সিউল হলো দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর পশ্চিম এশিয়ার অত্যতম সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। সিউলে রয়েছে প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ, রয়েছে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির, অনুসরণীয় যুব সংস্কৃতি, উচ্চচাপের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আশ্চর্য স্থাপত্য। সিউল হলো সম্পূর্ণ বৈপরীত্য, দ্বন্দ্ব এবং প্যারাডক্সে ভরা একটি শহর।
জানুন
[সম্পাদনা]সিউল হলো দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর এবং দেশটির অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এই শহরে এক কোটিরও অধিক লোক বাস করে এবং আশেপাশের শহর ও শহরতলীর গণনায় ধরলে সে সংখ্যা হয় প্রায় দ্বিগুণ। বৃহত্তর টোকিওর পরে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নগরসমষ্টি বলে বিবেচিত হয়।
চীন, জাপান ও পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশের পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের গন্তব্য হলো সিউল। সিউলে তাই স্থানী কোরীয় ভাষী লোকের পাশাপাশি জাপানী, ক্যান্টোনিজ বা ম্যান্ডারিন ভাষী লোকেদের দেখা যায়। যেসব এলাকায় পর্যটকগণ বেশি ভ্রমণ করে সেসব এলাকাতে দোকানপাট বা রাস্তায় নামফলক বা সাইনবোর্ডে কোরীয় ভাষার পাশাপাশি জাপানী, চীনা ও ইংরেজি ভাষাও লেখা থাকে। বর্তমানে কোরিয়ান পপ কালচারের জনপ্রিয়তার বদৌলতে পশ্চিমা দেশগুলো পর্যটকদের কাছেও সিউল একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
সিউলে বেড়াতে গেলে কেউ নিরাশ হয় না। সিউল বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে অবস্থিত। একজন পর্যটক চাইলে কয়েকদিনের মাঝে সিউলের প্রধান প্রধান পর্যটন স্থান ঘুরে ফেলতে পারে। আবার কেউ চাইলে সিউলের আশেপাশের এলাকাসহ সব এলাকা বিস্তারিতভাবে ঘুরে দেখতে দেখতে মাস কাটিয়ে দিতে পারে।
গত ষাট বছর যাবৎ ব্যাপক উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে যাওয়া একটি দেশের রাজধানী হওয়ায় সিউলে দ্রুত গতিতে প্রতিনিয়ত নানা পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। সিউলের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, অধিবাসীদের কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া, হাজার হাজার উঁচু ভবন ইত্যাদি দেখলেই সিউলের তা বোঝা যায়।
এতকিছুর মাঝে কেউ এটা ভুলে যেতেই পারে যে সিউলের ইতিহাস সেই প্রাচীন কালে কোরীয় সাম্রাজ্য থেকে শুরু হয়েছে। ১৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলে মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হিসেবে সিউলের যাত্রা শুরু হয় ১৪শ শতাব্দী হতে। ১৩৯২ হতে ১৯১০ সাল পর্যন্ত হেনসেওন নাম নিয়ে এই অঞ্চল জোসেওন রাজবংশের রাজধানী ছিল। সিউলের সবচেয়ে পরিচিত ল্যান্ডমার্কগুলো জোসেওন রাজবংশের সময়েই প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানিরা আত্মসমর্পণের পরে এই শহরের নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম তথা সিউল রাখা হয়। ১৯৪৮ সালে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী।
কোরিয়ার বেশিরভাগ অবকাঠামো ও পরিষেবা, যেমন: ভবন, স্টেডিয়াম, যাতায়াত ব্যবস্থা ইতাদি, বেশ আধুনিক এবং পরিচ্ছন্ন।
দিকনির্দেশ
[সম্পাদনা]৬০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এবং ১.৫ কোটি মানুষের শহর সিউল বেশ পরিকল্পিতভাবে সজ্জিত। এটি প্রচীন ইতিহাসের উপরে গড়ে তোলা এক নতুন আধুনিক শহর। শহরটি দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এটি পীত সাগর হতে আনুমানিক ৪৫ কি.মি. পশ্চিমে এবং কোরীয় বেসামরিকিকৃত অঞ্চল হতে ৬০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে চলা হান নদী শহরটিকে দুভাগে বিভক্ত করেছে।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]সিউল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জলবায়ু চার্ট (ব্যাখ্যা) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
সিউল উপক্রান্তীয় এবং আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। নভেম্বর থেকে এপ্রিল অধিক মহাদেশীয় হয়ে থাকে এবং অধিক উপক্রান্তীয় হয়। জুন এবং জুলাই মাসে বর্ষা হয় এবং শীতকালে গড়ে ২৮ দিন তুষারপাত হয়।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]বিমানে করে
[সম্পাদনা]সিউলে (সকল বিমানবন্দরের জন্য SEL আইএটিএ) দুটি বিমানবন্দর রয়েছে। ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাধারণত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে ব্যবহার হয় ও গিম্পো বিমানবন্দর সাধারণত দেশটির অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলে ব্যবহার হয়। তবে এখানে চীন, জাপান ও তাইওয়ানের কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চলাচল করে।
ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
[সম্পাদনা]অধিকাংশ পর্যটক সিউলের পাশের শহর ইনচেওনে থাকা 1 ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ICN আইএটিএ) দিয়ে সিউলে যাতায়াত করে। এ'রেক্স রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা এই বিমানবন্দর হতে সিউল দিয়ে গিম্পো বিমানবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পথে দুই ধরণের রেল চলে: এক্সপ্রেস পরিষেবা দিয়ে সিউল যেতে ৪৩ মিনিট সময় লাগে ও ₩৯০০০ খরচ হয় (ওয়াইফাই উপলব্ধ) এবং কমিউটার পরিষেবা দিয়ে সিউল যেতে সময় লাগে ৫৩ মিনিট ও খরচ হয় ₩৩৭০০। এক্সপ্রেস ট্রেম ও কমিউটার ট্রেন ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে রওনা দেয় এবং তাদের টিকিট কাউন্টারও ভিন্ন। একই দিনে যাতায়াত করলে এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটে ছাড় পাওয়া যায় এবং ১৫ দিনের মধ্যে ফিরতি টিকেট কিনলেও টিকিটের দামে ছাড় পাওয়া যায়।
তবে যদি আপনার কাছে অনেক ব্যাগ ও জিনিসপত্র থাকে এবং আপনি যদি সিউলের দক্ষিণদিকে যেতে চান তাহলে বিমানবন্দরের বাস নেওয়াই শ্রেয়। সরাসরি সিউলে যেতে সাধারণ ট্যাক্সির ভাড়া ₩৫০,০০০।
গিম্পো বিমানবন্দর
[সম্পাদনা]2 গিম্পো বিমানবন্দর (GMP আইএটিএ) বেশ পুরাতন বিমানবন্দর এবং সিউলের কাছেই অবস্থিত। এ'রেক্স রেলপথে গিম্পো বিমানবন্দর থেকে সহজেই সিউল ও ইনচেওন বিমানবন্দরে যাওয়া যায়।