বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে


ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ (ইংরেজি: British Isles) ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তরপশ্চিম উপকূলের সন্নিকটে অবস্থিত। এটি গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহ নিয়ে গঠিত। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। এখানে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক, হাজার বছর পুরনো ঐতিহাসিক স্থান, অতুলনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিশ্বমানের নগর, অদ্ভুত অদ্ভুত শহর ও গ্রাম এবং বিচ্ছিন্ন এলাকা ও দ্বীপ রয়েছে।

দেশ[সম্পাদনা]

মানচিত্র
ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র
  যুক্তরাজ্য (United Kingdom) (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড)
একদা বিশ্বের বৃহত্তম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি এই দেশ চারটি পৃথক দেশ নিয়ে গঠিত। ইংল্যান্ডের চড়াই-উতরাই পাহাড় থেকে ওয়েলসের গভীর উপত্যকা; স্কটল্যান্ডে সুন্দর সংকীর্ণ উপত্যকা থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের চমকপ্রদ উপকূল এর বৈশিষ্ট্য।
  আয়ারল্যান্ড (Ireland)
"পান্না দ্বীপ" (Emerald Isle) নামে পরিচিত এই দেশের ইতিহাস অত্যন্ত গভীর ও আকর্ষণীয়, এবং এর ভূমিরূপ সর্বদাই আপনকে মুগ্ধ করবে।

নির্ভরশীল অঞ্চল[সম্পাদনা]

  আইল অফ ম্যান (Isle of Man)
আইরিশ সাগরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ।
  চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ (Channel Islands) (গার্নসি, জার্সি)
ফ্রান্সের নর্মান্ডি থেকে একটু দূরেই অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জ, যা ইংরেজ ও নরম্যান সংস্কৃতি দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত।

শহর[সম্পাদনা]

লন্ডন
  • 1 এডিনবরা (Edinburgh) — স্কটল্যান্ডে রাজধানী, যা "উত্তরের এথেন্স" (Athens of the North) হিসাবে পরিচিত।
  • 2 কার্ডিফ (Cardiff) — ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও সক্রিয়।
  • 3 গ্লাসগো (Glasgow) — স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম শহর।
  • 4 ডাবলিন (Dublin) — আয়ারল্যান্ডের রাজধানী; গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ও পশ্চিম রোমান ক্যাথলিক ধর্মের আঁতুড়ঘর।
  • 5 বার্মিংহাম (Birmingham) — ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্মিংহাম মিডল্যান্ডস অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
  • 6 বেলফাস্ট (Belfast) — উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী; ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গমস্থল।
  • 7 ম্যানচেস্টার (Manchester) — উত্তর ইংল্যান্ডের বৃহত্তম শহর ও শিল্প বিপ্লবের জনক ম্যানচেস্টার অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও সক্রিয়।
  • 8 লন্ডন (London) — বৈশ্বিক নগরী, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য উভয়ের রাজধানী, বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গমস্থল ও দুই হাজার বছর পুরনো ইতিহাস।
  • 9 লিভারপুল (Liverpool) — প্রাক্তন বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, বিটলসের (Beatles) উৎপত্তিস্থল।

অন্যান্য গন্তব্য[সম্পাদনা]

স্টোনহেঞ্জ
  • 1 লখ নেস — স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত জলাশয়, যা তথাকথিত লখ নেস মনস্টারের বাসস্থান।
  • 2 স্টোনহেঞ্জ — ৪,৫০০ বছর পুরনো প্রস্তরখণ্ডের রহস্যময় ঢের, যা এখনও প্রত্নবিদদের অবাক করে।

অনুধাবন[সম্পাদনা]

সময় অঞ্চল[সম্পাদনা]

সমগ্র ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ শীতকালে গ্রিনিচ মান সময় (Greenwich Mean Time) বা পশ্চিম ইউরোপীয় সময় (Western European Time) এবং গ্রীষ্মকালে পশ্চিম ইউরোপীয় গ্রীষ্মকালীন সময় (Western European Summer Time) অনুসরণ করে। শীতকালীন সময় বাংলাদেশের সময় থেকে ৬ ঘণ্টা পিছিয়ে ও ভারতীয় সময় থেকে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পিছিয়ে। গ্রীষ্মকালীন সময় শীতকালীন সময় থেকে ১ ঘণ্টা এগিয়ে। বিস্তারিত বিবরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলো দেখুন।

ভাষা[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে ইংরেজি ভাষা সর্বত্র প্রচলিত এবং এখানকার সমস্ত জনগণ ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারবে। আয়ারল্যান্ডে ইংরেজি ও আইরিশ উভয় ভাষাই প্রচলিত। এছাড়া যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন স্থানীয় ভাষা প্রচলিত, যদিও এদের ব্যবহার ক্রমশ কমে এসেছে। এর মধ্যে স্কটল্যান্ডে স্কটিশ গ্যালিকস্কটস ভাষা, ওয়েলসে ওয়েলশ ভাষা ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে আলস্টার স্কটস ভাষা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আইল অফ ম্যানে ম্যাংক্স, কর্নওয়ালে কর্নিশ ভাষা বিপদগ্রস্ত। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে বিভিন্ন নরম্যান উপভাষা প্রচলিত।

যাইহোক, ইংরেজিতে সরল জ্ঞান থাকলেও আপনার পক্ষে এই অঞ্চলের যেকোনো জায়গায় ভাষাগত কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে এখানে বিভিন্নরকম বাচনভঙ্গি রয়েছে। আপনি কারুর কথা বুঝতে না পারলে বা আপনার কথা কেউ বুঝতে না পারলে খামোখা লজ্জিত হবেন না, কারণ এমনকি মাতৃভাষীদেরও এরকম সমস্যায় পড়তে হয়।

আবার, লন্ডনের ব্রিক লেন ছাড়া যুক্তরাজ্যের অন্য কোথাও বাংলা ফলক আশা করবেন না, কারণ এখানে বেশিরভাগ ফলক শুধু ইংরেজি ভাষায়। স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় কিছু ফলক রয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বেশিরভাগ ফলক ইংরেজি ও আইরিশ ভাষায়।

প্রবেশ[সম্পাদনা]

লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর, বিশ্বের ব্যস্ত বিমানবন্দরের মধ্যে অন্যতম।

অভিবাসন ও ভিসা[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ পাঁচটি পৃথক এক্তিয়ারে বিভক্ত এবং প্রত্যেকের নিজস্ব অভিবাসন ও ভিসা নীতি রয়েছে: যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, আইল অফ ম্যান, গার্নসি ও জার্সি। তবে তারা সবাই কমন ট্রাভেল এরিয়ার (Common Travel Area) অন্তর্গত, যার ফলে ভ্রমণকারীরা নির্বিঘ্নে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবেন।

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ শেনজেন অঞ্চলের অন্তর্গত নয়, তাই আপনি শেনজেন ভিসা নিয়ে এই অঞ্চল ভ্রমণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাজ্যের ভিসা আইল অফ ম্যান ও চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের ক্ষেত্রেও বৈধ, কিন্তু আয়ারল্যান্ড পৃথক ভিসা নীতি বজায় রাখে। ভ্রমণকারীরা চাইলে নির্দিষ্ট এক্তিয়ারে প্রবেশ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারেন।

আকাশপথে[সম্পাদনা]

লন্ডনের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত হিথরো বিমানবন্দর (Heathrow Airport) এই অঞ্চলে প্রবেশদ্বার এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে হিথরো বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা রয়েছে। হিথরো বিমানবন্দরের নামার পর আপনি এখান থেকে দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য জায়গায় ভ্রমণের জন্য বিমান ধরতে পারেন। এছাড়া এডিনবরা, গ্লাসগো, ডাবলিন, বার্মিংহামম্যানচেস্টার থেকেও ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন শহরে বিমান পরিষেবা রয়েছে।

রেলপথে[সম্পাদনা]

চ্যানেল টানেল রেলপথে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সংযুক্ত করে। উচ্চ-গতির ইউরোস্টার ট্রেন সরাসরি আমস্টারডাম, ব্রাসেলসপ্যারিস থেকে লন্ডন পর্যন্ত পরিষেবা দেয়।

দেখুন[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

সলজবরি ক্যাথিড্রাল

যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ ভ্রমণকারীরা কোনো না কোনো সময়ে লন্ডন ভ্রমণ করবে, তবে আসল যুক্তরাজ্যকে চিনতে গেলে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম ভ্রমণ করাই ভালো। ক্ষুদ্র দেশ হলেও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিভিন্নরকম আকর্ষণ রয়েছে। লন্ডন ব্যতীত এডিনবরা, ব্রিস্টল, ম্যানচেস্টার ও লিভারপুল যুক্তরাজ্যের কিছু উল্লেখযোগ্য শহর।

অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্য শিল্পবিপ্লবের ধারক ও বাহক ছিল। পরে কিছু শিল্প বন্ধ হয়ে গেলেও ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের শিল্পযুগীয় আকর্ষণ এখনও প্রাণবন্ত। আয়ারল্যান্ডেও কিছু শিল্প রয়েছে এবং আইরিশ শ্রমিকরা যুক্তরাজ্যের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

আয়ারল্যান্ড[সম্পাদনা]

ডাবলিন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ও সর্বপ্রধান নগরী।

কিনুন[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্য ও তার নির্ভরশীল অঞ্চলের মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিং (£) এবং আয়ারল্যান্ডের মুদ্রা ইউরো (€)। কিছু জায়গা ব্যতীত পাউন্ড ও ইউরোর মধ্যে কোনোটাই নিজ দেশের বাইরে গ্রহণযোগ্য নয়।

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

পাউন্ড স্টার্লিং এই দেশের সরকারি মুদ্রা এবং কিছু সীমান্ত এলাকা ইউরো গ্রহণ করবে, যেমন আয়ারল্যান্ডের সাথে স্থল সীমা, ফেরি টার্মিনাল ও চ্যানেল টানেল। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ ব্যাংকনোট চালু করেছে। স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও বিভিন্ন নির্ভরশীল অঞ্চলের নিজস্ব ব্যাংকনোট থাকলেও সবই পাউন্ড স্টার্লিঙের ব্যাংকনোট।

আয়ারল্যান্ড[সম্পাদনা]

ইউরো এই দেশের সরকারি মুদ্রা এবং কিছু সীমান্ত এলাকা পাউন্ড স্টার্লিং, যেমন উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাথে স্থল সীমা ও ফেরি টার্মিনাল।

পরবর্তী ভ্রমণ[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ হয়ে গেলে আপনি ইউরোপের মূল ভূখণ্ড ভ্রমণ করতে পারেন। এখানকার প্রধান বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের সমস্ত প্রধান শহরে বিমান পরিষেবা রয়েছে।