তিযোগ্য পলিথিন) মোড়ানো অথবা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পাত্রে (লাঞ্চ বক্স, প্লাস্টিকের কন্টেইনার) আনতে পারবেন। (জানুয়ারি ২০২০ সালে, এই নিয়মটি কঠোরভাবে কার্যকর ছিল না)।

পানীয়

[সম্পাদনা]

পানি সঙ্গে নিয়ে আসুন। প্রয়োজনে প্রবেশদ্বারের কাছে বোতলবন্দী পানি কিনতে পারবেন।

রাত্রিযাপন

[সম্পাদনা]

জাতীয় উদ্যানে রাত যাপন করা অনুমোদিত নয়।

উদাওয়ালেৱে শহরে (জলাধারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে) সস্তা থেকে শুরু করে বিলাসবহুল আবাসনের অনেক অপশন রয়েছে, যেখানে সুইমিং পুল এবং কেবানা রয়েছে (জানুয়ারি ২০২০ অনুযায়ী)। এগুলো অনলাইনে বুক করা যেতে পারে অথবা পৌঁছানোর পর স্থানীয় দালালরা আপনার কাছে আসবে যখন আপনি বাস থেকে নামবেন।

উদাওয়ালেৱে রাত কাটানো সবচেয়ে ভালো, যাতে আপনি পরের সকালে দ্রুত সাফারিতে যেতে পারেন (সাধারণত সকাল ৫:৩০ টার দিকে বের হয়)।

তবে উদাওয়ালেৱে খুব ভোরে পৌঁছানোর প্রয়োজন নেই, কারণ এই অঞ্চলে আর কোনো আকর্ষণীয় স্থান নেই।

নিরাপদ থাকুন

[সম্পাদনা]

সাফারি টুরে যাওয়ার সময় নিরাপদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। হাতির মতো প্রাণীরা নিরীহ দেখালেও, তারা আক্রমণ করতে পারে। সাফারি টুরে যাওয়ার একটি স্পষ্ট নিয়ম হলো সব সময় আপনার গাড়িতে থাকতে হবে। যদি আপনি গাড়ি থেকে নেমে পড়েন, তাহলে আপনি বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। এই কারণেই একজন অভিজ্ঞ গাইডের সাথে ভ্রমণ করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীদের খাবার দেওয়া উচিত নয়।

পরবর্তী যান

[সম্পাদনা]