উইকিভ্রমণ থেকে

ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় এটির অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২,০৫০ মিটার বা ৬,৭২৬ ফিট এবং হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা থেকে এর দূরত্ব ২৭০ কি.মি. বা ১৬৮ মাইল। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত মানালি। এখানে এলে দেখা যাবে উঁচু নিচু বরফ আর পাথুরে পাহাড়ের এক অপূর্ব সমাহার আর সাথে রয়েছে কূলকূল শব্দে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদীর এক অপরূপ সৌন্দর্য। মানালিতে গেলে মনে হবে প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। যারা পাহাড়-পর্বত আর নদী ভালোবাসেন তাদের জন্য মানালি বেড়ানোর একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠতে পারে।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

মানচিত্র
মানালির মানচিত্র

প্রথমে কোলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে করে ভারতের রাজধানী দিল্লী যেতে হবে। দিল্লী হলো কেন্দ্র বিন্দু যেখান থেকে বিভিন্ন রুটের বাস ছাড়ে। মানালি যাওয়ার বাস দিল্লীর কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে। কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল দিল্লীর সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল। সকল রুটের বাস এখান থেকে ছাড়ে।

মানালী যাওয়ার বাস দুই ধরনের হয়ে থাকে: সরকারি আর বেসরকারি পরিবহন। সরকারি পরিবহনের মধ্যে হিমাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ে আর বেসরকারির মধ্যে হিমাচল এসি ভোলভো এই দুটোই মানালির দিকে যায়। এসি ভোলভো বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কাশ্মীরি গেইট টার্মিনাল থেকে মানালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে সড়কপথে মানালি যেতে। এছাড়াও ভাড়ার গাড়ি করে মানালি যাওয়া যায়। তখন প্রকার ভেদে ১৭০০-১৮০০ ভারতীয় রুপি খরচ হতে পারে। যারা বাসে করে যাবেন তাঁদের ক্ষেত্রে বাস ভাড়া এরকম পড়বেঃ দিল্লী-মানালিঃ- নন-এসিঃ ৫৮৫ রুপি এসি ভলভোঃ ১৪২০ রুপি

দেখুন[সম্পাদনা]

হিন্দিতে মানালিকে বলা হয় “ধারতি কা সওয়ার্গ” বা “পৃথিবীর স্বর্গ”। মানালিতে তেমন অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যা একবার গেলে বার বার সেখানে ছুটে যেতে ইচ্ছে হবে। কিছু দর্শনীয় স্থানসমূহ হলো:

মানালী থেকে পর্বতমালা
  • 1 রোহতাং গিরিপথএটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ৫১ কি.মি. বা ৩২ মাইল। এটি কুলু, লাহাল এবং স্পিতি উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোহতাং গিরিপথে যেতে হয়। এখানে শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খন্ড চোখে পড়ে। এখানে আইস স্কেটিং, স্লেজগাড়ী ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে।
  • সোলাং উপত্যকা এটি রোহতাং গিরিপথ যাওয়ার পথে পড়ে এবং এর দূরত্ব মানালি শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত। এখানে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। এখানে অনেক হোটেল মোটেল গড়ে উঠেছে।
  • রাহালা জলপ্রপাত এটি রোহতাং গিরিপথ থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কীভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে কূলকুল শব্দ করে জলরাশি নেমে বিপাশা/বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।
  • ডেট গুলাবা এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে এর অবস্থান।
  • বিপাশা/বিয়াস নদ শহরের একদম গাঁ ঘেষে কূলকুল রবে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদী আসলেই প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল যা পাঞ্জাবের সুটলেজ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানি ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা নদীতে ভেলায় ভাসতেভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে ভেলায় করে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে।

এখানে দেখার মত আরও আছে হাদিম্বা দেবীর মন্দির, গুম্ফা আশ্রম, মানালি ইকোপার্ক ইত্যাদি।

এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই কারন গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন সেসব জায়গাগুলোতে যেতে পারে না। আর গাড়ি ভাড়া করতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র মানালি শহর থেকে ভাড়া করতে হবে।

থাকা[সম্পাদনা]

বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। এখানের মল রোড সুবিখ্যাত। মল রোডে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে হোটেলের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ ভারতীয় রুপী হতে পারে। হোটেলগুলোতে গরমের ব্যবস্থা আছে। কেনাকাটার জন্য মল রোডে অনেক বিপণীবিতান আছে যেগুলো হোটেল থেকে একদম হেঁটে যাওয়া যায়।

খাওয়া[সম্পাদনা]

মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে হোটের আদার্শা, নিউ আশাপুরি ভোজনালয়, আশাপুরি বাংলা রেস্তোরাঁ ইত্যাদি যেগুলো মল রোডে অবস্থিত। বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন হোটেল বেশ প্রসিদ্ধ।

পরবর্তীতে যান[সম্পাদনা]

মানালি হলো হিমাচল প্রদেশের একটি জেলা শহর আর শিমলা হলো তার রাজধানী। সময় হাতে রেখে শিমলায় ঘুরতে পারেন। মানালি থেকে কুলিতে যেতে পারেন, মানালি থেকে কুলু গেলে কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগবে।