উইকিভ্রমণ থেকে
টাকী জোড়ামন্দির

টাকি হল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। এটি ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত। টাকি ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এবং নদীর পূর্ব তীরে বাংলাদেশ

বিবরণ[সম্পাদনা]

টাকি ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরের একটি শহর। ১৮৬৯ সালে টাকি পুরসভার প্রতিষ্ঠা হয়। ওই সময়ে টাকির বেশির ভাগ জায়গা ছিল জঙ্গলে ভরা। রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর কৃষ্ণদাস রায়চৌধুরী টাকিতে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমান ইছামতি নদীর সে সময়ে নাম ছিল যমুনা-ইছামতী। কৃষ্ণদাসের চেষ্টায় টাকি সম্ভ্রান্ত এবং ব্রাহ্মণ পরিবারের বাসভূমিতে পরিণত হয়। নন্দদুলালের বিগ্রহ স্থাপনের জন্য টাকিতে জালালপুর গ্রামের বেশ নামডাক ছিল। রাজা মানসিংহ প্রতাপাদিত্যের সাম্রাজ্যে আক্রমণ শানানোর জন্য টাকিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দু’পক্ষের লড়াই হয় বসিরহাটের সংগ্রামপুরে। প্রতাপাদিত্যের সৈন্যদলকে তাড়া করে মানসিংহের বাহিনী। টাকি শ্মশানের পাশ দিয়ে ইছামতী পার হয়ে রক্ষা পায় প্রতাপাদিত্যের দলবল। সেই ইতিহাসকে মনে রেখেই শ্মশান-সংলগ্ন রাস্তার নাম পরে রাখা হয় মানসিংহ রোড। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে টাকি কুলেশ্বরী কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা হয়। টকিতে ইচ্ছামতী নদীতে দুর্গা পূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশের বেশ কিছু পূজা কমিটি নৌকায় করে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনে অংশ নেয়। এটি টাকির একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

টাকি কলকাতার প্রায় ৭০ কিলোমিটার পূর্বে এবং সড়ক ও রেল উভয়ই দ্বারা পৌঁছাতে পারেন।

বাসে করে[সম্পাদনা]

কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে কলকাতা বাস রুট #২৫২ ধরে হাসনাবাদ যাত্রা। এই যাত্রাপথে বারাসাত এবং বাসিরহাট থেকে টাকি পৌছায় বাসটি। আরেকটি বাস, #৭৯ সি রুটে একটি অনুরূপ পথ অনুসরণ করে কিন্তু এটি এসপ্ল্যানেডের পরিবর্তে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে যাত্রা শুরু/সমাপ্ত করে। যাত্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

সড়কপথে[সম্পাদনা]

রেলপথ[সম্পাদনা]

টাকি রেল স্টেশন কলকাতা শহরতলি রেলপথের হাসনাবাদ শাখার অংশ। এটি উত্তর কলকাতায় বারাসত রেল জংশন স্টেশনের মাধ্যমে শিয়ালদহ স্টেশনে যুক্ত রয়েছে। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেনে টাকি পৌচ্ছাতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে এবং প্রতিদিন কয়েকবার লোকাল ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে টাকি পর্যন্ত যাতায়াত করে।

1 টাকি রোড স্টেশন শহরের স্থানীয় রেল স্টেশনটি টাকি রোড স্টেশন নামে পরিচিত। রিকশা দ্বারা স্টেশন থেকে নদী প্রান্ত পর্যন্ত এবং গেস্ট হাউসে যাওয়ার জন্য ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে।

আকাশপথ[সম্পাদনা]

টাকি শহরে কোন বিমাধবন্দর নেই। তবে টাকি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতাতে অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টাকির জন্য বিমান পরিষেবা প্রদান করে।

কাছাকাছি কোথায় যাবেন[সম্পাদনা]

রিক্সা প্রায় কাছাকাছি ভ্রমণের ভাড়া করা যেতে পারে। ২ নং 2 টাকি ঘাট হল নৌকা দ্বারা নদীতে ভ্রমণের জন্য প্রধান ডক।

দেখুন[সম্পাদনা]

মানচিত্র
টাকির মানচিত্র
গোলপাতা জঙ্গল
  • ইছামতি নদী : ইছামতি নদী হল টাকির প্রধান আকর্ষণেগুলির মধ্যে অন্যতম। নদীতে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, গ্রামাঞ্চলে বা জেলেদের তাদের নৌকা কাজ করার দৃশ্য এই স্থান উপলব্ধ করা হয়।
  • 1 গোলপাতার জঙ্গল (গোলপাতাবন) (শহরের উত্তরে জালালপুরের দিকে)। গোলপাতা গাছের বন নদীটির দিকে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে ভূখন্ডটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফলে পরিচয় পত্র সঙ্গে নিয়ে গোলপাতার বন পরিদর্শনে যাওয়াই ভালো কারণ আপনাকে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়ার আগে এটি উপস্থাপন করতে অনুরোধ করা হতে পারে।
  • 2 মাছরাঙা দ্বীপ (জেটি ঘাট থেকে নৌকায়)। ইছামতি ও ভাসা নদীগুলির মিলনস্থল কাছাকাছি অবস্থিত মূলত একটি নির্জন দ্বীপ। এটি একটি চমৎকার স্থান, যা হাঁটা, সাঁতার এবং পাখি দেখার জন্য আদর্শ্য স্থান। নৌকায় প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে এবং এই পথে জমিদার রায়চৌধুরীর বাড়িটির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে নদী দ্বারা গ্রাস হচ্ছে। নৌকা চালনা ₹২০-৩০ ব্যক্তি প্রতি। জনপ্রতি নৌকাভ্রমণ ₹২০-৩০
  • 3 রায়চৌধুরীর জমিদার বাড়ি (ইছামতি নদী পাশে, শহরের উত্তর)। সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী এর পৈতৃক বাড়ি। প্রাঙ্গনের কাছে পুরানো নাটমন্দির মন্দির রয়েছে।
  • শহরের চারপাশে কয়েকটি পুরানো মন্দির রয়েছে যেখানে আপনি সন্ধ্যায় প্রার্থনা এবং আরতিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন:
    • 4 রামকৃষ্ণ মন্দির
    • 5 কুলেশ্বরী কালিবাড়ি (কুলের কালি বাড়ি)।

কি করবেন[সম্পাদনা]

নৌকাবিহার বা নৌকাভ্রমণ: টাকি শহরের নৌ-ঘাটগুলি থেকে নৌকা ভারা করে ইছামতি নদী ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।
দুর্গা পতিমা বিসর্জন: বাংলাদেশের সঙ্গে এই সীমান্ত শহরে অবস্থানের কারণে বার্ষিক দুর্গাপূজা উদযাপন উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর দুর্গা প্রতিমা বিসর্জ উপলক্ষ্যে ভারত ও বাংলার দুর্গা পতিমা নৌকায় করে ইচ্ছামতি নদীতে ভাসানো হয়। এই অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য আপনি ওই বিশেষ দিনে উপস্থিত হতে পারেন টাকিতে।

কী কিনবেন[সম্পাদনা]

মালপোয়া হল একটি স্থানীয় মিষ্টি। এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আপনিও মালপোয়া কিনতে পারেন।

কী খাবেন[সম্পাদনা]

  • কাছাকাছি নদীর সাথে, তাজা মাছের নানা পদ হল স্থানীয় প্রিয় খাবার।
  • গেস্ট হাউসগুলিতে প্রায়ই একটি যুক্তিসঙ্গত মূল্যে খাবার সরবরাহ করার জন্য একটি রেস্তোরাঁ আছে।

রাত্রিযাপন করুন[সম্পাদনা]

সোনার বাংলা হোটেল, টাকি
  • 1 নৃপেন্দ্র অতিথিশালা (টাকি পৌরসভা গেস্ট হাউস), টাকি উত্তর বাড়ি, পোঃ টাকি, উত্তর ২৪ পরগনা, পিন: ৭৪৩৪২৯, +৯১ ৯৩৩১০২৬৫৮৫, +৯১ ৯৩৩৯৩৭৫৯১৫টাকি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত গেস্ট হাউস। এখানে শিশুদের জন্য একটি খেলার এলাকা ও বাইরে একটি বাগান এলাকা আছে।
  • 2 সুহাসিনি গেস্ট হাউজ (টাকি পৌরসভা গেস্ট হাউস), টাকি উত্তর বাড়ি, পোঃ টাকি, উত্তর ২৪ পরগনা, পিন: ৭৪৩৪২৯, +৯১ ৯৩৩০৮২৬৭৭৯, +৯১ ৮০১৬০৬৫৩০৯নদীর পাড়ে অবস্থিত রাস্তার পাশে একটি গেস্ট হাউসে। গেস্ট হাউসের ঘরগুলি বাতানুকূল এবং গাড়ি রাখার স্থান ও একটি রেস্তোরাঁ আছে।
  • 3 সোনার বাংলা হোটেল

এছাড়া যেতে পারেন[সম্পাদনা]

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন