উসমানীয় সাম্রাজ্য বা তুর্কি সাম্রাজ্য বিশ্বের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যগুলোর একটি। এই সাম্রাজ্য ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকাসহ বলকান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বেশকিছু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই সাম্রাজ্যের পতন হয়।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]তুর্কীরা তাদের নিজেদের উৎস হিসেবে মধ্য এশিয়াকে চিহ্নিত করে। তাদের বর্তমান জন্মভূমি অ্যানাটোলিয়া যা প্রাচীন গ্রিস এবং বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের মতো ইতিহাসের অনেক সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করে। উসমানীয় সাম্রাজ্যই অ্যানাটোলিয়া গড়ে ওঠা প্রথম তুর্কী সাম্রাজ্য নয় কিন্তু এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিল। সেলিম দ্য গ্রিম যিনি হেজাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তিনি একে মুসলিম খিলাফত ঘোষণা করেন। উসমানীয় সাম্রাজ্য অ্যানাটোলিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ১২৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এর স্থান এবং বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের সীমানার সুবিধা নিয়ে এটি খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। পরে ধীরে ধীরে এটি অন্যান্য তুর্কী রাজ্যে বিস্তার লাভ করে। ১৪৫৩ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্য বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানীতে ছড়িয়ে পরে এবং সেখানকার গির্জাসমূহকে মসজিদে স্থানান্তর করে। এটি বলকানে ইসলাম প্রসারে তুর্কীদের বিরাট সাফল্য ছিল।
দর্শনীয় বস্তু
[সম্পাদনা]উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্থাপত্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গম্বুজ অন্যতম। উসমানীয়দের স্থানীয় বিভিন্ন গম্বুজ প্রধানত কাঠ, বিভিন্ন রঙিন দ্রব্য ইত্যাদি দিয়ে নির্মিত। ঐতিয্যবাহী উসমানীয় দৃশ্যমান কলার মধ্য অন্যতম হলো কাগজের কাজ যা প্রধানত বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র কর তৈরি করা হয়। ক্যালিগ্রাফিও উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্যতম শিল্পকলা। ইস্তানবুলের ইসলামিক আর্টস মিউজিয়ামে উসমানীয় সাম্রাজ্যের শিল্পকলার সংগ্রহ রয়েছে। সেখানে সংগৃহীত নানা বস্তু দেখা যাবে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাহিত্যে ও শিল্পে নাটকের অবস্থান বেশ ভালো যা প্রধানত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার শুরুর সময় সাহিত্যে প্রবেশ করে।
খাদ্য
[সম্পাদনা]উসমানীয় সাম্রাজ্যে যেসব খাবার প্রচলিত ছিল তা বর্তমানেও তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত রয়েছে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের রন্ধনশৈলী বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের প্রকারভেদ ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত।
বেগুন, টমেটো, আলু, গোল মরিচ ইত্যাদি সবজি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ছিল উসমানীয় যুগে যা এখনও অতিতে উসমানীয় সাম্রাজ্যে থাকা অঞ্চলসমূহে প্রচলিত রয়েছে। দোলমা নামে একধরনে খাবার উসমানীয়রা খেত যা রান্না করতে উপকরণ হিসেবে প্রধানত গোলমরিচ ব্যবহৃত হতো। এটি ছাড়াও ভাতও খেত তারা। অন্যান্য নানা প্রজাতির সবজি এবং খাবারও খেত উসমানীয় সাম্রাজ্যের লোকেরা।
উসমানীয়রা স্যুপ খেতে খুপ পছন্দ করতো। উসমানীয় যুগে স্যুপ কোরবা নামে পরিচিত ছিল এবং এখনও রাশিয়াসহ কিছু দেশে কোরবা নাম পরিচিত।
মাংসের তৈরি খাবার ইয়াহি, বিভিন্ন সবজি, মরিচ ইত্যাদি সেসময়ের ধর্মীয় খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যা মাঝে মাঝে প্রধান খাবার হিসেবেও পরিবেশন হতো। বুরেক নামেও একধরনের খাবার খেত উসমানীয়রা যা প্রধানত মাংস, আলু, মাশরুম ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হতো।
পানীয়
[সম্পাদনা]কফি উসমানীয় সাম্রাজ্যের বহুল প্রচলিত পানীয়সমূহের মধ্যে অন্যতম। সাম্রাজ্যের শুরুর দিকে ইয়েমেন থেকে কফি আমদানি করতো উসমানীয়রা। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা নিজেরাই কফি উৎপাদন শুরু করে এবং পুরো সাম্রাজ্যের অতি দ্রুত এর বিস্তার লাভ করে।
ইসলাম ধর্মানুসারে মদ্যপান অবৈধ হওয়ায় মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোতে এটি কম পাওয়া গেলেও যে সব অঞ্চলে খ্রিস্টানদের প্রাধান্য ছিল সেখানে মদের সরবরাহ ছিল প্রচুর।
ফুল এবং ফলের রস দিয়ে তৈরি একধরনের বিশেষ পানীয় বিশেষভাবে প্রশংসিত ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যে। জন্মদিন, বিয়ে ইত্যাদি আনন্দানুষ্ঠানে এই পানীয়ের জনপ্রিয়তা ছিল অনেক।
কথাবার্তা
[সম্পাদনা]{{#মূল্যায়ন:প্রসঙ্গ|নির্দেশিকা}}