বিষয়বস্তুতে চলুন

62100
উইকিভ্রমণ থেকে
ইউরোপ > পূর্ব ইউরোপ > রাশিয়া

রাশিয়া

পরিচ্ছেদসমূহ

ভ্রমণ সতর্কীকরণ সতর্কীকরণ: রাশিয়া বর্তমানে যুদ্ধে রয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি ভ্রমণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। মাঝে মাঝে ড্রোন হামলা বিভিন্ন স্থানে চালানো হয়, যেমন জ্বালানির মজুদকেন্দ্র ও সামরিক বিমানঘাঁটি। এমনকি মস্কো ও রাশিয়ার দূরবর্তী অঞ্চলের বিমানঘাঁটিও আক্রমণের শিকার হয়েছে।

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ছাড়া রাশিয়ায় ভ্রমণকারী অধিকাংশ বিদেশিরা সরাসরি যুদ্ধে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সাংবাদিকতা বা যেকোনো ধরনের প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ডকে এখানে খুব কঠোরভাবে দমন করা হতে পারে। এই যুদ্ধকে প্রকাশ্যে "যুদ্ধ" বলা হলে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হতে পারে।

কিছু সরকার উত্তর ককেশাস অঞ্চলে ভ্রমণের ব্যাপারেও সতর্ক করেছে, কারণ সেখানে সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে।

রাশিয়ার পুরুষ নাগরিকদের, এমনকি যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তাদেরও সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হতে পারে। দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে দূতাবাস কোনো সহায়তা বা হস্তক্ষেপ করবে না বলে ধরে নেওয়া উচিত।

(সর্বশেষ হালনাগাদ: জুন ২০২৫)

রাশিয়া (রুশ: Россия, রোসিয়া) বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, যা পৃথিবীর বসবাসযোগ্য ভূমির এক-অষ্টমাংশের বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। রাশিয়ার রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পাশাপাশি প্রচুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা অনেক সময় মূলধারার বাইরে ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়। রাশিয়ার বহু দর্শনীয় স্থান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত।

সবচেয়ে পরিচিত দর্শনীয় স্থানগুলো মূলত দেশটির প্রধান শহর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত। মস্কোতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান—লালচত্বর (রেড স্কোয়ার), ক্রেমলিন, সেন্ট বাসিলের গির্জা, এবং দৃষ্টিনন্দন ভূগর্ভস্থ মেট্রো ব্যবস্থা। অপরদিকে, সেন্ট পিটার্সবার্গে পর্যটকরা বিশ্ববিখ্যাত হার্মিটেজ জাদুঘর, মারিয়িনস্কি থিয়েটার ও এর বিশ্বমানের ব্যালে দল, এবং শহরতলির রাজপ্রাসাদগুলো দেখতে ভিড় জমায়।

সোনার আংটি বা গোল্ডেন রিং হলো মস্কোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত প্রাচীন শহরগুলোর একটি সমষ্টি, যেখানে দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের অনন্য রুশ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন—ক্রেমলিন, মঠ, ক্যাথেড্রালগির্জা এখনো সংরক্ষিত আছে।

অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ হলো পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘতম রেলযাত্রা, যা ৯ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে মস্কো থেকে ভ্লাদিভোস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত।

শহরাঞ্চলের বাইরে রাশিয়ার বিশাল প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের জন্য এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। কামচাটকা উপদ্বীপের অক্ষত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আর সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। বৈকাল হ্রদ, যা বিশ্বের গভীরতম ও সর্বাধিক জলাধারসমৃদ্ধ হ্রদ, তার স্বচ্ছ নীল পানির জন্য বিখ্যাত।

রাশিয়ার ভৌগোলিক বিস্তৃতি প্রায় এগারোটি সময় অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। এখানে সাইবেরিয়ার শীতল শঙ্কুযুক্ত বনভূমি থেকে শুরু করে কৃষ্ণসাগর উপকূলের উপক্রান্তীয় সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত বিচিত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য বিদ্যমান। রাশিয়ার এই বিশালতা এমনকি অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীদের জন্যও প্রমাণ করে যে, এই বিশাল দেশকে সম্পূর্ণরূপে জানা প্রায় অসম্ভব।

অঞ্চলসমূহ

[সম্পাদনা]

রাশিয়া (বিতর্কিত অঞ্চল বাদে) মোট ৮৩টি ফেডারেল অঞ্চলে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে ৪৬টি ওবলাস্ত (প্রদেশ), ২১টি প্রজাতন্ত্র, ৯টি ক্রাই (অঞ্চল), ৪টি স্বায়ত্তশাসিত ওক্রুগ, ২টি ফেডারেল শহর এবং ১টি স্বায়ত্তশাসিত ওবলাস্ত।

রাশিয়ার অঞ্চল, রং করা মানচিত্র
 কেন্দ্রীয় রাশিয়া (মস্কো, ইভানোভো ওবলাস্ত, কালুগা ওবলাস্ত, কোস্ত্রোমা ওবলাস্ত, মস্কো ওবলাস্ত, রিয়াজান ওবলাস্ত, স্মলেনস্ক ওবলাস্ত, তভের ওবলাস্ত, তুলা ওবলাস্ত, ভ্লাদিমির ওবলাস্ত, ইয়ারোস্লাভল ওবলাস্ত)
রুশ সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহাসিক কেন্দ্র। এখানে রয়েছে অনন্য স্থাপত্য, প্রাচীন ভবন এবং রাজধানী মস্কো
 চেরনোজেমিয়ে (বেলগোরোদ ওবলাস্ত, ব্রিয়ান্স্ক ওবলাস্ত, কুর্স্ক ওবলাস্ত, লিপেত্স্ক ওবলাস্ত, অরিয়ল ওবলাস্ত, তাম্বোভ ওবলাস্ত, ভোরোনেজ ওবলাস্ত)
কেন্দ্রীয় রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত। এ অঞ্চল গভীর উর্বর কালো মাটির জন্য বিখ্যাত (রুশ ভাষায় ‘চেরনোজেম’ মানে কালো মাটি)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এখানে ছিল বড় যুদ্ধক্ষেত্র।
 উত্তর-পশ্চিম রাশিয়া (সেন্ট পিটার্সবার্গ, আর্কানগেলস্ক ওবলাস্ত, কারেলিয়া, কোমি প্রজাতন্ত্র, লেনিনগ্রাদ ওবলাস্ত, মুরমান্স্ক ওবলাস্ত, নেনেত্সিয়া, নোভগোরোদ ওবলাস্ত, প্সকভ ওবলাস্ত, ভোলোগদা ওবলাস্ত)
এখানে রয়েছে সাবেক সাম্রাজ্যিক রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ, যাকে বলা হয় "উত্তরাঞ্চলীয় রাজধানী"। এ অঞ্চলে আছে লাডোগা ও ওনেগা হ্রদ, প্সকভ ওবলাস্তর মধ্যযুগীয় দুর্গ, কারেলিয়ার হ্রদ অঞ্চল এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে প্রবেশদ্বার।
 কালিনিনগ্রাদ ওবলাস্ত (সাধারণত উত্তর-পশ্চিম রাশিয়ার অংশ হিসেবে ধরা হয়)
পূর্ব প্রুশিয়া নামে পরিচিত ঐতিহাসিকভাবে জার্মান এই অঞ্চল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ যুক্ত হয়। বর্তমানে এটি রাশিয়ার একমাত্র এক্সক্লেভ, যা পোল্যান্ডলিথুয়ানিয়াএর সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে।
 দক্ষিণ রাশিয়া (আদিগেয়া, চেচনিয়া, ক্রিমিয়া, দাগেস্তান, দোনেৎস্ক ওবলাস্ত, ইনগুশেতিয়া, কাবারদিনো-বালকারিয়া, কালমিকিয়া, কারাচাই-চেরকেসিয়া, ক্রাসনোদার ক্রাই, উত্তর ওসেটিয়া, রোস্তভ ওবলাস্ত, স্তাভ্রোপোল ক্রাই)
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল রাশিয়ার সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা। এখানে রয়েছে মনোরম পর্যটন নগরী, যেমন উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় সোচি। তবে এ অঞ্চলে আবার উত্তর ককেশাসর পর্বতঘেরা শীতল এবং অশান্ত প্রজাতন্ত্রও রয়েছে।
 ভলগা অঞ্চল (আস্ত্রাখান ওবলাস্ত, চুভাশিয়া, কিরোভ ওবলাস্ত, মারি এল, মর্দোভিয়া, নিজনি নভগোরোদ ওবলাস্ত, পেঞ্জা ওবলাস্ত, সামারা ওবলাস্ত, সারাতভ ওবলাস্ত, তাতারস্তান, উদমুর্তিয়া, উলিয়ানোভস্ক ওবলাস্ত, ভলগোগ্রাদ ওবলাস্ত)
এ অঞ্চল রাশিয়ার সবচেয়ে শিল্পায়িত এলাকা। এখানে ইঝেভস্ক শহরে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন হয়। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক এ অঞ্চল, যেখানে রয়েছে তাতার রাজধানী এবং রাশিয়ার "তৃতীয় রাজধানী" কাজান
 ইউরাল অঞ্চল (বাশকোর্তোস্তান, চেলিয়াবিনস্ক ওবলাস্ত, খান্তি-মানসিয়া, কুরগান ওবলাস্ত, ওরেনবুর্গ ওবলাস্ত, পের্ম ক্রাই, সভার্দলভস্ক ওবলাস্ত, তিউমেন ওবলাস্ত, ইয়ামালিয়া)
রাশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানেই উৎপাদিত হয় রাশিয়ার প্রয়োজনীয় অনেক সম্পদ। বিশাল ইউরাল পর্বতমালার নামে নামকরণ হয়েছে, যা ইউরোপ ও এশিয়ার সীমারেখা তৈরি করেছে।
 সাইবেরিয়া (আলতাই ক্রাই, আলতাই প্রজাতন্ত্র, বুরিয়াতিয়া, এভেনকিয়া, ইরকুত্স্ক ওবলাস্ত, কেমেরোভো ওবলাস্ত, খাকাসিয়া, ক্রাসনোইয়ার্স্ক, নভোসিবির্স্ক ওবলাস্ত, ওমস্ক ওবলাস্ত, তাইমিরিয়া, তোমস্ক, তুভা, জাবাইকালস্কি ক্রাই)
রাশিয়ার সবচেয়ে বিস্তৃত অঞ্চল। এখানে রয়েছে বৈচিত্র্যময় ভূদৃশ্য ও আবহাওয়া। অবস্থিত বিশ্বের গভীরতম বাইকাল হ্রদ, দীর্ঘতম নদী এবং উত্তরাঞ্চলের জলাভূমি। এখানে বহু তুর্কি, মঙ্গোলীয়, তুংগুসিক ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বসবাস, যা সাইবেরিয়াকে ইউরোপীয় রাশিয়া থেকে আলাদা করেছে।
 রুশ দূর প্রাচ্য (আমুর ওবলাস্ত, চুকোতকা, ইহুদি স্বায়ত্তশাসিত ওবলাস্ত, কামচাটকা ক্রাই, খাবারোভস্ক ক্রাই, মাগাদান ওবলাস্ত, প্রিমোরস্কি ক্রাই, সাখালিন ওবলাস্ত, ইয়াকুতিয়া)
রাশিয়ার সবচেয়ে শীতল অঞ্চলের একটি। এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শীতল শহর ইয়াকুত্স্ক। এ অঞ্চল জাতীয় উদ্যান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পর্বতমালা এবং কামচাটকার আগ্নেয়গিরির জন্য বিখ্যাত। একই সঙ্গে এটি উত্তর কোরিয়াচীন-এ যাওয়ার প্রবেশদ্বার।

মানচিত্র
রাশিয়ার মানচিত্র

শহরসমূহ

[সম্পাদনা]

রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য শহরগুলোর তালিকা:

মস্কোর রেড স্কোয়ারে স্পাস্কায়া টাওয়ার এবং ক্রেমলিন প্রাচীর
  • 1 মস্কো — রাশিয়ার রাজধানী। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শহর এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ইউরোপে ইস্তাম্বুল-এর পর দ্বিতীয়। সাহসী ভ্রমণকারীর জন্য এখানে রয়েছে অগণিত আকর্ষণীয় স্থান।
  • 2 সেন্ট পিটার্সবার্গ — পূর্বে লেনিনগ্রাদ নামে পরিচিত ছিল। এটি রাশিয়ার সংস্কৃতির রাজধানী এবং প্রাক্তন সাম্রাজ্যিক রাজধানী। এখানে রয়েছে স্টেট হারমিটেজ জাদুঘর, যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাদুঘর এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা সংগ্রহশালা। শহরকেন্দ্র নিজেই এক বিশাল মুক্ত-আকাশ জাদুঘরের মতো। ফলে এটি বিশ্বের শীর্ষ ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি।
  • 4 নিজনি নভগোরোদ — রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শহর হলেও প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। এখানে রয়েছে নিজস্ব ক্রেমলিন, আন্দ্রেই সাখারভ জাদুঘর এবং কাছেই মাকারিয়েভ মঠ।
  • 5 সোচি — রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত নগরী। এটি স্তালিনের প্রিয় ছুটির গন্তব্য ছিল। বিদেশিদের কাছে অল্প পরিচিত ছিল, কিন্তু ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়।
  • 7 ভলগোগ্রাদ — পূর্বে স্তালিনগ্রাদ নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপীয় মঞ্চের অন্যতম সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধ এখানে সংঘটিত হয়। বর্তমানে এখানে রয়েছে বিশাল যুদ্ধস্মৃতিস্তম্ভ মামায়েভ কুরগান

অন্যান্য গন্তব্য

[সম্পাদনা]
বাইকাল হ্রদ, বিশ্বের গভীরতম হ্রদ
  • 2 সোনালী আংটি — মস্কোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক শহরগুলোর এক চক্রাকার ভ্রমণপথ, যা সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।
  • 3 কামচাটকা — সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গেইজার, খনিজ ঝর্ণা এবং রাস্তা দিয়ে হাঁটা ভালুকের জন্য পরিচিত।
  • 4 কিঝি — রাশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি। ওনেগা হ্রদ এর কিঝি দ্বীপ ঐতিহ্যবাহী কাঠের চার্চের অনন্য সমষ্টির জন্য বিখ্যাত।
  • 5 কোমি অরণ্যভূমি — অত্যন্ত দূরবর্তী এবং কঠিন প্রবেশযোগ্য, তবে এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অরণ্যাঞ্চল। এখানে রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান ইউগিদ ভা
  • 6 বাইকাল হ্রদ — "সাইবেরিয়ার মুক্তো" নামে পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে গভীর (১,৬৪২ মিটার) এবং আয়তনে বৃহত্তম হ্রদ। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অসাধারণ গন্তব্য।
  • 7 মামায়েভ কুরগান — বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র স্তালিনগ্রাদের স্মৃতিতে নির্মিত বিশাল স্মৃতিস্তম্ভ ও জাদুঘর।
  • 8 সলোভেতস্কি দ্বীপপুঞ্জসাদা সাগরর উত্তরে অবস্থিত। এখানে রয়েছে সুন্দর সলোভেতস্কি মঠ, যা তার দীর্ঘ ইতিহাসে কখনো সামরিক দুর্গ, কখনো বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

বুঝুন

[সম্পাদনা]
রাজধানী মস্কো
মুদ্রা রুশ রুবল (RUB)
জনসংখ্যা ১৪৬.১ মিলিয়ন (2025)
বিদ্যুৎ ২২০ ভোল্ট / ৫০ হার্জ (Schuko, ইউরোপ্লাগ)
দেশের কোড +7
সময় অঞ্চল UTC+02:00 থেকে UTC+12:00; মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গে UTC+03:00
জরুরি নম্বর 112, +7-01 (দমকল বাহিনী), 02 (পুলিশ), +7-03 (জরুরি চিকিৎসা সেবা), 101 (দমকল বাহিনী), 102 (পুলিশ), 103 (জরুরি চিকিৎসা সেবা)
গাড়ি চালানোর দিক ডান

রাশিয়াকে সহজ মাপদণ্ড দিয়ে বোঝা যায় না; সাধারণ আড়শ দিয়ে এটি মূল্যায়ন করা যায় না। এটি একটি অনন্য কাঠামো নিয়ে গঠিত: রাশিয়ায় কেবল বিশ্বাসই করা যায়। — ফ্যোদর তুতচেভ, ১৮৬৬ |

রাশিয়া ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম। ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়ার পর থেকে দেশটি তার প্রভাব ও ক্ষত বহন করে চলেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার পাশাপাশি দেশের ভেতরেও সংঘাত দেখা যায়। যদিও দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান ফেডারেশন (রুশ: Российская Федерация, রোসিস্কায়া ফেডারাতসিয়া) নামে পরিচিত এবং ফেডারেল উপ-প্রজাতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রগুলো সীমিত স্বশাসন পেয়েছে, ক্ষমতার কেন্দ্র সবসময় মস্কোতেই থাকে। প্রায় ১৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৩ কোটির মতো মানুষ রাশিয়ান জাতির অন্তর্ভুক্ত নয়; এ বিষয়ে জানতে রাশিয়ার সংখ্যালঘু সংস্কৃতির দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

সার্শাসনের রাশিয়া

[সম্পাদনা]
আরও দেখুন: রাশিয়ান সাম্রাজ্য

রাশিয়ার পরিচয়কে মধ্যযুগ থেকে অনুসরণ করা যায়। এসময় এর প্রথম রাষ্ট্র ছিল কিয়েভান রুশ এবং বাইজেন্টাইন খ্রিস্টধর্ম (অর্থোডক্স) কনস্টান্টিনোপল থেকে গৃহীত হয়েছিল। জার পিটার দ্য গ্রেটের শাসনকাল (১৬৮২–১৭২৫) পর্যন্ত এটি প্রধান ইউরোপীয় অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়নি। তিনি দেশটিকে আধুনিক এবং ইউরোপের একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য পরিচিত ছিলেন। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এই শহরটি তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্যের দ্বারা নির্মিত।

১৮শ ও ১৯শ শতকের শেষভাগে রুশ সাম্রাজ্য তার শিখরে পৌঁছেছিল। এ সময় কাতেরিন দ্য গ্রেট, ফ্যোদর দস্তয়েভস্কি এবং লিও তলস্তয়ের মতো অনেক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের জন্ম নেয়। তবে, জনগণের সঙ্গে কর্তৃত্ববাদী রাজপরিবারের দূরত্ব প্রতিটি প্রজন্মে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। গ্রেট নর্দান যুদ্ধ (১৭০০–১৭২১) এবং সেভেন ইয়ার্স যুদ্ধের (১৭৫৬–১৭৬৩) সময় রাশিয়া অন্তত কিছু বড় শক্তির সমান ক্ষমতা প্রমাণ করেছিল, কিন্তু নেপোলিয়নের ব্যর্থ আগ্রাসনের সময়ই ইউরোপ প্রথমবারের মতো লক্ষ্য করে যে রাশিয়া ফ্রান্স, প্রুশিয়া বা অস্ট্রিয়ার সমান একটি বড় শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

১৯শ শতকের শেষদিকে রাজনৈতিক সংকট দ্রুতগতিতে পরপর ঘটতে থাকে। বিদ্রোহ ও দমনের চক্রে বহু মৃত্যু ও দুর্ভোগের লড়াই চলতে থাকে। সমাজ সংস্কারের সামান্য কিছু প্রচেষ্টা এবং নিম্নবর্গের অবস্থার উন্নতির চেষ্টা সবসময় ব্যর্থ হয়েছিল। ক্রিমিয়ান এবং রুশ-জাপানি যুদ্ধের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যা সামরিকভাবে দুর্বল হলেও রাজনৈতিকভাবে আরও বিধ্বংসী প্রমাণিত হয়। ১৯০৫ সালের বিপ্লব আংশিকভাবে জাপানের কাছে রুশ সেনাবাহিনীর অপমানজনক পরাজয়ের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। এটি ছিল কয়েক শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবার যখন কোনো এশীয় শক্তি একটি পশ্চিমা শক্তিকে পরাজিত করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্রিটেনফ্রান্সের পক্ষে সার্বিয়াকে রক্ষা করতে যোগ দিয়েছিল, যা সাম্রাজ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। জার দ্বিতীয় নিকোলাস এবং তাঁর স্ত্রী নিজেদের ব্যক্তিগত দুঃখ ও যুদ্ধের ভারে দিশেহারা ছিলেন, যার ফলে তাঁরা দুর্বল ও অযোগ্য প্রমাণিত হন। ১৯১৭ সাল নাগাদ জনগণের মনোবল তলানিতে পৌঁছায়, অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং শান্তির জন্য সর্বত্র আবেদন ছড়িয়ে পড়ে।

সরকার ১৯১৭ সালের দুটি বিপ্লব দমনে ব্যর্থ হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর স্বল্পকালীন অন্তর্বর্তী সরকার নির্বিঘ্নে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তা নেতৃত্বহীন প্রমাণিত হয়। ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা রুটি, শান্তি, জমি ও সম্পদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বণ্টন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৯১৭ সালের অক্টোবরে বলশেভিকরা মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ (যা পরে লেনিনগ্রাদ নামে পরিচিত হয়) দখল করে , কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। জারবংশের রোমানভ পরিবার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং গৃহবন্দি অবস্থায় নতুন সরকারের আদেশে তাদের হত্যা করে পরিচয়হীনভাবে কবর দেওয়া হয়। কমিউনিজমের পতনের পর তাদের দেহাবশেষ খুঁজে বের করে সেন্ট পিটার্সবার্গের সেন্ট পল এবং পিটার ক্যাথেড্রালে পুনরায় সমাধিস্থ করা হয়।

কমিউনিস্ট রাশিয়া

[সম্পাদনা]
আরও দেখুন: সোভিয়েত ইউনিয়ন
বিশ্বের সর্ববৃহৎ লেনিনের মূর্তি, উলান উডে

১৯১৭ সাল নাগাদ বিশ্বযুদ্ধের চাপ ও প্রভাবে রাশিয়ার প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম ছিল। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট আলেকজান্ডার কেরেনস্কির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, কিন্তু এটি কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। এই সুযোগে, মার্কসবাদী ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি, অর্থাৎ বলশেভিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে। তারা রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে এবং ধর্মগুরু, রাজনৈতিক বিরোধী, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও ধনী কৃষক-জমিদারদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও দমন অভিযান শুরু করে। কমিউনিস্টদের লাল বাহিনী এবং অভিজাত ও মধ্যবিত্তদের সাদা বাহিনীর মধ্যে ১৯২০ সালের শেষ পর্যন্ত এক নিষ্ঠুর গৃহযুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ঘটায় এবং দেশকে বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়।

ক্ষমতায় থাকার সময় লেনিন লাল বাহিনী এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধী, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা, কারাবন্দি বা নির্বাসিত করেন। তিনি কঠোর কমিউনিস্ট নীতি কার্যকর করার জন্য সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নেন, প্রাচীন রোমানভ সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং কৃষি ও চাষাবাদকে বিশাল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খামারে রূপান্তরিত করেন।

ব্যালেট আজও জনপ্রিয়। রাশিয়ায় প্রায় সাপ্তাহিকভাবে সোয়ান লেক উপস্থাপিত হয়।

লেনিনের মৃত্যুর পর ১৯২৪ সালে, বলশেভিক নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়, যার ফলস্বরূপ জোসেফ স্টালিন কমিউনিস্ট পার্টির নতুন নেতা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের একনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯২৮ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত স্টালিনের নিষ্ঠুর শাসন শুদ্ধিকরণ অভিযানের জন্য পরিচিত। এই সময় সরকার, দল, লাল ফৌজ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহভাজনদের প্রায়শই প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করা হতো অথবা গুলাগে নির্বাসিত করা হতো। লেনিনের কৃষি সম্পর্কিত কঠোর নীতি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংসের ধারাবাহিকতায় স্টালিন একটি কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ('এক দেশে সমাজতন্ত্র') চালু করেন, যা দ্রুত সোভিয়েত ইউনিয়নে শিল্পায়ন ঘটায়। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হলেও, স্টালিনের প্রথম পাঁচ-বছরের পরিকল্পনা প্রায় শূন্য থেকে ভারী শিল্প গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যদিও স্টালিন তাঁর পূর্বসূরি লেনিনের মতো আদর্শবাদী ছিলেন না, তবুও তিনি আন্তর্জাতিক বিপ্লবের কাজ চালিয়ে যান। রাশিয়াভিত্তিক কমিন্টার্নের মাধ্যমে তিনি বিদেশি কমিউনিস্ট দলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনা করেন। স্টালিনের শাসনের প্রভাবে জর্জ অরওয়েল 'অ্যানিমাল ফার্ম' এবং '১৯৮৪'-এর মতো কালজয়ী গ্রন্থগুলো রচনা করেন, যা কমিউনিজমের প্রতি তাঁর হতাশার প্রতিফলন।

সোভিয়েত দৃষ্টিকোণ থেকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় স্টালিনের আকস্মিক নাৎসি জার্মানির সঙ্গে একটি অপ্রত্যাশিত চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে। এই চুক্তিটি পশ্চিমা সরকার এবং ইউরোপ ও আমেরিকার বামপন্থী দলগুলোকে স্তম্ভিত করে। চুক্তির ফলে হিটলার পোল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। একই সাথে, এই চুক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে ফিনল্যান্ড এবং জার্মান আক্রমণের পর পূর্ব পোল্যান্ড দখল করার সুযোগ দেয়।

১৯৪১ সালের জুন মাসে ফ্রান্স এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ দখল করার পর হিটলার ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক অভিযান অপারেশন বারবারোসা শুরু করেন এবং তাঁর প্রাক্তন মিত্রের ওপর আক্রমণ চালান। এর ফলস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে বড় এবং প্রাণঘাতী পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়। এই বিশাল সংঘর্ষে লাল ফৌজ ৩৪ মিলিয়ন সৈন্য মোতায়েন করে। এ যুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ স্টালিনগ্রাদ এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী অবরোধ লেনিনগ্রাদ সংঘটিত হয়, এবং ১৯৪৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ব্যাগ্রেশন পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধ এবং নাৎসিদের হাতে সোভিয়েত নাগরিকদের গণহত্যার ফলে ২৬ মিলিয়নেরও বেশি সোভিয়েতের মৃত্যু হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা। জার্মান সেনাবাহিনী তাদের মোট হতাহতের ৮০% কেবল পূর্ব রণাঙ্গনেই হারায়। প্রায় ১৫ লাখ সোভিয়েত সৈন্য শেষ নাৎসি প্রতিরোধের মোকাবিলা করে, হিটলারের আত্মহত্যার পর ১৯৪৫ সালের মে মাসে বার্লিন দখল করে, যা নাৎসি জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ এবং ইউরোপে যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করে।

জার্মানির পরাজয়ের তিন মাসের মধ্যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫ লাখ সৈন্য পুনরায় মোতায়েন করে অপারেশন আগস্ট স্টর্ম শুরু করে এবং মাঞ্চুরিয়ার কোয়ান্টুং আর্মিকে ধ্বংস করে দেয়। মাত্র ১১ দিনে জাপানি প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়া এই দ্রুত অভিযান এবং আমেরিকান পারমাণবিক বোমা হামলার সম্মিলিত প্রভাবে জাপানের আত্মসমর্পণের পথ প্রশস্ত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্রুত পূর্ব ইউরোপে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমতুল্য একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, যা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করে। তারা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো দখল করে এবং পূর্ব জার্মানি, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, রোমানিয়াআলবেনিয়াতে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মঙ্গোলিয়া, চীন, উত্তর ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, কম্বোডিয়ালাওসে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। পশ্চিমা সমালোচকদের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং এর অধীন ইউরোপীয় ও এশীয় রাষ্ট্রগুলো ছিল নির্মম স্বৈরশাসন ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পিত অর্থনীতির জালে আবদ্ধ। ১৯৫৩ সালে পূর্ব জার্মানি, ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরি এবং ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়াতে সংঘটিত বিক্ষোভগুলো লাল বাহিনী নিষ্ঠুরভাবে দমন করে।

১৯৫৩ সালে স্টালিনের মৃত্যুর পর, জর্জি মালেনকভ (১৯৫৩-১৯৫৫) এবং নিকিতা খ্রুশ্চেভের (১৯৫৫-১৯৬৪) নেতৃত্বে ভারী শিল্প ও সামরিক শক্তির ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। যদিও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়, তা বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়, ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সংগ্রামে পড়তে হয়। ১৯৫৬ সালে খ্রুশ্চেভ স্টালিনের নিপীড়নের নিন্দা করে অর্থনীতি ও সমাজে ডি-স্টালিনাইজেশন বা স্টালিন-মুক্তিকরণের উদ্যোগ নেন। এই প্রচেষ্টার ফল মিশ্র ছিল এবং এক পর্যায়ে খ্রুশ্চেভকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশ প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করে এবং প্রথম কোনো বস্তু (স্পুতনিক), প্রাণী (কুকুর লাইকা), মানুষ (ইউরি গ্যাগারিন) এবং নারী (ভ্যালেন্টিনা তেরেশকোভা) মহাকাশে পাঠায়। তবে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, তহবিলের অভাব এবং প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত ত্রুটির কারণে সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের থেকে পিছিয়ে পড়ে। ১৯৬৯ সালে চাঁদে অবতরণের পর সোভিয়েতের মনোযোগ পরিবর্তিত হয় এবং মূলত মানববিহীন অভিযান ও মহাকাশ স্টেশনের দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়।

লিওনিড ব্রেজনেভের (১৯৬৪-১৯৮২) শাসনামলের শেষ বছরগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক, কূটনৈতিক এবং শিল্পক্ষেত্রে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছায়। কিন্তু দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, যা মিখাইল গর্বাচেভকে (১৯৮৫-১৯৯১) গ্লাসনস্ট (উন্মুক্ততা) ও পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য করে। এই নীতিগুলো এমন এক শক্তির জন্ম দেয় যা শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত সাম্রাজ্যকে ভেঙে দেয়। ইউরোপীয় অধীনস্থ রাষ্ট্রগুলো সোভিয়েত শাসন থেকে স্বাধীন হয় এবং ১৫টি স্বতন্ত্র দেশে বিভক্ত হয়ে যায়।

আধুনিক রাশিয়া

[সম্পাদনা]
রাশিয়ার মিলেনিয়াম স্মৃতিসৌধ, নোভগোরড ক্রেমলিনের ভিতরে

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, রাশিয়ান ফেডারেশন বিভিন্ন জটিলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কেজিবি অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করে ক্ষমতায় আসা প্রথম নির্বাচিত নেতা বোরিস ইয়েলৎসিন প্রাথমিকভাবে একজন প্রভাবশালী, পশ্চিমাপন্থী নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। যদিও তার প্রশাসন ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত, অকার্যকর এবং অস্থিতিশীল।

ইয়েলৎসিন 'শক থেরাপি' নামে একটি বিতর্কিত অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেন, যার মাধ্যমে রাতারাতি রাশিয়াকে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে রূপান্তরের চেষ্টা করা হয়। এই নীতির ফলে সমস্ত সোভিয়েত মূল্য নিয়ন্ত্রণ বাতিল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে এবং সংগঠিত অপরাধের বিস্তার ঘটায়। পাশাপাশি, চেচেন স্বাধীনতাবাদীদের সঙ্গে সংঘাত দেশকে আরও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। ১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ইয়েলৎসিন পদত্যাগ করেন এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে প্রাক্তন কেজিবি কর্মকর্তা ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়োগ দেন।

পুতিনের প্রথম দুই মেয়াদে রাশিয়ার অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, উত্তরের ককেশীয় অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন করা হয়, এবং রাশিয়া পুনরায় একটি প্রধান বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০০৮ সালে পুতিন সাংবিধানিকভাবে সীমিত মেয়াদ শেষে দিমিত্রি মেদভেদেভের কাছে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে রাশিয়া জর্জিয়ায় আক্রমণ চালায় এবং এর দুটি অঞ্চল—আবখাজিয়া এবং দক্ষিণ ওসেটিয়াকে—স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১২ সালে পুতিন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

পুতিনের তৃতীয় রাষ্ট্রপতিত্বের মেয়াদে পরিস্থিতি ব্যাপক পরিবর্তন হয়। ২০১৪ সালে তিনি ক্রিমিয়া দখল করেন এবং পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমের বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালে পুতিন আবারও রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ইউক্রেনে বৃহৎ আকারের সামরিক অভিযান শুরু করেন এবং চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখল করে নেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হতবাক করে। এই আক্রমণ বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি সংকট আরও তীব্র করে এবং রাশিয়ার জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে তোলে।

ভূগোল

[সম্পাদনা]

রাশিয়া উত্তর ইউরেশিয়ার বিশাল অংশ জুড়ে বিস্তৃত একটি বিশাল দেশ, যার আয়তন ১,৭০,৯৮,২৪৬ বর্গ কিলোমিটার (৬৬,০১,৬৭০ বর্গ মাইল), যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাশিয়ার আয়তন অ্যান্টার্কটিকার থেকে কিছুটা বড়, দক্ষিণ আমেরিকার সমান, আফ্রিকার অর্ধেক এবং প্লুটোর সমান। এই সুবিশাল ভূখণ্ডে পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্তৃত বনাঞ্চল রয়েছে। দেশটির উত্তর উপকূল আর্কটিক মহাসাগরের সাথে ৫,৬০০ কিলোমিটার (৩,৫০০ মাইল) দীর্ঘ সীমানা তৈরি করেছে, যা পশ্চিমে বারেন্টস সাগর থেকে পূর্বে বেরিং সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি বিশ্বের অর্ধেক আর্কটিক জনসংখ্যার আবাসস্থল।

রাশিয়ার ভূদৃশ্য অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়: উরাল পর্বতমালার পশ্চিমে রয়েছে প্রশস্ত সমভূমি এবং ছোট ছোট টিলা। সাইবেরিয়ায় অসীম কনিফারাস বন এবং তুন্দ্রার দৃশ্য দেখা যায়, যা আর্কটিক মহাসাগরের উপকূল বরাবর একটি সরু স্ট্রিপে বিস্তৃত। এর দক্ষিণ সীমান্তে উচ্চভূমি পর্বতমালা একটি প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য অঞ্চলে চূড়া এবং আগ্নেয়গিরি সমন্বিত ভূদৃশ্য দেখা যায়, যা স্থলভাগের গতিশীল ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার পরিচয় বহন করে। কুরিলে দ্বীপপুঞ্জ এবং কামচাটকা উপদ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অংশ, যা প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অফ ফায়ারের অন্তর্ভুক্ত। এই ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত ওখোৎস্ক সাগরের ঠাণ্ডা ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জল বিশ্বের অন্যতম উত্পাদনশীল মৎস্য সম্পদের উৎস।

আবহাওয়া

[সম্পাদনা]

রাশিয়ার জলবায়ু অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ, যা দেশের বিশাল ভূগোলের কারণে ঋতুগুলোর নাটকীয় পরিবর্তন দেখায়। মহাদেশীয় অভ্যন্তরে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ থেকে গরম থাকে। অন্যদিকে, শীতকালে প্রায় সমগ্র দেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য তুষারময় ও শীতল থাকে। তবে দক্ষিণের উত্তর ককেশাস অঞ্চলে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে মৃদু থাকে। দূরপ্রাচ্যের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে সাবআর্কটিক পরিস্থিতি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থায়ী জনবসতি, যেমন ইয়াকুতস্ককে, বিশ্বের সবচেয়ে শীতল বৃহৎ শহরে পরিণত করেছে।

এই বিশাল ভূখণ্ডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল প্রাচীন পার্মাফ্রস্ট দ্বারা জমাটবদ্ধ। এর ভূদৃশ্য তুন্দ্রা থেকে কৃষ্ণ সাগরের উষ্ণ উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই চরম বৈচিত্র্যের মাঝেও রয়েছে রাশিয়ার হৃদয়: মহাদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল, যা ইউরোপীয় রাশিয়ার শহরসমূহ, দক্ষিণ সাইবেরিয়ার উপত্যকা এবং দূরপ্রাচ্যের প্লাবনভূমিকে আচ্ছাদিত করে। গ্রীষ্মকালে দিনগুলো এত উষ্ণ হয় যে, অসংখ্য নদী, বিশুদ্ধ হ্রদ এবং সাগরে সাঁতার কাটার সুযোগ তৈরি হয়।

ছুটির দিনসমূহ

[সম্পাদনা]
নভোসিবিরস্কের কাছে সাইবেরিয়ার বর্চ বন। সাদা বর্চ রাশিয়ার একটি জাতীয় প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়

রাশিয়ার ছুটির দিনসমূহ বিভিন্ন ধরনের: ফেডারেল ও আঞ্চলিকভাবে নির্ধারিত, নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক, পেশাগত এবং ধর্মীয়। এর মধ্যে ফেডারেল ও আঞ্চলিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ছুটি সারাদেশে প্রযোজ্য, যা ভ্রমণ পরিকল্পনার সময় বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হয়।

রাশিয়ান ফেডারেশনের আনুষ্ঠানিক ছুটির দিনসমূহ:

  • নববর্ষের ছুটি (১–৫ জানুয়ারি), যা প্রায়শই বড়দিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ের ছুটি প্রদান করে।
  • অর্থডক্স বড়দিন (৭ জানুয়ারি)
  • দেশপ্রেমিক রক্ষক দিবস (২৩ ফেব্রুয়ারি)
  • আন্তর্জাতিক নারী দিবস (৮ মার্চ)
  • শ্রম ও বসন্ত দিবস (১ মে)
  • বিজয় দিবস (৯ মে)
  • রাশিয়ার দিবস (১২ জুন)
  • জনগণের ঐক্য দিবস (৪ নভেম্বর)

পরিমাপ একক

[সম্পাদনা]

রাশিয়ায় পরিমাপের ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই; এসআই সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিলোমিটার, কিলোগ্রাম, লিটার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। পুরনো একক হিসেবে দূরত্বের জন্য ‘ভার্সতা’ এবং ‘ভার্শক’, ওজনের জন্য ‘পুড’ ব্যবহৃত হতো; পুড প্রায়শই প্রবাদে ব্যবহৃত হয়, যেমন: "স্যেস্ট পুড সোলি"—অর্থাৎ কারও সঙ্গে দীর্ঘদিন পরিচিত থাকা।

সময় অঞ্চল

[সম্পাদনা]
রাশিয়ার সময় অঞ্চলসমূহ (অভ্যন্তরীণ ক্রিমিয়াসহ)

রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভৌগোলিক বিস্তৃতির দেশ হওয়ায় এখানে ১১টি সময় অঞ্চল রয়েছে, যা পশ্চিমে কালিনিনগ্রাদ থেকে পূর্বে কামচাটকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমানে, দেশটিতে ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) ব্যবহার করা হয় না। যদিও পূর্বে দেশটি সীমিত সময় অঞ্চল ও ডেলাইট সেভিং টাইম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল, এখন রাশিয়ার সময় আইনগতভাবে স্থায়ী শীতকালীন সময় হিসেবে নির্ধারিত। এর ফলস্বরূপ, বিশেষ করে ইউরোপীয় অংশে গ্রীষ্মকালে সূর্যোদয় খুব ভোরে (৩:০০–৪:০০টায়) হয় এবং শীতকালে সূর্যাস্ত খুব দ্রুত (১৫:০০–১৬:০০টায়) ঘটে।


আরও দেখুন: রাশিয়ান বাক্যপুস্তক

রুশ হলো রাশিয়ার প্রধান ভাষা, যা পূর্ব স্লাভীয় ভাষা পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এটি ইউক্রেনীয় ও বেলারুশীয় ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও, এই ভাষাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া তুলনামূলকভাবে সীমিত। অন্যান্য স্লাভীয় ভাষা, যেমন বুলগেরিয়ান বা ক্রোয়েশিয়ান যদিও সামান্য মিল পরিলক্ষিত তবে সাধারণত রুশ ভাষাভাষীদের জন্য বোঝা কঠিন। রুশ ভাষা তার জটিল ব্যাকরণ ও স্বতন্ত্র উচ্চারণের কারণে ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য ইউরোপের অন্যতম কঠিন ভাষা হিসেবে বিবেচিত হয়।

কম সময়ে এই ভাষা শেখা অসম্ভব, তাই প্রথমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভদ্রতা সূচক শব্দ ও বাক্যাংশ এবং সিরিলিক বর্ণমালা শেখার দিকে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। সিরিলিক বর্ণমালা শিখলে রাস্তার নাম, লেবেল এবং বিভিন্ন পাবলিক সাইন বুঝতে সুবিধা হবে। এই লিপিটি শেখা খুব কঠিন নয় এবং শুধু রাশিয়ার জন্যই নয়, আরও অনেক দেশের জন্য এটি অপরিহার্য।

যারা স্লাভীয় ভাষা বোঝেন না, তাদের জন্য রুশ ভাষা শেখা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। যদিও সিরিলিক লিপিতে অনেক ল্যাটিন অক্ষরের মতো বর্ণ রয়েছে, তবে তাদের উচ্চারণ প্রায়শই ভিন্ন হয়। রুশ ভাষার তিনটি লিঙ্গ (পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ ও ক্লিবলিঙ্গ), ছয়টি ব্যাকরণগত কারক এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় উচ্চারণ পদ্ধতি রয়েছে, যা ইংরেজি ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু জটিলতা তৈরি করে।

সেরগিয়েভ পসাদে ত্রিত্ব মনাস্টারি—রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্ম রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অনুসারী রাখে

ইংরেজি হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় বিদেশী ভাষা। শিক্ষিত এবং তরুণ রুশদের মধ্যে, বিশেষ করে যারা সেবা খাতে কর্মরত, কেউ কেউ প্রাথমিক কথোপকথন চালিয়ে নিতে পারেন। তবুও, মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের মতো প্রধান শহরগুলোতেও খুব কম মানুষই ইংরেজিতে কথা বলে। এই কারণে, কোনো পর্যটকের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে রুশ ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

আপনি যদি রুশ ভাষায় পুরোপুরি দক্ষ না-ও হন, তবুও আপনার এই ভাষায় কথা বলার সামান্য প্রচেষ্টাই স্থানীয়দের ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর পাশাপাশি, এমনও হতে পারে যে আপনি রুশ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করা সত্ত্বেও, কোনো ইংরেজি জানা স্থানীয় ব্যক্তি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আপনার সাথে ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করতে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে হতাশ হবেন না, কারণ এটি আপনার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে, রুশরা সাধারণত এটি অভদ্রতা হিসেবে বিবেচনা করে না যে কেউ তাদের সাথে অপরিচিত ভাষায় কথা বলছে।

রাশিয়ার সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী ভাষা শিক্ষাদানের মান খুব উন্নত নয়। ফলস্বরূপ, ইংরেজি জানা সত্ত্বেও অনেক রুশ ভুল বোঝার বা নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারার আশঙ্কায় এই ভাষায় কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে। তাই, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে, আপনিই হয়তো প্রথম কোনো ইংরেজি ভাষাভাষী ব্যক্তি যার সাথে কোনো স্থানীয় রুশ স্বাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছে।

রাশিয়ায় ১৫০টিরও বেশি স্বদেশী ও সংখ্যালঘু ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে এবং সরকার এগুলোর অধিকাংশকেই সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে। সোভিয়েত ভাষাবিজ্ঞানীরা তাদের শাসনামলের প্রথম কয়েক দশকে এই ভাষাগুলোকে সযত্নে নথিভুক্ত করেছিলেন এবং সিরিলিক লিপি প্রদান করেছিলেন, যার ব্যতিক্রম ছিল কেবল কারেলিয়ান, ভেপস, ইনগ্রিয়ান, ভোটিক এবং আরও কয়েকটি ভাষা। এদের মধ্যে কিছু ভাষা স্থানীয়ভাবে সহ-সরকারি ভাষার মর্যাদাও লাভ করেছে। ভৌগোলিকভাবে দেখলে, দক্ষিণ রাশিয়ায় তুর্কি, মঙ্গোলিয়ান ও টুংগুস ভাষা, উত্তরে ফিনিক ও সামোয়েড ভাষা, দক্ষিণ-পশ্চিমে ককেশীয় ভাষাগুলোর বৈচিত্র্য এবং উত্তর-পূর্বে চুকোটকো-কামচাটকান ও এস্কালিউট ভাষার প্রচলন দেখা যায়। এছাড়াও, কেবল সাইবেরিয়াতেই প্রচলিত কেট ও নিভখ নামের দুটি একক ভাষা এবং একটি ক্ষুদ্র ইউকাগির ভাষা পরিবার রয়েছে। এত ভাষাগত বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও, রাশিয়ার প্রায় সকল নাগরিকই রাষ্ট্রভাষা রুশে সাবলীলভাবে কথা বলতে সক্ষম, তাই সাধারণ যোগাযোগের জন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা শেখা অপরিহার্য নয়।

রুশ অর্থোডক্স চার্চের প্রার্থনা ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যে ভাষাটি ব্যবহৃত হয়, তা হলো চার্চ স্লাভোনিক, যা আধুনিক রুশ ভাষা থেকে অনেকটাই ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, এই প্রাচীন ভাষাটির সাথে বুলগেরিয় এবং সার্বিয়ান ভাষার সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ। তবে গির্জার ধর্মোপদেশগুলো সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে আধুনিক রুশ ভাষাতেই প্রদান করা হয়।

প্রবেশ

[সম্পাদনা]
ভ্রমণ সতর্কতা ভিসা-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ:
সীমিত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, কসোভো পাসপোর্টধারীদের রাশিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ, কারণ রাশিয়া কসোভোকে স্বীকৃতি দেয় না।
(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ফেব্রু ২০২০)

রাশিয়ায় প্রবেশের জন্য ভিসা লাভের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, ভিসার জন্য আবেদন করার পূর্বশর্ত হিসেবে একজন রাশিয়ান নাগরিক অথবা কোনো রুশ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেরিত একটি নোটারাইজড আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতে হয়।

দেশের কিছু নির্দিষ্ট অংশ, যেমন—চুকোতকা, নরিলস্ক এবং বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা—সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ অনুমতিপত্র লাভ না করা পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। সাধারণত, এই ধরনের অনুমতি অর্জনের জন্য সেই অঞ্চলের একজন স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক বা স্পনসরের প্রয়োজন হয়, যিনি স্থানীয় এফএসবি (ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস) কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করার ব্যবস্থা করেন। তবে, কিছু সংরক্ষিত অঞ্চলে প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ট্যুর কোম্পানিই পর্যটকদের জন্য যাবতীয় অনুমতিপত্র সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে।

এর পাশাপাশি, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাশিয়ার সাথে বেলারুশের সীমান্ত উন্মুক্ত থাকলেও তৃতীয় কোনো দেশের নাগরিকদের জন্য এই দুটি দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে অতিক্রম করার কোনো অনুমতি নেই। এই নিয়ম অনুসারে, তাদেরকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সরাসরি ভ্রমণের জন্য অবশ্যই আকাশপথ বা বিমান ব্যবহার করতে হয়।

রাশিয়ার ভিসা নীতি: সবুজ রঙের দেশগুলো ই-ভিসা পেতে পারে, ধূসর রঙের দেশগুলো সাধারণ ভিসার প্রয়োজন, অন্য রঙের দেশগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভিসা ছাড়া প্রবেশযোগ্য।

ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ

[সম্পাদনা]

নিম্নলিখিত দেশের নাগরিকরা রাশিয়ায় ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন:

অসীম সময়

৯০ দিন

৬০ দিন

৩০ দিন

১৪ দিন

এছাড়াও, বৈধ এপেক বিজনেস ট্রাভেল কার্ড (এবিটিসি) ধারী, শুধুমাত্র মার্কিন বা কানাডা থেকে ইস্যুকৃত ব্যতীত, রাশিয়ায় ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন পর্যন্ত ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। তবে ভার্চুয়াল এবিটিসি গ্রহণযোগ্য নয়; আপনাকে ফিজিক্যাল কার্ড সঙ্গে আনতে হবে।

নরওয়েজিয়ানরা সীমান্ত থেকে ৩০ কিমি ভেতরে থাকলে:

  • তারা রাশিয়ায় ১৫ দিন পর্যন্ত ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে, যদি অন্তত ৩ বছর সীমান্ত অঞ্চলে বসবাস করে এবং সীমান্ত থেকে ৩০ কিমি-এর বেশি না ভ্রমণ করে।
  • একটি সীমান্ত সার্টিফিকেট, যা একাধিক প্রবেশের জন্য বৈধ, আগে কির্কেনেস-এর রাশিয়ান কনসুলেটে সংগ্রহ করতে হয়। এটি বিশেষ ধরনের ভিসা, যা একাধিক প্রবেশের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত বৈধ। পোল্যান্ডের কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য একই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, সেন্ট পিটার্সবার্গ ক্রুজ শিপে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ করা যায়

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ভিসা-মুক্ত প্রবেশ সম্ভব:

  • মস্কো শেরেমেতিয়োভো, ডোমোডেদোভো অথবা ইকাতেরিনবার্গের কোল্টসোভো বিমানবন্দরে ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন হয় না, যদি ভ্রমণকারী পরবর্তী নিশ্চিত ফ্লাইটসহ ২৪ ঘণ্টার কম অবস্থান করেন এবং বেলারুশ ও কাজাখস্তানে ট্রানজিট না করেন।
  • সেন্ট পিটার্সবার্গের পুলকোভো বিমানবন্দরে ট্রানজিটের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়; যদিও সীমিত কিছু ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের কনস্যুলার কর্মকর্তাদের নিকট থেকে ভিসা পাওয়া সম্ভব।
  • যে সকল ক্রুজ যাত্রী ৭২ ঘণ্টার কম সময়ের জন্য রাশিয়ায় আসেন, তাদের ভিসার প্রয়োজন হয় না, তবে নির্ধারিত দলের সাথে থাকা বাধ্যতামূলক। এই ভিসামুক্ত সময়সীমা অতিক্রম করলে এক্সিট ভিসার আবেদনসহ কমপক্ষে €৫০০ জরিমানা দিতে হয় এবং আগামী পাঁচ বছর রাশিয়ায় ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার বাতিল হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক সপ্তাহের বেশি লাগতে পারে, এবং তখন থাকা-খাওয়ার সম্পূর্ণ খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়।
  • অনুমোদিত ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ৫ থেকে ৫০ জনের দলে ভ্রমণকারী চীন ও ইরানের নাগরিকরা ১৫ দিন পর্যন্ত রাশিয়ায় ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করার অনুমতি পান।
  • বিশেষ অনুষ্ঠান, যেমন ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের সময়, "সমর্থক ভিসা" ব্যবস্থা চালু করা হয়। এটি তুলনামূলকভাবে একটি সহজ ভিসা প্রক্রিয়া ছিল, কিন্তু ম্যাচের টিকিট ও আবাসন বুকিংয়ের মতো ব্যয়বহুল শর্ত পূরণ আবশ্যক ছিল।

ই-ভিসা

[সম্পাদনা]

নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকরা ই-ভিসা পেতে পারেন, যা একবার প্রবেশের জন্য বৈধ এবং ইস্যুর তারিখ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এই ভিসায় রাশিয়ায় সর্বোচ্চ ১৬ দিন থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এর খরচ $৪০ এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সর্বোচ্চ ৪ দিন সময় লাগে। ই-ভিসার মাধ্যমে কেবল নির্দিষ্ট কিছু প্রবেশবন্দর ব্যবহার করা যায়। প্রচলিত ভিসার মতো, ই-ভিসার জন্যও কোনো আমন্ত্রণপত্রের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে, ই-ভিসার একটি মুদ্রিত কপি সঙ্গে রাখতে হবে যা বিমান চেক-ইন এবং ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের দেখাতে হবে।

ভিসা প্রক্রিয়া

[সম্পাদনা]

অন্যান্য সকল ব্যক্তির জন্য রাশিয়ান কূটনৈতিক মিশনে ভিসার আবেদন করতে হয়। ভিসার ধরন অনুযায়ী এর প্রক্রিয়া জটিলতা ভিন্ন হয়; যেমন ৩০ দিনের পর্যটন ভিসা তুলনামূলকভাবে সহজ, কিন্তু ৯০ দিনের বা ব্যবসায়িক ভিসা জটিল হয়ে থাকে। মার্কিন নাগরিকরা আমন্ত্রণপত্র ছাড়াই ৩ বছরের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা (যেমন বাসস্থান, প্রাইভেট, মানবিক ও পর্যটন) পেতে পারেন। দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুবিধা আছে, তবে সেক্ষেত্রে খরচ দ্বিগুণ হয়।

আমি পর্যটন ভিসা চাই এবং আগে কোনো আবাসন বুক করতে চাই না

বিশেষজ্ঞ রাশিয়ান ভিসা সংস্থা এটি করতে পারে। আপনাকে কেবল তাদের টাকা, পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। তবে কিছুটা শ্রমসাধ্য হলেও, সংস্থাগুলো থেকে আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নিজে কনস্যুলেটে আবেদন করা সাধারণত সস্তা হয়।

ভিসা ব্যবস্থা মূলত দুই ধাপে সম্পন্ন হয়:

  1. আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ
  2. ভিসার জন্য আবেদন

আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করা এবং দ্বিতীয়ত, ভিসার জন্য আবেদন করা। সাধারণত, ট্রানজিট, প্রাইভেট/হোমস্টে, পর্যটন এবং ব্যবসায়িক ভিসার সঙ্গে এক্সিট ভিসা অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু, ছাত্র ভিসার মতো অন্যান্য ভিসার জন্য আলাদা এক্সিট ভিসা প্রয়োজন, যার জন্য ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ভিসার বৈধতার মধ্যে এক্সিট ও পুনঃপ্রবেশের জন্য অনুমতি লাগে, যা বেশ জটিল, তাই মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা নেওয়াই ভালো।

রাশিয়ায় পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে, কনস্যুলেটের বদলে আপনার স্পনসরকে ফেডারেল মাইগ্রেশন সার্ভিসে ভিসা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে হবে। পুরনো ভিসার একটি কপি সহায়ক হলেও প্রস্থান নিশ্চিত করে না। মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে, বৈধ সময়সীমা অতিক্রম না করার প্রমাণ দেখালে চলবে, তবে পুনঃপ্রবেশের জন্য নতুন ভিসা দরকার হবে। রাশিয়ান জাতীয়তার অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, পিতামাতা উভয়ের নোটারাইজড স্বাক্ষরযুক্ত একটি রাশিয়ান ভাষার ঘোষণা প্রয়োজন, যা দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে পাওয়া যায়। এই ঘোষণা ছাড়া শিশু প্রবেশ করতে পারলেও, রাশিয়ান সীমান্ত রক্ষীরা তার দেশত্যাগ রোধ করতে পারে।

১. আমন্ত্রণপত্র পাওয়া

[সম্পাদনা]
রাশিয়ার সবচেয়ে দর্শনীয় সীমান্ত পারাপারের দৃশ্য—নারভা এবং ইভানগরড দুর্গের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ

ভিসার ধরন অনুযায়ী আমন্ত্রণপত্রের ধরন নির্ধারিত হয়। একটি পর্যটন আমন্ত্রণপত্র আপনাকে পর্যটন ভিসা দেয়, ব্যক্তিগত বা হোমস্টে আমন্ত্রণপত্র আপনাকে ব্যক্তিগত ভিসা দেয় ইত্যাদি। পর্যটন আমন্ত্রণপত্র ব্যতীত, অন্যান্য সকল ধরনের আমন্ত্রণপত্র রাশিয়ান সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জারি হয় এবং এগুলো পেতে আমন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা সংস্থাকে আবেদন করতে হয়।

প্রত্যেকটি আমন্ত্রণপত্রে নির্ধারিত ভ্রমণের তারিখ এবং প্রয়োজনীয় প্রবেশের সংখ্যা (১, ২ বা একাধিক) উল্লেখ থাকে। আমন্ত্রণপত্রে থাকা তারিখগুলো পরবর্তী ভিসার বৈধতার সময়কাল নির্ধারণ করে। যদি তারিখ নিয়ে সন্দেহ থাকে, নিশ্চিত করুন যে আমন্ত্রণপত্রে আপনার পরিকল্পিত অবস্থানের সময়কাল পুরোপুরি কভার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ৭ দিনের পর্যটন ভিসার খরচ প্রায় ৩০ দিনের ভিসার সমান হতে পারে।

যদি আপনাকে আমন্ত্রণপত্র ক্রয় করতে হয়, তা আন্তর্জাতিকভাবে অনুসন্ধান করুন। সকল আমন্ত্রণপত্র রাশিয়া থেকে আসে এবং যেই সংস্থা এটি সরবরাহ করে, তার শাখা রাশিয়ায় অবস্থিত। ওয়েবসাইট জার্মানি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা এসওয়াতিনি থেকে হোক, তাতে কোনো সমস্যা নেই। অনেক দূতাবাস ও কনস্যুলেট শুধুমাত্র আমন্ত্রণপত্রের কপি চায়, তবে সব সময় তা প্রযোজ্য নয়; আগে যাচাই করুন। যদি মূল আমন্ত্রণপত্র প্রয়োজন হয়, তা রাশিয়ার থেকে পাঠাতে হবে। ভিসার জন্য আবেদন সাধারণত আবেদনকারীর নিজ দেশের দূতাবাসে করা হয়।

'পর্যটন আমন্ত্রণপত্র (যাকে রিজার্ভেশন কনফার্মেশনও বলা হয়) হলো রাশিয়ায় অবস্থান ও ভ্রমণের জন্য বুকিং এবং অগ্রিম পেমেন্টের নিশ্চিতকরণপত্র। এর সঙ্গে থাকে একটি পর্যটন ভাউচার। এই দুটি কেবল সরকার অনুমোদিত ট্যুর অপারেটর, হোটেল, অনলাইন হোটেল বুকিং সেবা বা রাশিয়ান ভ্রমণ সংস্থা থেকে ইস্যু করা যায়। "সরকার অনুমোদন" মানে মানের নিশ্চয়তা নয়, বরং সংস্থাটি রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে নিবন্ধিত। সাধারণ হোটেল বুকিং যথেষ্ট নয়। কিছু হোটেল আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করার জন্য ফি নেয়। এক রাতের হোটেল বুকিং করলে প্রায় একদিন (সম্ভবত দুইদিন) বৈধ আমন্ত্রণপত্র পাওয়া যায় এবং ভিসার মেয়াদ সীমিত থাকে।

স্বাধীন ভ্রমণকারীদের জন্য, যারা রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করবেন, একটি সংস্থার মাধ্যমে আমন্ত্রণপত্র নেওয়াই উত্তম। ফি দিয়ে এই সংস্থাগুলো যেকোনো দেশের যেকোনো পাসপোর্টধারীর জন্য আমন্ত্রণপত্র এবং ভাউচার ইস্যু করে। তারা আসল হোটেল পেমেন্ট গ্রহণ করে না এবং কোনো আবাসন সরবরাহ করে না। যদিও এর আইনি বৈধতা কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ, সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠিত এবং যথেষ্ট সাবধান যাতে কর্তৃপক্ষ অসন্তুষ্ট না হন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এইভাবে ভ্রমণকারী সমস্যায় পড়েন না। তবে যদি আপনার ভ্রমণ শুধুমাত্র এক হোটেলে সীমাবদ্ধ হয়, তাহলে সরাসরি হোটেল থেকে আমন্ত্রণপত্র নেওয়াই সুবিধাজনক।

ব্যক্তিগত/হোমস্টে ভিসা বিবেচনা করুন, যদি আপনার রাশিয়ায় বন্ধু বা আত্মীয় থাকে (তাদের রাশিয়ান নাগরিক হতে হবে না)। তাদেরকে ফেডারেল মাইগ্রেশন সার্ভিসের স্থানীয় পাসপোর্ট ও ভিসা বিভাগ থেকে আমন্ত্রণপত্রের জন্য আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত এক মাস সময় লাগে। আমন্ত্রণকারী ব্যক্তি আপনার রাশিয়ায় থাকা কার্যক্রমের জন্য দায়ী থাকেন এবং কোনো সমস্যা হলে বড় ধরনের দণ্ডের সম্মুখীন হতে পারেন। এই কারণে, ব্যক্তিগত আমন্ত্রণপত্র সাধারণত অনলাইনে ফি দিয়ে পাওয়া যায় না।

ব্যবসায়িক আমন্ত্রণপত্র সরকার থেকে ইস্যু হয়। এগুলো সাধারণত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল, তবে অতিরিক্ত ফি দিয়ে দ্রুত পাওয়া যায়। রাশিয়ার যেকোনো নিবন্ধিত সংস্থা ব্যবসায়িক আমন্ত্রণপত্রের জন্য আবেদন করতে পারে। ভ্রমণ সংস্থা ও ভিসা বিশেষজ্ঞরাও এটি সরবরাহ করতে পারে। ব্যবসায়িক ভিসার বৈধতা পর্যটন ভিসার তুলনায় দীর্ঘ। ব্যবসায়িক ভিসায় পর্যটনও অনুমোদিত, তাই ৩০ দিনের বেশি অবস্থানের জন্য এটি সুবিধাজনক। উদাহরণস্বরূপ, একটি যুক্তরাজ্যের সংস্থা ৯০ দিনের ব্যবসায়িক আমন্ত্রণপত্র ৩৮₤ (১২ কার্যদিবস) থেকে ১২১₤ (২ কার্যদিবস) খরচে সরবরাহ করতে পারে।

ছাত্র ভিসা এর জন্য আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে আপনি অধ্যয়ন করবেন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভাষা স্কুল প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত।

কিছু রাশিয়ান স্থানীয় সরকার বিদেশিদের সাংস্কৃতিক বিনিময় উদ্দেশ্যে আমন্ত্রণ জানাতে পারে, যা দূতাবাস বা কনস্যুলেটে সরাসরি পাঠানো হয়। এটি সাধারণ আমন্ত্রণের বিকল্প এবং সরকার দ্বারা সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হলে এটি প্রধান উপায়।


২. ভিসার জন্য আবেদন

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন দূতাবাস ও কনস্যুলেটের ভিসা আবেদন প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। কেউ ইমেইলের মাধ্যমে ভিসা ইস্যু করতে পারে, কেউ ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে চায়, আবার কেউ আমন্ত্রণপত্রের কপি বা মূল চায়। অর্থ গ্রহণের জন্য কার্ড ব্যবহার করা হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে মানি অর্ডার প্রয়োজন হতে পারে। সবসময় আগে যাচাই করুন—সাধারণত এই তথ্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ হতে পারে। নিজের দেশের বাইরে বা যেখানে কমপক্ষে তিন মাসের বৈধ বসবাস অনুমতি আছে, সেখানে রাশিয়ান ভিসা পাওয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ট্রান্স-সাইবেরিয়ান ভ্রমণ পরিকল্পনায় বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এশিয়ায়, হংকং এবং ফেনোম পেনে আবেদন সফল হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি (প্রয়োজন হলে সাময়িক কাম্বোডিয়ায় বাসস্থান সহজে এবং প্রায় ১০০ ইউএসডি খরচে পাওয়া যায়)।

ভিসা সেবা সংস্থাগুলো, নির্দিষ্ট ফি দিয়ে, আপনার আবেদনপত্র ও আমন্ত্রণপত্র পরীক্ষা করে, দূতাবাসে জমা দিয়ে এবং পরে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়। যদিও এটি নিজে করা সম্ভব, সংস্থার মাধ্যমে করলে সময়, শ্রম ও বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ইউরোপ-শেঙ্গেন দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০ দিনের একবারের পর্যটন ভিসার খরচ €৩৫ এবং প্রক্রিয়া সময় ৩ কার্যদিবস। দ্রুত প্রক্রিয়ায় (€৭০) একদিনের মধ্যে সংগ্রহ করা সম্ভব। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য খরচ ₤৫০ এবং প্রক্রিয়া সময় ৫ কার্যদিবস; একদিনের দ্রুত প্রক্রিয়ায় খরচ ₤১০০।

কিছু দেশে (যেমন যুক্তরাজ্যযুক্তরাষ্ট্র) রাশিয়ান ভিসার প্রক্রিয়াকরণ প্রাইভেট সংস্থায় আউটসোর্স করা হয়েছে। এই সংস্থাগুলো অতিরিক্ত আবেদন ফি নেয়। যুক্তরাজ্যে (যে কোনো দেশের নাগরিকের জন্য) আবেদন ফি: স্ট্যান্ডার্ড ₤২৬.৪০, এক্সপ্রেস ₤৩৩.৬০।

যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য আরেকটি জটিলতা হলো আবেদন কেন্দ্রে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ) জমা দিতে হবে। এটি সময়সাপেক্ষ হলেও নিরাপত্তা এবং ভিসা বৈধতার জন্য বাধ্যতামূলক।

ভিসার মোট খরচ সাধারণত তিনটি অংশে বিভক্ত: আমন্ত্রণপত্রের ফি, ভিসার ফি এবং আবেদন ফি। কখনও কখনও এক বা দুইটি শূন্য হতে পারে, তবে সবগুলোই প্রযোজ্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ৩০ দিনের একবারের পর্যটন ভিসা (স্ট্যান্ডার্ড) প্রক্রিয়ায়: সংস্থা থেকে আমন্ত্রণপত্র ₤১৫, ভিসা ফি ₤৫০, আবেদন ফি ₤২৬.৪০–৯১.৪০।

সাধারণত পর্যটন, হোমস্টে এবং ট্রানজিট ভিসা এক বা দুইবার প্রবেশের অনুমতি দেয়। পর্যটন ও হোমস্টে ভিসার সর্বাধিক বৈধতা ৩০ দিন। ট্রানজিট ভিসা সাধারণত বিমানযাত্রায় ১–৩ দিন এবং স্থলপথে ১০ দিন পর্যন্ত বৈধ থাকে।

ব্যবসায়িক ও অন্যান্য ভিসা এক, দুই বা একাধিক প্রবেশের জন্য ইস্যু করা যেতে পারে। যেকোনো ব্যবসায়িক ভিসায় সর্বাধিক একবারের অবস্থান ৯০ দিন। তবে ব্যবসায়িক ভিসা সাধারণত ১৮০ দিনের মধ্যে মোট ৯০ দিন অবস্থান করতে দেয়, ভিসার বৈধতা যতদিনই হোক। ৯০ দিন অবস্থান শেষে অবশ্যই রাশিয়া থেকে বের হতে হবে এবং পরবর্তী ৯০ দিনে পুনঃপ্রবেশ করা যাবে না। অর্থাৎ, ৬ মাসের ভিসা এবং ৩ মাসের ভিসার মোট কার্যকর সময় প্রায় সমান।

ভিসা পাওয়ার পর সমস্ত তারিখ, নাম এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভ্রমণের আগে কোনো ভুল সংশোধন করা অনেক সহজ এবং ঝামেলামুক্ত।

আগমন এবং শুল্ক

[সম্পাদনা]
চিত্র:Stalin-grave.jpg
ভিসার ঝামেলাকে উপলব্ধি করুন—আগে রাশিয়ায় ভ্রমণ আরও কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ছিল।

রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর আপনাকে একটি অভিবাসন কাগজ প্রদান করা হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি প্রবেশের সময় অর্ধেক জমা দিতে হয় এবং বাকি অংশ রাশিয়া ছাড়ার সময় পর্যন্ত আপনার পাসপোর্টের সঙ্গে রাখতে হয়। এটি সাধারণত রুশ ও ইংরেজি উভয় ভাষায় ছাপা হয়, তবে প্রয়োজনে অন্যান্য ভাষাও পাওয়া যেতে পারে। হারিয়ে গেলে, রাশিয়া ছাড়ার সময় সামান্য জরিমানা দিতে হতে পারে এবং আনুষ্ঠানিকতার জন্য প্রস্থান এক বা দুই ঘন্টা বিলম্বিত হতে পারে।

সাধারণত, আপনি আপনার ভিসার মেয়াদের জন্য রাশিয়ায় প্রবেশ এবং থাকার অনুমতি পাবেন, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে অভিবাসন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। তারা প্রয়োজন মনে করলে ভিন্নভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যদিও এটি কম সম্ভাব্য।

যারা মূল্যবান ইলেকট্রনিক সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র (বিশেষত পুরানো এবং দামী বেহালা), প্রাচীন জিনিসপত্র, বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ বা অনুরূপ মূল্যবান জিনিস সঙ্গে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন, তাদের শুল্ক প্রবেশ কার্ডে এগুলো ঘোষণা করতে হবে। আগমনের সময় একজন শুল্ক কর্মকর্তার দ্বারা কার্ডে সীলমোহর লাগানোর জন্য জোর দিন। শুল্ক কর্মকর্তা যদি বলেন যে এই ধরনের জিনিস ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই, তবুও আপনার ঘোষণায় সীলমোহর লাগানোর জন্য অনুরোধ করুন। সীলমোহর থাকলে রাশিয়া থেকে প্রস্থানের সময় জরিমানা, বাজেয়াপ্তকরণ এবং অন্যান্য ঝামেলা এড়ানো যায়, যা ভ্রমণকে অনেক বেশি নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত করে।

নিবন্ধন

[সম্পাদনা]

রাশিয়ায় আগমনের পর এবং পরবর্তীতে যেকোনো নতুন শহরে পৌঁছালে আপনাকে অবশ্যই পৌঁছানোর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। এই আইনটি নিয়ন্ত্রিত অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের সোভিয়েত যুগের একটি অবশিষ্টাংশ, যা আজও কার্যকর। এমনকি রাশিয়ান নাগরিকরাও শহর পরিবর্তন করলে নিবন্ধন করতে বাধ্য। সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, নীল সীলমোহরসহ এই গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলো মধ্য এশিয়া, ককেশাস, চীনে এবং উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার দক্ষিণ সীমান্তবর্তী দরিদ্র দেশগুলো থেকে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জনসংখ্যা ও অভিবাসন পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।

যে হোটেলগুলো বিদেশীদের থাকার অনুমোদন দেয়, তারা আপনার পাসপোর্ট এবং ভিসার একটি কপি সংগ্রহ করে এবং নিবন্ধন সম্পন্ন করবে। যদি আপনি কোনো ব্যক্তিগত বাসভবনে থাকেন, আপনার আতিথেয়তাকারীর দায়িত্ব থাকবে আপনাকে নিবন্ধন করা এবং এর জন্য তার আপনার পাসপোর্ট ও ভিসার একটি কপি প্রয়োজন হবে। অনেক সাশ্রয়ী থাকার জায়গা, বিশেষত ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টগুলো, নিবন্ধন করতে অনিচ্ছুক হতে পারে; সুতরাং আপনার থাকার জায়গায় নিবন্ধন সম্ভব কিনা আগে থেকেই নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, রাশিয়ায় ৭ দিনের কম সময় থাকলে এটি কোনো বড় সমস্যা নয়, এবং সীমান্ত রক্ষী বা অভিবাসন অফিস কেউ এটি নিয়ে বিদেশি পর্যটকের প্রবেশে বাধা দেয় না।

ভিসার মেয়াদ অতিক্রম

[সম্পাদনা]

আপনি যদি ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করেন, এমনকি কয়েক মিনিটের জন্য হলেও, বৈধ প্রস্থান ভিসা না থাকলে আপনাকে রাশিয়া ছেড়ে যেতে নিষেধ করা হতে পারে। যদি আপনি তিন দিনের কম সময়ের জন্য মেয়াদ অতিক্রম করেন, বিমানবন্দর কনস্যুলার কর্মকর্তার কাছে জরিমানা প্রদান করে ভিসার মেয়াদ সাময়িকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে এটি নিশ্চিত নয়। সাধারণত, মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে আপনার পৃষ্ঠপোষকের হস্তক্ষেপ, জরিমানা প্রদান এবং তিন সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।

যদি আপনার ফ্লাইট মধ্যরাতের পরে ছাড়ে, সতর্ক থাকুন এবং ট্রেন বা ভ্রমণ মাধ্যম কখন সীমান্ত অতিক্রম করে তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট পরও যদি আপনি সীমান্ত পার হন, তাহলে সীমান্ত রক্ষীরা প্রস্থান অনুমোদন নাও দিতে পারেন।

চিকিৎসা সমস্যার মতো জরুরি কারণে মেয়াদ অতিক্রম হলে, ফেডারেল অভিবাসন সেবা প্রস্থান ভিসার পরিবর্তে একটি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সার্টিফিকেট জারি করতে পারে, যা জারির ১০ দিনের মধ্যে রাশিয়া ত্যাগের জন্য বৈধ। এটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ভ্রমণকারীদের জন্য এক প্রকার সংরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

বিমানে

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: অনেক দেশ থেকে রাশিয়ায় সরাসরি যাতায়াত এখন আর সম্ভব নয়, কারণ যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও কয়েকটি দেশ রাশিয়ান এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে, এবং রাশিয়াও জবাবস্বরূপ অনুরূপ ব্যবস্থা নিয়েছে।
(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- সেপ্টে ২০২৩)
হামার ও সিকল চিহ্নসহ অ্যারোফ্লটের বিমানের দৃশ্য, যা রাশিয়ার এয়ারলাইন ইতিহাসের প্রতীক

মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ হলো প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আর ভ্লাদিভোস্তকেও কিছু ফ্লাইট রয়েছে চীনউত্তর কোরিয়ার সঙ্গে।

মস্কোতে চারটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে: উত্তর-পশ্চিমে শেরেমেতিয়ে‌ভো এসভিও  আইএটিএ, দক্ষিণে দমোদেদোভো ডিএমই  আইএটিএ, দক্ষিণ-পশ্চিমে ভ্নুকোভো ভিকেও  আইএটিএ, এবং ঝুকোভস্কি জেডআইএ  আইএটিএ। প্রথম তিনটি বিমানবন্দর শহরের মূল রেলস্টেশনের সঙ্গে এক্সপ্রেস রেল সংযোগ[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] (৫০০ руб) প্রদান করে। তবে স্টেশনগুলো একে অপরের থেকে অনেক দূরে, তাই বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটের মধ্যে পর্যাপ্ত সময় রাখা প্রয়োজন। যে কোনো বিমানবন্দরে ট্যাক্সি খরচ প্রায় ১৫০০ руб, জনপরিবহনে বাসে খরচ প্রায় ২০০ руб এবং অ্যারোএক্সপ্রেস ট্রেনে প্রায় ৭০০ руб। সিস্টেমটি কিছুটা জটিল, তাই দ্রুত বা সরাসরি সংযোগ আশা করবেন না। অধিকাংশ বিদেশি পর্যটক মস্কোর শেরেমেতিয়ে‌ভো বা দমোদেদোভো বিমানবন্দরে পৌঁছান।

শেরেমেতিয়ে‌ভো বিমানবন্দর পাঁচটি টার্মিনাল নিয়ে গঠিত, দুটি ক্লাস্টারে বিভক্ত, এবং এটি দেশের প্রধান বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লট[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] এর প্রধান হাব।

দমোদেদোভো একটি আধুনিক ও উচ্চমানের বিমানবন্দর, যেখানে একটি বড় টার্মিনাল রয়েছে। এটি বেশিরভাগ রাশিয়ান এবং আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট প্রদান করে। এটি S7 এয়ারলাইনস এর প্রধান হাব, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যেও নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে।

ভ্নুকোভো একটি ছোট বিমানবন্দর, সাধারণত লো-কস্ট এয়ারলাইন্স দ্বারা ব্যবহৃত। ঝুকোভস্কি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং প্রধানত বেলারুশ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট সার্ভিস দেয়।

রাশিয়ার সব বড় শহরে বিমানবন্দর রয়েছে। কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পাওয়া যায়: নোভোসিবিরস্ক, সোচি, ভ্লাদিভোস্তক, কালিনিনগ্রাদ, ইকাতেরিনবুর্গ। অন্যান্য গন্তব্যের জন্য আন্তর্জাতিক সার্ভিস সীমিত।

স্থানীয় এয়ারলাইন্স ঘুরে বেড়ান এ তালিকাভুক্ত।

পশ্চিমা দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায়, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য পথ ব্যবহার করতে হয়। - সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, এমিরেটস[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] দুবাই থেকে মস্কোর দমোদেদোভো বিমানবন্দর এবং সেন্ট পিটার্সবার্গে ফ্লাইট পরিচালনা করে। - এটিহাদ আবুধাবি থেকে মস্কোর শেরেমেতিয়ে‌ভো বিমানবন্দর। - কাতার থেকে, কাতার এয়ারওয়েজ দোহার থেকে শেরেমেতিয়ে‌ভো বিমানবন্দর। - তুরস্ক থেকে, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স ইস্তানবুল থেকে মস্কোর ভ্নুকোভো বিমানবন্দর এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ।

এশিয়ার অংশে যেতে, রাশিয়ান ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার অ্যারোফ্লট ব্যাংকক থেকে এশিয়ার প্রধান শহরগুলোতে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে, যা পর্যটক ও ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

ট্রেনে

[সম্পাদনা]
ক্রাসনোইয়ারস্ক রেলওয়ে স্টেশনের ঐতিহ্যবাহী নেক্লাসিক্যাল স্থাপত্য

রাশিয়ান রেলওয়েজ (রাশিয়ান: РЖД) বিস্তীর্ণ দূরত্ব জুড়ে নির্ভরযোগ্য এবং সুবিধাজনক ট্রেন পরিষেবা প্রদান করে। এটি মস্কোকে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের বিভিন্ন শহর এবং কিছুটা সেন্ট পিটার্সবার্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করে। মস্কো পশ্চিম ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু অপ্রত্যাশিত গন্তব্যের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন সংযোগ সরবরাহ করে। দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনগুলো আধুনিক সুবিধা যেমন শয়নকোচ, ডাইনিং কার, ওয়াই-ফাই এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ, যা যাত্রীদের যাত্রাকে আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তোলে।

ইউরোপ

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ট্রেন পরিষেবা প্রায় স্থগিত।
(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- মে ২০২৩)

বেলারুশ রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত এবং প্রতিদিন বহু ট্রেন চলাচল করে। পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগও রয়েছে, যদিও সীমান্ত প্রক্রিয়া কখনও কখনও জটিল এবং দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হতে পারে। ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ভিসা সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত রাখা উচিৎ।

এশিয়া

[সম্পাদনা]

মস্কো প্রাক্তন সোভিয়েত মধ্য এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে সংযুক্ত (তুর্কমেনিস্তান ব্যতীত) – কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান – এবং সপ্তাহে অন্তত ২–৩বার ট্রেন পরিষেবা চলে। যাত্রায় সাধারণত ৪–৫ দিন লাগে। ককেশাস অঞ্চলের জন্য মস্কো থেকে বাকু, আজারবাইজান পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা রয়েছে (প্রায় ৩ দিন), তবে সীমান্ত কেবল নির্দিষ্ট পাসপোর্টধারীদের জন্য খোলা। মস্কো থেকে সোচি হয়ে বিতর্কিত আবখাজিয়া অঞ্চলের সুখুমি যাওয়ারও সরাসরি সার্ভিস রয়েছে।

ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ে রাশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড অতিক্রম করে এবং বেইজিং, হারবিন এবং উলানবাটর সহ চীনের শহরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত। মস্কো থেকে পিয়ংইয়াং, উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত অন্তত মাসে দুইবার ট্রেন পরিষেবা চলে, যা এখন বিদেশীদের জন্য নির্দিষ্ট কাগজপত্র সহ খোলা। এই যাত্রায় রাশিয়া মস্কো–ভ্লাদিভোস্তক ট্রেনের কোচ ব্যবহার করা হয়, যা উসুরিস্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর কোরিয়ার জন্য প্রায় ৩৬ ঘণ্টা চলে।

গাড়িতে

[সম্পাদনা]
আরও দেখুন: রাশিয়ায় গাড়ি চালনা

রাশিয়ায় গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব, তবে ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা পশ্চিমা দেশের তুলনায় ভিন্ন। দীর্ঘ পথ, বিস্তীর্ণ সড়ক এবং বিভিন্ন আবহাওয়া শর্তে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। সীমান্ত পারাপারও স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতা দেয় এবং কখনও কখনও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

ইউরোপ থেকে আসলে সীমান্ত ক্রসিং-এর বর্তমান অবস্থা যাচাই করা জরুরি; ফিনল্যান্ড সীমান্ত বর্তমানে বন্ধ, এবং সবচেয়ে সাধারণ সীমান্ত ক্রসিং এস্তোনিয়া। এছাড়াও, আপনার বীমা রাশিয়ায় বৈধ নাও হতে পারে। দীর্ঘ যাত্রার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সোচি সমুদ্রবন্দর

লাক্স এক্সপ্রেস, ইকোলাইনস, এবং বাল্টিক শাটল সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং তালিন (€৪৫) বা টার্তু (€৪৫) এর মধ্যে সার্ভিস দেয়, নারভা/ইভানগোরড সীমান্ত পার হয়ে। এরপর আরও সংযোগ পাওয়া যায় রিগা এবং দক্ষিণের দিকে। বাসগুলো আধুনিক, আরামদায়ক এবং দীর্ঘ যাত্রার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা সমৃদ্ধ।

আন্তর্জাতিক মার্শরুতকার মাধ্যমে

[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক মার্শরুতকা হেলসিঙ্কি থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ পর্যন্ত চলে এবং ওয়াই-ফাই, আরামদায়ক আসন এবং পর্যাপ্ত স্থানসহ সুবিধা প্রদান করে। এটি স্বল্পদূরত্বের যাত্রার জন্য সুবিধাজনক এবং ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্য উপযোগী।

নৌকায়

[সম্পাদনা]

গ্রীষ্মকালে সোচি এবং ত্রাবজোন, তুরস্ক এর মধ্যে নিয়মিত ফেরি চলাচল করে। ভ্লাদিভোস্তক থেকে বুসান এবং জাপানের বিভিন্ন বন্দরের মধ্যে রোল-অন, রোল-অফ ফেরি সার্ভিস রয়েছে, যা মূলত ব্যবহৃত জাপানি গাড়ি এবং পর্যটকদের জন্য সীমিত। এছাড়াও, গ্রীষ্মে সাখালিন এর কোরসাকভ থেকে জাপানের ওয়াক্কানাই পর্যন্ত সাপ্তাহিক সার্ভিস চলে। ক্রুজ শিপও প্রায়ই রাশিয়ার বন্দরে আসে এবং পর্যটকদের জন্য একটি নান্দনিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

সাইকেলে

[সম্পাদনা]

রাশিয়ার মধ্য দিয়ে দুটি ইউরোবেলো আন্তর্জাতিক সাইক্লিং রুট গেছে: ইভি২ (ক্যাপিটালস রুট) আয়ারল্যান্ড থেকে মস্কো পর্যন্ত এবং ইভি১০ (বাল্টিক সাগর সাইকেল রুট/হানসা সার্কিট) সেন্ট পিটার্সবার্গকে এস্তোনিয়াফিনল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই রুটগুলো সাইকেলপ্রেমীদের জন্য চমৎকার অভিজ্ঞতা, কারণ রাস্তাগুলো সুন্দর, নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য দ্বারা সমৃদ্ধ। এছাড়াও, সাইকেলভ্রমণকারীরা স্থানীয় সংস্কৃতি, গ্রাম্য জীবন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

চলাফেরা

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে কেন্দ্রীয়, ভলগা এবং দক্ষিণ রাশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় (মস্কোসহ) প্রায়ই জিপিএস সংকেত বন্ধ বা বিঘ্নিত হয়। ফলে স্যাটেলাইট নির্ভর যন্ত্রপাতি এসব অঞ্চলে অকেজো হয়ে যেতে পারে। মাঝে মাঝে অন্যান্য স্থানেও এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- জুন ২০২৪)

রাশিয়ার বিশাল আয়তন পরিবহনের সব ধরনের মাধ্যমকেই জটিল করে তোলে। জার আমল থেকেই সরকার দেশটিকে সহজে চলাচলযোগ্য করার চেষ্টা করেছে, তবু দেশের অনেক অঞ্চল এখনও দুর্গম। যেখানে ট্রেন বা সড়ক রয়েছে, সেখানেও যাত্রা ঘণ্টার হিসেবে নয়, দিনের হিসেবে ধরা হয়। তাই দূরের গন্তব্যে গেলে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করাই শ্রেয় — অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো দেশজুড়েই বিস্তৃত। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গুগল ম্যাপস ও অ্যাপল ম্যাপস প্রায়ই পুরনো এবং অবিশ্বস্ত হতে পারে। তাই রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষ নেভিগেশনের জন্য স্থানীয় অ্যাপ ইয়ানডেক্স ম্যাপস ব্যবহার করেন। এটি ইংরেজি সংস্করণেও পাওয়া যায়।

ট্রেনে

[সম্পাদনা]
আরও দেখুন: রাশিয়ায় রেল ভ্রমণ

দেশটির বিশাল আয়তন এবং সড়ক নিরাপত্তার নিম্নমানের কারণে দেশজুড়ে দ্রুত চলাচলের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ট্রেন। রাশিয়ায় প্রায় প্রতিটি শহর ও নগরকে সংযুক্ত করে বিস্তৃত রেলপথ রয়েছে। আন্তঃনগর ভ্রমণে সাধারণত রাতের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া ট্রেনযাত্রা সবচেয়ে সুবিধাজনক। আরাম-আয়েশ সর্বোত্তম না হলেও, ট্রেনে শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ভদ্র কর্মী, সময়মতো যাত্রা শুরু ও শেষ — এসবই জার্মানদেরকেও মুগ্ধ করতে পারে। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্যও ট্রেন কার্যকর বিকল্প (অনেক রাশিয়ান এখনও দুই দিন বা তার বেশি সময়ের যাত্রায় এটি ব্যবহার করেন)। তবে মূলত তখনই, যখন আপনি রাশিয়ান ট্রেন ভ্রমণের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে চান। পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতার জন্য এক সপ্তাহব্যাপী ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ে অতুলনীয়, যা অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য অতিক্রম করে।

রাশিয়ান ট্রেন মূলত দুই প্রকার। দীর্ঘপাল্লার (দাল’নেভো স্লেদোভানিয়া) ট্রেন চার ঘণ্টার বেশি বা প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) বেশি পথ অতিক্রম করে। রাশিয়ার দীর্ঘপাল্লার রেল সময়সূচি দেখে নেওয়া যায়। ছোট দূরত্বে চলে শহরতলির ট্রেন (প্রিগোরদনিয়ে), যা জনপ্রিয়ভাবে এলেক্ত্রিচকি নামে পরিচিত। অধিকাংশ রেলস্টেশনে (ঝেলেজনোদারোজনি ভকজাল) এই দুই ধরনের টিকিটের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকে।

রাশিয়ার ফেডারেল মহাসড়ক নেটওয়ার্কের মানচিত্র

রাশিয়ার অধিকাংশ শহর থেকে ৫–৬ ঘণ্টা বা তারও দূরের শহরে বাস যোগাযোগ রয়েছে। ট্রেনের তুলনায় কম আরামদায়ক হলেও সময়ের হিসেবে কখনও কখনও বাসই ভালো বিকল্প হতে পারে, বিশেষত যখন ট্রেনের সময়সূচি সুবিধাজনক নয়। কিছু শহর, যেমন সুজদাল, ট্রেনে যুক্ত নয়, তাই সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় বাস, গাড়ি ছাড়া।

বাসস্টেশনের রাশিয়ান নাম হলো আভতোভকজাল। দীর্ঘপাল্লার বাস সাধারণত এখান থেকেই ছাড়ে। তবে মস্কো ও কিছু শহরে বেসরকারি বাসও চলে, যেগুলো প্রায়ই বাসস্টেশন থেকে নয়, বরং রেলস্টেশনের কাছ থেকে ছাড়ে। জনপ্রিয় রুটে (যেমন মস্কো–ভ্লাদিমির, মস্কো–ইয়ারোস্লাভল) এগুলো নির্দিষ্ট সময়সূচি মানে না, বরং আসন পূর্ণ হলে ছাড়ে। এ ধরনের বাসে সাধারণত চালককেই ভাড়া দিতে হয়।

বাসে মালপত্র রাখার জায়গা থাকে, তবে পুরনো পূর্বাঞ্চলীয় ব্লকের বাসে ভ্রমণের শেষে মালপত্র ভিজে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। লাগেজের জন্য সাধারণত আলাদা "বাগাজ" টিকিট কিনতে হয়।

মার্শরুটকা (ক্ষুদ্র বাস)
[সম্পাদনা]

নিয়মিত বাস ছাড়াও ছোট আকারের ব্যক্তিমালিকানাধীন মিনিবাস চলে, যেগুলোকে বলা হয় মার্শরুটকা। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর জনপরিবহন ব্যবস্থা দুর্বল হলে এগুলো বিকল্প হিসেবে চালু হয়। আইনি দিক থেকে কখনও ট্যাক্সি, কখনও বাস হিসেবে নিবন্ধিত হয়। নির্দিষ্ট রুট থাকে, তবে সাধারণত সময়সূচি বা নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকে না। অফিসিয়াল নাম হলো রুট ট্যাক্সি যার প্রচলিত নাম মার্শরুটকা।

মার্শরুটকায় ওঠার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত তুললেই হয়। খালি থাকলে থামবে। শহরে প্রায়ই যাত্রী দাঁড়িয়েও ভ্রমণ করেন, যদিও এটি বৈধ নয়, তবু প্রচলিত। নামতে চাইলে জোরে বলতে হয়: আস্তানাভিতি জদেস, অর্থাৎ "এখানে থামান!" চালক রাস্তার মাঝেও থামাতে পারেন। বড় স্টপে অপেক্ষা করে যাত্রী জোগাড়ও করতে পারেন। টিকিট ব্যবস্থা নেই, ভাড়া সরাসরি চালককে দিতে হয়। চাইলে রসিদ পাওয়া যায়, তবে আলাদা করে চাইতে হয়।

মার্শরুটকা গ্রামাঞ্চল ও শহর দু’জায়গাতেই চলে। কখনও কখনও দেখতে নিয়মিত বাসের মতো লাগে। দীর্ঘ রুটে ফোনে আসন বুকিং বা অগ্রিম টিকিট কেনার সুযোগ থাকে। তবে সিস্টেমটি বেশ অনিয়মিত। তাই নির্দিষ্ট রুট সম্পর্কে চালক বা স্থানীয়দের কাছ থেকে খোঁজ নেওয়া শ্রেয়। শহরে রুট নম্বর কখনও সরকারি বাসের সঙ্গে মিলে যায়, আবার অনেক সময় মেলে না।

মার্শরুটকায় ভ্রমণের সময় পেছনের যাত্রী ভাড়া আপনার হাতে দিলে সেটা সামনের যাত্রীদের হাত বেয়ে চালকের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। এভাবে ভাড়া আদান-প্রদানই প্রচলিত।

মস্কোতে মার্শরুটকার পরিস্থিতি অন্যান্য শহরের চেয়ে ভিন্ন। এখানে এগুলো সরকারি বাসের মতো চলে—নিয়মিত টিকিট নেয়, নির্দিষ্ট স্টপেজে থামে এবং সময়সূচি মেনে চলে।

গাড়িতে ভ্রমণ

[সম্পাদনা]
আরও দেখুন: রাশিয়ায় গাড়ি চালানো
কিরভ পর্যন্ত ৬১৭ কিমি

ট্রেন, বিমান এবং বাস বড় শহরগুলোর মধ্যে চলাচলের জন্য ভালো হলেও, গাড়ি ব্যবহার করলে আপনি নিজের মতো করে ভ্রমণের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং কম ভিড়ের জায়গাগুলোতে ঘুরতে পারেন। তবে যদি স্থানীয় রাস্তার অবস্থা, ড্রাইভিং সংস্কৃতি এবং রুশ ভাষা সম্পর্কে ধারণা না থাকে, তাহলে একা গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করা কঠিন এবং কখনও কখনও বিপজ্জনক হতে পারে। অনেক রাস্তায় চিহ্ন নেই বা থাকলেও পরিষ্কার নয়, বিশেষ করে শহরের বাইরে। সড়কের নাম্বার বা দিক নির্দেশনাও সাধারণত কেবল রুশ ভাষায় দেওয়া থাকে।

বেশিরভাগ ফেডারেল মহাসড়ক (যেমন এম–১, এম–২ ইত্যাদি) স্বয়ংক্রিয় নজরদারিতে থাকে, কিন্তু ছোট রাস্তাগুলোতে টহল দেয় রাজ্য ট্রাফিক পরিদর্শন বিভাগ (গিবদ্দি, যা আগে গাই নামে পরিচিত ছিল)। প্রতিটি ফেডারেল জেলার সীমানায় (প্রায় প্রতি ২০০ কিমি অন্তর) গিবদ্দির চেকপোস্ট থাকে। গতি নিয়ন্ত্রণের রাডার ডিটেক্টর এবং গাড়িতে ভিডিও রেকর্ডার থাকা খুবই উপকারী। গিবদ্দির সঙ্গে কোনো সমস্যায় পড়লে ভিডিও রেকর্ডই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

যদি গাড়ি দুর্ঘটনায় জড়ান, মূল নিয়ম হলো গাড়ি না সরানো এবং ঘটনাস্থল না ছাড়ানো, যতক্ষণ না গিবদ্দির একজন কর্মকর্তা এসে দুর্ঘটনার নকশা আঁকবেন এবং আপনি তাতে স্বাক্ষর করবেন। এই নিয়ম ভাঙলে ১৫ দিন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অন্যান্য সব প্রশ্ন আপনার বীমা কোম্পানিকে জানাতে হবে।

সব মহাসড়ক ফ্রি নয়; কিছু সড়কে টোল দিতে হয়, সাধারণত প্রতি টোল ২০–৬০ রুবল (ক্রেডিট কার্ডে দেওয়া যায়)। কিছু অঞ্চলের পেট্রোল খুবই নিম্নমানের হতে পারে। তাই সবসময় পরিচিত বা ব্র্যান্ডেড ফিলিং স্টেশন ব্যবহার করাই ভালো।

গাড়ি ভাড়া নেওয়া ব্যয়বহুল। যদি রুশ ভাষা না জানেন, তাহলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিগত গাইড নেওয়া ভালো। এরা সাধারণত নিজেদের গাড়ি বা ভ্যান নিয়ে থাকে, রাস্তা, স্থানীয় রীতি ও গ্রামাঞ্চল সম্পর্কে জানে এবং আপনাকে ছোট শহর ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখাতে পারে।

মজার ব্যাপার হলো, শীতকালে রাস্তার নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হয়। নদী, হ্রদ, জলাভূমি এমনকি সাগরের খাড়িও জমে গেলে সেখানে সাময়িক শীতকালীন রাস্তা (যাকে বলে "জিমনিকি") তৈরি করা হয়, যা দিয়ে কেবল আকাশপথে যাওয়া যেত এমন অনেক দূরবর্তী অঞ্চলে যাওয়া সম্ভব হয়।

বিমানে ভ্রমণ

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সব বিমানবন্দর ২০২২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- আগস্ট ২০২৩)

রাশিয়ার বিশাল দূরত্বের কারণে বিমানে ভ্রমণ প্রায়ই সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প। রাতভর ট্রেনে যাওয়ার চেয়ে বিমানে ওঠা অনেক সময় সাশ্রয়ী। ট্রেনে সারা রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রোমান্টিক মনে হলেও, এতে সময় বেশি লাগে এবং একঘেয়েমিও আসে। প্রায় প্রতিটি বড় শহরের কাছেই বিমানবন্দর আছে। অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট মস্কো থেকে পরিচালিত হয়।

আজকাল অধিকাংশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেছে। আধুনিক বিমান, নিরাপদ রেকর্ড এবং সময়ানুবর্তিতার দিক থেকেও ভালো অবস্থানে আছে। তবে অন্যান্য দেশের মতোই এখন রুশ এয়ারলাইন্সগুলো খাবার, পানীয়, লাগেজ এবং সিট পছন্দ করার জন্য আলাদা ফি নেয়। গ্রামীণ বিমানবন্দরের দুর্বল অবকাঠামো, পুরনো বিমান এবং কম দক্ষ পরিচালনার কারণে আঞ্চলিক ফ্লাইটগুলো এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বিমান যন্ত্রাংশ ও সার্ভিসিংকেও প্রভাবিত করেছে, ফলে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।

বেশিরভাগ বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে। সাধারণত চেক-ইন ও নিরাপত্তা লাইনে ভিড় থাকে না, তবে কর্মীরা ইংরেজি বলতে পারে না। অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপে চেক-ইন করলে আপনাকে অবশ্যই প্রিন্টেড বোর্ডিং পাস রাখতে হবে। অনেক বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় কিয়স্কে বোর্ডিং স্টিকার পাওয়া যায়।

দেশীয় ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের তথ্য দেখতে রুশ ওয়েবসাইট যেমন বিলেটিপ্লাস এবং এজেন্ট.আরইউ ব্যবহার করাই ভালো।

  • অ্যারোফ্লট – জাতীয় বিমানসংস্থা, মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ফ্লাইট চালায়।
  • এস–৭ এয়ারলাইন্স – সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন, জার্মানি, চীন এবং সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোতেও যায়।
  • রসিয়া এয়ারলাইন্স – সেন্ট পিটার্সবার্গ ভিত্তিক, রাশিয়ার বড় শহর ও ইউরোপে ফ্লাইট চালায়।
  • ইউটএয়ার – সবচেয়ে বড় বিমানবহরের মালিক, যাত্রী পরিবহনে শীর্ষ পাঁচে।
  • ইয়াকুতিয়া এয়ারলাইন্স – সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্যে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।
  • রসলাইন, রেড উইংস, ইউরাল এয়ারলাইন্স (সময়ানুবর্তিতায় দুর্বল), নর্ডউইন্ড।
  • নর্দাভিয়া – উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ সেবা।
  • অরোরা – দূরপ্রাচ্যের আঞ্চলিক বিমানসংস্থা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ফ্লাইট চালায়।
  • পবেদা এয়ারলাইন্স – স্বল্পমূল্যের বিমানসংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালায়।
  • নর্ডস্টার – অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় সেবা দেয়।
  • আজিমুথ – স্বল্পমূল্যের বিমানসংস্থা, রোস্তভ-অন-ডন ও মস্কো থেকে কিছু ফ্লাইট চালায়।

অনেক এয়ারলাইন্স সোভিয়েত যুগে একক অ্যারোফ্লটের ভাঙনের পর গড়ে ওঠে। দূরবর্তী অঞ্চলে সাধারণ বিমান (জেনারেল এভিয়েশন) অনেক সময় সবচেয়ে দ্রুত মাধ্যম। তবে শুধুমাত্র কিছু বড় শহরে (যেমন উফা, ক্রাসনোদার) বিমানবন্দর থেকে ট্রেন বা বাস সহজলভ্য। বেশিরভাগ জায়গায় মানুষ ট্যাক্সি ব্যবহার করে।

হেলিকপ্টারে ভ্রমণ

[সম্পাদনা]

উত্তরের কিছু অঞ্চলে নিয়মিত হেলিকপ্টার সেবা চালু আছে। সাশ্রয়ী মূল্যে দূরবর্তী গ্রামগুলোতে যাওয়া যায়।

এয়ার ট্যাক্সি

[সম্পাদনা]

উত্তরের কিছু অঞ্চলে নিয়মিত এয়ার ট্যাক্সি চলাচল করে। ভাড়া তুলনামূলক কম।

ট্যাক্সি

[সম্পাদনা]

রাশিয়ায় ট্যাক্সি পাওয়া সহজ। রাইড-হেইলিং সেবা হিসেবে পাওয়া যায়:

  • ইয়ানডেক্স ট্যাক্সি মস্কো ও অন্যান্য শহরে সেবা চালায়।
  • সিটিমোবিল মস্কো ও অন্যান্য শহরে সেবা চালায়।

নৌকায় ভ্রমণ

[সম্পাদনা]

গ্রীষ্মকালে ইউরোপীয় রাশিয়ার নদীগুলোতে ক্রুজ নৌকা চলে।

সপ্তাহান্তের ক্রুজ (শুক্রবার–রবিবার):

  • মস্কো – উগলিচ – মস্কো
  • সেন্ট পিটার্সবার্গ – ভালা’আম – সেন্ট পিটার্সবার্গ
  • মস্কো – কনস্তান্তিনোভো – মস্কো (মস্কভা নদী হয়ে)

দীর্ঘ ভ্রমণের ক্রুজ:

  • মস্কো – সেন্ট পিটার্সবার্গ (লাদোগা ও ওনেগা হ্রদ হয়ে), ৬ রাত
  • মস্কো – ইয়ারোস্লাভল – আস্ত্রাখান
  • মস্কো – ইয়ারোস্লাভল – রোস্তভ-অন-ডন
  • মস্কো – নিচনি নোভগোরোদ (ওকা নদী হয়ে)
  • ইয়াকুত্স্ক – তিক্সি
  • ইয়াকুত্স্ক – উস্ত-কুত
  • ক্রাসনোয়ার্স্ক – দুদিনকাপর্যটন

ক্রুজ ছাড়াও স্থানীয় যাত্রীবাহী নৌকা চলে, যা পর্যটকদেরও কাজে লাগতে পারে।

  • ওব ও ইর্তিশ নদীতে সেভেরফ্লট এর দ্রুতগামী নৌকা চলে। অনলাইনে টিকিট বুক করা যায়।
  • ইয়েনিসেই নদীতে প্যাসেঞ্জাররেচট্রান্স আরামদায়ক কেবিনসহ যাত্রীবাহী জাহাজ চালায়।
  • ইয়াকুতিয়ায় উস্ত-কুত থেকে ইয়াকুত্স্ক পর্যন্ত দ্রুতগামী নৌকা, আর ইয়াকুত্স্ক থেকে তিক্সি পর্যন্ত আরামদায়ক যাত্রীবাহী জাহাজ চলে।
  • সাখালিন ও কামচাটকা থেকে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত যাত্রীবাহী জাহাজ পাওয়া যায়। টিকিট আগে থেকে বুক করা ভালো।

হেঁটে লিফট নেওয়া

[সম্পাদনা]

রাশিয়ায় লিফট নেওয়ার সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয়। অনেক ক্লাব এবং এমনকি "হিচহাইকিং একাডেমি"ও আছে। প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। ভয়ের গল্প ছড়ালেও আসলে গ্রামাঞ্চলে হেঁটে লিফট নেওয়া তুলনামূলক নিরাপদ। তবে কিছু অঞ্চলে চালকরা সামান্য ভাড়া আশা করতে পারে।

দেখুন

[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]
দারবেন্টের দুর্গ

রাশিয়ার ইতিহাস পর্যটকদের আকর্ষণ করার প্রধান কারণ। এই দেশের অতীত কখনো রোমাঞ্চকর, কখনো অবিশ্বাস্যরকম অদ্ভুত, অনেক সময় নিষ্ঠুর হলেও তা সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রাচীন ইতিহাস

রাশিয়ার এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মানুষ বসবাস করত। অলতাই অঞ্চলের দেনিসোভা গুহা এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। রাশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো শিলা চিত্রকলা খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালের, যা কারেলিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশটির পাহাড়ি এলাকাজুড়ে, যেমন ককেশাস, উরাল, অলতাই এবং আরও পূর্বদিকে বহু শিলা চিত্রকলা পাওয়া যায়। কিছু স্থানে, যেমন এলাঙ্গাশ সাইটে, হাজার হাজার খোদাই করা নকশা সংরক্ষিত রয়েছে।

রাশিয়াজুড়ে প্যালিওলিথিক যুগের জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও বিদ্যমান। কুরগান অঞ্চলের সাভিন-১, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৪৩০০ সালের একটি বিস্ময়কর নিদর্শন।

এছাড়াও অনেক প্রাচীন জনবসতি দেখা যায়। উরাল পর্বতমালার কাছে আর্কাইম নামের বসতি খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ সালের সময়কার।

প্রারম্ভিক ইতিহাস

[সম্পাদনা]

দারবেন্ট, দাগেস্তানে অবস্থিত ককেশীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি শহর, যা রাশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হিসেবে পরিচিত। এর ইতিহাস প্রায় ৫,০০০ বছর পুরোনো। কিংবদন্তির ‘‘আলেকজান্ডারের ফটক’’-এর আবাসস্থল এই প্রাচীরঘেরা দুর্গনগরী দীর্ঘকাল ককেশীয় আলবেনিয়া, পারস্য সাম্রাজ্য ও মঙ্গোলদের শাসনে ছিল। অবশেষে অষ্টাদশ শতকে এটি রাশিয়ান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসে। দেড় হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি পশ্চিম রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র ছিল। রাশিয়ার অন্যান্য প্রাচীন জাতিগোষ্ঠীর সভ্যতার প্রমাণ তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায়, তবে উরাল অঞ্চলের কুরগান জনগোষ্ঠীর চিহ্ন টোবলস্কের পুরনো রাজধানী ও খাকাসিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসপ্রাপ্ত পৌত্তলিক মন্দির ও কবর টিলায় স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

প্রাচীন রাশিয়ার নগররাষ্ট্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত ও আকর্ষণীয় একটি হলো স্তারায়া লাদোগা, যেটিকে জাতির প্রথম রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হয়। ভাইকিং নেতা রুরিক এই নগরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার বংশধারা থেকেই প্রথম জারদের আবির্ভাব ঘটে। নভগোরোদ, ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, আধুনিক রাশিয়ার কিয়েভীয় রুশের প্রধান নগরী ছিল (যেখানে বর্তমান ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ অবস্থিত), এবং এখানেই প্রথম ক্রেমলিন নির্মিত হয়েছিল।

প্রাথমিক মধ্যযুগীয় রাশিয়াতে দুটি প্রধান কেন্দ্র গড়ে ওঠে—স্বাধীন নভগোরোদ প্রজাতন্ত্র এবং মঙ্গোল সাম্রাজ্য। মঙ্গোলরা ভ্লাদিমির-সুজদাল অঞ্চলের (যার প্রথম রাজধানী ছিল ভ্লাদিমির) রুশ রাজ্যগুলোকে দমন করে, তবে ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া তাদের স্থাপত্যিক অবদান খুব সামান্য। অন্যদিকে, সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক নভগোরোদ প্রজাতন্ত্র গড়ে তোলে সুনিপুণ নগরী—রাজধানী নভগোরোদ, স্তারায়া লাদোগা, প্সকভ ও ওরেশেক (বর্তমান শ্লিসেলবুর্গ), যেখানে আজও মধ্যযুগীয় ক্রেমলিন ও প্রাচীন রুশ অর্থোডক্স চার্চ টিকে আছে, যেগুলো ভাস্কর্য ও ফ্রেস্কো দিয়ে সমৃদ্ধ।

মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শক্তি হ্রাস পেলে মস্কোর মহা ডিউকডম প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। বিশেষত ইভান দ্য টেরিবলের সময়ে পশ্চিম রাশিয়ার ক্ষমতা মস্কোতে কেন্দ্রীভূত হয়। তিনি কাজানকে জয় করে সেখানে আরেকটি মহৎ দুর্গ নির্মাণ করেন এবং মস্কোকে প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়েই মস্কোর ক্রেমলিন, সেন্ট বাসিলস ক্যাথেড্রালসহ বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা নির্মিত হয়। মস্কোর আশেপাশের গোল্ডেন রিং শহরগুলোতেও একই সময়ে ব্যাপক স্থাপত্যকর্ম দেখা যায়। পাশাপাশি, দূর উত্তরে সোলোভেতস্কি মঠ-দুর্গ গুরুত্ব পায়, যা সুইডিশ নৌ-আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে কাজ করেছিল।

সাম্রাজ্যিক ইতিহাস

[সম্পাদনা]
পিটারহফের গ্র্যান্ড ক্যাসকেড
আরও দেখুন: রাশিয়ান সাম্রাজ্য

ইভান দ্য টেরিবলের শাসন শেষ হয় ‘‘দুঃসময়ের যুগ’’ নামে পরিচিত এক অস্থির সময়ে, যা কেবল ধ্বংস আর বিপর্যয় ডেকে আনে। এরপর কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখা যায়নি, যতক্ষণ না সপ্তদশ শতকের শুরুতে রোমানভ রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। পিটার দ্য গ্রেট ক্ষমতা সুসংহত করার পর ফিনল্যান্ড উপসাগরের তীরে সম্পূর্ণ নতুন শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ নির্মাণ করেন, যা ‘‘পশ্চিমের জানালা’’ নামে পরিচিতি পায়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নবক্লাসিক্যাল যুগ পর্যন্ত সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্বের অন্যতম সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে ওঠে। শহরের আশেপাশের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদগুলো—পিটারহফ, পাভলোভস্কপুশকিন—অসাধারণ জাঁকজমকপূর্ণ উদাহরণ।

রাশিয়ান বিপ্লব ছিল বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য সেন্ট পিটার্সবার্গে দেখার মতো অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি হলো উইন্টার প্যালেস—যেখানে বলশেভিকরা জার নিকোলাস দ্বিতীয়কে উৎখাত করার জন্য আক্রমণ করেছিল—এবং নেভা নদীর তীরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন পিটার অ্যান্ড পল দুর্গ, যা একসময় বিপ্লবীদের জন্য অন্ধকার কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। যারা নিকোলাস দ্বিতীয়ের পরিবারকে হত্যা এবং ‘‘আনাস্তাসিয়ার’’ কিংবদন্তি নিয়ে আগ্রহী, তারা ইয়েকাতেরিনবুর্গ শহরের ‘‘চার্চ অন দ্য ব্লাড’’ দেখতে পারেন, যা রোমানভ পরিবারের মৃত্যুর স্থানে নির্মিত। অন্যদিকে, মস্কোতে রয়েছে বিপ্লব-পরবর্তী সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শন—লেনিনের সংরক্ষিত দেহ, যা তাঁর নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই রেড স্কোয়ারে প্রদর্শিত হচ্ছে।

সোভিয়েত ইতিহাস

[সম্পাদনা]
আরও দেখুন: সোভিয়েত ইউনিয়ন

সোভিয়েত যুগ রাশিয়ার ইতিহাসে এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করে এবং কার্যত এক নতুন সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। ব্যাপক শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নেয় এক নতুন নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে কার্যকারিতার পাশাপাশি আড়ম্বর ও মহিমাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর বিশাল কনস্ট্রাক্টিভিস্ট ভবন ও ভাস্কর্যগুলো অনেক সময় কুৎসিত ও দানবীয় কাঠামো হিসেবে সমালোচিত হলেও, এগুলো কখনোই একঘেয়ে নয়। এই সময়ে যে স্থাপত্যশৈলী গড়ে ওঠে, তা আজ পরিচিত স্তালিনীয় স্থাপত্য নামে। এই শৈলী ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এর সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো মস্কোর সাতটি সুউচ্চ অট্টালিকা, যেগুলো ‘‘সেভেন সিস্টার্স’’ নামে পরিচিত।

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং স্তালিনের ভয়াবহ দমননীতি রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। যুদ্ধকালীন বোমা হামলায় রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল (চেরনোজেমিয়ে) প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং ইউরোপীয় রাশিয়ার বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকেই সারা দেশে যুদ্ধস্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ধারা শুরু হয়। সামরিক ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য ভলগোগ্রাদ (প্রাক্তন স্তালিনগ্রাদ)-এর মামায়েভ কুরগান জাদুঘর কমপ্লেক্স এক অনন্য গন্তব্য। কুর্স্ক বিখ্যাত তার বিশাল ট্যাঙ্কযুদ্ধের জন্য, আর সেন্ট পিটার্সবার্গ খ্যাত অবরোধকালীন লেনিনগ্রাদের ইতিহাসের কারণে।

চিত্র:Mamayev Kurgan, The Motherland Calls.jpeg
স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধক্ষেত্রের ওপরে দাঁড়ানো ‘দ্য মাদারল্যান্ড কলস’, মামায়েভ কুরগানে, ভলগোগ্রাদ

সোভিয়েত যুগের সবচেয়ে দুঃখজনক উত্তরাধিকার হলো বিশাল কারাগার-শিবির নেটওয়ার্ক, যা গুলাগ দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত। ‘‘দ্বীপপুঞ্জ’’ শব্দটি কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত সেই শীতল স্টেপ অঞ্চলে মানবিক দুর্ভোগের গভীরতাকে পুরোপুরি বোঝাতে সক্ষম নয়। এ ইতিহাসে আগ্রহীদের জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ স্থান হলো সাদা সাগরের সোলোভেৎস্কি দ্বীপপুঞ্জ এবং মাগাদান অঞ্চলের কুখ্যাত কোলিমা গুলাগ ব্যবস্থা। আলেকজান্দর সলঝেনিৎসিন যেখানে বন্দি ছিলেন তা দেখতে চাইলে যেতে হবে রাশিয়ার বাইরে কাজাখস্তানের একিবাস্তুজ শহরে।

এছাড়াও সারা দেশে ছড়িয়ে আছে সোভিয়েত যুগের অসংখ্য শিল্পকর্ম। ভাস্কর্য, রিলিফ, ভাস্কর্যশালা ও মোজাইক এত বেশি যে গুনে শেষ করা যায় না। অনেকগুলো রাজনৈতিক প্রচারণানির্ভর হলেও বহু কাজ নিখাদ শিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বড় শহরের মস্কোর মেট্রো স্টেশনগুলোতে অসংখ্য মোজাইক দেখা যায়, আবার প্রত্যন্ত গ্রামীণ সংস্কৃতি ক্লাবেও সেগুলো রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, মেরি এল প্রজাতন্ত্রে স্থানীয় লোককাহিনী ও রূপকথার ওপর ভিত্তি করে অসংখ্য মোজাইকযুক্ত বাসস্টপ রয়েছে। এই বাসস্টপগুলোও অনেক সময় একেকটি শিল্পকর্মে রূপ নেয়।

সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]

রাশিয়ায় বিশ্বের সেরা কিছু জাদুঘর রয়েছে, বিশেষ করে দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রেসেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত হার্মিটেজ জাদুঘর নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খ্যাতনামা, যেখানে বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল প্রথমে জার পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়ে (বিশেষত প্রতিষ্ঠাতা ক্যাথেরিন দ্য গ্রেটের উদ্যোগে), পরে সোভিয়েত সরকার ও লাল সেনার মাধ্যমে, যারা নাৎসিদের কাছ থেকে বিপুল শিল্পকর্ম দখল করেছিল। এই সংগ্রহ সংরক্ষিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন উইন্টার প্যালেসে, যা রোমানোভ রাজবংশের ঐতিহাসিক স্থাপত্য। সেন্ট পিটার্সবার্গের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রায়শই উপেক্ষিত স্থান হলো ‘‘রাশিয়ান মিউজিয়াম’’, যেখানে একাদশ শতকের আইকন থেকে আধুনিক শিল্প আন্দোলন পর্যন্ত রাশিয়ান শিল্পকলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগ্রহ রাখা হয়েছে। মস্কোর জাদুঘরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ত্রেতিয়াকভ গ্যালারি (রাশিয়ান শিল্পের প্রধান সংগ্রহশালা) এবং পশ্চিমা শিল্পকলার পুশকিন জাদুঘর।

সেন্ট পিটার্সবার্গ ও মস্কোর প্রাচীন নিদর্শনসমূহের সংগ্রহও বিশেষভাবে দর্শনীয়, বিশেষত হার্মিটেজ জাদুঘর এবং মস্কোর ক্রেমলিনের আর্মোরি চেম্বারে। সামরিক ইতিহাসে আগ্রহীদের জন্য রাশিয়ার সামরিক জাদুঘরগুলো বিশ্বের অন্যতম সেরা। মস্কোর সেন্ট্রাল আর্মড ফোর্সেস মিউজিয়াম, কুবিঙ্কা ট্যাঙ্ক মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল এয়ার ফোর্স মিউজিয়াম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার’’ জাদুঘর সবই অনন্য। প্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও সমান আকর্ষণীয় জাদুঘর রয়েছে। সাহিত্য ও সঙ্গীতক্ষেত্রেও রাশিয়ার জাদুঘর বিশ্বসেরা। আলেকজান্ডার পুশকিন মাত্র একদিনের জন্য কোথাও গিয়েছিলেন, সেখানেও তাঁর নামে ছোটখাটো জাদুঘর গড়ে উঠেছে। বড় শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মস্কোর বুলগাকভ মিউজিয়াম এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের আন্না আখমাতোভা, পুশকিন ও দস্তয়েভস্কি জাদুঘর। শান্ত পরিবেশে ভ্রমণের জন্য রয়েছে স্তারায়া রুসায় দস্তয়েভস্কির গ্রীষ্মকালীন বাড়ি, ইয়াসনায়া পলিয়ানায় টলস্তয়ের এস্টেট, মেলিখোভোতে চেখভের দেশবাড়ি, ক্লিনে চাইকভস্কির বাড়ি, ভটকিনস্কে তাঁর জন্মভিটা, ইভানোভকায় রাখমানিনভের গ্রীষ্মকালীন বাসভবন, পুশকিনস্কিয়ে গোরিতে পুশকিনের এস্টেট এবং স্পাসকোয়ে-লুতোভিনোভোতে তুর্গেনেভের দেশবাড়ি। প্রকৃতপক্ষে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক জাদুঘরগুলোর বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চলেই অবস্থিত। ধ্রুপদী সঙ্গীতে আগ্রহীদের জন্য সেন্ট পিটার্সবার্গের উনিশ শতকের বিখ্যাত সুরকারদের অ্যাপার্টমেন্ট জাদুঘর বিশেষ আকর্ষণীয়, যেখানে প্রায়ই নামী শিল্পীদের ছোট আয়োজন দেখা যায়।

কাজানের কোলশারিফ মসজিদ

রাশিয়ার সর্বত্রই গির্জা দেখা যায়। গির্জার স্থাপত্য রাশিয়ানদের কাছে এক বিশেষ গর্বের বিষয়, আর পেঁয়াজ-আকৃতির গম্বুজ জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, বিংশ শতকে অসংখ্য গির্জা ধ্বংস করা হয়েছিল। তবুও বিপুলসংখ্যক প্রাচীন গির্জা ও মঠ এখনো টিকে আছে। সেন্ট পিটার্সবার্গ ও মস্কোর গির্জাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে সেন্ট পিটার্সবার্গে ‘‘রক্তস্নাত ত্রাণকর্তার গির্জা’’, ‘‘আলেকজান্ডার নেভস্কি লাভরা’’, ‘‘কাজান ক্যাথেড্রাল’’ ও ‘‘সেন্ট আইজ্যাকস ক্যাথেড্রাল’’ বিখ্যাত। মস্কোতে রয়েছে ‘‘সেন্ট বাসিলস ক্যাথেড্রাল’’ ও বিশাল ‘‘অ্যানানসিয়েশন চার্চ’’। রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হলো সেরগিয়েভ পসাদে অবস্থিত ‘‘ট্রিনিটি লাভরা অব সেন্ট সার্জিয়াস’’, যা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি লাভরার একটি। তবে চার্চের প্রধান কার্যালয় মস্কোর দানিলভ মঠে। ভলগদা অঞ্চলের ‘‘কিরিল্লো-বেলোজেরস্কি মঠ’’ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য হলো নোভগোরোদের ‘‘সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল’’, ভ্লাদিমিরে ‘‘আসাম্পশন ক্যাথেড্রাল’’, কালিনিনগ্রাদে প্রাচীন ‘‘কেনিগসবার্গ ক্যাথেড্রাল’’ (যেখানে দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট সমাধিস্থ), মস্কোর ‘‘নভোদেভিচি কনভেন্ট’’, অপতিনা পুস্তিন (যা ‘‘দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ’’ উপন্যাসের ফাদার জোসিমার মঠের অনুপ্রেরণা), এবং ভলোকোলামস্কের মঠ। এর বাইরে ওনেগা হ্রদের ‘‘কিজি পোগোস্ট’’ এবং লাদোগা হ্রদের ‘‘ভালাম মঠ’’ও ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে, বিশেষত যারা সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো নদীপথে যাত্রা করেন।

তবে ধর্মীয় স্থাপত্য কেবল অর্থোডক্স চার্চেই সীমাবদ্ধ নয়। রাশিয়ায় ইসলামী ও বৌদ্ধ স্থাপত্যও সমৃদ্ধভাবে বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য মসজিদের মধ্যে রয়েছে কাজানের ‘‘কোলশারিফ মসজিদ’’, সেন্ট পিটার্সবার্গের ‘‘ব্লু মসজিদ’’ এবং গ্রোজনির ‘‘হার্ট অব চেচনিয়া’’ (ইউরোপের বৃহত্তম মসজিদ)। তবে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মস্কোর ‘‘ক্যাথেড্রাল মসজিদ’’, যা ২০১১ সালে ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কালমিকিয়ায়বুরিয়াতিয়ার উলান উদে শহরে এবং তুভার কিজিলে অবস্থিত মন্দিরসমূহ।

প্রাকৃতিক আকর্ষণ

[সম্পাদনা]

যদিও দর্শনীয় স্থানগুলো একে অপর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, তবুও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রাশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অতুলনীয়। দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলই ইউরেশীয় বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতনামা হলো সাইবেরিয়ার বাইকাল হ্রদ, যাকে প্রায়শই “সাইবেরিয়ার রত্ন” বলা হয়। রাশিয়ার সুদূর পূর্ব প্রান্তের কামচাটকা উপদ্বীপে রয়েছে গিজারের উপত্যকা, সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, উষ্ণ অম্লীয় হ্রদ এবং বিপুলসংখ্যক বাদামী ভাল্লুক।

কোমি কুমারী বনভূমির যুগিদ ভা জাতীয় উদ্যান

দূরপ্রাচ্যের আরেকটি অনন্য আকর্ষণ হলো কুরিল দ্বীপপুঞ্জ, ভ্রাঙ্গেল দ্বীপে তিমি দর্শন, প্রিমোরস্কি ক্রাই অঞ্চলের সিখোতে-আলিন পর্বতমালা (যেখানে আমুর বাঘের প্রধান আবাসস্থল), এবং সাখালিন দ্বীপ। এসব প্রাকৃতিক এলাকা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর হলেও ভ্রমণের জন্য বিশেষ অনুমতি ও বিশেষায়িত সফরের প্রয়োজন হয়, যা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হয়।

রাশিয়ার উত্তরাঞ্চল বিশাল জনমানবহীন বুনোপ্রকৃতির এক অবিচ্ছিন্ন বিস্তার, যা কোমি প্রজাতন্ত্র থেকে শুরু করে কামচাটকা পর্যন্ত বিস্তৃত। অধিকাংশ স্থানে রাস্তা বা অবকাঠামো নেই, এমনকি মৌলিক সুবিধাও সীমিত। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলো উত্তর–দক্ষিণমুখী বৃহৎ নদীগুলো: পেচোরা, ওব, ইয়েনিসেই, লেনা এবং কোলিমা। এর বাইরে চলাচলের জন্য ক্যানো, হেলিকপ্টার বা সামরিক যান ব্যবহার করতে হয়, এবং স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া ভ্রমণ করা অত্যন্ত কঠিন।

দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে রাশিয়ার আরেকটি মহৎ পার্বত্য অঞ্চল—উত্তর ককেশাস। এখানে রয়েছে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতসমূহ, যা আল্পসের চেয়েও উঁচু। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো এলব্রুস, যা ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে সোচি (২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক শহর) এবং ডোম্বাই। আরও পূর্বদিকে গেলে দেখা যায় নাটকীয় ভূদৃশ্য—চেচনিয়ার সবুজ গিরিখাত ও বরফঢাকা পাহাড় থেকে শুরু করে দাগেস্তানের শুষ্ক মরুময় পাহাড়, যা ধীরে ধীরে নেমে গেছে কাস্পিয়ান সাগরের তীরে।

পুরো দেশে শতাধিক জাতীয় উদ্যান ও প্রকৃতি সংরক্ষিত এলাকা (জাপোভেদনিক) রয়েছে। জাতীয় উদ্যানগুলো সাধারণ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলেও এগুলো অনেক বেশি বুনো ও অপরিকল্পিত প্রকৃতির। অপরদিকে, সংরক্ষিত অঞ্চলগুলো মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য নির্ধারিত, যেখানে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত। অনুমতি পাওয়া গেলেও কেবলমাত্র অনুমোদিত ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে প্রবেশ করা সম্ভব। সুযোগ পেলে অবশ্যই এসব এলাকা ভ্রমণ করা উচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো কামচাটকার সংরক্ষিত অঞ্চল, উরাল পর্বতমালা এবং বিশেষত আলতাই প্রজাতন্ত্রআলতাই ক্রাই অঞ্চলের আলতাই পর্বতমালা।

ভ্রমণপথ

[সম্পাদনা]

কী করবেন

[সম্পাদনা]
রাশিয়ান লোকশিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে গান পরিবেশন করছেন

রাশিয়ায় করার মতো অসংখ্য আকর্ষণীয় কাজ রয়েছে—সংগীত, নৃত্য, চলচ্চিত্র উৎসব, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কিংবা ঐতিহ্যবাহী বাথহাউস ভ্রমণ তার মধ্যে অন্যতম।

সংগীত — রাশিয়ার সংগীত ঐতিহ্য বহু প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। এখানকার সুরকার ও শিল্পীদের খ্যাতি সুদূরপ্রসারী। শহর যত বড়, তত বেশি অর্কেস্ট্রা ও কনসার্ট দেখার সুযোগ মেলে। ধ্রুপদী সংগীত নানা থিয়েটারে পরিবেশিত হয়, যেখানে দেশি-বিদেশি শিল্পীরা অনেক আগে থেকেই সূচিবদ্ধ কনসার্টে অংশ নেন। চাইকোভস্কি, মুসর্গস্কি, রাখমানিনভ, প্রোকোফিয়েভের মতো মহৎ সুরকাররা এখানেই জন্মেছিলেন। আজও মস্কোর কনজারভেটরি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে গ্রাম ও ছোট শহরগুলোতে সরকার-সমর্থিত লোকসংগীতের দল সক্রিয় রয়েছে। অনেক অঞ্চলে এখনও দাদিমাদের দলবেঁধে গান গাওয়ার ঐতিহ্য অটুট। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অঞ্চলে শোনা যায় ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের সংগীত—যেমন তুভা অঞ্চলের গলা দিয়ে গান বা চুকচি অঞ্চলের বিরল বাদ্যযন্ত্র। বিশেষজ্ঞ ছাড়া অনেক সময় উরাল অঞ্চলের কসাক গান আর ক্রাসনোদারের কসাক গান আলাদা করা যায় না। ইয়ারোস্লাভলে অনুষ্ঠিত ‘‘জ্যাজ ওভার ভলগা’’ উৎসবে পেশাদার জ্যাজশিল্পীরা একত্রিত হন। আবার শহরের প্রধান সড়কে রবিবার হাঁটলে গিটার, স্যাক্সোফোন, হারমোনিয়াম বা বাঁশির সুর ভেসে আসার সম্ভাবনা প্রবল।

সামরিক কুচকাওয়াজ — বিজয় দিবস ৯ মে পালিত হয় সারা দেশে। সেদিন শহরের চত্বরগুলো সৈনিক ও সামরিক যানবাহনে ভরে ওঠে—যেখানে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুরোনো সরঞ্জাম থেকে শুরু করে আধুনিকতম সামরিক যানও। ‘‘স্বদেশ রক্ষক দিবস’’ পালিত হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি, যেদিন নারীরা পরিবার ও কর্মস্থলে পুরুষদের অভিনন্দন জানান। এর কয়েক সপ্তাহ পর, ৮ মার্চ ‘‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসে’’ পুরুষরা নারীদের প্রতিদান দেন।

নৃত্য — রাশিয়ান ধ্রুপদী ব্যালে বিশ্ববিখ্যাত। এমনকি দাগেস্তান কিংবা ইয়াকুতিয়ার মতো দূরবর্তী এলাকাতেও ব্যালে দলের অস্তিত্ব রয়েছে। সবচেয়ে খ্যাতনামা দুটি ব্যালে দল হলো মস্কোর বলশোই ব্যালে এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের মারিনস্কি ব্যালে। ককেশাস অঞ্চলের বড় আয়োজনগুলোতে ‘‘লেজগিঙ্কা’’ নামের প্রাণবন্ত লোকনৃত্য অপরিহার্য। লোকনৃত্যশৈলীতে আগ্রহী হলে ‘‘ইগর মোইসেয়েভ এনসেম্বল’’-এর কনসার্ট মিস করা উচিত নয়। বড় শহরের বাইরেও সহজেই পাওয়া যায় আইরিশ নাচ, বেলিড্যান্স, বলরুম নৃত্য, হিপ-হপসহ নানান আধুনিক নৃত্যানুষ্ঠান।

চলচ্চিত্র উৎসব — রাশিয়ার সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র আয়োজন হলো মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এটি জুনের শেষ দিকে প্রায় ১০ দিন ধরে চলে এবং এতে বিশ্বের প্রথম সারির তারকারা অংশ নেন। সোচিতে অনুষ্ঠিত কিনোটাভর[অকার্যকর বহিঃসংযোগ], মস্কোর লাতিন আমেরিকা উৎসব[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] এবং ইভানোভোর ‘‘জেরকালো’’ চলচ্চিত্র উৎসব—যা আন্দ্রেই তারকোভস্কির নামে আয়োজিত—সবই চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।

ক্রীড়া দেখা — বরফ হকি রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ‘‘কনটিনেন্টাল হকি লীগ’’ (KHL)-এ ২৩টি দল খেলে, যার মধ্যে চারটি দল মস্কোতে এবং একটি সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত। এছাড়া হেলসিঙ্কি, রিগা, মিনস্ক ও বেইজিংয়ের দলও এতে অংশ নেয়। ফুটবলও যথেষ্ট জনপ্রিয়। ‘‘রাশিয়ান প্রিমিয়ার লীগে’’ ১৬টি দল অংশ নেয়, যার মধ্যে পাঁচটি মস্কোতে এবং একটি সেন্ট পিটার্সবার্গে। মৌসুম আগস্ট থেকে মে পর্যন্ত চলে, মাঝখানে তিন মাসের শীতকালীন বিরতি থাকে। জাতীয় দলের স্থায়ী ঘরের মাঠ নেই; তারা মৌসুমভেদে উত্তর বা দক্ষিণের বিভিন্ন শহরে খেলে।

সার্কাস — রাশিয়ার একরিং সার্কাস বিশ্বজুড়ে খ্যাত। এতে থাকে ক্লাউন, জাগলিং, অ্যাক্রোবেটিকস, নমনীয় দেহভঙ্গির খেলা এবং পশু প্রদর্শনী। ‘‘গ্রেট মস্কো স্টেট সার্কাস’’ প্রতিদিন বিকেল ও সন্ধ্যায় চমকপ্রদ সার্কাস শো আয়োজন করে।

স্টিম বাথ — ‘‘বান্যা’’ রাশিয়ান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সচ্ছল পরিবাররা প্রায়ই নিজেদের বাড়িতে ব্যক্তিগত বান্যা তৈরি করে। আর জনসাধারণের জন্য পাবলিক বান্যা বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জনপ্রিয় জায়গা। অধিকাংশ পাবলিক বান্যায় ‘‘বানশচিক’’ নামের পরিচারক থাকে, যারা শুকনো ডালপালা দিয়ে শরীর ঘষে দেয়। অনেক বান্যায় গরম ও বরফঠান্ডা পানির পুলও থাকে। কোথাও কোথাও পোশাক পরা ঐচ্ছিক হলেও, মিশ্র বাথহাউসে সাধারণত ছোট তোয়ালে দিয়ে শরীর ঢেকে রাখা নিয়ম।

বরফ ভাঙা জাহাজে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে?

পর্যটকদের মনে রাশিয়ার নাম এলেই প্রথমে ভেসে ওঠে এর দুই প্রধান শহর—মস্কোসেন্ট পিটার্সবার্গ। তবে বিস্তীর্ণ ভৌগোলিক পরিসর ও তুলনামূলকভাবে কম জনসংখ্যার কারণে রাশিয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্যও এক অসাধারণ স্বর্গরাজ্য। এখানে রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল—৩৫টি জাতীয় উদ্যান ও ১০০টির বেশি অভয়ারণ্য (জাপোভেদনিক), যেগুলোর সম্মিলিত আয়তন জার্মানির চেয়েও বিশাল।

রাশিয়ার প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যের তালিকা (রুশ ভাষায়) পাওয়া যাবে এখানে

ইন্টারনেটে পাওয়া যায় এমন কিছু রাশিয়ান প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য:

আপনার ভ্রমণ কাগজপত্র সঠিক থাকলে এসব এলাকায় নির্দ্বিধায় ঘুরতে পারবেন। আর যদি দিকনির্দেশনা বা সহায়তা প্রয়োজন হয়, তবে রাশিয়ায় বেশ কিছু ভ্রমণ সংস্থা রয়েছে যারা পরিবেশবান্ধব পর্যটনে বিশেষজ্ঞ। যেমন:

স্রোতস্বিনী নদীতে রাফটিং

[সম্পাদনা]

কেনাকাটা

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে অধিকাংশ বিদেশি ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড বর্তমানে রাশিয়ায় কার্যকর নয়। আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার বাইরে চলে যাওয়ায় রাশিয়ান ব্যাংকগুলো থেকে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। একইসাথে বহু বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করেছে। তাই ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত নগদ অর্থ সঙ্গে রাখা জরুরি। চাইলে রাশিয়ার কোনো ব্যাংকে (যেমন সবারব্যাংক বা টিনকফ অনলাইন) সহজেই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে।

মুদ্রা

[সম্পাদনা]
রাশিয়ান রুবেল-এর বিনিময় হার

সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর হিসাবে:

  • ইউএস$১ ≈ ৭৮ পিওয়াই৬
  • €১ ≈ ৯৪ পিওয়াই৬
  • ইউকে£১ ≈ ১০৮ পিওয়াই৬
  • জাপানি ¥100 ≈ ৫৪ পিওয়াই৬
  • সুইস Fr.1 ≈ ১০০ পিওয়াই৬
  • চীনা ¥1 ≈ ১১ পিওয়াই৬

বিনিময় হার ওঠানামা করে। এই এবং অন্যান্য মুদ্রার বর্তমান রেট এক্সই.কম থেকে পাওয়া যায়

মস্কোর গুম—বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শপিং মল, ঠিক লাল স্কোয়ারের পাশে

রাশিয়ার মুদ্রার নাম রুবেল, যা ১০০ কোপেকে ভাগ করা হয়। বর্তমান সংস্করণটির আন্তর্জাতিক কোড আরইউবি এবং এটি ১৯৯৮ সালে চালু হয়। এর আগে প্রচলিত সব মুদ্রা এখন অকার্যকর। রুবেলের প্রতীক কখনও ₽ আকারে ব্যবহৃত হয়, তবে এখানে পিওয়াই৬ রূপে প্রদর্শিত হবে।

কয়েন প্রচলিত রয়েছে ১, ৫, ১০ ও ৫০ কোপেক এবং ১, ২, ৫ ও ১০ রুবেলের। নোট পাওয়া যায় ৫, ১০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০, ২০০০ ও ৫০০০ রুবেল মূল্যে। যদিও কোপেক এখন কার্যত প্রায় ব্যবহার হয় না। দাম সাধারণত পুরো রুবেলে লেখা হয়। বিশেষত ১, ৫ ও ১০ কোপেকের ব্যবহার এখন একেবারেই বিরল।

সব নোটে বিশেষ স্পর্শনীয় চিহ্ন (উঁচু বিন্দু ও রেখা) থাকে, যাতে দৃষ্টিহীন বা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির ব্যক্তিরা সহজে আলাদা করতে পারেন।

রাশিয়ার আইন অনুযায়ী সব ধরনের লেনদেন অবশ্যই রুবেলে সম্পন্ন করতে হবে।

ভ্রমণকারীর চেক খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। কিছু ব্যাংক (যেমন সবারব্যাংক) এখনো আমেরিকান এক্সপ্রেসের চেক ভাঙিয়ে দেয়, তবে তা খুব সীমিত আকারে। তাই পর্যাপ্ত নগদ অর্থ বহন করাই ভালো; নইলে এটিএম বা কার্ড লেনদেনের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা প্রায়শই সমস্যাজনক হতে পারে।

মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র (যেগুলো সেন্ট পিটার্সবার্গে বুরো নামে পরিচিত) রাশিয়ার সর্বত্রই আছে। ব্যাংকের বিনিময় হার তুলনামূলক খারাপ হলেও নির্ভরযোগ্য। হোটেলগুলোতে সাধারণত আরও খারাপ হার দেওয়া হয়, তবে জরুরি অবস্থায় তা কাজে আসতে পারে। ব্যাংকে টাকা বদলাতে পাসপোর্ট দেখানো এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পূরণ করা বাধ্যতামূলক।

টাকা নেওয়ার সময় অবশ্যই ভালোভাবে গুনে নিন। প্রায়ই বড় অঙ্কের লেনদেনে ভালো হার দেখানো হয়, কিন্তু ছোট অঙ্কে খারাপ হার দিয়ে ফাঁকি দেওয়া হয়।

বড় ব্যাংকের শাখা সব প্রধান শহরে আছে। সবারব্যাংকের শাখা এমনকি ছোট ছোট গ্রামেও পাওয়া যায়।

ডলার বা ইউরোর বিনিময়ে রুবেল আনা সবচেয়ে ভালো, কারণ অন্য মুদ্রা সহজে গ্রহণ করা হয় না এবং হারও খারাপ হয়। মস্কোতে বর্তমান বিনিময় হারের তথ্য পাওয়া যাবে এখানে। রাশিয়ার বাইরে রুবেল বিনিময় করা কঠিন, তাই ভ্রমণ শেষে বাড়তি রুবেল রেখে আসবেন না।

নতুন ও পরিষ্কার নোট সহজে গ্রহণযোগ্য। ডলার হলে সর্বশেষ সংস্করণ ভালো, তবে পুরোনো নোটও অনেক সময় নেওয়া হয়।

রাস্তার ধারে অপরিচিত লোকের কাছে টাকা বদলাবেন না। সোভিয়েত আমলের মতো এখন আর এতে কোনো সুবিধা নেই, বরং প্রতারণার ঝুঁকি থাকে।

মস্কোর প্রধান ব্যাংকগুলোর এটিএম

এটিএম বা ব্যাংকোমাট বড় শহরে সহজেই পাওয়া যায়, ছোট শহরেও অনেক সময় থাকে। তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অধিকাংশ বিদেশি কার্ড এখন আর কার্যকর নয়। সাধারণত ইংরেজি ইন্টারফেস থাকে। প্রতিদিন প্রায় ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ রুবেল পর্যন্ত তোলা যায়। বড় হোটেলগুলোতেও এটিএম সহজেই মেলে। তবে বিদেশ থেকে রাশিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো একেবারেই সম্ভব নয়, তাই প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ সঙ্গে আনা জরুরি।

ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস বা জেসিবি—এসব পশ্চিমা ও জাপানি কার্ড রাশিয়ায় আর ব্যবহারযোগ্য নয়। তবে কিছু দোকান চীনের ইউনিয়নপে বা ভারতের রুপে কার্ড গ্রহণ করে।

মিউজিয়াম ও দর্শনীয় স্থানে সাধারণত নগদ ও কার্ড উভয়ভাবেই অর্থ প্রদান করা যায়।

রেলস্টেশন প্রায়ই কার্ড নেয়, তবে আগেভাগে নিশ্চিত হওয়া ভালো। এটিএমগুলো দ্রুত খালি হয়ে যায়, তাই আগে থেকেই টাকা তুলে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

ইয়ানডেক্স ট্যাক্সি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করলে অনেক সময় কার্ড পেমেন্টের সুবিধা থাকে। তবে হোটেল থেকে ট্যাক্সি ডাকলে অবশ্যই ‘‘কার্ড নেওয়া গাড়ি’’ পাঠানোর কথা স্পষ্টভাবে বলে নিন।

রাস্তার পাশে স্থাপিত এটিএম ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় প্রতারকরা এতে গোপন যন্ত্র বসিয়ে দেয়, যা আপনার পিন ও কার্ড তথ্য চুরি করতে পারে। হোটেল, ব্যাংক বা বড় শপিংমলে থাকা এটিএম ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ।

বখশিশ

[সম্পাদনা]

বখশিশ বা টিপ রাশিয়ায় একসময় অপছন্দনীয় ছিল, তবে সমাজতন্ত্র পতনের পর ধীরে ধীরে প্রচলিত হয়েছে। বর্তমানে এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে প্রায়শই প্রত্যাশিত হয়। সাধারণত ১০% এর বেশি দেওয়া অস্বাভাবিক। কিছু রেস্তোরাঁয় বিলের সঙ্গে সার্ভিস চার্জ যোগ করা থাকে, যদিও তা খুবই বিরল। সার্ভিস চার্জ থাকলে আলাদা টিপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বিল পরিশোধের সময় প্রায় ১০% বেশি রেখে দিলে সেটি টিপ হিসেবে ধরা হয়। যদি সেবার মান খারাপ হয় এবং টিপ না দিতে চান, তাহলে খুচরা টাকা ফেরত চাইতে হবে। রেস্তোরাঁয় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টিপ যোগ করা একেবারেই সম্ভব নয়।

ট্যাক্সিতে টিপ দেওয়ার প্রচলন নেই। বরং ভাড়ার বিষয়টি আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়াই সর্বোত্তম।

কেনাকাটা

[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে, রাশিয়ান তৈরি পণ্য তুলনামূলকভাবে সস্তা। তবে ইউক্রেনের ওপর আক্রমণের কারণে পশ্চিমা আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ বর্তমানে সীমিত।

খাবার

[সম্পাদনা]
  • চকলেট (শকোলাদ) — রাশিয়ান চকলেট বেশ মানসম্মত এবং জনপ্রিয়।
  • আইসক্রিম (মারোজেনোয়ে) — রাশিয়ার আইসক্রিমও অত্যন্ত সুস্বাদু। আসলে এখানকার দুগ্ধজাত পণ্যসমূহই বৈচিত্র্যময় ও মানসম্মত।
  • হালুয়া (খালভা) — এটি তুর্কি হালুয়ার মতো নয়, কারণ এটি তিলের পরিবর্তে সূর্যমুখীর বীজ দিয়ে তৈরি। রট-ফ্রন্ট কোম্পানির হালুয়া বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
  • মধু (মিয়োদ) — রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। মান ভিন্ন ভিন্ন হলেও ভালো মানের মধু খুঁজে নেওয়া উচিত। মস্কোর কোলোমেনস্কোয়ে এলাকায় আগস্ট থেকে শরতের শুরু পর্যন্ত মধুর মেলা বসে। এছাড়াও ভিডিএনখ প্রাঙ্গণে সারা বছর ধরে মধুর দোকান পাওয়া যায়।
  • লাল ক্যাভিয়ার (ক্রাসনায়া ইক্রা) — কেনার আগে নিশ্চিত হোন এটি আসল স্যামনের ক্যাভিয়ার কি না। অনেক সময় অন্য মাছের ডিম লাল রঙে বিক্রি হয়, যা স্বাদে নিম্নমানের।
  • কালো ক্যাভিয়ার (চর্নায়া ইক্রা) — এখনো পাওয়া যায়, তবে নকলের ঝুঁকি রয়েছে। দামি হলেও এটি সুস্বাদু এবং বিলাসবহুল খাবার হিসেবে ধরা হয়।
  • স্টার্জন মাছের মাংস (অসত্র, বেলুগা) ও একই পরিবারভুক্ত মাছের মাংস রাশিয়ার অন্যতম সেরা খাবার। দামি হলেও স্বাদ অতুলনীয়।
  • কঠিন পনির (ত্বর্দি সির) — প্রধানত আলতাই অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। মস্কোর বড় দোকানগুলোতে মাঝে মাঝে পাওয়া যায়।
  • স্পার্কলিং মদ (শ্যাম্পান্সকয়ে) — রাশিয়ার নিজস্ব "শ্যাম্পেন" আশ্চর্যজনকভাবে ভালো মানের। আব্রাউ-দিউরসো ব্র্যান্ড সবচেয়ে বিখ্যাত, তবে আরও মানসম্মত ব্র্যান্ড পাওয়া যায়। শুকনো (সুখোয়ে) বা ব্রুট নেওয়াই উত্তম। অনেক রেস্তোরাঁ ঘরের তাপমাত্রায় পরিবেশন করে, তবে অনুরোধ করলে ঠান্ডা বোতল আনার ব্যবস্থা করা হয়। দাম তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।

অন্যান্য

[সম্পাদনা]
রাশিয়া ভ্রমণে গেলে অন্তত একটি মাতরিয়োশকা পুতুল কিনতে ভুলবেন না!

মাতরিয়োশকা হলো ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরি রঙিন পুতুল, যেগুলো একটির ভেতরে আরেকটি বসানো থাকে। উশাঙ্কা হলো কানের ঢাকনাযুক্ত উষ্ণ টুপি। সামোভার হলো চা বানানোর জন্য ব্যবহৃত রাশিয়ান বিশেষ পাত্র। তবে ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন, রত্নখচিত বা ধাতব সামোভার কিনলে দেশ থেকে বের করার আগে কাস্টমসের নিয়ম জেনে নেওয়া উচিত। গঝেল হলো সাদা চীনামাটির তৈরি সামগ্রী, যাতে নীল রঙের ঐতিহ্যবাহী রাশিয়ান নকশা আঁকা থাকে। খোখলোমা হলো কাঠের বাসনপত্র, যেখানে লাল, সোনালি ও কালো রঙে ফুলেল নকশা থাকে।

রাশিয়ার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শীতকালীন কোট টেকসই, সুন্দর এবং দামে সাশ্রয়ী। উচ্চমানের পালকের বালিশও সহজলভ্য। প্রসাধনীতে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো পাওয়া যায় বটে, তবে অনেকেই স্থানীয় ত্বক-যত্ন পণ্য পছন্দ করেন, কারণ এগুলো দামে সাশ্রয়ী ও মানসম্মত।

রাশিয়া বিলাসবহুল পণ্যের জন্যও পরিচিত। এখানে সীমিত সংস্করণের আইফোন কভার থেকে শুরু করে বিখ্যাত ফাবের্জে ডিম পর্যন্ত কেনা যায়।

সুপারমার্কেট

[সম্পাদনা]

স্বল্প বাজেট

[সম্পাদনা]
  • অশান ফরাসি সুপারমার্কেট চেইন। দাম সস্তা, তবে মাঝে মাঝে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি হয়। কেনার আগে অবশ্যই মেয়াদ পরীক্ষা করুন।
  • মাগনিত রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সুপারমার্কেট চেইন। দাম সাশ্রয়ী হলেও পণ্যের বৈচিত্র্য তুলনামূলকভাবে কম।
  • পিয়াত্যোরোচকা রাশিয়ার আরেকটি বড় সুপারমার্কেট চেইন। দাম সস্তা, তবে লয়্যালটি কার্ড ব্যবহার করলে আরও কমে যায়। কাউন্টার বা অন্য ক্রেতার কাছ থেকে কার্ড ধার নেওয়া যায়। অনেক শাখায় ছোট বেকারি থাকে, যেখানে পাফ পেস্ট্রি বিশেষ জনপ্রিয়। কেনার আগে অবশ্যই মেয়াদ দেখে নিন।
  • লেন্তা হাইপারমার্কেট চেইন যেখানে পর্যটকদের জন্যও বিস্তৃত পণ্যের সংগ্রহ আছে। লয়্যালটি কার্ড প্রায় বাধ্যতামূলক, নইলে দাম বেশি পড়ে। লাইনে দাঁড়ালে সাধারণত ক্রেতারা তাঁদের কার্ড ব্যবহার করতে দেন।
  • ও’কে দাম ও পণ্যের দিক থেকে মাগনিত সুপারমার্কেটের সমতুল্য।
  • ডিক্সি মধ্যম মানের সুপারমার্কেট, যেখানে দাম সাশ্রয়ী।

বিলাসী ক্রেতাদের জন্য

[সম্পাদনা]
  • আজবুকা ভকুসা মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত প্রিমিয়াম সুপারমার্কেট চেইন। এখানে সাধারণ পণ্যের পাশাপাশি দামী ও এক্সক্লুসিভ সামগ্রীও মেলে। অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য, অতিরিক্ত তৎপর বিক্রয়কর্মী এবং স্থানীয় ধনীদের কেনাকাটা দেখার অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত।

শহর বা নগরে খাবার ও গণপরিবহনের ন্যূনতম খরচ মেটাতে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ রুবল প্রয়োজন। মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং অন্যান্য বড় শহরে বাসাভাড়া ইউরোপের অন্যান্য শহরের মতোই ব্যয়বহুল।

একই শহরের ভেতরেও পার্কিং ফি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত খুব বেশি নয়, তবে বিমানবন্দর এলাকায় ব্যতিক্রম দেখা যায়। বিশেষ করে মস্কোতে পার্কিংয়ের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। গাড়ির জ্বালানি প্রতি লিটার ৫০ থেকে ৭০ রুবল—ইউরোপে কেবল বেলারুশে এর চেয়ে সস্তা জ্বালানি পাওয়া যায়।

অনেক ভ্রমণকারী রাশিয়াকে ইউরোপের তুলনায় সাশ্রয়ী মনে করেন। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চল, বিশেষত উত্তরাঞ্চল বা দ্বীপাঞ্চলে দাম অনেক বেশি হতে পারে।

বড় সুপারমার্কেট চেইনগুলোতে সাধারণত লয়্যালটি কার্ড পাওয়া যায়। এগুলো দোকান থেকেই কেনা যায় অথবা নির্দিষ্ট অঙ্কের কেনাকাটার পর দেওয়া হয় (সাধারণত ৫০০ থেকে ২০০০ রুবল)। কার্ড ব্যবহার করতে হলে আপনার নামে নিবন্ধন করতে হবে এবং একটি রাশিয়ান মোবাইল নম্বরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

খাদ্য

[সম্পাদনা]
ব্লিনি—বাকউইটের প্যানকেক, পরিবেশিত হচ্ছে স্যামন মাছের ডিম (ইক্রা), টক দই (স্মেতানা) এবং কুচি করা পেঁয়াজ দিয়ে
আরও দেখুন: রুশ রন্ধনশৈলী

রাশিয়ার খাবারের মূল ভিত্তি গড়ে উঠেছিল সাধারণ কৃষকের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস থেকে। কঠিন আবহাওয়ায় তারা প্রধানত মাছ, পাখির মাংস, বন্যপ্রাণীর মাংস, মাশরুম, বেরি ও মধু খেত। রাই, গম, বাকউইট, বার্লি ও কাউনের মতো শস্য চাষ করা হতো, আর এগুলো থেকে তৈরি হতো বিভিন্ন রকমের রুটি, প্যানকেক, ভাতজাতীয় খাবার, কভাস, বিয়ার ও ভদকা। মৌসুমি বা সংরক্ষণের উপযোগী সবজি, মাছ ও মাংস দিয়ে তৈরি হতো নানা ধরনের স্যুপ ও ঝোল। রাশিয়ার বিখ্যাত ক্যাভিয়ার তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য, তবে এর দাম প্রায়ই একটি পুরো ভ্রমণের খরচকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। গরুর মাংস দিয়ে তৈরি বিফ স্ট্রোগানোভ বা মুরগির মাংস দিয়ে বানানো চিকেন কিয়েভের মতো ঐতিহ্যবাহী খাবারও পাওয়া যায়, যদিও এগুলো এখন মূলত পর্যটকদের জন্য পরিবেশিত হয়, কারণ সোভিয়েত আমলে এগুলোর জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল।

দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়ার খাবার নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা ছিল। অনেকেই বলত, রুশ রান্না নিস্বাদ ও ভারী ধরনের। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই ধারণার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আবার, ক্যাভিয়ারের মতো সূক্ষ্ম স্বাদের খাবার রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্কৃতির মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

রাশিয়ার কিছু বিশেষ খাবার হলো—

  • ইক্রা — স্টার্জন বা স্যামনের ডিম (ক্যাভিয়ার)
  • পেলমেনি — মাংস ভর্তি ডাম্পলিং, বিশেষ করে উরাল ও সাইবেরিয়ায় জনপ্রিয়
  • ব্লিনি — সাদা ময়দা বা বাকউইট দিয়ে তৈরি প্যানকেক (পাতলা বা মোটা উভয় ধরনের)
  • ব্লিনচিকি — ফরাসি ক্রেপের মতো পাতলা প্যানকেক
  • কালো রুটি — রাইয়ের রুটি, উত্তর আমেরিকান ডেলির রুটির মতো হলেও জার্মান রুটির মতো ভারী নয়
  • পিরোজকি — মিষ্টি, সবজি বা মাংসের পুর দিয়ে বানানো ছোট পাই বা বান, ভাজা কিংবা বেকড উভয়ভাবে পরিবেশিত
  • বেলিয়াশি — মাংস (বিশেষত গরুর) দিয়ে পুর করা ভাজা বান
  • গলুবসি — বাঁধাকপির পাতায় মাংস বা চাল মোড়ানো পদ
  • ইক্রা বেকলাজানায়া — বেগুনের পেস্ট
  • ওক্রোশকা — ঠান্ডা স্যুপ, কভাস বা টক দুধ দিয়ে তৈরি
  • শ্চি — বাঁধাকপির স্যুপ, আর সবুজ শ্চি চুকাই শাক দিয়ে বানানো হয়
  • বর্শ্ট — বিট ও বাঁধাকপির স্যুপ, ইউক্রেন থেকে উদ্ভূত হলেও রাশিয়াতেও জনপ্রিয়
  • ভিনেগ্রেট — সেদ্ধ বিট, আলু, গাজর, ডিম, আচার ও সবজি দিয়ে সালাদ
  • অলিভিয়ে — আলুর সালাদের রুশ সংস্করণ, যেখানে থাকে মটরশুটি, মাংস, ডিম, গাজর ও আচার
  • শাশলিক — প্রাক্তন সোভিয়েত ককেশাস অঞ্চল থেকে আসা কাবাব
  • সেলেদকা পোদ শুবোই — লবণ দেওয়া হারিং মাছ, ভিনেগ্রেটের সঙ্গে পরিবেশিত
  • খলোদেৎস (স্টুডেন নামেও পরিচিত) — মাংস, রসুন ও গাজর দিয়ে বানানো অ্যাসপিক
  • কভাস — রাই রুটি, চিনি ও ইস্ট দিয়ে বানানো হালকা ফারমেন্টেড পানীয়, অ্যালকোহলের মাত্রা কম
  • লিমোনাদ — বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়, সাধারণত কার্বনেটেড
পেলমেনি—মাংস ভর্তি ডাম্পলিং, পরিবেশিত তিন রকমের সসের সঙ্গে

সেন্ট পিটার্সবার্গ ও মস্কোতে রয়েছে বিশ্বমানের রেস্তোরাঁ, যেখানে রুশ খাবারের পাশাপাশি জাপানি, চীনা, ইতালীয়সহ নানা দেশের রান্না পরিবেশিত হয়। পাশাপাশি, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের খাবারও এখানে চেখে দেখা যায়, বিশেষত জর্জিয়ান ও উজবেক রেস্তোরাঁগুলো বেশ জনপ্রিয়। রাশিয়ার নিজস্ব দ্রুত পরিবেশিত খাবারের সংস্কৃতিও আছে। ক্যাফেটেরিয়া ধাঁচের রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে ব্লিনি, শাওয়ারমা, পিরোজকি, বেলিয়াশি কিংবা পুরভরা আলু—সবই পাওয়া যায়। অনেক সময় মেনু ইংরেজিতে লেখা থাকে না, তবে ছবি দেখে বা কাউন্টারে দেখিয়ে সহজেই অর্ডার করা যায়। পর্যটকবহুল এলাকা ছেড়ে ভেতরের শহরে গেলে একটি ছোট রুশ ভাষার অভিধান সঙ্গে রাখলে সুবিধা হয়, কারণ সেখানকার মেনু কেবল সিরিলিক হরফে থাকে। দামও সাধারণত বেশ সাশ্রয়ী। রুশ মাংসের স্যুপ ও মাংস ভর্তি পাই বিশেষভাবে সুস্বাদু।

সোভিয়েত যুগ থেকে চলে আসা স্টলোভায়া নামে পরিচিত ক্যাফেগুলো এখনো জনপ্রিয়, বিশেষত সুলভ মূল্যের জন্য। এখানে মাত্র প্রায় ৩৫০ রুবলে তিন পদের দুপুরের খাবার মেলে। খাবার দ্রুত পরিবেশন করা হয় এবং পদগুলো ঐতিহ্যবাহী রুশ ধাঁচের।

রাশিয়ায় কলের পানি পান না করাই ভালো, বরফও এড়ানো উচিত। তবে বোতলজাত পানি, কভাস, লিমোনাদ ও কোকা-কোলা সর্বত্র সহজলভ্য।

বড় শহরগুলোতে আধুনিক ক্যাফে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। সেখানে ক্যাপুচিনো, এসপ্রেসো, স্যান্ডউইচ, কেক ও পেস্ট্রি পরিবেশিত হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গ ও মস্কোর কিছু ক্যাফে আবার ওয়াইন বার ও ইন্টারনেট ক্যাফের ভূমিকা পালন করে।

রাশিয়ায় "কাফে" বলতে শুধু পানীয় নয়, পূর্ণাঙ্গ খাবারও বোঝানো হয়। তবে এ ধরনের খাবার সাধারণত আগে থেকেই রান্না করা থাকে, যেখানে রেস্তোরাঁয় অর্ডার দেওয়ার পর রান্না শুরু হয়।

ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক পরিচিত পশ্চিমা ফাস্টফুড ব্র্যান্ড এখন আর রাশিয়ায় নেই। ম্যাকডোনাল্ডসের জায়গায় এসেছে ভকুসনো ই তচকা ("ভালো আর শেষ"), আর কেএফসির জায়গায় এসেছে রোস্টিকস। তবে তেরেমক নামে একটি জনপ্রিয় রুশ ফাস্টফুড চেইন আছে, যা বিশেষভাবে ব্লিনি পরিবেশনের জন্য পরিচিত।

খাওয়ার আচার

[সম্পাদনা]

রাশিয়ার টেবিল আচরণ মোটামুটি ইউরোপীয় প্রথার অনুসারী।

  • আতিথেয়তার সময় টেবিল ছাড়তে হলে আগে অনুমতি চাইতে হবে, নইলে তা অভদ্রতা ধরা হয়।
  • মদ পরিবেশনের সময় স্বাগতিকরা প্রায়ই জোরাজুরি করতে পারেন। না চাইলে দৃঢ়ভাবে না বলতে হবে।
  • দ্বিতীয়বার খাবার পরিবেশন করা হলে তা সম্মানের নিদর্শন। না নিলে স্বাগতিকরা বিরূপ হতে পারেন।
  • টেবিলে কনুই রাখা অভদ্রতা হিসেবে গণ্য হয়, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।
  • টেবিলের কোনায় বসা রাশিয়ায় অশুভ বা অপছন্দনীয় বলে ধরা হয়।
  • প্রায়শই পুরুষেরা বিল মিটিয়ে দেন, মহিলাদের দিতে হয় না। তবে সবক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে, তাই আশেপাশের লোকদের আচরণ অনুসরণ করাই শ্রেয়।

রেস্তোরাঁয় বকশিশ

[সম্পাদনা]

রাশিয়ার রেস্তোরাঁয় কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের মতো কেবল বকশিশের ওপর নির্ভরশীল নয়, তবে বকশিশ দেওয়া প্রশংসনীয়। সাধারণভাবে বিলের প্রায় ১০% বকশিশ যথেষ্ট। ক্যাফেটেরিয়ায়, যেখানে ট্রে নিয়ে নিজেই খাবার নিতে হয়, সেখানে বকশিশ দেওয়া হয় না। বর্তমানে অনেক রেস্তোরাঁয় কিউআর কোড ব্যবহার করে সহজেই বকশিশ দেওয়া যায়।


পানীয়

[সম্পাদনা]

ভদকা, আমদানিকৃত মদ (রাম, জিন ইত্যাদি), কোকা-কোলা, পেপসি, ফ্যান্টার মতো আন্তর্জাতিক কোমল পানীয়ের পাশাপাশি তর্খুন, বুরাতিনো, বাইকাল প্রভৃতি রুশ কোমল পানীয়ও সহজলভ্য। এছাড়া কভাস (ফারমেন্টেড কালো রুটি দিয়ে বানানো হালকা গ্যাসযুক্ত পানীয়) এবং মর্স (বন্য বেরি থেকে তৈরি ঐতিহ্যবাহী পানীয়) বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

বিয়ার রাশিয়ায় তুলনামূলক সস্তা এবং এর বৈচিত্র্য অসংখ্য—দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দু’ধরনেরই। প্রায় প্রতিটি শহরের কেন্দ্রে রাস্তার দোকান বা স্টলে সহজেই পাওয়া যায়। দাম সাধারণত ১৭ থেকে ১৩০ রুবলের মধ্যে (অর্ধ-লিটার বোতল বা ক্যানের জন্য)। ছোট ক্যান (০.৩৩ লিটার) বা বড় প্লাস্টিক বোতল (১–২ লিটার) উভয়ই পাওয়া যায়। বড় বোতলের বিয়ার অনেক সস্তা হলেও মাঝে মাঝে এতে “প্লাস্টিকের মতো” অস্বাভাবিক গন্ধ থাকতে পারে। মস্কোতে বিয়ারের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও সেন্ট পিটার্সবার্গে ভালো মানের বিয়ার অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায়। দেশীয় জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে বাল্টিকা, স্তারি মেলনিক, বচকারেফ ও জোলোতায়া বচকা। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যেমন কার্লসবর্গ, হোলস্টেন ইত্যাদিও রাশিয়ার ভেতরেই উৎপাদিত হয়।

সস্তা বিয়ার (৫০ রুবলের নিচে) অনেক সময় প্রাকৃতিক উপাদানবিহীন হয় এবং তা অ্যালার্জি বা স্বাস্থ্যসমস্যা ঘটাতে পারে।

রাশিয়ার জনপ্রিয় ও মানসম্মত ভদকা: রুশিয়ান স্ট্যান্ডার্ড এবং জেলোনায়া মার্কা

রাস্তার বিক্রেতারা সাধারণত শহরের ব্যস্ত এলাকায় ব্যবসা করেন। অনেক সময় তারা লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করলেও বিয়ারের মান নিয়ে তেমন সমস্যা দেখা যায় না। মেট্রো স্টেশন বা বাসস্টপের পাশে বড় বড় স্টল বা "পালাতকা" থেকে কোমল পানীয়, বিয়ার এবং অ্যালকোহলযুক্ত ককটেল বিক্রি হয়। তবে এসব স্টলের দাম সাধারণত সুপারমার্কেটের তুলনায় ২০–৪০% বেশি। সস্তা ককটেল সাধারণত নিম্নমানের হয় এবং প্রায়ই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাতের ক্লাব ও বারে অ্যালকোহলজাত পানীয় বেশ ব্যয়বহুল, এবং সাধারণত এতে বরফ দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে পানীয় আনা নিষিদ্ধ। অনেক ক্লাব এমনকি গ্রাহকদের বাইরে পানি পান করাও নিরুৎসাহিত করে। অবৈধ মাদক থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা উচিত, কারণ এসব নিয়ে ধরা পড়লে পুলিশি হয়রানি বা ঘুষের ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।

মদ রাশিয়ায় জর্জিয়া, ক্রিমিয়া ও মলদোভার উৎপাদিত মদ বিশেষভাবে জনপ্রিয়। রাশিয়ানরা সাধারণত মিষ্টি স্বাদের মদ পছন্দ করেন। মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে ইউরোপীয় মদও সহজলভ্য হলেও এর দাম তুলনামূলক বেশি।

সোভিয়েত যুগের শ্যাম্পেন বা ঝলমলে মদ আজও পুরো প্রাক্তন সোভিয়েত অঞ্চলে বহুল প্রচলিত। এগুলো সাধারণত অর্ধ-মিষ্টি (পোলুস্লাদকোয়ে), তবে অর্ধ-শুকনো ও শুকনো ধরনেরও পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক ব্র্যান্ড আব্রাউ-দিউরসো সবচেয়ে খ্যাতনামা। এর দাম ২০০ থেকে ৭০০ রুবলের মধ্যে হয়। সস্তা বোতল (৮৫–১২০ রুবল) পাওয়া গেলেও মানে তারতম্য দেখা যায়।

সোভিয়েত আমলের কভাস বিক্রির ট্রেইলার, নিঝনি নভগোরদ

কভাস আসল রূপে খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাজারে বিক্রি হওয়া প্লাস্টিক বোতলের কভাস অনেক সময় নকল হয়। ফ্রিজে রাখা বোতলজাত কভাস তুলনামূলক আসল স্বাদের কাছাকাছি মনে হয়। গ্রীষ্মকালে রাস্তার ধারে বড় ধাতব ব্যারেল (বচকা) থেকে আসল কভাস বিক্রি হয়। তবে দিনের শেষে কভাস প্রায়ই টক হয়ে যেতে পারে, তাই কেনার সময় সতর্ক থাকা জরুরি।

মেদোভুখা প্রাচীন রুশ মধুর মদ, স্বাদে আধা-মিষ্টি এবং এতে সাধারণত ১০–১৬% অ্যালকোহল থাকে। এটি বোতলজাত অবস্থায় বা রাস্তার দোকানে গ্লাসে কিনেও পান করা যায়।

চা রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। সাধারণত কালো চা পান করা হয় এবং এতে চিনি, লেবু, মধু বা জ্যাম মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। অনেক পরিবারে চা পরিবেশনের সঙ্গে বিস্কুট, কেক বা ছোট নাশতাও থাকে, যা রাশিয়ান আতিথেয়তার ঐতিহ্যের অংশ।

রাত্রিযাপন

[সম্পাদনা]
হোটেল, ভ্লাদিভোস্তক—রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের একটি শহর

রাশিয়ার অধিকাংশ শহরে মানসম্মত হোটেল খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। সোভিয়েত আমলে নির্মিত বহু হোটেল আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও সেগুলোর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় পরবর্তীকালে কিছু সংস্কার হয়েছে, তবুও সেবার মান এবং কর্মচারীদের মনোভাবের তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। স্থানীয়দের জন্যও নির্ভরযোগ্য কারও পরামর্শ ছাড়া ভালো হোটেল খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশেষত, সেন্ট পিটার্সবার্গের বার্ষিক উৎসবের মতো বড় পর্যটন মৌসুমে হোটেল পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

আন্তর্জাতিক চেইনের হোটেলগুলো সাধারণত স্বাধীনভাবে পরিচালিত হোটেলের তুলনায় অনেক ভালো সেবা প্রদান করে থাকে।

আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট, ইকাতেরিনবার্গ

রাশিয়ার বড় শহর ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে হোটেলের খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। যদি কিছুটা রুশ ভাষা জানেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির ভিন্নতাকে মানিয়ে নিতে পারেন, তবে স্থানীয়দের বাড়িতে ঘর ভাড়া নেওয়া অধিক যুক্তিসঙ্গত হবে। অনেক রুশ নাগরিক অতিরিক্ত আয়ের জন্য খালি কক্ষ ভাড়া দেন এবং বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিতে তারা বিশেষভাবে আগ্রহী। মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে সাধারণত স্থানীয়দের তুলনায় বিদেশিদের কাছে ভাড়া দেওয়াকেই বেশি নিরাপদ ও সুবিধাজনক মনে করা হয়। কারণ, বিদেশিদের অধিক ভরসাযোগ্য ও নিয়ম-শৃঙ্খলাপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। এ ধরনের ব্যবস্থায় নাস্তা সাধারণত গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রী নিজ হাতে প্রস্তুত করেন। ঘরগুলো বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, যদিও সবসময় আধুনিক সুবিধা নাও থাকতে পারে। তবে পারিবারিক জীবনে রুশ সংস্কৃতি অত্যন্ত উষ্ণ, আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ।

আরেকটি জনপ্রিয় বিকল্প হলো স্বল্পমেয়াদে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেওয়া। ছোটখাটো কোম্পানি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব ভাড়া দেওয়া হয়। এগুলো সাধারণ আবাসিক ভবনের অংশ, যেখানে এক বা দুই কক্ষবিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট থাকে। এসব অ্যাপার্টমেন্টে সাধারণত রান্নাঘর, বাথরুম ও টয়লেটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সুবিধা থাকে। অবস্থান ও মান অনুযায়ী এগুলো পুরোনো ধাঁচের হতে পারে কিংবা নতুনভাবে সংস্কার করা ফ্ল্যাটও হতে পারে। গৃহকর্তা সাধারণত বিছানার চাদর, রান্নার সরঞ্জাম, কাপ-প্লেট ইত্যাদি সরবরাহ করে দেন। এই ধরনের বাসস্থানে থাকার একটি সুবিধা হলো—এখানে নির্দিষ্ট চেক-আউট সময় নেই, ফলে অনেকটাই স্বাধীনভাবে থাকা যায়। তবে হোটেলের মতো নাস্তা, লন্ড্রি বা কক্ষ-পরিচর্যা সেবা সাধারণত পাওয়া যায় না। দৈনিক ভাড়া প্রায়শই সমমানের হোটেলের চেয়ে কম হয়, যা বড় শহরে থাকার জন্য এটিকে একটি কার্যকরী ও সাশ্রয়ী সমাধান করে তোলে। ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রায়শই একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি করা হয়, যেখানে গৃহকর্তা ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র থেকে তথ্য নেন এবং একটি বিল ও চুক্তিপত্র প্রদান করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বড় শহরগুলোতে “মিনি-হোটেল” দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসব হোটেলে সাধারণত পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক কক্ষ থাকে, সঙ্গে ব্যক্তিগত বাথরুমও থাকে। ভাড়া বড় হোটেলের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় এগুলো পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। মিনি-হোটেলগুলো সাধারণত আবাসিক ভবনের ভেতরে অবস্থিত হয় এবং একাধিক তলা দখল করে থাকে। অনেকক্ষেত্রে নাস্তার ব্যবস্থাও থাকে। সেন্ট পিটার্সবার্গে এখন প্রচুর মিনি-হোটেল চালু হয়েছে এবং নিয়মিত নতুনগুলো খোলা হচ্ছে। মস্কোতেও এরকম কিছু হোটেল ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়াও রুশ শহরগুলোতে ভ্রমণকারীদের মধ্যে কাউচসার্ফিং বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এটি শুধু সাশ্রয়ী নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারার কাছাকাছি পৌঁছানোর একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতাও দেয়।

শিক্ষা

[সম্পাদনা]
মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি—“সেভেন সিস্টার্স”-এর একটি
মূল নিবন্ধ: রাশিয়ায় শিক্ষা

রাশিয়ায় শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হয়। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি দেশটির সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। একইভাবে মস্কো কনজারভেটরি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্র, যেখানে খ্যাতনামা ধ্রুপদি সঙ্গীতশিল্পীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু রাশিয়ার গৌরব নয়, বরং আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য রাশিয়া অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীর কাছেও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

করণীয়

[সম্পাদনা]

রাশিয়ায় বৈধভাবে কাজের অনুমতি পাওয়া সাধারণত বেশ জটিল, কারণ দেশটির অভিবাসন নীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। তবে সিআইএসের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকদের জন্য কাজ ও বসবাসের অনুমতি তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যায়। সাইবেরিয়াতে চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও লাওসের মতো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশ থেকে প্রচুর শ্রমিক অভিবাসন ঘটে। একইভাবে রাশিয়ার ভেতর থেকেও বহু মানুষ উন্নত সুযোগের আশায় অন্য অঞ্চলে গিয়ে কাজ করে।

রাশিয়ার কর্মসংস্কৃতি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও সোভিয়েত-পরবর্তী সময়ে কিছু ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। সাধারণত সকাল ৮টা বা ৯টার মধ্যে কাজ শুরু হয় এবং বিকেল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে শেষ হয়। দুপুরে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার খাবারের বিরতি প্রচলিত। মস্কোতে এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে কাজের সময় প্রায় এক ঘণ্টা পরে শুরু হয় এবং অনেক সময় রাত ৮টা পর্যন্ত চলতে পারে। কিছু অফিসে দেরিতে উপস্থিত হলে কর্মীদের জরিমানা কিংবা তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হয়।

কাজ শেষে দীর্ঘ সময় অফিসে থাকা সবসময় প্রশংসনীয় বলে ধরা হয় না, এবং অতিরিক্ত সময়ের জন্য সচরাচর কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। বিদেশি কর্মীদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা (যেমন হোস্টেল কক্ষ) রাখা হয়, যদিও এটি খুব বেশি প্রচলিত নয়।

রাশিয়ার কর্মসংস্কৃতি স্পষ্টভাবে স্তরভিত্তিক ও আনুষ্ঠানিক। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে সম্বোধন করা এবং তাদের নির্দেশ নিঃশর্তভাবে পালন করা প্রত্যাশিত। অর্থাৎ, আপনার রুশ বস কোনো কাজের নির্দেশ দিলে তা পালন করাই নিয়ম। একজন বিদেশি কর্মী হিসেবে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে প্রায়ই আপনাকে আলাদাভাবে দেখা হয়—কখনও ইতিবাচকভাবে, আবার কখনও সতর্কতার সঙ্গে। এর ফলে বিদেশি কর্মীদের প্রায়ই অতিরিক্ত পরিশ্রম, পেশাগত শৃঙ্খলা ও দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে হয়।

অন্যদিকে, স্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা কাজের পরিবেশকে অনেক সহজ করে তোলে। রাশিয়ায় ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আন্তরিকতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তাই দীর্ঘমেয়াদি পেশাগত সফলতার জন্য ধৈর্যশীল থাকা জরুরি। বিদেশিদের জন্য ভাষাগত প্রতিবন্ধকতাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তাই রুশ ভাষায় মৌলিক যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করলে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়।

সতর্ক থাকুন

[সম্পাদনা]

অপরাধ

[সম্পাদনা]
দুঃখজনক হলেও সত্য—রাশিয়ায় পুলিশ দুর্নীতির একটি সংস্কৃতি এখনও বিদ্যমান।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, রাশিয়া ভ্রমণের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ একটি দেশ। ১৯৯০-এর দশকে অপরাধের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেও পরবর্তীতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। হামলা, চুরি কিংবা পকেটমারি এখানে সবচেয়ে সাধারণ অপরাধ। এসব ঘটনা প্রায়শই ভূগর্ভস্থ পথ, মেট্রো, রাতের ট্রেন, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, বাজার, পর্যটনকেন্দ্র এবং রেস্তোরাঁয় ঘটতে দেখা যায়।

কুখ্যাত রুশ মাফিয়া, যাকে ব্রাতভা নামেও ডাকা হয়, এখনও সক্রিয়। তবে তারা সচরাচর রাস্তায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র অপরাধে জড়ায় না এবং একজন পর্যটক হিসেবে তাদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। আপনি যদি তাদের খোঁজ না করেন, তারা সাধারণত আপনাকে বিরক্ত করবে না।

মদ্যপ পর্যটকরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে থাকেন। নাইটক্লাব, বার বা ফেরার পথে তারা হামলা বা চুরির শিকার হতে পারেন। অনেক সময় বারে পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়, যা গুরুতর বিপদের কারণ হতে পারে। তাই সর্বদা খেয়াল রাখুন—আপনার পানীয় আপনার চোখের সামনে প্রস্তুত হচ্ছে কি না, এবং শৌচাগারে যাওয়ার সময় কখনোই পানীয় টেবিলে ফেলে যাবেন না।

অচিহ্নিত ট্যাক্সি ব্যবহারও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বহু যাত্রীকে চুরি, অপহরণ বা মুক্তিপণ দাবির শিকার হতে হয়েছে। রাশিয়ায় নিবন্ধিত ট্যাক্সি পরিষেবা তুলনামূলকভাবে সীমিত হলেও, বড় কোনো বিমানবন্দরে নামলে অনুমোদিত ট্যাক্সি পরিষেবা ব্যবহার করাই সর্বোত্তম। যাত্রার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হোন এটি সরকারি অনুমোদিত কি না। এছাড়া, ভুয়া ট্রলি-পরিদর্শকরা মাঝে মাঝে টিকিট পরীক্ষার অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের চেষ্টা করে। যদিও ২০২০-এর দশকে এ ধরনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে, তবুও সতর্ক থাকা জরুরি।

বর্তমানে রাশিয়ার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ও পেশাদার। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর প্রথমদিকে এই সংস্থা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে পরবর্তীতে সরকার পুলিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়। এখন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুষ নিলে নিজেরাই বড় ধরনের শাস্তির ঝুঁকিতে পড়েন। তবুও, কম বেতনের কারণে কিছু কর্মকর্তা এখনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

রাতে একা হাঁটার সময় বিশেষ সতর্ক থাকুন। সম্ভব হলে কাউকে সঙ্গে রাখুন। একা থাকলে দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ কিংবা অপরাধীদের সহজ লক্ষ্য হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি বিদেশি সংস্থাকে (যেমন রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও ফ্রি লিবার্টি, জেমস্টাউন ফাউন্ডেশন, বার্ড কলেজ) “অপছন্দনীয় সংস্থা” হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাদের প্রকাশিত নিবন্ধ শেয়ার করা, পুনঃপ্রকাশ, মন্তব্য করা বা এমনকি লাইক দেওয়ার জন্যও জরিমানা, কারাদণ্ড বা উভয় শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন।

রাশিয়ান সামরিক বাহিনী, ইউক্রেনে যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্র-সংস্থা সম্পর্কিত কোনো “অবিশ্বস্ত তথ্য” প্রচার বা প্রকাশ্যে সমালোচনা করা আইনত নিষিদ্ধ। এখানে “অবিশ্বস্ত তথ্য”-এর সংজ্ঞা অত্যন্ত বিস্তৃতভাবে নির্ধারিত। একইভাবে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়াও বেআইনি হিসেবে গণ্য হয়।

(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- মার্চ ২০২৪)

এই ধরনের জরিমানা বা শাস্তির হুমকি সরাসরি আপনার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে, তবে যাদের সঙ্গে আপনি দেখা করবেন বা কথা বলবেন তাদের জন্য তা প্রযোজ্য হতে পারে। ফলে স্থানীয় অনেকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে নিরুৎসাহিত বোধ করেন। #সংবেদনশীল বিষয় সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা প্রযোজ্য। অর্থাৎ, ভ্রমণের সময় রাজনৈতিক মতামত মূলত নিজের মধ্যেই রাখা উত্তম এবং কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

উত্তর ককেশাস

[সম্পাদনা]

একজন পর্যটকের জন্য অতীতে উত্তর ককেশাসে ভ্রমণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল, কারণ এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অপরাধ, দুর্নীতি ও আইনহীনতার প্রকোপ ছিল। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে এবং বর্তমানে অঞ্চলটিতে ভ্রমণ সাধারণত নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। তবুও ভ্রমণের আগে আপনার পরিকল্পিত যাত্রাপথ ও কার্যক্রমের নিরাপত্তা যাচাই করা জরুরি এবং সর্বদা সর্বশেষ তথ্যের সঙ্গে আপডেট থাকা উচিত। অনেক সরকার এখনও এই অঞ্চলের অন্তত কিছু অংশে ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করে, কারণ পরিস্থিতি হঠাৎ করেই পরিবর্তিত হতে পারে।

এলজিবিটি পর্যটক

[সম্পাদনা]

রাশিয়া এলজিবিটি পর্যটকদের জন্য মোটেও নিরাপদ গন্তব্য নয়। নভেম্বর ২০২৩-এ রাশিয়ান সরকার তথাকথিত আন্তর্জাতিক এলজিবিটি আন্দোলন-কে “চরমপন্থী” হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর ফলে বাস্তবে রাশিয়ায় প্রকাশ্যে এলজিবিটি পরিচয় বহন করা মানুষদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

এলজিবিটি অধিকার রক্ষার যে কোনো প্রচেষ্টা এখন অপরাধ হিসেবে ধরা হয়, আর রাশিয়ান সমাজে সমকামী ও ট্রান্স-বিরোধী মনোভাব এখনও ব্যাপকভাবে বিরাজমান। আপনি যদি কোনো ধরনের বিদ্বেষ বা ঘৃণার শিকার হন, তবে পুলিশ প্রায় নিশ্চিতভাবেই কোনো সহায়তা করবে না।

যদিও কিছু বড় শহরে এখনও কয়েকটি সমকামী ক্লাব চালু রয়েছে, সেখানে যাওয়া একেবারেই পরামর্শযোগ্য নয়। ২০২০-এর দশকের শুরুতে এসব সমকামী-বান্ধব স্থানে হঠাৎ পুলিশ অভিযান চালানো হতো এবং প্রায়ই প্রতিটি অতিথির পাসপোর্ট তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এছাড়া, রাশিয়ায় অবস্থানকালে সমকামী ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার না করাই ভালো। বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, চরমপন্থী সমকামীবিদ্বেষী গোষ্ঠী, এমনকি আইনজীবী বা পুলিশ কর্মকর্তারা ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে “এলজিবিটি আন্দোলনের চরমপন্থী” সন্দেহে মানুষদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছে।

আপনি যদি এলজিবিটি ব্যক্তি হন, তাহলে রাশিয়ায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি ভ্রমণ করতেই হয়, তবে নিজের পরিচয় প্রকাশ না করা এবং এই বিষয়টি আলোচনায় না আনা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

অপরাধ

[সম্পাদনা]
দুঃখজনক হলেও সত্য—রাশিয়ায় পুলিশ দুর্নীতির একটি সংস্কৃতি এখনও বিদ্যমান।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, রাশিয়া ভ্রমণের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ দেশ। ১৯৯০-এর দশকে অপরাধের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেও পরবর্তীতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। হামলা, চুরি কিংবা পকেটমারি সবচেয়ে সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখা যায়। এসব ঘটনা প্রায়শই ভূগর্ভস্থ পথ, মেট্রো, রাতের ট্রেন, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, বাজার, পর্যটনকেন্দ্র এবং রেস্তোরাঁয় ঘটতে পারে।

কুখ্যাত রুশ মাফিয়া, যাকে ব্রাতভা নামেও ডাকা হয়, এখনও সক্রিয়। তবে তারা সাধারণত রাস্তায় সশস্ত্র অপরাধে জড়ায় না এবং একজন পর্যটক হিসেবে তাদের সঙ্গে মেলামেশার সম্ভাবনা খুবই কম। আপনি যদি তাদের খোঁজ না করেন, তারা সাধারণত আপনাকে বিরক্ত করবে না।

মদ্যপ পর্যটকরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। নাইটক্লাব, বার কিংবা বাড়ি ফেরার পথে তারা হামলা বা চুরির শিকার হতে পারেন। অনেক সময় বারে পানীয়তে মাদক মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে, যা গুরুতর হুমকি তৈরি করতে পারে। তাই সর্বদা নিজের পানীয় আপনার চোখের সামনে প্রস্তুত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করুন এবং টয়লেটে যাওয়ার সময় কখনোই পানীয় টেবিলে ফেলে রাখবেন না।

অচিহ্নিত ট্যাক্সি ব্যবহার করাও ঝুঁকিপূর্ণ। বহু যাত্রীকে চুরি, অপহরণ বা মুক্তিপণ দাবির শিকার হতে হয়েছে। রাশিয়ায় নিবন্ধিত ট্যাক্সি পরিষেবা তুলনামূলকভাবে সীমিত, তাই বড় কোনো বিমানবন্দরে নামলে অনুমোদিত ট্যাক্সি ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ। যাত্রার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন এটি নিবন্ধিত পরিষেবা কি না। এছাড়া, ভুয়া ট্রলি-পরিদর্শকেরা মাঝে মাঝে টিকিট পরীক্ষা করার সময় ঘুষ আদায়ের চেষ্টা করে। যদিও ২০২০-এর দশকে এ ধরনের ঘটনা কমে এসেছে, তবু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

রাশিয়ার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বর্তমানে তুলনামূলকভাবে প্রশিক্ষিত ও পেশাদার। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর প্রথমদিকে এই সংস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে সরকার পুলিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বহু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুষ নিলে নিজেরাই বড় জরিমানার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। যদিও পুলিশ বাহিনীকে আরও সুশৃঙ্খল করার প্রচেষ্টা চলছে, তবুও কিছু কর্মকর্তা কম বেতনের কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

রাতের বেলা হাঁটার সময় সম্ভব হলে কারও সঙ্গে থাকুন। একা থাকলে দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কিংবা অপরাধীদের সহজ লক্ষ্য হয়ে যেতে পারেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতা

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি বিদেশি সংস্থাকে (যেমন রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও ফ্রি লিবার্টি, জেমস্টাউন ফাউন্ডেশন, বার্ড কলেজ) “অপছন্দনীয় সংস্থা” হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাদের প্রকাশিত নিবন্ধ শেয়ার করা, পুনঃপ্রকাশ, মন্তব্য করা বা লাইক দেওয়ার জন্যও আপনি জরিমানা, কারাদণ্ড বা উভয়ের সম্মুখীন হতে পারেন।

রাশিয়ান সামরিক বাহিনী, ইউক্রেনে যুদ্ধ অথবা রাষ্ট্র-সংস্থা সম্পর্কিত “অবিশ্বস্ত তথ্য” প্রচার কিংবা প্রকাশ্যে সমালোচনা করা আইনত নিষিদ্ধ। এখানে “অবিশ্বস্ত তথ্য”-এর সংজ্ঞা অত্যন্ত বিস্তৃতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়াও বেআইনি বলে গণ্য হয়।

(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- মার্চ ২০২৪)

এই ধরনের জরিমানা বা কারাদণ্ডের হুমকি সরাসরি আপনার জন্য না হলেও, যাদের সঙ্গে আপনি সাক্ষাৎ করবেন বা আলোচনা করতে চাইবেন তাদের জন্য তা প্রযোজ্য হতে পারে। এর ফলে অনেক স্থানীয় ব্যক্তি স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশে নিরুৎসাহিত বোধ করেন। #সংবেদনশীল বিষয় সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা প্রযোজ্য। অর্থাৎ, ভ্রমণকালীন আপনার রাজনৈতিক মতামত মূলত নিজের মধ্যে রাখাই উত্তম এবং কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ড্রাইভিং পরিস্থিতি

[সম্পাদনা]
মস্কোর যানজট, যা দীর্ঘ যানজটের জন্য কুখ্যাত। রাশিয়ানরা মজা করে বলে, শুক্রবার সন্ধ্যার যানজট নতুন পরিচয় তৈরি করার একটি সুযোগ।

প্রতি এক লাখ মানুষের হিসেবে যানবাহন-সংক্রান্ত মৃত্যুহারের তালিকায় রাশিয়া বিশ্বের প্রায় ১৪০তম স্থানে রয়েছে। মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং অন্যান্য বড় শহরে সাধারণত ড্রাইভিং তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খলাপূর্ণ হয় এবং অতিরিক্ত গতিবেগ খুব কম দেখা যায়। অধিকাংশ চালক ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলেন, ফলে শহুরে পরিবেশে ড্রাইভিং মোটের ওপর নিরাপদ। তবে বড় শহরের বাইরে গেলে পরিস্থিতি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সেখানে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ কম, প্রশিক্ষণ অপর্যাপ্ত, ট্রাফিক নিয়ম শিথিলভাবে প্রয়োগ হয় এবং পুরনো গাড়ি বেশি ব্যবহৃত হয়।

রাস্তা পারাপারের সময় সতর্ক থাকুন। ছোট শহর বা গ্রামে অনেক চালক ট্রাফিক লাইটবিহীন পথ এবং পায়ে চলার পথ উপেক্ষা করতে পারেন, যা পথচারীদের জন্য বিপজ্জনক।

মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে রাশিয়ায় আইন অত্যন্ত কঠোর। প্রথমবার ধরা পড়লে চালকের লাইসেন্স দেড় থেকে দুই বছরের জন্য বাতিল হতে পারে। পুনরাবৃত্ত অপরাধীদের বড় অঙ্কের জরিমানা এবং/অথবা দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আবারও ধরা পড়লে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে।

যদি রাশিয়ান ট্রাফিক পুলিশ (ГИБДД/GIBDD) যেকোনো কারণে আপনাকে থামায়, শান্ত থাকুন এবং তাদের নির্দেশ অনুসরণ করুন—কখনোই পালানোর চেষ্টা করবেন না। যদি তারা ঘুষ দাবি করে, তবে সম্ভব হলে নিকটস্থ থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করুন।

বর্ণবৈষম্য

[সম্পাদনা]

রাশিয়া একটি বহু-সাংস্কৃতিক দেশ, যার পেছনে রয়েছে প্রাচীন বিজয়ের ইতিহাস এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন-এর অন্যান্য অঞ্চল থেকে ব্যাপক অভিবাসন। একসময় বর্ণভিত্তিক সহিংস অপরাধ বড় সমস্যা ছিল, তবে ২০০৯ সালের পর থেকে তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ পর্যটকরা সাধারণত বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন না।

তবে মধ্য এশিয়া, উত্তর ককেশাসদক্ষিণ ককেশাস থেকে আগত মানুষ এবং এশিয়ার রাশিয়ার স্থানীয় জনগণ প্রায়ই অবিশ্বাস, তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন। বিশেষ করে বাড়িওয়ালাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়। একইভাবে, যারা স্লাভিক ভাষাভাষী নয় বা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত নন, তারা অনেক সময় নির্দিষ্ট এলাকায় বাসা ভাড়া পাওয়ার যোগ্যতা হারান।

মার্চ ২০২৪-এ ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে তাজিক জনগণের প্রতি বৈষম্য ও শত্রুতার ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্বর্ণীয় দম্পতিরা, বিশেষ করে যারা স্থানীয় রাশিয়ানদের সঙ্গে সম্পর্কিত, প্রায়ই অবাঞ্ছিত দৃষ্টি বা কৌতূহল আকর্ষণ করেন, যদিও তা সবসময় শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছায় না।

পরিচয়পত্র

[সম্পাদনা]
ভোলগোদার চার্চের অনন্য ফ্রেস্কোচিত্র

পরিচয়পত্র না থাকার কারণে “পরিচয় যাচাই”-এর জন্য আপনাকে সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত আটক রাখা হতে পারে (আইনে সর্বাধিক সীমা ৪৮ ঘণ্টা)। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বিচারে কাগজপত্র পরীক্ষা অনুমোদিত নয়। যে পুলিশ কর্মকর্তা কাগজপত্র পরীক্ষা করবেন, তাকে নিজের পরিচয় জানাতে হবে এবং পরীক্ষার কারণ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। তবুও বাস্তবে এ ধরনের পরীক্ষা প্রায়ই হয়, বিশেষত যাদের সম্ভাব্য অবৈধ অভিবাসী মনে করা হয়। পর্যটক কম যেসব অঞ্চলে যান, সেখানে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পর্যটক বলতে কী বোঝায়, তা খুব সীমিত।

কাগজপত্র সঙ্গে না থাকা কোনো অপরাধ নয়, এবং এর জন্য আপনাকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে থানায় নিয়ে গিয়ে সাধারণ কক্ষে বসিয়ে “পরিচয় যাচাই” করা হতে পারে। এ সময় আপনার মালপত্র, যেমন মোবাইল ফোন, কেড়ে নেওয়ার অধিকার তাদের নেই। সুবিধার জন্য পাসপোর্ট, অভিবাসন কার্ড এবং নিবন্ধন স্লিপ সঙ্গে রাখা ভালো। পাশাপাশি এগুলোর একটি করে আলাদা ফটোকপি সঙ্গে রাখা নিরাপদ। অনেক ভ্রমণকারী আসল নথি হোটেলের নিরাপদ স্থানে রেখে ফটোকপি বহন করেন, যাতে ঝুঁকি কমে।

পরিচয় যাচাই মানেই যে ঘুষের প্রস্তাব আসবে, তা নয়। সাধারণত পুলিশ কর্মকর্তারা সম্মানজনক ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে পাসপোর্ট চাইবেন (শুনতে পারেন—‘паспорт’, ‘виза’ বা ‘документы’ শব্দগুলো)। নথি দেখানোর পর তারা তা ফেরত দিয়ে সালাম করবেন। প্রথমবারের পর্যটকের কাছে এটি অস্বস্তিকর লাগতে পারে, কিন্তু তাতে কোনো বাস্তব বিপদ নেই।

তবে কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ দাবি করতে পারে যে আপনার কাগজপত্রে সমস্যা আছে এবং জরিমানার নামে ঘুষ চাইতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে:

১) শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু দৃঢ়ভাবে জানান যে সব নথি সঠিক আছে এবং প্রয়োজনে থানায় যেতে আপনি প্রস্তুত; ২) ঘুষ দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা (বড় শহরে ৫০০ руб যথেষ্ট হতে পারে); ৩) হুমকি দিয়ে পিছু হটতে বাধ্য করা—যেমন মোবাইল ফোন বের করে দূতাবাসে ফোন করার ইঙ্গিত দেখানো।

প্রথম বিকল্পে কিছুটা রাশিয়ান ভাষাজ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন, তবে এটি অধিকাংশ সময় কার্যকর হয়। দ্বিতীয় বিকল্পটি সাময়িক শান্তি দিলেও ঘুষের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে। তৃতীয় বিকল্পে সাহসিকতা দরকার, তবে এতে অনেক সময় পুলিশ পিছু হটে।

আপনার টাকা রাখার সময় ছোট নোটগুলো বাইরে এবং বড় নোটগুলো ভেতরে রেখে ভাঁজ করুন। টাকা দেওয়ার সময় তা বের করুন। বড় পরিমাণের টাকা আলাদা রাখুন এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের ছোট টাকার থেকে লুকিয়ে রাখুন। যেকোনো বড় শহরে, বিশেষ করে বাজার বা পর্যটনকেন্দ্রে, পকেটমারি এবং চুরি থেকে সতর্ক থাকুন।

সঙ্কটজনক প্রাণী

[সম্পাদনা]

আপনি এমন কুকুরের ঝাঁক দেখতে পারেন, যারা অসৎ বা পাহারাদার হিসেবে আছে কিন্তু চেইনে বাঁধা নয় বা অন্যভাবে আটকানো নেই, বিশেষ করে পর্যটকচর্চিত পথের বাইরে। শান্ত থাকা এবং ব্যাগ সামনে ধরে রাখার মাধ্যমে বিপদ এড়ানো সম্ভব। আরও পরামর্শের জন্য সংযুক্ত প্রবন্ধটি দেখুন।

বনের মধ্যে ভালুক এবং অন্যান্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক প্রাণী থাকতে পারে। যদি আপনি জাতীয় উদ্যান বা অনুরূপ জায়গা পরিদর্শন করতে যান, প্রযোজ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করুন। যদি কামড় খেয়ে থাকেন, রেবিসের ঝুঁকি থাকে; ক্ষত পরিষ্কার করুন এবং তাত্ক্ষণিকভাবে পেশাদার চিকিৎসা নিন।

স্বাস্থ্য বজায় রাখুন

[সম্পাদনা]
'সততা আমাদের জীবনের মানদণ্ড!'।কালিনিনগ্রাদ এর একটি হাসপাতালের দেয়ালে সোভিয়েত যুগের মসাইক

চিকিৎসা সুবিধার মান সাধারণত ভিন্ন। বেশিরভাগ হাসপাতাল অত্যন্ত সুসজ্জিত, পরিষ্কার এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত, তবে কিছু হাসপাতালের মান পশ্চিমা দেশের তুলনায় কম হতে পারে, যেখানে ওষুধের অভাব এবং পুরনো বা অবহেলিত সরঞ্জাম থাকতে পারে। নিশ্চিত করুন যে আপনার সকল টিকা আপ টু ডেট আছে এবং আপনি যে কোনো প্রেসক্রিপশন ওষুধ ব্যবহার করছেন তার পর্যাপ্ত পরিমাণ আপনার কাছে রয়েছে। বড় শহরগুলোতে ফার্মেসি সহজলভ্য এবং মানসম্মত ওষুধ পাওয়া যায়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে নলকূপের পানি-এর মান ভিন্ন, এমনকি শহরের ভেতরেও পরিবর্তিত হতে পারে। পুরনো ভবনে নলকূপের পানি পানযোগ্য নাও হতে পারে। ইউরোপীয় রাশিয়ার বড় শহরে পানি জীবাণুমুক্ত হলেও, প্রাচীন পাইপলাইনের কারণে এতে ভারী ধাতু থাকতে পারে। বোতলজাত পানি না পেলে পানির জ্বালানি দিন বা বিশেষ ফিল্টার ব্যবহার করুন, যা যে কোনো সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। বোতলজাত পানি প্রায় ৪০-৮০ руб টাকায় ২ লিটার (০.৪৪ ইম্পেরিয়াল গ্যালন; ০.৫৩ ইউএস গ্যালন) পাওয়া যায়।

স্থানীয় ডাক্তারদের পাশাপাশি (যারা সাধারণত ভালো হলেও প্রায়শই সেবা সুবিধার মান কম) বড় রুশ শহরে কয়েকটি পশ্চিমা ধাঁচের মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট নীতি ভিন্ন, তাই কোনো সেবা নেওয়ার আগে নিশ্চিত করুন আপনি কী জন্য, কখন এবং কিভাবে অর্থ প্রদান করছেন।

নকল ভদকা কেনার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, কারণ এটি বিপজ্জনক হতে পারে (এখানে 'বিপজ্জনক' মানে শুধু শক্ত নয়; এতে মিথানল থাকতে পারে)। শুধুমাত্র বড় দোকান বা বিশেষ দোকান থেকে, যেখানে ক্যাপের উপর স্টিকার এবং/অথবা অঞ্চলের বারকোড আছে, সে সকল দোকান থেকে ভদকা কিনুন।

খাবারের মান নিয়ে অনেক দোকান (ফুড চেইন, স্বাধীন দোকান, কিয়স্ক এবং বাজার) নিম্নমানের খাবার বিক্রি করে থাকে, যেমন মেয়াদোত্তীর্ণ বা মেয়াদ পুনঃমুদ্রিত পণ্য। যদিও বেশিরভাগ খাবারের মান ভালো, সম্ভব হলে দৃশ্যমানভাবে খাবারের মান যাচাই করুন, বিশেষভাবে মেয়াদ লেবেলের ওপর নির্ভর করবেন না। অন্য ক্রেতাদের ক্রয় পর্যবেক্ষণ করাও সহায়ক হতে পারে। সাধারণত নিম্নমানের খাবারের মধ্যে রয়েছে: মাছের বেশিরভাগ পণ্য (ধূমপায়ী বা মশলাযুক্ত লবণযুক্ত মাছের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা), প্রস্তুত সালাদ, তাজা শাকসবজি এবং ফল (যদি হাতে বেছে নেওয়া না যায়), ডিসকাউন্টে থাকা সবজি (প্রায়শই পুরনো উৎপাদনের তারিখ), সস্তা দুগ্ধজাত পণ্য।

রস প্রস্তুতকারক যদি ১০০% রস না হয়, তবে এটি রস (সক) হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। নিম্নমানের রস আজ নেকটার নামে থাকে এবং এতে ৫০-৭০% পানি থাকতে পারে, আর ফলপানীয় পানীয় (ফ্রুকটোভি নাপিতক) যেকোনো উপাদান থাকতে পারে।

রাশিয়ায় এইচআইভি-এর প্রবণতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রধানত কামকাজী, তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক এবং নেশা-সেবীদের মধ্যে। সতর্ক থাকুন।

উত্তর ও মধ্য ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মতো, প্রকৃতিতে এঁটুলি থাকতে পারে—যেমন টাইগা এঁটুলি এবং ক্যাস্টর বিন এঁটুলি। এগুলো লাইম রোগ, পুনরাবৃত্তি জ্বর, বাবেসিওসিস এবং সাইবেরিয়ান ও ফার ইস্টার্ন এঁটুলি-জনিত এনসেফালাইটিস ছড়াতে পারে।

সম্মান

[সম্পাদনা]

রাশিয়ানরা সাধারণত সংযত এবং ভদ্র, এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি রীতিনিষ্ঠ। এটি আংশিকভাবে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রভাবের কারণে, যা রাশিয়ান সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

{{Infobox|কতগুলো নাম!|রাশিয়ানরা সাধারণত তিনটি নাম ব্যবহার করে—প্রথম নাম, পিতৃনাম, এবং পরিবারিক শেষ নাম। পিতৃনাম বাবার নামের সাথে -ovich, -yevich বা -yich (পুরুষদের জন্য) এবং -yevna, -ovna বা -ichna (নারীদের জন্য) যুক্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি বাবার নাম হয় Пётр (পিয়তর), তবে পিতৃনাম হবে Петрович (পিয়ত্রোভিচ) একজন পুরুষের জন্য এবং Петровна (পিয়ত্রোভনা) একজন নারীর জন্য।

কারো নাম অপ্রচলিতভাবে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথম নাম বা (কম সাধারণ) শেষ নাম ব্যবহার করা যায়, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথম নাম + পিতৃনাম বা টাইটেল + শেষ নাম ব্যবহার করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, জীববিজ্ঞানী ইভান পিয়ত্রোভিচ পাভলভকে ব্যক্তিগতভাবে চিনলে তাকে শুধু ইভান বলে ডাকা যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হলে তাকে ডাঃ পাভলভ বা ইভান পিয়ত্রোভিচ বলে ডাকা উচিত।

পরিবারের শেষ নামও লিঙ্গ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়, সাধারণত পুরুষদের শেষ নামের শেষে 'আ' যুক্ত করে নারী সংস্করণ তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, নৃত্যশিল্পী আনা পাভলোভা জীববিজ্ঞানীর সাথে একই শেষ নাম শেয়ার করে, শুধু তার শেষ নামের শেষে 'আ' যুক্ত।

রাশিয়ানরা নামের সংক্ষিপ্ত রূপ বা ডাকনাম তৈরি করতে খুব পছন্দ করে। প্রায় প্রতিটি নামকে তিন বা চারটি রূপে সংক্ষিপ্ত করা যায়। প্রিয় ডাকনামগুলো সাধারণত -en'k, -echk, -ochk, -ushk বা -yush যুক্ত করে তৈরি হয়। যেমন Masha → Mashen'ka (মাশেঙ্কা) বা Katya → Katyusha (কাতিউশা)। কিছু সাধারণ ডাকনাম রাশিয়ান ফ্রেজবুক-এ তালিকাভুক্ত। সাধারণভাবে, কাউকে ভালোভাবে চেনার আগে এই ডাকনাম ব্যবহার এড়ানো উচিত।

রাশিয়ায় ভ্রমণকালে স্বাস্থ্য, খাবার, পানি এবং স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কিত সতর্কতা মানা অত্যন্ত জরুরি। পরিচয়পত্র, নথিপত্র এবং টিকার তথ্য সবসময় সঙ্গে রাখুন। খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের আগে মান যাচাই করুন এবং অননুমোদিত ভদকা থেকে বিরত থাকুন। প্রকৃতিতে অবস্থানকালে এঁটুলি ও অন্যান্য প্রাণীর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকুন। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে পূর্বপরিকল্পনা বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সহায়ক।

সামাজিক শিষ্টাচার

[সম্পাদনা]

হাসি সাধারণত বন্ধু বা ঘনিষ্ঠ পরিচিতদের জন্য সংরক্ষিত। অচেনাদের দিকে হাসি দেখালে তারা মনে করতে পারে যে আপনি তাদের উপহাস করছেন। বিক্রয়কর্মী এবং সরকারি কর্মচারীরা সাধারণত গম্ভীর এবং ব্যবসায়িক মনোভাব বজায় রাখার আশা করা হয়।

সাধারণভাবে রাশিয়ানরা সরাসরি বলা যায়, যদিও ধীরে ধীরে এ ধরনের আচরণ পরিবর্তিত হচ্ছে। তারা নিজের মতামত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং মূল বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। যদি কেউ প্রথমে সংক্ষিপ্ত বা সংক্ষেপ উত্তর দেয়, তা বোঝায় না যে তারা আপনার প্রতি অনিচ্ছুক।

বয়স্ক এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখানো সামাজিকভাবে প্রত্যাশিত। কয়েকটি রাশিয়ান শব্দ এবং বাক্য শেখার চেষ্টা করুন। শুধু 'হ্যালো', 'অনুগ্রহ করে' এবং 'ধন্যবাদ' রাশিয়ান সমতুল্য ব্যবহার করলেও তা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তৈরি করবে। দেখুন: রাশিয়ান ফ্রেজবুক#মূল

সময়ানুবর্তিতা গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই সঠিক সময়ে পৌঁছানো আবশ্যক নয়, তবে খুব দেরি বা খুব আগেভাগে আসা ভালো প্রভাব ফেলবে না। যদি প্রায় সময়মতো আসার সুযোগ না থাকে, রাশিয়ানদের সতর্ক করে জানানো উচিত।

ধারণার বিপরীতে, রাশিয়ায় প্রকাশ্য মদপান সাধারণভাবে অগ্রহণযোগ্য। নারীদের প্রতি রীতিনিষ্ঠ আচরণ প্রচলিত। নারী পর্যটকদের জন্য সম্ভাবনা রয়েছে যে রাশিয়ান পুরুষ বন্ধুদের মধ্যে কেউ রেস্তোরাঁয় বিল পরিশোধ করতে পারে, দরজা খোলার সময় সাহায্য করতে পারে, ছোট ধাপ নেমে উঠার সময় হাত বাড়িয়ে সাহায্য করতে পারে অথবা হ্যান্ডব্যাগের চেয়ে ভারী কিছু বহন করতে সাহায্য করতে পারে। পুরুষ পর্যটকদের বুঝতে হবে যে রাশিয়ান নারীরা এই সূক্ষ্ম আচরণ আশা করবে।

রাশিয়ানরা জনসমক্ষে একে অপরের সঙ্গে ভদ্র ও বিনয়ীভাবে কথা বলে। এই রীতিতে চলার চেষ্টা করুন।

সংবেদনশীল বিষয়

[সম্পাদনা]
লেক লাডোগায় অবস্থিত ফোর্ট্রেস ওরেশেক – সুইডিশ নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত। এখানে ১৩২৩ সালে সুইডেন এবং নোভগরোদের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই দেশের সীমান্ত ২৭২ বছর ধরে স্থির রাখে।

রাজনৈতিক আলোচনা অত্যন্ত সংবেদনশীল; বিশেষ করে যারা ভ্লাদিমির পুতিন এবং রাশিয়ান সরকারের বিরোধী, তাদের মতামতের জন্য হয়রানি ও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এর ফলে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সম্পর্কেও প্রভাব পড়েছে। অপরিচিত কেউ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করলে সাধারণত স্বাগত পাওয়া যায় না।

  • চলমান রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধ অত্যন্ত বিতর্কিত।
  • ভ্লাদিমির পুতিন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তার সমর্থকরা তাকে রাশিয়াকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশংসা করেন, কিন্তু অনেক সমালোচক তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বৈরশাসক মনে করেন, যিনি মতামত ও স্বাধীনতা সীমিত করেছেন।
  • অনেক রাশিয়ান মনে করেন যে, রাষ্ট্রপৃষ্ঠপোষিত ডোপিং কেলেঙ্কারি, যা রাশিয়ান খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করেছিল, তা রাজনৈতিক চাপের ছদ্মবেশ এবং অতিরঞ্জিত অভিযোগ।
  • আবখাজিয়া সংঘাত, জর্জিয়ার–ওসেটিয়ার সংঘাত, রাশিয়ার জর্জিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক, পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক, এবং বাল্টিক অঞ্চলের রাশিয়ান জাতিসত্তার অবস্থা সংবেদনশীল।

রাশিয়ার দীর্ঘ ইতিহাসে অস্থির ঘটনা রয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে আলোচনা করার সময় সতর্ক থাকা উচিত:

  • রাশিয়ান সাম্রাজ্য — অনেক রাশিয়ান এর অর্জনে গর্ববোধ করে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ — প্রতিটি রাশিয়ান পরিবারের মধ্যে ২৫–৩০ মিলিয়নের কেউ না কেউ নিহত হয়েছে। রাশিয়ানরা তাদের সৈন্যদের ত্যাগ এবং সাফল্যের প্রতি গর্বিত। নাজি প্রতীক প্রদর্শন বা নাজি জার্মানির অপরাধ (হলোকাস্টসহ) অস্বীকার করা রাশিয়ায় অবৈধ
  • সোভিয়েত ইউনিয়ন — রাশিয়ানরা সোভিয়েত যুগের অর্জন নিয়ে গর্বিত এবং ব্যর্থতায় লজ্জিত। মিখাইল গর্বাচেভকে USSR পতনের জন্য অপ্রিয় মনে করা হয়।
  • ইলতসিন যুগ — অনেক রাশিয়ান পোস্ট-সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি বরিস ইলতসিনকে রাশিয়ার অবস্থান ক্ষয় করার জন্য দায়ী মনে করেন এবং ১৯৯০-এর দশককে কষ্ট ও ব্যথার সঙ্গে মনে রাখেন।
  • উত্তর ককেশিয়ান সংঘাত — চেচেন যুদ্ধ এবং বেসলান স্কুল দমন এখনও জাতীয় স্মৃতিতে খোলা ক্ষত।

সামাজিক বিষয়ও রয়েছে:

  • রাশিয়ার জাতিগত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সম্পর্ক সংবেদনশীল এবং এড়ানো উত্তম। যদিও বেশিরভাগ রাশিয়ান মনে করে যে রাশিয়া সবসময় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য গ্রহণ করেছে এবং সংখ্যালঘুদের সঠিকভাবে আচরণ করেছে, কিছু সংখ্যালঘু মনে করেন যে তাদের প্রতি বৈষম্য হয়েছে, যেমন সামরিক মোবিলাইজেশন, যুদ্ধের হতাহতের ক্ষেত্রে অনুপাতহীনতা এবং সাম্রাজ্যের সময়কাল থেকে শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক একীকরণের নীতি।
  • রাশিয়ানরা সাধারণভাবে বিদেশীদের দেশের সমালোচনা পছন্দ করে না।

সংবেদনশীল বিষয় এড়ানো এবং রাজনৈতিক বা জাতিগত আলোচনায় যুক্ত না হওয়াই শ্রেয়। বন্ধুবান্ধব ও স্থানীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সচেতন হোন এবং নিজের মতামত প্রকাশে সংযত থাকুন।

সোভিয়েত যুগে যে অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তার পরও রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ এবং কিছু অঞ্চলে সুন্নি ইসলাম এখন রাশিয়ার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত এবং বেশিরভাগ রাশিয়ানই এটি মানেন। যদিও ধর্মের স্বাধীনতা সাধারণভাবে সম্মানিত হয়, কিছু মুসলিম অঞ্চল যেমন চেচনিয়া-কে শরিয়া আইন প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে।

অধিকাংশ রাশিয়ান বিশ্বাসী এবং ধর্মের প্রতি সম্মান দেখান, তবে সক্রিয়ভাবে ধর্ম পালনে খুব সক্রিয় নন। রাশিয়ায় একটি ধর্মীয় অবমাননার আইন রয়েছে, যা ধর্মের প্রতি অবমাননাকর আচরণের জন্য কঠোর শাস্তি প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে এই আইনের আওতায় এক ২২ বছর বয়সী ব্লগারকে বিচার করা হয়েছিল কারণ সে রাশিয়ান অর্থোডক্স ক্যাথেড্রালে Pokémon Go খেলছিল। অগৈরতমভাবে ধর্মহীনতা কোনো নির্যাতনের মুখে পড়ে না, তবে ধর্মবিশ্বাসী ব্যক্তিদের প্রতি সংবেদনশীল থাকা এবং আপত্তিকর কিছু করা থেকে বিরত থাকা ভালো।

২০১৭ সালে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট যিহোবার সাক্ষিদেরকে দেশে প্রবেশে নিষিদ্ধ করে এবং তাদের চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে।

চার্চ পরিদর্শনের সময় নম্র পোশাক পরিধান করা আবশ্যক। এর অর্থ হলো: ফ্লিপ-ফ্লপ, আর্মলেস টপ, শর্টস, ছোট স্কার্ট, ট্রেনার, উজ্জ্বল মেকআপ বা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরা যাবে না। পুরুষদের টুপি খুলতে হবে এবং মহিলাদের চার্চে প্রবেশের আগে চুল শাল বা ঘোমট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়াও, চার্চে ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ড করা বা জোরে কথা বলা অসম্মানজনক।

মসজিদ পরিদর্শনের সময় অন্য কোনো ধর্মের প্রতীক প্রকাশ্যে পরিধান করা যাবে না। এছাড়াও, চার্চে যেভাবে আচরণ করা উচিত, মসজিদে তেমনই নম্র আচরণ বজায় রাখা উচিত।

এথনিক সংখ্যালঘুদের অঞ্চলে লোকধর্মীয় পূজাস্থল পরিদর্শনের সময় সতর্ক থাকুন। কখনো কখনো ছোট একটি বন বা পবিত্র স্থানকেও স্থানীয়রা 'আত্মার বাড়ি' হিসেবে বিবেচনা করে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া যায় বিশেষত সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্যে, তবে ইউরোপীয় রাশিয়ার কিছু জাতি যেমন মারি, এরজ্যা, মকশা, ওসেটিয়ানরা অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মকে তাদের প্রথাগত বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে রাখে।

ঘরোয়া শিষ্টাচার

[সম্পাদনা]

রাশিয়ান কারও বাড়িতে আমন্ত্রিত হলে, খালি হাতে যাওয়া উচিত নয়। এটি সম্মানের প্রতীক হিসেবে একটি উপহার নিয়ে যাওয়া সাধারণ। সাধারণত খাবার বা পানীয় যেমন ওয়াইন উপহার দেওয়া হয়, যদি আপনি জানেন যে তারা পান করে।

রাশিয়ান বাড়ির মানুষকে ফুল দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে, কেবল বিজোড় সংখ্যার ফুল দিন; জোড় সংখ্যার ফুল সাধারণত শেষকৃত্যে দেয়া হয়। বিশেষত সম্পর্কযুক্ত মহিলাদের জন্য হলুদ ফুল না দেওয়াই ভালো, কারণ রাশিয়ায় এই রঙ অবিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয়দের মধ্যে কিছু ফুল নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে অনুপযুক্ত মনে হতে পারে – উদাহরণস্বরূপ, লাল কার্নেশন বৃদ্ধ মহিলার জন্য সুন্দর কিন্তু তরুণ মহিলার জন্য অদ্ভুত মনে হতে পারে। রোজগুলি যদি হোস্টকে যথেষ্ট পরিচিত না হন, তবে অতিরিক্ত অশ্লীল মনে হতে পারে।

শিশুর জন্মের আগে তার জন্য উপহার দেবেন না। আগে উপহার দেওয়া কুসংস্কার হিসেবে ধরা হয়। জন্মদিনের আগে মৌখিক অভিনন্দনও প্রায়শই অভদ্র মনে করা হয়।

চার্চ অন দ্য ব্লাড, ইকাতেরিনবার্গ-এ সেই জায়গা যেখানে জার নিকোলাস দ্বিতীয় এবং তার পরিবার বলশেভিকদের দ্বারা হত্যা করা হয় এবং রোমানোভ বংশের অবসান ঘটে

রাশিয়ান বাড়িতে প্রবেশ করলে সর্বদা জুতা খুলবেন, কারণ ঘরের ভিতরে জুতা পরা হয় না। এছাড়াও, আমন্ত্রণকৃত অতিথি হিসেবে নম্র ও সংযত পোশাক পরিধান করুন। তবে এই নিয়মটি সব সময় যুবকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

অন্যান্য শিষ্টাচার

[সম্পাদনা]

দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনে ভ্রমণের সময়, আপনি যদি কিছু খেতে শুরু করেন, তবে নিকটবর্তী যাত্রীদের সাথে সামান্য খাবার ভাগ করা ভদ্রতার পরিচয় দেয় – যেমন মিষ্টি বা স্ন্যাকস। দীর্ঘ যাত্রায়, যেমন ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়েতে, আপনার ট্রেনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপচারিতা করা স্বাভাবিক, তবে ছোট দূরত্বের যাত্রায় এটি প্রায়শই দেখা যায় না।

রাশিয়ানরা নানা কুসংস্কার বিশ্বাস করে। কিছু কুসংস্কারের দিকে মনোযোগ দিন: - কারও বাড়ির ভিতরে ফিসফিস করবেন না; স্থানীয়রা বিশ্বাস করে এটি বাড়ির মালিককে দরিদ্র করে। - কারও সঙ্গে হাত মেলানো, চুম্বন করা, অভিবাদন জানানো বা কাউকে কিছু দেওয়া ঘরের প্রান্তে করবেন না; এটি খারাপ ভাগ্য বয়ে আনে। - ঘরের ভিতরে ছাতা খোলা বা আয়না ভাঙা খারাপ ভাগ্য বয়ে আনে।

যোগাযোগ

[সম্পাদনা]

সাধারণ সংবাদমাধ্যম যারা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সমালোচনামুক্তভাবে প্রতিবেদন করে না, তাদের বন্ধ করা হয়েছে। ২০২২ সালের "ভুয়া খবর" আইন প্রয়োগের পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক পদত্যাগ করেছেন। তাই রাশিয়ায় বা ইউক্রেনে নতুন তথ্য জানতে হলে ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং নির্ভরযোগ্য উৎসের উপর নির্ভর করতে হতে পারে।

ইন্টারনেট

[সম্পাদনা]
সতর্কতা টীকা: ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (পূর্বে টুইটার), ইনস্টাগ্রাম এবং থ্রেডস-এর মতো প্রধান বিদেশি সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট রাশিয়ায় নিষিদ্ধ এবং কেবল ভিপিএন ব্যবহার করে কাজ করে। দেখুন ইন্টারনেট অ্যাক্সেস#সেন্সরশিপ এড়িয়ে যাওয়া.

২০১৪ সালের পর থেকে রাশিয়ান সরকার জনসাধারণের ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে, দাবি করে এটি "সিআইএ প্রকল্প" এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আইনি পরিচয় যাচাই প্রয়োজন। প্রায়ই কেবল একটি রাশিয়ান ফোন নম্বর থাকলেই বিনামূল্যের ওয়াই-ফাইতে নিবন্ধন করা যায়, বিশেষত ট্রেন স্টেশন বা ব্যাংকে। হোটেলেও প্রায়শই ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে রাশিয়ান ফোন নম্বর প্রয়োজন, না থাকলে হোটেল কর্মীরা এসএমএস কোড দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

কিছু সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং অ্যাপ ব্লক করা হয়েছে, তবে ভিপিএন ব্যবহার করে সহজে এড়ানো যায়। কিছু পরিচিত ভিপিএন ব্লক করা হলেও (কিছু ফ্রি ভিপিএন এখনও কার্যকর এবং বেশিরভাগ পেইড ভিপিএন নির্ভরযোগ্য), এটি চীনের মতো কঠোরভাবে প্রয়োগ হয় না। কিছু আশঙ্কা আছে যে একদিন রাশিয়া তার ইন্টারনেট পুরোপুরি বিশ্বজাল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। অধিকাংশ রাশিয়ান এটিকে অতিরঞ্জিত মনে করে। যদি তা হয়, তবে নিজস্ব গেটওয়ে ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে।

ইন্টারনেটের গতি ও মান সাধারণত ভালো থাকে, তবে স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে। বড় শহরে ১০০ মেগাবিট/সেকেন্ডের স্পীড স্বাভাবিক এবং কিছু প্রদানকারী গিগাবিট ইন্টারনেটও দেয়।

রাশিয়ার দেশীয় কোড হল

রাশিয়ার ফোন নম্বরগুলিতে একটি অঞ্চল কোড থাকে, যা তাদের প্রদেশ অনুযায়ী তিন, চার বা পাঁচ অঙ্কের হয়, এবং এর পরে থাকে একটি ব্যক্তিগত নম্বর, যা যথাক্রমে সাত, ছয় বা পাঁচ অঙ্কের হয়। মোট মিলিয়ে নম্বর সর্বদা দশ অঙ্কের হয়। তিন অঙ্কের কোড 800 ব্যবহৃত হয় ফ্রি কলের জন্য। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে সবসময় তিন অঙ্কের "এলাকা" কোড এবং সাত অঙ্কের নম্বর থাকে।

একই এলাকা কোডের ভেতরে কল করার সময় সাধারণত এলাকা কোড উল্লেখ করতে হয় না (মস্কোতে ব্যতিক্রম)।

রাশিয়ার ভেতরে ভিন্ন এলাকা কোডে কল করতে হলে: ৮' (টোনের জন্য অপেক্ষা করুন) পুরো রাশিয়ার নম্বরসহ এলাকা কোড

রাশিয়ার বাইরে আন্তর্জাতিক কল করার জন্য কোড হল (দ্বিতীয় টোনের জন্য অপেক্ষা করুন এবং তারপর) ১০

আন্তর্জাতিক কল রাশিয়ায় করার সময়, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী প্লাস চিহ্ন (+) বাদ দিয়ে আপনার দেশের আন্তর্জাতিক এক্সেস কোড ব্যবহার করতে হবে, তারপর রাশিয়ার দেশীয় কোড ৭ এবং তারপরে ব্যক্তিগত রাশিয়ান ফোন নম্বরসহ এলাকা কোড লিখতে হবে।


প্রিপেইড সিম কার্ড

[সম্পাদনা]

১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে রাশিয়ায় স্থানীয় সিম কার্ড পাওয়ার জন্য নতুন এবং জটিল সরকারি প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়েছে। যে কোনো বিদেশীর জন্য বাধ্যতামূলক হয়েছে যে তার পাসপোর্টের নোটারাইজড অনুবাদ রাশিয়ান ভাষায় থাকতে হবে, তারপর একটি করদাতা নম্বর (ИНН) নিতে হবে, এরপর ছবি তুলতে হবে, আঙুলের ছাপ স্ক্যান করতে হবে, এবং স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অনুমোদন করতে হবে। এই সমস্ত ধাপ সম্পন্ন হলে কেবল বিদেশী পর্যটক বা ভ্রমণকারী খুচরা দোকান থেকে সিম কার্ড নিতে পারবেন। এর মানে হলো, সীমান্তে বা ট্রেন স্টেশন বা বিমানবন্দর থেকে কোনো সিম কার্ড পাওয়া যাবে না। কমপক্ষে এমন একটি ছোট শহরে যেতে হবে, যেখানে সব সরকারি অফিস খোলা থাকে, এবং মনে রাখতে হবে সেখানকার কেউ সাধারণত ইংরেজি জানে না।

স্থানীয় ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চাইলে রাশিয়ান সিম কার্ড থাকা আবশ্যক। পূর্বে ইস্যুকৃত সব সিম কার্ড ১ জুলাই ২০২৫ থেকে অবৈধ হবে যদি বিদেশী এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে।

রাশিয়ায় পাঁচটি প্রধান মোবাইল অপারেটর রয়েছে: বীলাইন[অকার্যকর বহিঃসংযোগ], মেগাফন[অকার্যকর বহিঃসংযোগ], এমটিএস, টি২[অকার্যকর বহিঃসংযোগ], এবং যোটা[অকার্যকর বহিঃসংযোগ]

সব অপারেটর সাশ্রয়ী সিম কার্ড এবং ডেটা প্ল্যান অফার করে, যা আন্তর্জাতিক রোমিং চার্জের চেয়ে অনেক কম খরচের। মেগাফন-এর কভারেজ সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচিত, আর বীলাইন সবচেয়ে সস্তা। এমটিএস অন্যান্যদের মতো এলাকা অনুযায়ী চার্জ পরিবর্তন করে না। রাশিয়ায় মোবাইল ডেটা অত্যন্ত সস্তা এবং দেশে সর্বত্র সীমাহীন প্যাকেজ কেনা যায়।

দোকান থেকে সিম কার্ড কিনলে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন এবং কাগজপত্র সম্পন্ন করতে প্রায় ৫ মিনিট সময় লাগে। যদি আপনি রাশিয়ান ভাষা না জানেন, তবে ইংরেজি বলতে পারা কাউকে সাহায্যের জন্য খুঁজতে হবে। বিকল্পভাবে, মেট্রো স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় কিয়স্ক থেকেও সিম কার্ড নেওয়া যায়।

মোবাইল কল ল্যান্ডলাইন কলের তুলনায় বেশি খরচ হয়, বিশেষ করে একই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে। ইনকামিং কল সবসময় ফ্রি। আপনার সিমে ব্যালান্স যোগ করা যায় কোম্পানির দোকান, স্বয়ংক্রিয় কিয়স্ক বা অনলাইনের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক কলের জন্য প্রিপেইড কার্ড কেনা যেতে পারে, তবে ভাইবার-এর মতো অনলাইন সেবা প্রায়শই আরও সাশ্রয়ী।

ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ডেটা নেটওয়ার্কে সংযোগ করতে চাইলে ইউএসবি-মোডেমের জন্যও সস্তা সিম কার্ড পাওয়া যায়।

উপকারী স্মার্টফোন অ্যাপস

[সম্পাদনা]
মানচিত্র
[সম্পাদনা]
  • ইয়ান্ডেক্স.ম্যাপস (ইয়ান্ডেক্স.কার্টি): রাশিয়ার গুগল হিসেবে পরিচিত ইয়ান্ডেক্সের মানচিত্র অ্যাপ। এটি রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মানচিত্র। সার্চ ফাংশন, রুটিং, ট্রাফিক এবং পার্কিং তথ্য দেয়। শহরে বাস, মারশরুতকি ইত্যাদির অবস্থান এবং রিয়েল টাইম রুট দেখায়, যা নেভিগেশনে খুব সহায়ক। ইন্টারফেস রাশিয়ান, ইংরেজি, ইউক্রেনিয়ান এবং তুর্কি ভাষায় উপলব্ধ। যারা ইংরেজি জানেন না, তাদের ফোনে ইংরেজি ভাষা যুক্ত করতে হবে, নাহলে ইন্টারফেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাশিয়ান হবে।
  • ২জিআইএস - আরেকটি রাশিয়ান মানচিত্র প্রদানকারী, কিছু অঞ্চলে এটি ইয়ান্ডেক্স মানচিত্রের চেয়ে আরও জনপ্রিয়।
  • অর্গানিক ম্যাপস এবং ওএসএমএ্যান্ড - অফলাইন মানচিত্রের জন্য পরিচিত, যা ওপেনস্ট্রিপম্যাপ-এর ডেটা ব্যবহার করে, বিশেষ করে দূরদূরান্তের ভ্রমণে কাজে লাগে।
পরিবহন
[সম্পাদনা]
  • আরজেডএইচডি প্যাসেঞ্জারস (রাশিয়ান রেলওয়ে যাত্রী): রাশিয়ান রেলওয়ের অফিসিয়াল অ্যাপ। দীর্ঘ দূরত্বের টিকিট কেনা যায়। সাবার্বান টিকিট স্টেশন থেকে কিনতে হয়, কারণ অ্যাপ-এ বিদেশী পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয় (অক্টোবর ২০১৯ অনুযায়ী)। কোনো ট্রেন সংযোগ খুঁজে না পেলে, যাত্রা ও গন্তব্য সাইরিলিক অক্ষরে লিখে চেষ্টা করুন।
  • ইয়ান্ডেক্স.গো - রাশিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাক্সি অ্যাপ, দেশের বেশিরভাগ শহরে কার্যকর।
খাবারের ডেলিভারি
[সম্পাদনা]
  • ইয়ান্ডেক্স ফুড (ইয়ান্ডেক্স এদা) - জনপ্রিয় অ্যাপ, বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও দোকান থেকে খাবার অর্ডার করতে দেয়।
  • সামোকাট - দ্রুত ডেলিভারির জন্য বিশেষভাবে ফোকাস করা অ্যাপ, যা ১৫ মিনিটের মধ্যে খাবার পৌঁছে দেয়।
ট্রাভেল গাইড
[সম্পাদনা]
  • অফলাইন রিডার্স যেমন কিউইক্স - উইকিভয়েজ ডাউনলোড করে অফলাইনে ব্যবহার করা যায়।
  • ইজি.ট্রাভেল - কিছু রাশিয়ান মিউজিয়াম ও প্রতিষ্ঠান এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনামূল্যে অডিও গাইড প্রদান করে।
মেসেজিং
[সম্পাদনা]
  • টেলিগ্রাম - বর্তমানে রাশিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ।
  • হোয়াটসঅ্যাপ - বিশেষ করে বয়স্ক প্রজন্মের মধ্যে প্রচলিত।
  • ভিকে - রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানাধীন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, পূর্বে খুব জনপ্রিয় ছিল, বর্তমানে ব্যবহার কম।
  • ইন্সটাগ্রাম - যদিও ইন্সটাগ্রাম এবং অন্যান্য মেটা সেবা রাশিয়ায় ব্লক, তবুও অনেক তরুণের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন

This TYPE রাশিয়া has রূপরেখা অবস্থা TEXT1 TEXT2

{{#assessment:দেশ|রূপরেখা}}