কানাডা আয়তনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ, রাশিয়ার পরেই। গ্রেট হোয়াইট নর্থ বা “মহান সাদা উত্তর” নামে পরিচিত এই দেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। দেশটির অভ্যন্তরে আধুনিক অনেক নগরী থাকলেও বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বনভূমি। এখানে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি হ্রদ রয়েছে। দেশটিতে রয়েছে রকি পর্বতমালা, প্রেইরি অঞ্চল, তিন দিকের মহাসাগরীয় উপকূলরেখা এবং আর্কটিক অঞ্চলের দিকে বিস্তৃত একটি কম জনবসতিপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ।
অঞ্চলসমূহ
[সম্পাদনা]একবারে পুরো কানাডা ভ্রমণ করা সত্যিই একটি বিশাল কাজ। ট্রান্স-কানাডা মহাসড়ক প্রায় ৮,০০০ কিমি (৫,০০০ মা) লম্বা, যা সেন্ট জনস, নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ( এটি প্রায় কায়রো থেকে কেপটাউন পর্যন্ত দূরত্বের সমান, আর নেপোলিয়নের প্যারিস থেকে মস্কো অভিযান পথের তিন গুণেরও বেশি)। যেকোনো স্থলপথ পরিবহনে দেশ পার হতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগে, এমনকি মাঝপথে কোথাও না থামলেও। টরন্টো থেকে ভ্যাঙ্কুভার বিমানে যেতে লাগে ৪ ঘণ্টারও বেশি।
কানাডা ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করার সময়, দেশটিকে আলাদা অঞ্চলে ভাগ করে ভ্রমণ করাই সবচেয়ে সুবিধাজনক:
| আটলান্টিক কানাডা (নিউ ব্রান্সউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর, নোভা স্কোশিয়া, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড) ইউরোপীয় প্রভাবের দীর্ঘতম ইতিহাস বহনকারী এই অঞ্চলই আটলান্টিক কানাডা। এখানে কয়েকটি স্বতন্ত্র স্থানীয় সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আদিবাসী মিকম্যাক, ইনু ও নুনাটসিয়াভুত জনগোষ্ঠী, ফরাসিভাষী আকাডিয়ান, আমেরিকান বিপ্লবের শরণার্থী তথা "লয়ালিস্ট"দের বংশধর (যার মধ্যে "কালো [আফ্রিকান] লয়ালিস্টরাও" ছিলেন), কেপ ব্রেটন দ্বীপের স্কটিশ-গেলিক হাইল্যান্ডার এবং বিচ্ছিন্ন আইরিশ-প্রভাবিত নিউফাউন্ডল্যান্ডবাসী (যারা ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথক দেশ ছিল)। এ অঞ্চলটি তার সমুদ্রতীরবর্তী মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, হ্যালিফ্যাক্স ও সেন্ট জন’সের ঐতিহাসিক নগরচিত্র এবং সামুদ্রিক খাবারকেন্দ্রিক রান্নার জন্যও পরিচিত। |
| ক্যুবেক বৃহৎ আয়তনের ক্যুবেক দুটি ভিন্ন অংশে বিভক্ত, সেন্ট লরেন্স নদীর চারপাশে ঘনবসতিপূর্ণ (এবং ফরাসিভাষী) একটি অঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনবিরল (এবং প্রধানত আদিবাসী) এলাকা। লরেন্টিয়ান অঞ্চলটি যেন উত্তর আমেরিকার ভেতরে লুকানো একটি ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশ। কানাডার বাকি অংশের তুলনায় ক্যুবেককে প্রায়ই "স্বতন্ত্র সমাজ" বলা হয়, কারণ এটি কানাডার একমাত্র প্রদেশ যেখানে ফরাসিভাষী জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এটি ১৭৫৯ সাল পর্যন্ত ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ক্যুবেকের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে এর ঐতিহাসিক রাজধানী ক্যুবেক শহর, যেখানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যভুক্ত পুরোনো শহর অবস্থিত এবং বিশাল শীতকালীন উৎসব আয়োজিত হয়। এছাড়া এর প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র মন্ট্রিয়েল, যা কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফরাসিভাষী সাংস্কৃতিক নগরী, যার রয়েছে অনন্য ফরাসি-ব্রিটিশ মিশ্র ঐতিহ্য ও স্থাপত্য। এসব শহরের বাইরে বিস্তৃত রয়েছে নদী উপত্যকার কৃষিজমি ও ইউরোপীয় আবহমণ্ডলসম্পন্ন ছোট শহর, আটলান্টিক উপকূলের মনোরম মৎস্যগ্রাম, পাহাড়ে ম্যাপল গাছের বাগান ও স্কি রিসোর্ট, আর উত্তরাঞ্চলের অবারিত বন, হ্রদ ও টুন্ড্রা। |
| অন্টারিও কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ অন্টারিও ভৌগোলিকভাবে বিশাল, যেখানে বিনোদন ও কার্যকলাপের অন্তহীন সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ অন্টারিওতে, যেখানে অধিকাংশ মানুষ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম কেন্দ্রীভূত, রয়েছে টরন্টো শহর, কানাডার বৃহত্তম শহর। এটি বৈচিত্র্যময়, বহু-সাংস্কৃতিক এবং প্রাণবন্ত, যেখানে ১৪০টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন পাড়া রয়েছে। অটোয়া হলো কানাডার মনোমুগ্ধকর দ্বিভাষিক রাজধানী, যেখানে শিল্পকলা প্রদর্শনীশালা ও জাদুঘর রয়েছে যা দেশের অতীত ও বর্তমানকে তুলে ধরে। আরও দক্ষিণে রয়েছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত, আর উত্তরে মুস্কোকাসহ অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। উত্তর অন্টারিও তুলনামূলকভাবে জনবিরল, যেখানে বিস্তীর্ণ বনভূমি আছে, তবে এখানে খনিশিল্প ও কাঠশিল্পকেন্দ্রিক বহু শহরও রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যই অন্টারিওকে বহির্বিশ্বের চোখে "আদর্শ কানাডা" হিসেবে তুলে ধরে। |
| কানাডীয় প্রেইরি (আলবার্টা, ম্যানিটোবা, সাসকাচেওয়ান) অবারিত সমতলভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ কানাডীয় প্রেইরি বিশ্বে অন্যতম মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসস্থল। এ অঞ্চলে ভৌগোলিক বৈচিত্র্য প্রচুর, ম্যানিটোবা ও সাসকাচেওয়ানের ঢেউ খেলানো টিলা ও কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে আলবার্টার রকি পর্বতমালার ঘন বন ও অনন্য শিলা গঠন পর্যন্ত। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যান্ফ ও জ্যাসপারর মতো রিসোর্ট শহর। এ অঞ্চলটি কানাডার সবচেয়ে তরুণ ও দ্রুতবর্ধনশীল অংশগুলোর একটি। সহস্রাব্দের সূচনা থেকে ক্যালগারি, এডমন্টন, রেজাইনা, সাসকাটুন ও উইনিপেগ শহরে অসংখ্য উৎসব, জাদুঘর, কনসার্ট হল, দোকান ও রেস্তোরাঁ যুক্ত হয়েছে। |
| ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ভ্যাঙ্কুভার বন্দরনগরী ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রবেশদ্বার। এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে সামাজিকভাবে উদার ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় শহরগুলোর একটি, যেখানে বিশ্বমানের স্কি থেকে শুরু করে ন্যুড সৈকত পর্যন্ত সবকিছুই রয়েছে। ভ্যাঙ্কুভারের কাছেই রয়েছে প্রাদেশিক রাজধানী ভিক্টোরিয়া, যেখানে রয়েছে কর্মচঞ্চল ডাউনটাউন ও দৃষ্টিনন্দন আইনসভা প্রাঙ্গণ। এছাড়া ওকানাগান অঞ্চলে রয়েছে আঙ্গুরের বাগান, মনোরম পর্বতশ্রেণি ও রিসোর্ট। ভ্যাঙ্কুভার থেকে আরও দূরে বিস্তৃত অবারিত পাহাড়, হ্রদ ও প্রাকৃতিক বিস্ময়। এই প্রদেশেই কানাডার সবচেয়ে নাতিশীতোষ্ণ শীত পড়ে (যদিও প্রায়ই মেঘাচ্ছন্ন থাকে), বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে। তাই ভ্রমণার্থীদের মধ্যে যারা যারা শীত পছন্দ করেন না, তাদের কাছে এটি আকর্ষণীয়। |
| উত্তর কানাডা (নর্থওয়েস্ট টেরিটরিজ, নুনাভুট, ইউকন) কানাডার মোট ভূমির ৪০% জুড়ে থাকা উত্তরাঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর একটি। এখানকার বিশেষত্ব মূলত এর অনন্য প্রাণীকুল ও প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি। তবে মানব বসতিও আকর্ষণীয়, যেমন ডসন সিটি, যা এখনো ১৮৯৮ সালের স্বর্ণজ্বরকালীন চেহারা ধরে রেখেছে, এবং ইকালুইত, কানাডার নবীনতম আঞ্চলিক রাজধানী, যেখানে কঠোর উত্তরাঞ্চলীয় আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই অনন্য স্থাপত্যশৈলী রয়েছে। |
নগরসমূহ
[সম্পাদনা]
- 1 অটোয়া - কানাডার জাতীয় রাজধানী। এখানে জাতীয় সংসদ ভবন (পার্লামেন্ট হিল), জাতীয় গ্যালারির মতো বড় জাদুঘর, বাই ওয়ার্ড মার্কেটের মতো আধুনিক নগরাঞ্চল এবং দৃষ্টিনন্দন পুরনো স্থাপত্য রয়েছে।
- 2 ক্যালগারি - নিঃসন্দেহে একটি দ্রুত বর্ধনশীল শহর। ক্যালগারি একটি প্রধান আর্থিক কেন্দ্র হলেও পর্যটকদের জন্য রয়েছে জাদুঘর, শপিং, বিশ্বমানের ক্যালগারি চিড়িয়াখানা এবং ক্যালগারি স্ট্যাম্পিড (বিশ্বের বৃহত্তম রোডিওগুলির একটি)। রকি পর্বতমালা এখান থেকে খুব কাছেই।
- 3 হ্যালিফ্যাক্স, নোভা স্কোশিয়া - বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন্দরের আবাসস্থল। এখানে ইংরেজ ঔপনিবেশিক আমলের স্থাপত্য, সিটাডেল হিল দুর্গ, কানাডীয় মিউজিয়াম অফ দ্য আটলান্টিক এবং প্রাণবন্ত রাতের জীবন সবই কাছাকাছি।
- 4 মন্ট্রিয়ল - একসময় কানাডার বৃহত্তম মহানগর, এখন উত্তর আমেরিকার ফরাসিভাষী সংস্কৃতির কেন্দ্র। ইংরেজিতেও সহজে চলা যায়। এখানে রয়েছে কানাডার সেরা জাদুঘর, গ্যালারি, উৎসব, শপিং এলাকা (সেন্ট-ক্যাথেরিন ও সেন্ট-ডেনিস রাস্তা) এবং মনোরম মাউন্ট রয়্যাল। একে কানাডার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়।
- 5 কেবেক সিটি - ক্যুবেক প্রদেশের রাজধানী, ১৬০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। পুরনো শহরের সৌন্দর্য, বিশাল শীত উৎসব এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য যেমন শাতো ফ্রন্টেনাকের জন্য খ্যাত।
- 6 টরন্টো - কানাডার বৃহত্তম ও উত্তর আমেরিকার চতুর্থ বৃহত্তম শহর। এটি কানাডার গণমাধ্যম, বিনোদন, ব্যবসা ও অর্থনীতির রাজধানী। সিএন টাওয়ারসহ বিখ্যাত স্থাপত্য, জাদুঘর, থিয়েটার, ক্রীড়া ভেন্যু, শপিং ও বিনোদন এলাকা, সমুদ্রসৈকত ও পার্ক সবই রয়েছে।
- 7 ভ্যানকুভার - কানাডার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলির একটি, যেখানে কাঁচ ও ইস্পাতের উঁচু ভবন ও অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পাশাপাশি বিদ্যমান। এখানে একই দিনে স্কি ও সমুদ্রসৈকত উপভোগ করা যায়। ২০১০ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক এই শহরকে বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরগুলির একটি বলা হয়।
- 8 হোয়াইটহর্স - ইউকনের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর, আলাস্কা মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থান এবং উত্তর কানাডার বহিরঙ্গন কার্যকলাপের প্রবেশদ্বার।
- 9 উইনিপেগ - মহাদেশের প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত এই শহরে রয়েছে সমৃদ্ধ ফরাসি-কানাডীয় ও ফার্স্ট নেশন সংস্কৃতি, সুসংরক্ষিত ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক এলাকা, বিখ্যাত শিল্প ও সংস্কৃতি এবং প্রাণবন্ত দ্য ফর্কস এলাকা।
অন্যান্য গন্তব্য
[সম্পাদনা]
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার "কানাডা" অংশ এবং কানাডার জাতীয় উদ্যানসমূহের তালিকার কানাডার সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক আকর্ষণগুলির কিছু উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রদেশভিত্তিক সরকার কর্তৃক মালিকানাধীন ও পরিচালিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক এলাকা ‘‘প্রাদেশিক উদ্যানের’’ মধ্যেও পাওয়া যায়। কুইবেক সরকার তাদের প্রাদেশিক উদ্যানগুলোকে জাতীয় উদ্যান বলে ডাকে।
পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত বিশেষভাবে খ্যাতনামা স্থানগুলো হলো:
- বিশাল বন্যভূমি ও বিচ্ছিন্ন বসতিগুলোর জন্য পরিচিত উত্তর, বিশেষত 10 ডসন সিটি, যা ১৮৯০-এর দশকের ক্লনডাইক স্বর্ণ উন্মাদনার কেন্দ্র ছিল এবং সে সময়কার বহু ভবন আজও সংরক্ষিত
- ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লোয়ার মেইনল্যান্ড এবং এর মাঝের ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জের পাথুরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল, যেমন 11 দক্ষিণ গাল্ফ দ্বীপপুঞ্জ: আধুনিক ভ্যাঙ্কুভার থেকে স্বল্প সময়ের ফেরি যাত্রায় পৌঁছানো যায় এমন শান্তিপূর্ণ দ্বীপশ্রেণী
- ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অভ্যন্তরের শুষ্ক, রৌদ্রোজ্জ্বল উপত্যকাগুলো, বিশেষত 12 ওকানাগা, যেখানে রয়েছে গভীর, পরিষ্কার একটি হ্রদ, কানাডার সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মকাল, আর সেইসঙ্গে আবহাওয়া উপযোগী তাজা ফল ও ওয়াইন
- নাটকীয় রকি পর্বতমালার আলপাইন দৃশ্যাবলী, বিশেষত 13 ব্যানফ জাতীয় উদ্যান, যা কানাডার সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত জাতীয় উদ্যান এবং বিশ্ববিখ্যাত লেক লুইসের আবাসস্থল
- প্রেইরির (সমতলভূমি) বিস্তৃত আকাশ ও উন্মুক্ত পরিবেশ, যেমন 14 রাইটিং-অন-স্টোন প্রাদেশিক উদ্যান, যেখানে প্রাকৃতিক শিলা গঠন ও আদিবাসী শিলাচিত্র রয়েছে এবং এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
- উর্বর কৃষিজমি ও ঐতিহাসিক শহরসমৃদ্ধ গ্রেট লেকস ও সেন্ট লরেন্স নদী অঞ্চল, যেখানে প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ কানাডাবাসী বাস করে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য 15 নায়াগ্রা উপদ্বীপ, যা বিখ্যাত জলপ্রপাত, মধ্য কানাডার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ওয়াইন অঞ্চল এবং ১৮১২ সালের যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত বহু ঐতিহাসিক স্থানের জন্য পরিচিত
- বিশাল বোরিয়াল অরণ্যের দক্ষিণ প্রান্তজুড়ে বিস্তৃত কটেজ কান্ট্রি, যেখানে বহু ক্যাম্পিং, নৌবিহার এবং হ্রদের ধারে ‘‘কটেজ’’ ও ‘‘শ্যালেট’’ (ছুটির বাড়ি) ভাড়ার জন্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে 16 আলগনকুইন পার্ক বিশেষভাবে বিখ্যাত, যা কানাডার সবচেয়ে প্রাচীন ও পরিচিত প্রাদেশিক উদ্যান এবং টরন্টো ও অটোয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত
- আটলান্টিক উপকূলের ঢেউ খেলানো অ্যাপালাচিয়ান পর্বতমালা ও মনোরম মৎস্যজীবী গ্রামসমূহ, যেমন 17 সাগেনে–সেন্ট লরেন্স সামুদ্রিক উদ্যান, যা রকির পূর্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় উদ্যান এবং বেলুগা তিমি দেখার জন্য বিখ্যাত
জানুন
[সম্পাদনা]কানাডা বিশাল বিস্তৃতির দেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যে কানাডা তার দক্ষিণ প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভিন্নতাও রয়েছে, যা কানাডীয়রা দ্রুতই তুলে ধরতে ভালোবাসেন। যেমন, কানাডার প্রায় ২০% মানুষ (মূলত ক্যুবেকে, তবে কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়) প্রথম ভাষা হিসেবে ফরাসি বলেন। আবার, কানাডার আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের সমান (বিভিন্ন হ্রদ মিলিয়ে ধরলে আরও বড়), কিন্তু এর জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের এক-দশমাংশের মতো, যাদের বেশিরভাগই ইউ.এস.–কানাডা সীমান্ত থেকে ২০০ কিমি (১২০ মা) কিমির মধ্যে বসবাস করে। এর উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলো খুবই অল্প জনবসতিপূর্ণ বা প্রায় অনাবাসিক বনাঞ্চল।
আদিবাসী সাংস্কৃতিক প্রতীক কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি দৃশ্যমান, আর ভ্রমণকারীদের জন্য আদিবাসী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কানাডার মূলধারার রাজনৈতিক আলোচনায় আদিবাসী ইস্যুগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।
কানাডা নিয়মিতভাবেই বিশ্বের ধনী, দুর্নীতিমুক্ত এবং সর্বাধিক বসবাসযোগ্য দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে থাকে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: উত্তর আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতি, আবিষ্কারের যুগ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ন্যাপোলিয়নিক যুদ্ধসমূহ, ওল্ড ওয়েস্ট, উত্তর আমেরিকার পুরোনো শহরসমূহ
উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে আলাস্কা হয়ে যে প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা আমেরিকায় এসেছিল, ধারণা করা হয় প্রধান ঢেউটি এসেছিল প্রায় ১৫,০০০ বছর আগে। তবে প্রথম অভিবাসীরা হয়তো এসেছিল প্রায় ৩০,০০০ বছর আগে আর সর্বশেষ দলটি প্রায় ৫,০০০ বছর আগে। প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী এরা উপকূল বরাবর দক্ষিণমুখী অভিবাসন করেছিল এবং পরবর্তীতে কিছু দল পূর্বদিকে ও উত্তরদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই তত্ত্বে সবচেয়ে পুরোনো সংস্কৃতি হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের উপজাতি আর সবচেয়ে নতুন হলো আর্কটিক সংস্কৃতি।
ভবিষ্যৎ কানাডার ভূখণ্ড জুড়ে আদিবাসী জাতিগুলো পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন জীবনধারা গড়ে তোলে। প্রশান্ত উপকূলীয় জনগোষ্ঠী স্যামন মাছ ধরার ওপর নির্ভর করত এবং হাইডা গুই বা ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে বড় বাড়ি ও টোটেম খুঁটি নির্মাণ করত। মহাপ্রান্তরে (গ্রেট প্লেইনস) বাইসন ও প্রংহর্নদের খোঁয়াড়ে তাড়িয়ে আনা হতো বা পাহাড়ের খাঁজ থেকে ফেলা হতো, যেমন আলবার্টার ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হেড স্ম্যাশড ইন বাইসন জাম্পে। গ্রেট লেকস অঞ্চলে, সান্তে-মারি আমাং দ্য হিউরনসের মতো প্রাচীরঘেরা কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলো শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের সঙ্গে কৃষিকাজও চালাত। আটলান্টিক উপকূলে শিকার ও মাছধরাই প্রধান ছিল। রকি পর্বতমালা এবং সুবিশাল বোরিয়াল অরণ্যে ছোট ছোট যাযাবর দল শিকার ও ফাঁদ পাতার ওপর নির্ভরশীল ছিল, আর মানব জনসংখ্যা ছিল খুবই কম ও ছড়ানো। আর্কটিকে ইনুইটরা স্থলে ক্যারিবু শিকার ও জমাট সমুদ্রে সীল শিকারের ওপর নির্ভর করত।
কানাডায় ইউরোপীয়দের প্রথম নিশ্চিত আগমন ঘটে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের কিছু পর: ভাইকিং নেতা লেইফ এরিকসন অবশ্যই নিউফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন। কিছু বিতর্কিত প্রমাণ আছে যে তারা সেন্ট লরেন্স নদী ধরে দূরে উত্তর আমেরিকার উপকূল বরাবর দক্ষিণেও গিয়েছিল। পরবর্তী নিশ্চিত দল ছিল পর্তুগিজরা, যারা ১৫০০-এর দশকের শুরুর দিকে আটলান্টিক উপকূলে মাছ ধরার ঘাঁটি তৈরি করেছিল। তবে কোনোটিই স্থায়ী বসতি স্থাপন করেনি। নিউফাউন্ডল্যান্ডে ভাইকিংদের বসতি এল’আঁস ও মেদো কয়েক বছরের মধ্যে পরিত্যক্ত হয় এবং ১৯৬০ সালে পুনরাবিষ্কৃত হয়। আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দলের কানাডায় আগমনের দাবি আছে, যেমন ৬ষ্ঠ শতকে আইরিশ সন্ন্যাসী সেন্ট ব্রেন্ডন।
"আবিষ্কারের যুগে" প্রাথমিক ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা এশিয়ায় যাওয়ার জলপথ বা সহজে আহরণযোগ্য সোনা-রূপার খনি খুঁজছিল, কিন্তু তা পায়নি। তবে তারা এমন সম্পদ খুঁজে পায় যা পরবর্তী শতকে অসংখ্য বসতিকে টানবে: মাছ, লোম, বন আর কৃষিজমি। জন ক্যাবট, ইংরেজদের হয়ে কাজ করা একজন ইতালীয়, প্রায় ১৪৯৭ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন বলে ধারণা করা হয়, তবে দলিল স্পষ্ট নয়। ফরাসি অভিযাত্রী জাক কার্তিয়ে ১৫৩৪ সালে গ্যাস্পে উপদ্বীপে অবতরণ করে তা ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রাঁসিসের জন্য দাবি করেন। ইংরেজ অভিযাত্রী হামফ্রি গিলবার্ট ১৫৮৩ সালে সেন্ট জন’সে অবতরণ করে তা রানি প্রথম এলিজাবেথের জন্য দাবি করেন, যা উত্তর আমেরিকায় প্রথম ইংরেজ উপনিবেশ ছিল।
এসব বসতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্যুবেক সিটি, যা ১৬০৮ সালে স্যামুয়েল দ্য শাঁপ্লা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরবর্তীতে নিউ ফ্রান্সের রাজধানী হয়। এখান থেকে ফরাসিরা পূর্ব কানাডার বড় অংশ দখল করে। বর্তমান আটলান্টিক কানাডা ছিল আকাদিয়া, আর বর্তমান কুইবেক ও অন্টারিও ছিল কানাডা। ফরাসি বসতি স্থাপনকারী খুবই সীমিত হওয়ায়, ফরাসি কর্মকর্তারা স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে জোট বাঁধে অন্য ইউরোপীয় শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী আদিবাসী জাতি হাউডেনোসনি (যাদের ফরাসিরা ইরোকোয়ি বলত) সঙ্গে শত্রুতা গড়ে ওঠে এবং এক শতাব্দী ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলে।
ডাচ ও হাউডেনোসনির পর ফরাসিদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয় ইংল্যান্ড (পরে গ্রেট ব্রিটেন)। কানাডা ও আকাদিয়া নিয়ে অসংখ্য যুদ্ধ হয়। এক সংঘর্ষের পর ব্রিটিশ গভর্নর ফরাসিভাষী আকাদীয়দের বহিষ্কার করেন। অনেকে লুইজিয়ানায় চলে যায় এবং আকাদিয়ানা অঞ্চলে বসতি গড়ে। কিছু আকাদীয় পরবর্তীতে নিউ ব্রান্সউইকের আকাদিয়ান কোস্টে ফিরে আসে, আর যুক্তরাষ্ট্রে যারা রয়ে যায় তারা আজ "কাজুন" নামে পরিচিত, যা ফরাসি আকাদিয়ান শব্দ থেকে ইংরেজিতে বিকৃত হয়েছে।
কানাডার (এবং বিশ্বের) ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল সেভেন ইয়ার্স ওয়ার। এই যুদ্ধে নিউ ফ্রান্সের অবসান ঘটে এবং সমগ্র উত্তর আমেরিকায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল প্লেইন্স অফ আব্রাহাম, যা আজ একটি প্রধান পর্যটনস্থল। ১৭৬৩ সালে যুদ্ধ শেষে ফরাসিরা উত্তর আমেরিকার বেশিরভাগ উপনিবেশ ব্রিটিশদের কাছে ছেড়ে দেয়, আর ব্রিটিশরা ফরাসি ভাষা ও আইন ব্যবস্থার অব্যাহত ব্যবহার অনুমোদন করে। এর ফলে আজও কুইবেক প্রদেশে ফরাসি ভাষা প্রধান।
স্বল্প সময়ের জন্য মনে হয়েছিল, প্রাক্তন ফরাসি ভূখণ্ডগুলো ব্রিটিশ তেরো উপনিবেশে একীভূত হবে। কিন্তু আমেরিকান বিপ্লব আরেকটি বড় মোড় নেয়। ১৭৭৫ সালে বিপ্লবীরা কানাডায় আক্রমণ চালায়, কিন্তু ফরাসিভাষী জনগণের সমর্থন না পেয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ে এবং ব্যর্থ হয়। এরপর প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশগুলো হাস্যকরভাবে ব্রিটিশ ঘাঁটি হয়ে ওঠে, যখন তাদের মূল উপনিবেশগুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছিল।
আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ থাকতে চাওয়া বহু লোক কানাডায় চলে আসে। এরা ছিল ইউনাইটেড এম্পায়ার লয়্যালিস্ট (বা শুধু লয়্যালিস্ট)। এদের আগমনের ফলে ইংরেজিভাষী বসতির সংখ্যা বাড়ে এবং ইংরেজি আইন ও ভাষা চালুর জন্য নতুন উপনিবেশ গড়ে ওঠে, যেমন ১৭৮৪ সালে নিউ ব্রান্সউইক এবং ১৭৯১ সালে আপার কানাডা (বর্তমান অন্টারিও)। ফলে শুধু লোয়ার কানাডা (বর্তমান কুইবেক) ফরাসিভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ ও ফরাসি আইনভিত্তিক থাকে।
কিছু লয়্যালিস্ট ছিল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তাদের অনেকেই ছিল প্রাক্তন দাস, যারা ব্রিটিশদের সেবার বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছিল, অথবা মার্কিন সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট মালিকদের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে কিছু লোক বা তাদের বংশধর পরবর্তীতে ইংল্যান্ড বা বর্তমান সিয়েরা লিওনে চলে যায়। তবে এখনও আফ্রো-কানাডিয়ানরা আছেন যারা নিজেদের বংশপরিচয় কালো লয়্যালিস্টদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন।
১৮১২-১৮১৫ সালে ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–কানাডা সীমান্ত পেরিয়ে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ চালানো হয়েছিল। দুই পক্ষের কিছু উগ্রপন্থীর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ছিল- পুরোপুরি ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকা থেকে উৎখাত করে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা, অথবা কয়েক দশক আগের আমেরিকান বিপ্লবের ফল উল্টে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা। কোনো পক্ষই এসব লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি যেতে পারেনি এবং যুদ্ধ শেষে এসব ধারণা সম্পূর্ণভাবে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। আমেরিকানরা এই যুদ্ধকে নিজেদের বিজয় মনে করে, কারণ তারা স্বাধীনতা বজায় রাখতে পেরেছিল। অন্যদিকে কানাডীয়রা এটিকে ব্রিটিশ-কানাডীয় সামরিক বিজয় হিসেবে দেখে, কারণ তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় আকারের দখলদারিত্ব প্রতিহত করতে পেরেছিল, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ নায়াগ্রা উপদ্বীপে। এটি ছিল আরেকটি বড় মোড়, যেখানে কানাডা সহজেই যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারত, কিন্তু তা হয়নি।
যুদ্ধের পর, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ থেকে ব্যাপক অভিবাসন শুরু হয়। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল সাবেক সৈনিক, বিশেষত স্কটরা (দেখুন প্রেস্কট-রাসেল, অন্টারিও অথবা নোভা স্কোশিয়ার কেপ ব্রেটন দ্বীপ)। এছাড়াও আলু দুর্ভিক্ষের সময় থেকে প্রচুর আইরিশরা কানাডায় আসে (বিশেষত দেখুন গ্রস ইল, কুইবেক)। এখনও অনেক ইংরেজিভাষী কানাডীয় গর্বের সঙ্গে নিজেদের কেল্টিক শিকড়ের কথা বলে থাকে। এর উদাহরণ দেখা যায় কেপ ব্রেটন দ্বীপের হাইল্যান্ড ভিলেজ (বাইল নান গেইল), আয়োনা, অথবা নিউ ব্রান্সউইকের মিরামিশি শহরে কানাডার আইরিশ উৎসবে।
আটলান্টিক দাস বাণিজ্যের সময় কানাডায় অল্পসংখ্যক আফ্রিকান দাস আনা হয়েছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ১৮৩৪ সালে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশে তা বৈধ থাকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত, আমেরিকান গৃহযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ১৮৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিউজিটিভ স্লেভ অ্যাক্ট প্রবর্তিত হয়, যা ছিল একটি ফেডারেল আইন। এর ফলে কৃষ্ণাঙ্গদের দাস শিকারিদের হাতে আটক করে বলপূর্বক দক্ষিণে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া বৈধ হয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলপথ গড়ে ওঠে এবং অসংখ্য গোপন পথ ধরে মানুষ কানাডায় পালিয়ে আসত স্বাধীনতার খোঁজে। এর প্রধান কেন্দ্র ছিল অন্টারিওর নায়াগ্রা উপদ্বীপ অঞ্চল এবং হ্যালিফ্যাক্স, নোভা স্কোশিয়া (যেমন অন্টারিওর লেকশোর শহরে জন ফ্রিম্যান ওয়ালস ঐতিহাসিক স্থল)। আন্ডারগ্রাউন্ড রেলপথের মাধ্যমে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের বংশধরেরা এখনও কানাডায় বসবাস করে।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গ্রেট লেকসের উপকূল ও সেন্ট লরেন্স উপত্যকায় কৃষি বসতিতে ভরে উঠলেও ভবিষ্যৎ কানাডার অধিকাংশ অঞ্চল তখনও প্রধানত আদিবাসীদের বসতভূমি ছিল। ইউরোপীয় ও ইউরো-কানাডীয়দের সঙ্গে তাদের মূল যোগাযোগ ছিল লোম বাণিজ্যের মাধ্যমে। হাডসন’স বে কোম্পানি (এইচবিসি) ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী নর্থ ওয়েস্ট কোম্পানি আদিবাসীদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক বিভার বা ভোঁদড়ের চামড়া ও অন্যান্য লোম সংগ্রহ করত। এর বিনিময়ে তারা দিত কম্বল, ফাঁদ, ছুরি, হাঁড়ি ইত্যাদি প্রস্তুত পণ্য। এ দুই কোম্পানি শত শত হালকা সুরক্ষিত বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছিল, যেগুলোকে জাঁকজমক করে "দুর্গ" বলা হতো। আজও কানাডা জুড়ে শত শত ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যা লোম বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত (যেমন আলবার্টার ফোর্ট জর্জ ও বাকিংহ্যাম হাউস সাইট, কিংবা ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ফোর্ট সেন্ট জেমস ন্যাশনাল হিস্টরিক সাইট)।
১৮৪৯ সালে ব্রিটিশরা কানাডার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করে, যখন ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপকে কলোনি ঘোষণা করা হয় এবং রাজধানী হিসেবে ফোর্ট ভিক্টোরিয়া নির্ধারণ করা হয়। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া কলোনি গঠিত হয় এবং ১৮৬৬ সালে উভয়কে একত্র করা হয়। এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপনিবেশগুলো শুরু হয়েছিল লোম বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে, কিন্তু দ্রুতই ইংরেজিভাষী স্বর্ণসন্ধানীদের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে ওঠে। এই প্রবণতা পরে উনবিংশ শতাব্দীর শেষে ইউকনে আবারও দেখা যায়, যা ছিল যুদ্ধপূর্ব বিশ্বের শেষ বড় স্বর্ণ উন্মাদনা।
অন্টারিও ও কুইবেক, নোভা স্কশিয়া এবং নিউ ব্রান্সউইকের উপনিবেশিক প্রদেশগুলো ১ জুলাই ১৮৬৭ সালে একত্রিত হয়ে স্বশাসিত কানাডা ডমিনিয়ন গঠন করে। এই দিনটি প্রতি বছর প্যারেড ও আতশবাজির মাধ্যমে কানাডা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এর বহু আগেই, ১৬৭০ সালে ব্রিটিশ ক্রাউন হাডসন’স বে কোম্পানিকে বিশাল এক ভূখণ্ড উপহার দেয়, যেটিকে রুপার্ট’স ল্যান্ড বলা হতো। এতে হাডসন বে অববাহিকার সব নদী অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কানাডার বড় অংশ ও কয়েকটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৮৭০ সালে নবগঠিত ডমিনিয়ন এই ভূমি কিনে নেয়, ফলে কানাডার ভূখণ্ড বহুগুণ বেড়ে যায়। এতে অন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশের আকার দ্বিগুণ হয় এবং নতুন প্রদেশ ম্যানিটোবা (১৮৭০), সাসকাচুয়ান ও আলবার্টা (১৯০৫) গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও উপনিবেশ কানাডার সঙ্গে যুক্ত হয়-ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ১৮৭১ সালে, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড ১৮৭৩ সালে এবং সর্বশেষে ডমিনিয়ন অব নিউফাউন্ডল্যান্ড ১৯৪৯ সালে। কানাডার সর্বশেষ অঞ্চল নুনাভুত ১৯৯৯ সালে নর্থওয়েস্ট টেরিটরিজের অংশ থেকে আলাদা করে গঠন করা হয়।
ব্রিটেন থেকে কানাডার স্বাধীনতা ধাপে ধাপে প্রায় এক শতক ধরে অর্জিত হয়েছিল, তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আজও অটুট। ১৮৬৭ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ব্রিটিশ নর্থ আমেরিকা অ্যাক্ট কানাডার জন্ম দেয় এবং ব্রিটিশ সম্রাট এখনও কানাডার রাজা বা রানি। দেশে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন গভর্নর জেনারেল। ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত সব গভর্নর জেনারেল ছিলেন ব্রিটিশ অভিজাত, পরে তাঁরা সবাই কানাডিয়ান হন। ১৯৩১ সালের পরিবর্তনের ফলে কানাডা যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে অনেকটাই স্বাধীন হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কানাডীয় রেজিমেন্টগুলো ব্রিটিশ জেনারেলদের অধীনে ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আলাদা কানাডীয় সেনাবাহিনী নিজস্ব জেনারেলের নেতৃত্বে গঠিত হয়। কানাডা ও নিউফাউন্ডল্যান্ড দুই দেশই উভয় যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এগুলো অটোয়ার কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়ামসহ দেশের বহু সামরিক জাদুঘরে দেখা যায়। ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্য কানাডা অ্যাক্ট ১৯৮২ পাস করে এবং একই সময়ে কানাডা নিজস্ব কনস্টিটিউশন অ্যাক্ট, ১৯৮২ প্রণয়ন করে। এর ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অবশিষ্ট আইন প্রণয়নের ক্ষমতা বাতিল হয় এবং কানাডার সংবিধানে "চার্টার অব রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস" যুক্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক জটিল। সামগ্রিকভাবে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পর্যটন ব্যাপক। বহু কানাডীয় কর্মসংস্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়-শুধু হলিউডেই হাজার হাজার। একইভাবে কিছু আমেরিকানও কানাডায় আসে। আমেরিকান বিপ্লবের সময় ও পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদী লয়্যালিস্টরা যেমন এসেছিল, তেমনি গৃহযুদ্ধের সময় আন্ডারগ্রাউন্ড রেলপথের যাত্রীরা, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় খসড়া এড়ানো আমেরিকানরাও এসেছে। ১৮১৪ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি, এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা গর্ব করত যে তাদের সীমানা ছিল "বিশ্বের দীর্ঘতম অনিরাপদ সীমান্ত"। তবে মাঝেমধ্যে উত্তেজনা ও হুমকি তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৪০-এর দশকে মার্কিন নির্বাচনে "ফিফটি-ফোর-ফোর্টি অর ফাইট" স্লোগান ব্যবহার করে বর্তমান ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রায় অর্ধেক দাবি করা হয়েছিল। পরে সীমান্ত ৪৯° উত্তর অক্ষাংশে নির্ধারণ করা হয়। দুই দেশ একসঙ্গে বহু যুদ্ধে মিত্র হয়েছিল-প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ার যুদ্ধ, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে। তবে কানাডা ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে অংশ নেয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২৪ সালের পুনর্নির্বাচনের পর তাঁর বক্তব্য ও হুমকি ২০২৫ সালে দুই দেশের সম্পর্কে বৈরিতা সৃষ্টি করে।
কানাডা কখনও কখনও মার্কিন ঘটনাবলির সুযোগও নিয়েছে। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় কানাডা উত্তরপক্ষকে সরঞ্জাম বিক্রি করেছিল এবং মার্কিন নিষিদ্ধকরণের সময় কানাডাই ছিল মদ চোরা পাচারের প্রধান উৎস।
ট্রান্সআটলান্টিক বিমান চলাচলের ইতিহাসেও কানাডা, বিশেষত নিউফাউন্ডল্যান্ড, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গ্যান্ডার উত্তর আমেরিকার অন্যতম নিকটতম স্থান যেখানে সারা বছর কুয়াশা-মুক্ত বিমানবন্দর তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। ফলে এটি আটলান্টিক অতিক্রমকারী বিমানের ঘনঘন জ্বালানি ভরার স্থান হয়ে ওঠে, যতদিন না বিমানগুলো পর্যাপ্ত পাল্লা অর্জন করে। শীতল যুদ্ধের সময়ও মাঝে মাঝে এই রিফুয়েলিং স্টপে পালিয়ে আসা ঘটত। ইউরোপীয় সমতুল্য শ্যানন এখনও আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হলেও গ্যান্ডারের গুরুত্ব অনেক কমে গেছে। তবে ৯/১১-র সময় মার্কিন আকাশসীমা বন্ধ হয়ে গেলে বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেখানে নামানো হয় এবং স্থানীয়রা আটকে পড়া যাত্রীদের আতিথ্য দেয়। এই ঘটনা একটি মর্মান্তিক দিনে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিল।
কানাডা জাতিগত বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। ১৯৬৭ সালে কানাডা তার অভিবাসন নীতি সংস্কার করে, যেখানে ইউরোপীয়দের প্রতি আগের বিশেষ সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে কানাডা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অভিবাসী গন্তব্যে পরিণত হয়। অন্য দেশগুলো যেখানে অভিবাসীর সংখ্যা সীমিত রাখার চেষ্টা করে, কানাডা সেখানে প্রতি বছর অন্তত ১% জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এর ফলে বর্তমান কানাডীয়দের অধিকাংশই, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে, হয় বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছে (জাতীয় গড়ে প্রায় এক-চতুর্থাংশ, টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারে আরও বেশি) অথবা বিদেশে জন্ম নেওয়া অভিভাবকের সন্তান। এই নীতি সাধারণভাবে খুবই জনপ্রিয়, যদিও কিছুটা অভিবাসনবিরোধী মনোভাব রয়েছে, তা সংখ্যায় স্পষ্টতই সংখ্যালঘু।
রাজনীতি
[সম্পাদনা]কানাডার একটি ফেডারেল শাসনব্যবস্থা রয়েছে, যা দশটি প্রদেশ এবং তিনটি ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত।
কানাডা হলো ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনস্টার ঐতিহ্যের অধীনে একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস কানাডারও রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধান। তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ফেডারেল স্তরে একজন নিযুক্ত গভর্নর জেনারেল এবং প্রতিটি প্রদেশে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর থাকেন। রাজা এবং তার প্রতিনিধিদের ভূমিকা মূলত আনুষ্ঠানিক।
কানাডার সংসদ জাতীয় আইনসভা। এটি নির্বাচিত হাউস অব কমন্স এবং সিনেট নিয়ে গঠিত। সিনেটের সদস্যদের গভর্নর জেনারেল প্রধানমন্ত্রী পরামর্শে নিয়োগ দেন। হাউস অব কমন্সে সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রতি চার বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগে নির্বাচন আহ্বান করতে পারেন, অথবা সংসদে আস্থা ভোটে সরকার হেরে গেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
কার্যনির্বাহী ক্ষমতা মন্ত্রিসভা (সরকার নামেও পরিচিত) প্রয়োগ করে। এতে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা থাকেন। প্রধানমন্ত্রীকে গভর্নর জেনারেল নিয়োগ দেন, তবে তাকে অবশ্যই হাউস অব কমন্সের সমর্থন পেতে হয়। তাই প্রায় সবসময়ই প্রধানমন্ত্রী হাউস অব কমন্সের বৃহত্তম দলের নেতা হন। অন্যান্য মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী পরামর্শে গভর্নর জেনারেল নিয়োগ দেন, এবং তারা সাধারণত হাউস অব কমন্স থেকে আসেন, তবে মাঝে মাঝে সিনেট থেকেও মন্ত্রী নেওয়া হয়।
বিচার বিভাগ আদালত নিয়ে গঠিত, যার শীর্ষে রয়েছে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৪৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রিভি কাউন্সিলের বিচার বিভাগীয় কমিটির পরিবর্তে এটি সর্বোচ্চ আপিল আদালতের ভূমিকা নিতে শুরু করে।
প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব সরকার ও আইনসভা রয়েছে, যা একই ব্যবস্থার ভিত্তিতে চলে তবে সিনেট ছাড়া। প্রাদেশিক সরকারের প্রধান হিসেবে প্রিমিয়ার দায়িত্ব পালন করেন। কানাডার সংবিধান প্রাদেশিক এখতিয়ারের কিছু ক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন-প্রতিটি প্রদেশ নিজস্ব মদ্যপানের বয়সসীমা, ন্যূনতম মজুরি, বিক্রয়কর, শ্রমবিধি নির্ধারণ করে এবং নিজস্ব সড়ক, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে।
ক্যুবেকে দু’বার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে কানাডা থেকে আলাদা হওয়ার বিষয়ে। প্রথমটি হয় ১৯৮০ সালে, যেখানে প্রায় ৬০-৪০ অনুপাতে ‘‘না’’ ভোট জেতে। দ্বিতীয়বার হয় ১৯৯৫ সালে, যেখানে খুব সামান্য ব্যবধানে ‘‘না’’ ভোট জেতে (৫০.৫৮% বনাম ৪৯.৪২%)। বর্তমানে ক্যুবেক বিচ্ছিন্নতাবাদ বড় কোনো ইস্যু নয়, তবে মাঝে মাঝে আলোচনায় উঠে আসে। অন্য প্রদেশগুলির-বিশেষত পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং কখনো কখনো আটলান্টিক কানাডার-ক্ষোভও শোনা যায় যে তারা ফেডারেল নীতিতে উপেক্ষিত।
২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ফেডারেল সংসদে পাঁচটি দল রয়েছে: মধ্য-বামপন্থী লিবারেল পার্টি, মধ্য-ডান থেকে ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি, বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ব্লক কেবেকোয়া (বিকিউ) যা কেবেককে কানাডা থেকে স্বাধীন করার পক্ষে একটি আঞ্চলিক দল, এবং পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি। সংখ্যালঘু সরকার মোটামুটি সাধারণ হলেও জোট সরকার কার্যত নেই বললেই চলে। শুধু লিবারেল ও কনজারভেটিভ (বা তার পূর্বসূরি দলগুলি) সরকার গঠন করেছে।
যদিও কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো ‘‘লাল রাজ্য’’ ও ‘‘নীল রাজ্য’’ নেই, তবুও নির্দিষ্ট প্রদেশে নির্দিষ্ট দলের প্রতি স্থিতিশীল সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। যেমন, কনজারভেটিভ পার্টি প্রায় সবসময়ই আলবার্টা ও সাসকাচেওয়ান প্রেইরি প্রদেশে ভোট ও আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। আটলান্টিক প্রদেশ ও উত্তরাঞ্চলীয় ভূখণ্ড সাধারণত (কিন্তু সবসময় নয়) লিবারেল পার্টির দিকে ঝোঁকে। অন্টারিও ও কেবেক সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক প্রদেশ, আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রায়ই তিনটি বড় দল-কনজারভেটিভ, নিউ ডেমোক্র্যাটস ও লিবারেল-সমানভাবে বিভক্ত থাকে।
সার্বিকভাবে কানাডার রাজনীতি বাস্তবধর্মী ও মধ্যপন্থী। চরমপন্থা কখনো বড় শক্তি হয়ে ওঠেনি। অতীতের ইতিহাসে চরম বাম, চরম ডান বা অন্যান্য উগ্রপন্থী দল খুবই খারাপ ফলাফল করেছে।
সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]দেশের ভেতরে কানাডা নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষাগতভাবে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতা করতে যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। এটি একটি কঠিন কাজ, কারণ ভাষা, সংস্কৃতি, এমনকি ইতিহাসও দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের ‘‘মেল্টিং পট’’ বা ‘‘গলনপাত্র’’ হিসেবে কল্পনা করত (যা এখন কম ব্যবহার হয়), সেখানে কানাডা নিজেদের ‘‘মোজাইক’’ বা সংস্কৃতি ও জনগণের রঙিন সমাহার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে বেশি পছন্দ করে। কানাডাবাসীরা প্রতিদিন ভিন্ন জাতিগত পটভূমির মানুষের সঙ্গে বসবাস ও মেলামেশায় অভ্যস্ত, আর সাধারণত প্রকাশ্যে যোগাযোগ করলে তারা যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হয়।
কানাডার বহুসাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে টরন্টোতে এবং ভ্যাঙ্কুভারে, যেখানে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার জন্ম কানাডার বাইরে। দেশটি মূলত নগরভিত্তিক, এবং এতে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বসবাস (যদিও গ্রামীণ এলাকায় তুলনামূলকভাবে কম)।
প্রতিবেশী দেশগুলির মতোই এখানে মার্কিন ও কানাডীয়দের মধ্যে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কানাডায় বেশি প্রকাশ পায়। তাই আপনি যদি স্পষ্টত একজন মার্কিন ভ্রমণকারী হন, তাহলে কিছু কানাডীয় এমন মন্তব্য করতে পারেন যা আপনার কাছে আপত্তিকর মনে হতে পারে। তবে, আপনি যদি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেতিবাচকভাবে তুলনা না করেন, তাহলে আপনার কানে সবচেয়ে খারাপ শোনার সম্ভাবনা হলো কিছু নিরীহ রসিকতা।
সময় অঞ্চল
[সম্পাদনা]
কানাডীয় স্যার স্যান্ডফোর্ড ফ্লেমিং ১৮৭৬ সালে পুরো বিশ্বের জন্য সময় অঞ্চল প্রস্তাব করেন। মহাদেশীয় দেশ হিসেবে কানাডা উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত একাধিক অঞ্চলে বিভক্ত।
- ইউটিসি-৮ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সময় (অধিকাংশ ব্রিটিশ কলম্বিয়া)
- ইউটিসি-৭ মাউন্টেন সময় (আলবার্টা, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, ইউকন, নুনাভুতের অংশ, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার অংশ)
- ইউটিসি-৬ সেন্ট্রাল সময় (সাসকাচোয়ান, ম্যানিটোবা, উত্তর-পশ্চিম অন্টারিওর অংশ, নুনাভুতের অংশ)
- ইউটিসি-৫ ইস্টার্ন সময় (অন্টারিও, অধিকাংশ কেবেক, নুনাভুতের অংশ)
- ইউটিসি-৪ আটলান্টিক সময় (নোভা স্কটিয়া, নিউ ব্রান্সউইক, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড, ল্যাব্রাডরের অধিকাংশ এবং পূর্ব কেবেক)
- ইউটিসি-৩.৫ নিউফাউন্ডল্যান্ড সময় (নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং বেল আইল প্রণালীর কয়েকটি ল্যাব্রাডর পয়েন্ট)
ডেলাইট সেভিং টাইম (গ্রীষ্মকালীন সময়) প্রায় সারা দেশেই পালিত হয় (সাসকাচোয়ান, ইউকন, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও কেবেকের পূর্বাংশ ও অন্টারিওর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু ছোট এলাকা বাদে)। এটি মার্চ মাসের দ্বিতীয় রবিবার রাত ২টা থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম রবিবার রাত ২টা পর্যন্ত চলে। এই সময়কালে, উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ কলম্বিয়া জিএমটি -৭ ব্যবহার করে, আর আলবার্টা জিএমটি -৬ ব্যবহার করে।
ইংরেজিভাষী কানাডায় সাধারণত ১২-ঘণ্টা সময়পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, তবে ফরাসিভাষী কানাডায় ২৪-ঘণ্টা সময়পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাজ্যের মতো ট্রেন ও বিমান সূচির ক্ষেত্রে ইংরেজিতেও প্রায়শই ২৪-ঘণ্টা সময়পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
পরিমাপের একক
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: মেট্রিক ও ইম্পেরিয়াল এককের তুলনা
কানাডার সরকারি পরিমাপ পদ্ধতি হলো মেট্রিক, তবে অনেক ইংরেজিভাষী কানাডীয় এখনো কথোপকথনে নানা বিষয়ে ইম্পেরিয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করে। ইম্পেরিয়াল পদ্ধতির অন্যতম সাধারণ ব্যবহার হলো ছোট দূরত্ব ও উচ্চতা মাপার ক্ষেত্রে ফুট ও ইঞ্চি ব্যবহার, আর ওজন মাপার জন্য পাউন্ড ব্যবহার-যা তরুণ কানাডীয় ও ফরাসিভাষী কানাডীয়দের মধ্যেও প্রচলিত। তবে সরকারি নথিপত্রে সবকিছু মেট্রিক এককে লিপিবদ্ধ থাকে। সুপারমার্কেটে ফল, সবজি ও মাংসের দাম প্রায়শই দুই ধরনের এককেই প্রদর্শিত হয়, তবে মেট্রিক এককে লেখা দামটি বেশি স্পষ্টভাবে (বড় হরফে, গাঢ় অক্ষরে অথবা কেন্দ্রে) দেখানো হয়। তবে রসিদে শুধু মেট্রিক এককেই দাম লেখা থাকে। কুইবেক ও অন্যান্য ফরাসিভাষী অঞ্চলে ইম্পেরিয়াল একক ফরাসি নামে পরিচিত। সেখানে ফুটকে বলা হয় পিয়েদ , ইঞ্চিকে বলা হয় পুস এবং পাউন্ডকে বলা হয় লিভর। বয়স্ক কানাডীয়রা এখনো অনানুষ্ঠানিক দূরত্ব বোঝাতে ‘মাইল’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন। ফারেনহাইট সাধারণত শুধু সুইমিং পুল, হট টব ও ওভেনের তাপমাত্রা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাতাসের তাপমাত্রা-বাড়ির ভেতর বা বাইরে-প্রায় পুরোপুরি সেলসিয়াসে প্রকাশ করা হয়। সব আবহাওয়ার পূর্বাভাস °সে, তুষারের সেন্টিমিটার, বৃষ্টির মিলিমিটার এবং বাতাসের গতি কিমি/ঘণ্টায় দেওয়া হয়। একইভাবে সব সড়কচিহ্ন মেট্রিক এককে থাকে, অর্থাৎ গতিসীমা কিমি/ঘণ্টায় আর দূরত্ব কিমি-তে দেওয়া হয়। জ্বালানি বিক্রি হয় লিটারে। কানাডায় “গ্যালন”, “কোয়ার্ট”, “পাইন্ট” ও “ফ্লুইড আউন্স” বলতে সাধারণত ব্রিটিশ একক বোঝানো হয়, আমেরিকান একক নয়।
আবহাওয়া
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: উত্তর আমেরিকার শীতকাল
কানাডার জলবায়ুকে সহজভাবে বোঝানো কঠিন, কারণ দেশের বিস্তৃত এলাকা আর বৈচিত্র্যময় ভূগোল রয়েছে। তবে এক কথায় বলতে গেলে, একে “বরফে ঢাকা উত্তর” বলা যায়। অধিকাংশ স্থানে শীতকাল খুবই কঠিন, যা রাশিয়ার সঙ্গে তুলনীয়। সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল দক্ষিণ অন্টারিও ও দক্ষিণ কুইবেকের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে কম কঠিন, তবে তা পাশের উত্তর-পূর্ব ও মধ্য-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কিছুটা ঠান্ডা। ইকালুইট, যা নুনাভুটের রাজধানী, আর্কটিক সার্কেলের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত। সেখানে জুলাই ও আগস্ট ছাড়া প্রায় সারা বছরই প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকে। জুলাই মাসে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মাত্র ১২ °সে (৫৪ °ফা)। অন্যদিকে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উপকূলে অক্ষাংশ অনুযায়ী আবহাওয়া অনেক নরম, শীতকালে বেশিরভাগ সময়ই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে থাকে, যদিও এখান থেকে খুব দূরে নয় মহাদেশের কয়েকটি বৃহত্তম হিমবাহ।
কানাডার বেশিরভাগ বড় শহর ২০০ কিমি (১২০ মা)-এর ভেতরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। (এর ব্যতিক্রম হলো এডমন্টন, ক্যালগারি, হ্যালিফ্যাক্স এবং সেন্ট জনস)। বেশিরভাগ শহরে পর্যটকদের সাধারণত পোস্টকার্ডে দেখা কানাডার দূর উত্তরের বা পাহাড়ি অঞ্চলের মতো কঠোর আবহাওয়া সহ্য করতে হয় না। জনবহুল এলাকায় গ্রীষ্মকালে সাধারণত উষ্ণ থাকে, তবে সময়টা খুব দীর্ঘ হয় না (সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট)। দক্ষিণ অন্টারিও, দক্ষিণ প্রেইরি এবং বিশেষত ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার দক্ষিণ অভ্যন্তরে গ্রীষ্মকালে ৩০ °সে (৮৬ °ফা)-এর ওপরে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক নয়। ওসোইউস কানাডার সবচেয়ে উষ্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত, যেখানে গ্রীষ্মের দৈনিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। টরন্টোর আবহাওয়া উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোর চেয়ে সামান্য ঠান্ডা। দক্ষিণ অন্টারিও, কুইবেক (যার মধ্যে মন্ট্রিয়ল রয়েছে) ও ম্যানিটোবায় গ্রীষ্মকাল প্রায়ই উষ্ণ, কখনো কখনো গরম ও আর্দ্র হয়। অন্যদিকে, পশ্চিমের অভ্যন্তরে গ্রীষ্মে সাধারণত আর্দ্রতা কম থাকে, এমনকি গরম আবহাওয়াতেও, আর রাতে তাপমাত্রা দ্রুত কমে গিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হয়। শীতকালে পূর্ব কানাডা, বিশেষত আটলান্টিক কানাডা, প্রায়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ে, যা নিয়ে আসে তুষারপাত, প্রবল বাতাস, বৃষ্টি ও বরফবৃষ্টি।
ভিতরের অনেক শহর, বিশেষত প্রেইরি অঞ্চলের শহরগুলোতে তাপমাত্রার ব্যাপক ওঠানামা ঘটে, কখনো খুব দ্রুত। জলবায়ু শুষ্ক (দক্ষিণ প্রেইরির পশ্চিম অংশ পূর্ব অংশের চেয়ে বেশি শুষ্ক), ফলে প্রচুর রোদ পাওয়া যায়-বার্ষিক ২,৩০০-২,৬০০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এই অঞ্চলগুলো শীতকালে কানাডার মধ্যে সবচেয়ে ঠান্ডা জনবসতিপূর্ণ এলাকা।

উইনিপেগে গ্রীষ্মকালে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকে, তবে শীতকালে তাপমাত্রা প্রায়ই −৩০ °সে (−২২ °ফা) পর্যন্ত নেমে যায়। কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অভ্যন্তরে-৪৯.৬ °সে (১২১ °ফা)। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ইউকনের স্ন্যাগে −৬৩ °সে (−৮১ °ফা)। গ্রীষ্মে প্রেইরি ও দক্ষিণ অন্টারিওতে ঝড় হতে পারে, যা প্রবল বাতাস, শিলাবৃষ্টি, আর কখনো কখনো টর্নেডো সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পশ্চিম উপকূলে ভ্যাঙ্কুভার ও ভিক্টোরিয়ার আবহাওয়া অনেক নরম। এখানে খুব কম তুষারপাত হয়, বাতাস সাধারণত শান্ত থাকে এবং তাপমাত্রা সচরাচর ০ °সে (৩২ °ফা)-এর নিচে বা ২৭ °সে (৮১ °ফা)-এর ওপরে যায় না। তবে শীতকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, আর গ্রীষ্মে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শুষ্ক, রৌদ্রোজ্জ্বল ও মনোরম থাকে।
তবে গড়ে কানাডার তাপমাত্রা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের চেয়ে ঠান্ডা। তাই অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভ্রমণ করলে উষ্ণ জ্যাকেট নিয়ে আসা প্রয়োজন। পাহাড়ি বা উত্তরাঞ্চল ভ্রমণ করলে এই সময়ের বাইরে গিয়েও উষ্ণ পোশাক দরকার হতে পারে। গ্রীষ্মকালে দেশের বেশিরভাগ স্থানে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ১৫ °সে (৫৯ °ফা)-এর ওপরে থাকে, যা সাধারণত ২০ °সে (৬৮ °ফা) থেকে ৩০ °সে (৮৬ °ফা)-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে, এবং মাঝে মাঝে ৩০-এর ওপরে উঠে যায় (৮০-৯০ °ফা সমতুল্য)।
ছুটির দিনসমূহ
[সম্পাদনা]কানাডা নিম্নলিখিত জাতীয় ছুটির দিনগুলোকে স্বীকৃতি দেয় ও উদযাপন করে (কিছু প্রদেশে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে):
- নিউ ইয়ার্স ডে - ১ জানুয়ারি
- ফ্যামিলি ডে - ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সোমবার (সব প্রদেশে পালিত হয় না, ম্যানিটোবা প্রদেশে এর নাম লুই রিয়েল ডে, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে (পিইআই) আইল্যান্ডার ডে)
- গুড ফ্রাইডে - ইস্টারের আগে শুক্রবার (কিছু প্রদেশে ইস্টার সোমবারকেও সরকারি ছুটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়)
- ভিক্টোরিয়া ডে - ২৫ মে-এর আগে শেষ সোমবার (কুইবেকে ফেত দে পাত্রিয়োত নামে পরিচিত)
- সেন্ট জ্যাঁ ব্যাপ্তিস্ত ডে (কুইবেক) - ২৪ জুন (ফেত ন্যাশনাল নামেও পরিচিত)
- কানাডা ডে - ১ জুলাই
- সিভিক হলিডে - আগস্টের প্রথম সোমবার (কেবল কিছু প্রদেশে পালিত হয় ভিন্ন নামে; কুইবেকে পালিত হয় না)
- শ্রমিক দিবস - সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার
- ন্যাশনাল ডে ফর ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন - ৩০ সেপ্টেম্বর (সব প্রদেশে পালিত হয় না)
- থ্যাঙ্কসগিভিং - অক্টোবরের দ্বিতীয় সোমবার
- রিমেমব্রেন্স ডে - ১১ নভেম্বর (শুধু ব্যাংক ছুটি)
- ক্রিসমাস ডে - ২৫ ডিসেম্বর
- বক্সিং ডে - ২৬ ডিসেম্বর
কানাডায় শ্রমিক দিবস ১ মে নয়, বরং সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার পালিত হয়। এই দিনটিই সাধারণত শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে ছুটির শেষ দিন হিসেবে ধরা হয়।
ভ্রমণকারীর তথ্য
[সম্পাদনা]ভাষা
[সম্পাদনা]|
দ্বিভাষিকতা ও রাজনীতি
যদিও বেশিরভাগ কানাডীয় একভাষিক, তবুও কানাডার সরকারি দ্বিভাষিকতা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় পার্লামেন্টে, যেখানে সংসদ সদস্যরা ইংরেজি বা ফরাসি -উভয় ভাষাতেই বক্তব্য রাখার অধিকার রাখেন। নির্বাচন মৌসুমেও এই দ্বিভাষিকতা চোখে পড়ে, কারণ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে জাতীয় টেলিভিশনে ইংরেজি ও ফরাসি উভয় ভাষায় বিতর্ক করতে হয়। ফলে উচ্চ পদে আসীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে দ্বিভাষিকতা প্রায় অপরিহার্য। |
ইংরেজি এবং ফরাসি কানাডার ফেডারেল স্তরের একমাত্র সরকারি ভাষা, যদিও অভিবাসী ও দেশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহু ভাষা প্রচলিত। ফেডারেল সরকারের সব যোগাযোগ ও সেবা আইনগতভাবে উভয় ভাষায় সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। তবে প্রাদেশিক পর্যায়ে কোন ভাষা সরকারিভাবে গ্রহণ করবে তা সংশ্লিষ্ট প্রদেশ নিজেই ঠিক করে। তাই প্রাদেশিক সরকারি দপ্তরগুলো সবসময় দ্বিভাষিক নাও হতে পারে (যেমন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কেবল ইংরেজি, আর ক্যুবেকে কেবল ফরাসি ব্যবহৃত হয়)। বেশিরভাগ কানাডীয় কার্যত একভাষিক হলেও দেশের কিছু অঞ্চলে ইংরেজি ও ফরাসি উভয় ভাষার বক্তা আছেন। চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি কানাডীয় দ্বিভাষিক বা বহুভাষিক। মন্ট্রিয়ল ও গাতিনো শহরের বেশিরভাগ মানুষ এবং অটোয়ার প্রায় ৪০% মানুষ অন্তত কথোপকথনের মতো ফরাসি জানেন। নিউ ব্রান্সউইক সরকারিভাবে দ্বিভাষিক, কারণ এখানকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ফরাসি মাতৃভাষী, যারা মূলত প্রদেশের উত্তর অংশে বাস করেন।
কানাডার সব অঞ্চলে ইংরেজি প্রধান ভাষা, শুধু ক্যুবেকে, নিউ ব্রান্সউইকের কিছু অংশে এবং নুনাভুটে ব্যতিক্রম দেখা যায়, যেখানে যথাক্রমে ফরাসি ও ইনুকটিট প্রধান এবং সক্রিয়ভাবে প্রচারিত হয়। কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক ফরাসিভাষী সম্প্রদায় ছড়িয়ে আছে, যেমন:
- অটোয়া-মনট্রিয়ল অঞ্চলের মধ্যবর্তী রাজধানী অঞ্চল,
- পূর্ব ও উত্তর অন্টারিওর কিছু অংশ,
- উইনিপেগ শহর (বিশেষত সেন্ট বোনিফেস) ও শহরের দক্ষিণাঞ্চল,
- ইউকন প্রদেশের হোয়াইটহর্স শহর,
- এডমন্টনের বনি ডুন পাড়া ও আশপাশের কয়েকটি সম্প্রদায়,
- আটলান্টিক কানাডার আকালিয়ান অঞ্চলের কিছু অংশ, যা নোভা স্কোশিয়া, নিউ ব্রান্সউইক ও প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপে ছড়িয়ে আছে।
একইভাবে, ক্যুবেকেও কিছু ইংরেজিভাষী সম্প্রদায় আছে, যেমন মন্ট্রিয়লের দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরতলিগুলো। কুইবেকের ইংরেজিভাষীদের বেশিরভাগই দ্বিভাষিক, যেমন কুইবেকের বাইরের ফরাসিভাষীরাও সাধারণত দ্বিভাষিক।
কানাডীয় ইংরেজিতে সাধারণত ব্রিটিশ (অক্সফোর্ড) বানান ব্যবহার করা হয় ("colour" পরিবর্তে "color"), কিন্তু শব্দভান্ডারে আমেরিকান প্রভাব বেশি ("gas" পরিবর্তে "petrol")। কিছু ব্রিটিশ শব্দ, যা আমেরিকায় তেমন পরিচিত নয়, কানাডায় বহুল প্রচলিত। উচ্চারণে কিছু শব্দ ও "z" অক্ষর ব্রিটিশ ধাঁচে উচ্চারিত হয়, তবে কানাডীয় ও আমেরিকান উচ্চারণ অনেকটাই কাছাকাছি। কানাডীয় মানক উচ্চারণ মার্কিন (মিডওয়েস্ট) উচ্চারণের তুলনায় মসৃণ, কম নাসিক্যধর্মী এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন। সাধারণত দুটি শব্দ একসাথে উচ্চারিত হয় যেন তাদের মাঝে কোনো ফাঁক নেই। কানাডীয় উচ্চারণের সবচেয়ে প্রচলিত বৈশিষ্ট্য হলো "ou" ধ্বনির উচ্চারণ (যেমন "shout" ও "about") যা আমেরিকানদের কানে প্রায়শই "shoot" ও "aboot" শোনায়। কানাডীয় ইংরেজিতে ফরাসি প্রভাব অন্য ইংরেজি রূপের তুলনায় বেশি, এবং ফরাসি থেকে ধার করা শব্দগুলো কানাডীয়রা মূল ফরাসি উচ্চারণে বলার প্রবণতা রাখে।
আটলান্টিক কানাডায় ইংরেজি উচ্চারণে উত্তর আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্য দেখা যায়। কারণ আধুনিক টেলিযোগাযোগ ও পরিবহনের আগে উপকূলীয় মাছ ধরার গ্রামগুলো অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিল। এই অঞ্চলে ভ্রমণকারীরা শক্তিশালী আঞ্চলিক উচ্চারণ ও সামুদ্রিক শব্দভান্ডার বুঝতে কিছুটা অসুবিধায় পড়তে পারেন, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। অন্টারিও থেকে পশ্চিমে কানাডীয় ইংরেজি উচ্চারণ প্রায় সর্বত্র একই রকম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মতো।
ইংরেজিভাষী কানাডীয়দের সাধারণত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম বছর পর ফরাসি পড়া বাধ্যতামূলক নয়। ফলে কুইবেকের বাইরে বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী ফরাসি জানেন না, যদি না তাদের পরিবার বা কাছের কেউ ফরাসি জানে কিংবা ব্যক্তিগত বা পেশাগত আগ্রহে শিখে থাকে। অটোয়ায় ব্যতিক্রম দেখা যায়, কারণ সরকারি চাকরির জন্য ফরাসি জানা প্রয়োজন। স্প্যানিশ, জার্মান, জাপানি ইত্যাদি ভাষার শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী এসব কোর্স নেয় এবং খুব কমই প্রাথমিক স্তরের বাইরে এগোয়। অভিবাসীদের কারণে কানাডার বড় শহরগুলোতে নানা ভাষা শোনা যায় এবং প্রায়শই এমন পাড়া বা শহরতলি পাওয়া যায় যেখানে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মাতৃভাষাই মূল ভাষা। অভিবাসীরা সাধারণত ইংরেজি বা ফরাসি শিখে, তবে পরিবারের ভেতরে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি অফিস অভিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষায়ও সেবা দিতে পারে, যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে।
ক্যুবেকে, সাধারণত মন্ট্রিয়ল, গাতিনো, ক্যুবেক শহরের প্রধান পর্যটন এলাকা এবং কিছু ঐতিহ্যবাহী ইংরেজিভাষী গ্রামীণ এলাকা (যেমন লোয়ার নর্থ শোর, চালুর উপসাগর, এবং যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তবর্তী অঞ্চল) ইংরেজিতে চলা সম্ভব। তবে প্রদেশের অন্যত্র ফরাসি জ্ঞানের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কেবল পথ চলার জন্য হলেও সাইনবোর্ড পড়তে ফরাসি জানা দরকার, বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কে গেলে। বড় শহরগুলোতেও কিছু মৌলিক ফরাসি শব্দ জানা থাকলে স্থানীয়রা সাধুবাদ জানায়। কুইবেক ও আকালিয়ান অঞ্চলের ফরাসি উচ্চারণ ও শব্দভান্ডার ইউরোপীয় ফরাসি থেকে ভিন্ন, এবং ইউরোপীয়দের জন্য বুঝতে কিছুটা কঠিন হতে পারে। তবে সব ফরাসিভাষী কানাডীয় বিদ্যালয়ে মানক ফরাসি শেখেন, তাই প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারেন।
কানাডার আদিবাসী জনগণের মধ্যে বহু ভাষা প্রচলিত। নুনাভুটে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ইনুকটিট মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তারা সাধারণত ইংরেজি বা ফরাসিও জানেন। তাই এই ভাষা শেখা জরুরি নয়, তবে স্থানীয়দের মুগ্ধ করতে পারে।
কানাডায় দুইটি সংকেতভাষা বেশি ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (এএসএল) ইংরেজিভাষী কানাডায় ব্যবহৃত হয়, আর ক্যুবেক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (এলএসকিউ) ফরাসিভাষী কানাডায় ব্যবহৃত হয়। দুটি আলাদা ভাষা হলেও কিছুটা মিল রয়েছে। উভয়ই ফরাসি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, আর এলএসকিউকে ফরাসি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ও এএসএলের মিশ্রণ বলে মনে করা হয়।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]| ভিসা-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ:
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে সব মেক্সিকান ভ্রমণকারীকে কানাডায় যেতে ভিসা নিতে হবে। যাদের ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) আছে কিন্তু বৈধ ওয়ার্ক বা স্টাডি পারমিট নেই, তাদের ইটিএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। চলমান ইটিএ আবেদনগুলোতেও নতুন ইটিএ বা ভিসা নেওয়া বাধ্যতামূলক হবে। তবে যেসব মেক্সিকান ভ্রমণকারী গত ১০ বছরে কানাডীয় ভিজিটর ভিসা নিয়েছেন বা বৈধ মার্কিন অ-অভিবাসী ভিসা আছে, তারা ইটিএর জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভ্রমণের সময় ইটিএর কপি (প্রিন্ট ও ডিজিটাল উভয়) এবং পুরনো পাসপোর্ট (যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কানাডীয় ভিজিটর ভিসা বা বৈধ মার্কিন ভিসা আছে) সাথে রাখা ভালো। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা মেক্সিকান নাগরিকদের ইটিএর প্রয়োজন নেই, তবে তাদের গ্রিন কার্ড বহন করতে হবে। কানাডীয়-মেক্সিকান দ্বৈত নাগরিকদের বৈধ কানাডীয় পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করতে হবে। বিস্তারিত জানতে এই ওয়েবসাইট দেখুন।
| |
| (তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদকৃত মার্চ ২০২৪) |

কানাডায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক যে কাউকেই "সৎ নৈতিক চরিত্রের" অধিকারী হতে হয়। এর ক্ষেত্রে অতীত অপরাধের ব্যাপারে কানাডা কঠোর ব্যাখ্যা দেয়। যে কোনো ক্ষুদ্র অপরাধও আপনার প্রবেশ-অযোগ্যতার কারণ হতে পারে, এমনকি তা আপনার নিজ দেশে বা যে দেশে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেখানেও অপরাধ হিসেবে গণ্য না হলেও, যেমন কিছু ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন। একইভাবে সক্রিয় দেওয়ানি রায় বা আর্থিক জটিলতা, যেমন বড় অঙ্কের অপরিশোধিত ঋণ, আপনার প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে। বিস্তারিত দেখুন অপরাধমূলক ইতিহাস নিয়ে ভ্রমণ (কানাডা)।
|
ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে আরাইভক্যান (ArriveCAN) ব্যবহার
আকাশপথে কানাডায় প্রবেশকারী যাত্রীরা ঐচ্ছিক আরাইভক্যান অ্যাপ ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ঘোষণাপত্র জমা দিয়ে সময় বাঁচাতে পারেন। এই সেবা সাতটি প্রধান বিমানবন্দরে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে মন্ট্রিয়াল-ট্রুডো, টরন্টো পিয়ারসন এবং ভ্যাঙ্কুভার। আরও তথ্যের জন্য দেখুন আরাইভক্যান ওয়েবসাইট। |
নিম্নলিখিত দেশের নাগরিকদের কানাডা ভ্রমণের জন্য (সাধারণত) সর্বোচ্চ ছয় মাসের অবস্থানের ক্ষেত্রে ভিসার প্রয়োজন নেই, শর্ত হলো কাজ বা পড়াশোনায় অংশগ্রহণ করা যাবে না এবং ভ্রমণকারীর পাসপোর্ট নির্ধারিত প্রস্থানের তারিখের পর আরও ছয় মাসের জন্য বৈধ থাকতে হবে:
অ্যান্ডোরা, অ্যাঙ্গুইলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাহামাস, বার্বাডোস, বেলজিয়াম, বারমুডা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, ব্রুনেই, বুলগেরিয়া, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, জিব্রাল্টার, গ্রিস, হংকং (বিএনও পাসপোর্ট বা এসএআর পাসপোর্ট), হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল (শুধুমাত্র জাতীয় পাসপোর্টধারী), ইতালি, জাপান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লিশটেনস্টেইন, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো, মন্টসেরাট, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পাপুয়া নিউগিনি, পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া (শুধুমাত্র বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট), সামোয়া, সান মারিনো, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সেন্ট হেলেনা, সুইডেন, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান (অবশ্যই জাতীয় পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র নম্বর থাকতে হবে), টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য (যেখানে পুনঃভর্তি যোগ্য ব্রিটিশ (ওভারসিজ) নাগরিকও অন্তর্ভুক্ত), যুক্তরাষ্ট্র এবং ভ্যাটিকান সিটি। আরও তথ্যের জন্য এই পৃষ্ঠাটি দেখুন।
উপরের তালিকায় উল্লিখিত দেশগুলোর বাইরে অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী) হন বা অন্য কোনোভাবে সেখানে স্থায়ী বসবাসের প্রমাণ দিতে পারেন, তবে তাঁরাও ভিসামুক্তির সুবিধা পাবেন। তবে যারা ভিসামুক্তভাবে প্রবেশ করছেন কিন্তু পর্যটন ছাড়া অন্য যে কোনো কারণে কানাডায় যাচ্ছেন, তাঁদের অবশ্যই সেই ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছ থেকে একটি আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতে হবে যাদের তাঁরা দেখতে যাচ্ছেন (আমন্ত্রণপত্র সম্পর্কিত তথ্য ও প্রয়োজনীয় শর্তাবলি এখানে পাওয়া যাবে)।
যেসব বিদেশি ভিসা ছাড়াই বিমানে করে কানাডায় যাচ্ছেন, তাঁদের অবশ্যই একটি ইটিএ (eTA) (ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন) নিতে হবে। এটি কানাডার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগ (সিআইসি) প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইএসটিএ-র মতো হলেও এর ফি কম (৭ মার্কিন ডলার) এবং এটি ৫ বছর পর্যন্ত বা পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বৈধ। মার্কিন নাগরিক, স্থায়ী বাসিন্দা এবং সাঁ পিয়ের ও মিকেলনের ফরাসি নাগরিকদের জন্য এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। স্থলপথ বা সমুদ্রপথে প্রবেশ করলে ইটিএ প্রয়োজন হয় না।
ব্রাজিলিয়ান নাগরিকদের মধ্যে যারা বৈধ মার্কিন নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারী বা গত ১০ বছরের মধ্যে কানাডার ভিসা পেয়েছেন, তাঁরা বিমানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইটিএর জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে যারা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত বা সমুদ্রপথে কানাডায় প্রবেশ করছেন, অথবা গত ১০ বছরে কানাডার ভিসা বা মার্কিন নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা পাননি, তাঁদের অবশ্যই বৈধ কানাডীয় ভিসা থাকতে হবে।
অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারে কানাডা বেশ কঠোর। অনেক ক্ষেত্রে যাঁরা ভিসার প্রয়োজনীয়তার বাইরে থাকেন, তাঁদেরও প্রবেশে বাধা দেওয়া হতে পারে অথবা অতিরিক্ত নথিপত্র জমা দিতে হতে পারে। এমনকি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধও কানাডার আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে ব্যভিচার কিংবা নিজ দেশে সমকামী হওয়ার কারণে অপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে কানাডায় প্রবেশে সমস্যা হয় না, কারণ এসব কর্মকাণ্ড কানাডায় নিষিদ্ধ নয়। যাঁদের অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে, তাঁদের ভ্রমণ পরিকল্পনার আগে কানাডীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। দেখুন অপরাধমূলক রেকর্ড নিয়ে ভ্রমণ#কানাডা।
যাঁদের অন্য কোনো ভিসামুক্তির সুযোগ নেই, তাঁদের কানাডায় প্রবেশের জন্য একটি অস্থায়ী বাসিন্দা ভিসা (Temporary Resident Visa) নিতে হবে। এর জন্য আবেদনকারীকে নিকটস্থ কানাডীয় ভিসা অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের অংশ হিসেবে নিম্নলিখিত নথিপত্র জমা দিতে হবে:
- বৈধ ভ্রমণ নথি (যেমন পাসপোর্ট)
- সঠিক আকারের দুই কপি ছবি (সব আবেদনকারীর জন্য)
- আবেদন ফি (একক প্রবেশ ভিসার জন্য ৭৫ মার্কিন ডলার, একাধিক প্রবেশ ভিসার জন্য ১৫০ মার্কিন ডলার, পরিবারভিত্তিক আবেদন হলে ৪০০ মার্কিন ডলার)
- পর্যটকদের জন্য রিজার্ভেশন নিশ্চিতকরণ অথবা অন্যদের জন্য আমন্ত্রণপত্র
- কানাডায় অবস্থানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রমাণ। প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ভ্রমণের উদ্দেশ্য, অবস্থানের মেয়াদ এবং কোথায় থাকবেন (হোটেল, বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসা) তার উপর নির্ভর করে। বিস্তারিত জানতে ভিসা অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি। যেমন পরিচয়পত্র, চাকরির প্রমাণ, বা ভ্রমণ পরিকল্পনা। আপনার অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত ভিসা অফিসের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
যদি আপনি পাশের যুক্তরাষ্ট্র বা সাঁ পিয়ের ও মিকেলনে ঘুরতে যান এবং তাদের সীমান্ত ছাড়া বাইরে না যান, তবে আপনার একক প্রবেশ ভিসা বা মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা দিয়েও কানাডায় ফিরে আসতে পারবেন, শর্ত হলো এটি অবশ্যই সেই প্রাথমিক থাকার সময়সীমার মধ্যে হতে হবে যা আপনাকে প্রবেশকালে অভিবাসন কর্মকর্তা প্রদান করেছিলেন।
কানাডায় কাজ করা ভিসা ছাড়া নিষিদ্ধ। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের যুবকদের জন্য কিছু অস্থায়ী কাজের অনুমতি রয়েছে। বিস্তারিত দেখতে নিচে "কর্মসংস্থান" অংশ দেখুন।
ক্যুবেক প্রদেশকে ফেডারেল সরকার অভিবাসন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে। তবে এর নিয়মকানুন স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণকারীদের (যেমন পর্যটক বা ব্যবসায়িক ভ্রমণকারী) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যদি তাঁরা কাজ বা স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা না করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যারা স্থলপথে (গাড়ি, ট্রেন, নৌকা বা হেঁটে) কানাডায় প্রবেশ করেন, তাঁদের স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণের জন্য নাগরিকত্ব ও পরিচয়ের প্রমাণই যথেষ্ট। পাসপোর্ট ছাড়াও নিম্নলিখিত নথি ব্যবহার করা যেতে পারে:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট কার্ড (ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট কর্তৃক প্রদত্ত)
- উন্নত ড্রাইভিং লাইসেন্স বা নন-ড্রাইভার ফটো আইডি কার্ড (যা মিশিগান, মিনেসোটা, নিউ ইয়র্ক, ভারমন্ট ও ওয়াশিংটন রাজ্য কর্তৃক ইস্যু করা হয়)
- উন্নত ট্রাইবাল আইডি কার্ড
- মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রদত্ত ট্রাস্টেড ট্রাভেলার কার্ড (যেমন নেক্সাস ও ফাস্ট), যা কানাডা সীমান্ত পার হওয়ার জন্য প্রযোজ্য
- তবে মেক্সিকো সীমান্তের (সেন্ট্রি) বা আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণকারীদের জন্য প্রদত্ত (গ্লোবাল এন্ট্রি) কার্ড কানাডায় প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা যায় না। এগুলো শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের জন্য প্রযোজ্য এবং কিছু ক্ষেত্রে নেক্সাস লেন ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
আমেরিকান নাগরিকরা শুধু জন্ম সনদ দেখিয়েও সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেন। তবে জন্ম সনদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সময় সীমান্ত কর্মকর্তারা তথ্য যাচাই না করা পর্যন্ত তাঁদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। এছাড়াও জরিমানা বা আইনগত পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে পারেন, যদিও প্রথমবারের ক্ষেত্রে সাধারণত সতর্কবার্তাই দেওয়া হয়।
গ্রিনল্যান্ড, সাঁ পিয়ের ও মিকেলন এবং কিছু ক্যারিবীয় দেশের বাসিন্দাদের পাসপোর্ট দেখাতে হয় না যদি তাঁরা জাতীয়তা ও পরিচয়ের অন্য কোনো বৈধ প্রমাণ দিতে পারেন।
গ্রিনল্যান্ড, সাঁ পিয়ের ও মিকেলন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের জন্য আরও একটি সুবিধা রয়েছে। তাঁরা কাজ বা পড়াশোনার অনুমতির জন্য কানাডায় পৌঁছেই আবেদন করতে পারেন। এজন্য আগে থেকে অস্থায়ী বাসিন্দা ভিসা বা কনস্যুলেটের মাধ্যমে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তবে প্রয়োজনীয় সব নথি (যেমন আমন্ত্রণপত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/নিয়োগকর্তার নথি ও ফি) পোর্ট অব এন্ট্রিতে জমা দিতে হবে।
এখন কানাডায় প্রবেশকারী অধিকাংশ ভ্রমণকারীর পাসপোর্টে আর সিল দেওয়া হয় না। পরিবর্তে সব তথ্য ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষিত হয়। যদি আপনার পাসপোর্টে সিল প্রয়োজন হয়, তবে প্রবেশকালে অভিবাসন কর্মকর্তাকে তা জানাতে হবে। কানাডা ছাড়ার সময় কোনো ইমিগ্রেশন চেক করা হয় না।
পরিবহন
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: কানাডা হয়ে ভ্রমণ এড়ানো
কানাডায় একই বিমানবন্দরে দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্যে ট্রান্সফার করার সময়ও প্রবেশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো-যদি আপনি একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে (কিন্তু উল্টোটা নয়) সংযোগ নেন, এবং সেটি এমন একটি বিমানবন্দরে হয় যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার প্রি-ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা আছে এবং সংযোগ একই টার্মিনালে হয়।
আপনি যদি কানাডায় প্রবেশের ভিসা মওকুফের (ভিসা ওয়েভার) আওতাভুক্ত না হন, তবে সাধারণত কানাডা হয়ে ট্রানজিট করার জন্য আপনাকে বিনা খরচে একটি ট্রানজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কানাডার ভিসা নীতি কিছুটা সহজ, এজন্য অনেক ভ্রমণকারী যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ট্রানজিট এড়িয়ে কানাডা হয়ে ভ্রমণ করেন। তবে অপরাধজনিত কারণে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়ে কানাডার নিয়ম খুবই কঠোর: আপনার যদি কোনো অপরাধের রেকর্ড থাকে, এমনকি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর দোষও যদি থাকে, তবে খুব সম্ভবত আপনাকে কানাডায় ট্রানজিটের জন্যও অনুমতি দেওয়া হবে না।
শুল্ক
[সম্পাদনা]
কানাডায় অত্যন্ত কঠোর জৈবনিরাপত্তা আইন রয়েছে। কানাডায় নিয়ে আসা সব ধরনের খাদ্যপণ্য শুল্ক বিভাগে আগমনের সময় ঘোষণা করতে হবে এবং পরীক্ষা করতে হবে। কোনো খাদ্যপণ্য ঘোষণা না করলে বড় অঙ্কের জরিমানা হতে পারে, এমনকি সেটি অনুমোদিত আইটেম হলেও।
কানাডায় অবৈধ মাদক নিয়ে আসার চেষ্টা একটি গুরুতর অপরাধ, যার জন্য দীর্ঘ কারাদণ্ড হতে পারে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন থাকলেও, কিংবা কানাডায় গাঁজা বৈধ হলেও, দেশটিতে গাঁজা আনা বা এখান থেকে বাইরে নেওয়া বেআইনি। বিস্তারিত জানতে সরকারের ক্যানাবিস ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ পৃষ্ঠা দেখুন। কানাডার ভেতরে ব্যবহারের জন্য চাইলে অনুমোদিত সরবরাহকারীর কাছ থেকে গাঁজা কেনা বৈধ।
যথাযথ কাগজপত্রসহ শুল্ক বিভাগে ঘোষণা না দিয়ে কানাডায় অস্ত্র বা বিস্ফোরক আনা বেআইনি। ১৮ বছরের কম বয়সীরা কোনোভাবেই কানাডায় অস্ত্র আনতে পারবে না। বিস্তারিত জানতে কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির কানাডায় অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি ও রপ্তানি পৃষ্ঠা এবং ন্যাচারাল রিসোর্সেস কানাডার গোলাবারুদ আমদানি, রপ্তানি ও ট্রানজিটে বহন[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] পৃষ্ঠা দেখুন। কিছু অস্ত্র যেমন সুইচব্লেড ছুরি, বাটারফ্লাই ছুরি, হাতলঘুষি (নাকল ডাস্টার) এবং নানচাকু সম্পূর্ণ বেআইনি, এগুলোর জন্য কোনো অনুমতিও পাওয়া যায় না।
কানাডায় অর্থ আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তবে যদি আপনার কাছে ১০,০০০ কানাডীয় ডলার বা এর সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা থাকে, তবে তা শুল্ক বিভাগে ঘোষণা করতে হবে। ঘোষণা না করলে মামলা হতে পারে এবং অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে
[সম্পাদনা]
আপনি যদি মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হন এবং কানাডায় ঘনঘন ভ্রমণ করেন, তাহলে একটি নেক্সাস কার্ড নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। নেক্সাস হলো এমন একটি প্রোগ্রাম যেখানে আগে থেকে অনুমোদিত ও কম ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণকারীরা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বহু স্থলসীমান্তে দ্রুততর পরিদর্শন লেন ব্যবহার করতে পারেন এবং ন্যূনতম জিজ্ঞাসাবাদে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেন। বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইরিস স্ক্যান বেছে নিলে কিয়স্ক ব্যবহার করে শুল্ক ঘোষণা দেওয়া ও সীমান্ত পেরোনো সম্ভব। এর আবেদন ফি ৫০ মার্কিন ডলার এবং উভয় দেশে আইনত প্রবেশযোগ্য হওয়া, বিস্তারিত পটভূমি তদন্ত, ক্রেডিট চেক, আঙুলের ছাপ প্রদান এবং যুক্তরাষ্ট্র কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (ইউএসসিবিপি) ও কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির (সিবিএসএ) যৌথ সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া আবশ্যক।
ডিএইচএসের (DHS) অন্যান্য বিশ্বস্ত ভ্রমণকারী প্রোগ্রামের (Trusted Traveler Programs) অংশগ্রহণকারীরা যেমন গ্লোবাল এন্ট্রি (Global Entry, বিমানবন্দরে দ্রুত ছাড়পত্র), সেনট্রি (SENTRI, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দ্রুত ছাড়পত্র) এবং ফাস্ট (FAST, ট্রাক চালকদের জন্য), তারা নেক্সাস লেন ব্যবহার করে কানাডায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে তারা তাদের গ্লোবাল এন্ট্রি, সেনট্রি বা ফাস্ট কার্ড পরিচয় ও নাগরিকত্ব প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন এবং এগুলো নেক্সাস লেন ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রেও বৈধ।
আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় ভ্রমণ করেন এবং দুই দেশের কোনোটির স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তাহলে পরবর্তী ভ্রমণে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যে, আপনি উত্তর আমেরিকায় অনুমোদিত সময়ের বেশি অবস্থান করেননি। মনে রাখতে হবে, আপনি যদি উত্তর আমেরিকা ছাড়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আসেন, তবে কানাডায় কাটানো সময়টিও আপনার সর্বাধিক অনুমোদিত মার্কিন অবস্থানসীমার মধ্যে গণনা হবে।
- যদি আপনি এই ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন, তবে আলাদা কিছু করতে হবে না। আপনি উত্তর আমেরিকায় সর্বমোট অনুমোদিত সময়সীমা অতিক্রম না করলে বহুবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
- যদি আপনার যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত সময় কানাডায় অবস্থানকালে শেষ হয়ে যায়, এবং আপনি কানাডা থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে চান, তাহলে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ভিসার (যেমন বি-১/বি-২ বা সি-১ ট্রানজিট ভিসা) জন্য আবেদন করতে হবে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগেই। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কানাডায় ছয় মাস থাকার পরিকল্পনা করেন এবং ভিসা মওকুফ কর্মসূচি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র আপনার ছয় মাসের কানাডা অবস্থানকে উত্তর আমেরিকায় ৯০ দিনের বেশি অবস্থান হিসেবে গণনা করবে এবং আপনাকে উত্তর আমেরিকা ছাড়া ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে দেবে না। এতে আপনি কোনো আইন ভঙ্গ করেননি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী তাদের সময়সীমা পুনরায় শুরু করতে আপনাকে উত্তর আমেরিকার বাইরে যেতে হবে।
- যদি আপনি এই ভ্রমণে উত্তর আমেরিকা থেকে চলে যান এবং আর যুক্তরাষ্ট্রে না ফেরেন, তবে প্রমাণ হিসেবে কাগজপত্র সংরক্ষণ করুন যে, আপনার মার্কিন অনুমোদিত সময় শেষ হওয়ার আগে আপনি দেশ ছেড়েছেন। এর মধ্যে কানাডীয় ইমিগ্রেশনের সীমান্তে আপনার পাসপোর্টে সীল মারা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
আপনি যদি কানাডা থেকে স্বল্প সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং পুনরায় কানাডায় ফিরতে চান, তবে আপনি নতুন কানাডীয় ভিসা ছাড়াই ফিরতে পারবেন, এমনকি আপনার ভিসা একবার প্রবেশের জন্য বৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও। তবে শর্ত হলো, আপনি অভিবাসন কর্মকর্তার প্রদত্ত প্রাথমিক অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যে ফিরতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশের ভূখণ্ডে না গিয়ে সরাসরি কানাডায় ফিরতে হবে (অর্থাৎ, এমনকি কোনো মার্কিন বন্দরে শুরু ও শেষ হওয়া ক্রুজ ভ্রমণে আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করলেও সেটা অনুমোদিত নয়)।
বিমানপথে
[সম্পাদনা]কানাডার প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো হলো ক্রমানুসারে টরন্টো (ওয়াইওয়াইজেড আইএটিএ), ভ্যাঙ্কুভার (ওয়াইভিআর আইএটিএ) এবং মন্ট্রিয়ল (ওয়াইইউএল আইএটিএ)। এছাড়াও অনেক শহরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে, এর মধ্যে পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো: কালগারি, অটোয়া, হ্যালিফ্যাক্স, সেন্ট জন’স, উইনিপেগ, এডমন্টন, রেজাইনা, সাসকাটুন, কেলোনা, ভিক্টোরিয়া এবং ক্যুবেক সিটি।
জাতীয় পতাকাবাহী বিমানসংস্থা এয়ার কানাডা, ☏ +১ ৫১৪-৩৯৩-৩৩৩৩, নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১-৮৮৮-২৪৭-২২৬২। এবং ওয়েস্টজেট, নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১-৮৭৭-৯৫২-০১০০। দেশের প্রধান জাতীয় বিমানসংস্থা, যারা সারা দেশজুড়ে এবং আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এ ছাড়া অতিনিম্ন খরচের বিমানসংস্থা ফ্লেয়ার এয়ারলাইনস, ☏ +১-৮৩৩-৭১১-২৩৩৩।, আঞ্চলিক সংস্থা পোর্টার এয়ারলাইনস, ☏ +১-৮৮৮-৬১৯-৮৬২২।, এবং ভ্যাকেশন-ভিত্তিক সংস্থা এয়ার ট্রানসাট, ☏ +১-৫১৪-৯০৬-৫১১১। আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে। এছাড়াও কিছু আঞ্চলিক দেশীয় এয়ারলাইন রয়েছে যারা নির্দিষ্ট অঞ্চলে সেবা দেয়, এবং চার্টার ফ্লাইট রয়েছে যারা প্রধানত আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে।
অল্প কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া কানাডার তিন অক্ষরের আইএটিএ বিমানবন্দর কোড “ওয়াই” দিয়ে শুরু হয় এবং সংশ্লিষ্ট আইসিএও কোড “সিওয়াই” দিয়ে শুরু হয়।
কানাডা থেকে বা কানাডায় যাওয়া ফ্লাইটের ক্ষেত্রে লাগেজ বহনের নিয়ম সাধারণত ওজন-ভিত্তিক পদ্ধতির পাশাপাশি অংশভিত্তিক (piece-wise) পদ্ধতিতেও চলে, এমনকি বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যাগ চেক-ইন করার অনুমতি থাকে, যেখানে প্রতিটি ব্যাগের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার যোগফল একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। প্রতিটি ব্যাগের সর্বোচ্চ ওজন, ব্যাগের অনুমোদিত সংখ্যা এবং আকারের সঠিক নিয়ম আপনি কোন এয়ারলাইন ব্যবহার করছেন এবং কোন শ্রেণির টিকিটে ভ্রমণ করছেন তার উপর নির্ভর করে। সাধারণত ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাগের সর্বোচ্চ ওজন হতে পারে ২৩ কেজি (৫০ পাউন্ড)।
আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ফ্লাইটে ভ্রমণ করেন, তবে এয়ার কানাডা এবং সব মার্কিন-ভিত্তিক এয়ারলাইন (যেমন: আলাস্কা, আমেরিকান, ডেল্টা, ইউনাইটেড) চেক-ইন ব্যাগের জন্য ফি নেয়। সাধারণত একটি ব্যাগ (সর্বোচ্চ ২৩ কেজি বা ৫০ পাউন্ড) নিতে ফি হয় ২৫ মার্কিন ডলার এবং দ্বিতীয় ব্যাগের জন্য ৩৫–৫০ ডলার। তবে আপনার যদি এলিট সদস্যপদ থাকে, প্রথম শ্রেণি বা ব্যবসায় শ্রেণিতে ভ্রমণ করেন, অথবা ফি মওকুফের যোগ্য হন (যেমন: মার্কিন সেনা সদস্য), তাহলে এই ফি প্রযোজ্য হবে না।
আপনি যদি বড় কোনো কানাডীয় বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইট ধরেন, তবে সাধারণত যাত্রা শুরু করার আগে সেখানেই মার্কিন শুল্ক ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তাই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গাড়িতে করে
[সম্পাদনা]কানাডার স্থলসীমান্ত কেবল একটি দেশের সঙ্গে রয়েছে-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। মূলত দুটি প্রধান কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত রয়েছে: একটি হলো কানাডার দক্ষিণ সীমান্ত, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮টি সংলগ্ন অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে, আরেকটি পশ্চিম কানাডার সঙ্গে আলাস্কার সীমান্ত। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবেশের নিয়ম জানতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশটি দেখুন। সীমান্ত পারাপারের অপেক্ষার সময় জানতে কানাডা সীমান্ত সেবা সংস্থার (সিবিএসএ) ওয়েবসাইট চেক করতে ভুলবেন না-এভাবে ব্যস্ত সীমান্ত এড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় দেরি এড়ানো যাবে।
স্থলসীমান্তে যে নিয়ম প্রযোজ্য, তা বিমানবন্দরের কাস্টমসেও প্রযোজ্য (উপরে দেখুন)। আপনার কেস সহজ না হলে দেরি হতে পারে, কারণ কর্মকর্তারা (বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়) বিমানবন্দরের তুলনায় কম সংখ্যক অ-আমেরিকান ভ্রমণকারী দেখেন। ছুটির মৌসুমে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ সেসময় সীমান্তে যানজট হয়।
সীমান্ত পার হয়ে কানাডায় প্রবেশ করলে রাস্তার চিহ্নগুলো মেট্রিক এককে পরিবর্তিত হয়; দূরত্ব কিলোমিটারে এবং গতিসীমা কিমি/ঘণ্টা হিসেবে প্রদর্শিত হয়। এক মাইল সমান ১.৬০৯ কিমি। তাই কিলোমিটারকে মাইলে আনুমানিক রূপান্তর করতে ৫/৮ দ্বারা গুণ করুন; যেমন ৪০ কিমি প্রায় ২৫ মাইল এবং ১০০ কিমি/ঘণ্টা প্রায় ৬২.৫ মাইল/ঘণ্টা। যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কোনো গাড়ি চালান, তবে স্পিডোমিটারে সাধারণত উপরে বা বাইরে মাইল ও নিচে বা ভেতরে কিমি দেওয়া থাকে। যদি শুধু মাইল প্রদর্শিত হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রে সেটি মেট্রিক ইউনিটে পরিবর্তনের সুইচ থাকে; আপনার গাড়ির ম্যানুয়াল দেখে নিন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত গাড়িচালকদের আলাদা কোনো কানাডীয় বিমা নথি বহন করতে হয় না। তবে আপনার যুক্তরাষ্ট্রের বিমা পলিসি কানাডায় কার্যকর এবং সেখানে যেসব প্রদেশে চালাবেন, সেই প্রদেশগুলির ন্যূনতম বিমা শর্ত পূরণ করছে কি না তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। সব প্রদেশে মানক শর্ত হলো সি$২০০,০০০ দায়বদ্ধতা বিমা, কেবল নোভা স্কোশিয়ায় সি$৫০০,০০০ প্রয়োজন। তুলনায় বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যে ন্যূনতম শর্ত ইউএস$৫০,০০০ বা কম। অধিকাংশ আমেরিকান বিমা সংস্থা কানাডায় সম্পূর্ণ কভার দেয়, তবে কেউ কেউ আগাম জানাতে বা অতিরিক্ত ফি দিতে বলতে পারে। তাই সীমান্ত অতিক্রমের আগে আপনার বিমা এজেন্টের সঙ্গে কথা বলুন।
ভাড়ার গাড়িতে সীমান্ত অতিক্রম করা সহজ, বিশেষ করে বড় বহুজাতিক ভাড়ার গাড়ি সংস্থার ক্ষেত্রে। তারা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি নিয়ে কানাডায় ফেরত দেওয়া বা উল্টোটা অনুমতি দেয়। এমনকি যদি শুধু একদিনের জন্য কানাডা ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকে, তবুও আপনার ভাড়ার সংস্থাকে জানানো জরুরি, কারণ অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগবে।
রেলে করে
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: কানাডায় রেল ভ্রমণ, যুক্তরাষ্ট্রে রেল ভ্রমণ
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে
[সম্পাদনা]আমট্রাক, ☏ +১-২১৫-৮৫৬-৭৯২৪, নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১-৮০০-৮৭২-৭২৪৫। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রেল সংস্থা। তাদের ট্রেনে কানাডায় ঢোকা তুলনামূলক সস্তা (যেমন সিয়াটল থেকে ভ্যাঙ্কুভার রিটার্ন ভাড়া ইউএস$৪৩ থেকে শুরু), তবে সময় বেশি লাগে। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের রেলপথগুলো হলো:
- অ্যাডিরনড্যাক - মন্ট্রিয়ল থেকে নিউ ইয়র্ক।
- মেপল লিফ - টরন্টো থেকে নিউ ইয়র্ক নায়াগ্রা ফলস হয়ে। এই রুটটি ভিআইএ রেল কানাডার সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হয়।
- ক্যাসকেডস - ভ্যাঙ্কুভার থেকে সিয়াটল বেলিংহাম হয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ: আপনি যদি সীমান্ত পেরিয়ে অ্যামট্রাক পরিষেবায় ভ্রমণ করেন, তাহলে বোর্ডিংয়ের আগে অবশ্যই আপনার টিকিট বৈধতা যাচাই করাতে হবে। টিকিট আপনাকে কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে (কুইক-ট্র্যাক কিয়স্ক থেকে নয়) এবং এজেন্টকে আপনার পাসপোর্ট বা ভ্রমণ নথি দেখাতে হবে। (আপনার ভ্রমণ নথির তথ্য সীমান্ত সেবা কর্তৃপক্ষের কাছে আগে থেকেই ম্যানিফেস্ট আকারে পাঠানো হয় যাতে সীমান্ত পারাপার সহজ হয়)। কিছু স্টেশনে, যেমন নিউ ইয়র্ক সিটি, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য বিশেষ কাউন্টার থাকে।
ক্যাসকেডস লাইন (পোর্টল্যান্ড–সিয়াটল–ভ্যাঙ্কুভার) রুটে একটি সরলীকৃত প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। এখানে আপনি আপনার টিকিট কাউন্টার বা কিয়স্ক থেকে সংগ্রহ করতে পারেন, এমনকি বাড়িতেও প্রিন্ট করে নিতে পারেন, এবং বিশেষ "কানাডা-গামী" লাইনআপে (পোর্টল্যান্ড বা সিয়াটল থেকে) অথবা অন্য কোনো স্টেশন থেকে উঠলে কন্ডাক্টর টিকিট যাচাই করে থাকেন। মধ্য-পশ্চিম থেকে কানাডায় সরাসরি কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন নেই। তবে অ্যামট্রাক শিকাগো থেকে পোর্ট হিউরন ও ডেট্রয়েটের দিকে ট্রেন চালায়, যা মিশিগান–অন্টারিওর সীমান্তে অবস্থিত। সীমান্ত পেরিয়ে সারনিয়া ও উইনসরে প্রবেশের পর আপনি ভিয়া রেলের (VIA Rail) সেবায় চড়ে টরন্টো পর্যন্ত যেতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে
[সম্পাদনা]হোয়াইট পাস অ্যান্ড ইউকন রুট, ☏ +১-৮০০-৩৪৩-৭৩৭৩, ইমেইল: info@wpyr.com। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন রেলপথ, যা স্ক্যাগওয়ে, আলাস্কা থেকে চালিত হয় এবং উত্তর ব্রিটিশ কলাম্বিয়া হয়ে ইউকনের কারক্রসে যায়। টিকিটে হোয়াইটহর্স পর্যন্ত বাস স্থানান্তরও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি চিলকুট ট্রেইলের ট্রেইলহেডে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়। সার্ভিস মে থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত চালু থাকে।
বাসে করে
[সম্পাদনা]- গ্রেহাউন্ড লাইনস, ☏ +১ ২১৪-৮৪৯-৮১০০, নিঃশুল্ক ফোন নম্বর: +১-৮০০-২৩১-২২২২। সিয়াটল থেকে ভ্যাঙ্কুভার; নিউ ইয়র্ক শহর থেকে বাফেলো হয়ে টরন্টো; এবং বস্টন ও নিউ ইয়র্ক শহর থেকে মন্ট্রিয়ল পর্যন্ত বাস চলাচল করে।
নৌকায় করে
[সম্পাদনা]ক্রুজ জাহাজে করে
[সম্পাদনা]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল ও হ্যালিফ্যাক্সে বেশ কয়েকটি ক্রুজ লাইন ক্রুজ পরিচালনা করে। আবার পশ্চিমাঞ্চল থেকে ভ্যাঙ্কুভারে ক্রুজ চলে, যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো আলাস্কা ক্রুজ। অধিকাংশ পণ্যবাহী জাহাজ পূর্ব উপকূলে মন্ট্রিয়ল এবং পশ্চিম উপকূলে ভ্যাঙ্কুভারে যায়। আন্তর্জাতিক যাত্রীদের অবশ্যই আগমনের বন্দরেই কাস্টমস পার হতে হবে।
ফেরিতে করে
[সম্পাদনা]- নিউফাউন্ডল্যান্ডের ফরচুন ও সাঁ-পিয়ের ও মিকেলেঁর মধ্যে যাত্রীবাহী ফেরি চালু রয়েছে।
- মৌসুমি ফেরি (১ মে থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত) ইয়ারমাউথ ও পোর্টল্যান্ডের মধ্যে চলাচল করে।
মধ্য কানাডা
[সম্পাদনা]- উইনসর ও ডেট্রয়েটের মধ্যে একটি ট্রাক ফেরি চালু আছে। এটি মূলত অ্যাম্বাসাডর ব্রিজে নিষিদ্ধ বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- পিলি দ্বীপ থেকে কিংসভিল হয়ে ওহাইওর স্যান্ডাস্কিতে ছোট গাড়িবাহী ফেরি চলে, তবে বরফ বা আবহাওয়া অনুকূল থাকলে।
- মৌসুমি ছোট ফেরি উলফ দ্বীপ (অন্টারিও, কিংস্টনের কাছে) ও কেপ ভিনসেন্ট (নিউ ইয়র্কের) মধ্যে চলে।
পশ্চিম কানাডা
[সম্পাদনা]- আলাস্কা মেরিন মহাসড়ক প্রিন্স রুপার্টকে আলাস্কার কেচিকান ও জুনোর সঙ্গে যুক্ত করে।
- ওয়াশিংটন স্টেট ফেরি সিডনিকে (যা ভিক্টোরিয়ার কাছে) সান জুয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও অ্যানাকর্টেসের সঙ্গে যুক্ত করে (সিডনির রুট অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে)।
- ব্ল্যাক বল পোর্ট অ্যাঞ্জেলেস থেকে ভিক্টোরিয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িবাহী ফেরি চালায়; এছাড়াও পর্যটককেন্দ্রিক শুধুমাত্র যাত্রীবাহী ফেরি ভিক্টোরিয়া থেকে ওয়াশিংটনের বিভিন্ন স্থানে চলে।
ব্যক্তিগত নৌকায় করে
[সম্পাদনা]ছোট নৌযানে ভ্রমণ করে কানাডায় যাওয়াও সম্ভব, যেমন সাঁ-পিয়ের ও মিকেলঁ থেকে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী শহরগুলো থেকে-যেমন গ্রেট লেকস, সেন্ট লরেন্স সিওয়ে, নিউ ব্রান্সউইকের সেন্ট ক্লেয়ার নদী, এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় এলাকা থেকে। কানাডায় প্রবেশকারী ছোট নৌযানের ক্যাপ্টেনকে অবশ্যই যাত্রীদের নামার আগে কানাডীয় কাস্টমসে +১-৮৮৮-ক্যানপাস (২২৬-৭২৭৭) নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]কানাডা সত্যিই বিশাল, এটি আয়তনের দিক থেকে রাশিয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। অর্থাৎ, দেশের একাংশ ঘুরে দেখতে হলেও কয়েকদিন সময় লাগবে। এর দূরত্ব অনেক ভ্রমণকারীর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, যদিও বড় দেশের বাসিন্দাদের জন্য হয়তো তা ততটা বিস্ময়কর নয়।
তুলনা করার জন্য বলা যায়, নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে ভ্যাঙ্কুভার পর্যন্ত দূরত্ব (৫,০০০ কিমি বা ৩,০০০ মাইলের বেশি, সরাসরি রেখায়) লন্ডন থেকে মস্কো, বা দিল্লি থেকে সাংহাই বা ইস্তাম্বুল পর্যন্ত দূরত্বের চেয়েও অনেক বেশি।
তবে কানাডার জনসংখ্যার বিস্তৃতি খুব সীমিত। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ ভাগ মার্কিন সীমান্ত থেকে ১৬০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে, এবং ৫৭ ভাগ কানাডীয়রা সিয়াটলের অক্ষরেখার দক্ষিণে বাস করে। তাই কানাডায় ভ্রমণ প্রায় পুরোপুরি দক্ষিণের "কানাডীয় করিডোরে" সীমাবদ্ধ। উত্তর কানাডায় যেতে বা ভ্রমণ করতে প্রায়শই বিমানের প্রয়োজন হয়।
বিমানে করে
[সম্পাদনা]
দেশের ভেতরে ঘোরাঘুরির সেরা উপায় হলো বিমান। জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা এয়ার কানাডা সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ও ঘন ঘন ফ্লাইট পরিচালনা করে। ওয়েস্টজেট বিশেষত পশ্চিম কানাডায়, ক্যালগারি হাব থেকে এয়ার কানাডার একটি শক্তিশালী বিকল্প। তবে কানাডীয় এয়ারলাইনের প্রতি সুরক্ষানীতির কারণে ও উচ্চ করের কারণে ভাড়াগুলো সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া বা চীনের সমান দূরত্বের চেয়ে বেশি হয়। কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যাত্রা করলে তা সরাসরি দেশীয় ফ্লাইটের চেয়ে সস্তা হতে পারে।
তবে ২০২০-এর দশকের শুরু থেকে আল্ট্রা-লো-কস্ট ক্যারিয়ার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। যেমন, ফ্লেয়ার এয়ারলাইনস[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] এখন তুলনামূলকভাবে কম খরচে সেবা দেয়, যদিও অভিযোগ-বিশেষত ফ্লাইট বাতিল ও বাজে কাস্টমার সার্ভিস-খুবই সাধারণ।
উত্তর কানাডা ও অভ্যন্তরীণ এলাকায় বিশেষায়িত নির্ধারিত ও চার্টার বিমানসংস্থা পরিষেবা দেয়। দুর্ভাগ্যবশত, এসব ফ্লাইট সাধারণত অনেক ব্যয়বহুল। কিছু ক্ষেত্রে এয়ার কানাডা এক্সপ্রেস ও ওয়েস্টজেট এনকরে মতো বড় সংস্থার আঞ্চলিক অপারেশনগুলো এসব ছোট বিমানবন্দরে পরিষেবা দেয়, তবে তা ব্যতিক্রম।
বেশিরভাগ বড় বিমানবন্দরেই গণপরিবহন রয়েছে। এগুলো মূলত ট্রেন ও সংযোগকারী বাস, যা সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিনিট বা তার কম ব্যবধানে চলে (টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, উইনিপেগ, অটোয়া)। তবে রাতে বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বড় শহরের বাইরে এই পরিষেবা দুর্বল বা একেবারেই নাও থাকতে পারে। শহরের কেন্দ্র বা ডাউনটাউনে যেতে ভ্যাঙ্কুভার, মন্ট্রিয়ল, উইনিপেগ ও অটোয়া ছাড়া অন্য সব শহরে এক বা একাধিক সংযোগ পরিবর্তন করতে হয়। তাই বড় দল বা যাদের অনেক লাগেজ আছে, তাদের জন্য ট্যাক্সি বা শাটল ভালো বিকল্প।
কানাডার দেশীয় ফ্লাইটগুলো সেবার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মতোই। ইকোনমি ক্লাসে খাবার ও চেক-ইন লাগেজের জন্য আলাদা চার্জ দিতে হয়। এগুলো কেবল বিজনেস ক্লাস যাত্রী বা নিয়মিত যাত্রীদের (যাদের স্ট্যাটাস আছে) জন্য টিকিটের মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করলে বা এয়ারলাইনে অভিজাত মর্যাদা থাকলে দেশীয় ভ্রমণেও লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ থাকে।
বিমান কুরিয়ার
[সম্পাদনা]বিমান কুরিয়ার ভ্রমণ এখন প্রায় বিলুপ্ত একটি বিষয়। একসময় জরুরি নথি ও পার্সেল দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাত্রী টিকিটের চেক-ইন লাগেজের বরাদ্দ ব্যবহার করা হতো (যেমন প্যারিস থেকে মন্ট্রিয়াল পর্যন্ত যাত্রায়)। যেহেতু চেক-ইন লাগেজের সাথে অবশ্যই একজন যাত্রী থাকা বাধ্যতামূলক, তাই আসনটি ভ্রমণকারীর জন্য কেবল হাতে বহনযোগ্য লাগেজসহ কম ভাড়ায় দেওয়া হতো। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই সুবিধা এখন আর নেই। কারণ, বিমান সংস্থাগুলো তাদের কার্গো সেবা উন্নত করেছে এবং বড় পার্সেল পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন ফেডএক্স (FedEx) ও ইউপিএস (UPS)) নিজেদের বিমানেই অধিকাংশ পণ্য পরিবহন করছে।
বাসে করে
[সম্পাদনা]কানাডার বেশিরভাগ শহরের মধ্যে আন্তঃনগর বাস চলাচল করে। এগুলো সংশ্লিষ্ট অঞ্চল বা শহরের তালিকায় পাওয়া যাবে। অনেক কানাডীয় আন্তঃনগর বাস কোম্পানির সময়সূচি ও ভাড়া বাসবাডে দেওয়া আছে, যা উপযুক্ত যাত্রা খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
বেশিরভাগ রুট রাতে চালু থাকে না। ভিন্ন ভিন্ন পরিবহন কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় আশা করা উচিত নয়। দীর্ঘ দূরত্ব বা কম জনপ্রিয় গন্তব্যে পৌঁছাতে একাধিক কোম্পানির আলাদা টিকিট কাটতে হতে পারে এবং কিছু গন্তব্যে প্রতিদিন সেবা দেওয়া হয় না।
কানাডার অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাসে ভ্রমণের আগে সতর্কভাবে চিন্তা করা ভালো:
- কী কী বাস সেবা আছে, তাদের খরচ কত এবং তারা কখন চলে তা জেনে নিন।
- বাস পরিবর্তনের সময় কী সুবিধা পাওয়া যাবে তা খুঁজে দেখুন।
- ভ্রমণের বিকল্পগুলো যেমন বিমানযাত্রা বিবেচনা করুন। কানাডার বিমানের ভাড়া সাধারণত ব্যয়বহুল হলেও দূরের বড় শহরগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া প্রায়ই বাসের তুলনায় সস্তা হয়।
গাড়িতে করে
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: কানাডায় গাড়ি চালানো, কানাডায় গাড়ি ছাড়া

কানাডা একটি গাড়িনির্ভর দেশ, এবং অনেক ভ্রমণকারী গাড়ি ভাড়া নেয়। কানাডার অনেক বিখ্যাত প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান কেবল গাড়িতেই পৌঁছানো যায়। একা ভ্রমণ করলে এটি কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে, তবে একাধিক ব্যক্তি মিলে ভাড়া ভাগ করে নিলে খরচ সাশ্রয়ী হয়। তবে কানাডায় গাড়ি ভাড়ায় কিছু সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধা রয়েছে, যেমন:
- যেখানে থেকে গাড়ি নেওয়া হয়েছে তার বাইরে অন্য কোথাও ফেরত দিলে অতিরিক্ত ভাড়া অনেক বেশি হতে পারে।
- সাধারণত গাড়ি ভাড়ায় সীমাহীন কিলোমিটার কেবল সেই প্রদেশের জন্য দেওয়া হয় যেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো প্রদেশে ঢুকলেই (যত কম দূরত্বই হোক) ভাড়ার শর্ত বদলে যায় এবং ভ্রমণ সীমিত হয় (প্রায়ই দিনে ২০০ কিমি পর্যন্ত)।
- সাধারণত কেবল পাকা রাস্তায় চালানোর অনুমতি থাকে।
- কানাডায় কোনো ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনের গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যায় না।
কিছু ক্ষেত্রে, মিতব্যয়ী ভ্রমণকারীরা গাড়ি ডেলিভারির মাধ্যমে সস্তায় ভ্রমণ করতে পারে। তবে এটি খুব সাধারণ নয় এবং পথে বেশি সময় থামার সুযোগও থাকে না। তবুও, কানাডার ভেতর দিয়ে সস্তায় ভ্রমণের একটি উপায় হতে পারে। কানাডা ড্রাইভ অ্যাওয়ে এবং হিট দ্য রোড এই সেবা দেয়।
উত্তর আমেরিকার মূল ভূখণ্ডসহ কানাডায় গাড়ি ডানপাশ দিয়ে চলে এবং বেশিরভাগ গাড়ির স্টিয়ারিং বামদিকে থাকে। কেবল কিছু ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়।
ট্রান্স-কানাডা মহাসড়ক দেশটিকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে সংযুক্ত করেছে। বেশিরভাগ রাস্তাই চার লেন বা দুই লেনের সড়ক, আর মহাসড়ক (ফ্রিওয়ে) কেবল বড় শহরের কাছাকাছি কিছু অংশে সীমাবদ্ধ। উত্তর কানাডায় সড়ক নেটওয়ার্ক তুলনামূলকভাবে কম উন্নত, আর অনেক উত্তরাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ে সড়কপথে যাওয়া সম্ভব নয়।
মন্ট্রিয়াল, ভ্যাঙ্কুভার বা টরন্টোতে গাড়ি চালানো সবসময় সুবিধাজনক নয়। এ শহরগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এবং পার্কিং খুঁজে পাওয়া কঠিন ও ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে এ তিনটি শহরে ব্যাপক গণপরিবহন ব্যবস্থা আছে। তাই হোটেল বা কেন্দ্রীয় কোনো স্থানে গাড়ি রেখে গণপরিবহন ব্যবহার করা ভালো। বিমানবন্দর, সাবওয়ে কিয়স্ক ও রেলস্টেশনে গণপরিবহনের মানচিত্র পাওয়া যায়। এ শহরগুলোর বাইরে গণপরিবহন দুর্বল বা নেই বললেই চলে। তাই গাড়ি ছাড়া ঘোরা প্রায় অসম্ভব।
২০২২ সালের নভেম্বরে কানাডার বেশিরভাগ শহরে এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১.৬০ থেকে ২.০০ কানাডীয় ডলার। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে “চিপ ও পিন” না থাকলে পাম্পে ব্যবহার করা যায় না। তবে ভেতরে ক্যাশিয়ারের কাছে নিয়ে গেলে বেশিরভাগ কোম্পানি গ্রহণ করে।
সাধারণভাবে, বিদেশি দর্শনার্থীরা ইংরেজি বা ফরাসি ভাষায় লেখা ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে ৯০ দিন পর্যন্ত কানাডায় গাড়ি চালাতে পারে। এর পর তাদের বসবাসরত প্রদেশ বা অঞ্চলের কানাডীয় লাইসেন্স নিতে হয়। অন্য ভাষার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট (IDP) থাকতে হবে। অধিকাংশ বিদেশিকে কানাডীয় লাইসেন্স পেতে লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়। তবে কিছু প্রদেশে পারস্পরিক চুক্তি থাকায় নির্দিষ্ট বিদেশিদের পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। সঠিক তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙা বা গতিসীমা অতিক্রম করলে ক্যামেরায় ছবি তুলে জরিমানা করা হয়। ভাড়ার গাড়ির ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এসব টিকিট গাড়ির নিবন্ধিত মালিককে ডাকযোগে পাঠানো হয়, ফলে অভিযুক্ত চালক বিচার পাওয়ার সুযোগ প্রায় থাকে না। এগুলো স্থানীয় ও প্রাদেশিক সরকারের আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে।
আরভি করে
[সম্পাদনা]যদি আপনি সড়ক ভ্রমণে আগ্রহী হন, তবে গাড়ি ভাড়ার বিকল্প হিসেবে আরভি (মোটরহোম বা ক্যাম্পারভ্যান) ভাড়া নিতে পারেন। এতে আপনি নিজের সুবিধামতো কানাডা ঘুরে দেখতে পারবেন। কানাডার প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে চাইলে এটি বিশেষভাবে উপযুক্ত। খরচও গাড়ি ভাড়া ও হোটেলের খরচ একত্রে করার চেয়ে কম হতে পারে।
রেলে করে
[সম্পাদনা]

- আরও দেখুন: কানাডায় রেল ভ্রমণ, কানাডা জুড়ে রেলপথে, রাকি পর্বতারোহী
কানাডার রেলপথ অধিকাংশ উন্নত দেশের তুলনায় অনেকটাই অপর্যাপ্ত। কানাডার যাত্রীবাহী রেলসেবা প্রায়শই ব্যয়বহুল, ধীরগতি এবং অন্যান্য যাতায়াতের তুলনায় অসুবিধাজনক। কানাডায় কোনো দ্রুতগতির ট্রেন নেই এবং দীর্ঘ রুটে প্রায়ই দেরি হয়। তবুও, দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেত্রে এটি আন্তঃনগর বাসের তুলনায় দ্রুত ও আরামদায়ক হতে পারে, কারণ অধিকাংশ বাসরুট রাতে চলে না এবং আলাদা অপারেটরদের সময়সূচি সাধারণত সমন্বিত থাকে না। সরকার-নিয়ন্ত্রিত ভিআ রেল কানাডার প্রধান দীর্ঘ দূরত্বের রেল সংস্থা, যা ক্যালগেরি ছাড়া প্রায় সব প্রধান শহরে সেবা দেয়। তবে সময় ও অর্থ পর্যাপ্ত থাকলে, কানাডার ট্রেন নিরাপদ, আরামদায়ক এবং বিশ্বের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ দেয়। ২০২৪ সাল থেকে হোস্টেলিং ইন্টারন্যাশনালের সদস্যরা ভিআ রেল কানাডায় ১০% ছাড় পাচ্ছেন।
তবে কুইবেক সিটি-উইনসর করিডর, যা মন্ট্রিয়েল, অটোয়া ও টরন্টোর মধ্য দিয়ে গেছে, সেখানে যাত্রীবাহী রেল অনেক উন্নত।
কুইবেক সিটি–উইনসর করিডরের বাইরে অন্টারিও ও কুইবেকে একদিনের ভ্রমণের ট্রেন রয়েছে এবং মধ্য প্রদেশগুলির বাইরে চারটি বহু দিনের সেবা চালু আছে। দ্য কানাডীয় টরন্টো থেকে ভ্যাঙ্কুভার পর্যন্ত সবচেয়ে বিখ্যাত সেবা এবং ভিআ রেলের প্রধান ট্রেন। এই চার দিনের যাত্রায় কানাডার প্রেইরি অঞ্চল ও রকি পর্বতমালা অতিক্রম করে, যেখানে গম্বুজাকৃতির পর্যবেক্ষণ কার থেকে যাত্রীরা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। দ্য ওশান মন্ট্রিয়েল থেকে হ্যালিফ্যাক্স পর্যন্ত যায়, কানাডীয় মেরিটাইম অঞ্চল অতিক্রম করে এবং নিউ ব্রান্সউইকের উত্তর অংশে চমৎকার সাগর দৃশ্য দেখার সুযোগ দেয়। এটি এক দিন ও এক রাত সময় নেয়। উইনিপেগ–চার্চিল রুটে দুই দিন ও দুই রাত সময় লাগে হাডসন উপসাগরের তীরে পৌঁছাতে এবং এটি উত্তর কানাডায় যাওয়া একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন। ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় দ্য স্কিনা জ্যাসপার থেকে প্রিন্স রুপার্ট পর্যন্ত দুই দিনে যাত্রা করে, যা ভিআ রেলের যেকোনো রুটের মধ্যে সেরা দৃশ্য দেয়। তবে এই ট্রেনটি রাতে প্রিন্স জর্জে অবস্থান করে এবং টিকিটে শহরে রাতযাপনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে না।
ভিআ রেলের বাইরে কিছু যাত্রীবাহী রেলপথও আছে, যা মূলত সেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যেখানে সড়কপথে যাওয়া কঠিন। অন্টারিও নর্থল্যান্ড রেলওয়ে, অন্টারিও প্রাদেশিক সরকারের মালিকানাধীন, কোচরেন থেকে মুসোনি পর্যন্ত পোলার বেয়ার এক্সপ্রেস চালায়, যা কানাডার একমাত্র ট্রেন যেখানে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুবিধা আছে। কিওয়াটিন রেলওয়ে কোম্পানি একটি ফার্স্ট নেশন্স মালিকানাধীন রেলওয়ে, যা দ্য পাস থেকে পুকাতাওয়াগান পর্যন্ত যায় এবং উত্তর ম্যানিটোবার প্রত্যন্ত ফার্স্ট নেশন্স সম্প্রদায়গুলিকে সেবা দেয়। তশিউইতিন রেল ট্রান্সপোর্টেশন একটি ফার্স্ট নেশন্স মালিকানাধীন রেলপথ, যা উত্তর কুইবেক ও পশ্চিম ল্যাব্রাডরে সেপ্ট-ইল থেকে শেফারভিল পর্যন্ত চলে।
কিছু পর্যটন ট্রেনও আছে যা আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে, তবে এগুলো মূলত ভ্রমণ ও দৃশ্য উপভোগের জন্য, পরিবহনের জন্য নয় এবং সাধারণত সমমানের বিমান, গাড়ি, বাস বা এমনকি ভিআ রেল যাত্রার তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল। রকি মাউন্টেনিয়ার সবচেয়ে পরিচিত, যা গ্রীষ্মকালে (এপ্রিলের শেষ থেকে অক্টোবরের শুরু) ভ্যাঙ্কুভার থেকে তিনটি রুটে চালানো হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মনোমুগ্ধকর হলো ফার্স্ট প্যাসেজ টু দ্য ওয়েস্ট, যা ভ্যাঙ্কুভার থেকে ব্যানফ পর্যন্ত ঐতিহাসিক কানাডীয় প্যাসিফিক রেলওয়ে ধরে যায়। এটি দুই দিনে সম্পন্ন হয়, কামলুপসে এক রাত অবস্থান করতে হয়। তবে টিকিট খুব ব্যয়বহুল এবং এই সেবা সম্পূর্ণরূপে পর্যটকদের জন্য।
টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার ও মন্ট্রিয়েলে কমিউটার রেল সেবাও আছে, যা শহরতলী ও নিকটবর্তী শহর থেকে যাত্রী পরিবহন করে। কিছু স্টেশনে পার্ক অ্যান্ড রাইড সুবিধা থাকে, যেখানে আপনি গাড়ি পার্ক করে শহরে ট্রেনে যেতে পারেন। তবে সময়সূচি অবশ্যই দেখে নিন, কারণ কিছু লাইন শুধু ব্যস্ত সময়ে একমুখী চলাচল করে।
নৌকায় করে
[সম্পাদনা]দেশের বিভিন্ন নদী পারাপারে এবং হ্রদ ও নদীতে নৌভ্রমণ থাকলেও মূল ফেরি সেবাগুলো দেশের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে।
মেরিন আটলান্টিক নর্থ সিডনি, নোভা স্কোশিয়া থেকে পোর্ট-অ-বাস্কস, নিউফাউন্ডল্যান্ড পর্যন্ত ফেরি সেবা দেয়। ইল দ্য লা মাদেলিন-এও ফেরি যায়, সাধারণত সুরিস থেকে, এবং খুব কম সময়ে মন্ট্রিয়েল থেকেও চালু হয়।
বিসি ফেরিস ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে, ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ এবং আশপাশের দ্বীপগুলোতে বিস্তৃত ফেরি নেটওয়ার্ক চালায়। এর বহু রুটে জাহাজে ভ্রমণের নানা সুবিধা থাকায় বিসি-র উপকূলীয় এলাকায় ভ্রমণকারীদের কাছে এটি জনপ্রিয়।
অন্যের গাড়িতে
[সম্পাদনা]কানাডা অন্যের গাড়িতে ভ্রমণ করার জন্য ভালো জায়গা হতে পারে। এখনো অনেক তরুণ পর্যটক, যারা সীমিত বাজেটে বা রোমাঞ্চের খোঁজে থাকে, এটি করে থাকে। পশ্চিম প্রদেশগুলোতে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যদিও জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে। দক্ষিণ অন্টারিও ও মন্ট্রিয়েলের নগর এলাকায় অন্যের গাড়িতে ভ্রমণ নিশ্চিত নয়, কারণ অনেক চালক সেখানকার লিফটারদের গাড়িতে নেন না।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেমন উইনসর–কুইবেক করিডর, আগে প্রধান রাস্তা প্রতিটি শহরের ভেতর দিয়ে যেত। ১৯৬০-এর দশকে একটি মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়, ফলে এখন তিনটি বিকল্প আছে-পুরোনো রাস্তায় অন্যের গাড়িতে যাওয়া (যেখানে ধীরগতি এবং বেশিরভাগই স্থানীয় যানবাহন থাকে), মহাসড়কের ধারে দাঁড়ানো (যা বেআইনি হলেও অস্বাভাবিক নয়), অথবা অন-র্যাম্পে দাঁড়ানো এবং আশা করা কেউ আপনার পথে যাচ্ছে। কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় (যেমন উত্তর অন্টারিওর ট্রান্স-কানাডা মহাসড়কর বিস্তৃত অংশে), পাকা রাস্তাই একমাত্র মহাসড়ক, যেখানে যাত্রীরা (এবং লিফটাররাও) যে কোনো জায়গায় প্রবেশ করতে পারেন।
ওয়াওয়া নামের ছোট শহরটি ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে খ্যাত ছিল, কারণ পশ্চিমমুখী লিফটাররা এখানে আটকা পড়ত, অনেক সময় দিনের পর দিন। এখনো সেখানে কেবল যাওয়া যাত্রা গ্রহণ না করাই ভালো; বরং এমন যানবাহন খুঁজুন যা থান্ডার বে পর্যন্ত যায়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বড় শহরের দিকে যাওয়া লিফট খোঁজা ভালো, কারণ এতে পরবর্তী যাত্রা, খাবার বা থাকার ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া সহজ হয় এবং বিপজ্জনক প্রাণী বা খারাপ আবহাওয়ায় আশ্রয়হীন অবস্থার ঝুঁকি কমে।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় প্রিন্স রুপার্ট ও প্রিন্স জর্জর মধ্যবর্তী ১৬ নম্বর মহাসড়ককে “মহাসড়ক অব টিয়ার্স” বলা হয়, কারণ এখানে অনেক মানুষ, বিশেষত আদিবাসী নারী নিখোঁজ বা খুন হয়েছেন। ভ্রমণকারীদের, বিশেষত নারীদের, যেকোনো মূল্যে এই রুটে অন্যের গাড়িতে ভ্রমণ এড়ানো উচিত।
শীতকালে অন্যের গাড়িতে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই ভালো (একান্ত প্রয়োজন না হলে), কারণ শীতকালে দিন ছোট হয় এবং তুষারঝড় বা বিপজ্জনক আবহাওয়ায় চালকরা আপনাকে সহজে দেখতে পান না।
পৃথিবীর অন্য যেকোনো স্থানের মতোই, অন্যের গাড়িতে ভ্রমণে ঝুঁকি থাকে।
গাড়িতে যাত্রী ভাগাভাগি
[সম্পাদনা]রাইড শেয়ারিং তথা গাড়িতে যাত্রী ভাগাভাগি পদ্ধতি ক্রমই জনপ্রিয় হচ্ছে। ইন্টারনেট সাইট ক্রেইগলিস্ট এবং নিবেদিত রাইড শেয়ারিং ওয়েবসাইট যেমন কাংগারাইড, পোপারাইড এবং রাইডশেয়ারঅনলাইনের ব্যবহারকারীদের মধ্যে। এই পরিবহন পদ্ধতি প্রধান কেন্দ্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করে, যেমন টরন্টো–মন্ট্রিয়েল বা ভ্যাঙ্কুভার–ক্যালগেরি। সাধারণভাবে ট্রান্স-কানাডা মহাসড়ক করিডর বরাবর (ভিক্টোরিয়া, ভ্যাঙ্কুভার, বানফ, ক্যানমোর, ক্যালগেরি, রেজাইনা, উইনিপেগ, থান্ডার বে, সৌল্ট সেন্ট মেরি, সাডবুরি, টরন্টো, অটোয়া, মন্ট্রিয়েল, কুইবেক সিটি, সেন্ট জনস, হ্যালিফ্যাক্স, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড) ভ্রমণে তারিখ কিছুটা নমনীয় হলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
কিছু পর্যটন গন্তব্য, বিশেষত তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় স্থান, রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো যায়, যেমন: ভ্যাঙ্কুভার–হুইসলার বা ক্যালগেরি–বানফ। যাত্রীরা সাধারণত জ্বালানির খরচ সমানভাবে বহন করে, আর দীর্ঘ যাত্রায় তাদের কিছুটা গাড়ি চালাতেও বলা হতে পারে।
সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য অন্তত এক সপ্তাহ আগে যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করে বিজ্ঞাপন পোস্ট করুন এবং অফার বিজ্ঞাপনগুলো দেখা শুরু করুন। ব্যাকপ্যাকার হোস্টেলের নোটিশ বোর্ডও রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য ভালো উৎস হতে পারে।
লিফটে ভ্রমণের মতোই এখানে কিছু সাধারণ জ্ঞান ও সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
হেঁটে
[সম্পাদনা]ট্রান্স কানাডা ট্রেইল ২৭,০০০ কিমি (২০২০ সালের হিসেবে) বিস্তৃত, যা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত পৌঁছেছে।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]কানাডা একটি দেশ যেখানে পুরো দেশ জুড়ে রয়েছে বহু দর্শনীয় স্থান। প্রতিটি প্রদেশ ও অঞ্চল আলাদা বৈশিষ্ট্যের এবং তাদের প্রত্যেকটির রয়েছে নিজস্ব বিশেষ আকর্ষণ।
উত্তর আমেরিকার বন্যপ্রাণী দেশজুড়ে দেখা যায়।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া অনেক কিছুর জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ভ্যানকুভার, বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর; হাইদা গুই (কুইন শার্লট দ্বীপপুঞ্জ) যা পরিবেশবিদদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য; এবং ভ্যানকুভার দ্বীপ। প্রদেশের অভ্যন্তরে পশ্চিম কর্ডিলেরা ও পশ্চিম রকি পর্বতমালা দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপহার দেয়, আর এর মাঝে রয়েছে দুটি বিশ্ববিখ্যাত কানাডীয় রকি জাতীয় উদ্যান
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, ইওহো জাতীয় উদ্যান এবং কুটেনি জাতীয় উদ্যান। দক্ষিণ-মধ্য ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিখ্যাত ওকানাগান অঞ্চলের জন্য, যা সারাবছর নরম আবহাওয়া ও উৎকৃষ্ট মানের আঙুরের মদের জন্য দেশজুড়ে পরিচিত। কানাডার সেরা স্কি ও স্নোবোর্ডিং অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বিভিন্ন জায়গায়, হয় প্রতিষ্ঠিত রিসোর্টে বা ব্যাককান্ট্রিতে; এর মধ্যে হুইসলার সবচেয়ে বিখ্যাত। দেশে সবচেয়ে বেশি প্রাদেশিক উদ্যান রয়েছে এই প্রদেশে, আর অনেকগুলিতে প্রতিবছর ১,০০০ জনেরও কম পর্যটক আসেন।
কানাডার উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোতে পৌঁছানো প্রায়ই ব্যয়বহুল হলেও সেগুলো পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে অক্ষত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এলাকা। ইউকন অঞ্চলে রয়েছে মহিমান্বিত উত্তরাঞ্চলীয় পর্বতমালা, যেমন ক্লুয়েন জাতীয় উদ্যান এবং তুলনামূলকভাবে অজানা টম্বস্টোন টেরিটোরিয়াল পার্ক। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল বহু অভিযাত্রীর কাছে অপরিচিত হলেও এটি সত্যিকার অর্থেই “মৎস্য শিকারিদের স্বর্গরাজ্য”, যেখানে হাজারো অক্ষত হ্রদ রয়েছে এবং সেগুলোতে বড় মাছ, বিশেষত শক্তিশালী স্টার্জন মজুদ থাকে। এই অঞ্চলে রয়েছে অত্যন্ত খ্যাতিমান জাতীয় উদ্যান যেমন নাহানি জাতীয় উদ্যান রিজার্ভ, দূরবর্তী আউলাভিক জাতীয় উদ্যান, এবং উড বাফেলো জাতীয় উদ্যানের উত্তরাংশ। নুনাভুট অঞ্চলে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর অক্ষত আর্কটিক ভূমি, যা লুকানো রয়েছে বাফিন দ্বীপ এবং এলস্মেয়ার দ্বীপের মতো প্রায় অপ্রবেশযোগ্য জায়গায়।
আলবার্টা কানাডার সবচেয়ে ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যময় প্রদেশগুলোর একটি। এর পশ্চিমে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত রকি পর্বতমালা; ক্যালগেরিতে আয়োজিত “গ্রেটেস্ট আউটডোর শো অন আর্থ” ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিড; প্রাদেশিক রাজধানী এডমন্টনে অবস্থিত ওয়েস্ট এডমন্টন মল; ড্রামহেলারের কাছে অবস্থিত অনুর্বর ব্যাডল্যান্ডস; আর উত্তরের অরণ্যভূমির অজানা সীমান্ত। ক্যালগেরি ও এডমন্টন উভয়ই বিশ্বমানের শহর এবং এখানে রয়েছে জাদুঘর ও অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। আলবার্টায় রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ব্যানফ জাতীয় উদ্যান এবং জ্যাসপার জাতীয় উদ্যান, পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য প্রাদেশিক উদ্যান, যেমন কানানাসকিস কান্ট্রির উদ্যান।
সাসকাচুয়ান ও ম্যানিটোবা প্রদেশকে সাধারণত “ফ্লাই-ওভার প্রদেশ” বলা হয়, অর্থাৎ এখানে দেখার মতো তেমন কিছু নেই বলে মনে করা হয়। তবে যারা আসেন তারা আসলেই অনেক কিছু আবিষ্কার করেন। সাসকাচুয়ান বিখ্যাত তার সমতল ভূমির জন্য, যা অন্টারিও ও কুইবেকের কৃষিজমির সাথে অভ্যস্তদের জন্য ভিন্ন অভিজ্ঞতা, কারণ এখানে গাছের অভাব ও শস্য সংরক্ষণাগারের আধিক্য চোখে পড়ে। গ্রাসল্যান্ডস জাতীয় উদ্যান অক্ষত প্রেইরি প্রাকৃতিক দৃশ্য সংরক্ষণ করেছে এবং একটি সপ্তাহান্তের ভ্রমণের জন্য এটি আদর্শ স্থান। রেজাইনা ও সাসকাটুন এই প্রদেশের দুই বড় শহর, যেগুলো আকারে ছোট হলেও বড় শহরের সব সুযোগ-সুবিধা মেলে। উত্তর সাসকাচুয়ান এখনো মূলত জনমানবশূন্য, আর এটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে প্যাডলিং ও মাছ ধরার অন্যতম কেন্দ্র। ম্যানিটোবার ভৌগোলিক গঠন সাসকাচুয়ানের মতোই-সমতল ভূমি আর কম জনবসতিপূর্ণ উত্তরাঞ্চলীয় অরণ্য। রাইডিং মাউন্টেন জাতীয় উদ্যান দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রদান করে, আর ওয়াপাস্ক জাতীয় উদ্যান হাডসন উপসাগরের তীরে অবস্থিত, যা কানাডার অধিকাংশ মেরুভালুর প্রজনন ক্ষেত্র। ম্যানিটোবার সবচেয়ে বড় শহর উইনিপেগ, যা পশ্চিম কানাডার প্রথম বড় শহর হিসেবে ইতিহাসে সমৃদ্ধ। ইতিহাসপ্রেমীরা এখানে অনেক কিছু দেখার সুযোগ পান। চার্চিল শহর বিখ্যাত মেরুভালু দেখার জন্য, এতটাই যে এখানে বিশেষ “পোলার বেয়ার প্যাট্রোল” রয়েছে এবং আক্রমণের সময় পালাতে সুবিধার জন্য গাড়ি ও বাড়ির দরজা খোলা রাখাই আইনসিদ্ধ। সাপপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নরসিস স্নেক ডেনস, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপের আবাসস্থল হিসেবে স্বীকৃত। প্রতি বসন্তে লাল ডোরাকাটা গার্টার সাপ শীতকালীন গর্ত থেকে বেরিয়ে এখানে প্রজনন উৎসবে অংশ নেয়।
অন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশে রয়েছে “উইন্ডসর-কুইবেক করিডর”, যা দেশের দুই বৃহত্তম মহানগরী টরন্টো ও মন্ট্রিয়লকে যুক্ত করেছে। একইসাথে এই দুই প্রদেশে রয়েছে বিশাল গ্রামীণ এলাকা ও বহু দুর্গম অঞ্চল, যেখানে সড়কপথ নেই। জাতীয় রাজধানী অটোয়া-গাটিনোতে রয়েছে অসংখ্য জাদুঘর। কুইবেক সিটি (১৬০৮) ও মন্ট্রিয়ল (১৬৪০) তাদের পুরোনো শহরাঞ্চল ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, বিশেষত কুইবেক সিটি এখনো তার প্রাচীরঘেরা পুরোনো শহর সংরক্ষণ করেছে।
অনেক প্রদেশে পায়োনিয়ার গ্রাম ও ঐতিহাসিক স্থাপনা প্রারম্ভিক উপনিবেশিক জীবনের স্মৃতি ধরে রেখেছে, যখন যন্ত্রশক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি। ইউনাইটেড এম্পায়ার লয়ালিস্টদের দেশত্যাগ ও ১৮১২ সালের যুদ্ধের স্মৃতি এখনো টিকে আছে অন্টারিও ও নিউ ব্রান্সউইকের সীমান্তবর্তী এলাকায়। অ্যাটলান্টিক কানাডা এখনো সংরক্ষণ করেছে অনেক আদি আকাডিয়ান ঐতিহ্য।
মেরিটাইম প্রদেশগুলো ভ্রমণকারীদের কাছে অনেক সময় অদেখা থেকে যায়, কারণ অনেকে পশ্চিমের পর্বতমালার দিকে চলে যান। তবে নোভা স্কশিয়া সংরক্ষণ করেছে তার সামুদ্রিক ঐতিহ্য। এখানে রয়েছে পেগিস কোভের বিখ্যাত বাতিঘর, লুনেনবার্গের ঐতিহাসিক জাহাজঘাট এবং লুইসবুর্গের উপকূলীয় দুর্গ, যা একটি ছোট উপনিবেশিক গ্রামের সমান বড়। প্রদেশের উত্তরে রয়েছে কেপ ব্রেটন দ্বীপ, যেখানে বিখ্যাত ক্যাবট ট্রেইল এবং মনোরম ব্রাস দ’অর হ্রদের তীর রয়েছে। প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপের বালুকাময় সৈকত সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত, কারণ এটি “অ্যান অব গ্রীন গেবলসের” জন্মভূমি। পার্কস কানাডা পরিচালিত গ্রিন গেবলস ঐতিহাসিক স্থানটিকে এই বিখ্যাত কাহিনির জীবন্ত প্রতিরূপে রূপান্তর করা হয়েছে। নিউ ব্রান্সউইককে অনেক সময় “ড্রাইভ থ্রু প্রদেশ” বলা হয়, তবে এটি আসলে অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ধারণ করে। উত্তরের অ্যাপালাচিয়ান পর্বতমালা অপরিষ্কার প্রকৃতি উপহার দেয় এবং ফান্ডি জাতীয় উদ্যানসহ ফান্ডির তটরেখায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জোয়ার। সেন্ট জন নদীর উপত্যকা মনোরম দৃশ্য উপহার দেয় এবং একজন ভ্রমণকারী সহজেই এডমুন্ডস্টন থেকে সেন্ট জন পর্যন্ত নদীপথ ধরে গাড়ি চালাতে পারেন।
নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল ছোট ছোট মাছধরার গ্রাম বা “আউটপোর্ট” দিয়ে ভরা। এখানে রয়েছে চারটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান-গ্রোস মরনে জাতীয় উদ্যান, মিস্টেকেন পয়েন্ট, আন্স-অক্স-মেডোসে ভাইকিংদের পুরাতাত্ত্বিক স্থান, এবং রেড বেতে অবস্থিত একটি বাস্ক তিমি শিকার শিবির, ল্যাব্রাডরে।
সাংস্কৃতিক পর্যটন
[সম্পাদনা]কানাডার বিশাল ভূগোল ও অভিবাসনের ইতিহাসের কারণে এখানে রয়েছে অসংখ্য “জাতিগত এলাকা” যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি কানাডার প্রধান ইউরোপীয়-উদ্ভূত সংস্কৃতির পাশাপাশি সহাবস্থান করছে। কানাডীয়রা প্রায়ই তাদের বংশপরিচয় নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন, এমনকি সেটা “চতুর্থাংশ এই আর অর্ধেক সেটা” হলেও। এখানে কাউকে “ইউক্রেনীয়” বা “ইতালীয়” বলা অশোভন নয়, যতক্ষণ না বোঝানো হচ্ছে যে তারা পূর্ণাঙ্গ কানাডীয় নন।
এই স্বাতন্ত্র্যের গর্ব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় কুইবেক প্রদেশে, যা প্রধানত ফরাসিভাষী। তবে এখানেও রয়েছে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী যেমন মন্ট্রিয়লের ইহুদি ও ইতালীয় বা গ্রামীণ কুইবেকের ইংরেজ ও আইরিশ সম্প্রদায়। আরও পূর্বদিকে রয়েছে আকাডিয়ানরা, যাদের নিজস্ব ইতিহাস ও জীবনধারা আটলান্টিক উপকূলে গড়ে উঠেছে। একই উপকূলে রয়েছে শক্তিশালী কেল্টিক প্রভাব, যা দেখা যায় কেপ ব্রেটন দ্বীপ ও নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরের সঙ্গীত ঐতিহ্যে, বিশেষ করে নিউফাউন্ডল্যান্ডের আইরিশ লুপে। অতিমাত্রায় বিশ্বজনীন টরন্টোর বিভিন্ন অভিবাসী মহল্লার পাশাপাশি অন্টারিওর ছোট শহরগুলোতেও রয়েছে ভিন্ন স্বাদ: থান্ডার বেতে ফিনিশ প্রভাব, কিচেনারে জার্মান প্রভাব ইত্যাদি। পশ্চিমে ম্যানিটোবা প্রদেশে আইসল্যান্ডার, মেনোনাইট ও ইউক্রেনীয়দের প্রভাব দেখা যায়, বিশেষত উইনিপেগে। ইউক্রেনীয়দের প্রসঙ্গে বলা যায়, আলবার্টার কালাইনা কান্ট্রি এক বিশাল “ইকো-মিউজিয়াম” যা তাদের প্রতি উৎসর্গীকৃত। কানাডায় বহু চায়নাটাউন রয়েছে, তবে ভ্যানকুভার ও ভিক্টোরিয়ার মতো ঐতিহাসিক নয় কোনোটি।
আদিবাসী সংস্কৃতি এখনো স্বতন্ত্র, তবে তাদের ইতিহাস জটিল ও বেদনাদায়ক। কানাডার ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরে সরকার চেষ্টা করেছে এই সংস্কৃতি ধ্বংস করতে, যেমন জোর করে শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা করে আবাসিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল যাতে তারা মূলধারার শ্বেতাঙ্গ কানাডীয় সংস্কৃতিতে মিশে যায়। বেশিরভাগ আদিবাসী জনগণ দীর্ঘদিন দূরবর্তী ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে থেকেছেন এবং ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত সরকার তাদের স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে দেয়নি। ফলে সাধারণ কানাডীয়দের সাথে তাদের যোগাযোগ কম ছিল। সাম্প্রতিক দশকে অনেকে শহরে চলে এসেছেন, প্রায়শই অল্পশিক্ষিত অবস্থায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও আসক্তির সমস্যাসহ। এতে জাতিগত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখন নতুন শিক্ষিত আদিবাসী মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠছে, যারা এই বিষয়গুলো মূলধারায় তুলছে এবং সরকারও ঐতিহাসিক অবিচার কাটিয়ে উঠতে কিছু অগ্রগতি করছে। এখন এক ধরনের “মিলনোৎসব” বা পুনর্মিলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যদিও সমস্যা রয়ে গেছে। ভ্রমণকারীদের উপর এসবের প্রভাব পড়ে না, তবে এটি ব্যাখ্যা করে কেন পর্যটনশিল্পে এখনো তুলনামূলকভাবে কম আদিবাসী মালিকানাধীন ব্যবসা রয়েছে, যদিও বিশ্বব্যাপী “আসল অভিজ্ঞতা”-র প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সহজভাবে বলতে গেলে, অধিকাংশ কানাডীয় এখনো আদিবাসী রিজার্ভ এড়িয়ে চলে। তবে এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, কারণ আদিবাসী সরকার নিজেরা জাদুঘর, ক্যাসিনো, হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি গড়ে তুলছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালগেরির কাছে ব্ল্যাকফুট ক্রসিং ঐতিহাসিক উদ্যান, সাসকাটুনের ওয়ানুস্কেউইন হেরিটেজ পার্ক, বা এডমন্টনের কাছে রিভার ক্রি হোটেল ও ক্যাসিনো। এর পাশাপাশি অনেক সময় ফেডারেল বা প্রাদেশিক সরকার পরিচালিত পার্ক ও জাদুঘর যেমন ভিক্টোরিয়ার রয়্যাল ব্রিটিশ কলম্বিয়া মিউজিয়াম, গাটিনোর কানাডার ইতিহাস জাদুঘর, অথবা আলবার্টার দক্ষিণে হেড স্ম্যাশড ইন বাফেলো জাম্প আদিবাসী সংস্কৃতি জানার সেরা স্থান। অবশ্য উত্তর কানাডায় পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন, কারণ তিনটি উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বড় সংখ্যালঘু। ফলে এখানে পর্যটন কার্যক্রম মূলত আদিবাসী সংস্কৃতিনির্ভর এবং তাদের প্রস্তাবিত কার্যক্রমও সেই অনুযায়ী।
দর্শক ক্রীড়া
[সম্পাদনা]- আইস হকি - কানাডার জাতীয় খেলা, যা এখানে শুধু “হকি” নামে পরিচিত, এবং এটি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাভাষী কানাডীয়দের মধ্যে অন্যতম ঐক্যের প্রতীক। এই খেলায় সর্বোচ্চ পেশাদার লিগ হলো ন্যাশনাল হকি লিগ (এনএইচএল), যা কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভাগাভাগি করে। এনএইচএলের ৩২ দলের মধ্যে সাতটি কানাডাভিত্তিক, যথা মন্ট্রিয়ল, টরন্টো, অটোয়া, উইনিপেগ, ক্যালগেরি, এডমন্টন ও ভ্যানকুভার। যদিও সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে কোনো কানাডীয় দল এনএইচএল জিতেছিল, তবুও প্রায় সব দলের (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দলগুলোসহ) উল্লেখযোগ্য অংশের খেলোয়াড়ই কানাডীয়। মৌসুমের ফাইনালকে বলা হয় স্ট্যানলি কাপ, যেখানে মে ও জুন মাসে দুই ফাইনালিস্ট দলের মধ্যে খেলা হয় এবং চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হয়।
- পুরুষ ও মহিলাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কানাডীয় দল সাধারণত ভালো করে। পুরুষরা শীতকালীন অলিম্পিকে নয়বার স্বর্ণপদক জিতেছে। মহিলারা ১৯৯৮ সাল থেকে পাঁচবার জিতেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেকোনো খেলায় সবচেয়ে তীব্র।
- কানাডীয় ফুটবল - যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ফুটবলের সঙ্গে খুবই মিল আছে, তবে বেশ কিছু নিয়মগত পার্থক্যের কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র খেলা। কানাডায় “ফুটবল” বলতে সাধারণত কানাডীয় বা আমেরিকান ফুটবল বোঝায়, আর “অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল”কে বলা হয় “সকার”। এই খেলার সর্বোচ্চ পেশাদার প্রতিযোগিতা হলো কানাডীয় ফুটবল লিগ (সিএফএল), যেখানে নয়টি দল অংশ নেয়। মৌসুমের ফাইনাল ম্যাচকে বলা হয় গ্রে কাপ।
- বাস্কেটবল - কানাডার সঙ্গে বাস্কেটবলের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। অন্টারিওর অ্যালমন্টের কানাডীয় জেমস নাইস্মিথ ছিলেন এই খেলার উদ্ভাবক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এনবিএ) একটি দল টরন্টো র্যাপ্টর্স কানাডাভিত্তিক।
- বেসবল - যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেজর লিগ বেসবলের (এমএলবি) একটি দল, টরন্টো ব্লু জেস কানাডায় অবস্থিত।
- ল্যাক্রোস - কানাডার জাতীয় গ্রীষ্মকালীন খেলা। ন্যাশনাল ল্যাক্রোস লিগ একটি ইনডোর ল্যাক্রোস লিগ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি এবং কানাডার ৫টি দল অংশ নেয়। ঐতিহ্যবাহী ফিল্ড ল্যাক্রোস মূলত অপেশাদার পর্যায়ে খেলা হয়, যেখানে কানাডীয় ইউনিভার্সিটি ফিল্ড ল্যাক্রোস অ্যাসোসিয়েশন এই খেলার প্রধান প্রতিযোগিতা।
- শর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটিং - বিশেষত কুইবেকে জনপ্রিয়, যেখানে অসংখ্য অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে।
- সকার - অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল বা সকার কানাডার বড় শহরগুলোতে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় হচ্ছে। কানাডার তিনটি বৃহত্তম শহরের (টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ভ্যানকুভার) দলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেজর লিগ সকার (এমএলএস)-এ, যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আরও ২৫টি দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ২০১৯ সালে কানাডা নিজস্ব কানাডীয় প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) চালু করেছে, যা দেশে এমএলএসের পাশাপাশি সর্বোচ্চ মানের লিগ হিসেবে স্বীকৃত। সিপিএলের আটটি দল রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র দুটি এমএলএস দলের বাজারের সঙ্গে মিলে যায় (ভ্যানকুভার ও ইয়র্ক অঞ্চল)। কানাডার পুরুষ জাতীয় দল ২০২০-এর দশকের শুরুতে দ্রুত সাফল্য অর্জন করেছে। তারা ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপের জন্য উত্তর আমেরিকার বাছাইপর্বে প্রথম হয় এবং ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে পৌঁছে। মহিলাদের জাতীয় দল বিশ্বসেরা, যারা ২০২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছে।
- ফর্মুলা ১ - জুন মাসে মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত হয় ফর্মুলা ওয়ান কানাডীয় গ্র্যান্ড প্রিক্স। “ওয়াল অব চ্যাম্পিয়নসের” কাছে টিকিট বুক করাই শ্রেয়, যেখানে কিংবদন্তি মাইকেল শুমাখার ও লুইস হ্যামিল্টনও দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। তবে এই আসনগুলো দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়, তাই আগে থেকেই বুক করা দরকার। কানাডায় এই রেস দেখা এক উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে আন্ডারডগ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে।
- কার্লিং - স্কটিশ এক খেলা, যেখানে বরফের উপর বড় গ্রানাইট পাথর ঠেলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের যতটা সম্ভব কাছে স্থির করা হয়। স্কটিশ অভিবাসীরা এটি কানাডায় নিয়ে আসে। বর্তমানে কানাডা আন্তর্জাতিকভাবে এই খেলায় সবচেয়ে সফল দেশ এবং সবচেয়ে উন্নত ঘরোয়া অবকাঠামোও এখানেই রয়েছে। এখানে বহু পেশাদার প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়, পাশাপাশি বার্ষিক কানাডীয় কার্লিং ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ হয়, যেখানে সেরা অপেশাদার খেলোয়াড়রা তাদের প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। অন্টারিও প্রদেশ থেকে দুটি দল অংশ নেয়-একটি উত্তরাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্যটি দক্ষিণাংশের।
কী করবেন
[সম্পাদনা]
কানাডা একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দেশ। এখানে প্রতিবছর নানা উৎসব ও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা দেশের বহুসাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উদযাপন করে। প্রতিটি উৎসব কানাডার ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিচয়কে উপস্থাপন করে। ঋতুভেদে এসব উৎসব সহজেই চেনা যায়।
বসন্ত
[সম্পাদনা]দেশের কিছু অঞ্চলে এপ্রিল ও মে মাসে কানাডার সঙ্গীত উৎসব মৌসুম শুরু হয়। ইয়েলোনাইফে বসন্তে ক্যারিব্লুজ উৎসব হয়, হ্যালিফ্যাক্সে স্কটিয়া ফেস্টিভ্যাল অফ মিউজিকে চেম্বার মিউজিক উপস্থাপিত হয় এবং অটোয়াতে কানাডীয় টিউলিপ ফেস্টিভ্যালে কনসার্ট, ফুল আর ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
কানাডা বিশ্বব্যাপী থিয়েটার উৎসবের জন্যও বিখ্যাত। স্ট্রাটফোর্ডে স্ট্রাটফোর্ড ফেস্টিভ্যাল এবং নিয়াগ্রা-অন-দ্য-লেকে শ’ ফেস্টিভ্যাল বসন্তে শুরু হয় এবং শরৎ পর্যন্ত চলে। শিশুদের জন্যও বেশ কিছু উৎসব হয়, যেমন ক্যালগারির ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফেস্টিভ্যাল এবং প্রতিবছরের সাসকাচুয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ফর ইয়াং পিপল।
গ্রীষ্ম
[সম্পাদনা]
২১ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত কানাডায় ১০ দিনব্যাপী উদযাপন চলে। ২১ জুন শুরু হয় ন্যাশনাল অ্যাবরিজিনাল ডে দিয়ে, ২৪ জুন হয় সেন্ট-জ্যঁ-ব্যাপটিস্ট ডে যা ফরাসি-কানাডীয়দের পৃষ্ঠপোষক সন্তকে সম্মান জানায়, ২৭ জুন কানাডীয় মাল্টিকালচারালিজম ডে পালিত হয় এবং ১ জুলাই দেশব্যাপী উৎসবের মাধ্যমে কানাডা ডে উদযাপন করা হয়।
এছাড়াও গ্রীষ্মকালে নানা সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীত উৎসব হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েলোনাইফের সামার সলস্টিস ফেস্টিভ্যাল, ক্যালগারির রেগে-ফেস্ট, উইন্ডসরের ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম ফেস্টিভ্যাল (ডেট্রয়েটের সঙ্গে), ক্যালগারির স্ট্যাম্পিড, উইনিপেগের ফোকলোরামা, টরন্টোর ক্যারিবানা, মন্ট্রিয়লের লে ফ্রাঙ্কোফোলি, মন্ট্রিয়লের জ্যাজ ও কমেডি ফেস্টিভ্যাল, নিউ ব্রান্সউইকের ফেস্টিভ্যাল আকাদিয়ান দ্য ক্যারাকেত, লন্ডনের রিব-ফেস্ট, সার্নিয়ার বে-ফেস্ট, শার্লটটাউনে জ্যাজ ও ব্লুজ ফেস্টিভ্যাল, এবং কলিংউডের এলভিস ফেস্টিভ্যাল। এডমন্টনকে ‘ফেস্টিভ্যাল সিটি’ বলা হয়, কারণ এখানে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় ফ্রিঞ্জ থিয়েটার ফেস্টিভ্যালসহ বহু উৎসব হয়।
শরৎ
[সম্পাদনা]শরৎকাল মূলত সাহিত্য ও চলচ্চিত্র উৎসবের মৌসুম। সাহিত্যানুরাগীরা উপভোগ করতে পারেন ত্রোয়া-রিভিয়েরের দ্বিভাষিক ফেস্টিভ্যাল ইন্টারন্যাশনাল দ্য লা পোয়েজি, হ্যালিফ্যাক্সের আটলান্টিক কানাডা স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যাল এবং টরন্টোর ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ অথরস। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য রয়েছে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ভ্যাঙ্কুভারের ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, মন্ট্রিয়লের ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, আটলান্টিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনসের ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরও অনেক কিছু।
কিচেনার-ওয়াটারলুতে বাভারিয়ার বাইরে সবচেয়ে বড় অক্টোবারফেস্ট হয়। নয় দিনের এই উৎসবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম হয়। স্থানীয় অনেক ভেন্যু বিয়ার গার্ডেনে রূপান্তরিত হয় এবং উৎসব চলাকালীন জার্মান নাম ধারণ করে। কিচেনার-ওয়াটারলুর অক্টোবারফেস্ট প্রতিবছর ৭ লক্ষাধিক দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে।
শরৎ এ সময়ে পরিবারগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে নানা শরৎ উৎসবে বা গ্রামীণ পরিবেশে বেড়াতে গিয়ে।
শীত
[সম্পাদনা]শীতকালে কানাডীয়রা ও তাদের পরিবার স্কি রিসোর্ট ও স্থানীয় হকি রিঙ্কে গিয়ে বরফে খেলাধুলা উপভোগ করে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কানাডার বিশ্ববিখ্যাত শীতকালীন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে কুইবেক সিটিতে কার্নিভাল দ্য কুইবেক এবং অটোয়া ও গাতিনোতে উইন্টারলুড/বাল দ্য নেজ। এছাড়াও কিছু উৎসব কানাডার দৃঢ় অগ্রদূতদের স্মরণ করে, যেমন উইনিপেগের ফেস্টিভ্যাল দ্য ভোয়েজুর এবং হোয়াইটহর্সে ইউকন সাওয়ারডো রঁদেভু ফেস্টিভ্যাল।
ক্যালগারিতে জানুয়ারি মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় হাই পারফরম্যান্স রোডিও। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাটক, নৃত্য ও সঙ্গীত উপস্থাপিত হয়। এটি কানাডার অন্যতম প্রধান নতুন ও পরীক্ষামূলক থিয়েটার উৎসব।
বিশেষ করে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও আলবার্টাতে স্কি ও স্নোবোর্ডিং খুব জনপ্রিয় এবং শীতকালে নিয়মিতভাবে মানুষ এগুলো উপভোগ করে। এই দুই প্রদেশে বিশ্বের সেরা স্কি রিসোর্টগুলোর মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে। ভ্যাঙ্কুভার থেকে দুই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত হুইসলার ব্ল্যাককম্ব অন্যতম বিখ্যাত রিসোর্ট। বান্ফ ও জ্যাসপার জাতীয় উদ্যানেও স্কি জনপ্রিয় (যথাক্রমে ক্যালগারি থেকে ১৩০ কিমি এবং এডমন্টন থেকে ৩৭০ কিমি দূরে)।
কানাডীয়রা বরফে স্কেটিং করতে ভালোবাসে। শীতকালে দেশজুড়ে পার্কের পথগুলোতে পানি ছেড়ে বরফ তৈরি করা হয়, যাতে মানুষ খোলা আকাশের নিচে স্কেটিং উপভোগ করতে পারে।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: Legacy_retailers#Canada
কানাডার জনপ্রিয় উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে স্মোকড স্যামন এবং ম্যাপল সিরাপজাত পণ্য।
মুদ্রা
[সম্পাদনা]|
কানাডীয় ডলার-এর বিনিময় হার
July 2025-এর হিসাবে:
বিনিময় হার ওঠানামা করে। এই এবং অন্যান্য মুদ্রার বর্তমান রেট XE.com থেকে পাওয়া যায় |
কানাডার মুদ্রা হলো কানাডীয় ডলার (প্রতীক: $, আইএসও কোড: CAD), যা প্রচলিতভাবে "বাক" নামে পরিচিত। এটি সাধারণভাবে "বাক" (অপভাষা), "$1" কয়েনকে বোঝাতে ব্যবহৃত "লুনি" (ডাকনাম, তবে এখন পুরো মুদ্রার জন্যও ব্যবহৃত হয়), কিংবা কানাডীয় ফরাসিতে উন পিয়াসত্র নামে পরিচিত। কানাডীয় ডলার বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলির একটি হিসেবে গণ্য হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জে সহজেই পাওয়া যায়। কানাডায় (এবং এই নিবন্ধে) যেখানে "$" চিহ্ন দেখা যাবে, সেখানে ধরে নেওয়া হবে সেটি কানাডীয় ডলার, যদি না এর আগে অন্য কোনো আদ্যক্ষর উল্লেখ থাকে (যেমন "US$" মানে মার্কিন ডলার)।
এক ডলার সমান ১০০ সেন্ট (¢)। কানাডীয় কয়েনগুলো হলো ৫¢ (নিকেল), ১০¢ (ডাইম), ২৫¢ (কোয়ার্টার), $১ (লুনি) এবং $২ (টুনি)। ১¢ মুদ্রা বাতিল করা হয়েছে, তবে এখনও বৈধ মুদ্রা হিসেবে গণ্য হয়। ৫০¢ মুদ্রা খুব কম দেখা যায়, তবে সেটিও বৈধ। নিকেল, ডাইম এবং কোয়ার্টার রূপালি রঙের; লুনি সোনালি রঙের; আর টুনির মাঝখানটা সোনালি এবং বাইরের অংশটা রূপালি। ডাইম সবচেয়ে ছোট, আর অন্যগুলির আকার ক্রমানুসারে বড় হয়। বর্তমানে দুই ধরনের কানাডীয় কয়েন চালু আছে-এক সেটে প্রয়াত রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের ছবি, আরেক সেটে রাজা চার্লস তৃতীয়ের ছবি। কানাডীয় ব্যাংকনোট বা "বিল" পলিমার উপাদান দিয়ে তৈরি, যেগুলো $৫ (নীল), $১০ (বেগুনি), $২০ (সবুজ), $৫০ (লাল) এবং $১০০ (বাদামি) মূল্যে পাওয়া যায়। পুরনো কাগজের নোট অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আর গ্রহণ করা হয় না, তবে বিনামূল্যে যেকোনো ব্যাংকে বদলানো যায়।
নিকেল, ডাইম এবং কোয়ার্টারের আকার, আকৃতি ও রঙ প্রায় মার্কিন কয়েনের মতো। কানাডায় অনেক সময় মার্কিন কয়েন সরাসরি গ্রহণ করা হয় (যদিও যন্ত্রের ক্ষেত্রে সাধারণত সমস্যা হয়)।
মার্কিন ডলার ঐতিহাসিকভাবে কানাডীয় ডলারের তুলনায় শক্তিশালী হওয়ায়, কানাডায় পণ্য সাধারণত তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হয়।
বকশিশ
[সম্পাদনা]
কানাডায় বকশিশ দেওয়ার রীতি যুক্তরাষ্ট্রের মতো হলেও তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম, কারণ এখানে ন্যূনতম মজুরি বেশি। কানাডায় রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা সাধারণত করের আগে মোট বিলের ১৫–১৮% বকশিশ পান। তবে ক্যাফেটেরিয়া, ফাস্ট ফুড দোকান এবং টেকঅ্যাওয়ে স্টলে বকশিশ দেওয়া প্রয়োজন হয় না। সাধারণত হোটেলের পরিচারিকাদেরও বকশিশ দেওয়ার আশা করা হয় না। কানাডায় দ্বিগুণ অঙ্কের বিক্রয় করের সঙ্গে বকশিশ যোগ করলে রেস্টুরেন্টের খাবারের মোট খরচ মেনুর দামের চেয়ে প্রায় ২৫–৩০% বেশি হয়ে যায়।
কিছু প্রদেশে (যেমন কুইবেক ও অন্টারিও) নিয়োগকর্তারা এমন কর্মীদের জন্য কম ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে পারেন যাদের কাছ থেকে বকশিশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, অনেক সময় বার বা রেস্টুরেন্ট নিজেরাই ১৫–১৮% বকশিশ যোগ করে দেয়, তাই বড় দল বা যারা ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধ করেন তাদের উচিত আগে দেখে নেওয়া যে বিলের মধ্যে “সার্ভিস চার্জ” আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত আছে কি না, যাতে একবারে দ্বিগুণ না দিয়ে বসেন।
দর-কষাকষি
[সম্পাদনা]কানাডায় সাধারণ দোকানে কেনাকাটার সময় দর-কষাকষি করা একেবারেই বিরল। দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে দর-কষাকষি করলে সাধারণত কোনো লাভ হয় না (বরং কর্মচারীর ধৈর্য্য পরীক্ষার ঝুঁকি থাকে)। তবে এটি বড় কোনো সমস্যা নয়, কারণ কানাডার খুচরা বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং অর্থনীতি উন্নত হওয়ায় দোকানগুলো পণ্যের দাম সাধারণত ন্যায্য রাখে, অতিরিক্ত লাভের চেষ্টা করে না। তবে দামী জিনিসপত্র, বিশেষ করে উচ্চমানের ইলেকট্রনিকস বা গাড়ির ক্ষেত্রে অনেক কর্মচারী কমিশনের ওপর কাজ করেন, তাই দর-কষাকষির সুযোগ থাকে। অনেক সময় বিক্রেতা টিকিটে লেখা দামের চেয়ে শুরুতেই কিছুটা কম দাম প্রস্তাব করতে পারেন। কিছু বড় দোকান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের কম দামের প্রমাণ দেখাতে পারলে আপনাকে ছাড় দেয়। তবে ফ্লি মার্কেট, পুরাতন জিনিসপত্রের দোকান বা কৃষকের বাজারে দর-কষাকষি করে কম দামে পণ্য কেনা সম্ভব। কিছু জাতিগত মার্কেট বা দোকানেও দর-কষাকষি করা যায়। এর একটি পরিচিত উদাহরণ হলো মার্কহামের প্যাসিফিক মল।
কিছু বড় খুচরা দোকান প্রতিদ্বন্দ্বীর দাম মেনে নিলেও এই প্রথা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
দর-কষাকষি
[সম্পাদনা]কানাডায় সাধারণ খুচরা কেনাকাটায় দর-কষাকষি প্রায় নেই বললেই চলে। দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে দামের ব্যাপারে দরাদরি করার চেষ্টা করলে কোনো ফল পাওয়া যায় না (বরং কর্মচারীর ধৈর্য পরীক্ষা করা হয়)। তবে এটি সাধারণত কোনো সমস্যা নয়, কারণ কানাডার অধিকাংশ খুচরা বিক্রেতা ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও ভালো অর্থনীতির কারণে ক্রেতাদের ঠকানোর চেষ্টা করে না।
বড় মূল্যের জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে- বিশেষ করে দামী ইলেকট্রনিকস ও গাড়ির ক্ষেত্রে- অনেক কর্মী কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করে, তাই এখানে দর-কষাকষি সম্ভব। এমনকি অনেক সময় বিক্রেতারা শুরু থেকেই ট্যাগকৃত মূল্যের চেয়ে কম দামে অফার করে। কিছু বড় খুচরা দোকান প্রতিদ্বন্দ্বী দোকানে একই জিনিস কম দামে বিক্রি হচ্ছে প্রমাণ করতে পারলে আপনাকে ছাড় দিয়ে থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়, যেমন ফ্লি মার্কেট, পুরনো জিনিসের দোকান ও কৃষকের বাজারে দর-কষাকষি করা সম্ভব। কিছু জাতিগত মল বা দোকানেও দর-কষাকষি করা যায়। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো মারখামের প্যাসিফিক মল।
কিছু বড় ও খুচরা দোকান এখনো প্রতিদ্বন্দ্বীর দামের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়, যদি আপনি কম দামের প্রমাণ দেখাতে পারেন। তবে এই নিয়ম ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
মুদ্রা বিনিময়
[সম্পাদনা]কানাডীয় ডলারকে দৈনিক বাজারমূল্যে ব্যাংকে গিয়ে বেশিরভাগ প্রধান মুদ্রার সঙ্গে বিনিময় করা যায়। মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড ও ইউরো সহজে রূপান্তর করা যায়, তবে অন্যান্য মুদ্রার ক্ষেত্রে এটি কঠিন। অনেক সময় বেসরকারি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যাংকের তুলনায় ভালো রেট ও কম ফি দেয়।
পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অনেক দোকান মালিকরা মার্কিন ডলার গ্রহণ করে, তবে অফিসিয়াল হারের চেয়ে কিছুটা কমে (সাধারণত ১০–১৫ সেন্ট কম)। মার্কিন ও কানাডীয় কয়েনের আকার কাছাকাছি হওয়ায় অনেক সময় এগুলো একে অপরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত মার্কিন পর্যটকপ্রবণ এলাকায় এটি বেশি দেখা যায়।
ক্রেডিট কার্ড
[সম্পাদনা]
কানাডায় ক্রেডিট কার্ড ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ভিসা ও মাস্টারকার্ড প্রায় সর্বত্র গ্রহণযোগ্য, আমেরিকান এক্সপ্রেস তুলনামূলকভাবে কিছু কম। ডিসকভার ও ডাইনার্স ক্লাব সাধারণত বিদেশি পর্যটককেন্দ্রিক জায়গা যেমন হোটেল ও গাড়ি ভাড়া সংস্থায় গ্রহণ করা হয়। ইউনিয়নপে ও জেসিবি কার্ডও বড় দোকান বা এশীয় পর্যটকদের লক্ষ্য করে তৈরি জায়গায় নেওয়া হয়। যেখানে ডিসকভার গ্রহণ করা হয়, সেখানে ইউনিয়নপেও গ্রহণযোগ্য এবং যেখানে আমেরিকান এক্সপ্রেস নেওয়া হয়, সেখানে জেসিবিও নেওয়া হয়। সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ভালো বিনিময় হার পাওয়া যায়, কারণ ব্যাংক দৈনিক বাজারমূল্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুদ্রা রূপান্তর করে।
কানাডায় ১ সেন্টের কয়েন আর চালু নেই, তাই মোট বিল নগদে পরিশোধ করার সময় তা ৫ সেন্টের নিকটতম অঙ্কে রাউন্ড করা হয়। তবে ক্রেডিট কার্ডে যে পরিমাণ কাটা হয় সেটি আসল, রাউন্ড করা নয়।
আমেরিকান ভিজিটরদের জন্য যাদের ক্রেডিট কার্ড সিস্টেমে ৬ সংখ্যার পোস্টাল কোড দিতে হয়, তাদের নিজেদের জিপ কোডের শেষে একটি ০ যোগ করতে বলা হয়।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ও কেনাকাটা
[সম্পাদনা]কানাডার ব্যাংকিং ব্যবস্থা উন্নত, নিরাপদ ও প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক। এখানে এটিএম ব্যবহার অনেক বেশি। ব্যাংকের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা তোলা যায়, তবে অনেক সময় এর ফি ক্রেডিট কার্ডের চেয়ে বেশি হয়। সম্ভব হলে চার্টার্ড ব্যাংকের এটিএম ব্যবহার করতে হবে, কারণ স্বাধীন এটিএম মেশিনের চেয়ে এগুলোর চার্জ কম হয়।
সব কানাডীয় ব্যাংক ইন্টারাক নামক দেশীয় আর্থিক লেনদেন নেটওয়ার্কের সদস্য। বেশিরভাগ দোকান, রেস্টুরেন্ট ও বার ইন্টারাকের মাধ্যমে এটিএম কার্ডে পেমেন্ট নিতে রাজি হয়, এমনকি যদি তারা বড় কোনো ক্রেডিট কার্ড না নেয়। অনেক কানাডীয় নগদ অর্থ প্রায়ই ব্যবহারই করেন না, বরং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতিই বেছে নেন।
অন্যান্য এটিএম নেটওয়ার্কও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। সাধারণভাবে, যেসব প্রতিষ্ঠান ভিসা কার্ড ইস্যু করে (যেমন আরবিসি, টিডি, সিআইবিসি, স্কশিয়াব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, দেশার্দাঁ), তারা প্লাস এটিএম কার্ড গ্রহণ করে। যেসব প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড ইস্যু করে (যেমন আরবিসি, বিএমও, ন্যাশনাল ব্যাংক, অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন), তারা সিরাস বা মাস্টারোর কার্ড গ্রহণ করে।
কর ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]কানাডায় প্রদর্শিত দামের সঙ্গে সাধারণত কর যুক্ত থাকে না, তাই আপনাকে প্রদর্শিত দামের চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, থ্রিফট শপে যদি কোনো জিনিসের দাম এক ডলার হয়, তবে করসহ বিল হতে পারে ১.১৩ ডলার। আর নগদে পরিশোধের সময় সেটি রাউন্ড হয়ে দাঁড়াবে ১.১৫ ডলার, কারণ ১ সেন্টের কয়েন আর নেই।
ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে বিলের ওপর কর যোগ হয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে, যেমন মোটর জ্বালানি (পাম্পে প্রদর্শিত দামই চূড়ান্ত), পার্কিং ফি ও ভেন্ডিং মেশিনের পণ্য, যেখানে প্রদর্শিত দামেই সব কর অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কানাডায় একটি জাতীয় পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) ৫% প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপর প্রযোজ্য। এর পাশাপাশি অনেক প্রদেশে প্রাদেশিক বিক্রয় কর (পিএসটি) আছে। অন্টারিও ও আটলান্টিক প্রদেশগুলো (নিউ ব্রান্সউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড অ্যান্ড ল্যাব্রাডর, নোভা স্কোশিয়া, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড) জিএসটি ও পিএসটি একত্র করে “হারমোনাইজড সেলস ট্যাক্স” (এইচএসটি) চালু করেছে। কুইবেকে পিএসটি “টিভিকিউ” (taxe de vente du Québec) নামে পরিচিত, আর জিএসটি “টিপিএস” (taxe sur les produits et services) নামে।
যদিও জিএসটি, পিএসটি বা এইচএসটি বেশিরভাগ পণ্য ও সেবার ওপর প্রযোজ্য, কিছু জিনিস এর বাইরে থাকে। যেমন মৌলিক মুদি দ্রব্য (অপ্রস্তুত), প্রেসক্রিপশন ওষুধ, আবাসিক বাড়ি, চিকিৎসা ও দন্তচিকিৎসা সেবা, শিক্ষা সেবা ও কিছু শিশু যত্ন সেবা। সাধারণত পিএসটির করমুক্ত তালিকা জিএসটি/এইচএসটির চেয়ে বড় হয়।
২০২৪ সালের করহারগুলো হলো:
- আলবার্টা, নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিজ, নুনাভুত ও ইউকন – শুধু ৫% জিএসটি (মোট ৫%)
- ব্রিটিশ কলাম্বিয়া – ৭% পিএসটি + ৫% জিএসটি (মোট ১২%)
- ম্যানিটোবা – ৮% পিএসটি + ৫% জিএসটি (মোট ১৩%)
- অন্টারিও – এইচএসটি ১৩% (মোট ১৩%)
- প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড, নিউ ব্রান্সউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড অ্যান্ড ল্যাব্রাডর ও নোভা স্কোশিয়া – এইচএসটি ১৫% (মোট ১৫%)
- কুইবেক – ৯.৯৭৫% পিএসটি + ৫% জিএসটি (মোট ১৪.৯৭৫%)
- সাসকাচেওয়ান – ৫% পিএসটি + ৫% জিএসটি (মোট ১০%)
অতিরিক্ত কর কিছু পণ্যের ওপর আরোপিত হয়, যেমন অ্যালকোহল ও গ্যাসোলিন, এবং প্রদেশভেদে ভিন্ন হয়। তবে সাধারণত এই করগুলো প্রদর্শিত দামের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জ্বালানির পাম্পের দামে সব কর অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কিছু শহর আবার বাড়তি শহরকর আরোপ করে। উদাহরণস্বরূপ, নোভা স্কোশিয়ার হ্যালিফ্যাক্স শহরে এইচএসটির ওপর অতিরিক্ত ২% শহরকর আছে, ফলে সেখানে মোট বিক্রয় কর দাঁড়ায় ১৭%।
কানাডায় ভিজিটরদের জন্য বিক্রয় কর ফেরত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
খাওয়া
[সম্পাদনা]
সাধারণভাবে বলতে গেলে, কানাডায় টেবিল ম্যানার বা খাবার টেবিলের শিষ্টাচার ইউরোপের মানদণ্ডের সঙ্গে মিল রয়েছে।
ইংরেজি ভাষাভাষী কানাডীয়দের কাছে “কানাডীয় খাবার” বলতে কী বোঝানো হয়, তা নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয়। কারণ, কানাডার ইংরেজি অঞ্চলের রান্না অঞ্চলভেদে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। কিছু বিশেষ খাবারের মধ্যে আছে ম্যাপল সিরাপ, নানাইমো বার (চকোলেট দিয়ে আচ্ছাদিত, ভ্যানিলা বাটার বা কাস্টার্ড ভর্তি ও কুচি বিস্কুটের বেসযুক্ত নো-বেক মিষ্টি), বাটার টার্ট (মাখন, চিনি ও ডিম দিয়ে তৈরি টার্ট), বিবার টেইল (ভাজার পর চিনির গুঁড়া ছড়ানো আটা), ফিডলহেড (ফার্ন গাছের কচি পাতা), পিমিল বেকন (মেদবিহীন শূকরের মাংস দিয়ে তৈরি বিশেষ বেকন, যা কর্নমিলে গড়িয়ে ভেজানো হয়; নাশতায় ডিমের সঙ্গে বা দুপুরে স্যান্ডউইচে খাওয়া হয়), এবং হ্যালিফ্যাক্স ডোনেয়ার (মশলাদার বিফ মিটলোফ, পিতায় মুড়ে পেঁয়াজ, টমেটো ও মিষ্টি কনডেন্সড মিল্ক সস দিয়ে পরিবেশিত)। এগুলো কানাডীয় রান্নার এক অনন্য, যদিও সরল, অংশ। অন্যদিকে, ইংরেজিভাষী কানাডীয় খাবার উত্তর যুক্তরাষ্ট্রের রান্নার সঙ্গে মিল রাখে। অনেক কানাডীয় জানেনই না যে, তাঁদের “জাতীয় খাবার” বলতে কিছু আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কানাডীয় শেফ ও রেস্তোরাঁ মালিকরা স্থানীয় পণ্য দিয়ে রান্না করার দিকে ঝুঁকছেন। বড় শহরের বেশ কিছু বিস্ট্রোতে এখন স্থানীয় ও জাতীয় খাবার পরিবেশিত হয়। এসবের মধ্যে থাকতে পারে বন্যপ্রাণীর মাংস যেমন ক্যারিবু, তেতুলিয়া, মুজ, হরিণ বা বুনো টার্কি-যা ইউরোপীয় রীতি অনুসারে রান্না করা হয়।
ফরাসিভাষী কানাডীয়দের খাবার একেবারেই স্বতন্ত্র। বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে তুরতিয়ের (মাংসের পাই, যার ইতিহাস কুইবেক প্রতিষ্ঠার সময় ১৬০০ সালের দিকে), সিপাই (মাংস ও সবজি পাই), ক্রেতন (শূকরের চর্বির কিমা), রাগু দ্য পাত (শূকরের পায়ের ঝোল), প্লোরিন (শূকরের পাই), ওরেইয় দ্য ক্রিস্ত (ভাজা বেকন), পুটিন (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিজ কার্ডস ও গ্রেভি দিয়ে তৈরি, যা এখন পুরো কানাডা জুড়েই জনপ্রিয়), ক্রকিনিওল (শর্টেনিংয়ে ভাজা ঘরোয়া ডোনাট), তার্ত আ লা ফারলুশ (কিসমিস, আটা ও গুড় দিয়ে তৈরি পাই), তার্ত ও সুকর (চিনি পাই), আর নানা ধরনের চিজ ও ম্যাপল সিরাপজাত খাবার। আকাডিয়ান অঞ্চলে আবার ভিন্ন ধরনের খাবার জনপ্রিয়, যেমন পুলে ত্রিকো, আর পুটিন রাপে (মাংস ভরা আলুর ডাম্পলিং)। এখানকার প্রধান খাবার হলো বেকড বিনস, মটরশুঁটি আর হ্যাম। ফরাসি-কানাডীয় রান্নায় ইংরেজিভাষী উত্তর আমেরিকা ও ফ্রান্সের রান্নার প্রভাবও রয়েছে।
কানাডার আদিবাসীদের রান্নাও স্বতন্ত্র। তবে এসব রান্না সাধারণ কানাডীয়দের মধ্যে তেমন প্রচলিত নয়, কারণ এতে থাকে কিছু অচেনা উপাদান (যেমন ব্যানক, বাইসন, হরিণ, মুকটুক ইত্যাদি)। এসব খেতে হলে সাধারণত তাঁদের অঞ্চলে ভ্রমণ করতে হয়। তবে বড় শহরগুলোতে আদিবাসী রেস্তোরাঁও এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে।
কানাডার ছোট শহরগুলোতে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো চাইনিজ-কানাডীয় রেস্তোরাঁর উপস্থিতি। এর পেছনে ঐতিহাসিকভাবে চীনা অভিবাসীদের অবদান রয়েছে, বিশেষ করে আন্তঃমহাদেশীয় রেলপথ নির্মাণে। এসব রেস্তোরাঁয় সাধারণ চাইনিজ ফাস্টফুড পরিবেশিত হয়। মার্কিন দর্শনার্থীদের কাছে এটি পরিচিত মনে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের চাইনিজ ফাস্টফুড সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। তবে টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার-এ, যেখানে চীনা অভিবাসীদের সংখ্যা অনেক, সেখানকার চাইনিজ খাবার হংকংয়ের আসল রান্নার সমতুল্য। এ দুই শহরের পুরোনো চায়নাটাউন নতুন শহরতলির চায়নাটাউনের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। আসল চাইনিজ খাবার পেতে হলে ভ্যাঙ্কুভারের রিচমন্ড বা টরন্টোর রিচমন্ড হিল ও মার্কহামে যেতে হয়, যেখানে চীনা বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যাই বেশি।
মন্ট্রিয়েল পরিচিত তার মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় ইহুদি খাবারের জন্য। এখানে স্থানীয় বাগেল আর স্মোকড মিট বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কানাডার প্রেইরি অঞ্চলে আবার ইউক্রেনীয় খাবার যেমন বরশ্চ ও ভারেনিকি পাওয়া যায়, কারণ সেখানে ইউক্রেনীয় অভিবাসীর সংখ্যা অনেক।
আপনি যদি খানিকটা রোমাঞ্চপ্রিয় হন, তবে বিশেষত বড় শহরগুলোতে ইউরোপ, এশিয়া ও পৃথিবীর নানা দেশের খাবার সহজেই পাবেন। কানাডায় প্রায় সব ধরনের স্বাদ ও স্টাইলের খাবার পাওয়া যায়-২০ আউন্স টিবোন স্টেক থেকে শুরু করে জাপানি সুশি পর্যন্ত (উল্লেখ্য, জাপানে ব্যবহৃত সুশির জন্য অনেক সালমনই আসে কানাডা থেকে)।
আমেরিকান পর্যটকরা তাঁদের পরিচিত অনেক খাবার ও ব্র্যান্ড খুঁজে পাবেন, তবে কানাডায় অনেক অনন্য পণ্যও রয়েছে, যেমন ভিন্ন ধরনের চকোলেট বার বা আসল ম্যাপল সিরাপ। পরিচিত পণ্যের নামও অনেক সময় ভিন্ন হয়-যেমন, মার্কিন স্মার্টিজ হলো টক-মিষ্টি চিনির ক্যান্ডি, কিন্তু কানাডায় স্মার্টিজ হলো চকোলেটে মোড়ানো ক্যান্ডি (এমঅ্যান্ডএমসের মতো)। আর মার্কিন স্মার্টিজকে কানাডায় বলা হয় “রকেটস”।
যদি মুদি দোকান খুঁজেন, তবে লব্লজ, সোবেস ও মেট্রো হলো সবচেয়ে বড় কোম্পানি। তবে প্রদেশভেদে এদের দোকানের আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডনেম থাকতে পারে, যেখানে মূল কোম্পানির নাম থাকে না।
পানীয়
[সম্পাদনা]কানাডায় মদ্যপানের আইনত বয়স প্রদেশভেদে ভিন্ন। আলবার্টা, ম্যানিটোবা ও কুইবেকে এই বয়স ১৮, আর বাকি প্রদেশ ও টেরিটোরিতে এটি ১৯। বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলো কানাডীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা প্রাদেশিক আইডি কার্ড। বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়, তবে মার্কিন লাইসেন্স একটি ব্যতিক্রম। তাই মদ্যপান করতে চাইলে পাসপোর্ট সঙ্গে রাখা উত্তম। কানাডার অনেক প্রদেশে মদ ও বিয়ার কেবল লাইসেন্সকৃত দোকানেই বিক্রি হয়। কিছু প্রদেশে সুপারমার্কেট কেবল বিয়ার ও ওয়াইন বিক্রি করতে পারে, আবার অনেক জায়গায় একেবারেই অ্যালকোহল বিক্রি হয় না। অনেক সময় সুপারমার্কেটের পাশে তাদের আলাদা মদের দোকান থাকে। আমেরিকান দর্শনার্থীদের কাছে দাম কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। তাই কানাডায় আসার সময় সীমিত পরিমাণে (সর্বোচ্চ ১ লিটার শক্ত মদ, ১.৫ লিটার ওয়াইন বা ২৪ বোতল বিয়ার) সঙ্গে আনা যায়। মার্কিন সিগারেটও জনপ্রিয়, কারণ সেগুলো কানাডায় বিক্রি হয় না।
বিয়ার
[সম্পাদনা]কানাডার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বিয়ার (যেমন মলসন, লাবাট) সাধারণত ফ্যাকাসে সোনালি রঙের লেগার, যার অ্যালকোহল মাত্রা ৪% থেকে ৬%।
এ ধরনের বিয়ার বিশেষ স্বতন্ত্র নয় (যদিও কিছু ব্র্যান্ড কানাডায় পাওয়া যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় না)। তবে কানাডীয়রা স্থানীয় ব্রুয়ারিদের সমর্থন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মাইক্রো-ব্রুয়ারির সংখ্যা ও মান অনেক বেড়েছে। এসব বিয়ারের অনেকগুলো শুধু উৎপাদন অঞ্চলের কাছাকাছি পাওয়া যায়, তবে অনেক মাঝারি ও উচ্চমানের বারে স্থানীয় বিয়ার পরিবেশিত হয়। অনেক শহরে ব্রু-পাব রয়েছে, যেখানে নিজেদের বিয়ার তৈরি ও পরিবেশন করা হয়, আর সঙ্গে থাকে খাবারের পূর্ণ মেনু। এসব জায়গা ভিন্ন স্বাদের বিয়ার চেখে দেখার ও উপযুক্ত খাবারের সঙ্গে উপভোগ করার চমৎকার সুযোগ দেয়।
নোভা স্কোশিয়ার হ্যালিফ্যাক্স শহর হলো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো (১৮২০ সাল থেকে) অবিরামভাবে উৎপাদিত বিয়ারের কেন্দ্র, যার নাম আলেকজান্ডার কিথ’স। শহরের জলের ধারে এর কারখানায় এই বিয়ার এখনো তৈরি হয়। ঐতিহাসিক কারণে এটি “ইন্ডিয়া পেইল আলে” নামে বাজারজাত হয়, তবে আধুনিক মানদণ্ডে এটি উত্তর আমেরিকান ব্লন্ড আলে’র কাছাকাছি, যেখানে হপসের মাত্রা কম (১৩ আইবিইউ)। ব্রুয়ারি ট্যুর নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে কারখানার ইতিহাস, কিথ মহাশয়ের জীবনী এবং প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে নমুনা পরিবেশিত হয়।
মদ
[সম্পাদনা]
- আরও দেখুন: অন্টারিওর মদ উৎপাদনের অঞ্চলসমূহ
কানাডার সবচেয়ে বড় দুইটি আঙ্গুর মদ উৎপাদনকারী অঞ্চল হলো অন্টারিওর নায়াগ্রা অঞ্চল এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওকানাগান। অন্যান্য আঙ্গুর মদ উৎপাদনকারী এলাকার মধ্যে রয়েছে অন্টারিওর এরি হ্রদতীর, জর্জিয়ান বে (বীভার রিভার ভ্যালি) ও প্রিন্স এডওয়ার্ড কাউন্টি, এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সিমিলকামিন উপত্যকা, দক্ষিণ ফ্রেজার নদী উপত্যকা, দক্ষিণ ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ ও গালফ দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়া কুইবেকের দক্ষিণাংশ, নোভা স্কশিয়া এবং সাসকাচোয়ানেও স্বল্প পরিসরে মদ উৎপাদন হয়।
আইস ওয়াইন, যা জমাট বাঁধা আঙ্গুর থেকে তৈরি একধরনের (খুবই) মিষ্টি ডেজার্ট ওয়াইন, কানাডার বিশেষত্ব। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন বিমানবন্দরের ডিউটি-ফ্রি দোকানে বিশেষভাবে পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্যান্য মদ উৎপাদনকারী অঞ্চলের তুলনায় কানাডায়, বিশেষত নায়াগ্রা অঞ্চলে, নিয়মিত শীতকালে বরফ জমে, ফলে কানাডা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইস ওয়াইন উৎপাদক হয়ে উঠেছে। তবে উৎপাদন খুবই সীমিত (সাধারণ মদের মাত্র ৫–১০%), ফলে এর দাম তুলনামূলক বেশি। আধা বোতল (৩৭৫ মিলি/১৩ ফ্লুইড আউন্স) এর দাম শুরু হয় প্রায় ৫০ মার্কিন ডলার থেকে। কানাডীয় আইস ওয়াইন জার্মানির তুলনায় কিছুটা বেশি মিষ্টি।
আসঁজিত মদ
[সম্পাদনা]কানাডা বিদেশে পরিচিত এর স্বতন্ত্র রাই হুইস্কির জন্য, যা দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়। পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডীয় ক্লাব, উইজারস ও ক্রাউন রয়্যাল। প্রচুর সস্তা ব্লেন্ডেড রাইয়ের পাশাপাশি প্রিমিয়াম ব্লেন্ডেড ও আনব্লেন্ডেড রাই-ও প্রায় সব মদের দোকানেই পাওয়া যায়। সবচেয়ে পরিচিত আনব্লেন্ডেড রাই হলো আলবার্টা প্রিমিয়াম, যেটিকে খ্যাতিমান হুইস্কি লেখক জিম মারি "কানাডীয় হুইস্কি অব দ্য ইয়ার" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কানাডায় আরও কিছু স্বতন্ত্র লিক্যুর তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত এবং শীতকালে পান করার জন্য জনপ্রিয় পানীয় হলো ইউকন জ্যাক, যা রাই হুইস্কি-ভিত্তিক লিক্যুর এবং এতে সাইট্রাস স্বাদ পাওয়া যায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাদার্ন কমফোর্টের কানাডীয় সংস্করণ, তবে সেখানে রাই নয়, কর্ন হুইস্কি (বোর্বন) ব্যবহার করা হয়।
কেপ ব্রেটন দ্বীপে রয়েছে উত্তর আমেরিকার প্রথম (এবং কানাডার একমাত্র) সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি উৎপাদনকারী ডিস্টিলারি। নোভা স্কশিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে রাম ও রাম-চোরাচালানের সম্পর্ক রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অঞ্চলের সামুদ্রিক ইতিহাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধযুগে নিকটবর্তী ভৌগোলিক অবস্থান, এবং উচ্চমানের স্থানীয় গুড়ের উৎপাদন। অনেক স্থানীয় ডিস্টিলারি তাদের স্থানে স্বাদগ্রহণের সুযোগ দেয়, আর স্থানীয় মদের দোকানে বিভিন্ন দামের রামের বিশাল সংগ্রহ পাওয়া যায়।
নিউফাউন্ডল্যান্ডের "স্ক্রিচ" হলো একমাত্র মদ যা কানাডায় আইনত ১০০ প্রুফের বেশি শক্তিতে বিক্রি করা যায়। এটি মূলত জ্যামাইকান রাম, যা নিউফাউন্ডল্যান্ড ১৯৪৯ সালে কানাডায় যোগ দেওয়ার বহু আগে থেকেই আমদানি করে আসছিল। এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটি বিশেষ ছাড় পেয়েছে।
অন্যান্য পানীয়
[সম্পাদনা]কানাডায় আপনি প্রায় সব ধরনের অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় পাবেন যা অন্য দেশেও সাধারণত পাওয়া যায়। কার্বোনেটেড পানীয় (কিছু অঞ্চলে যেগুলোকে "পপ", "সোডা" বা "সফট ড্রিংকস" বলা হয়) খুবই জনপ্রিয়। কফি কানাডায় অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়, সাধারণত সকালের নাশতায় বা সকাল জুড়ে খাওয়া হয়। টিম হর্টনস দেশজুড়ে সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় কফিশপ। এছাড়া বড় ও মাঝারি শহরে স্টারবাকসও জনপ্রিয়। অন্যান্য জাতীয় চেইনগুলোর মধ্যে রয়েছে সেকেন্ড কাপ, টিমোথিস, এমএম মাফিনস, কান্ট্রি স্টাইল ও কফি টাইম। প্রায় সব কফিশপেই চা পাওয়া যায়, যেখানে অন্তত আধডজন প্রকার (কালো, সবুজ, পুদিনা ইত্যাদি) মজুদ থাকে।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]
কানাডায় থাকার খরচ সময় ও স্থানের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। বেশিরভাগ শহর ও পর্যটন এলাকায় ভালো একটি হোটেল রুমের জন্য সাধারণত ১০০ ডলারের বেশি খরচ হতে পারে। বুকিংয়ের সময় অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে হবে কর অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর আলাদা থাকে, এবং স্থানীয়, প্রাদেশিক ও ফেডারেল কর মিলিয়ে মোট খরচ প্রায় ১৫% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
কানাডার ইতিহাসে হোটেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের কিছু বিখ্যাত স্থাপত্য আসলে হোটেল। কানাডীয় রেলওয়ে হোটেলগুলো হলো একধরনের বিলাসবহুল হোটেল, যা ১৯০০-এর দশকের শুরুতে বড় শহর ও কিছু অবকাশযাপন এলাকায় নির্মাণ করা হয়। দেখুন গ্র্যান্ড পুরনো হোটেলসমূহ#কানাডা। এর বেশিরভাগ এখনো টিকে আছে এবং ফেয়ারমন্ট হোটেলস অ্যান্ড রিসর্টসের মতো করপোরেশনগুলোর মালিকানায় রয়েছে। এ ধরনের হোটেলে রুম ভাড়া শহর ও রুমের আকার অনুযায়ী প্রতি রাতে ১৫০–৪০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো স্থাপত্যে দৃষ্টিনন্দন, চমৎকার সাজসজ্জার এবং শুধু থাকার জন্যই নয়, নিজস্বভাবে পর্যটন আকর্ষণও বটে। এমনকি যদি গ্র্যান্ড রেলওয়ে হোটেলে না-ও থাকেন, প্রধান লবি ঘুরে দেখা বা হোটেলের রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়াও যথেষ্ট উপভোগ্য হবে।
গ্রামীণ এলাকায় মোটেল (মোটর হোটেলের সংক্ষিপ্ত রূপ) হলো ছোট ও সাধারণ হোটেল, যেখানে অফ-সিজনে এক রাত থাকার খরচ মাত্র ৪০–৬০ ডলার হতে পারে। তবে এ ধরনের মোটেল এখন কমে আসছে, কারণ আন্তর্জাতিক হোটেল চেইনগুলো বড় মহাসড়কের ধারে সাশ্রয়ী সার্ভিস হোটেল খুলে নিম্নবাজার দখল করেছে। অধিকাংশ গ্রামে বি অ্যান্ড বি (বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট) পাওয়া যায়-যা মূলত মানুষের বাড়িতে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা, মালিকদের মতোই ভিন্নধর্মী ও বৈচিত্র্যময়। এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়-এক রাতের জন্য ৪৫ ডলার থেকে ১৪০ ডলার পর্যন্ত-সকালের নাশতাসহ। তালিকার জন্য bbcanada.com দেখতে পারেন।
অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে রয়েছে হ্রদের ধারে বা গ্রামীণ অঞ্চলে কটেজ ভাড়া এবং শহরে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া। দাম মোটেল ও হোটেলের কাছাকাছি হয়, তবে ভ্রমণের সময় বাড়ির মতো আরাম পাওয়া যায়।
যুব হোস্টেল ভালো একটি বিকল্প, যেখানে শেয়ারড ডরমে ২০–৪০ ডলারে বা প্রাইভেট রুমে ৪৫–৮০ ডলারে থাকা যায়। কিছু উপকারী ওয়েবসাইট হলো হোস্টেলিং ইন্টারন্যাশনাল কানাডা এবং সেমসান ব্যাকপ্যাকার লজ। কানাডার অধিকাংশ হোস্টেল খুব উচ্চমানের।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ডরমিটরি (যা বেশি পরিচিত "রেসিডেন্স" বা "রেস" নামে) মে-আগস্টের একাডেমিক অফ-সিজনে ভাড়া দেয়। বিস্তারিত জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখুন।
কিছু শিকার বা মাছ ধরার আউটফিটার হ্রদের ধারে নির্জন গ্রামীণ এলাকায় কেবিন বা লজ ভাড়া দেয়, যেগুলো খুব সাধারণ তবে নিরিবিলি প্রকৃতির অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
সবশেষে, কানাডায় বিপুলসংখ্যক ক্যাম্পগ্রাউন্ড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন আরভি পার্ক থেকে শুরু করে জাতীয় ও প্রাদেশিক উদ্যানের সরকারি ক্যাম্পগ্রাউন্ড পর্যন্ত রয়েছে, এবং এগুলো প্রায় সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও অত্যন্ত সুন্দর। প্রায় প্রতিটি শহর ও গ্রামে অন্তত একটি ক্যাম্পগ্রাউন্ড থাকে, তবে কানাডার আবহাওয়ার কারণে এগুলো মৌসুমি ভিত্তিতে খোলা থাকে।
গ্রীষ্মকালে কিছু মনোরম গ্রামীণ হ্রদ ও নদীতে হাউসবোট ভাড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
লেখাপড়া
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: বিদেশে পড়াশোনা#কানাডা
কানাডায় পড়াশোনা করার জন্য প্রত্যেক বিদেশিরই একটি স্টাডি পারমিট নিতে হয়, প্রয়োজনীয় ভিসার পাশাপাশি। পর্যটক ভিসায় কোনো শিক্ষামূলক প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া আইনবিরুদ্ধ। তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম আছে-যেমন স্বল্পমেয়াদি কোর্সে (মোট সময়কাল ছয় মাসের কম) ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী এবং অপ্রাপ্তবয়স্করা, যারা তাদের এমন অভিভাবকের সঙ্গে কানাডায় অবস্থান করছে যিনি বৈধভাবে পড়াশোনা বা কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন।
একটি দ্বিভাষিক দেশ হিসেবে কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে (এছাড়াও কিছু দ্বিভাষিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেমন অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়), যেগুলো যদিও দক্ষিণের প্রতিবেশী দেশের মতো এতটা খ্যাত নয়, তবুও এগুলো সাধারণভাবে সমাদৃত এবং দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কিছু বিদেশিদের জন্য নিবিড় ভাষা শিক্ষা কোর্সও পরিচালনা করে, যাতে তারা তাদের ইংরেজি বা ফরাসি ভাষার দক্ষতা উন্নত করতে পারে।
কর্মসংস্থান
[সম্পাদনা]কানাডা সাধারণভাবে কাজের জন্য একটি ভালো জায়গা। ন্যূনতম মজুরি প্রদেশ বা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়-আলবার্টা এবং সাসকাচুয়ানে প্রতি ঘণ্টা ১৫.০০ ডলার থেকে শুরু করে নুনাভুটে ১৯.০০ ডলার পর্যন্ত। উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো এখানকার অর্থনীতিও ধীরে ধীরে উৎপাদনশিল্পভিত্তিক অবস্থা থেকে সেবাখাতনির্ভর অবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে কারখানা ও উৎপাদনশিল্পের কাজ প্রতি বছর কমে যাচ্ছে এবং এই কাজগুলো এখন অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন। অধিকাংশ কারখানায় চাকরির জন্য ন্যূনতম মাধ্যমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কোনো ট্রেড সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, ন্যূনতম মজুরির চাকরির সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। তবে আবাসন বাজার দ্রুত প্রসারিত হওয়ায় এখনো তুলনামূলক ভালো মানের নির্মাণশিল্পের কাজ পাওয়া যায়। কানাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মতোই প্রায় একইরকম।
বিদেশিদের (মার্কিন নাগরিকসহ) কানাডায় কাজ করার জন্য অবশ্যই একটি ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়, যদি না তারা কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন কাজ করতে পারে। যারা কানাডার ডিগ্রি প্রোগ্রামে ভর্তি, তারা তাদের ভিসায় উল্লেখ থাকলে ক্যাম্পাসের বাইরে খণ্ডকালীন কাজও করতে পারে। তবে পর্যটক ভিসায় কাজ করা প্রায় সব ক্ষেত্রে বেআইনি, এবং ধরা পড়লে বহিষ্কৃত হওয়ার পাশাপাশি পুনরায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। তবে কিছু কাজকে কানাডার সরকার "কাজ" হিসেবে গণ্য করে না-যেমন বিদেশি নিয়োগকর্তার জন্য দূরবর্তীভাবে কাজ করা এবং বেতন সরাসরি বিদেশি ব্যাংক হিসাবে গ্রহণ করা।
তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর নাগরিকরা যদি নির্দিষ্ট কিছু দক্ষ পেশায় থাকেন, তাহলে তারা কানাডায় পৌঁছে ওয়ার্ক পারমিট নিতে পারেন। এই ধরনের কাজ ইউএসএমসিএ (USMCA) চুক্তির "প্রফেশনাল" ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত কিনা, তা জানতে একজন অভিবাসন পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা উচিত। সীমান্তে প্রবেশের সময় এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে, কারণ এটি মূলত সম্পূর্ণ ওয়ার্ক পারমিট আবেদন প্রক্রিয়ার মতোই। বাসে ভ্রমণ করলে এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই চালককে আগেভাগে জানিয়ে রাখা ভালো যে আপনি সীমান্তে ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করবেন, যাতে তিনি হয়তো অপেক্ষা করেন অথবা অন্য কোনো বাসের ব্যবস্থা করে দেন।
কানাডার ভিসা নিয়মে এমন একটি বিভাগ রয়েছে যেখানে মানুষ স্বনিয়োজিত হিসেবে কাজ করতে পারে। শিল্পী, সংগীতশিল্পী এবং ক্রীড়াবিদ বা কোচরা যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তারা কানাডার সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়াক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম, তাহলে তারা এই বিভাগে যোগ্য বলে বিবেচিত হন। তবে এই মানদণ্ড বেশ কঠিন; যেমন-অলিম্পিক বা পেশাদার ক্রীড়াক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো কোচ সম্ভবত যোগ্য হবেন, কিন্তু অন্য অভিজ্ঞতা হয়তো গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। অন্যদিকে, অভিজ্ঞ কৃষকরা যারা কানাডায় একটি খামার কিনে চালাতে চান, তারাও এই বিভাগে পড়েন এবং তাদের জন্য মানদণ্ড তুলনামূলকভাবে শিথিল। আপনার কাছে যদি একটি ভালো ব্যবসায় পরিকল্পনা ও খামার শুরু করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকে, তাহলে অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি। আবার মার্কিন কৃষকরা যারা সীমান্তের দু’পাশে জমির মালিক, তাদের কাজকেও কানাডার সরকার ভিসার শর্তে "কাজ" হিসেবে গণ্য করে না।
কানাডায় কাজের অনুমোদন পাওয়ার পর আপনাকে একটি সোশ্যাল ইন্স্যুরেন্স নম্বর (এসআইএন) সংগ্রহ করতে হবে, যাতে আপনার নিয়োগকর্তা সরকারের কাছে আপনার বেতনের তথ্য কর বাবদ জমা দিতে পারে। কানাডায় আয়কর ফেডারেল ও প্রাদেশিক উভয় স্তরে আদায় করা হয়। তবে ক্যুবেক ব্যতীত অন্যান্য প্রদেশের ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকার প্রাদেশিক সরকারের পক্ষে আয়কর আদায় করে। তাই আলাদা করে প্রাদেশিক আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয় না। তবে যারা ক্যুবেকে কাজ করেন, তাদের ফেডারেল ও প্রাদেশিক দুই ধরনের আয়কর রিটার্ন আলাদাভাবে জমা দিতে হয়।
ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা
[সম্পাদনা]ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা (যাকে "ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা / ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা" নামেও বলা হয়) নির্দিষ্ট কিছু দেশের তরুণ নাগরিকদের ১ বা ২ বছরের জন্য কানাডায় অবস্থান এবং সেখানে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়। যোগ্যতা ও অবস্থানের মেয়াদের নিয়ম জাতীয়তাভেদে ভিন্ন হয়। আগে নিয়ম ছিল-১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারী দেশের নাগরিকদের ১ বছরের ভিসা দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে কিছু দেশের (যেমন অস্ট্রেলিয়া) নাগরিকরা ২ বছরের ভিসা পাচ্ছেন, আবার কিছু দেশের নাগরিক (যেমন সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত) আবেদন করতে পারছেন। কিছু দেশের নাগরিকদের (যেমন মেক্সিকো) আবেদন করার সময় অবশ্যই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে হয়।
অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পূর্ণাঙ্গ সরকারি তালিকা ও সংশ্লিষ্ট যোগ্যতার শর্তাবলি এই প্রোগ্রামের জন্য কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। জুন ২০১৮ অনুযায়ী কানাডার ওয়ার্কিং হলিডে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলো হলো: অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চিলি, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং এসএআর, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, সান মারিনো, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, তাইওয়ান, ইউক্রেন, এবং যুক্তরাজ্য।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য "ইয়াং প্রফেশনালস" এবং "ইন্টারন্যাশনাল কো-অপ ইন্টার্নশিপ" ভিসা রয়েছে, যদি তারা কানাডায় কোনো চাকরির অফার পেয়ে থাকে। তবে উপরে তালিকাভুক্ত কিছু দেশের নাগরিক এই ভিসাগুলোর জন্য যোগ্য নন। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা (যারা "ওয়ার্কিং হলিডে" ভিসার জন্য যোগ্য নন) উভয়ের জন্যই যোগ্য হতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও কোনো অস্থায়ী রেসিডেন্ট ভিসা ছাড়াই ওয়ার্কিং হলিডে প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারেন। আগের ছয় মাসের সীমা এখন বাড়িয়ে ১ বছর করা হয়েছে (অন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মতোই) এবং পোস্ট-সেকেন্ডারি শিক্ষার্থী হওয়ার শর্তও তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের অবশ্যই তৃতীয় কোনো সংস্থার (যেমন BUNAC) মাধ্যমে আবেদন করতে হয়, যারা অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার ফি নেয়। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিকরা এই প্রক্রিয়ায় দুটি এক বছরের ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারেন। তবে প্রথমটির মেয়াদ শেষ হলে তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে দ্বিতীয়টির জন্য আবেদন করতে হয়।
নিরাপত্তা
[সম্পাদনা]
কানাডায় সাধারণত নিরাপত্তা বড় কোনো সমস্যা নয়, আর কিছুটা সাধারণ সতর্কতাই যথেষ্ট। সবচেয়ে বড় শহরগুলোতেও সহিংস অপরাধ খুব গুরুতর নয় এবং খুব অল্প মানুষই অস্ত্র বহন করে। সাধারণ ভ্রমণকারীদের সহিংস অপরাধ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ এগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং খুব কমই এলোমেলোভাবে ঘটে। কানাডার শহরগুলোর সামগ্রিক অপরাধের হার যুক্তরাষ্ট্রের সমান আকারের নগরাঞ্চল বা বিশ্বের অন্য অনেক অঞ্চলের তুলনায় কম (যদিও পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ শহরের তুলনায় সহিংস অপরাধ কিছুটা বেশি)। পশ্চিম প্রদেশগুলোতে অপরাধের হার পূর্ব কানাডার তুলনায় বেশি, তবে ইউকন, নর্থওয়েস্ট টেরিটরিজ ও নুনাভুতে এটি আরও বেশি। পর্যটক বা জনসমাগমস্থলে কয়েকটি বড় ধরনের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে; তবে এসব ঘটনার এত বেশি গণমাধ্যম কাভারেজ পাওয়ার কারণ হলো এগুলো অত্যন্ত বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।
আপনি যদি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের কাছাকাছি ভ্রমণ করেন, তাহলে নিশ্চিত হোন যেন ভুলবশত এমন কোনো স্থানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ না করেন যেখানে সীমান্ত স্পষ্টভাবে চিহ্নিত নয়। যদি তা ঘটে, তাহলে আপনাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও সম্ভাব্য কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
পুলিশ ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]
রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) কর্মকর্তাদের ঐতিহ্যবাহী লাল পোশাকের ইউনিফর্ম অত্যন্ত পরিচিত। সাধারণত পর্যটন এলাকায় বা আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের সময় এই পোশাকে দেখা গেলেও, এরা তখনও পুলিশ কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগের দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়।
কানাডার পুলিশ সাধারণত পরিশ্রমী, সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য। ভ্রমণের সময় কোনো সমস্যায় পড়লে, এমনকি পথ হারিয়ে গেলেও পুলিশের সাহায্য চাওয়া ভালো সিদ্ধান্ত।
কানাডায় মূলত তিন ধরনের পুলিশ বাহিনী রয়েছে: ফেডারেল, প্রাদেশিক ও পৌরসভা। ফেডারেল পুলিশ বাহিনী হলো রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি বা "মাউন্টিস"), যাদের সারা দেশে উপস্থিতি রয়েছে কেবল কুইবেক, অন্টারিও এবং নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডর বাদে। এসব প্রদেশ নিজেদের প্রাদেশিক পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করে। এগুলো হলো অন্টারিও প্রভিনশিয়াল পুলিশ (ওপিপি), সুরেতে দ্য কুইবেক (এসকিউ) এবং রয়্যাল নিউফাউন্ডল্যান্ড কনস্ট্যাবুলারি। অন্য সব প্রদেশ ও অঞ্চল (এবং নিউফাউন্ডল্যান্ডের কিছু গ্রামীণ অংশ ও ল্যাব্রাডর) আরসিএমপি-কে প্রাদেশিক দায়িত্ব পালনের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে।
ফেডারেল পুলিশ বাহিনী হিসেবে আরসিএমপি কর্মকর্তারা সাধারণত নিয়মিত পুলিশ ইউনিফর্ম পরেন এবং দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করেন। তবে অল্প কিছু আরসিএমপি কর্মকর্তা পর্যটন এলাকায় এবং বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন প্যারেডে লাল আনুষ্ঠানিক ইউনিফর্ম পরিধান করেন। কিছু কর্মকর্তা "মিউজিক্যাল রাইড" নামের ঘোড়সওয়ার প্রদর্শনীর মতো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পূর্ণ পোশাকে তাদের মূল ভূমিকা কানাডা এবং কানাডিয়ান মাউন্টিদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা। এ সময় তারা সাধারণত অপরাধ তদন্ত বা আইন প্রয়োগ করেন না, তবে তারা তখনও পুলিশ কর্মকর্তা এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করতে পারেন। অটোয়ার মতো পর্যটন এলাকায় দুই ধরনের আরসিএমপি কর্মকর্তাকেই দেখা যায়। এই দ্বৈত ভূমিকা—একদিকে ফেডারেল পুলিশ হিসেবে এবং অন্যদিকে পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে-প্রায়ই পর্যটকদের বিভ্রান্ত করে। তবে সব আরসিএমপি কর্মকর্তাই পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের দায়িত্ব হলো আইন প্রয়োগ করা।
বড় শহর, নগর ও অঞ্চলে নিজেদের পুলিশ বাহিনী থাকে, যেমন টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার ও মন্ট্রিয়লের পুলিশ বাহিনী সবচেয়ে বড়। কিছু শহরে বিশেষ ট্রানজিট পুলিশও থাকে, যাদের পূর্ণ পুলিশ ক্ষমতা রয়েছে। কিছু আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যুৎ সংস্থাও বিশেষ পুলিশ নিয়োগ করে। কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেলওয়ে এবং কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রয়েছে। কিছু ফার্স্ট নেশনস রিজার্ভেও নিজস্ব পুলিশ বাহিনী আছে। কানাডিয়ান ফোর্সেস মিলিটারি পুলিশ সেনা ঘাঁটিতে এবং প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত সরকারি স্থাপনায় মোতায়েন থাকে।
এই তিন ধরনের পুলিশ বাহিনীই ফেডারেল, প্রাদেশিক বা পৌরসভা-যেকোনো আইন প্রয়োগ করতে পারে। তাদের এখতিয়ার প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে মিলে যায়। আরসিএমপি কর্মকর্তারা সারা কানাডায় গ্রেপ্তার করতে পারেন, আর ওপিপি ও পৌর পুলিশের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রদেশের ভেতরে গ্রেপ্তার করতে পারেন। ফেডারেল, প্রাদেশিক ও পৌর পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ডিউটির বাইরে থাকলেও বহাল থাকে।
জাতীয় রাজধানী অঞ্চল অটোয়া-গাতিনোতে কানাডার অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে বেশি সংখ্যক পুলিশ বাহিনী সক্রিয়। এখানে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (নিয়মিত ও আনুষ্ঠানিক পোশাকে), অন্টারিও প্রভিনশিয়াল পুলিশ, অটোয়া পুলিশ, সুরেতে দ্য কুইবেক, গাতিনো পুলিশ, সামরিক পুলিশ এবং ওসিট্রান্সপো বিশেষ কনস্টেবলরা কাজ করে। প্রত্যেকের আলাদা ইউনিফর্ম ও পুলিশ গাড়ি রয়েছে।
কোনো অবস্থাতেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এটি একটি অপরাধ, এবং তারা আইন প্রয়োগে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।
চুরি
[সম্পাদনা]যদি দুর্ভাগ্যক্রমে আপনার পার্স বা মানিব্যাগ ছিনতাই হয়, স্থানীয় পুলিশ যথাসাধ্য সাহায্য করবে। অনেক সময় এই ধরনের চুরির পর গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়। বড় শহরগুলোতে মাঝে মাঝে পার্ক করা গাড়িতে সুযোগসন্ধানী ভাঙচুর হয়, তাই দৃশ্যমান জায়গায় কোনো জিনিস না রাখাই ভালো। মন্ট্রিয়ালসহ কিছু অঞ্চলে এই ধরনের অপরাধ বেশি হওয়ায়, গাড়ির দরজা আনলক রাখা বা দৃশ্যমান স্থানে মূল্যবান জিনিস রাখলে মালিককে জরিমানা করা হয়। নম্বরপ্লেটের ছবি তুলে রাখুন এবং যাত্রার আগে নিশ্চিত হোন যে আপনার গাড়ির প্লেট ঠিক আছে, কারণ কিছু চোর পালানোর জন্য প্লেট চুরি করে। মন্ট্রিয়ালে গাড়ি চুরি, এমনকি মোটরহোম ও রিক্রিয়েশনাল যানবাহন চুরি সুরক্ষিত পার্কিং লট থেকেও ঘটে। বড় শহরে সাইকেল চুরি এক ধরনের নিয়মিত সমস্যা।
শীতকালীন ঝড়
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: শীতকাল

কানাডায় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন ঝড় (বরফঝড় ও তুষারঝড়সহ) খুবই সাধারণ ঘটনা। পূর্ব কানাডায় এগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটে, তবে উত্তর-পশ্চিম অন্টারিওর পশ্চিম দিকে মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝড় হয়। সেখানে সাধারণত ঝড়ো হাওয়ায় তুষার উড়ে গিয়ে প্রধান বিপদের সৃষ্টি করে। এ সময় গাড়ির গতি কমাতে হবে, অন্য চালকদের খেয়াল রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য একটি ইমার্জেন্সি কিট বহন করা উত্তম, কারণ অনেক সময় মহাসড়কে গাড়ি তুষারের মধ্যে আটকে গেলে রাত কাটাতে হতে পারে (এটি বিশেষত বিচ্ছিন্ন এলাকায় ঘটে থাকে)। আপনি যদি শীতকালীন গাড়ি চালনায় অভিজ্ঞ নাও হন এবং শীতকালে কানাডায় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে দেশের ভেতরে ভ্রমণের জন্য বিকল্প পরিবহন ব্যবহার করাই ভালো। যদিও অধিকাংশ শীতকালীন আবহাওয়া মূলত শীতকালেই ঘটে, কানাডার কিছু অংশ যেমন প্রেইরি অঞ্চল, ল্যাব্রাডর, উত্তর কানাডা এবং পাহাড়ি এলাকায় বছরের যেকোনো সময় তীব্র, যদিও অল্প সময়ের জন্য, শীতকালীন আবহাওয়া দেখা দিতে পারে।
আপনি যদি হেঁটে ভ্রমণ করেন, তবে একাধিক স্তরে ভারী মোজা, উষ্ণ অন্তর্বাস এবং দস্তানা পরে যতটা সম্ভব গরম পোশাকে নিজেকে ঢেকে রাখা উত্তম। শীতকালীন ঝড়ের সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডা থাকে, ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফ্রস্টবাইট হতে পারে।
দাবানল
[সম্পাদনা]কানাডার বনাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে প্রায়ই দাবানলের ঘটনা ঘটে। এমনকি বান্ফ জাতীয় উদ্যান এবং জ্যাস্পার জাতীয় উদ্যানের মতো কানাডার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোতেও এটি ঘটে। এসব এলাকায় প্রায়ই অগ্নিঝুঁকির সতর্কবার্তা টানানো থাকে, যা কোনো বনে আগুন লাগলে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা নির্দেশ করে।
অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র
[সম্পাদনা]কানাডার নাগরিকদের অস্ত্র রাখার সাংবিধানিক অধিকার নেই। কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা, কেনাবেচা ও ব্যবহার করার জন্য সঠিক লাইসেন্স প্রয়োজন এবং তা ফেডারেল আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রিত। আগ্নেয়াস্ত্রগুলোকে (মূলত নলের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে) তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, নন-রেস্ট্রিকটেড (সবচেয়ে কম প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রয়োজন), রেস্ট্রিকটেড (বেশি প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রয়োজন) এবং প্রোহিবিটেড (আইনসিদ্ধ নয়)। অধিকাংশ একনলা রাইফেল ও শটগান নন-রেস্ট্রিকটেড, কারণ এগুলো ব্যাপকভাবে শিকার, খামার বা দূরবর্তী এলাকায় সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ হ্যান্ডগান নিষিদ্ধ, তবে আন্তর্জাতিক পিস্তল শুটিং প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত হলে তা রেস্ট্রিকটেড শ্রেণিতে পড়ে। সেমি-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিষিদ্ধ।
সাধারণত হ্যান্ডগান বহন করেন কেবল পুলিশ, সীমান্ত সেবা কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী কর্মকর্তা (বেশিরভাগ প্রদেশে), টাকা পরিবহনকারী বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী, দূরবর্তী “জঙ্গলি” এলাকায় কাজ করা সঠিক লাইসেন্সধারী ব্যক্তি এবং ক্রীড়া শুটিংয়ে বিশেষায়িত খেলোয়াড়রা।
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, আত্মরক্ষার জন্য কানাডায় বন্দুক বহন করা অনুমোদিত নয়। তবে শিকার বা টার্গেট শুটিংয়ের মতো ক্রীড়া উদ্দেশ্যে অধিকাংশ রাইফেল ও শটগানের মতো নিষিদ্ধ নয় এমন আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করা যায়। একইভাবে ক্রীড়া শুটিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ নয় (নন-প্রোহিবিটেড) পিস্তলও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে আনা যায়।
সব আগ্নেয়াস্ত্র কানাডায় প্রবেশের সময় কাস্টমসে ঘোষণা করতে হবে, এমনকি নন-রেস্ট্রিকটেড হলেও। তা না করলে এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, যার শাস্তি জরিমানা ও কারাদণ্ড। প্রোহিবিটেড আগ্নেয়াস্ত্র কাস্টমসে বাজেয়াপ্ত হয়ে ধ্বংস করা হয়। রেপ্লিকা এয়ার সফট গান নিষিদ্ধ। ভ্রমণকারীদের উচিত কানাডায় প্রবেশের আগে কানাডিয়ান ফায়ারআর্মস প্রোগ্রাম এবং কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যে তারা যে ধরনের অস্ত্র আনছেন তা বৈধ কি না।
স্বয়ংক্রিয় খোলা ছুরি যেমন সুইচব্লেড, বাটারফ্লাই নাইফ, স্প্রিং লোডেড ব্লেডসহ সব ধরনের ছুরি কানাডায় নিষিদ্ধ ও অবৈধ। একইভাবে নাঞ্চাকু, টেজার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক স্টান গান, ছুরি লুকানো থাকে এমন জিনিসপত্র যেমন বেল্ট-বাকল ছুরি, ছুরি-চিরুনি, পিতলের আঙুলি (নাকল ডাস্টার) এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য তৈরি পোশাক বা বা গহনা-এসবও নিষিদ্ধ। মেস ও পিপার স্প্রেও নিষিদ্ধ, যদি না তা বিশেষভাবে প্রাণীর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বিক্রি হয়।
গাঁজা ও অন্যান্য মাদক
[সম্পাদনা]| টীকা: কোনো অবস্থাতেই কানাডায় প্রবেশ বা কানাডা থেকে বের হওয়ার সময় কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রিত মাদকদ্রব্য বহন করার চেষ্টা করবেন না। এর মধ্যে গাঁজাও রয়েছে, যদিও কানাডায় গাঁজা ব্যবহার বৈধ। এমনকি যেসব মার্কিন অঙ্গরাজ্যে গাঁজা বৈধ, সেখান থেকেও গাঁজা নিয়ে আসা বা নিয়ে যাওয়া বেআইনি। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো যদি আপনার কাছে "হেলথ কানাডার" অনুমোদিত চিকিৎসা প্রেসক্রিপশন থাকে। সেই ক্ষেত্রেও সীমান্তে গাঁজা বহনের বিষয়টি ঘোষণা করতে হবে। কানাডায় মাদক পাচারের (দেশে আনা বা দেশ থেকে বের করা) শাস্তি অত্যন্ত কঠোর, আজীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। Canada | |
| (তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- আগস্ট ২০২৫) |
কানাডায় গাঁজার ব্যবহার বৈধ, এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি একই সময়ে সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম (১ আউন্স) শুকনো গাঁজা বহন করতে পারবেন। প্রতিটি প্রদেশে কিছু লাইসেন্সপ্রাপ্ত খুচরা দোকান ক্যানাবিস পণ্য বিক্রি করে বা অনলাইনে অর্ডারের ব্যবস্থা করে থাকে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান ছাড়া অন্য কাউকেখান থেকে ক্যানাবিস কেনা এখনও অবৈধ; এর জন্য তাত্ত্বিকভাবে কারাদণ্ড আছে এবং যদিও এটি বিরলভাবে বিচার এর পর্যায়ে পৌঁছায়, তবু একটি বিদেশি নাগরিককে সহজেই নির্বাসিত করা হতে পারে। কানাডা-ভ্রমণের সময় বৈধ গাঁজা কোথায় পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে পরামর্শ জানতে আপনি যে প্রদেশ বা শহরটি ভ্রমণ করবেন সেই প্রদেশ/শহরের উইকিভয়েজ গাইড দেখুন। শহরগুলো সাধারণত "ধূমপান সংক্রান্ত বিধি" চালু করে যা তামাক ধূমপান যেখানে বৈধ তা সীমাবদ্ধ করে এবং এগুলো গাঁজার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই বিধিভঙ্গের শাস্তি সাধারণত এক বড় জরিমানা, কিন্তু কারাদণ্ড নয়। ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্থাপনাগুলো তাদের সম্পত্তিতে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে পারবে, এবং অনেক হোটেল তাদের রুমে গাঁজার গন্ধ পছন্দ করবে না। নাবালকদের কাছে গাঁজা সরবরাহ সংক্রান্ত আইন অতি কড়া আছে, এবং দোষী সাব্যস্ত হলে এতে নিশ্চিতভাবে নির্বাসন বা কারাদণ্ড হবে।
মাদক সেবন করে (এর মধ্যে গাঁজাও অন্তর্ভুক্ত, এমনকি ঘুমপাড়ানি বৈধ ওষুধও) কিংবা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো একটি ফৌজদারি অপরাধ এবং এটিকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতোই দেখা হয়, কঠোর শাস্তির সহিত। মাতাল অবস্থায় বা মাদকের প্রভাবে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করবেন না; দর্শনার্থীরা কারাভোগের পর নির্বাসিত হওয়ার বা অত্যন্ত বড় জরিমানা প্রদান করে শাস্তি বহন করার প্রত্যাশা করতে পারেন।
খাত (khat) কানাডায় অবৈধ, এবং আপনি যদি এটিকে আপনার লাগেজে রাখা চেষ্টা করেন এবং কাস্টমসে ধরা পড়েন তবে আপনাকে গ্রেপ্তার করে বহিষ্কার করা হবে।
মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো
[সম্পাদনা]
কানাডীয়রা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে, এবং বেশিরভাগ সমাজে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বা ট্যাবু হিসেবে ধরা হয়। অনেক জায়গায় অ্যালকোহল বা মারিজুয়ানার প্রভাবে গাড়ি চালানোকে কেবল একটি সামান্য অপরাধ (মিসডিমিনর) হিসেবে গণ্য করা হলেও, কানাডায় এটি একটি গুরুতর অপরাধ (ফেলনি)।
যদি রাস্তায় পুলিশের ব্রেথলাইজার (শ্বাস পরীক্ষার যন্ত্র) পরীক্ষায় আপনার রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা আইনি সীমার ওপরে পাওয়া যায়, তাহলে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং অন্তত কয়েক ঘণ্টা জেলে কাটাতে হবে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে ৮০ মি.গ্রা. অ্যালকোহল (০.০৮%) হলো ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দণ্ড দেওয়ার আইনি সীমা। অনেক এলাকায় ০.০৪% মাত্রায় জরিমানা, লাইসেন্স স্থগিতকরণ এবং গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার আইন রয়েছে, অথবা যদি পুলিশ অফিসার যুক্তিসঙ্গতভাবে মনে করেন যে আপনি গাড়ি চালানোর মতো অবস্থায় নেই। পুলিশের চেকপোস্টে পরীক্ষায় আপনার রক্তে ০.০৩% অ্যালকোহল থাকলে গ্রেপ্তার করা হবে না। তবে একই মাত্রায় যদি আপনাকে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে আটকানো হয়, অথবা দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন, তাহলে আপনাকে ডিইউআই (DUI - ড্রাইভিং আন্ডার দ্য ইনফ্লুয়েন্স) মামলায় অভিযুক্ত করা হতে পারে।
ডিইউআইতে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই বহিষ্কার (ডিপোর্টেশন), ফৌজদারি রেকর্ড তৈরি এবং অন্তত ৫ বছর কানাডায় প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও কারাদণ্ড এবং/অথবা ভারী অঙ্কের জরিমানাও হতে পারে, বিশেষত পুনরাবৃত্ত অপরাধের ক্ষেত্রে।
যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থলসীমান্ত দিয়ে কানাডায় প্রবেশের সময় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালান, তাহলে সীমান্ত সেবা কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করবেন। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও অপরাধী হিসেবে গণ্য করে কানাডায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হতে পারে; দেখুন অপরাধমূলক ইতিহাস নিয়ে ভ্রমণ#কানাডা।
ব্রেথলাইজার পরীক্ষা দিতে অস্বীকার করাও একটি ফৌজদারি অপরাধ, এবং এটি পরীক্ষায় সীমার ওপরে ফল পাওয়ার সমান শাস্তির কারণ হবে। যদি পুলিশ অফিসার আপনাকে শ্বাসের নমুনা দিতে বলেন, তাহলে যন্ত্রে পরীক্ষা দেওয়াই আপনার জন্য উত্তম বিকল্প।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও বৈষম্য
[সম্পাদনা]কানাডা একটি অত্যন্ত বহুসাংস্কৃতিক সমাজ, এবং অধিকাংশ কানাডিয়ান মুক্তমনা ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তাই জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম বা যৌন অভিমুখিতা ভিত্তিক উপহাসের শিকার হওয়া খুবই অস্বাভাবিক। যদিও এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তা এতই বিরল যে বড় শহরগুলোতেও স্থানীয় সংবাদে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য- যার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া হতে পারে, এটি কানাডায় বেআইনি এবং এর ফলে মামলা, কারাদণ্ড ও বহিষ্কারের শাস্তি হতে পারে। একইভাবে, কানাডার আইন শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে যেকোনো ধরনের বৈষম্যকেও নিষিদ্ধ করেছে।
সুস্থ থাকুন
[সম্পাদনা]আপনি এখানে এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হবেন না যা পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলিতে সাধারণত হয় না (যদিও অনেক সময় হাসপাতালভেদে সেবার মান কম বলে দাবি করা হয়, তা সাধারণত অতিরঞ্জিত)। কানাডার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সাধারণত কার্যকর এবং সবার নাগালের মধ্যে। তবে অতি গুরুতর নয় এমন অসুখ বা আঘাতের জন্য অপেক্ষার সময় বড় শহরগুলোতে, যেমন টরন্টোতে, কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লাগতে পারে।
২০০০-এর দশকের শেষের দিকে ও ২০১০-এর দশকের শুরুর দিকে কিছু প্রদেশে (অন্টারিও, ম্যানিটোবা, সাসকাচুয়ান এবং আলবার্টা) কানাডীয়রা কয়েকটি ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এটি মশার মাধ্যমে ছড়ানো এক ধরনের মাঝে মাঝে প্রাণঘাতী রোগ। নিউমোনিয়া, ফ্লু/সর্দি বা হুপিং কাশির মতো রোগও গ্রামীণ ও শহুরে উভয় কানাডাতেই ঘটে। যদিও কানাডায় বাসিন্দাদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা আছে, ভ্রমণকারীদের জন্য এটি বিনামূল্যে নয়। তাই কানাডা ভ্রমণের সময় আপনার বীমার আওতায় স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা জরুরি।
কানাডার বেশিরভাগ প্রদেশই হাসপাতাল, স্কুল এবং প্রবেশপথের কাছে জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে। কিছু প্রদেশে বাসস্টপ বা আউটডোর প্যাটিওতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেখুন ধূমপান।
খাদ্য প্রস্তুতি
[সম্পাদনা]কানাডায় রেস্তোরাঁ ও মুদি দোকানের পরিচ্ছন্নতার মান বেশ উঁচু। যদি কেনা খাবারে কোনো সমস্যা থাকে, তবে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ জানান। দূষিত খাবার থেকে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, তবে গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যে বিষক্রিয়া একেবারেই অজানা নয়।
স্বাস্থ্যসেবা
[সম্পাদনা]কানাডার স্বাস্থ্যসেবা মানের দিক থেকে অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সমান। প্রায় সব নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা তাদের প্রাদেশিক সরকারের কাছ থেকে স্বাস্থ্য কভারেজ পান, এবং প্রদেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির ফলে সারাদেশে কভারেজ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী বা কর্ম ভিসাধারীদের জন্য স্বাস্থ্য কভারেজ প্রদেশভেদে ভিন্ন, তবে স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণকারীদের জন্য কোনো প্রদেশেই কভারেজ নেই। হাসপাতাল সাধারণত সরকারি সংস্থা বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মালিকানাধীন, আর ডাক্তারদের চেম্বার বা ছোট ক্লিনিকগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠান, যারা সরাসরি প্রাদেশিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিল পাঠায়।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কানাডায় চিকিৎসার খরচ প্রায় ৩০–৬০% কম। ভ্যানকুভার ও মন্ট্রিয়লের মতো বড় শহরে চিকিৎসা পর্যটন সংস্থাগুলো সৌন্দর্যচর্চা সার্জারি বা জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করতেও সাহায্য করে। চিকিৎসার পর রোগীরা কানাডীয় রকি পর্বতমালায় কেবিনে ছুটি কাটাতে পারেন, রঙিন মন্ট্রিয়ল ঘুরতে পারেন বা অন্যান্য বিনোদনে অংশ নিতে পারেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সস্তা হলেও, ভ্রমণকারীদের জন্য কানাডার স্বাস্থ্যসেবা খুব ব্যয়বহুল হতে পারে। জরুরি বিভাগে ছোটখাটো ভিজিটও সহজেই ১,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে, বিশেষত যদি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহৃত হয়। তাই কানাডায় আসা ভ্রমণকারীদের বৈধ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবীমা অবশ্যই থাকা উচিত।
দূরবর্তী এলাকায়, বিশেষত যেসব সম্প্রদায়ে সড়কপথে যাওয়া যায় না যেমন চার্চিল, গুরুতর রোগী বা দুর্ঘটনাগ্রস্তদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বড় শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের খরচই ১০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে, এবং প্রাদেশিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় থাকলেও নিজের প্রদেশের বাইরে থাকলে কভার নাও হতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই-এমনকি কানাডার বাসিন্দাদেরও-এমন পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত বীমা থাকা উচিত।
পানযোগ্য পানি
[সম্পাদনা]কানাডার সব শহর ও নগরে কলের পানি পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানীয় জল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। বোতলজাত পানি সহজলভ্য হলেও এটি কলের পানির চেয়ে ভালো নয়।
গ্রামীণ বা বন্যপ্রাণীসমৃদ্ধ এলাকায় ভ্রমণের সময় পানিশোধক যন্ত্র বহন করা বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ খোলা পানির উৎস যেমন হ্রদ বা নদীতে জিয়ার্ডিয়া (Giardia) থাকতে পারে, যা ডায়রিয়া বা বমির মতো অন্ত্রের অসুখ ঘটাতে পারে। এটি এড়ানো যায় পানিকে ফুটিয়ে বা ফিল্টার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করে পান করলে।
সম্মান দেখান
[সম্পাদনা]কানাডা একটি বহুসাংস্কৃতিক দেশ, বিশেষত বড় শহরগুলোতে। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কানাডার ২৩% বাসিন্দা অভিবাসী; টরন্টোতে (সবচেয়ে বড় শহর) ৫১% এবং ভ্যাঙ্কুভারে (তৃতীয় বৃহত্তম শহর) ৪২% মানুষ কানাডার বাইরে জন্মেছেন, এবং আরও প্রায় ২০% মানুষের অন্তত একজন অভিভাবক কানাডার বাইরে জন্মেছেন।

অভিবাসীরা পৃথিবীর নানা দেশ থেকে এসেছেন, এবং অনেক শহরে সম্পূর্ণ পাড়া বিশেষ কোনো অভিবাসী সম্প্রদায় দ্বারা প্রভাবিত, যেমন চায়নাটাউন, লিটল ইটালি ইত্যাদি। অনেক লেখক দাবি করেছেন, আমেরিকার "মেল্টিং পটের" বিপরীতে কানাডা "কালচারাল মোজাইক" ধারণা অনুসরণ করে, যদিও কিছু লেখক মনে করেন এটি অতিরঞ্জিত।
কানাডা সাধারণভাবে একটি সহনশীল সমাজ। এখানে বৈষম্য ও ঘৃণাজনিত অপরাধবিরোধী আইন রয়েছে, সমলিঙ্গ বিবাহ বৈধ, এবং মন্ত্রিসভার অর্ধেক নারী। অধিকাংশ কানাডীয়রা বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য বা সমকামীবিদ্বেষ প্রকাশ্যে ঘটলে তীব্র অপছন্দ করে।
তবে সবাই সহনশীল নয়। কানাডায় দীর্ঘদিন ধরে বর্ণবৈষম্যের ইতিহাস রয়েছে, বিশেষত আদিবাসীদের এবং কিছু অভিবাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে (১৯শ শতকে চীনা ও আইরিশ, পরে মূলত কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয়, আর বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায়)।
কানাডায় আঞ্চলিকতার প্রবল প্রভাব আছে। বিশেষত কুইবেকের সঙ্গে বাকি কানাডার সম্পর্ক কিছুটা টানাপড়েনপূর্ণ, কারণ এখনো সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আছে। কিছু কুইবেকবাসী কানাডা থেকে স্বাধীনতার পক্ষে, যদিও কুইবেকের বাইরের বেশিরভাগ ফ্রাঙ্কোফোন সম্প্রদায় যেমন নিউ ব্রান্সউইকের একাডিয়ানরা ফ্রাঙ্কোফোন এবং কানাডীয় উভয় পরিচয়েই গর্বিত।
কানাডায় কোনো ব্যক্তিগত বাসায় প্রবেশ করলে সাধারণত জুতো খুলে রাখা হয়, যদি না গৃহকর্তা বিশেষভাবে না বলেন।
কানাডাকে সাধারণভাবে ভদ্র সমাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্ষমা চাওয়া, দুঃখপ্রকাশ ও ধন্যবাদ জানানো খুব সাধারণ, এমনকি বড় শহরগুলোতেও। কানাডীয়রা প্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই পশ্চিমা সৌজন্য ও আচার অনুসরণ করে।
সমকামী ও লেসবিয়ান ভ্রমণকারী
[সম্পাদনা]কানাডা সব ধরনের এলজিবিটি ভ্রমণকারীদের জন্য খুবই উন্মুক্ত। এখানে সমলিঙ্গের বিবাহ সারাদেশে আইনগতভাবে স্বীকৃত। ভ্যাঙ্কুভার, টরন্টো এবং মন্ট্রিয়ল তাদের সক্রিয় এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য বিখ্যাত। এসব মহানগরীর বাইরে, তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল মনোভাব থাকলেও প্রকাশ্যে ভালোবাসা প্রদর্শন সাধারণত সমস্যা সৃষ্টি করে না, যদিও কিছু গ্রামীণ এলাকায় তা জটিল হতে পারে। সাধারণত স্থানীয় জন্মসূত্রে কানাডীয়রা অভিবাসী কানাডীয়দের তুলনায় বেশি সহনশীল, কারণ অনেক দেশে থেকে আগত অভিবাসীদের সমাজে এলজিবিটি মানুষজন সবসময় গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সর্বদা নিজের বিচক্ষণতা ব্যবহার করা উচিত।
মানবাধিকার আইন কানাডায় সব ক্ষেত্রে বৈষম্য থেকে সুরক্ষা দেয়ার মধ্যে রয়েছে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার ও কর্মসংস্থান। যদি কখনো কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন, বিশেষ করে সহিংসতা বা হুমকির মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে পুলিশ অবশ্যই সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।
আদিবাসী জনগোষ্ঠী
[সম্পাদনা]কানাডায় প্রায় ১৪ লক্ষ আদিবাসী বাস করে, যারা বহু ভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষাগত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে তাদেরকে তিনটি আইনগতভাবে ভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
ফার্স্ট নেশনস (প্রথম জাতি) হলো সেই জনগোষ্ঠী যাদের ঐতিহাসিকভাবে "ইন্ডিয়ান" বলা হতো। যদিও এই শব্দটি এখনও আইন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়, বর্তমানে এটিকে অপমানজনক হিসেবে দেখা হয়। তাদের ঐতিহ্য, ভাষা, ইতিহাস ও জীবনযাপন এলাকা ও পটভূমির ওপর ভিত্তি করে ভিন্নতর। কানাডায় ৬ শতাধিকেরও বেশি ফেডারেল স্বীকৃত ফার্স্ট নেশনস রয়েছে।
মেতি (Métis, উচ্চারণ: মেই-টি) হলো ইউরোপীয় (মূলত ফরাসি) পশম ব্যবসায়ী এবং আদিবাসী নারীদের বংশধর। এরা প্রধানত প্রেইরিজ অঞ্চলে, বিশেষ করে ম্যানিটোবায় বসবাস করে। তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও ইতিহাস রয়েছে। উনিশ শতকের শেষভাগে তারা লুই রিয়েলের নেতৃত্বে দুইটি বিদ্রোহে অংশ নেয় (যা কানাডার ইতিহাসে প্রায় গৃহযুদ্ধের সমতুল্য ঘটনা হিসেবে ধরা হয়)। তবে বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, রিয়েলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা ফরাসি ও ইংরেজিভাষী কানাডীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ফরাসিভাষীরা অন্তত আংশিকভাবে মেতিদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল।
ইনুইট (Inuit; একবচন: ইনুক) হলো সবচেয়ে ছোট গোষ্ঠী। তারা প্রধানত নুনাভুতে বসবাস করে, তবে কুইবেক, ল্যাব্রাডর এবং নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিজেও কিছু সম্প্রদায় রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এদেরকে "এস্কিমো" বলা হতো, কিন্তু আজকের দিনে এই শব্দটি বর্ণবাদী অপমানসূচক হিসেবে গণ্য হয় এবং কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। যদিও আইনগতভাবে "ইনুইট" শব্দটি তাদের সবার জন্য ব্যবহৃত হয়, নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিজের ইনুভিয়ালুইটরা নিজেদেরকে একটি পৃথক জনগোষ্ঠী হিসেবে মনে করে। ইনুইটদেরকে কুইবেক ও ল্যাব্রাডরের তাদের তুলনামূলকভাবে দক্ষিণে বসবাসকারী প্রতিবেশী "ইনুর" সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়, কারণ ইনুরা ফার্স্ট নেশনসের অন্তর্ভুক্ত।
"আদিবাসী" ("অতশতোন" ফরাসিতে) শব্দটি উপরোক্ত সবগুলো গোষ্ঠীর জন্য সামগ্রিকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে অনেক আদিবাসী চান তাদের নির্দিষ্ট জাতিগত নাম (যেমন "ক্রি," "মেতি," বা "ইনুভিয়ালুইট") দিয়ে সম্বোধন করা হোক। "অ্যাবরিজিনাল" ও "নেটিভ" শব্দগুলোও ব্যবহৃত হয়, তবে এগুলো পছন্দনীয় নয়।
যদিও ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আদিবাসী বর্তমানে বড় শহরে বসবাস করেন, কানাডার বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলে বহু আদিবাসী অধ্যুষিত সম্প্রদায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো ফার্স্ট নেশনস রিজার্ভ, যা আইনি ভাবে নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ এলাকা। এসব স্থানে ভ্রমণকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই যাত্রার আগে সেখানে কী পাওয়া যাবে তা জানা এবং সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি। শহুরে এলাকায়ও ক্রমশ রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও সেগুলোকে বাইরে থেকে শহরের সঙ্গে আলাদা করা সাধারণত কঠিন।
সব আদিবাসী গোষ্ঠী (ফার্স্ট নেশনস, মেতি, ইনুইট) অতীতে ব্যাপক বৈষম্য ও জোরপূর্বক সমন্বয়ের শিকার হয়েছে, যা প্রায়ই সরকারের অনুমোদনে এবং খ্রিস্টান চার্চ ও সরকারি এজেন্টদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। আজও বহু আদিবাসী গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে পরিবেশনীতি, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং শতবর্ষেরও বেশি পুরোনো অস্পষ্ট চুক্তি নিয়ে অবিশ্বাস বিদ্যমান। এসব অস্পষ্ট শব্দচয়নের কারণে দীর্ঘমেয়াদী আইনি লড়াই হয়। শিক্ষাক্ষেত্রেও বিরূপ অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিশেষ করে আবাসিক স্কুল ব্যবস্থা, যাকে অনেকে সাংস্কৃতিক গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। আদিবাসী কানাডীয়রা অর্থনৈতিকভাবে এখনও পিছিয়ে আছে এবং প্রায়ই অ-আদিবাসীদের পক্ষ থেকে নেতিবাচক ধ্যানধারণার শিকার হয়। মনে রাখা জরুরি যে, তারা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠেছে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাত রয়েছে এবং পর্যাপ্ত অর্থায়ন বা সহায়তা নেই। ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তারা মানসিক আঘাত বয়ে নিয়ে চলেছে। একইসঙ্গে তারা উত্তর আমেরিকায় প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের বংশধর, যাদের বহু প্রজন্ম ধরে অর্জিত প্রথাগত জ্ঞান রয়েছে, যা প্রায়ই অ-আদিবাসীদের অজানা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
আদিবাসী ইকোট্যুরিজম ও সাংস্কৃতিক পর্যটনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
- আরও দেখুন: উত্তর আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতি
ধর্ম
[সম্পাদনা]আধুনিক কানাডা মূলত এক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ, এবং নিয়মিত গির্জায় যাওয়া মানুষ এখানে সংখ্যালঘু। অধিকাংশ কানাডীয়ই সব ধর্মাবলম্বীর প্রতি সহনশীল, এবং প্রকাশ্যে ধর্মীয় পোশাক পরা সচরাচর কোনো সমস্যা তৈরি করে না। তবে, কাউকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা সাধারণত অশোভন বলে গণ্য হয়। কুইবেকে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে কঠোর। সেখানকার মানুষ ফরাসি লাইসিতে মডেলকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করে। তাই সেখানকার নিয়ম হলো-ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং প্রকাশ্যে কোনো ধর্মীয় চিহ্ন (যেমন ধর্মীয় পোশাক) প্রদর্শন এড়িয়ে চলতে হবে, যদি না তা উপাসনাস্থলের ভেতর হয়।
জাতীয় পরিচয়
[সম্পাদনা]সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কানাডাবাসী আমেরিকান নন। কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা, এমনকি মজা করে হলেও কোনো কানাডীয়র কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন পাবে না। কানাডাবাসীরা প্রায়ই জোর দিয়ে বলেন, তাদের দেশে এমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে একে আলাদা করে তোলে, আর ভ্রমণকারীরা যখন এ বিষয়টি স্বীকার করেন তখন তারা তা প্রশংসা করেন। দুই দেশের সম্পর্ককে একসময় ভাই-বোনের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করা হতো, যেখানে প্রতিযোগিতামূলক ঝগড়াঝাঁটিও থাকত। খেলাধুলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিশেষ করে আইস হকিতে, খুবই তীব্র হতে পারে। তবু আমেরিকান ও কানাডীয়রা একে অপরের প্রতি সত্যিকারের আন্তরিকতা দেখিয়েছে এবং দুর্যোগ নেমে এলে একে অপরকে সাহায্য করতে সবসময়ই এগিয়ে এসেছে।
প্রায়ই অশান্তিপূর্ণ কুইবেক প্রদেশে, অনেক স্থানীয় বাসিন্দা নিজেদের কেবলমাত্র "ক্যুবেকোয়া" (Québécois) হিসেবে পরিচয় দেন, "কানাডীয়" হিসেবে নয়। তারা কুইবেককে একটি পৃথক জাতি হিসেবে দেখেন, যদিও অনেক সময় তারা কানাডা থেকে স্বাধীনতার দাবি তোলেন না। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অল্পসংখ্যক ইংরেজিভাষী সংখ্যালঘু এবং দ্বিভাষিক মন্ট্রিয়ল শহরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফরাসিভাষী বাসিন্দা নিজেদেরকে একইসঙ্গে ক্যুবেকোয়া এবং কানাডীয় বলে পরিচয় দেন।
যোগাযোগ
[সম্পাদনা]
কানাডার যোগাযোগ অবকাঠামো যেকোনো প্রথম বিশ্বের উন্নত ও শিল্পোন্নত দেশের মতোই।
ফোনে
[সম্পাদনা]কানাডা উত্তর আমেরিকান নাম্বারিং প্ল্যানের অংশ (যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ানের বেশিরভাগ অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত) এবং দেশের কোড হলো +১। এরিয়া কোড ও স্থানীয় নম্বরের ফরম্যাটও যুক্তরাষ্ট্রের মতো-১ - তিন অঙ্কের এরিয়া কোড - সাত অঙ্কের স্থানীয় নম্বর। স্থানীয় ল্যান্ডলাইন কল করার সময় প্রথমের ‘১’ বাদ দেওয়া হয় এবং মোবাইলের ক্ষেত্রে এটি ঐচ্ছিক। দূরবর্তী কলের জন্য সম্পূর্ণ নম্বরসহ ‘১’ ডায়াল করতে হয়।
কানাডায় একটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হটলাইন চালু হওয়ার কারণে (শর্ট কোড ৯৮৮), উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল ছাড়া কানাডার সব জায়গায় দশ অঙ্কের ডায়ালিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কানাডার টোল-ফ্রি নম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি যৌথ পুল থেকে নেওয়া হয়। এগুলো আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে এগারো অঙ্কে ডায়াল করতে হয়: +১-৮০০-২৩৪-৫৬৭৮। মোবাইল নম্বর সাধারণত ল্যান্ডলাইনের একই এরিয়া কোড থেকেই বরাদ্দ হয়; তবে কল রিসিভ করার জন্য গ্রাহককেই চার্জ দিতে হয়।
উত্তর আমেরিকা থেকে আন্তর্জাতিক কল করার জন্য প্রিফিক্স হলো ০১১-। তবে যে দেশগুলো কানাডার +১ প্রিফিক্স শেয়ার করে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র), তাদের জন্য এই প্রিফিক্স প্রযোজ্য নয়।
কিছু পে-ফোন এখনো দেখা যায় ব্যস্ত জায়গায় যেমন শপিং মল, সুপারমার্কেট এবং স্থানীয় বা আন্তঃনগর পরিবহন কেন্দ্রগুলোতে। এগুলো দিয়ে টোল-ফ্রি নম্বর (+১-৮০০ এবং অনুরূপ) ফ্রি ডায়াল করা যায় এবং ৫০ সেন্টে স্থানীয় কল করা যায়। তবে দীর্ঘ দূরত্বে কল করলে খরচ অনেক বেশি-বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় ৫ ডলার লেগে যায় প্রথম কয়েক মিনিটের জন্যও। কিছু ছোট কোম্পানির বুথে একই স্থানীয় কল খরচ থাকলেও দূরবর্তী কল তুলনামূলকভাবে কম খরচে হয়, যেমন ১ ডলারে তিন মিনিট। বেশিরভাগ কয়েন-ফোনে ইনকামিং কল ব্লক করা থাকে। সাধারণত কানাডীয়রা প্রিপেইড কলিং কার্ড ব্যবহার করে বা সরাসরি মোবাইল ফোন কিংবা (যেখানে ওয়াই-ফাই আছে) ভিওআইপি (ভয়েস ওভার আইপি) অ্যাপ ব্যবহার করে কয়েন-ফোন এড়িয়ে চলে।
যদি আপনাকে কানাডীয় নম্বর থেকে কল করতে হয় বা কানাডার কোনো নম্বরে ফি ছাড়া কল করতে হয়, তবে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডে কয়েকটি ফ্রি স্মার্টফোন অ্যাপ পাওয়া যায়, যেগুলো ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে ফ্রি নাম্বারসহ বিনামূল্যে কল বা টেক্সট করার সুযোগ দেয়। এসব অ্যাপ মূলত বিজ্ঞাপন-নির্ভর।
মোবাইল ফোনে
[সম্পাদনা]কানাডা এমন কয়েকটি দেশের একটি (সঙ্গে রয়েছে চীন, হংকং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) যেখানে মোবাইল ব্যবহারকারীদের কল রিসিভ করার জন্যও টাকা দিতে হয়। মোবাইল ফোন এবং ল্যান্ডলাইনের নম্বর একই ভৌগোলিক এরিয়া কোডের অধীনে থাকে; সব নম্বরই বহনযোগ্য।
তিনটি বড় কোম্পানি (বেল, টেলাস এবং রজার্স) বাজারের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এরা নানা ব্র্যান্ড ব্যবহার করে প্রতিযোগিতার ভান তৈরি করে-যেমন ফাইডো এবং চ্যাটর রজার্সের মালিকানাধীন, কুডো ও পাবলিক মোবাইল টেলাসের, আর ভার্জিন প্লাস ও লাকি মোবাইল বেলের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কুইবেকে (অটোয়া-হালসহ) ভিডিওট্রঁ ফ্রিডম মোবাইল অধিগ্রহণ করার পর প্রকৃত প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে দাম কমে এসেছে।
শহর ও ব্যস্ত সড়কে কভারেজ ভালো হলেও অনেক দূরবর্তী এলাকায় একেবারেই কভারেজ নেই। ট্রান্স-কানাডা মহাসড়কের কিছু স্থানে কোনো সিগনাল পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও অন্টারিওর গ্রামীণ অঞ্চলে ফাঁকফোকরে কভারেজ না থাকায় প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত ভ্রমণে মোবাইল সিগনাল হারানো অনিবার্য। উত্তরে সাধারণত বড় শহর বা প্রাদেশিক রাজধানীর কাছাকাছি এলাকাতেই মোবাইল কাজ করে।
কিছু আঞ্চলিক কোম্পানি রয়েছে যেমন সাস্কটেল (সাসকাচুয়ান) এবং টিবে টেল (থান্ডার বে, অন্টারিও)। উত্তরাঞ্চলের জন্য আছে আইস ওয়্যারলেস। বেল ও টেলাস নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলেও রজার্স সেখানে আইস ওয়্যারলেসের “এক্সটেন্ডেড কভারেজের” উপর নির্ভর করে, যা প্রিপেইড ব্যবহারকারীদের জন্য নেই। তাই উত্তর কানাডা ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে রজার্স বা চ্যাটর সিম নেওয়া এড়ানো উচিত, না হলে আপনাকে আলাদা আইস ওয়্যারলেস সিম কিনতে হবে (প্রিপেইড সিমে কল, টেক্সট ও ১ জিবি ডাটা ১৯ ডলার)। তাদের কভারেজ এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণে নামলে ৩৪ ডলারে কল/টেক্সট/৫০ জিবি লোকাল + ১০ জিবি কানাডা/মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডাটা (জুলাই ২০২৫ অনুযায়ী) অফার করে আইস ওয়্যারলেস।
তিন বড় কোম্পানি ৪জি এলটিই এবং ৩জি ইউএমটিএস (ডব্লিউসিডিএমএ/এইচএসপিএ) চালায় এবং ৫জি চালু করতে শুরু করেছে। ৩জি উত্তর আমেরিকার ১৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে চলে (যা ইউরোপীয় মানের সঙ্গে মেলে না), তবে ধীরে ধীরে ৩জি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তাই ভ্রমণকারীদের জন্য ৪জি/এলটিই সমর্থিত ফোন আনা ভালো। ফ্রিডম মোবাইল/ভিডিওট্রঁ নিজেদের নেটওয়ার্ক চালায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, আলবার্টা, অন্টারিও ও কুইবেকের শহরাঞ্চলে। ৫জি নেটওয়ার্কে বেল, টেলাস ও রজার্স n66 ব্যবহার করছে, রজার্স অতিরিক্তভাবে এন৪১ ও এন৭১ ব্যবহার করছে, আর ফ্রিডম শুধুমাত্র এন৭১ ব্যবহার করে।
বিভিন্ন “ভার্চুয়াল মোবাইল” অপারেটর তিন বড় নেটওয়ার্ক ভাড়া নিয়ে নিজেদের নামে সেবা দেয়। যেমন “পিসি মোবাইল” (লোবলজের প্রিপেইড, বেলের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে), “জেডটার মোবাইল” (৭-ইলেভেন, কুইকি, পেট্রো-কানাডা; রজার্স ব্যবহার করে) এবং চায়না টেলিকম কানাডা (সিটিএক্সেল, টেলাস ব্যবহার করে)।
যে কেউ কানাডীয় প্রিপেইড মোবাইল নম্বর নিতে পারে; এমনকি কাল্পনিক নামেও (যেমন “পিয়ের পুতিন, র্যু দে সেপারাতিস্ত, জোলিয়েত”) প্রিপেইড নেওয়া হয়েছে। শুধু নাম ও কানাডার ঠিকানা দিলেই হয়। কোন অপারেটর নেবেন তা নির্ভর করবে আপনার ভ্রমণপথ ও কানাডায় প্রবেশস্থলের উপর। বড় শহর থেকে যাত্রা শুরু করলে এবং কিছু কভারেজ ফাঁক বা কিছুটা ধীর গতির ডাটা সমস্যা না হলে ফ্রিডম মোবাইল সবচেয়ে সাশ্রয়ী-অ্যাক্টিভেশন ফি ১০ ডলার (সিম বা ইসিম যেকোনো ক্ষেত্রে), এবং প্রিপেইড প্ল্যান শুরু হয় ২৯ ডলারে (কল/টেক্সট/২০ জিবি, নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও বড় তিনটি এবং মার্কিন নেটওয়ার্কে বৈধ)। সর্বোচ্চ ৫০ ডলারে (কল/টেক্সট/১০০ জিবি) প্ল্যান পাওয়া যায়। তবে প্রতি দুই মাসে ব্যবহারকারীর অধিকাংশ ডাটা ফ্রিডমের নেটওয়ার্কে হতে হবে, নইলে তারা প্ল্যান বাতিল করতে পারে। যদি এটি সমস্যা হয় এবং বড় তিনটির নেটিভ কভারেজ প্রয়োজন হয় তবে তাদের বাজেট ব্র্যান্ড বেছে নিন-পাবলিক মোবাইল (টেলাস, ২৫ ডলারে ৪ জিবি), চ্যাটর (রজার্স, ২৮ ডলারে ৩ জিবি) ও লাকি মোবাইল (বেল, ২৮ ডলারে ৩ জিবি)। সব অপারেটরই ১০ ডলারে সিম অ্যাক্টিভেট করে, তবে পাবলিক মোবাইল, কুডো ও লাকি মোবাইল ইসিমে বিনামূল্যে অ্যাক্টিভেশন দেয়।
কিছু কোম্পানি মার্কিন ভিজিটরদের পোস্টপেইড কানাডীয় সেবা দেয় যদি কানাডার কোনো ঠিকানা দেওয়া হয় এবং ক্রেডিট কার্ডে বিলিং অনুমোদন থাকে। উত্তরাঞ্চল ভ্রমণকারীদের জন্য এটি কার্যকর হতে পারে।
কানাডায় বেশিরভাগ মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমেই বিক্রি হয়, তবে এখন আইন অনুযায়ী সব ফোন আনলক অবস্থায় বিক্রি করতে হয়। এছাড়া ওয়ালমার্ট, বেস্ট বাই, স্ট্যাপলস ও কানাডা কম্পিউটারসের মতো দোকানেও অপারেটর-নিরপেক্ষ ফোন পাওয়া যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইলে এমন এক প্ল্যান নেয়া ভালো যা দুই দেশেই কাজ করে। ফ্রিডম মোবাইলের অনেক প্রিপেইড প্ল্যান এবং ৩৫ ডলারের বেশি পাবলিক মোবাইল প্ল্যানে যুক্তরাষ্ট্র রোমিং অন্তর্ভুক্ত। অন্যদের ক্ষেত্রে রোমিং না থাকলেও হঠাৎ চার্জ আসবে না-রজার্স, বেল ও তাদের প্রিপেইড ব্র্যান্ড একেবারেই রোমিং অনুমতি দেয় না। কুডো বা পাবলিক মোবাইল প্রিপেইডে মার্কিন নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে একটি টেক্সট পাঠিয়ে রোমিং প্যাকেজ কিনতে বলে। ফ্রিডম প্ল্যানে রোমিং না থাকলে সেটিংসে রোমিং বন্ধ রাখতে হবে, না হলে মিনিটে ০.২০ ডলার, টেক্সটে ০.১০ ডলার এবং প্রতি এমবি ডাটায় ০.০৩ ডলার চার্জ যোগ হতে থাকবে।
ইন্টারনেটে
[সম্পাদনা]
মোবাইল ডাটা ব্যয়বহুল হতে পারে, তবে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক উপায় আছে। এমনকি ছোট শহরগুলোরও সরকারি গ্রন্থাগারে সাধারণত পাবলিক কম্পিউটার ও ওয়াই-ফাই থাকে। যেখানে পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হয়, অনেক গ্রন্থাগার অ-অবস্থানকারী ব্যবহারকারীদের জন্য অতিথি একাউন্ট সরবরাহ করে। শহরগুলো প্রায়শই টাউন বা সিটি হল ও কমিউনিটি সেন্টারের মতো অন্যান্য জনসমাগমস্থলেও ওয়াই-ফাই দেয়। কিছু শহর (যেমন হ্যালিফ্যাক্স, মন্ট্রিয়ল, মিসিসাগা এবং ভ্যাঙ্কুভার) বিস্তৃত বিনামূল্যের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক চালু করেছে, যা ব্যস্ত জনসমাগম এলাকাজুড়ে কার্যকর।
ক্যাফে, চেইন রেস্তোরাঁ, জাদুঘর, শিল্পকলা গ্যালারি, শপিং সেন্টার ও বড় খুচরা দোকানগুলোর মতো জনসাধারণ ও বাণিজ্যিক স্থাপনায়ও প্রায়শই ওয়াই-ফাই পাওয়া যায়। এখানে হয়তো কোনো কেনাকাটা করতে হতে পারে, পাসওয়ার্ড চাইতে হতে পারে, অথবা বিপণন উদ্দেশ্যে যোগাযোগের তথ্য দিতে হতে পারে-তবে ওয়াই-ফাই সাধারণত বিনামূল্যেই দেওয়া হয়।
নির্দিষ্ট ইন্টারনেট ক্যাফে এখন বিরল, তবে বড় শহরের গেমিং ক্যাফেগুলো ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি, দ্রুত সংযোগ এবং রাতজাগা সময়সীমা সরবরাহ করে (তবে শুধু ই-মেইল চেক করা বা কয়েকটি ওয়েবসাইট দেখার জন্য এগুলো ব্যয়বহুল হতে পারে)। অধিকাংশ ব্যবসায়িক সেবা ও প্রিন্ট শপ (যেমন স্টেপলস বা ইউপিএস স্টোর) সময়ভিত্তিক ভাড়ায় কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
হোটেলগুলো সাধারণত অতিথিদের জন্য ওয়াই-ফাই সরবরাহ করে, তবে এর খরচ আপনার কক্ষভাড়া বা লয়্যালটি স্ট্যাটাসের ওপর নির্ভর করতে পারে। বড় স্কি রিসোর্টগুলো, যেমন হুইসলার ও ট্রেমব্ল্য, অতিথিদের জন্য এমন ওয়াই-ফাই দেয় যা হয়তো ভ্রমণকালীন আপনার মোবাইল ডাটার প্রয়োজনই পূরণ করে দিতে পারে, যদি আপনি রিসোর্ট এলাকার মধ্যেই থাকেন।
অধিকাংশ বিমানবন্দর ও বড় ভিয়া রেল কানাডা স্টেশনে (মূলত অন্টারিও ও ক্যুবেকে) যাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই আছে। বিসি ফেরিসের বেশিরভাগ টার্মিনালেও ফ্রি ওয়াই-ফাই পাওয়া যায়। অন্টারিও তার মহাসড়ক ৪০০/৪০১-এর অনরুট (ONroute) বিশ্রামকেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সরবরাহ করে, আর ফাস্ট ফুড চেইন আউটলেটগুলো শহরের মতোই রাস্তার পাশের লোকেশন বা বিশ্রামকেন্দ্রগুলোতেও একই ধরনের ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা দিয়ে থাকে।
ডাকে
[সম্পাদনা]যদিও ডেলিভারির সময় শিপিং অপশন ও প্যাকেজ/পার্সেলের আকার অনুযায়ী ভিন্ন হয়, কানাডা পোস্ট সাধারণভাবে খুবই নির্ভরযোগ্য। ২০২৫ সালের হিসাবে, একটি দেশীয় চিঠি পাঠাতে খরচ হয় ১.২৪ ডলার (যদি ১০টি টিকিট একসঙ্গে বুকলেট আকারে কেনা হয়, নতুবা প্রতিটি টিকিটের দাম ১.৪৪ ডলার)। আন্তর্জাতিক পার্সেল ডাকসেবা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। ডাকঘরগুলো সাধারণত লাল ও সাদা রঙের কানাডা পোস্টের চিহ্ন দ্বারা চেনা যায়। কিছু ওষুধের দোকানে, যেমন শপার্স ড্রাগ মার্ট, আইডিএ, ফার্মাপ্লাস, জঁ কুতু এবং ইউনিপ্রিক্স চেইনের অনেক শাখায় পূর্ণাঙ্গ ডাকসেবা সহ ছোট আউটলেট থাকে। এসব আউটলেট সাধারণত ডাকঘরের নির্ধারিত সময়সূচি (সোম-শুক্র সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা) ছাড়াও রাতে বা সপ্তাহান্তে খোলা থাকে।
ভেতরে আসা ডাকের জন্য প্রধান ডাকঘরে "জেনারেল ডেলিভারি" (উত্তর আমেরিকার বাইরে ইংরেজি ও ফরাসিতে "পোস্ত রেস্তান্ত") সেবা পাওয়া যায়। তবে খুচরা ডাকঘর, যেমন ফার্মেসিগুলোতে এই সেবা পাওয়া যায় না। ভ্রমণকারীরা চার মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে এই সেবা নিতে পারেন, তবে প্রতিটি ডাকঘরে সরাসরি গিয়ে নিবন্ধন করতে হয় যেখানে তারা ডাক গ্রহণ করতে চান।
দেশব্যাপী আরও কিছু কুরিয়ার সেবা রয়েছে, যেমন পিউরোলেটর। মার্কিনভিত্তিক ইউপিএস ও ফেডএক্স-ও কানাডায় সেবা দিয়ে থাকে। কিছু (কিন্তু সব নয়) আন্তঃনগর বাস সংস্থা একই বাস লাইনে অন্য শহরে দেশীয় পার্সেল পরিবহন করে থাকে। তবে কুরিয়ার প্যাকেজ পিও বক্স বা "পোস্ত রেস্তান্ত" সেবায় পাঠানো যায় না, যদিও কিছু বাণিজ্যিক মেইল গ্রহণকারী এজেন্ট এগুলো সংগ্রহে রেখে দেয়।
কিছু ডাকঘর ও বাণিজ্যিক মেইল গ্রহণকারী এজেন্ট ফ্যাক্স পাঠানোর সেবাও দেয়, তবে এটি অবস্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে।
কানাডার ঠিকানার বিন্যাস সাধারণত নিচের ধরণের হয়, যা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহৃত বিন্যাসের সঙ্গে খুব মিল:
গ্রহীতার নাম
বাড়ি নম্বর ও সড়কের নাম
(প্রয়োজনে) স্যুইট/অ্যাপার্টমেন্ট/বিল্ডিং নম্বর
শহর বা নগর, প্রদেশের দুই অক্ষরের সংক্ষিপ্ত রূপ, পোস্টাল কোড
এখানে পোস্টাল কোড হয় অক্ষর-সংখ্যার মিশ্রণ, ফরম্যাট: কে ১ এ, ১ এ ১ ( K1A 1A1।)
পরবর্তী ভ্রমণ
[সম্পাদনা]- কানাডার দক্ষিণ ও উত্তর-পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশ হলো ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা। এটি কানাডা ভ্রমণের সময় একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ হতে পারে কিংবা আপনার ছুটির একটি প্রধান অংশও হতে পারে। কিছু জায়গায় বড় কানাডীয় ও মার্কিন শহরগুলো একে অপরের খুব কাছাকাছি এবং গণপরিবহনের মাধ্যমে ভালোভাবে সংযুক্ত-যেমন ভ্যাঙ্কুভার ও সিয়াটল, অথবা টরন্টো ও বাফেলো। সীমান্তজুড়ে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে উভয় পাশে বড় শহর অবস্থিত। প্রবেশের শর্তাবলী জানার জন্য মূল নিবন্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ দেখুন-আপনার যদি ভিসা প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই আগে থেকেই আবেদন করুন।
- সাঁ-পিয়ের ও মিকেলঁ হলো নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের কাছে অবস্থিত দুটি ছোট দ্বীপ। আয়তনে ছোট এবং কানাডার উপকূলের কাছে হওয়া সত্ত্বেও এগুলো ফ্রান্সের একটি বিদেশি প্রশাসনিক বিভাগ এবং উত্তর আমেরিকায় ফরাসি উপনিবেশগুলোর অবশিষ্ট নিদর্শন। এই মনোরম ফরাসি সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় যেতে চাইলে গ্রীষ্মকালে নিউফাউন্ডল্যান্ডের ফর্চুন থেকে যাত্রীবাহী ফেরি ধরতে পারেন, অথবা সারা বছর মন্ট্রিয়ল, হ্যালিফ্যাক্স এবং সেন্ট জনস থেকে নির্ধারিত ফ্লাইট পাওয়া যায়।
- গ্রীনল্যান্ড, কানাডার পূর্বদিকে অবস্থিত প্রধান দ্বীপ প্রতিবেশী, কিছু জায়গায় মাত্র ৫০ কিমি জলরাশি দ্বারা পৃথক হলেও উত্তর আমেরিকা থেকে সহজে যাওয়া যায় না। মৌসুমি ফ্লাইট চালু রয়েছে কেফলাভিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেইএফ আইএটিএ), আইসল্যান্ড থেকে এবং সারা বছর কোপেনহেগেন বিমানবন্দর (সিপিএইচ আইএটিএ) হয়ে। আরেকটি বিকল্প, যদিও ব্যয়বহুল, হলো গ্রীষ্মকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে ছেড়ে যাওয়া ক্রুজ জাহাজ। পৌঁছানো তুলনামূলকভাবে কঠিন হলেও গ্রীনল্যান্ডের অক্ষত প্রাকৃতিক আর্কটিক সৌন্দর্য এবং পৃথিবীর অন্যতম দূরবর্তী এই অঞ্চলের নীরবতা ভ্রমণকে সার্থক করে তোলে।
{{#assessment:country|guide}}

