বিষয়বস্তুতে চলুন

লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণকারী ভ্রমণ

উইকিভ্রমণ থেকে

ওজন কমানো, ডায়াবেটিস (মধুমেহ রোগ) , কোলেস্টেরল, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অথবা হৃদরোগ, স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণ প্রতিহত করার জন্য অনেকেই "লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েট" (কম শর্করাযুক্ত খাবার) গ্রহণ করেন । ভ্রমণকালে, মূলত যখন আপনি রেস্টুরেন্টের খাবারের উপর নির্ভরশীল বা কোনও ব্যক্তির গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেছেন যিনি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করবেন না ; তখন এইধরনের লো-কার্ব ডায়েট মেনে চলা অসুবিধাজনক হলেও অসম্ভব নয়। এই নিবন্ধটি আপনাকে বেড়ানোর সময়ও এইধরনের ডায়েট বজায় রাখার উপায় সম্বন্ধে কিছু ধারণা দেবে যাতে আপনি ডায়েটে থেকেও বেড়ানোর আনন্দ নিতে পারেন।

পরিকল্পনা

প্রথমে জানতে হবে লো-কার্ব ডায়েটে কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না। প্রধান যে খাদ্য ও পানীয়গুলি লো-কার্ব ডায়েটে থাকবে না তা হল - দানাশস্য, আলু, অন্যান্য শর্করাজাতীয় মূল ও কন্দ, বিভিন্ন ফল, প্রায় সমস্ত ধরনের ফলের রস, মিষ্টি সোডা (নরম পানীয়) এবং মদ বা সুরা। কিছুক্ষেত্রে লো-কার্ব ডায়েট ফাইবার সমৃদ্ধ (আঁশযুক্ত) খাদ্যের উপর বিশেষ ভাবে জোর দেয় যেমন - পালং শাক ও ব্রকলি (সবুজ ফুলকপি)। আপনি যদি বিমানে সফর করেন তবে আপনার বিমান সংস্থাকে বিশেষ ধরনের খাদ্য পরিষেবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। কিছু কিছু বিমান সংস্থা লো-কার্ব মিল/থালি প্রদান করে, বেশিরভাগ বিমান সংস্থাই ডায়াবেটিক মিলের ব্যবস্থা করে দেয়। ডায়াবেটিক মিলে পরিশোধিত শর্করা ও ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় খাদ্য কম পরিমানে থাকে। যদিও এই ধরনের মিলটি হুবহু আপনি যেমনটি চাইছেন তেমনটি নয় তবুও এটি অন্যান্যদের জন্য পরিবেশিত গরম করা পাস্তার চেয়ে সাস্থ্যকর। সল্প সময়ের বিমানযাত্রায় আপনি আপনার নিজস্ব জলখাবার বা স্ন্যাক্স নিয়ে যেতে পারেন, যেমন - বাদাম, চিজ, সহজেই খাওয়া যায় এমন সবজি যথা চেরি টমেটো, কুচানো শসা, ক্যাপসিকাম বা প্রোটিন বার। আপনি যদি আগে থেকেই লো-কার্ব ডায়েট মেনে চলেন তবে তো আপনি জানেন যে কোন কোন খাবার আপনার খাদ্য তালিকাভুক্ত হবে। কাজেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে জেনে নিন আপনি কি কি ধরনের খাবারদাবারের সম্মুখীন হতে চলেছেন এবং সেগুলি আপনার জন্য সঠিক কিনা। কোনও বিশেষ খাদ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার জন্য ভরসাযোগ্য ওয়েবসাইটের সাহায্য নিন; লো-কার্ব ডায়েট, কিটো ডায়েট বা ডায়াবেটিক ডায়েট সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন। যেখানেই ইন্টারনেট সংযোগ পাবেন খাবারের নাম উল্লেখ করে শর্করার মাত্রা অনুসন্ধান করুন। (যথা - কিটোজেনিক ডায়েটে সাধারণত 30 গ্রাম আঁশবিহীন শর্করার অনুমোদন থাকে, ফলে আপনি সেকথা মাথায় রেখে খাবারের শর্করার মাত্রা নির্ণয় করতে পারেন)। তবে যদি আপনি এমন জায়গায় বেড়াতে যান যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ ভালো নয় তবে আপনাকে আগে থেকে বিভিন্ন খাবারের (যেগুলি আপনি ঐ জায়গায় পেতে পারেন) শর্করা মাত্রার একটি ছাপানো তালিকা সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

দ্বন্দ্ব ও আনন্দ

লো-কার্ব ডায়েট যাঁরা করেন তাদের মূল সমস্যা অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন ভাত, রুটি, নুডলস এইসব খাবারের ব্যাপক ও সংস্কৃতিগত উপস্থিতি। ভাত বা রুটি এতটাই সর্বস্বীকৃত যে সেগুলোকে বর্জন করা খুবই মুশকিল। আপনি যদি বলেন যে আপনি ডাক্তারের পরামর্শে স্বাস্থ্যের কারণে লো-কার্ব ডায়েট খাচ্ছেন তবে সবাই আপনাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখবে। আপনি বরং উচ্চ-শর্করাযুক্ত খাবার খুব কম পরিমাণে খেতে পারেন। সামান্য পরিমাণ রুটি হয়ত আপনার অতটাও ক্ষতিসাধন করবে না।তবে আপনাকে পরিমাপের উপর দৃষ্টি রাখতে হবে। কিন্তু আপনি যদি এমন কারুর আতিথ্য গ্রহণ করেন যিনি শুধুই উচ্চ-শর্করাযুক্ত খাবারই পরিবেশন করেছেন, তখন? আপনাকে ভাবতে হবে যে এটি কি আপনাকে সত্যিই অসুস্থ করে তুলবে? যদি শুধু ওজন কমানোই উদ্দেশ্য হয় তবে জেনে রাখা ভাল যে একবারের জন্য উচ্চ-শর্করাযুক্ত খাবার খেলে আপনার তেমন ক্ষতি হবে না, বরং তা যদি আপনাকে সামাজিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে তবে তা গ্রহণ করা যেতে পারে (যখন আর কোনো উপায়ান্তর নেই)।

অপর পক্ষে দেখা যায় অনেক লো-কার্ব ডায়েটারই যখন মিষ্টান্ন বা রুটিজাতীয় খাবার খেতে শুরু করেন তখন তার মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন না। ভেগান হলে আপনি যথেচ্ছ পরিমানে চিজ জাতীয় খাবার খেতে পারেন আর যদি নিরামিষাশী হন তবে তো বিভিন্ন ধরনের মাংস খেতেই পারেন যদি না তাতে ময়দা, কর্ণস্টার্চ, পাঁউরুটি বা বিস্কুটের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। বেশ কিছু ফল আছে যা আপনি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন তবে পরিমাণের ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে - একটি মধ্যম আকারের পিচফলে 13 গ্রাম শর্করা থাকে, ফলতঃ আপনি যদি কঠোর ভাবে কিটো ডায়েট মেনে চলেন সেক্ষেত্রে ঐ একটি পিচফল আপনাকে কিটোসিস থেকে অব্যাহতি দিতে অক্ষম। বেরিজাতীয় ফল সাধারণত লো-কার্ব হয় তা সে যতই মিষ্টি হোক না কেন। তাই ফুল-ফ্যাট ইয়োগার্টে ব্লু-বেরি বা স্ট্র-বেরি যথেচ্ছ পরিমাণে দিয়ে খাওয়া বিধিসম্মত। আশ্চর্যজনক এই যে বীটও কিন্তু অল্প পরিমানে খাওয়া যেতেই পারে যেহেতু 1কাপ বীট থেকে মাত্র 9 গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়।কাজেই স্যালাডের সাথে কয়েকটুকরো বীট খেলে এমন কিছু সমস্যা হবে না। অনেকের মতে বিয়ার বা ককটেল ছাড়া (যেহেতু তাতে কিছু মিষ্টান্ন যুক্ত করা থাকে) অন্যান্য সুরা সামান্য পরিমানে লো-কার্ব ডায়েটে খাওয়া যেতেই পারে - যদিও এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে।