- কলাম্বিয়া, যা দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি ছাড়া আরও অনেক স্থানকেও বোঝাতে পারে-এর সাথে বিভ্রান্ত হবেন না।
কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি দেশ। এর আয়তন ফ্রান্সের দ্বিগুণেরও বেশি। দেশটির রয়েছে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরের দীর্ঘ উপকূলরেখা। পাশাপাশি উঁচু পর্বতশ্রেণী ও অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ আমাজন অরণ্যও রয়েছে। এখানকার জনগোষ্ঠী ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্যে ভরপুর।
যে ধরনের জলবায়ুই আপনি চান তা এখানে খুঁজে পাবেন। বোগোতার হালকা শীতল আবহাওয়া যদি ঠাণ্ডা মনে হয় তবে পাহাড়ি পথে এক ঘণ্টার গাড়ি যাত্রায় নেমে গিয়ে ভাড়া করা 'আসিয়েন্দা'র পুলের ধারে রোদ পোহাতে পারেন। আবার অভিযাত্রী মন চাইলে আমাজনের গভীর অরণ্য থেকে শুরু করে বরফে ঢাকা আগ্নেয়গিরি শুষ্ক মরুভূমি দিগন্তবিস্তৃত সমভূমি সবুজ উপত্যকা কফি বাগান পাহাড়ি হ্রদ কিংবা নির্জন সমুদ্রসৈকত আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
সংস্কৃতির বৈচিত্র্যও অনন্য। বোগোতা পরীক্ষামূলক থিয়েটার ইন্ডি সঙ্গীত আর অসংখ্য বইয়ের দোকানের জন্য খ্যাত। আমাজনের মালোকা বা আদিবাসী কুঁড়েঘরে ভিন্নতর অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আর যদি সঙ্গীতে ডুবে যেতে চান তবে সালসা ও কুম্বিয়ার সুর আপনাকে নিয়ে যাবে প্রাণবন্ত নৃত্যজগতে। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বারানকিয়ার বর্ণাঢ্য কার্নিভাল।
ইতিহাসপ্রেমীদের জন্যও কলম্বিয়া আকর্ষণীয়। বোগোতার সরু পথ ধরে হাঁটলেই দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন রাজধানীর ছাপ মিলবে। ভিয়া দে লেইভার ঔপনিবেশিক স্থাপনা তাইরোনা জনগোষ্ঠীর হারানো শহর পর্যন্ত ট্রেক কিংবা কার্তাহেনার প্রাচীরঘেরা পুরনো শহর আপনাকে ঔপনিবেশিক আমলের স্মৃতির ভেতর নিয়ে যাবে।
রাত্রিজীবনের জন্য উষ্ণ কালি শহর আজ সালসার বিশ্ব রাজধানী। এখানে সারারাত উৎসবের আবহে সঙ্গীত বাজতেই থাকে। অন্যদিকে মেদেলিনের এল পোব্লাডো এলাকায় আছে তরুণদের আড্ডার আধুনিক পরিবেশ।
খাবারের বৈচিত্র্যও উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় ঘরোয়া রান্না সুস্বাদু এবং সুলভ। বড় শহরগুলোতে আবার বিশ্বমানের আধুনিক রন্ধনশিল্প ও আন্তর্জাতিক খাবারের সমাহার উপভোগ করা যায়।
বিশ্রাম চাইলে কলম্বিয়ার ক্যারিবিয়ান উপকূল ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের মনোমুগ্ধকর সমুদ্রসৈকত আপনাকে স্বাগত জানাবে। আরও শান্ত ও নির্জন পরিবেশ চাইলে ক্যারিবিয়ানের অপরূপ দ্বীপ প্রোভিডেন্সিয়াতে যেতে পারেন।
দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে রাজনৈতিক সহিংসতা অনেকটাই কমে এসেছে। সারা বিশ্বের অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীরা ইতিমধ্যেই এখানে আসছেন। আপনিও দেরি না করে কলম্বিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে আসুন।
অঞ্চলসমূহ
[সম্পাদনা]
| আন্দিনো দুর্গম আন্দিজ পর্বতমালা ও উচ্চ মালভূমি, যেখানে কলম্বিয়ার দুটি বৃহত্তম শহর বোগোতা ও মেদেলিন অবস্থিত। এখানে রয়েছে মনোরম জাতীয় উদ্যান এবং বিস্তীর্ণ কফি বাগান। |
| কোস্তা নর্তে প্রাণবন্ত ক্যারিবিয়ান উপকূলীয় অঞ্চল। এখানে ঐতিহাসিক ও আধুনিক শহর পাশাপাশি রয়েছে, আর জঙ্গল ও মরুভূমিতে ডাইভিং, ট্রেকিং ও ঘুরে দেখার সুযোগ মেলে। |
| অরিনোকিয়া পূর্বের সীমাহীন সমভূমি। এখানে আছে অনন্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাভানা, গ্যালারি বন আর জলাভূমি। পর্যটকের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এলাকা এখনো শান্ত ও নিরিবিলি। |
| পাসিফিকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের চোকো অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন, সমুদ্রজীবনের বৈচিত্র্য, দেশের অন্যতম উৎসবমুখর শহর আর ধর্মীয় ঐতিহ্য মিলিয়ে গড়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। |
| আমাজনিয়া অপূর্ব, বিশাল এবং প্রত্যন্ত আমাজন অরণ্য। |
| কলম্বীয় দ্বীপপুঞ্জ মনোরম গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ যেখানে ডাইভিংয়ের অনন্য সুযোগ রয়েছে। |
শহরসমূহ
[সম্পাদনা]1 বোগোতা — রাজধানী, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত আধুনিক বিশ্বনগরী। প্রায় আশি লক্ষ মানুষ আন্দিজ পর্বতমালা জুড়ে এখানে বসবাস করে। চমৎকার জাদুঘর, বিশ্বমানের রন্ধনশিল্প এবং বড় শহরের সব সুবিধাই এখানে রয়েছে। শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য বোগোতাকে “দক্ষিণ আমেরিকার এথেন্স” বলা হয়।
2 বারানকুইলা — সোনার বন্দর নামে পরিচিত দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। বছরের অধিকাংশ সময় শান্ত থাকলেও এর কার্নিভাল রিও ডি জেনিরোর পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এটি এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা ও প্রাণবন্ত উৎসব।
3 কালি — কলম্বিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর, যা লাতিন আমেরিকার সালসার রাজধানী হিসেবে খ্যাত।
4 কার্টাগেনা অব ইন্ডিয়াস — বীরত্বের শহর ও বলিভার বিভাগের রাজধানী। ঔপনিবেশিক স্থাপত্য আর আকাশচুম্বী ভবন পাশাপাশি দেখা যায়। উৎসব, ইতিহাস, রেস্তোরাঁ ও হোটেল মিলিয়ে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
5 মানিজেলস — কফি অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে “লোস নেভাদোস” জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ ও কফি বাগান পরিদর্শন সহজ।
6 মেদেয়িন — চিরবসন্তের শহর এবং আন্তিওকিয়া বিভাগের রাজধানী। এটি দেশের প্রধান বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র, যেখানে তৈরি পোশাক সারা বিশ্বে রপ্তানি হয়। বিখ্যাত শিল্পী ফার্নান্দো বোতেরোর জন্মস্থানও এটি, আর তাঁর বহু কাজ এখানে সংরক্ষিত আছে।
7 পেরেইরা — রিসারাল্ডা বিভাগের রাজধানী ও কফি অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর। আধুনিক বাণিজ্য ও পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে আছে “নগ্ন বলিভার” স্মৃতিস্তম্ভ এবং মাতেকানিয়া চিড়িয়াখানা। কাছেই সান্তা রোসা উষ্ণ প্রস্রবণ ও “লোস নেভাদোস” জাতীয় উদ্যান।
8 পোপায়ান — শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্যের শহর, যা দেশের ধর্মীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্টার উৎসব (সেভিল, স্পেনের পর) এখানে অনুষ্ঠিত হয়। সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রপতি দেওয়া শহর হিসেবেও এটি খ্যাত। চারপাশে পুরাসে জাতীয় উদ্যান আর কাছেই হুইলার সান আগুস্তিন ও তিয়েরা ডেন্ত্রোর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।
9 সানতা মারতা — আশেপাশের এলাকায় অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের জনপ্রিয় কেন্দ্র। এখানে একদিন সুন্দর সৈকতের স্বাদ নিতে পারেন, আর পরের দিনই হাঁটতে পারেন দেশের সর্বোচ্চ তুষারাবৃত পর্বত সিয়েরা নেভাদা দে সান্তা মার্তার পাদদেশে।
অন্যান্য গন্তব্য
[সম্পাদনা]10 আমাকায়াকু জাতীয় উদ্যান — আমাজনের গভীর রেইনফরেস্টে অবস্থিত বিস্তীর্ণ জাতীয় উদ্যান। নৌকায় করে ভ্রমণ করা যায় এই উদ্যান, যেখানে আছে বানরে ভরা দ্বীপ ও গোলাপি ডলফিনের ঝাঁক।
11 জিপাকিরা — একটি পুরনো লবণ খনির গভীরে গড়ে ওঠা বিশাল গির্জা। চমৎকার ভাস্কর্যশোভিত পথ ধরে প্রবেশ করলে দেখা যায় গুহাসদৃশ উপাসনালয়, আর বেদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল আলোকিত এক ক্রস।
12 সিউদাদ পেরদিদা — সান্তা মার্তার নিকটবর্তী জঙ্গলে অবস্থিত প্রাক-কলম্বীয় নগরী। অষ্টম থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে তাইরোনা আদিবাসীরা এটি নির্মাণ করে। আজ শুধু জঙ্গলে ঢাকা পাথরের গোলাকার সোপানগুলোই অবশিষ্ট রয়েছে।
13 রোজারিও দ্বীপপুঞ্জ — কার্তাহেনা থেকে অল্প সময়ের নৌযাত্রায় পৌঁছানো যায় এই মনোরম দ্বীপপুঞ্জে।
14 ইসলা গোরগোনা — একসময়কার কারাগার দ্বীপটি আজ একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগার। বানর, সাপ, তিমি ও সামুদ্রিক কচ্ছপসহ নানা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। ডাইভিংয়ের জন্য এটি অসাধারণ স্থান।
15 লোস নেভাদোস জাতীয় উদ্যান — কলম্বিয়ার উচ্চভূমিতে অবস্থিত আগ্নেয়গিরি উদ্যান, যা চমৎকার ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা দেয়।
16 প্রোভিডেন্সিয়া দ্বীপ — জ্যামাইকার মাঝপথে অবস্থিত মনোরম ক্যারিবিয়ান দ্বীপ। পশ্চিম গোলার্ধের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যারিয়ার রিফসহ এই দ্বীপকে ইউনেস্কো বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা করেছে।
17 সান আগুস্তিন এবং তিয়েরাদেন্ত্রো — দক্ষিণ-পশ্চিম কলম্বিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।
18 তাইরোনা জাতীয় উদ্যান — দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে সুন্দর উপকূলগুলোর একটি।
অবলোকন
[সম্পাদনা]কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ যার উপকূলরেখা প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগর উভয় দিকেই বিস্তৃত। জীববৈচিত্র্যে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সমৃদ্ধ দেশ। পানামার ঠিক দক্ষিণে হওয়ায় কলম্বিয়া মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগস্থল। উত্তরে পানামা, পূর্বে ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ-পূর্বে ব্রাজিল, দক্ষিণ-পশ্চিমে ইকুয়েডর ও পেরু দ্বারা দেশটি বেষ্টিত। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে, তার ইতালীয় নাম “ক্রিস্তোফোরো কলোম্বো” থেকে কলম্বিয়ার নামকরণ করা হয়েছে। যদিও তিনি এই ভূখণ্ডে আসেননি, চতুর্থ অভিযানে পানামা সফর করেছিলেন, যা ১৯০৩ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কলম্বিয়ায় ভ্রমণ নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ও ১৯° সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রার শহর বোগোতা থেকে মাত্র এক-দুই ঘণ্টার যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যে। রয়েছে ঐতিহাসিক নগর ও প্রাণবন্ত আধুনিক শহর, অসীম সমভূমি, আন্দিজের দুর্গম ভূখণ্ড, গুয়াহিরা উপদ্বীপের মরুভূমি, সমুদ্রসৈকত, আমাজন ও চোকো অঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য, তুষারাচ্ছন্ন শৃঙ্গ ও আগ্নেয়গিরি, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, ম্যাগডালেনা নদী উপত্যকা ও এর উষ্ণ আবহাওয়া। আছে রঙিন প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে ভরা দ্বীপপুঞ্জ।
আর ব্যক্তিগত আসিয়েন্দা ভাড়া করে নীরবতা ও আরামের মধ্যেই এই সব উপভোগ করা যায়। প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও খাবারের বৈচিত্র্য মিলে কলম্বিয়া এক অনন্য গন্তব্য। নিরক্ষীয় অঞ্চলে হলেও এখানকার ভূমিরূপ ও জলসম্ভারের বৈচিত্র্য দেশটিকে বিশেষ করে তুলেছে।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ায় প্রায় সব ধরনের জলবায়ুই পাওয়া যায়। নিরক্ষীয় দেশ হলেও উচ্চতার তারতম্যের কারণে আবহাওয়ায় রয়েছে অসাধারণ বৈচিত্র্য। উপকূল, পূর্ব সমভূমি ও আমাজন অঞ্চল গ্রীষ্মমণ্ডলীয়; উচ্চভূমিতে থাকে ঠাণ্ডা ও খরার প্রভাব। নির্দিষ্ট ঋতুর বদলে এখানে বর্ষাকাল ও শুকনো মৌসুম পালাক্রমে আসে। তবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বর্ষাকালের সময় আলাদা।
ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে তাই বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিতে হয়। বোগোতা বা বোয়াকার উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নামতে পারে, তাই কোট প্রয়োজন। কিছু পর্বত সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে। অন্যদিকে কার্তাহেনা, বারানকিয়া ও সান্তা মার্তার মতো ক্যারিবিয়ান উপকূলের শহরগুলো গরম ও আর্দ্র। আবার মেদেলিন, মানিজালেস ও কফি ত্রিভুজ অঞ্চলের আন্দিজ শহরগুলো সারা বছর নাতিশীতোষ্ণ ও আরামদায়ক আবহাওয়ায় ভরা।
ভূখণ্ড
[সম্পাদনা]সমতল উপকূলীয় নিম্নভূমি, কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, উঁচু আন্দিজ পর্বতমালা, পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ সমভূমি, ঘন আমাজন অরণ্য এবং উপকূলীয় তটরেখা ও দ্বীপপুঞ্জ মিলে কলম্বিয়ার ভূপ্রকৃতি গঠিত।
প্রাকৃতিক বিপদ: উচ্চভূমি অঞ্চলগুলোতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ঝুঁকি রয়েছে এবং মাঝে মাঝে ভূমিকম্পও হয়। ১৯৮৫ সালে আর্মেরো শহরে এক ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে—নেভাদো দেল রুইজ আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্ট লাহার বা কাদাপ্রবাহে প্রায় ২৫,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়।
সর্বোচ্চ বিন্দু: সিয়েরা নেভাদা দে সান্তা মার্তার পিকো ক্রিস্তোবাল কোলনের উচ্চতা ৫,৭৭৫ মিটার (১৮,৯৫০ ফুট)। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ উপকূলীয় পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত। পাশের পিকো সিমোন বলিভারের উচ্চতাও একই।
উপকূলীয় অঞ্চল: ক্যারিবিয়ান সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের উভয় দিকেই উপকূলরেখা থাকায় এখানে আছে বালুকাময় সৈকত (যেমন সান্তা মার্তায়) এবং পাথুরে তটরেখা। এছাড়াও ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বীপ রয়েছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]মুইসকা, তাইরোনা ও কিমবায়ার মতো বহু আদিবাসী সংস্কৃতি প্রাচীন কলম্বিয়ায় বিকশিত হয়েছিল। কেউ কেউ (যেমন ক্যারিবরা) ছিল যোদ্ধাপ্রবণ, আবার অনেকে শান্তিপূর্ণ ছিল। ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা আমেরিকায় পৌঁছালে, বর্তমানে কলম্বিয়া নামে পরিচিত অঞ্চলটি কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় স্প্যানিশদের দ্বারা দখল হয়। এ বিজয় ও উপনিবেশ স্থাপনের ফলে সমাজের কাঠামো আমূল বদলে যায়, আদিবাসী জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে।
স্প্যানিশরা এখানে ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী ও আফ্রিকান দাস নিয়ে আসে। জনসংখ্যার বড় অংশ ধীরে ধীরে মিশ্র বংশোদ্ভূত হয়। দাস আমদানির জন্য স্পেন ‘আসিয়েন্তো’ পদ্ধতি চালু করে, যাতে নানা জাতির ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিয়ে দাস পরিবহন করা হতো।
১৮১৯ সালে কলম্বিয়া “গ্রান কলম্বিয়া” ফেডারেশনের অংশ হিসেবে স্পেন থেকে স্বাধীনতা পায়। তবে ১৮৩০ সালের মধ্যে ফেডারেশন ভেঙে যায়। এটি ছিল সিমোন বলিভার মুক্ত করা পাঁচ দেশের একটি (অন্যগুলো ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, পেরু ও বলিভিয়া)। নেপোলিয়নিক যুদ্ধকালে স্পেন দুর্বল হয়ে পড়ায় লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন গতি পায়। পরবর্তীতে কলম্বিয়া ও পানামা মিলে নিউ গ্রানাডা প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে গ্রানাডাইন কনফেডারেশন (১৮৫৮), কলম্বিয়ার যুক্তরাষ্ট্র (১৮৬৩) এবং অবশেষে ১৮৮৬ সালে কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই ১৯০৩ সালে পানামা আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যাতে তারা খাল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে।
কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম সাংবিধানিক সরকার। ১৮৫১ সালে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়। স্বাধীনতার পর দেশটি নানা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সংঘাত ও স্নায়ুযুদ্ধকালীন বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাবে ১৯৬৪ সালে ফার্ক ও ইএলএন গেরিলা সংগঠনগুলো উদ্ভূত হয়, যাদের লক্ষ্য ছিল সরকার উৎখাত। কয়েক দশক ধরে কমিউনিস্ট গেরিলা, সরকারি বাহিনী, ডানপন্থী আধা-সামরিক দল ও মাদক কার্টেলের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলতে থাকে। ২০০৫ সালের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এউসি (ডানপন্থী আধা-সামরিক বাহিনী) ভেঙে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে সরকার ও ফার্কের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়, যা ৫০ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে।
দেশটি এখন দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির পথে এগোচ্ছে। তবুও সংঘাতের অবসান, সম্পদের বৈষম্য কমানো ও জাতি পুনর্গঠন আজও বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে, রাষ্ট্রপতি হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস শান্তিচুক্তির প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।
পর্যটকদের জন্য তথ্য
[সম্পাদনা]ভাষা
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ার সরকারি ভাষা হলো স্প্যানিশ। গ্রামীণ এলাকার কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী আজও তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে, যদিও প্রায় সবাই স্প্যানিশও জানে এবং অধিকাংশই দ্বিভাষিক।
আপনি যদি সম্প্রতি স্প্যানিশ শিখে থাকেন, তবে জেনে স্বস্তি পাবেন যে বোগোতার স্প্যানিশ উচ্চারণ স্পষ্ট ও সহজবোধ্য। তবে দেশজুড়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। কার্তাহেনা থেকে বোগোতা ও কালি পর্যন্ত কথাবলার ধরন আলাদা। উপকূলীয় অঞ্চলের স্প্যানিশ দ্রুত বলা হয়, আর মেদেলিনের স্প্যানিশের রয়েছে আলাদা ভঙ্গি। মেদেলিন ও কালির মতো শহরে স্প্যানিশের ভোসেও রূপ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, পরিচিত সম্বোধনে tú-এর পরিবর্তে vos বলা হয়। সবাই tú বুঝতে পারে, তবে vos-কে আরও আন্তরিক সম্বোধন হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্যারিবিয়ান উপকূলের স্প্যানিশ কিউবা, পুয়ের্তো রিকো ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের উপভাষার মতো শোনায়।
অনেক কলম্বীয় অন্তত কিছু প্রাথমিক ইংরেজি বাক্য জানে, কারণ স্কুলে ইংরেজি পড়ানো হয় এবং হলিউড চলচ্চিত্র সাধারণত স্প্যানিশ সাবটাইটেলসহ ইংরেজিতেই প্রদর্শিত হয়। তবে বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে ইংরেজি চলবে না, তাই ভ্রমণকারীদের জন্য স্প্যানিশের মৌলিক বিষয় শেখা জরুরি।
অধিক সচ্ছল পরিবারের মানুষদের ইংরেজি শেখার সম্ভাবনা বেশি, আর পেশাজীবী, নির্বাহী বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মোটামুটি ভালো ইংরেজি বলতে পারেন। সান আন্দ্রেস ও প্রোভিডেন্সিয়া দ্বীপপুঞ্জে জামাইকান অভিবাসীদের প্রভাবে জামাইকান প্যাটোয়ার মতো একটি ইংরেজিভিত্তিক ক্রেওল ভাষাও প্রচলিত।
প্রবেশে উপায়
[সম্পাদনা]| সতর্কীকরণ: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং কুকুতা শহরসহ সীমান্ত এলাকায় সহিংসতার কারণে ভেনেজুয়েলার সাথে স্থলসীমান্ত আপাতত বন্ধ রয়েছে। কলম্বিয়া–ভেনেজুয়েলা সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। | |
সরকারি ভ্রমণ পরামর্শ
| |
| (সর্বশেষ হালনাগাদ: আগস্ট ২০২৫) |
ভিসা
[সম্পাদনা]
নিচের দেশগুলোর পাসপোর্টধারীদের পর্যটনের উদ্দেশ্যে কলম্বিয়ায় প্রবেশের জন্য ভিসা প্রয়োজন নেই, যদি অবস্থান ৯০ দিনের বেশি না হয় (যদি অন্যথা উল্লেখ না থাকে): অ্যান্ডোরা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বার্বাডোস, বেলজিয়াম, বেলিজ, ভুটান, বলিভিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ডোমিনিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, এস্তোনিয়া, ফিজি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানি, গ্রীস, গ্রেনাডা, গুয়াতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, হংকং (১৮০ দিন), হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, জামাইকা, জাপান, কাজাখস্তান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, লাটভিয়া, লিশটেনস্টাইন, লিথুয়ানিয়া, লাক্সেমবার্গ, মাল্টা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো, মাইক্রোনেশিয়া, মোনাকো, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পালাউ, পানামা, পাপুয়া নিউগিনি, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জ, সামোয়া, সান মারিনো, সার্বিয়া, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, স্পেন, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, ভ্যাটিকান সিটি এবং ভেনেজুয়েলা।
নিচের দেশগুলোর নাগরিকরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই প্রবেশ করতে পারেন: আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, ইকুয়েডর, প্যারাগুয়ে, পেরু, উরুগুয়ে এবং ভেনেজুয়েলা।
অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সাধারণত পাসপোর্টে ৩০ থেকে ৯০ দিনের অনুমোদন দেয়। বিমানবন্দরে কর্মকর্তারা আপনার পরিকল্পিত অবস্থান জিজ্ঞাসা করে সেই অনুযায়ী তারিখ লিখে দেন। চাইলে দেশটির যেকোনো অভিবাসন দপ্তরে গিয়ে এটি সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
অবস্থানের মেয়াদ বাড়ানো
[সম্পাদনা]কিছু প্রধান শহরের অভিবাসন বিষয়ক দপ্তরে অবস্থানের মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানোর জন্য আবেদন করা যায়, যার খরচ প্রায় ৪০ মার্কিন ডলার। এর জন্য লাগবে পাসপোর্টের মূল পাতার দুটি কপি, প্রবেশ স্ট্যাম্পসহ পাতার দুটি কপি, দেশত্যাগের টিকিটের দুটি কপি এবং চারটি ছবি। প্রক্রিয়াটিতে কিছুটা সময় লাগে এবং আঙুলের ছাপও দিতে হয়। মনে রাখবেন, পর্যটক হিসেবে এক বছরে সর্বোচ্চ ছয় মাসের বেশি থাকা যায় না।
বিমানে
[সম্পাদনা]বোগোতা, মেদেলিন, কালি, বারানকিয়া, বুকারামাঙ্গা, কার্তাহেনা, পেরেইরা এবং সান আন্দ্রেস দ্বীপপুঞ্জসহ প্রধান শহরগুলোতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রয়েছে। ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, পানামা ও ব্রাজিল সীমান্তের কাছাকাছি ছোট শহরগুলোতেও ফ্লাইট চলে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, কোস্টারিকা, পানামা, স্পেন, ফ্রান্স এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন সরাসরি ফ্লাইট আসে। মনে রাখবেন, কলম্বিয়ার বিমান সংস্থাগুলোতে ওঠার আগে আপনাকে পরবর্তী ভ্রমণের প্রমাণ (অন্য দেশে যাওয়ার টিকিট) দেখাতে হতে পারে।
মেদেলিন হলো কলম্বিয়ার একমাত্র শহর যেখানে দুটি বিমানবন্দর রয়েছে। আন্তর্জাতিক ও দীর্ঘপাল্লার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট নামে হোসে মারিয়া কর্দোভা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (MDE আইএটিএ), আর আঞ্চলিক ও কিছু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট নামে ওলায়া হেরেরা বিমানবন্দরে (EOH আইএটিএ)।
বোগোতায় রয়েছে দুটি টার্মিনাল—পুয়েন্তে আয়েরিও ও এল ডোরাডো। বিমানবন্দরের বাইরে কিছু লোক আপনার লাগেজ ট্যাক্সিতে তুলতে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়ে পরে পারিশ্রমিক চাইতে পারে। তাই আপনি যে ট্যাক্সি চালককে ভাড়া করছেন তাঁর বাইরে অন্য কারও সাহায্যের প্রস্তাব ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান করাই ভালো।
বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রিত, সুলভ ও নিরাপদ। বোগোতা বিমানবন্দর থেকে শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় ট্যাক্সিতে যেতে প্রায় ২০ মিনিট লাগে।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]ভেনেজুয়েলা থেকে সান ক্রিস্তোবাল–কুকুতা অথবা মারাকাইবো–মাইকাও পথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়।
ইকুয়েডর থেকে তুলকান–ইপিয়ালেস (রুমিচাকা) পথ ব্যবহার করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ: প্রতিবেশী তিন দেশ—পানামা, ব্রাজিল ও পেরু থেকে কোনো বড় সড়ক নেই। পানামা থেকে একেবারেই সড়ক নেই। কলম্বিয়া ও পেরু বা ব্রাজিলের মধ্যে কিছু ছোট রাস্তা থাকলেও সেগুলো বড় শহরে পৌঁছায় না।

নৌপথে
[সম্পাদনা]পানামা থেকে পালতোলা নৌকায় কলম্বিয়ায় প্রবেশ করা যায়। এগুলো পানামার পোর্তোবেলো থেকে রওনা দেয় এবং সাধারণত ৫ রাতের যাত্রায় কার্তাহেনায় পৌঁছায়। এর মধ্যে তিন দিন কাটানো হয় সান ব্লাস দ্বীপপুঞ্জে। খরচ ৫৫০ থেকে ৭০০ মার্কিন ডলার হতে পারে। নির্ভরযোগ্য নৌকাগুলো আগে থেকেই অনলাইনে বুক হয়ে যায়।
পানামা থেকে পুয়ের্তো ওবালদিয়া–কাপুরগানা রুট দিয়েও প্রবেশ সম্ভব। কাপুরগানা থেকে আরেকটি নৌকা নিয়ে যেতে হয় তুরবো শহরে, সেখান থেকে বাসযোগে মেদেলিন বা মোন্তেরিয়ায় পৌঁছানো যায়।
ব্রাজিল থেকে এলে আমাজন নদীপথে মানাউস থেকে তাবাতিঙ্গা/লেটিসিয়া পর্যন্ত সাপ্তাহিক নৌযান রয়েছে। মানাউস থেকে নামতে ছয় দিন লাগে, ফিরতে মাত্র তিন দিন (কারণ স্রোতের দিক ভিন্ন)। দ্রুত যাত্রার জন্য মোটরবোটও আছে, যা দুই দিনের কম সময়ে পৌঁছে দেয় তবে খরচ বেশি। লেটিসিয়ায় পৌঁছালে বোগোতাসহ আরও কয়েকটি শহরে প্রতিদিন ফ্লাইট রয়েছে।
শীতকালে উত্তর আমেরিকা থেকে আসা বহু বিলাসবহুল প্রমোদতরী সাধারণত দিনের বেলায় কার্তাহেনায় ভিড়ে।
বাসে
[সম্পাদনা]ভেনেজুয়েলা থেকে
[সম্পাদনা]কারাকাসের প্রধান টার্মিনাল থেকে কলম্বিয়ার বিভিন্ন শহরে বাস পাওয়া যায়। মারাকাইবো থেকে উপকূলীয় শহরগুলোর (কার্তাহেনা, বারানকিয়া, সান্তা মার্তা) বাস সহজলভ্য। মাইকাও সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ তুলনামূলক সহজ ও সরাসরি।
এছাড়া ব্যস্ত সান ক্রিস্তোবাল–কুকুতা রুটও জনপ্রিয়, যা সান আন্তোনিও দেল তাচিরা সীমান্ত শহর দিয়ে যায়। তবে সীমান্ত এলাকা কিছুটা জটিল বা বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে রাতে। তাই স্থানীয়দের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
ইকুয়েডর থেকে
[সম্পাদনা]ইকুয়েডর থেকে কলম্বিয়ায় প্রবেশ করা সহজ। তুলকান থেকে ট্যাক্সিতে সীমান্তে পৌঁছে অভিবাসন অফিসে প্রস্থান সিল নিয়ে ইপিয়ালেসে আরেকটি ট্যাক্সি নিন। সেখান থেকে কালি, বোগোতা বা অন্যান্য শহরে বাস পাওয়া যায়।
পানামা থেকে
[সম্পাদনা]পানামা থেকে সরাসরি বাসে কলম্বিয়ায় আসা যায় না। ইয়াভিজা থেকে শুরু হয় দারিয়েন গ্যাপ, যেখানে ইন্টারআমেরিকানা সড়ক শেষ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। প্রায়শই ইয়ট পাওয়া যায় যা কলম্বিয়া–পানামা পথে যাত্রী নিয়ে যায় এবং সুন্দর সান ব্লাস দ্বীপে থামার সুযোগ দেয়।
দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইটও রয়েছে, যা পরিচালনা করে আভিয়াঙ্কা, কোপা ও ল্যান।
যাতায়াত ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]বিমানে
[সম্পাদনা]আন্তঃনগর রেল ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রধান শহরগুলোর মাঝে বিস্তীর্ণ পর্বতমালা থাকায় যারা সামর্থ্য রাখেন তাদের জন্য আকাশপথে ভ্রমণ সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর। প্রতিযোগিতাও তাই তীব্র। ২০১৮ সালে বোগোতা–মেদেলিন রুটে প্রায় ৪০ লক্ষ যাত্রী ভ্রমণ করেছেন, যা বিশ্বের ব্যস্ততম বিমান রুটগুলোর মধ্যে ৩০তম ছিল। মাত্র ২৩৯ কিমি দীর্ঘ এই রুট ভবিষ্যতেও অন্য কোনো মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কলম্বিয়ার প্রধান অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাগুলো হলো:
আভিয়াঙ্কা — জাতীয় প্রধান বিমান সংস্থা।
উইঙ্গো — কোপা কলম্বিয়ার একটি স্বল্পভাড়া ব্র্যান্ড (পূর্বে অ্যারোরিপাবলিকা)।
লাতাম কলম্বিয়া — পূর্বে ল্যান কলম্বিয়া ও আইরেস।
ক্লিক — (পূর্বে ইজি ফ্লাই), মেদেলিন, বোগোতা ও বুকারামাঙ্গা অঞ্চলে আঞ্চলিক পরিষেবা দেয়।
সাতেনা — কলম্বিয়ার বিমান বাহিনী পরিচালিত, যা বোগোতা থেকে লস ইয়ানোস, আমাজন ও প্রশান্ত উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উড়ান দেয়।
সব কটিরই ভালোভাবে রক্ষিত বিমানবহর রয়েছে এবং নিয়মিতভাবে প্রধান শহরগুলোতে ফ্লাইট চালায়। তবে কিছু সংস্থার অনলাইন অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়া জটিল। চাইলে বিমানবন্দর বা অফিসিয়াল টিকিট অফিসে অর্থপ্রদান করা যায়।
ট্রেনে
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ায় আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেন নেই। এর নিকটতম উদাহরণ হলো মেদেলিনের মেট্রো। তবে পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে। বোগোতার মেয়র ২০২০–২০২৩ মেয়াদে মেট্রো ও আঞ্চলিক ট্রাম–ট্রেন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার নির্মাণকাজ এখন চলছে।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]
কলম্বিয়ায় গাড়ি চালানো হয় রাস্তার ডানদিকে। অধিকাংশ গাড়ি ম্যানুয়াল গিয়ারের, এবং এগুলো প্রধানত ইউরোপীয় ও জাপানি নির্মাতাদের ৪-সিলিন্ডার ইঞ্জিনযুক্ত।
বিদেশি দর্শনার্থীরা আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে গাড়ি চালাতে পারেন। বীমা বাধ্যতামূলক এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা।
গতিসীমা: আবাসিক এলাকায় ৩০ কিমি/ঘণ্টা, শহরে ৬০ কিমি/ঘণ্টা এবং জাতীয় মহাসড়কে ৮০ কিমি/ঘণ্টা।
দেশজুড়ে সু-রক্ষিত সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে যা আন্দিজের প্রধান শহরগুলোকে ও ক্যারিবিয়ান উপকূলের শহরগুলোকে সংযুক্ত করে। তবে বর্ষাকালে (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) ভূমিধস সাধারণ ঘটনা। ছোট ভূমিধসে রাস্তা এক লেনে সীমিত হয়ে যানজট তৈরি করতে পারে; বড় ভূমিধসে রাস্তা কয়েক দিনের জন্য বন্ধও হতে পারে। অনেক টোল স্টেশন আছে; প্রতিবার টোল দিতে হয় প্রায় ৩ মার্কিন ডলার। অনেক জায়গায় কাঁচা রাস্তা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সড়ক সংযোগ কেবল ইকুয়েডর ও ভেনেজুয়েলার সাথে রয়েছে।
বাসে
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ায় বাস ভ্রমণ ব্যাপক হলেও মান ভিন্ন। দূরপাল্লার যাত্রায় সাধারণত ৫৫ মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হয় না। টিকিট কাটার প্রচলিত রীতি হলো যাত্রী টার্মিনালে গিয়ে পরবর্তী বাসের টিকিট কেনা। অনেক সময় কয়েক ঘণ্টার বেশি আগে টিকিট কেনা সম্ভব হয় না। তাই কোন পরিষেবা কখন শুরু হয় ও শেষ হয় তা আগেই জেনে রাখা ভালো।
দূরপাল্লার বাস ভ্রমণ ধীরগতির হতে পারে, কারণ মহাসড়কগুলো সাধারণত দ্বি-লেনের এবং অনেক ট্রাক চলাচল করে। অনেক রুট ৩,০০০ মিটারেরও বেশি উঁচু পাহাড়ি পথে আঁকাবাঁকা চলে, ফলে ভ্রমণজনিত অসুস্থতা বা উচ্চতাজনিত অসুস্থতা হতে পারে। ৫ ঘণ্টার বেশি দূরত্বের যেকোনো যাত্রার জন্য বিমানে ভ্রমণ অনেক বেশি আরামদায়ক হতে পারে।
| গন্তব্য | দূরত্ব (কিমি) | সময় (ঘণ্টা) |
|---|---|---|
| আর্মেনিয়া | ২৯৬ | ৮ |
| বারানকিয়া | ৯৮৫ | ২০ |
| বুকারামাঙ্গা | ৪২৯ | ১০ |
| কালি | ৫১১ | ১২ |
| কার্তাহেনা | ১০৯০ | ২৩ |
| কুকুতা | ৬৩০ | ১৬ |
| ইপিয়ালেস | ৯৪৮ | ২৪ |
| মানিজালেস | ২৭৮ | ৮ |
| মেদেলিন | ৪৪০ | ৯ |
| নেইভা | ৩০৯ | ৬ |
| পাস্তো | ৮৬৫ | ২২ |
| পেরেইরা | ৩৬০ | ৯ |
| পোপায়ান | ৬৪৬ | ১৫ |
| সান আগুস্তিন | ৫২৯ | ১২ |
| সান্তা মার্তা | ৯৫২ | ১৯ |
| তুনহা | ১৪৭ | ৩ |
বোগোতা ও মেদেলিন থেকে ক্যারিবিয়ান উপকূল এবং মধ্যবর্তী অঞ্চলে চলাচলকারী কয়েকটি প্রধান সংস্থা হলো:
এক্সপ্রেসো ব্রাসিলিয়া, নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১ ৮০০০ ৫১ ৮০০১। টিগো ও মোভিস্টার ফোন থেকে #৫০১ বা #৫০২ ডায়াল করুন
কোপেট্রান, ☏ +৫৭ ৭ ৬৪৪-৮১-৬৭ (বুকারামাঙ্গা), নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১ ৮০০০ ১১৪ ১৬৪। ক্লারো মোবাইল থেকে #৫৬৭ বা #৫৬৮ ডায়াল করুন
বার্লিনাস দেল ফনসে। বোগোতা, বুকারামাঙ্গা, কার্তাহেনা, কুকুতা, সান্তা মার্তা ও মধ্যবর্তী শহরগুলোতে চলাচল করে
র্যাপিডো ওচোয়া, ☏ +৫৭ ৪ ৪৪৪-৮৮-৮৮। মেদেলিন ও বোগোতা থেকে আরবোলেতেস, বারাকাজেরমেকা, মোন্তেরিয়া, বারানকিয়া, সান্তা মার্তা, তোলু এবং অন্যান্য গন্তব্যে পরিষেবা দেয়
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ও ইকুয়েডর সীমান্তের দিকে যাওয়া শহরগুলোতে চলাচল করে এমন আরও কিছু সংস্থা:
এক্সপ্রেসো বলিভারিয়ানো, ☏ +৫৭ ১ ৪২৪-৯০-৯০ (বোগোতা)। বোগোতা ও মেদেলিন থেকে মানিজালেস, আর্মেনিয়া, কালি, ইপিয়ালেস, পোপায়ানসহ দক্ষিণের বিভিন্ন শহরে পরিষেবা দেয়। পেরুতেও আন্তর্জাতিক পরিষেবা আছে।
[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] এক্সপ্রেসো পালমিরা, ☏ +৫৭ ৩২১ ৮৯০-৩৫-৯৭ (মোবাইল থেকে), নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১ ৮০০০ ৯৩৬-৬৬২।
ফ্রন্তেরাস - কন্টিনেন্টাল বাস।
সারা দেশে আরও অনেক বাস সংস্থা ও চালক ইউনিয়ন আছে যারা নির্দিষ্ট শহর বা জেলার মধ্যে ও সংলগ্ন অঞ্চলে পরিষেবা দেয়। নির্দিষ্ট স্থানে কী পাওয়া যায় তা জানতে সেই এলাকার নিবন্ধ দেখুন। আমাজন, লস ইয়ানোস, লেটিসিয়া এবং প্রশান্ত উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তা সীমিত বা অনুপস্থিত, তাই বাস পরিষেবাও সীমিত। এসব অঞ্চলের কিছু অংশ, বিশেষত সীমান্তবর্তী এলাকা (ভেনেজুয়েলা, পানামা, ইকুয়েডর), দক্ষিণ-পূর্ব আমাজন অরণ্য ও প্রশান্ত উপকূলে এখনো গেরিলা কার্যকলাপের ঝুঁকি রয়েছে। যাওয়ার আগে অবশ্যই স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করুন।
আন্তঃনগর বাস রুট খোঁজার জন্য রেডবাস.কো ও এর অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর অনুযায়ী এটি রুট অনুযায়ী সংস্থা ও আনুমানিক ভাড়া খুঁজে পেতে সহায়ক, যদিও প্রস্থানের সময় সবসময় সঠিক নাও হতে পারে।
শহুরে বাসে
[সম্পাদনা]এই শতাব্দীর শুরুতে কলম্বিয়ার শহরগুলোতে খুবই দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন বাসব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যা ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। বোগোতায় ট্রান্সমিলেনিও, মেদেলিনে মেট্রোপ্লাস , কালিতে মিও, বারানকিয়ায় ট্রান্সমেট্রো, বুকারামাঙ্গায় মেট্রোলিনিয়া, আর পেরেইরায় মেগাবাস চালু রয়েছে।
জিনিসপত্রে সবসময় নজর রাখুন এবং ২০,০০০ কলম্বিয়ান পেসোর বেশি নগদ বা অপ্রয়োজনীয় মূল্যবান কিছু প্রকাশ্যে বহন করবেন না। অপরিচিতদের কাছ থেকে খাবার বা পানীয় নেবেন না এবং বাসস্টপ বা টার্মিনালে অপরিচিতদের সঙ্গে কথোপকথন এড়িয়ে চলুন। পুলিশ চেকপয়েন্টে থামানো হতে পারে, তাই শান্ত ও সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করাই উত্তম।
মেট্রোতে
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ার একমাত্র মেট্রো ব্যবস্থা মেদেলিনে, আন্তিওকিয়া বিভাগে অবস্থিত। এটি শহরতলিকে মেদেলিনের বিভিন্ন মহল্লার সঙ্গে যুক্ত করে। লাইন এ লা এস্ত্রেলা থেকে ব্যারিও নিকিয়া পর্যন্ত যায়, আর লাইন বি ব্যারিও সান আন্তোনিও থেকে ব্যারিও সান হাভিয়ের পর্যন্ত চলে।
মেট্রোর সঙ্গে যুক্ত দুটি কেবল কার লাইনও আছে। লাইন কে ব্যারিও আসেভেদো থেকে সান্তো ডোমিঙ্গো সাভিও পর্যন্ত, আর লাইন জে ব্যারিও সান হাভিয়ের থেকে চলে। কেবল কার ভ্রমণ একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা, যেখানে গন্ডোলায় বসে পাহাড়ের উপরে যাওয়া যায়। বর্তমানে ছয়টি স্টেশন ও পার্ক আরভি ইকোপার্ক পর্যন্ত সম্প্রসারণ আছে। পার্ক আরভি যেতে খরচ প্রায় ৪ মার্কিন ডলার (৩৫০০ পেসো) এবং ২০ মিনিটের যাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানো যায়।
ট্যাক্সিতে
[সম্পাদনা]
বড় শহরগুলোতে ট্যাক্সি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দাম শহরভেদে ভিন্ন—বোগোতা তুলনামূলক সস্তা, আর কার্তাহেনা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। বোগোতার ভেতরে একটি ট্যাক্সি যাত্রায় সাধারণত ১৫ মার্কিন ডলারের কম খরচ হয়।
ফোনে ট্যাক্সি ডাকলে সংস্থাটি নিবন্ধন নম্বর ও একটি কোড দেবে, যা ট্যাক্সিতে ওঠার সময় বলতে হবে। দিনের বেলায় হোটেল, অফিস বা সরকারি ভবনের বাইরের নির্দিষ্ট র্যাঙ্কে কেবল অনুমোদিত ট্যাক্সি দাঁড়ায়। অনেক সময় যাত্রীদের নামও নথিভুক্ত করা হয়।
সব ট্যাক্সিতে মিটার থাকে যা ২৫ কলম্বিয়ান পেসো থেকে শুরু হয়। যাত্রার শেষে মিটারের সংখ্যাটি সামনের আসনে প্রদর্শিত শুল্ক তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করতে হয়। রবিবার, সরকারি ছুটি বা গভীর রাতে ভাড়া কিছুটা বেশি হয়। লাগেজ বা টেলিফোনে বুকিংয়ের জন্য অতিরিক্ত চার্জও দিতে হতে পারে।
ট্যাক্সিচালককে বখশিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এছাড়া লাইসেন্সের কারণে অনেক ট্যাক্সিকে বোগোতার বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। তাই আগে থেকেই ব্যবস্থা করে নেওয়া উচিত।
কিছু এলাকায় (যেমন বোগোতার ক্যান্ডেলারিয়া জেলার লাস আগুয়াস) দালালরা ট্যাক্সি জোগাড় করে দেয় এবং চালকের কাছ থেকে সামান্য কমিশন নেয়।
বড় শহরগুলোতে অ্যাপ দিয়ে ট্যাক্সি ডাকা এখন খুব সাধারণ। তাপসি ও ইজি ট্যাক্সি জনপ্রিয়। উবারও বোগোতা, কার্তাহেনা ও মেদেলিনে পাওয়া যায়।
কেবল কারে
[সম্পাদনা]যেহেতু অধিকাংশ কলম্বিয়ান আন্দিজ অঞ্চলে বাস করে, তাই যাতায়াত ও পর্যটনের জন্য কেবল কার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। মানিজালেস ও মেদেলিনে এগুলো মেট্রোর সঙ্গে যুক্ত। আন্তিওকিয়ার হার্দিন, হেরিকো, সোপেত্রান ও সান আন্দ্রেস দে কুয়েরকিয়ার মতো গ্রামীণ শহরেও কেবল কার আছে। সান্তানদের চিকামোচা নদী গিরিখাতের উপর দিয়ে চলা নতুন কেবল কারে অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]
কলম্বিয়ার বড় অংশ আন্দিজ পর্বতমালায় হওয়ায় পাহাড়ি দৃশ্য অসাধারণ। আবার সমতল এলাকায় রয়েছে মনোরম সৈকত। কিছু শৃঙ্গ এতটাই উঁচু যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলেও বরফে ঢাকা থাকে।
খেলাধুলা
[সম্পাদনা]ফুটবল কলম্বিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। জাতীয় দল বিশ্বে অন্যতম শক্তিশালী এবং কার্লোস ভালদেরামা, ইভান কর্দোবা ও হামেস রদ্রিগেজের মতো তারকা খেলোয়াড় তৈরি করেছে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচগুলোতে স্থানীয়দের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে।
দেশীয় পর্যায়ে শীর্ষ লিগ হলো ক্যাটাগোরিয়া প্রিমেরা এ, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুবই তীব্র।
করণীয়
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ায় ভ্রমণে নানা অভিজ্ঞতা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যেখানেই যান উৎসব আর উদযাপনের ছড়াছড়ি। কলম্বিয়ানরা নাচতে ভীষণ ভালোবাসে, আর আপনি যদি নাচতে না-ও জানেন, তারা আনন্দের সাথে শিখিয়ে দেবে। প্রাণবন্ত রাতের জীবনের জন্যও দেশটি বিখ্যাত।
এখানে অনেক সংস্থা পরিবেশবান্ধব পর্যটনের সুযোগ দেয়। সপ্তাহান্তে ট্রেকিং বা ‘কামিনাতাস/এক্সকার্সিওনেস’ খুব জনপ্রিয়। অনেক দল (‘কামিনান্তেস’) একদিনের ভ্রমণ বা ছুটির সময় দীর্ঘ সফর আয়োজন করে। বোগোতা ভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে: ভিয়াহার ই ভিভির, ফুন্দাসিওন সাল সি পুয়েদেস, কামিনান্তেস দেল রেতর্নো। মেদেলিনে পাতিয়ানচোস এবং বুকারামাঙ্গায় রাস্ত্রোসও পরিচিত। সাধারণত তারা গাইড ও পরিবহনের ব্যবস্থা করে, দীর্ঘ ভ্রমণে আবাসনও অন্তর্ভুক্ত থাকে। অবশ্যই নিশ্চিত হোন যে গাইডের সরকারি অনুমোদন আছে।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]মুদ্রা
[সম্পাদনা]|
কলম্বীয় পেসো-এর বিনিময় হার
জুলাই ২০২৫-এর হিসাবে:
বিনিময় হার ওঠানামা করে। এই এবং অন্যান্য মুদ্রার বর্তমান রেট XE.com থেকে পাওয়া যায় |
কলম্বিয়ার মুদ্রা হলো কলম্বীয় পেসো। এর প্রতীক হলো COP (আইএসও কোড: COP)। উইকিভ্রমণে স্পষ্টতা বজায় রাখতে "COP" নোটেশন ব্যবহার করা হয়।
কলম্বিয়ার কয়েন রয়েছে ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এবং ১,০০০ পেসোর মানে। ব্যাংকনোট পাওয়া যায় ২,০০০, ৫,০০০, ১০,০০০, ২০,০০০, ৫০,০০০ এবং ১,০০,০০০ পেসো।
বেশিরভাগ ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার মার্কিন ডলার এবং ইউরোর মতো প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে।
এটিএম
[সম্পাদনা]এটিএম সহজলভ্য, তবে প্রতিটি ব্যাংকে উত্তোলনের সীমা ভিন্ন (জুন ২০২৪ অনুযায়ী):
- সিটিব্যাংক– ১০,০০,০০০ পেসো (অতিরিক্ত ফি সহ)
- স্কটিয়াব্যাংক কোলপাত্রিয়া – ৯,০০,০০০ পেসো
- বানকোলম্বিয়া – ৬,০০,০০০ পেসো
- বিবিভিএ – ৩,০০,০০০ পেসো
- দাভিভিয়েন্দা – ২৭,০০,০০০ পেসো (ফেব্রুয়ারি ২০২৪)
ফি:
- বিবিভিএ – ২০,১৫০ পেসো
- দাভিভিয়েন্দা – ১৫,০০০ পেসো
- স্কটিয়াব্যাংক/কোলপাত্রিয়া – ২৫,৯০০ পেসো
- বানকো কাহা সোসিয়াল – ১৮,০০০ পেসো
- বানকো দে বোগোতা – ২৫,৮০০ পেসো
- বানকো সার্ভিব্যাঙ্কা – ২২,৫০০ পেসো
- বানকো ইটাউ – ১৮,০০০ পেসো
- বানকোলম্বিয়া – ২৬,৯০০ পেসো
কিছু এটিএম টাকা তোলার সময় ব্যাংকের বিনিময় হার গ্রহণ করতে চান কি না জিজ্ঞাসা করে। আপনার নিজের ব্যাংকের হার বেশি সুবিধাজনক হলে এটিএম-এর প্রস্তাবিত হার প্রত্যাখ্যান করাই ভালো।
খরচ
[সম্পাদনা]যদি কোনো পণ্যে মূল্য ট্যাগ না থাকে তবে প্রথমেই দাম জিজ্ঞাসা করুন। সহজ প্রশ্ন হলো “কুয়ান্তো কুয়েস্তা” যার মানে “কত দাম?”।
সাধারণ মূল্য
[সম্পাদনা]- মাঝারি মানের পরিষ্কার হোটেল: ২০–২৫ মার্কিন ডলার
- ভালো মানের হোস্টেলে শেয়ারড বেড: ৫–১০ মার্কিন ডলার
- সাধারণ রেস্তোরাঁয় খাবার (স্যুপ ও পানীয়সহ): ২.৫০–৪ মার্কিন ডলার
- উচ্চ-মধ্যম মানের রেস্তোরাঁয় ভালো খাবার: প্রায় ১৫ মার্কিন ডলার
- দুটি বিয়ার: দোকানে ০.৬০–১.০০ মার্কিন ডলার, বারে ১.৫–৩ মার্কিন ডলার
- ১০০ কিমি দূরত্বে এসি আন্তঃনগর বাস: প্রায় ৬ মার্কিন ডলার (দীর্ঘ যাত্রায় তুলনামূলক সস্তা, কাঁচা রাস্তায় বেশি)
- শহুরে পরিবহন: ০.৫০–০.৯০ মার্কিন ডলার
(মূল্যগুলো নভেম্বর ২০২১ অনুযায়ী।)
বখশিশ
[সম্পাদনা]ভালো রেস্তোরাঁয় সাধারণত বিলের সঙ্গে ১০% পরিষেবা চার্জ যোগ হয়। না থাকলে নিজের থেকে দিতে পারেন। ট্যাক্সিচালককে বখশিশ দেওয়া প্রচলিত নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিল নিকটতম হাজার পেসোতে রাউন্ড আপ করা হয় (যেমন ৬,৭০০ → ৭,০০০ পেসো)।
ব্যক্তিগত ট্যুর গাইডকে বখশিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে চাইলে দিতে পারেন। কিছু রেস্তোরাঁ ও বারে বিলের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত ‘লা প্রপিনা’ প্রায়শই সরাসরি কর্মীদের হাতে পৌঁছায় না, মালিকরা রেখে দেন। এজন্য অনেকে আলাদা করে নগদে পরিবেশনকারীকে দেন।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ার বস্ত্র শিল্প দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে পরিচিত। বিশেষ করে অন্তর্বাস, পোশাক ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী মানসম্মত ও সাশ্রয়ী। চামড়ার পোশাক, জুতো এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রও ভ্রমণকারীদের কাছে জনপ্রিয়। পোশাক কেনার জন্য সেরা শহর হলো মেদেলিন, যা দেশের ফ্যাশন রাজধানী।
কলম্বিয়ার পান্না ও ১৮ ক্যারেট সোনার গহনা বিদেশিদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। অনেক গহনা প্রাক কলম্বীয় শৈলীর অনুকরণে তৈরি হয় সোনা, রূপা ও আধা-মূল্যবান পাথর দিয়ে।

মোচিলা (স্প্যানিশে “ঝোলা/ব্যাকপ্যাক”) হলো ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা কলম্বিয়ান ব্যাগ। এগুলো সাধারণত কাঁধে ঝোলানো হয়। সান্তা মার্তা বা এল রোদাডেরোর শপিং মলে সহজেই পাওয়া যায়। মোচিলা সাধারণত তিন আকারে হয়: বড় (বড় জিনিস বহনের জন্য), মাঝারি (ব্যক্তিগত জিনিসের জন্য) এবং ছোট (কোকা পাতা রাখার জন্য)। স্থানীয় আদিবাসীরা ক্ষুধা কমাতে, শক্তি বাড়াতে ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতা মোকাবেলায় কোকা পাতা বহন করে।
জটিল নকশার গহনা, হস্তশিল্প ইত্যাদি সাধারণত বাজার ও রাস্তার পাশে বিক্রি হয়। অনেক বিক্রেতা টি-শার্ট, শর্টস, চশমা, ব্রেসলেট, ঘড়ি, নেকলেস, স্মারক ও ছবি বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে আসবে। কিনতে চাইলে দর কষাকষি করুন সাধারণত ১০%–১৫% কমানো যায়। যেমন, ১০,০০০ পেসো বললে ৮,০০০ পেসো প্রস্তাব করতে পারেন।
কিনতে না চাইলে কেবল একটি সাধারণ “গ্রাসিয়াস” (“ধন্যবাদ”) বলে হাত নাড়লেই যথেষ্ট।
খাবার-দাবার
[সম্পাদনা]প্রাক-কলম্বীয় যুগে প্রায় ২০০ প্রজাতির আলু চাষ হতো, যা আজও জনপ্রিয়। পাপাস সালাদাস (লবণাক্ত আলু) বা পাপাস চোরিয়াদাস (সসযুক্ত আলু) মতো স্থানীয় পদ অবশ্যই চেখে দেখার মতো। অধিকাংশ খাবারে থাকে ভাত, আলু, অ্যাভোকাডো ও কোনো না কোনো মাংস। উপকূলীয় অঞ্চলে ভাত প্রায়শই নারকেলের স্বাদে রান্না করা হয়।
রেস্তোরাঁ ও ঘরোয়া খাবারে স্যুপ খুব প্রচলিত। পার্বত্য অঞ্চলে সকালের নাস্তায় পরিবেশন করা হয় চাঙ্গুয়া, দুধ ভিত্তিক এক ধরনের স্যুপ।
কলম্বিয়ার খাবার মেক্সিকান খাবারের মতো ঝাল নয়। একই নামের খাবারও এখানে ভিন্নভাবে তৈরি হয়। যেমন এম্পানাদা ভুট্টার আটা ও আলু-মাংস দিয়ে বানানো, যা মেক্সিকান বা আর্জেন্টিনীয় সংস্করণ থেকে আলাদা।

সকালের নাস্তায় সাধারণত বুনুয়েলোস (পনির মিশ্রিত ভুট্টার আটা দিয়ে ভাজা বল) ও আরেপাস (পুরু ভুট্টার রুটি, প্রায়ই পনির মিশ্রিত) খাওয়া হয় স্ক্র্যাম্বলড ডিমের সাথে। বোগোতা ও আশপাশের অঞ্চলে বিশেষ খাবার হলো তামালেস ভুট্টার সাথে শুকরের মাংস বা মুরগি, সবজি ও ডিম কলাপাতায় ভাপানো, যা প্রায়শই গরম চকোলেটের সাথে পরিবেশন করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে বিশেষ করে রবিবারে জনপ্রিয় সানকোচো দে গায়িনা মুরগির টুকরো, ভাত ও সবজি সহ সমৃদ্ধ স্যুপ। উপকূলে এই স্যুপ মাছ দিয়েও রান্না করা হয়। আরেকটি পরিচিত পদ হলো আজিয়াকো তিন ধরনের আলু, মুরগি, সবজি ও ভেষজ (গুয়াসকা) দিয়ে তৈরি স্যুপ, যা পরিবেশন করা হয় ভাত, অ্যাভোকাডো, ভুট্টা, দুধের ক্রিম ও কেপারসহ।
বান্দেহা পাইসা একসময় প্রায় কলম্বিয়ার জাতীয় খাবার বলে বিবেচিত হতো। “কৃষকের থালা” নামে পরিচিত এই ভরাট প্লেটে থাকে ভাত, মটরশুঁটি, ভাজা কলা, আরেপা, ভাজা ডিম, চোরিজো, চিচারোন (শুকরের ভাজা মাংস) ইত্যাদি। এটি ভারী ও চর্বিযুক্ত হলেও ভ্রমণকারীদের কাছে অবশ্যই চেষ্টা করার মতো। বোগোতা বা মেদেলিনে কিছু রেস্তোরাঁয় এর হালকা ও গুরমে সংস্করণও পাওয়া যায়।
তামালেস কলম্বিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন রূপে তৈরি হয়, তবে সবকটিই সুস্বাদু। এনভুয়েলতোস হলো ভুট্টা দিয়ে তৈরি মিষ্টি তামাল।

দেশে আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজির (ম্যাকডোনাল্ড'স, সাবওয়ে, টি.জি.আই.এফ.) পাশাপাশি স্থানীয় চেইনও শক্তিশালী। যেমন প্রেস্টো ও এল কোরাল (বার্গার), কোকোরিকো (গ্রিলড চিকেন), ফ্রিজবি (রোস্টেড চিকেন), গোকেলা (স্বাস্থ্যকর খাবার), ক্রেপস অ্যান্ড ওয়াফলস (ক্রেপ, ওয়াফল ও আইসক্রিম)। এছাড়াও ব্রাজিলিয়ান স্টেকহাউস স্টাইলের রোদিজিওস ও স্প্যানিশ পায়েয়ার মতো আন্তর্জাতিক খাবারও সহজলভ্য।
বড় শহরে জৈব খাবারের চল বেড়েছে। ছোট শহরে সবজি ও ফল প্রাকৃতিকভাবেই তাজা থাকে। শীতকালীন সংরক্ষণের প্রয়োজন না থাকায় শুকনো ফল বা টমেটো খুব কমই মেলে। প্রায় সব মৌসুমি ফল সারা বছর তাজা পাওয়া যায়।
মিষ্টি
[সম্পাদনা]পাউরুটি ও পেস্ট্রি প্রতিটি এলাকায় সহজেই মেলে। জনপ্রিয় কিছু হলো পানদেবোনো, পান দে ইয়ুকা, পাস্তেল গ্লোরিয়া ও রসকন। মান ভিন্ন হয়, তাই ভালো দোকান বেছে নিতে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করা উত্তম।
কলম্বিয়ানরা মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। গুয়াবা (পেয়ারা) দিয়ে তৈরি বোকাদিয়ো বা দুধ ভিত্তিক আরেকিপে (আর্জেন্টিনার ডুলসে দে লেচে-র মতো) বিশেষ জনপ্রিয়। প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ফল ও কাঁচামাল দিয়ে আলাদা আলাদা মিষ্টি তৈরি হয়। বোগোতা ও তুনহার কাছাকাছি শহরে কারিগরদের হাতে তৈরি বিশেষ ক্যান্ডি মেলে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল ও তাদের রস সর্বত্রই পাওয়া যায় তেঁতুল, আম, গুয়ানাবানা, লুলো, ম্যাঙ্গোস্টিন, নানা ধরনের সাইট্রাস ইত্যাদি। এগুলো থেকে তৈরি রস ও আইসক্রিম খুব জনপ্রিয় ও সস্তা।
কফি থেকেও তৈরি হয় নানা পণ্য ওয়াইন, কুকিজ, ক্যান্ডি, ডেজার্ট ও আইসক্রিম।
ত্রেস লেচেস কেক এক অনন্য মিষ্টান্ন স্পঞ্জ কেক দুধে ভিজিয়ে হুইপড ক্রিম ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে সাজানো। এছাড়া লেচে আসাদা (দুধের কাস্টার্ড, ফ্লানের মতো) খেতেও সুস্বাদু।
পানীয়
[সম্পাদনা]বোগোতা ও মেদেলিনে ট্যাপের জল পানযোগ্য হলেও গ্রামাঞ্চল বা ক্যারিবিয়ান উপকূলে বোতলজাত জল ব্যবহার করা নিরাপদ। বরফ ও অপ্রসিদ্ধ জল মেশানো পানীয় এড়িয়ে চলুন।
সকালে জনপ্রিয় গরম পানীয় হলো কফি, গরম চকোলেট বা আগুয়া দে পানেলা (শুকনো আখের রস দিয়ে তৈরি, প্রায়ই দারুচিনি ও লবঙ্গ মেশানো)। কফি সাধারণত দুধসহ পান করা হয়।
ফলের রস সর্বত্র জনপ্রিয়। ফল, চিনি ও জল বা দুধ মিশিয়ে তৈরি এই পানীয় সস্তা ও সহজলভ্য।
কলম্বিয়ার জাতীয় মদ হলো আগুয়ার্দিয়েন্তে (ওরফে গুয়ারো)—এটি মৌরির স্বাদযুক্ত এবং সাধারণত শট আকারে পান করা হয়। প্রতিটি অঞ্চলের আলাদা ব্র্যান্ড রয়েছে, যেমন আন্তিওকেনিয়ো, ক্রিস্টাল, কিন্দিয়ানো, ব্লাঙ্কো দেল ভাইয়ে ও নেক্টার। রামের মধ্যে রয়েছে ‘‘রন সান্তা ফে’’, ‘‘রন মেদেলিন আনেহো’’ ও ‘‘রন ভিয়েহো দে কালদাস’’।
কফি
[সম্পাদনা]
কালো ফিল্টার কফিকে “টিন্টো” বলা হয় শুনতে রেড ওয়াইনের মতো হলেও আসলে সাধারণ ব্ল্যাক কফি।
বোগোতা ও আশেপাশে কফি বা গরম চকোলেট পান করার সময় কাপে পনির দেওয়ার প্রথা আছে। পনির গলে গেলে চামচ দিয়ে তুলে খাওয়া হয়।
বিখ্যাত ক্যাফে চেইন যেমন হুয়ান ভালদেস বা ওমা-তে নানা স্বাদের গরম বা ঠাণ্ডা কফি পাওয়া যায়।
ভাগ্য ভালো হলে যদি কোনো ফিঙ্কা ক্যাফেটেরা (কফি খামার)-এ থাকার সুযোগ পান, তবে চাষিদের হাতে তোলা, ইটের চুলায় ভাজা ও হাতে গুঁড়ো করা কফির স্বাদ নিতে পারবেন যার সুবাস ও স্বাদ সত্যিই অনন্য।
থাকার ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ায় আপনি পশ্চিমা মানের বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট ও হোস্টেল থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল পর্যন্ত নানা ধরনের আবাসনের বিকল্প খুঁজে পাবেন। প্রতিদিন ভাড়ায় নেওয়ার মতো অ্যাপার্টমেন্টও পাওয়া যায়।
মোটেল বনাম হোটেল
[সম্পাদনা]গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো: কলম্বিয়ায়, লাতিন আমেরিকার অনেক দেশের মতো, মোটেল শব্দটির অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো নয়। এখানে মোটেল বলতে বোঝানো হয় স্বল্প সময়ের জন্য ভাড়া দেওয়া আবাসন, যা সাধারণত প্রণয়ঘন সাক্ষাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে, হোটেল মূলত ভ্রমণকারীদের জন্য এবং পরিবার-বান্ধব। অনেক হোটেলেই নিবন্ধিত অতিথি ছাড়া অন্য কাউকে কক্ষের এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না—এটি অতিথি ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রক্ষণশীল ক্যাথলিক সংস্কৃতিতে হোটেলের সুনাম রক্ষার জন্যও করা হয়।
গোপনীয়তা কলম্বিয়ানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যেহেতু অনেক তরুণ-তরুণী বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে বাস করে। তাই বিবাহিত দম্পতিরাও কখনও কখনও ব্যক্তিগত সময় কাটাতে মোটেল ব্যবহার করেন। এই মোটেলগুলো দেশে খুবই প্রচলিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার তথাকথিত “নো-টেল মোটেল”-এর মতো কোনো সামাজিক কলঙ্ক এখানে জড়িত নয়।
মোটেলের মান ও ভাড়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে, তবে অধিকাংশই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভালোভাবে রক্ষিত। সাধারণত এখানে ঘর ভাড়া নেওয়া হয় বেনামে, এবং ভাড়া ও অতিরিক্ত চার্জ শুধুমাত্র নগদে পরিশোধ করতে হয়।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা সাধারণত কঠোর এবং মানসম্মত। অনেক কলম্বিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সাধারণত একটি স্নাতক ডিগ্রি প্রোগ্রাম ১৬০ ক্রেডিট বা প্রায় ৫ বছরের হয়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
স্প্যানিশ শিখুন
[সম্পাদনা]কলম্বীয় স্প্যানিশকে বিশ্বের অন্যতম শুদ্ধ রূপ বলে ধরা হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও ভাষা স্কুলে বিদেশিদের জন্য স্প্যানিশ শেখার কোর্স চালু রয়েছে।
সালসা শিখুন
[সম্পাদনা]কলম্বিয়া সালসা নাচের অন্যতম জন্মভূমি, এবং এখানে সর্বত্র এই সঙ্গীত শোনা যায়। বহু সালসা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কলম্বিয়া থেকে এসেছেন। বিশেষ করে কালি ও কার্তাহেনায় অসংখ্য ক্লাব ও স্কুল রয়েছে যেখানে সালসা শেখানো হয়।
কর্মসংস্থান
[সম্পাদনা]আপনি যদি বানকোলম্বিয়া/কোনাভি, আভিয়াঙ্কা বা প্রেস্টোর মতো কোনো জাতীয় সংস্থায় কাজ করতে চান, তবে প্রায় মাতৃভাষীর মতো সাবলীলভাবে স্প্যানিশ জানা প্রয়োজন। যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে সংস্থা স্প্যানিশ শেখার ব্যবস্থাও করতে পারে, তবে আবেদন করার আগে নিশ্চিত হন যে আপনি পদের জন্য সত্যিই যোগ্য।
অতিরিক্ত আয়ের জন্য ইংরেজি শেখানো সম্ভব, বিশেষ করে ছোট শহরগুলোতে এর চাহিদা বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কাজের সুযোগ রয়েছে।
মানিয়ে চলা
[সম্পাদনা]যোগ্য হলে, আপনার ভিসা বা ভিসামুক্ত অবস্থানের মেয়াদ অনলাইনে বাড়ানো যায়। ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করতে হবে এবং প্রাক-অনুমোদনের ই-মেইল পাওয়ার পর নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়।
৯০ দিনের ভিসামুক্ত অবস্থান আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়ানো যায়। এটি ইইউ নাগরিক ও ইকুয়েডরের নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে, তবে অন্যদের জন্য ফি ১২৫,০০০ কলম্বীয় পেসো (আগস্ট ২০২৪ অনুযায়ী)। আপনি যদি একটানা প্রায় ১৮০ দিন কলম্বিয়ায় থাকতে চান, তবে খেয়াল রাখুন যে এর পরে পুনরায় প্রবেশের আগে হয়তো ১৮০ দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
বিদেশিদের আইডি কার্ড ( বিদেশী পরিচয়পত্র ) সংগ্রহ ও অন্যান্য কাগজপত্রের কাজ অভিবাসন অফিসের অধীনেই সম্পন্ন হয়।
নিরাপদে থাকুন
[সম্পাদনা]| টীকা: কলম্বিয়ায় নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক চোরাচালানের সাথে যুক্ত সহিংসতা এখনও দেশের কয়েকটি, মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। ভ্রমণকারীদের, বিশেষ করে বড় শহরের বাইরে গেলে, সতর্ক থাকার এবং সর্বশেষ সরকারি ভ্রমণ পরামর্শ সম্পর্কে অবগত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। | |
| (তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- ডিসে ২০২৩) |
একসময় কলম্বিয়ার উপর সহিংস ও বিপজ্জনক দেশের তকমা লেগে ছিল, তবে ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশক থেকে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে। দেশটি এখন পুনরুদ্ধারের পথে এবং কলম্বিয়ানরা নিজেদের অগ্রগতি নিয়ে গর্বিত। বর্তমানে কলম্বিয়ায় ভ্রমণ সাধারণত নিরাপদ, আর সহিংস অপরাধের হার মেক্সিকো বা ব্রাজিলের তুলনায় কম—যতক্ষণ না আপনি রাতের বেলায় শহরের দরিদ্র এলাকাগুলো এড়িয়ে চলেন এবং প্রধান সড়ক ছেড়ে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ না করেন যেখানে এখনও গেরিলাদের উপস্থিতি থাকতে পারে।
দেশব্যাপী নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন। ট্র্যাভেল রিস্ক ম্যাপ থেকে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। জঙ্গলের বহু অঞ্চল অনিরাপদ হলেও লেটিসিয়া ও সান্তা মার্তার আশেপাশের এলাকাগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে পানামা সীমান্তের দারিয়েন গ্যাপ, পুতুমায়ো বা কাকেতা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও সংঘাতপূর্ণ এলাকা—এগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। চোকো, কাউকা, ভাইয়ে দেল কাউকা, পূর্বের মেতা, ভিচাদা, আরাউকা, এবং অধিকাংশ আমাজনীয় অঞ্চলও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব স্থানে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গেই ভ্রমণ করুন এবং শহর বা পর্যটন গন্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকুন। সাধারণভাবে, প্রধান শহরগুলোর সংযোগ সড়কে ভ্রমণ করলে ঝুঁকি কম, আর অবৈধ গেরিলা চৌকির চেয়ে কলম্বিয়ান সেনাবাহিনীর চেকপয়েন্টের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
স্থলমাইন
[সম্পাদনা]কলম্বিয়া বিশ্বের অন্যতম বেশি মাইন-আক্রান্ত দেশ। তাই স্থানীয়দের সঙ্গে পরামর্শ না করে গ্রামীণ এলাকায় হেঁটে বেড়ানো বিপজ্জনক। ৩২টির মধ্যে ৩১টি বিভাগেই স্থলমাইন পাওয়া গেছে এবং গেরিলা বা পাচারকারীরা নতুন মাইন পুঁতে রাখে।
আধা-সামরিক বাহিনী
[সম্পাদনা]২০০৫ সালে নিরস্ত্রীকরণের পরও কিছু আধা-সামরিক গোষ্ঠী চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তারা সাধারণত পর্যটকদের লক্ষ্য করে না, তবে দুর্গম অঞ্চলে অননুমোদিত গ্রামীণ চৌকির সম্মুখীন হওয়া সম্ভব।
অপহরণ
[সম্পাদনা]২০০০ সালের শুরুর দিকে কলম্বিয়ায় অপহরণের হার ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ। এটি ফার্ক ও ইএলএন গেরিলাদের প্রধান অর্থায়নের উৎস ছিল। বর্তমানে অপহরণের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে এসেছে—২০০০ সালে প্রায় ৩,০০০ ঘটনার তুলনায় ২০১৬ সালে তা ২০০-এর কাছাকাছি নেমে আসে। তবুও ভাইয়ে দেল কাউকা, কাউকা ও কাকেতা অঞ্চলে এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে। মনে রাখবেন, কলম্বিয়ার আইনে মুক্তিপণ প্রদান নিষিদ্ধ, তাই অনেক ঘটনা রিপোর্ট হয় না।
গেরিলা
[সম্পাদনা]ফার্ক ও ইএলএন গেরিলারা আজও সক্রিয়, তবে ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় অনেক দুর্বল। তাদের কার্যকলাপ প্রধানত দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমের গ্রামীণ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। শহরে এদের উপস্থিতি খুবই বিরল। প্রধান সড়ক ধরে ভ্রমণ করলে গেরিলার চেয়ে সেনাবাহিনীর টহল পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। স্থানীয় পুলিশ, সংবাদপত্র ও সহযাত্রীরা পথের নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো উৎস হতে পারে।
অপরাধ
[সম্পাদনা]অপরাধের হার ১৯৯০-এর দশক থেকে কমলেও বড় শহরের কিছু এলাকা এখনো বিপজ্জনক। শহরের ধনী অঞ্চলের বাইরে অপরাধ প্রবণতা বেশি, বিশেষত দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায়। বড় শহরে ট্যাক্সি-সংক্রান্ত অপরাধ বড় ঝুঁকি—তাই রাস্তা থেকে ট্যাক্সি না ডেকে ফোন বা অ্যাপ ব্যবহার করুন, কিংবা বিমানবন্দর বা শপিং মলের অফিসিয়াল ট্যাক্সি র্যাঙ্ক ব্যবহার করুন।
মাদকদ্রব্য
[সম্পাদনা]মাদক ব্যবহার স্থানীয়ভাবে বিরল এবং আইনি শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। গাঁজা কেনা-বেচা অবৈধ হলেও, আইন অনুযায়ী ২০ গ্রাম পর্যন্ত বহন করলে চার্জ নাও হতে পারে। তবে বেশি পরিমাণে বহন করলে কঠিন শাস্তি হতে পারে। ছোট শহরে কখনও কখনও স্বঘোষিত ভিজিলান্তে দল অপরাধ মোকাবেলায় কঠোর পন্থা অবলম্বন করে।
স্কোপোলামিন বা “ডেভিল’স ব্রেথ” একটি বিপজ্জনক মাদক, যা অপরাধীরা ডাকাতি বা অপহরণের জন্য ব্যবহার করে। বড় মাত্রায় দিলে ভুক্তভোগী প্রতিরোধহীন হয়ে পড়ে এবং পরে কিছুই মনে থাকে না। সাধারণত পানীয়ের মধ্যে গোপনে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাই অপরিচর্য পানীয় পরিত্যাগ করাই নিরাপদ। যদিও ঘটনা তুলনামূলক বিরল, তবুও সন্দেহ হলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান।
সুস্থ থাকুন
[সম্পাদনা]প্রধান শহরে কলের জল নিরাপদ হলেও শহরের বাইরে বোতলজাত বা ফোটানো জল পান করুন। গ্রামীণ এলাকায় পরিশোধিত জল সাধারণত প্লাস্টিকের বড় ব্যাগে বিক্রি হয়, যা দোকানে সহজে পাওয়া যায়।
নিম্নভূমি অঞ্চলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, পীতজ্বর ইত্যাদি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের ঝুঁকি রয়েছে। পীতজ্বরের টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক এবং সুপারিশকৃত। ডেঙ্গুর কোনো টিকা নেই, তাই মশার কামড় এড়াতে প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার করুন।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ শহরের বাইরের অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য সহজলভ্য এবং সস্তা। ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ডক্সিসাইক্লিন চাওয়া যায়। ভ্রমণ শুরুর কয়েক দিন আগে থেকে সেবন শুরু করে ভ্রমণ শেষে চার সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে।
জিকা ভাইরাস কলম্বিয়ায় শনাক্ত হয়েছে। যেহেতু এটি গুরুতর জন্মগত ত্রুটি ঘটাতে পারে, তাই গর্ভবতী বা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন এমন ভ্রমণকারীদের কলম্বিয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
শ্রদ্ধা ও সৌজন্যবোধ
[সম্পাদনা]কলম্বিয়ানরা তাদের দেশের খারাপ সুনাম সম্পর্কে খুব সচেতন। সহিংসতার ইতিহাস নিয়ে হালকা বা অবিবেচক মন্তব্য করলে তারা পাল্টা রসিকতা করতে পারেন (হয়তো আপনার দেশ নিয়ে) এবং কথোপকথন হঠাৎই থেমে যেতে পারে। তবে, তারা যদি কারও সাথে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তখন এসব বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতেও দ্বিধা করেন না।
কলম্বিয়ায় সামাজিক আচরণ লাতিন আমেরিকার অনেক অঞ্চলের তুলনায় বেশি আনুষ্ঠানিক। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে “দয়া করে” এবং “অনেক ধন্যবাদ” বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেউ আপনাকে সম্বোধন করলে উত্তরে ভদ্রভাবে “ভদ্রমহিলা?” বা “ভদ্রলোক?” বলা শোভনীয়। দেশের কিছু অংশে (বিশেষত বোয়াকায়) মানুষ এখনও খুব প্রাচীন রীতিতে আনুষ্ঠানিক, সেখানে অপরিচিতদের সম্বোধন করতে সাধারণ “আপনি” শব্দের পরিবর্তে “আপনার কৃপা” বলা হয়। শুধু ক্যারিবিয়ান উপকূল কিছুটা বেশি অনানুষ্ঠানিক সেখানে মানুষকে শুধু “ছেলে” বলেই সম্বোধন করা স্বাভাবিক। তবে সবচেয়ে ভালো নিয়ম হলো, আশেপাশের মানুষদের দেখে তাদের ব্যবহার থেকে শিক্ষা নেওয়া।

কলম্বিয়ায় জাতিগত বিষয় তেমন উত্তপ্ত নয়। শ্বেতাঙ্গ, মেস্তিজো, আফ্রো-কলম্বিয়ান এবং আদিবাসীরা শিক্ষা, বসবাস, রাজনীতি ও দৈনন্দিন জীবনে একসঙ্গে মিশে যায়। বিদেশীদের ক্ষেত্রেও পার্থক্য করা হয় না: আপনি রাশিয়ান হলেও আপনাকে “গ্রিঙ্গো” বলা হতে পারে—এটি অপমানজনক নয়। কৃষ্ণাঙ্গ ভ্রমণকারীদের “নেগ্রো” বা “মোরেনো” বলা স্বাভাবিক, এটিও অসম্মানসূচক নয়। এশীয়দের প্রায়ই “চিনো” (চীনা) বলা হয়, আসল জাতিগত পটভূমি যাই হোক না কেন। বিভ্রান্তিকরভাবে, কিছু অঞ্চলে শিশুদেরকেও “চিনো” বলা হয়, যা স্থানীয় চিবচা ভাষা থেকে এসেছে। আরও মজার ব্যাপার হলো, স্বর্ণকেশী ও লালচুলো মানুষকে “মোনো” (বানর) বলা হয়, কিন্তু এর অর্থ স্নেহপূর্ণ, অবমাননাকর নয়।
কলম্বিয়ানদের একটি স্বভাব হলো চিবুক বা ঠোঁট উঁচু করে কোনো কিছু নির্দেশ করা। আঙুল তুলে কাউকে দেখানোকে অভদ্র মনে করা হয়। একইভাবে, হাতের তালু নিচের দিকে রেখে কারও উচ্চতা বোঝানো প্রাণী বা বস্তুর জন্য ব্যবহৃত হয়, তাই এড়িয়ে চলা ভালো। এর বদলে হাতের তালু পাশের দিকে রেখে উচ্চতা বোঝান।
কলম্বিয়ানরা প্রচুর নাচে। তারা আনন্দের সাথে আপনাকে নাচ শিখিয়ে দেবে এবং নিখুঁত হওয়ার আশা করবে না। তাদের রাতের জীবন মূলত নাচকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে, বিশেষত বড় শহরের বাইরে। আবেগপূর্ণ ভঙ্গিমা থাকা সত্ত্বেও, নাচকে সাধারণত প্রেম নিবেদনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয় না। যেমন ব্রাজিলের কার্নিভালে সাম্বা নাচ উপভোগের আমন্ত্রণ—সেটি সম্পর্কের প্রস্তাব নয়, বরং সবাইকে আনন্দে শরিক হওয়ার আহ্বান।
সমকামী এবং লেসবিয়ান ভ্রমণকারী
[সম্পাদনা]বেশিরভাগ কলম্বিয়ান ক্যাথলিক হলেও তরুণ প্রজন্ম অনেকটাই উদার, বিশেষ করে সামাজিক বিষয়ে। তবুও প্রকাশ্যে স্নেহ প্রদর্শন কম দেখা যায় এবং তা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। মৌখিক বা শারীরিক সমকামী-বিদ্বেষী আচরণ পুরোপুরি বাদ দেওয়া যায় না, আর পরোক্ষ পক্ষপাত আরও সাধারণ। সামগ্রিকভাবে মনোভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই।
বোগোতার চাপিনেরো এলাকা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কেন্দ্র। এখানে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বড় সমকামী-বান্ধব ক্লাব থিয়েট্রন রয়েছে। জুন-জুলাই মাসে অনেক শহরে এলজিবিটি প্রাইড প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। [অকার্যকর বহিঃসংযোগ]
এপ্রিল ২০১৬ থেকে কলম্বিয়ায় সমলিঙ্গ বিবাহ বৈধ।
যোগাযোগ
[সম্পাদনা]ফোনে
[সম্পাদনা]ক্যারিয়ার
[সম্পাদনা]বোগোতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সহজেই সিম কার্ড ও আনলকড ফোন পাওয়া যায়, যদিও দাম তুলনামূলক বেশি। যেকোনো শহরে হোটেল বা হোস্টেলের কর্মীরা আপনাকে কোথায় কিনতে হবে তা জানিয়ে দেবে। টপ-আপও সহজ, রাস্তার দোকানগুলোতে পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক হলো ক্লারো, টিগো এবং মোভিস্টার। দেশের বিস্তৃত কভারেজের জন্য ক্লারো ভালো বিকল্প। জুলাই ২০২১ অনুযায়ী জনপ্রিয় কিছু প্যাকেজ হলো:
- ২ দিনের জন্য ৪০০ এমবি – ৩,০০০ পেসো
- ৬ দিনের জন্য ১ জিবি – ৬,০০০ পেসো
- ১০ দিনের জন্য ২ জিবি – ১০,০০০ পেসো
- ২০ দিনের জন্য ৪.৫ জিবি – ২০,০০০ পেসো
- ৩০ দিনের জন্য ১০ জিবি – ৪০,০০০ পেসো
সব প্যাকেজেই আনলিমিটেড কল ও টেক্সট রয়েছে। সুপারজিরো বা লটারির দোকানে শুধু আপনার নম্বর দিয়ে রিচার্জ করা যায়। আন্তর্জাতিক কার্ড থাকলে অনলাইনেও করা সম্ভব।
কম খরচে ইন্টারনেট চাইলে ভার্জিন মোবাইল বিকল্প হতে পারে। সিম খুঁজতে একটু সময় লাগতে পারে, দাম সাধারণত ৫,০০০–১০,000 পেসো।
ডায়াল করা
[সম্পাদনা]| # | বিভাগ |
|---|---|
| ১ | বোগোতা এবং কুন্দিনামারকা |
| ২ | ভাইয়ে দেল কাউকা, কাউকা, নারিনিয়ো |
| ৩ | মোবাইল ফোন |
| ৪ | আন্তিওকিয়া, চোকো, কোর্দোবা |
| ৫ | আতলান্তিকো, বলিভার, সেসার, লা গুয়াহিরা, মাগদালেনা, সুক্রে |
| ৬ | কালদাস, রিসারাল্ডা, কুইন্দিও |
| ৭ | নর্তে দে সান্তানদের, সান্তানদের, আরাউকা |
| ৮ | বোয়াকা, তোলিমা, হুইলা, সান আন্দ্রেস ও প্রোভিডেন্সিয়া, মেতা, কাকেতা, আমাসোনাস, কাসানারে, ভিচাদা, গুয়াইনিয়া, ভাউপেস, গুয়াভিয়ারে, পুতুমায়ো |
ল্যান্ডলাইন থেকে: স্থানীয় ল্যান্ডলাইনে কল করতে শুধু সাত সংখ্যার নম্বর ডায়াল করুন। ল্যান্ডলাইন থেকে মোবাইলে কল করতে ০৩ দিয়ে শুরু করে মোট ১২ সংখ্যা ডায়াল করতে হয়।
দেশীয় দূরপাল্লা বা আন্তর্জাতিক কল জটিল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ফোনের মালিককে ডায়াল করতে বলুন, অথবা সহজ সমাধান—মোবাইল ব্যবহার করুন।
মোবাইল ও বিদেশ থেকে: কলম্বিয়ার ল্যান্ডলাইনে কল করতে +৫৭ এর পর এরিয়া কোডসহ আট সংখ্যার নম্বর দিন। মোবাইলে কল করতে +৫৭ এর পর দশ সংখ্যার মোবাইল নম্বর ডায়াল করুন। “+” এর পরিবর্তে “০০” ব্যবহার করা যায়।
ডাক
[সম্পাদনা]সরকারি ডাক পরিষেবা ৪-৭২ ধীর ও অনির্ভরযোগ্য, তাই স্থানীয়রা সাধারণত সার্ভিয়েনত্রেগা-র মতো কুরিয়ার ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক মেইলের খরচ তুলনামূলক বেশি।
ইন্টারনেট ক্যাফে
[সম্পাদনা]যেকোনো শহরে সহজেই ইন্টারনেট ক্যাফে পাওয়া যায়। বোগোতায় দাম কম, তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যয়বহুল হতে পারে। সংযোগ যত ভালো, সাধারণত দামও তত বেশি।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]স্থল সীমান্ত পার হয়ে ইকুয়েডর, ব্রাজিল, পেরু ও ভেনেজুয়েলা যাওয়া যায়। ব্রাজিল ও পেরুর জন্য লেটিসিয়া-য় উড়ে যান। ইকুয়েডরে স্থলপথে যেতে চাইলে সীমান্তের কাছের ইপিয়ালেস বা পাস্তো-তে ফ্লাইট ধরতে পারেন।
