উইকিভ্রমণ থেকে

হিন্দুধর্ম হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মইসলামের পর বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ধর্ম এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অত্যন্ত প্রভাবশালী।

দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের দ্বারা হিন্দুধর্ম বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এটি অন্যান্য ধর্মের মতো ধর্মান্তরণে খুব বিশ্বাসী নয়, তবে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) মতো সংগঠন ১৯৬০-এর দশক থেকে পাশ্চাত্যে হিন্দুধর্ম নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

তাদের চমৎকার স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক মানের জন্য বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

অনুধাবন[সম্পাদনা]

আহিল্য ঘাট, বারাণসী

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

হিন্দুধর্ম, যা সনাতন ধর্ম নামেও পরিচিত, হচ্ছে অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক পরম্পরা। এর কোনো প্রতিষ্ঠাতা, কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা একক ধর্মগ্রন্থ নেই, যদিও বেশিরভাগ হিন্দু বিভিন্ন বেদ (আক্ষরিক অর্থ "জ্ঞান") গ্রন্থকে সবচেয়ে পবিত্র ও প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে। একে অনেকসময় কেবল ধর্ম নয়, জীবনধারণের এক পথ হিসেবে অভিহিত করা হয়। হিন্দুধর্মের শুরু বেদের মতোই পুরনো, এবং এর সবচেয়ে পুরনো নিদর্শন প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০-এ পাওয়া যায়, এবং এর কিছু অংশ খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ থেকে সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া যায়। বেশিরভাগ পণ্ডিতদের বিশ্বাস, হিন্দুধর্মের বৈদিক পুরাণ আদতে প্রাক-ইন্দো-ইউরেপীয় পুরাণ থেকে উদ্ভূত, সুতরাং এর সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন প্রাক-খ্রিস্টান পুরাণের (গ্রিক, রোমান, কেল্টিক, স্লাভীয়, জার্মানীয়) সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। বেদ ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ, যেমন উপনিষদপুরাণ, এবং মহাভারতরামায়ণ মহাকাব্য, প্রাচীন ও পবিত্র সংস্কৃত ভাষায় রচিত।

দেবদেবী[সম্পাদনা]

হিন্দুধর্মে বিভিন্ন দেবদেবীদের মূর্তি ও চিত্রের আকারে সঙ্গীত, নৃত্য ও কাব্যের সঙ্গে পালন করা হয়। হিন্দুরা জন্ম, মৃত্য ও পুনর্জন্মের জীবনচক্রে বিশ্বাসী, যা হিন্দুদের ত্রয়ী দেবতা ব্রহ্মা (সৃষ্টিকর্তা), বিষ্ণু (সংরক্ষণকারী) ও শিবের (বিনাশকারী) সঙ্গে সম্পর্কিত। হিন্দু দেবদেবী বিভিন্ন অবতারের আকারে মর্ত্যে আসেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হচ্ছে রামকৃষ্ণ, বিষ্ণুর সবচেয়ে প্রিয় অবতার। অবতারে এই বিশ্বাসের দরুন হিন্দুরা অন্যান্য ধর্মের উপাদান গ্রহণ করতে পারেন, যেমন গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে গ্রহণ করা। হিন্দুদের এটাও বিশ্বাস, বিশ্ব যখন সম্পূর্ণভাবে শত্রুতা ও অরাজকতায় ভরে যাবে, তখন বিষ্ণু পুনরায় নতুন অবতারে শ্বেত অশ্বে চেপে এক জ্বলন্ত তরবারি নিয়ে মর্ত্যে অবতরণ করবেন, যা কল্কি অবতার নামে পরিচিত।

বেশিরভাগ হিন্দু দেবতাদের স্ত্রী বর্তমান, যেমন সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী, লক্ষ্মী বিষ্ণুর স্ত্রী এবং পার্বতী শিবের স্ত্রী। এই দেবীরাও অবতারে মর্ত্যে প্রবেশ করতে পারেন, সাধারণত তাঁদের স্বামীর অবতারের স্ত্রী হিসেবে। অন্যান্য পূজনীয় দেবতা হলেন ইন্দ্র (বজ্র-বিদ্যুতের দেবতা, দেবতাদের রাজা), অগ্নিগণেশ (হস্তীর মুখবিশিষ্ট দেবতা ও শিবের পুত্র)। কিছু হিন্দুদের বিশ্বাস, সমস্ত দেবদেবী আদতে এক সামগ্রিক একতার বহিঃপ্রকাশ, এবং তাঁরা একেশ্বরবাদী।

পবিত্র স্থান ও জীব[সম্পাদনা]

হরিদ্বারের একটি মন্দিরে বানর দেবতা হনুমানের প্রতিমা।

বিভিন্ন জলরাশি হিন্দুদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত, এর মধ্যে ভারতের গঙ্গা নদী সবচেয়ে পবিত্র এবং নিজেই এক দেবী হিসেবে বিবেচিত। গঙ্গায় স্নান করা, অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করা, এমনকি কেবল গঙ্গার কাছে থাকা পবিত্র হিসেবে বিবেচিত।

বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতও হিন্দুদের কাছে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে যায়। যেমন: তিব্বতের কৈলাস পর্বত, বালি দ্বীপের গুনুং আগুং ইত্যাদি।

হিন্দুদের কাছে গোরুদের পবিত্রতা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন রাস্তায় গোরু ঘুরে বেড়াতে পারে, এবং বেশিরভাগ হিন্দুরা গোহত্যায় বিশ্বাসী নন। বরং তাঁরা গোরুর দুধ ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত পদার্থ তৈরি করেন, যেমন ঘি, দই, পনির, মাখন এবং বিভিন্নরকম মিষ্টান্ন। কিছু মৌলবাদী হিন্দুরা এমনকি গোরুর জীবনকে তাঁদের নিজের পরিবারের সদস্যদের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। নেপালে গৃহস্থ গোরুর মাংস নিষিদ্ধ হলেও জলহস্তীর মাংস নেপালি রন্ধনশৈলীর অংশ।

বাঁদর বা বানরদের অনেকসময় পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়, এবং এরা রামায়ণ মহাকাব্যের বানর দেবতা হনুমানের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং কোনো হনুমান মন্দিরে যাওয়ার সময় একাধিক বাঁদর মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করলে এবং আপনার খাবার চুরি করার মতলব করলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন না। এছাড়া হাতিদেরও অনেকসময় পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়, এবং এরা ভগবান গণেশ কিংবা দেবরাজ ইন্দ্রের বহন ঐরাবতের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঈগলদেরও পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেহেতু তারা বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। জনপ্রিয় দেবী দুর্গার বাহন হচ্ছে বাঘ বা সিংহ, এবং এই গুরুত্বের জন্য বিশেষ করে বেঙ্গল টাইগারকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জাতীয় প্রাণী বলে তকমা দেওয়া হয়। গোখরো আরেকটি পবিত্র প্রাণী যেহেতু এটি শিবের গলায় জড়ানো সর্পরাজ বাসুকির সঙ্গে সম্পর্কিত।

ভাষা[সম্পাদনা]

সংস্কৃত হচ্ছে হিন্দুধর্মের প্রাথমিক ধর্মগ্রন্থ বেদ এবং মহাভারত ও রামায়ণের ভাষা। এটি কারুর মাতৃভাষা না হলেও বহু মন্দিরে দেবভাষা হিসেবে এটি বহুল প্রচলিত, এবং বহু সংস্কৃত শব্দ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভাষায় পাওয়া যায়।

দেবভাষা ছাড়াও হিন্দু মন্দিরে ঐ অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরে ইংরেজি ভাষায় নির্দেশিকা থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে মন্দিরে ব্যবহৃত ভাষা অনেকসময় সম্প্রদায়-ভিত্তিক। যেমন পাশ্চাত্যে উত্তর ভারতীয় মন্দিরে হিন্দি ভাষা ব্যবহৃত হয় এবং দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরে তামিল ভাষা ব্যবহৃত হয়।

গন্তব্য[সম্পাদনা]

মানচিত্র
বিশ্বজুড়ে হিন্দু গন্তব্যসমূহ

ভারত[সম্পাদনা]

গাঙ্গেয় সমভূমি[সম্পাদনা]

ত্রিবেণী সঙ্গম, প্রয়াগরাজ
  • 1 অযোধ্যা — রামায়ণের কিংবদন্তি নায়ক রামের জন্মভূমি।
  • 2 উজ্জয়িনী — হিন্দুধর্মের পবিত্র সপ্তপুরীর মধ্যে অন্যতম। প্রতি ১২ বছর অন্তর চারটি জায়গার মধ্যে একটিতে কুম্ভ মেলা আয়োজিত হয়, যার মধ্যে উজ্জয়িনী অন্যতম। এছাড়া এখানে অবস্থিত মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির ভারতের ১২টি পবিত্র শিব মন্দিরের একটি। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যায় উজ্জয়িনীকে মূল মধ্যরেখা হিসেবে ধরা হয়েছিল।
  • 3 দিল্লি — এখানে অবস্থিত অক্ষরধাম মন্দিরের জন্য দিল্লি উত্তর ভারতের অন্যতম হিন্দু তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিগণ এই মন্দিরে গিয়েছিলেন।
  • 4 প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ) — গঙ্গা, যমুনা ও কাল্পনিক সরস্বতী নদীর ত্রিবেণী সঙ্গমে অবস্থিত এক গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থান। প্রতি ১২ বছর অন্তর চারটি জায়গার মধ্যে একটিতে কুম্ভ মেলা আয়োজিত হয়, যার মধ্যে প্রয়াগরাজ অন্যতম।
  • 5 বারাণসী (কাশী, বেনারস) — গঙ্গাপারে হিন্দুধর্মের সবচেয়ে পবিত্র শহর, এবং বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জীবিত শহরের মধ্যে অন্যতম। বারাণসীতে বিভিন্ন ঘাট বর্তমান, যার মধ্যে দশাশ্বমেধ ঘাট উল্লেখযোগ্য। এই ঘাটে ব্রহ্মা তাঁর প্রথম যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
  • 6 মথুরা — কৃষ্ণের জন্মভূমি।

দক্ষিণ ভারত[সম্পাদনা]

শোর টেম্পল, মহাবলীপুরম
  • 7 তাঞ্জাবুর (তাঞ্জোর) — একদা চোল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, এবং সেই সময়কার বিভিন্ন চমৎকার মন্দির বর্তমান।
  • 8 তিরুপতি — বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের শহর, যাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ধর্মস্থান হিসেবে অভিহিত করা হয়।
  • 9 মহাবলীপুরম — পল্লব আমলের বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির এখানে বর্তমান।
  • 10 মাদুরাই — মীনাক্ষী মন্দিরের শহর। মীনাক্ষীকে শিবের স্ত্রী পার্বতীর অবতার হিসেবে স্বীকার করা হয়।
  • 11 রামেশ্বরমশ্রীলঙ্কা থেকে ভারতের নিকটতম বিন্দু। এখান থেকে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিস্তৃত এক চুনাপাথরের দ্বীপপুঞ্জ শুরু হয়, যাকে "আদম সেতু" বা "রাম সেতু" বলে অভিহিত করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, লঙ্কায় গিয়ে সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য রাম ও তাঁর বানর সেনা এই সেতুটি তৈরি করেছিলেন।

পশ্চিম ভারত[সম্পাদনা]

  • 12 নাশিক (নাসিক) — গোদাবরী নদীপারে একটি হিন্দু তীর্থস্থান। প্রতি ১২ বছর অন্তর চারটি জায়গার মধ্যে একটিতে কুম্ভ মেলা আয়োজিত হয়, যার মধ্যে নাশিক অন্যতম। এছাড়া এর নিকটে অবস্থিত ত্রিম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির ভারতের ১২টি পবিত্র শিব মন্দিরের একটি।

পূর্ব ভারত[সম্পাদনা]

জগন্নাথ মন্দির, পুরী
  • 13 কলকাতাপশ্চিমবঙ্গের রাজধানী, দক্ষিণেশ্বর ও কালীঘাট কালীবাড়ির শহর।
  • 14 নবদ্বীপমায়াপুর — নবদ্বীপ হচ্ছে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভূমি, যাঁকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করা হয়। মায়াপুর হচ্ছে ইসকনের সদরদপ্তর।
  • 15 পুরীকোণার্ক — পুরী হচ্ছে জগন্নাথের শহর, যা বিষ্ণুর এক রূপ। কোণার্কের সূর্য মন্দির বিশ্বের সবচেয়ে বড় সূর্য মন্দিরের মধ্যে অন্যতম।
  • 16 ভুবনেশ্বর — মন্দিরের শহর ও ওড়িশার রাজধানী, আক্ষরিক অর্থ "পৃথিবীর ঈশ্বর"।

হিমালয় উত্তর[সম্পাদনা]

কাটরার নিকটে অবস্থিত বৈষ্ণো দেবী মন্দিরে বৈষ্ণো দেবীর তিনটি ভিন্ন রূপ।
  • 17 অমরনাথকাশ্মীর উপত্যকায় অবস্থিত একটি পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান।
  • 18 গঙ্গোত্রী — সর্বোচ্চ গঙ্গা মন্দির এবং গঙ্গাপারে অবস্থিত প্রথম শহর। গঙ্গার উৎপত্তি হচ্ছে গোমুখ, যা গঙ্গোত্রী হিমবাহের সীমানা এবং গঙ্গোত্রী শহর থেকে ১৯ কিমি দূরে অবস্থিত।
  • 19 হরিদ্বারঋষিকেশ — হরিদ্বার হর কি পৌরি ঘাটে সংঘটিত গঙ্গারতি ও কুম্ভ মেলার জন্য বিখ্যাত। যোগনগরী ঋষিকেশ যোগব্যায়ামের অন্যতম কেন্দ্র।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যত্র[সম্পাদনা]

নেপাল[সম্পাদনা]

  • 20 কাঠমান্ডু — এখানে নেপালের সবচেয়ে পবিত্র হিন্দু ধর্মস্থান পশুপতিনাথ মন্দির অবস্থিত।

পাকিস্তান[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

  • 21 ঢাকা — এখানে অবস্থিত ৮০০ বছরের পুরনো ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের "জাতীয় মন্দির" হিসেবে স্বীকৃত।

শ্রীলঙ্কা[সম্পাদনা]

রামায়ণ মহাকাব্যে "লঙ্কা" নামে শ্রীলঙ্কা দ্বীপের উল্লেখ পাওয়া যায়। কাহিনী অনুযায়ী, লঙ্কাতে রাবণের সোনায় মোড়া লঙ্কাপুরী অবস্থিত। রাবণ রামের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে তাঁকে লঙ্কাপুরীতে আটকে রেখেছেন। এর ফলে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য রাম ও তাঁর বানর সেনা লঙ্কার দিকে অভিযান চালিয়েছেন।

ইন্দোনেশিয়া[সম্পাদনা]

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যত্র[সম্পাদনা]

আংকর বাটের প্রধান মন্দির, কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়া[সম্পাদনা]

  • 22 আংকর বাট — বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির কমপ্লেক্স।

বিশ্বের অন্যত্র[সম্পাদনা]

  • 23 কৈলাস পর্বততিব্বতের একদম পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত একটি পবিত্র পর্বত। সেখানে শিব তাঁর চিরধ্যানে মগ্ন বলে বিশ্বাস করা হয়।

দেখুন[সম্পাদনা]

অঞ্চল বা পরিবার ভেদে রঙ্গোলীর নকশা বিভিন্ন হয়। চিত্রে গোয়াতে দীপাবলির উপলক্ষে একটি রঙ্গোলী নকশা দেখানো হয়েছে।

শিল্পকলা[সম্পাদনা]

হিন্দু দেবদেবী ও মহাকাব্যের দৃশ্যাবলীর ভাস্কর্য ও চিত্র বিভিন্ন মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও হিন্দু-অধ্যুষিত বাড়িঘরে পাওয়া যায়। বিভিন্নরকম দৃশ্যকলা হিন্দু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।

দীপাবলি ও ওনামের মতো হিন্দু উৎসবে রঙ্গোলী নামক একধরনের হিন্দু উৎসব প্রচলিত, যেখানে রঙিন পাউডার, ফুলের পাপড়ি ও নুড়ি দিয়ে মেঝেতে বিভিন্ন জ্যামিতিক অলঙ্কার করা হয়। রঙ্গোলী সাধারণত ঘর পরিষ্কার করার পর বাড়ির প্রবেশদ্বারে তৈরি করা হয় এবং এর ফলে পরিবারে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি আসবে বলে বিশ্বাস করা হয়।

করুন[সম্পাদনা]

উৎসব[সম্পাদনা]

দীপাবলির সময় জ্বালানো তুবরির একটি সুন্দর দৃশ্য।
হোলির সময় রং বিক্রি।

বিশ্বজুড়ে একাধিক হিন্দু উৎসব পালিত হয়, যার মধ্যে কিছু উৎসব কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা কেবল কোনো নির্দিষ্ট হিন্দু দেবতার ভক্তদের মধ্যে পালিত হয়। কিছু হিন্দু-অধ্যুষিত অঞ্চলে অন্যান্য ধর্মের প্রধান উৎসবের সময় (বড়দিন, ঈদুল ফিতর) ছুটির দিন থাকে এবং এদের পালন না করলেও অন্তত সম্মান করা হয়।

হিন্দুধর্মের বৈচিত্র্যের জন্য প্রত্যেক ভক্ত পালন করে এমন খুব কম উৎসব আছে। তবে এমন কিছু উৎসব আছে যাদের প্রায় সমস্ত হিন্দু পালন করে কিংবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকার করে।

  • দীপাবলি হিন্দুধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। প্রত্যেক বছর অক্টোবর মাসের শেষে কিংবা নভেম্বর মাসের শুরুতে কার্তিক মাসের অমাবস্যার সময় বিশ্বজুড়ে হিন্দুরা দীপাবলি পালন করেন। ঐ দিনে শিখ ও জৈন ধর্মেরও প্রধান উৎসব আছে। ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় এই উৎসব পাঁচ দিন ধরে পালিত হয়। এতে অন্ধকারের মধ্যে আলোর জয়, অজ্ঞতার মধ্যে জ্ঞানের জয় এবং অসহায়তার মধ্যে আশার জয় পালন করা হয়। এর প্রধান দেবী হচ্ছেন লক্ষ্মী, সমৃদ্ধির দেবী। বাংলায় দীপাবলির দিনে কালীপূজা পালিত হয় এবং এই সময় বিভিন্ন কালীমন্দিরে প্রচুর জনসমাগম হয়। বাড়ি ও মন্দিরের চারিদিকে একাধিক লণ্ঠন জ্বালানো হয়। দীপাবলির উপলক্ষে অনেক লোক নতুন পোশাক পড়েন। রাতে বড় শহরে রাস্তায় রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আতশবাজি জ্বালানো হয়, যা চলতি ভাষায় "কালী ফটকা" নামেও পরিচিত।
  • হোলি বা দোল উৎসব মহাবিষুবের আগের পূর্ণিমায় পালিত হয়। হোলির আগের দিনে সাধারণত গানবাজনা ও নৃত্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। হোলির দিনে লোকেরা উজ্জ্বল রং দিয়ে একে অপরকে রং করেন। এর জন্য শুকনো পাউডার করা রং, যা আবির নামে পরিচিত, এবং তরল রঙের বালতি ও পিচকিরি ব্যবহার করা হয়। ভাল কাপড়ে রং এড়ানোর জন্য অনেকসময় সাধারণ সাদা পোশাক পরা হয়। এটি কিন্তু অনেক কৌতূহল জন্ম দিলেও কিছু সম্মান দেখানো হয়। যেমন: বুদ্ধ গয়ায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা হোলির রঙে রঙিন না হয়েই ভিড়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারেন। তবে পর্যটকেরা হোলির রং এড়াতে পারবেন না, কারণ ভিড়ের মধ্যে কিছুজন লোক পর্যটকদের উপর রং লাগালে আনন্দ পান, এবং তাঁরা "হোলি হ্যা" বলে চেঁচাবেন।
  • রথযাত্রায় ভগবান জগন্নাথ ও তাঁর ভাইবোনদের রথে করে তাঁদের মূল মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে স্থানান্তর করা হয়। ওড়িশার পুরীর রথযাত্রা সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সেখানে ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়।
  • দুর্গাপূজা বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে পালিত হয়। এই সময় বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পূজা প্যান্ডেল গড়ে তোলা হয় এবং তার মধ্যে গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকেয় ও মহিষাসুর সহ দেবী দুর্গার প্রতিমা থাকে। এই সময় প্যান্ডেলে প্রচুর জনসমাগম হয় এবং মাইকে বিভিন্ন গানবাজনা চালানো হয়।
  • দশেহরার দিনে রামের হতে রাবণ বধ স্মরণ করা হয়, এবং এটি রামায়ণ মহাকাব্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সমগ্র হিন্দু বিশ্ব জুড়ে রাবণের বিশাল মূর্তি পুড়িয়ে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করা হয়। তবে এই উৎসব বাংলায় তেমন প্রচলিত নয়।

শিখুন[সম্পাদনা]

একাধিক আশ্রম, মন্দির ও অন্যান্য হিন্দু সংগঠন যোগব্যায়ামধ্যান শেখায়। বিটলস সঙ্গীতদল সহ বেশিরভাগ বিদেশিরা ভারতে এসে এইসব শিখেছিল, কিন্তু হিন্দু-অধ্যুষিত অঞ্চলের বাইরের বিভিন্ন জায়গাতেও এইসব শিক্ষা চালু রয়েছে। ধ্যানে সহায়ক হিসেবে অনেকে "ওঁ" মন্ত্র ব্যবহার করেন। সংস্কৃত ভাষায় "ওঁ" শব্দের একাধিক অর্থ আছে, যার মধ্যে বিবিধের মধ্যে ঐশ্বরিক একতা অন্যতম। যোগব্যায়ামের সূত্রপাত খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে।

কিনুন[সম্পাদনা]

শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে গীতা প্রেসের একটি দোকান।

হিন্দু তীর্থস্থানে ভ্রমণের সময় বিভিন্ন দেবদেবী এবং মহাকাব্যিক ঘটনার বিভিন্ন মূর্তি ও চিত্রের কেনাকাটা হয়। অনেকসময় বড় মন্দিরের কাছে বিভিন্ন দোকানে এইসব জিনিস বিক্রি হয়। এছাড়া দোকান থেকে পূজার সামগ্রী হিসেবে মালা, ধূপকাঠি ও প্রদীপ, এবং মন্ত্র পড়ার জন্য জপমালা কেনা হয়।

হিন্দু রচনাবলী অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে ধর্মগ্রন্থ কেনা যায়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল এবং হিন্দু জনসংখ্যা বর্তমান এমন অঞ্চলে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারতের আসল সংস্কৃত রচনা এবং বাংলাসহ আধুনিক দক্ষিণ এশীয় ভাষায় এদের অনুবাদ ও বিশ্লেষণ গ্রন্থ পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সবচেয়ে বড় প্রকাশক হচ্ছে গোরক্ষপুর ভিত্তিক গীতা প্রেস, ভারতে যার ২০টিরও বেশি শাখা বর্তমান।

আহার[সম্পাদনা]

গোরু হচ্ছে হিন্দুধর্মের এক পবিত্র প্রাণী, এবং গোহত্যা অধার্মিক হিসেবে বিবেচিত। এজন্য হিন্দুদের গোমাংস গ্রহণ নিষিদ্ধ, তবে নেপালি হিন্দুদের মধ্যে জলহস্তীর মাংস প্রচলিত। কিছু হিন্দু সম্প্রদায় এবং রক্ষণশীল ব্রাহ্মণরা নিরামিষাশী। হিন্দুধর্মে নিরামিষ ভোজনে মাংস ও ডিম থাকে না কিন্তু দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার থাকতে পারে। আসলে উচ্চ হারে দুধের গ্রহণ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উপর নির্ভরশীলতা হচ্ছে হিন্দুদের দ্বারা গোরুকে উচ্চ সম্মান দেওয়ার অন্যতম কারণ।

কিছু হিন্দু মন্দির কম দামে সুস্বাদু নিরামিষ খাবার দেয়। মন্দিরের পবিত্র খাদ্যকে "প্রসাদ" বলা হয় এবং উৎসব ও ঋতু অনুযায়ী প্রসাদ ভিন্ন হয়। সাধারণত প্রত্যেক প্রধান উৎসবের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় আহার বর্তমান।

বেশিরভাগ প্রধান বিমান সংস্থা হিন্দু নিরামিষ ও হিন্দু আমিষ ভোজনের ব্যবস্থা করে, যদিও এর জন্য সাধারণত আগে থেকে অনুরোধ করতে হয়।

পানীয়[সম্পাদনা]

রাজস্থানের জয়সলমিরে একটি ভাঙের দোকান।

উত্তর ভারত ও নেপালে হোলির সময় ভাং খাওয়া প্রচলিত। ভাং খেয়ে স্বপ্নের মতো আধ্যাত্মিক স্তরে ঢোকার আগে ভক্তরা অনেকসময় মন্ত্রোচ্চারণ করেন। তবে যেসব দেশ বা এক্তিয়ারে গাঁজা নিষিদ্ধ সেইসব দেশ বা এক্তিয়ারে ভাংও নিষিদ্ধ, যেহেতু গাঁজা ভাঙের মূল উপাদান।

কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে মদ্যপান এবং ইসকন সম্প্রদায়ের মধ্যে চা, কফি, কোকাকোলা ও অন্যান্য ক্যাফিন-যুক্ত পানীয় নিষিদ্ধ।

সম্মান করুন[সম্পাদনা]

হিন্দু মন্দিরে ঢোকার আগে জুতো খুলতে হয়। অনুমতি ছাড়া কোনো মূর্তিকে স্পর্শ করবেন না কিংবা মূর্তির উপর চড়বেন না। হিন্দু মন্দির ঘোরার সময় আচ্ছাদিত পোশাক পরাই ভাল, তবে অঞ্চল ভেদে পোশাক ভিন্ন। সাধারণত দক্ষিণ ভারতবালি দ্বীপের পোশাক উত্তর ভারতের তুলনায় উদার। পুরুষ ও মহিলাদের উন্মুক্তভাবে ভালবাসার দৃশ্য দেখানো উচিত নয়। কিছু মন্দিরে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে বসতে হয়।

বহু রক্ষণশীল হিন্দু মন্দির নিচু বর্ণের লোক ও মাসিক মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ, এবং কিছু মন্দিরে হিন্দু বাদে অন্যান্যদের প্রবেশ নিষেধ। সমস্ত মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ এমন মন্দিরও আছে।

মাথাকে দেহের সবচেয়ে পবিত্র অংশ বলে বিশ্বাস করা হয়, এবং হিন্দুদের কাছে এমনকি কোনো অচেনা বাচ্চাদের মাথা স্পর্শ করা অপমানজনক।