অ্যাডিলেড দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী। শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত। শহরটি গালফ সেন্ট ভিনসেন্টের পূর্ব উপকূলে বিদ্যমান। এটি অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম শহর, যেখানে ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। এই শহরের প্রায় সবাই অ্যাডিলেড মেট্রোপলিটন এলাকায় থাকে।
অ্যাডিলেড সমতল জায়গায় অবস্থিত। এই শহরের এক পাশে অ্যাডিলেড পাহাড়, আর অন্য পাশে গালফ সেন্ট ভিনসেন্ট রয়েছে।
অ্যাডিলেড শহরটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম পুরাতন শহর হওয়ায় শহরটি সারা বিশ্বে ব্যাপক বিখ্যাত। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে অ্যাডিলেড অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অ্যাডিলেডকে এক সময় "চার্চের শহর" বলা হতো। শহরের অনেক পুরনো ভবন এখনো সেই সময়ের স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। শহরের রাস্তা গাছ-ঘেরা আর অনেক প্রশস্ত। এটি অস্ট্রেলিয়ার অন্য শহরগুলোর চেয়ে বেশ বড় এবং খোলামেলা।
অ্যাডিলেডে নানা দেশ থেকে মানুষ এসেছে। যেহেতু তারা এখানে এসে নিজস্ব খাবার ও সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে, তাই এখানে অনেক ধরণের খাবার পাওয়া যায়। প্রতি বছরের মার্চ মাসে এই শহরে বড় বড় শিল্প উৎসব হয়। এর মধ্যে অ্যাডিলেড ফেস্টিভাল আর অ্যাডিলেড ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভাল সবচেয়ে বড়।
এই শহরে একটি বিখ্যাত ক্রিকেট মাঠ আছে, যার নাম অ্যাডিলেড ওভাল। এটি অনেক সুন্দর একটি মাঠ। শীতকালে এখানে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল খেলা হয়। এছাড়াও শহরে ট্যুর ডাউন আন্ডার সাইক্লিং প্রতিযোগিতা হয়।
অ্যাডিলেড খুব ব্যস্ত শহর নয়। এখানে উঁচু দালানও কম। শহরটি হোবার্ট বা ক্যানবেরার মতো ছোট শহর। এর শান্ত পরিবেশের জন্য একে "অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ শহর" বলা হয়।
জেলাসমূহ
[সম্পাদনা]
অভ্যন্তরীণ অঞ্চলসমূহ
[সম্পাদনা]সিটি এবং নর্থ অ্যাডিলেড অ্যাডিলেডের মূল শহর এখানে অবস্থিত। এখানে অনেক মিউজিয়াম, পার্ক আছে এবং এটিই অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশ শিল্পের জন্মস্থান। শহরটি সন্ধ্যার পর বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। নর্থ অ্যাডিলেডে বিখ্যাত সেন্ট পিটারস ক্যাথেড্রাল অবস্থিত। |
পোর্ট অ্যাডিলেড, এনফিল্ড, প্রসপেক্ট এবং আউটার হারবার এখানে অ্যাডিলেডের বন্দর পোর্ট অ্যাডিলেড অবস্থিত। এই এলাকায় অনেক জাদুঘর, খাবারের জায়গা এবং সবুজ এলাকা রয়েছে। |
ওয়েস্ট অ্যাডিলেড অ্যাডিলেডের সমুদ্রতীরবর্তী সম্প্রদায়ের বাসস্থান। পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর গ্লেনেলগ এখানে অবস্থিত। এখানে সার্ফিং সংস্কৃতি খুব জনপ্রিয়।। |
দক্ষিণ এবং পূর্ব অঞ্চল এখানে রয়েছে হেইগস চকোলেট ফ্যাক্টরি, যা অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা চকোলেট ব্র্যান্ডের কারখানা। এছাড়া এখানে পেনফোল্ডস ওয়াইনারি রয়েছে। অ্যাডিলেড হিলস নামক এক পাহাড়ি এলাকা এখান থেকে খুব কাছেই অবস্থিত। |
বহিরাগত অঞ্চলসমূহ
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড ইন্টারন্যাশনাল বার্ড স্যাংচুয়ারি ন্যাশনাল পার্ক— "উইনাইটিনাইটি পাংকারা" দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় পাখি অভয়ারণ্য হিসেবে এটি পরিচিত। |
বেলেয়ার ন্যাশনাল পার্ক এটি একটি শহুরে জাতীয় উদ্যান, যেখানে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন গভর্নরদের বাড়ি ওল্ড গভর্নমেন্ট হাউস অবস্থিত। এখানে জলপ্রপাত ও ঝোপের মধ্যে হাইকিং ট্রেইল বিদ্যমান। |
ম্যাকলারেন ভ্যালি এটি অ্যাডিলেডের একটি ওয়াইন উৎপাদন অঞ্চল। এটি বারোসা ভ্যালির মতো বিখ্যাত নয়, তবে এখানে মানসম্পন্ন ওয়াইন তৈরি হয়। |
সলিসবারি, প্লেফোর্ড এবং টি ট্রি গালি অ্যাডিলেডের উত্তরের বাহিরের উপশহর। এখানে অনেক পার্ক রয়েছে। এছাড়াও এখানে অ্যাডিলেডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শপিং মল ওয়েস্টফিল্ড টি ট্রি প্লাজা অবস্থিত। |
গাওলার এটি অ্যাডিলেডের বাইরের একটি ছোট শহর। অনেকে একে অ্যাডিলেডের অংশ বলে মনে করে, আবার কেউ কেউ আলাদা শহর মনে করে। |
জেনে নিন
[সম্পাদনা]দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সময় অঞ্চল ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি এবং তাসমানিয়ায় ব্যবহৃত অস্ট্রেলিয়ান ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইমের (AEST) থেকে ৩০ মিনিট পিছিয়ে। এটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্যবহৃত অস্ট্রেলিয়ান ওয়েস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইমের (AWST) থেকে দেড় ঘণ্টা এগিয়ে এবং সেন্ট্রাল ওয়েস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম (CWST) অনুসরণ করা ইউক্লার থেকে ৪৫ মিনিট এগিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যের মতো দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াও ডেলাইট সেভিংস টাইম (DST) পালন করে। তবে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, কুইন্সল্যান্ড এবং নর্দার্ন টেরিটরি ডেলাইট সেভিংস টাইম পালন করে না।
নিউ সাউথ ওয়েলসের শহর ব্রোকেন হিল এবং সিলভারটনও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একই সময় অঞ্চল অনুসরণ করে।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জলবায়ু চার্ট (ব্যাখ্যা) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
অ্যাডিলেড অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে শুষ্ক রাজধানী শহর। এখানে গ্রীষ্মকাল গরম এবং শুষ্ক, আর শীতকাল কিছুটা ঠাণ্ডা ও তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত।
গ্রীষ্মকালে দিনের গড় তাপমাত্রা ২৯°সে (৮৪°ফা) হলেও তাপমাত্রার তারতম্য হতে পারে এবং বছরে কয়েকটি দিন ৪০°সে (১০৪°ফা) এর ওপরে উঠতে পারে। গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত কম এবং অনিয়মিত হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২০ মিলিমিটার (০.৮ ইঞ্চি)। তবে পুরো মাসে কোনো বৃষ্টি না হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। নিয়মিত গরমের কারণে প্রায় সব পাবলিক ভবন, ইনডোর পর্যটন কেন্দ্র এবং বেশিরভাগ গণপরিবহনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে। গ্রীষ্মকালে সূর্য ৬টা থেকে বিকেল ৮:৩০ পর্যন্ত থাকে।
শীতকালে গড় তাপমাত্রা ১৫–১৬°সে (৫৯–৬১°ফা) এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ৮°সে (৪৬°ফা) থাকে। শীতকালে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয় এবং জুন মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় (গড়ে প্রায় ৮০ মিলিমিটার)। অ্যাডিলেড হিলসের উপত্যকায় ঠাণ্ডার কারণে কখনো কখনো তুষারপাত হয়, তবে শহরের অন্যান্য স্থানে তা খুবই বিরল। অ্যাডিলেডের মূল শহরে তুষারপাত হয় না, তবে মাঝে মাঝে মাউন্ট লফটির উপরিভাগে অল্প তুষার দেখা যেতে পারে। শীতকালে সূর্য সকাল ৭:১৫ থেকে বিকেল ৫:১৫ পর্যন্ত থাকে।
বসন্ত এবং শরৎকাল গ্রীষ্ম ও শীতের মধ্যবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে আবহাওয়ার পরিবর্তন আনে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত অ্যাডিলেডে নানা ধরনের আর্টস, সংগীত ও ক্রীড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, কারণ এ সময় আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে। শীতের বৃষ্টির পর বসন্তে ফুল ফোটে, যা অ্যাডিলেড ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আদিবাসী ইতিহাস
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের সমতল ভূমির প্রথম বাসিন্দা ছিল কৌরনা (Kaurna) জনগোষ্ঠী। তাদের অঞ্চল বর্তমান পোর্ট ব্রাউটন থেকে অ্যাডিলেডের উত্তর পর্যন্ত এবং দক্ষিণে ফ্লুরিয়ু উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে কেপ জার্ভিস পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কৌরনা জনগণ ছোট পরিবারিক গোষ্ঠীতে বাস করত, যাদের "ইয়ের্তা" বলা হতো। "ইয়ের্তা" শব্দটি দ্বারা কেবল পরিবারিক গোষ্ঠীকেই বোঝাত না, বরং এই শব্দটি দ্বারা তাদের জীবিকা নির্বাহের ভূমিকেও বুঝানো হয়। প্রতিটি ইয়ের্তার দায়িত্ব ছিল প্রাপ্তবয়স্ক কৌরনা জনগণের ওপর, যারা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেত এবং সেই ভূমির সম্পদ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখত।
অ্যাডিলেডের সমৃদ্ধ আদিবাসী ইতিহাস এবং জীবন্ত সংস্কৃতি টান্ডানিয়া (Tandanya) সংস্কৃতি ও ইতিহাস কেন্দ্রের মাধ্যমে জানার সুযোগ রয়েছে। এটি গ্রেনফেল স্ট্রিটে অবস্থিত এবং আদিবাসীদের মালিকানাধীন। টান্ডানিয়ায় বিনামূল্যে প্রবেশ করা যায় এবং সামান্য ফি দিয়ে ট্যুরের সুবিধা পাওয়া যায়।
ইউরোপিয়ানদের বসতি
[সম্পাদনা]উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপিয়ান অভিযাত্রী ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স এবং নিকোলাস বোডিন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের মানচিত্র তৈরি করেন। এরপর মারি নদীর পাশে একটি অভিযান হয়। এই অভিযানে উপকূলের জমি সম্পর্কে ভালো প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই সময়ে ব্রিটিশ সংস্কারকরা এমন একটি উপনিবেশ গড়তে চেয়েছিলেন যেখানে নিরপরাধ লোকজন এসে থাকতে পারবে। অন্যান্য অস্ট্রেলিয়ান উপনিবেশগুলির মতো এখানে অপরাধী প্রেরণের ভিত্তিতে বসতি স্থাপন করা হবে না।
১৮৩৪ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে একটি আইন পাস করাতে রাজি করায়। এই আইনটি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় মুক্ত জনগণের জন্য একটি নতুন উপনিবেশ তৈরি করে। ১৮৩৬ সালের ডিসেম্বরে ১০ মাসের দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা শেষে ইংল্যান্ড থেকে একটি জাহাজ বহর আসে। এরপর প্রথম গভর্নর জন হিন্দমার্শ এখনকার গ্লেনেলগ শহরতলিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রদেশের ঘোষণা দেন।
শহর গঠনের সময় কিছু মতবিরোধের পর প্রথম জরিপকারী উইলিয়াম লাইট শহরের জন্য একটি গ্রিড আকারের পরিকল্পনা তৈরি করেন। এই পরিকল্পনায় চওড়া রাস্তা, পার্কের চারপাশে শহর এবং একটি কেন্দ্রীয় স্কয়ার (ভিক্টোরিয়া স্কয়ার) ও চারটি ছোট স্কয়ার (হিন্দমার্শ, লাইট, হুইটমোর, হার্টেল) রাখা হয়। এই পরিকল্পনা এখনও কিছু পরিবর্তনসহ টিকে আছে।
খনন ও কৃষিকাজের উপর ভিত্তি করে শহরের শুরুর দিকের শিল্পগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার প্রধান রপ্তানি বাজার ছিল ইংল্যান্ড। যেহেতু এখানে আসা বসতির লোকেরা বেশ প্রগতিশীল ছিলেন, সেহেতু অ্যাডিলেডে অনেক প্রাথমিক সংস্কার হয়। এর মধ্যে ছিল গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়া, মহিলাদের ভোটাধিকার ও সংসদে দাঁড়ানোর সুযোগ এবং শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা ও আন্দোলন।
ফেডারেশন পরবর্তী সময়
[সম্পাদনা]১৯০১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশনের পর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া উৎপাদনশিল্পে মনোযোগ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রিমিয়ার থমাস প্লেফোর্ডের সরকার এই প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্লেফোর্ড বিভিন্ন কোম্পানিকে (যেমন জেনারেল মোটরস) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসার জন্য সস্তা জমি ও কম করের সুবিধা দেন। এতে গাড়ির ব্যবহার বেড়ে যায়, ফলে অ্যাডিলেডের ঘনত্ব কমে। কারণ কারখানার কর্মীরা শহরের বাইরের এলাকায় বাস করত।
দক্ষিণ ইউরোপ থেকে অনেক মানুষ অ্যাডিলেডে আসে। গ্রিকরা শহরের পশ্চিম ও দক্ষিণে এবং ইতালিয়ানরা পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে বসবাস শুরু করে। তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব এখনো আছে। শহরের অনেক দোকান ও ক্যাফেতে এই প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া, জার্মানি ও পোল্যান্ড থেকেও অনেক অভিবাসী আসে। তারা কসাইখানায় জার্মান ও পোলিশ ধাঁচের সসেজ নিয়ে আসে।
অর্থনীতি ভালোভাবে এগোলেও, অ্যাডিলেডের সামাজিক জীবন আগের মতো প্রগতিশীল থাকেনি। "হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া" নীতি অনুসারে অ্যাডিলেডে মূলত ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত লোকেরাই বসবাস করত।
বৈশ্বিক রাজধানী শহর
[সম্পাদনা]১৯৬০-এর দশকে অ্যাডিলেডের সাংস্কৃতিক জীবনে বড় পরিবর্তন আসে, যা শহরের শিল্প সংস্কৃতিকে বদলে দেয়। ১৯৩০-এর দশকের পর এই ১৯৬০-এর দশকের শেষে প্রথমবারের মতো লেবার সরকার নির্বাচিত হয়। ১৯৭০ সালে ডন ডানস্টান দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার হন। ডানস্টান একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং তিনি অ্যাডিলেডকে আধুনিক ও বৈশ্বিক এক রাজধানী শহরে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
ডানস্টানের সরকার অনেক সংস্কার আনে। তারা র্যান্ডেল স্ট্রিটকে পথচারীদের জন্য খুলে দেয়, যা র্যান্ডেল মল নামে পরিচিত হয়। এছাড়াও ডানস্টানের সরকার অনেক প্রগতিশীল আইন পাস করে।
এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইনেও পরিবর্তন আসে। ফলে ভিয়েতনামি ও চীনা অভিবাসীরা আগের অভিবাসীদের সাথে যোগ দেয় এবং উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমের শহরতলিতে বসতি গড়ে তোলে। এছাড়া অ্যাডিলেড সেন্ট্রাল মার্কেটের পাশে গুজার স্ট্রিটে বহু ভাষার চিনাটাউন এলাকা তৈরি হয়।
১৯৭০-এর দশকের শেষে এক মেয়াদে লেবার দল সরকার হারালেও ১৯৮০-এর দশকে জন ব্যানন এর নেতৃত্বে তারা আবার ক্ষমতায় আসে। ডানস্টানের তুলনায় ব্যানন আরও ব্যবসাবান্ধব ছিলেন। তিনি শহরের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেন। অ্যাডিলেডের সবচেয়ে উঁচু ভবন (যা এখন "ওয়েস্টপ্যাক হাউস" নামে পরিচিত) এবং অ্যাডিলেড কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ হয় এই সময়ে। তবে ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ব্যাংকের খারাপ অবস্থার কারণে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার স্টেট ব্যাংক ভেঙে পড়ে। তখন সরকারকে বড় অর্থ সহায়তা দিতে হয়, যা রাজ্যকে বিশাল ঋণের মধ্যে ফেলে দেয়।
পুনরুদ্ধার পর্ব
[সম্পাদনা]১৯৯০-এর দশকে লিবারেল সরকারের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার ডিন ব্রাউন, জন ওলসেন এবং রব কেরিন রাজ্যের ঋণ কমানোর জন্য সরকারি সম্পদ বিক্রি ও পরিষেবাগুলি কমানোর কাজ করেন। এই সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং ফেডারেল সরকারের শুল্ক প্রাচীর বাতিল করার ফলে অস্ট্রেলিয়ার উৎপাদনশিল্পে মন্দা আসে। এর ফলে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায় এবং অনেক লোক পূর্বাঞ্চলের বড় শহরগুলোতে (বিশেষত মেলবোর্নে) চলে যায়।
২০০২ সালে লেবার নেতা মাইক রান সরকারে ফিরে আসেন। তিনি অ্যাডিলেডের শিল্প খাতকে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করেন। শিক্ষা পরিষেবা, খননশিল্প এবং প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। রান-এর সরকার শহরের পুনর্নির্মাণে প্রচুর বিনিয়োগ করে। তারা গণপরিবহনের উন্নতি, নতুন কেন্দ্রীয় হাসপাতাল নির্মাণ এবং অ্যাডিলেড ওভালের পুনর্গঠন করে। দশ বছর পর ২০১১ সালে জে ওয়েদারিল লেবার দলের নতুন প্রিমিয়ার হন। তিনি আগের পরিকল্পনাগুলো চালিয়ে যান, তবে শহরের অভ্যন্তরীণ স্থানগুলোকে আরও সুন্দর করতে মনোযোগ দেন। কিছু নির্দিষ্ট আইন শিথিল করার মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলি করা হয়।
পর্যটন তথ্য
[সম্পাদনা]- ভিজিট অ্যাডিলেড ওয়েবসাইট
আসুন
[সম্পাদনা]বিমান যোগে
[সম্পাদনা]- 1 অ্যাডিলেড বিমানবন্দর (ADL আইএটিএ) (শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭ কিমি পশ্চিমে। এটি জনপ্রিয় পর্যটন সমুদ্র সৈকত গ্লেনেলগ এবং হেনলি বিচের কাছাকাছি)। অ্যাডিলেড বিমানবন্দর অন্যান্য বড় অস্ট্রেলিয়ান শহরগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে সংযুক্ত এবং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং নিউজিল্যান্ডে দৈনিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে অ্যাডিলেড হতে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় পৌঁছানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সিডনি, মেলবোর্ন বা পার্থের মাধ্যমে সংযোগকারী ফ্লাইটগুলি আরও সাশ্রয়ী হতে পারে।
পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ভ্রমণকারীরা সিঙ্গাপুর (সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স), কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স) এবং ডেনপাসার (জেটস্টার এয়ারওয়েজ) থেকে সরাসরি ফ্লাইটে আসতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্য বা উত্তর আফ্রিকা থেকে ভ্রমণকারীরা দুবাই থেকে এমিরেটস এবং দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের মাধ্যমে দৈনিক ফ্লাইটে আসতে পারেন। ইউরোপ থেকে ভ্রমণকারীরা এই এয়ারলাইন্সগুলোর মাধ্যমে একবারে অ্যাডিলেডে পৌঁছাতে পারেন।
নিউজিল্যান্ড থেকে ভ্রমণকারীরা অকল্যান্ড থেকে এয়ার নিউজিল্যান্ডের সরাসরি দৈনিক ফ্লাইটে আসতে পারেন। উত্তর বা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা ভ্রমণকারীরা এয়ার নিউজিল্যান্ডের মাধ্যমে অকল্যান্ড হয়ে একবারে অ্যাডিলেডে পৌঁছাতে পারেন, অথবা সিডনি, মেলবোর্ন বা ব্রিসবেনে অবতরণের পর দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রা করতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরে ভ্রমণকারীরা প্রতিদিন কান্তাস এবং ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এর মাধ্যমে সেবা লাভ করতে পারেন। এছাড়াও জেটস্টার এয়ারলাইন্সে সাশ্রয়ী বাজেটের ফ্লাইট রয়েছে, যা মূলত মেলবোর্ন, সিডনি এবং গোল্ড কোস্টে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এছাড়া অ্যালিস স্প্রিংস এবং কেয়ার্নস এর জন্যও ফ্লাইট পাওয়া যায়।
আঞ্চলিক ফ্লাইট সেবা সরবরাহ করে রিজিওনাল এক্সপ্রেস এয়ারলাইন্স (রেক্স), অ্যালায়েন্স এয়ারলাইন্স, কোবহাম এয়ারলাইন্স এবং কোয়ান্টাসলিঙ্ক। এই সেবাগুলি মূলত দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে পরিচালিত হয় (যেমন: মাউন্ট গাম্বিয়ার, কিংসকোট বা ক্যাঙ্গারু আইল্যান্ড, পোর্ট লিংকন এবং ওয়াইল্লা)। এছাড়া ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মাইলডুরা এবং নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ব্রোকেন হিলও এর অন্তর্ভুক্ত।
অ্যাডিলেড বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের জন্য একটি একক টার্মিনাল রয়েছে, তাই ফ্লাইট স্থানান্তর করা সহজ। বিমানবন্দরে এটিএম, মুদ্রা বিনিময়, খাবার এবং কেনাকাটার সুবিধা আছে। পার্কিং এলাকায় লকার রয়েছে। এ লকারগুলোতে বড় সাইজের লকার পাওয়া যায় যাতে সাইকেলের বাক্সও ধরে। বিমানবন্দরের পুরো এলাকায় ফ্রি ওয়াই-ফাই পাওয়া যায়।
সাধারণ বিমান চলাচল
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড বিমানবন্দরে সাধারণ বিমান চলাচলের জন্য একটি আলাদা টার্মিনাল রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ব্যক্তিগত বিমান 2 প্যারাফিল্ড বিমানবন্দর। ব্যবহার করে, যা শহরের ১৮ কিমি উত্তরে অবস্থিত।
বিমানবন্দর থেকে শহরে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড মেট্রোর বিমানবন্দর বাস জে১/জে২/জে৭/জে৮ বিমানবন্দরকে শহরের কেন্দ্র, গ্লেনেলগ এবং প্রধান শপিং সেন্টারগুলোর সাথে সংযুক্ত করে। জে১ বাসগুলি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতি ১৫ মিনিটে শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভ্রমণের সময় প্রায় ২৫ মিনিট। গ্লেনেলগগামী বাসগুলি দিনে প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর চলে, তবে রাতের বেলা কম পরিমাণে চলাচল করে। আর্নডেল, ওয়েস্ট লেকস এবং মারিয়ন শপিং সেন্টারের বাসগুলো সপ্তাহের কর্ম দিবসগুলোয় প্রতি ঘণ্টায় ছাড়ে।
সব বাস টার্মিনালের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্টপ থেকে ছেড়ে যায়। সব বাস একই স্টপ থেকে ছাড়ে, তাই কোন বাসে উঠছেন তা নিশ্চিত করতে সামনে লিখিত গন্তব্য দেখে নিন। বাসের সরাসরি তথ্য এখানে বা আপনার স্মার্টফোনের অ্যাপস এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে। টিকিট কিনতে হবে না; শুধু আপনার ব্যাংক কার্ড বা উপযুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করে ট্যাপ করে পেমেন্ট করতে পারেন।
জেটবাস অ্যাডিলেড মেট্রো নেটওয়ার্কের অংশ। তাই সাধারণ টিকিট এবং ভাড়ার নিয়মগুলো এখানে প্রযোজ্য। জেটবাসের টিকিট ব্যবহার করে অন্য বাস, ট্রেন বা ট্রামে উঠতে পারবেন। বিমানবন্দরে মেট্রোকার্ডের ভেন্ডিং মেশিনও আছে, যেখান থেকে আপনি একটি কার্ড কিনতে পারেন।
ট্যাক্সি টার্মিনালের সামনের নিচতলা থেকে পাওয়া যায়। শহরগামী ট্যাক্সিগুলো সকালে ৩০ ডলার এবং অন্যান্য সময় প্রায় ২০ ডলার ভাড়া নিয়ে থাকে। ফলে দলগত ভ্রমণে ট্যাক্সি এবং জেটবাসের খরচ প্রায় সমান হতে পারে। সব ট্যাক্সি মিটারের মাধ্যমে ভাড়া নেয়, তবে বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি ধরলে অতিরিক্ত ২ ডলার সারচার্জ যোগ হয়।
বড় বড় গাড়ি ভাড়ার কোম্পানি টার্মিনালের ব্যাগেজ প্রাপ্তির এলাকার কাছে কিয়স্ক পরিচালনা করে। গাড়ি ভাড়ার পার্কিংটি টার্মিনালের ঠিক সামনে অবস্থিত।
গাড়িতে করে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে পৌঁছানোর জন্য অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের রাজধানী শহরগুলো থেকে এক দিনের বেশি সময় লাগে। অ্যাডিলেড থেকে মেলবোর্ন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথটি ৮-৯ ঘণ্টা সময় নেয় (দেখুন মেলবোর্ন এবং অ্যাডিলেডের মধ্যে স্থলপথ ভ্রমণ)। অ্যাডিলেডে কিছু ফ্রি-ওয়ে রাস্তা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ রাস্তা ২ লেনের, যা হাইওয়ে মানের।
মেলবোর্ন থেকে অ্যাডিলেডের দূরত্ব ৭৩৬ কিমি (৪৫৭ মা) হরশাম (এ৮) হয়ে, অথবা ৯০১ কিমি (৫৬০ মা) মাউন্ট গ্যাম্বিয়ার (এ১/বি১) হয়ে। এই রুটে গ্রেট ওশান রোড ধরে বেড়ানোর সুযোগও থাকে। হরশাম হয়ে পথটি সংক্ষিপ্ত, তবে সেখানে কম দর্শনীয় স্থান আছে।
সিডনি থেকে অ্যাডিলেডের দূরত্ব ১,৪২২ কিলোমিটার (৮৮৪ মাইল), ওয়াগা ওয়াগা এবং মিল্ডুরা (এ২০) হয়ে। সিডনি থেকে ওয়াগা ওয়াগা পর্যন্ত ফ্রি-ওয়ে থাকায় ভ্রমণের সময় অনেকটাই কমে যায়। এই পথটি ক্যানবেরার কাছ দিয়ে যায়, যা অ্যাডিলেড থেকে ১,১৯৬ কিলোমিটার (৭৪৩ মাইল) দূরে।
সিডনি থেকে আরেকটি বিকল্প পথ হল ১,৬৫৯ কিমি (১,০৩১ মা) দূরের ব্রোকেন হিল (এ৩২) হয়ে যাওয়া, যা আপনাকে আউটব্যাকের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় এবং অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ঐতিহাসিক খনিশহর ব্রোকেন হিল দেখার সুযোগ দেয়। ব্রিসবেন থেকে অ্যাডিলেডের ২,০৩১ কিমি (১,২৬২ মা) পথও ব্রোকেন হিলের মধ্য দিয়ে যায়।
অ্যাডিলেড হল পার্থ-এর নিকটতম রাজধানী শহর। তবে ২,৫৫০ কিমি (১,৫৮০ মা) দীর্ঘ পথটি নালারবোর মরুভূমির মধ্য দিয়ে যায়, যা বিশ্বে অন্যতম দূরবর্তী অঞ্চল। এই পথে কালগুরলি-বোল্ডার (অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি ঐতিহাসিক খনিশহর) দেখার জন্য সামান্য ঘুরতে পারেন। ঠিক তেমনিভাবে ৩,০২৭ কিমি (১,৮৮১ মা) উত্তরের দিকে ডারউইন পর্যন্ত ভ্রমণ-পথটি আউটব্যাক দিয়ে আলিস স্প্রিংস হয়ে যায় এবং এটি উলুরু প্রধান মহাসড়ক থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে। তবে এই দীর্ঘ পথভ্রমণ সাধারণত অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের জীবনে এক বা দুইবার করে থাকেন।
ট্রেনে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড হল অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ দূরত্বের আন্তঃরাজ্য ট্রেন অপারেটর জার্নি বিয়ন্ড-এর প্রধান কেন্দ্র। দ্য গান অ্যালিস স্প্রিংস এবং ডারউইন পর্যন্ত, ইন্ডিয়ান প্যাসিফিক পার্থ এবং সিডনি পর্যন্ত এবং দ্য ওভারল্যান্ড মেলবোর্ন পর্যন্ত চলে। দ্য গান এবং ইন্ডিয়ান প্যাসিফিক বিলাসবহুল ট্রেন ভ্রমণ, যেখানে স্লিপার, রেস্তোরাঁয় খাবার এবং পার্থ বা ডারউইনে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। তবে এগুলোতে সময় লাগে অনেক বেশি, এমনকি গাড়িতে যেতে যতটা সময় লাগে তার থেকেও বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই এই ট্রেন ভ্রমণ-ব্যয় প্লেন টিকিটের চেয়ে বেশি দামি হয়। অন্যদিকে, দ্য ওভারল্যান্ড সাধারণত সস্তা এবং এর বিজনেস-ক্লাস টিকিটের দাম অ্যাডিলেড-মেলবোর্ন ফ্লাইটের ইকোনমি-ক্লাস টিকিটের মতোই হয়। দ্য ওভারল্যান্ড মেলবোর্ন এবং অ্যাডিলেডের মধ্যে বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় থামে, যা ছোট শহরগুলোতে ভ্রমণের পরিকল্পনার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। তবে, জার্নি বিয়ন্ডের ট্রেনগুলিতে ওয়াই-ফাই নেই।
এই আন্তঃরাজ্য ট্রেনগুলো থেকে ছাড়ে, যা শহরের ঠিক বাইরে অবস্থিত। স্টেশনে গাড়ি বা বাসে করে পৌঁছানো যায়। কেসউইক স্টেশন ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে এখন আর শহরতলির রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ নেই। সব ট্রেনের আগমনের সময় ট্যাক্সিও পাওয়া যায়।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় আর কোনো আন্তঃনগর রেল পরিষেবা নেই।
বাসে যাতায়াত
[সম্পাদনা]আন্তঃরাজ্য বাস পরিষেবা বিভিন্ন কোচ কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেমন গ্রেহাউন্ড, ফায়ারফ্লাই এবং ভি/লাইন। মেলবোর্ন থেকে অ্যাডিলেডের বাসযাত্রা প্রায় সাড়ে এগারো ঘণ্টা সময় নেয়। দিন এবং রাত উভয় সময়ের বাস পাওয়া যায়। সিডনি থেকে যাত্রা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে এবং এটি রাতের বাস পরিষেবা। বাসের ভাড়া ট্রেন ও প্লেনের চেয়ে সস্তা, বিশেষ করে অ্যাডিলেড-মেলবোর্ন রুটে, যদিও সঠিক সময় মিললে অ্যাডিলেড-সিডনি বাজেট এয়ারলাইনের ফ্লাইট বাসের চেয়েও সস্তা হতে পারে।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার শহর ও শহরতলিতে আঞ্চলিক বাস পরিষেবা আন্তঃরাজ্য বাস কোম্পানিগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে স্থানীয় কোচ কোম্পানিগুলি (যেমন লিংকএসএ এবং প্রিমিয়ার স্টেটলাইনার) আরো বেশি ফ্রিকোয়েন্ট পরিষেবা প্রদান করে।
প্রায় সব আন্তঃরাজ্য এবং আঞ্চলিক বাস 3 অ্যাডিলেড সেন্ট্রাল বাস স্টেশন থেকে ছাড়ে, যা সেন্ট্রাল মার্কেট, একটি কোলস সুপারমার্কেট এবং চায়নাটাউনের কাছাকাছি অবস্থিত।
জাহাজে যাতায়াত
[সম্পাদনা]প্রতি বছর নভেম্বরে থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্রুজ মৌসুমে বিভিন্ন ক্রুজ জাহাজ 4 পোর্ট অ্যাডিলেড প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল-এ ভিড়ে। ফ্লিন্ডার্স পোর্টস-এ ক্রুজ জাহাজের আগমনের তালিকা পাওয়া যায়।
চলাফেরা
[সম্পাদনা]ট্রেনে যাতায়াত
[সম্পাদনা]সঠিক ট্রানজিট তথ্য পেতে গুগল ম্যাপস এবং অ্যাপল ম্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। চলাচলের জন্য আপনার গন্তব্য এবং প্রস্থান ঠিকানা (বা আপনার বর্তমান অবস্থান) প্রবেশ করিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আইকন নির্বাচন করুন। অ্যাডিলেড মেট্রো ওয়েবসাইট অথবা বিভিন্ন স্মার্টফোন অ্যাপস (যেমন ট্রানজিটটাইমস) থেকে আসল সময়ে আগমনের তথ্য পেতে পারেন এবং আপনার গাড়ি আসার আগে আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন।
রুট
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড মেট্রো ট্রেন সিস্টেম শহরের উত্তরের দিকে অবস্থিত। 5 অ্যাডিলেড রেলওয়ে স্টেশন থেকে চারটি প্রধান লাইন দিয়ে চলে, যার সাথে দুটি শাখা লাইনও আছে। এটি আসলে মেট্রো সিস্টেম নয়, বরং শহরতলির যাত্রী রেল সিস্টেম।
উত্তরের দিকে যাতায়াত:
আউটার হারবার লাইন পোর্ট অ্যাডিলেড এবং গ্ল্যানভিলের মাধ্যমে শহরের উত্তর-পশ্চিমে লে ফেভ্রে উপদ্বীপ পর্যন্ত যায়। এটি সেমাফোর পর্যটন অঞ্চল, পোর্ট অ্যাডিলেডের ঐতিহাসিক সামুদ্রিক এলাকা এবং ক্রয়ডনের ক্যাফে স্ট্রিপে যাওয়ার জন্য সুবিধাজনক। গ্রেঞ্জ লাইন আউটার হারবার লাইন থেকে উডভিল এ শাখারূপে বের হয়।
গাওলার লাইন ওভিংহ্যাম, মোসন লেকস, স্যালিসবুরি এবং এলিজাবেথ-এর মধ্য দিয়ে শহরের উত্তরে অবস্থিত গাওলার সেন্ট্রালে যায়।
দক্ষিণ দিকে যাতায়াত:
বৈদ্যুতিক সিফোর্ড লাইন ব্রাইটন এবং নোয়ারলুঙ্গা সেন্ট্রাল-এর মধ্য দিয়ে শহরের দক্ষিণে অবস্থিত সিফোর্ড পর্যন্ত যায়। এই লাইনটি ব্রাইটন এবং হ্যালেট কোভ-এর সমুদ্র সৈকত এবং ওকল্যান্ডস-এর ওয়েস্টফিল্ড মারিয়নে যাওয়ার সুবিধা দেয়। ফ্লিন্ডার্স লাইন (পূর্বে টন্সলে লাইন নামে পরিচিত) সিফোর্ড লাইন থেকে শাখা হিসেবে বের হয় এবং ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ হয়।
বেলায়ার লাইন ব্ল্যাকউড এবং শহরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের মধ্য দিয়ে বেলায়ার পর্যন্ত যায়। এই লাইনটি বেলায়ার ন্যাশনাল পার্ক-এ যাওয়ার জন্য উপযোগী।
বাইক ট্রেনের সাথে নিয়ে যাওয়া যায় (তবে ট্রাম বা বাসে নয়)। সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯টার আগে এবং বিকেল ৩-৬টার মধ্যে পিক সময়ে ভাড়া বেশি হতে পারে (তবে সিনিয়র কার্ডধারীদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়)। অন্য সময়ে বাইক নিয়ে বিনামূল্যে ভ্রমণ করা যায়।
টিকিট এবং রুটের তথ্য
শহরতলির ট্রেন, ট্রাম এবং বাস পরিষেবা একই ব্র্যান্ড নামের অধীনে পরিচালিত হয়, যা অ্যাডিলেড মেট্রো নামে পরিচিত এবং একক টিকিট সিস্টেম "মেট্রোটিকিট" ব্যবহার করে। অ্যাডিলেড রেলওয়ে স্টেশন ইনফোসেন্টার, অ্যাডিলেড রেলওয়ে স্টেশন, নর্থ টেরেস, নিঃশুল্ক-ফোন: ১৩০০ ৩১১ ১০৮ । সকাল ৭টা - রাত ৮টা। অথবা অ্যাডিলেড মেট্রোর ওয়েবসাইটে সময়সূচী এবং রুটের তথ্য পাওয়া যাবে। গুগল ম্যাপস-এও পাবলিক ট্রানজিটের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়, যেখানে 'ট্রানজিট' দিক নির্দেশনা ব্যবহার করা হয়। বাস, ট্রাম এবং প্রধান ট্রেন স্টেশন থেকে একক যাত্রার টিকিট (যা দুই ঘণ্টার মধ্যে সীমাহীন স্থানান্তরের সুযোগ দেয়) পিক সময়ে $৫.৯০ এবং অফ-পিক সময়ে $৪-তে পাওয়া যায়। এছাড়াও, $১১.২০-এ ডে-ট্রিপ টিকিট পাওয়া যায়, যা পুরো দিনের জন্য অ্যাডিলেড মেট্রো এলাকায় সীমাহীন ভ্রমণের সুযোগ দেয়।
দীর্ঘ সময়ের জন্য অ্যাডিলেডে থাকা ভ্রমণকারীরা $১০ দিয়ে একটি মেট্রোকার্ড কিনতে পারেন, যার সাথে $৫ মূল্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। মেট্রোকার্ড ব্যবহার করলে পিক সময়ে ভাড়া $৪.০৫ এবং অফ-পিক সময়ে ভাড়া $২.২৫। এই মেট্রোকার্ডগুলো অ্যাডিলেড, এলিজাবেথ, গলার, নোয়ারলুঙ্গা সেন্টার, ওকল্যান্ডস, মোসন লেকস এবং স্যালিসবুরিসহ প্রধান ট্রেন স্টেশন, বেশিরভাগ সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র এবং কর্নার স্টোরে বিক্রি হয়। অ্যাডিলেড মেট্রো ওয়েবসাইটে অবস্থানগুলোর একটি তালিকা রয়েছে। মেট্রোকার্ড যেখানে বিক্রি হয় সেখানে এবং ট্রেন বা ট্রামে কয়েন বা প্রধান ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রিচার্জ করা যায়।
$২৬ মূল্যের একটি ভিজিটর মেট্রোকার্ডও রয়েছে যা ৩ দিনের জন্য নেটওয়ার্কে সীমাহীন ভ্রমণের সুযোগ দেয়। ৩ দিনের পর এই কার্ডটি সাধারণ মেট্রোকার্ডের মতো রিচার্জ করে ব্যবহার করা যায়।
রবিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সারাদিন এবং সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯:০১ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফ-পিক সময়। বাকি সময়গুলো পিক সময়।
শহরের কেন্দ্রস্থলে কিছু বিনামূল্যে ট্রাম এবং বাস পরিষেবা রয়েছে। এই পরিষেবাগুলোর জন্য মেট্রোকার্ড বা মেট্রোটিকিটের প্রয়োজন হয় না।
বাসে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড মেট্রোর একটি বিস্তৃত বাস নেটওয়ার্ক রয়েছে যা শহরের কেন্দ্রস্থলে কেন্দ্রীভূত। সম্পূর্ণ মানচিত্র এবং তথ্য অ্যাডিলেড মেট্রো ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ প্রধান সড়ক, যেমন ক্যাফে এলাকা—দ্য প্যারেড, প্রসপেক্ট রোড, হেনলি বিচ রোড, কিং উইলিয়াম রোড এবং ও'কনেল স্ট্রিট—হল 'গো জোনস', যেখানে সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর বাস চলে। অ্যাডিলেডের বাস নেটওয়ার্ক শহরের বাইরের উপশহর, অ্যাডিলেড পাহাড়, দক্ষিণে ম্যাকলারেন ভ্যালি এবং উত্তরে গলার পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে বাসগুলি বারোসা ভ্যালিতে যায় না এবং শহরের বাইরে চলাচলের হার কম।
ও-বাহন একটি দ্রুত বাস ট্রানজিট লাইন যা অ্যাডিলেডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপশহরে চলে। ও-বাহন বাসগুলির রুট গ্রেনফেল স্ট্রিট থেকে শুরু হয়, হ্যাকনি-তে প্রবেশ করে এবং ক্লেমজিগ, প্যারাডাইস ও মোডবারি ইন্টারচেঞ্জে থামে। ও-বাহন পরিষেবাগুলি খুবই ঘন ঘন চলে, বিশেষ করে পিক সময়ে প্রতি ৩ থেকে ৫ মিনিট অন্তর এবং অফ-পিক সময় প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর।
তবে সন্ধ্যা ৭টার পর বাসের চলাচল হার অনেক কমে যায়। বাইরের উপশহরে প্রতি ঘণ্টায়, গো জোনে প্রতি ৩০ মিনিটে এবং ও-বাহনে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি বাস পাওয়া যায়। মধ্যরাতের পর সব পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, তাই সময়সূচি চেক করুন এবং প্রয়োজন হলে ট্যাক্সি ধরার পরিকল্পনা করুন। খুব সাধারণ আফটার মিডনাইট বাস পরিষেবাগুলি শুধুমাত্র শনিবার রাতে সীমিত রুটে প্রতি ঘণ্টায় চলে।
বিনামূল্যে সিটি কানেক্টর ৯৯এ এবং ৯৯সি বাসগুলি শহরের প্রধান সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৩০টি স্টপে থামে। এগুলি সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৮:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৩০ মিনিট অন্তর চলে, কিন্তু সপ্তাহান্তে, বড়দিন এবং গুড ফ্রাইডেতে চলে না।
বিনামূল্যে সিটি কানেক্টর ৯৮এ এবং ৯৮সি বাসগুলো প্রতিদিন চলে। এগুলি ৯৯এ এবং ৯৯সি এর মতো একই এলাকায় যাতায়াত করে এবং উত্তর অ্যাডিলেডেও একটি লুপ অন্তর্ভুক্ত করে।
সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৯৯এ, ৯৯সি, ৯৮এ এবং ৯৮সি পরিষেবাগুলি মিলিয়ে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি বাস চলে।
ট্রামে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে একটি ট্রাম লাইন রয়েছে যা হিন্ডমার্শের অ্যাডিলেড এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টার থেকে শুরু হয়ে নর্থ টেরেসের বরাবর বোটানিক গার্ডেন পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় লাইনটি রয়্যাল অ্যাডিলেড হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে সিটি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকণ্ঠগুলোতে গিয়ে গ্লেনেলগ সমুদ্র সৈকতে পৌঁছায়। লাইন পরিবর্তন করার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক স্টপ হলো রেলওয়ে স্টেশন। সিটি এলাকায় অ্যাডিলেড এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টার, বোটানিক গার্ডেন এবং সাউথ টেরেসের মধ্যে বিনামূল্যে ভ্রমণ করা যায়, তবে গ্লেনেলগে যাওয়ার জন্য একটি টিকিট বা একটি মেট্রোকার্ডের প্রয়োজন। টিকিট সমস্ত ট্রামে বা কিছু স্টপে টিকিট মেশিন থেকে কেনা যেতে পারে।
শহর থেকে গ্লেনেলগের মতো জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রামগুলো সুবিধাজনক এবং এটি রান্ডল মল, ভিক্টোরিয়া স্কয়ার (অ্যাডিলেড সেন্ট্রাল মার্কেটের নিকট) এবং নর্থ টেরেসের কাছে অ্যাডিলেড রেলওয়ে স্টেশনের কাছে থামে। ট্রামের মাধ্যমে উত্তর দিকে গেলে হিন্ডমার্শ এবং বাউডেন পৌঁছানো যায়, যা পোর্ট রোডের বরাবর জনপ্রিয় ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁ অঞ্চলের জন্য পরিচিত।
যদি আপনি গাড়ি চালান, তাহলে সিটিতে পার্কিংয়ের একটি সুবিধাজনক (এবং জনপ্রিয়) বিকল্প হলো এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টারে পার্ক করা এবং ট্রাম ধরে সিটি প্রবেশ করা। এর ফলে সারা সপ্তাহে মাত্র $৪ খরচ হয়, যা সিটি পার্কিংয়ের তুলনায় অনেক সস্তা।
পায়ে যাতায়াত
[সম্পাদনা]সিটি সেন্টার তুলনামূলকভাবে ছোট এবং সহজেই পায়ে চলাচল করা যায়। বেশিরভাগ আকর্ষণীয় স্থানসমূহ কিং উইলিয়াম স্ট্রিটের উভয় পাশে নর্থ টেরেস এবং ভিক্টোরিয়া স্কোয়ারের মধ্যে বিদ্যমান ব্লকগুলোকে কেন্দ্র করে অবস্থিত। গগার স্ট্রিট প্রিসিঙ্কট এবং অ্যাডিলেড সেন্ট্রাল মার্কেটও হাঁটার জন্য একটি দুর্দান্ত গন্তব্য।
ভ্রমণকারীদের মধ্যে যারা জগিং করতে উন্মুখ তারা রিভার টোরেন্সের বরাবর এবং পার্কল্যান্ডের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় জগিং ট্র্যাকগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
ট্যাক্সিতে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে তিনটি প্রধান ট্যাক্সি কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো ২৪ ঘণ্টা কাজ করে:
অ্যাডিলেড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ট্যাক্সিস, ☎ +৬১ ১৩ ২২ ১১।
সাবআরবার্ন ট্যাক্সিস, ☎ +৬১ ১৩ ১০ ০৮।
ইয়োলো ক্যাবস সাউথ অস্ট্রেলিয়া, ☎ +৬১ ১৩ ২২ ২৭।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ট্যাক্সিগুলো সাদা (যদিও ‘ইয়েলো ক্যাবস’ নামে পরিচালিত) এবং এগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা থাকে। সাধারণত সিটি এলাকার ব্যবসায়িক সময়ে রাস্তায় বা প্রধান হোটেল থেকে ট্যাক্সি থামানো সম্ভব হয়, কিন্তু শহরতলিতে সাধারণত তালিকাভুক্ত কোম্পানির বুকিং সার্ভিসগুলোর মাধ্যমে কল করে ট্যাক্সি নিতে হয়। সপ্তাহান্তে রাতে ট্যাক্সি কাউন্সিলের কর্মীরা কিছু ক্যাব র্যাংকে অবস্থান করেন। সুপারভাইজড ক্যাবট্যাক্সিগুলোতে প্রচুর আলো থাকে এবং কনসিয়ার্জ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। এগুলো শুক্রবার রাত ১১টা থেকে ৩টা এবং শনিবার রাত ১১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করে। তাদের ওয়েবসাইটে অবস্থানের মানচিত্র পাওয়া যাবে।
অ্যাডিলেডের সব ট্যাক্সিতে স্টেট গভর্নমেন্ট দ্বারা নির্ধারিত মিটার চালিত ভাড়া নিতে হয়, যা যাত্রার শুরুর সময় অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। ট্যারিফ ১ হলো স্বাভাবিক ভাড়ার হার এবং ট্যারিফ ২ হলো বেশি হার, যা সোমবার থেকে শুক্রবার রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা এবং সপ্তাহান্তে ও সরকারি ছুটির দিনে প্রযোজ্য। চালকরা প্রায় সবসময় মিটার ব্যবহার করেন এবং আইনিভাবে তা করতে বাধ্য। নগদ, ইএফটিপিওএস, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং ক্যাবচার্জের মাধ্যমে ভাড়া প্রদান করা যায়। যাত্রা শুরুর আগে যদি আপনি নগদ ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করতে চান, তাহলে চালককে জানানো ভালো, কারণ কখনও কখনও মেশিনগুলো ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে।
গাড়িতে যাতায়াত
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের শহরের কেন্দ্র এবং আশেপাশের শহরতলি (যেমন গ্লেনেলগ, নরউড এবং প্রসপেক্ট) সহজেই পায়ে হেঁটে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে ঘোরা যায়। তবে যদি আপনি শহরের কেন্দ্রের বাইরে বেশি সময় কাটানোর পরিকল্পনা করেন, তাহলে গাড়ি নেওয়া সুবিধাজনক। এটি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে দীর্ঘ যাত্রা এড়াতে সাহায্য করবে (বিশেষ করে বারোসা ভ্যালি এলাকার ক্ষেত্রে, যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সীমিত)।
অন্য অস্ট্রেলিয়ান রাজ্যগুলোর রাজধানী শহরগুলোর মতো অ্যাডিলেডে শহরের কেন্দ্রে সরাসরি যাওয়ার জন্য কোনো ফ্রিওয়ে নেটওয়ার্ক নেই। যেসব ফ্রিওয়ে আছে, সেগুলো শহরতলি থেকে শুরু হয় এবং নিকটবর্তী দেশীয় শহরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ প্রধান সড়কে গতি সীমা ৬০ কিমি/ঘন্টা চিহ্নিত থাকে, যদিও কোনো গতি সীমা চিহ্নিত না থাকলে ডিফল্ট গতি সীমা ৫০ কিমি/ঘন্টা। গতি সীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, এবং সামান্য গতির উপরে গাড়ি চালালেও $৩৫০ জরিমানা হতে পারে।
অ্যাডিলেডের সমস্ত সড়ক এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া জুড়ে থাকা সকল সড়ক টোল-মুক্ত।
অ্যাডিলেড বিমানবন্দরের ব্যাগেজ দাবিকরণ এলাকার নীচের তলায় প্রধান জাতীয় গাড়ি ভাড়া কোম্পানিগুলোর কিয়স্ক রয়েছে।
দেখুন
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের প্রধান আকর্ষণগুলো মূলত শহর এবং নর্থ অ্যাডিলেডে কেন্দ্রীভূত। সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন বা পার্থের মতো শহরগুলোর তুলনায় কারো অ্যাডিলেডে ভ্রমণ করার ইচ্ছা তুলনামূলক কম হতে পারে, কারণ এটি অন্যান্য বড় শহরের মতো ব্যস্ত নয়। বরং অ্যাডিলেড তার চার্চগুলোর জন্য বেশি পরিচিত এবং এখানকার চার্চে না গেলে অ্যাডিলেডের ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই চার্চগুলো ঐতিহাসিক বা ধর্মীয় কারণে নয়, বরং তাদের স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। যদি আপনি শুধুমাত্র একটি চার্চ দেখার সময় পান, তবে নর্থ অ্যাডিলেডের সেন্ট পিটার্স ক্যাথেড্রাল অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রতীকী চার্চ।
অ্যাডিলেডের অন্যান্য শহরের মতো এমন কোন ভ্রমণ পাস নেই যা অ্যাডিলেডের সব আকর্ষণীয় স্থানগুলো কভার করে।
পার্ক এবং উদ্যান
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের বেশিরভাগ পার্ক এবং উদ্যান অ্যাডিলেড শহরের চারপাশে অবস্থিত, যা এটিকে অ্যাডিলেডের অন্যান্য অংশ থেকে সুন্দরভাবে আলাদা করে তোলে। তাই এই শহরটি অন্য বেশিরভাগ শহরের মতো নয়। এছাড়াও, নর্থ অ্যাডিলেডের চারপাশেও একটি সীমানা আছে যা টরেন্স নদীর পাশ দিয়ে বেষ্টিত। ফলে বেশিরভাগ পার্ক ও উদ্যান এই ছোট কিন্তু বৈচিত্র্যময় সবুজ এলাকার মধ্যে কেন্দ্রীভূত।
অ্যাডিলেডের শহরের বাইরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বেশিরভাগ পার্ক ও উদ্যান পাওয়া যায়। এই পার্কগুলো সাধারণত প্রশস্ত এবং অবসর কাটানোর জন্য প্রচুর খোলা জায়গা এখানে বিদ্যমান।
শহর ও নর্থ অ্যাডিলেডের পার্কগুলো শহরের মাঝে বিদ্যমান থাকলেও, কিছু পার্ক যেমন মরিয়ালটা কনজারভেশন পার্ক আপনাকে প্রকৃতির মাঝে থাকার অনুভূতি দেয়। কিছু পার্ক, যেমন বেলায়ার ন্যাশনাল পার্ক শহর ও গ্রামের মিশ্র অনুভূতি প্রদান করে।
অ্যাডিলেড এলাকায় মাত্র তিনটি জাতীয় উদ্যান আছে (যদিও শহরের আকার অনুযায়ী এটি অনেক বলে বিবেচিত হতে পারে)। জাতীয় উদ্যানগুলো হলো:
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জাতীয় উদ্যান বেলায়ার ন্যাশনাল পার্ক, যেখানে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং অনেকগুলো হাঁটার পথ ও ঝর্ণা।
দ্বিতীয় জাতীয় উদ্যানটি অ্যাডিলেডের উপকণ্ঠে অবস্থিত এবং এটি মূলত একটি পাখির অভয়ারণ্য। উপকূলীয় জাতীয় উদ্যান অ্যাডিলেড ইন্টারন্যাশনাল বার্ড স্যাংচুয়ারি ন্যাশনাল পার্ক—উইনাইটিনাইটি পাংকারা (যদি নামটি উচ্চারণ করতে কঠিন হয়, "অ্যাডিলেড ইন্টারন্যাশনাল বার্ড স্যাংচুয়ারি" বলা যেতে পারে) ডলফিন দেখার জন্য একটি চমৎকার স্থান।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে নতুন জাতীয় উদ্যান গ্লেনথোর্ন ন্যাশনাল পার্ক—ইট্টামাইটপিন্না ইয়ার্তা (সংক্ষেপে "গ্লেনথোর্ন ন্যাশনাল পার্ক" বলা যেতে পারে) যা নভেম্বর ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যদি আপনি অ্যাডিলেড হিলসকে অ্যাডিলেডের অংশ হিসাবে বিবেচনা করেন, তাহলে ক্লেল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক নামে অ্যাডিলেডে আরো একটি পার্ক রয়েছে, যা কনজারভেশন পার্ক থেকে ন্যাশনাল পার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে মাউন্ট লফটি নামক একটি স্থান রয়েছে, যেখানে বিরলভাবে তুষারপাত হয় (সমগ্র অ্যাডিলেডের মধ্যে শুধুমাত্র এ জায়গায়ই তুষারপাত হয় এবং সেটাও খুব বিরল)।
ডিসেম্বর ২০২১-এ অ্যাডিলেডকে "ইন্টারন্যাশনাল ন্যাশনাল পার্ক সিটি ফাউন্ডেশন" কর্তৃক বিশ্বের দ্বিতীয় "ন্যাশনাল পার্ক সিটি" হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রথমটি ছিল লন্ডন, যা ২০১৯ সালে "ন্যাশনাল পার্ক সিটি" হিসেবে ঘোষিত হয়। অনুমান করা হয়, অ্যাডিলেডের ৯৫% বাসিন্দার ৪০০ মিটারের মধ্যে একটি পার্ক রয়েছে এবং শহরের ৩০% এরও বেশি সবুজ স্থান রয়েছে, যা এটিকে অস্ট্রেলিয়ার সবুজতম শহর হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।
জাদুঘর এবং গ্যালারি
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের জাদুঘর এবং গ্যালারিগুলোও মূলত শহরের কেন্দ্রে এবং নর্থ অ্যাডিলেডে অবস্থিত, যেমনটি পার্ক ও উদ্যান বা অ্যাডিলেডের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে পোর্ট অ্যাডিলেড/আউটার হারবার এলাকায়ও অনেকগুলো জাদুঘর আছে।
অন্য যেকোনো রাজধানী শহরের মতোই অ্যাডিলেডেও একটি আর্ট গ্যালারি, একটি রাজ্য জাদুঘর (যেখানে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এবং এর সন্নিহিত অঞ্চলগুলোর ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে), একটি পুরনো জেলখানা (গাওল) ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে। শহরতলীতে একটি রেলওয়ে জাদুঘর এবং একটি এভিয়েশন জাদুঘরসহ আরও অনেক জাদুঘর আছে।
অ্যাডিলেডের সব জাদুঘর, প্রদর্শনী বা গ্যালারির মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জাদুঘর হলো:
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘর – শহরের মধ্যে অবস্থিত এই রাজ্য জাদুঘরটিতে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার নিদর্শন এবং আদিবাসী সংগ্রহসহ বিভিন্ন গ্যালারি রয়েছে। বেশিরভাগ মিউজিয়ামের মতোই এটি ফ্রি।
যদিও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি বা মেলবোর্নের মতো বিপুল সংখ্যক অভিবাসী ছিল না, তবে মাইগ্রেশন জাদুঘর শহরের মধ্যে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসীদের ইতিহাসের গল্প বলে। এটি হয়তো আপনাকে আশ্চর্য করবে কারণ প্রচলিত ধারণার বিপরীতে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এখনও একটি বহুসাংস্কৃতিক রাজ্য।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আর্ট গ্যালারি শহরের মধ্যে শিল্পের বিভিন্ন ধারায় আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।
এছাড়াও আরও অনেক জাদুঘর, প্রদর্শনী এবং গ্যালারি রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট জেলার নিবন্ধগুলো দেখুন।
ক্রীড়া
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড অন্যান্য শহরের মতোই ক্রীড়ার জন্য পরিচিত। অন্যান্য অস্ট্রেলিয়ান শহরের মতো, অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল (এএফএল) এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, এর পরেই রয়েছে ক্রিকেট। কুইন্সল্যান্ড বা নিউজাউথ ওয়েলসের বেশিরভাগ অঞ্চলের তুলনায় অ্যাডিলেডে রাগবি লিগ জনপ্রিয় নয়।
ক্রিকেট – গ্রীষ্মের মাসগুলিতে অ্যাডিলেড ওভালে একটি ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করতে যান। অস্ট্রেলিয়া প্রতি গ্রীষ্মে কয়েকটি বিদেশী দেশের বিপক্ষে খেলার আয়োজন করে এবং তারা এই সুন্দর মাঠে কিছু ম্যাচ খেলে। এই মাঠটি মূল শহর এবং উত্তর অ্যাডিলেডের মধ্যবর্তী একটি ছোট সবুজ এলাকায় অবস্থিত। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য টিকিট সাধারণত দ্রুত বিক্রি হয়, তবে ঘরোয়া ম্যাচগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এবং সেগুলোও সমান উত্তেজনাপূর্ণ।
এএফএল - পেশাদার অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলের জন্য শীর্ষ লীগ। স্থানীয় দল অ্যাডিলেড ক্রো এবং পোর্ট অ্যাডিলেড পাওয়ার তাদের হোম গ্রাউন্ড অ্যাডিলেড ওভালে শীতকালীন মাসগুলিতে খেলে থাকে। টিকিট সাধারণত যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পাওয়া যায় এবং টিকিট পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় - আরো বিস্তারিত জানার জন্য এএফএল ওয়েবসাইট দেখুন।
এসএএনএফএল - রাজ্য অস্ট্রেলিয়ান রুলস লীগ, প্রতি সপ্তাহান্তে শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে ৫টি ম্যাচ খেলা হয়। নরউড ওভাল হল রেডলেগস দলের হোম গ্রাউন্ড, যা নরউডের প্যারেডে অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে রয়েছে।
হিন্দমার্শ স্টেডিয়ামে অ্যাডিলেড ইউনাইটেড (ফুটবল দল) এর ম্যাচ দেখার জন্য যেতে পারেন।
পারফরম্যান্স আর্ট
[সম্পাদনা]ফরম্যাট কালেকটিভ ১৫ পিল স্ট্রিটে একটি দোতলা পারফরম্যান্স স্থান। এখানে একটি স্থায়ী জিন (zine) দোকান রয়েছে যা ছোট আর্ট প্রদর্শনী, আলোচনা প্যানেল এবং পারফরম্যান্স আর্টের আয়োজন করে। প্রতিবছর ফরম্যাট ফেস্টিভালের সময় বেশিরভাগ অনুষ্ঠান হয়, যা ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভালের সাথে একই সময়ে ঘটে এবং এটি একটি নতুন ধরনের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সারা বছর এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
ইভেন্টসমূহ
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে ভ্রমণের জন্য সেরা সময়গুলোর মধ্যে একটি হল ম্যাড মার্চ, যখন অনেক উৎসব এবং ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যাডিলেড ৫০০ (সুপারলুপ অ্যাডিলেড ৫০০) – মার্চের মাঝামাঝি সময়ে অ্যাডিলেড ৫০০ সুপারকার রেসিং ইভেন্টটি খুব জনপ্রিয়। এই সময়ে রাস্তায় বিশাল পার্টি এবং বড় কনসার্টের ফলে অনেক উৎসাহী অ্যাডিলেডবাসী এতে অংশ নেয়।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড শহরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে পারে। অস্ট্রেলিয়াতে তারা ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারে বা শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারে।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে বিশ্বের সেরা দামি ব্র্যান্ড যেমন লুই ভিটন, গুচি, প্রাডা নেই। তবে ভিক্টোরিয়ান যুগের অ্যাডিলেড আর্কেড-এ সুন্দর কিছু ছোট দোকান আছে। এখানে আপনি পুরনো মুদ্রা, প্রাচীন সামগ্রী, আর চকলেটের দোকান পাবেন। আরেকটি ভালো জায়গা হচ্ছে পূর্ব অ্যাডিলেডের বার্নসাইড ভিলেজ, যেখানে আপনি আধা-দামি জিনিস কিনতে পারেন।
মল এবং কেনাকাটার স্থানসমূহ
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে অনেক মল এবং কেনাকাটার জায়গা আছে। কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান হল:
রান্ডল মল: এটি অ্যাডিলেড সিটি-তে অবস্থিত। এটি শুধু হেঁটে যাওয়ার উপযোগী একটি শপিং স্ট্রিপ, যেখান থেকে অনেক গলি ও রাস্তা শুরু হয়। এখানে ৮০০টিরও বেশি দোকান রয়েছে।
টি ট্রি প্লাজা (টি ট্রি গালি) – মাঝারি আকারের শপিং সেন্টার, যেখানে ২৫০টিরও বেশি দোকান আছে। এটি অ্যাডিলেড ও’বান বাস রাস্তার শেষ স্টপ।
ওয়েস্টফিল্ড ম্যারিয়ন শপিং সেন্টার: এটি ওয়েস্ট অ্যাডিলেড-এ অবস্থিত। অ্যাডিলেডের সবচেয়ে বড় শপিং মল এটি, যেখানে ৪০০টিরও বেশি দোকান আছে।
হারবার টাউন: ওয়েস্ট অ্যাডিলেড-এ অবস্থিত। এটি অ্যাডিলেড বিমানবন্দরের কাছে একটি মাঝারি আকারের মল, যেখানে অনেক আউটলেট শপ আছে।
খাবারের বাজার
[সম্পাদনা]খাবারের ক্ষেত্রেও অ্যাডিলেডে অনেক বিকল্প আছে। কয়েকটি বিশেষ স্থান হল:
সেন্ট্রাল মার্কেট: গ্রোট এবং গাউগার স্ট্রিটের মাঝে এবং ভিক্টোরিয়া স্কোয়ারের পশ্চিমে অবস্থিত। এখানে সব ধরনের তাজা ফলমূল এবং সবজি পাবেন।
চায়নাটাউন: সেন্ট্রাল মার্কেটের পাশে মোন্টা স্ট্রিটে চায়নাটাউন অবস্থিত। এটি শুধু হেঁটে যাওয়ার মতো একটি এলাকা।
সিটি ইস্ট আইজিএ: এটি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সেরা আইজিএ সুপারমার্কেট হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এখানে গ্রিক, ইতালিয়ান, চাইনিজ এবং ভারতীয় খাবার পাওয়া যায়।
গাগানিস ব্রাদার্স: এটি ওয়েস্ট অ্যাডিলেড-এ অবস্থিত। এটি পাইকারি খাদ্য বিক্রয় কেন্দ্র, তবে এখানে জনসাধারণের জন্যও খাদ্য বিক্রি করা হয়। এখানে প্রচুর জাতিগত খাবার পাওয়া যায়।
খাবার
[সম্পাদনা]স্থানীয় খাবার
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের স্থানীয় খাবার সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য খাবারের মতোই হয়। কিন্তু এখানে কিছু বিশেষ খাবার আছে যা শুধুমাত্র অ্যাডিলেডে পাওয়া যায় এবং এগুলো অবশ্যই একবার চেষ্টা করা উচিত।
পাই ফ্লোটার হলো এক ধরনের মাংসের পাই (সাধারণত গরুর মাংস) যা মোটা মটরশুটির স্যুপে ডোবানো থাকে। এর উপর সাধারণত টমেটো সস দেয়া হয়। এই খাবারটি অ্যাডিলেডের বিভিন্ন ক্যাফেতে বিক্রি হয়। কিন্তু যদি তুমি সবচেয়ে ভালো এবং প্রাচীন স্টাইলে তৈরি করা পাই ফ্লোটার খেতে চাও, তাহলে স্থানীয়রা তোমাকে মাইল এন্ড সাউথে অবস্থিত ক্যাফে দে ভিলিস-এ যেতে বলবে।
এবি হলো অ্যাডিলেডের নিজস্ব এক খাবার। এটি পূর্ব উপকূলের হালাল স্ন্যাক প্যাকের একটি স্থানীয় সংস্করণ। এই খাবারটিতে থাকে ইয়িরোস মাংস, যা গরম আলুর ফ্রাইয়ের উপর দেয়া হয়। এর উপর আবার টমেটো সস, মরিচ সস, রসুনের সস এবং বারবিকিউ সস দেয়া হয়। তবে এটি হালাল নয়। দুটি দোকান এই খাবারটি প্রথম তৈরি করার দাবি করে, তারা হলো উত্তর অ্যাডিলেডের নর্থ অ্যাডিলেড বার্গার বার (যা রেড অ্যান্ড হোয়াইট নামেও পরিচিত) এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট। উভয় দোকানই উত্তর অ্যাডিলেডে অবস্থিত।
শহর
[সম্পাদনা]শহরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বিভিন্ন দামের পরিসরে সাধারণত এসব খাবার পাওয়া যায়। অ্যাডিলেডে জনপ্রতি রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফের সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বেশিরভাগ সেরা রেস্টুরেন্ট অ্যাডিলেড শহরের মধ্যেই রয়েছে।
গাউগার স্ট্রিট, চায়নাটাউন এবং সেন্ট্রাল মার্কেট অঞ্চল হল বিভিন্ন দেশের খাবারের জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা। এখানে ভালো মানের এশিয়ান খাবার সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। গাউগার স্ট্রিটে আইনজীবী, সরকারি কর্মচারী এবং নতুন অভিবাসীরা প্রায়ই খেতে আসেন। চায়নাটাউন এবং গাউগার স্ট্রিট চীনা খাবারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এবং এখানে অনেক চীনা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়াও থাই, ভিয়েতনামি এবং ভারতীয় খাবারও এখানে পাওয়া যায়। গাউগার স্ট্রিটের উত্তরের দিকে অ্যাডিলেড সেন্ট্রাল মার্কেটে অনেক হকার স্টাইলের খাবারের দোকান আছে, আর কিছু পুরানো ইউরোপিয়ান ক্যাফেও আছে। গত দশকে গাউগার স্ট্রিটে কিছু উচ্চমানের রেস্টুরেন্টও গড়ে উঠেছে (যেমন দীর্ঘদিন ধরে চলা জনপ্রিয় আর্জেন্টিনিয়ান রেস্টুরেন্ট গাউচোস)।
রান্ডল স্ট্রিট এবং ইস্ট এন্ড হলো অ্যাডিলেডের ঐতিহ্যবাহী ইতালিয়ান এবং গ্রীক খাবারের কেন্দ্র। তবে নতুন গড়ে ওঠা চীনা, থাই এবং জাপানি রেস্টুরেন্টও অ্যাডিলেড শহরে বিদ্যমান। গাউগার স্ট্রিটের মতো এখানেও বিভিন্ন বাজেটের জন্য খাবারের বিকল্প রয়েছে। রাস্তার পশ্চিম অংশে বাজেটবান্ধব রেস্টুরেন্ট বেশি থাকে, যা অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত। পূর্বের অংশে উচ্চ মানের খাবারের দোকান বিদ্যমান। রান্ডল স্ট্রিটের কাছাকাছি ইস্ট এন্ডের ছোট ছোট গলিতে কিছু অনন্য ক্যাফে রয়েছে, যেমন এবেনেজার প্লেস, বেন্ট স্ট্রিট এবং ইউনিয়ন স্ট্রিট।
ওয়াইমাউথ স্ট্রিট এবং পিরি স্ট্রিট গত দশকে নতুন খাবারের গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে (বিশেষ করে দামি লাঞ্চের জন্য)। কিং উইলিয়াম স্ট্রিটের পশ্চিম দিকে ওয়াইমাউথ স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি উচ্চমানের ক্যাফে এবং বিস্ট্রো রয়েছে। পিরি স্ট্রিটেও নতুন কিছু ক্যাফে গড়ে উঠেছে।
হিন্ডলি স্ট্রিট-এ মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। লেই স্ট্রিট এবং ব্যাংক স্ট্রিট গলিগুলোতেও নতুন খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে।
হাট স্ট্রিট ছোট আকারের, কিন্তু এখানে উচ্চমানের কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে যা অনেকের পছন্দ হবে। এখানে গুরমেট খাবারের দোকান এবং সুপারমার্কেটও আছে।
সাউথ ওয়েস্ট কর্নার নামক অঞ্চলটি গাউগার স্ট্রিটের দক্ষিণে অবস্থিত। শহরের এই অংশটি মূলত বসবাসের জন্য। তবে সেখানে কিছু চমৎকার খাবারের দোকান রয়েছে।
নর্থ অ্যাডিলেড
[সম্পাদনা]মেলবোর্ন স্ট্রিট-এ অনেক ছোট রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফে রয়েছে, যা এই অঞ্চলকে খাওয়া-দাওয়ার জন্য এক আকর্ষণীয় জায়গা করে তুলেছে।
ও'কনেল স্ট্রিট জুড়ে বিভিন্ন ধরনের টেক-অ্যাওয়ে, ক্যাফে, বেকারি এবং রেস্টুরেন্ট আছে, তাই খাবারের জন্য কোনো অভাব হবে না। এখানেই সেই দুটি দোকান অবস্থিত, যারা দাবি করে যে তারা প্রথম এবি খাবারটি তৈরি করেছে।
উপশহর
[সম্পাদনা]দ্য প্যারেড, নরউড: এখানে দীর্ঘ শপিং এলাকা এবং নানা ধরনের আন্তর্জাতিক খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সিবিডি থেকে ১২২-১২৪ নম্বর বাস অথবা অল্প সময়ের ট্যাক্সি রাইডে এখানে পৌঁছানো যায়।
জেটি রোড / মসলি স্কোয়ার, গ্লেনেলগ: ৩০ মিনিটের ট্রাম যাত্রার শেষে এখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়।
স্টুয়ার্ট রোড, ডুলউইচ: এখানে দুটি ক্যাফে, একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেস্টুরেন্ট এবং একটি চমৎকার বেকারি রয়েছে। নর্থ টের থেকে ১৪৫ বা ১৪৬ নম্বর বাস নিয়ে ফুলারটন রোড এবং ডুলউইচ এভ দিয়ে যাওয়া যায়।
কিং উইলিয়াম রোড, হাইড পার্ক: এটি উচ্চমানের ক্যাফে, কফি শপ এবং রেস্টুরেন্টের জন্য জনপ্রিয় এলাকা।
বাজেট
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে অনেক বাজেটবান্ধব রেস্টুরেন্ট আছে। বাইরে থেকে তেমন আকর্ষণীয় না হলেও, এদের বেশিরভাগেরই কিছু না কিছু বিশেষত্ব আছে, যার কারণে তারা এখনো ব্যবসায় টিকে আছে। দরজায় লাগানো মেনু দেখে খাবার বেছে নেওয়া ভালো। সাধারণত সস্তা খাবারের দাম $৮–১৪ এর মধ্যে থাকে।
অ্যাডিলেডে খুব বেশি চেইন রেস্টুরেন্ট নেই। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ফাস্টা পাস্তা, যেখানে এক প্লেট পাস্তার দাম $১০ থেকে শুরু হয়। এটি পাস্তার এক প্রকার ফাস্ট ফুড সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি এটি অন্য রাজ্যেও পাওয়া যাচ্ছে, তবে এর শুরুটা অ্যাডিলেডে হওয়ার ফলে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
মধ্যম মান
[সম্পাদনা]যদিও অ্যাডিলেডে অনেক বাজেট রেস্টুরেন্ট রয়েছে, তবে অ্যাডিলেডে অনেক মধ্যম মানের রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। এগুলো অ্যাডিলেডের প্রায় সব এলাকায় পাওয়া যায় (বিশেষ করে এমন জায়গায় যেখানে বাজেটবান্ধব রেস্টুরেন্ট নেই)। রেস্টুরেন্ট সাধারণত ভালো মধ্যম মানের খাবার পাওয়ার জায়গা, যেখানে মাছ ও চিপস এবং স্টেক, ল্যাম্ব চপ, শ্নিটজেল, পাস্তা ও রিসোটো পাওয়া যায়।
অ্যাডিলেডে বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট মূল শহর এবং উত্তর অ্যাডিলেডে কেন্দ্রীভূত হলেও ছোট শহরের কেন্দ্রেও অনেক রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। খাবারের ক্ষেত্রে ইতালিয়ান এবং ভারতীয় খাবার সহজেই পাওয়া যায়। এশিয়ান খাবার (চীনা, জাপানি, কোরিয়ান, ভিয়েতনামি এবং থাই) পাওয়াও সহজ, তবে সিডনির মানের সঙ্গে তুলনা করা কঠিন হতে পারে। গ্রিক এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাবারও সহজে পাওয়া যায়, তবে মেলবোর্নের মতো মান নাও হতে পারে।
উন্নত রেস্টুরেন্ট
[সম্পাদনা]সিটিতে ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাওয়া সহজ, তবে উপশহরে এর সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে কিছু উপশহরেও ভালো মানের ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্ট আছে, যদি আপনি সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। কাছাকাছি ম্যাকলারেরান ভ্যালি এবং বারোসা ভ্যালি-তেও চমৎকার ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অন্যান্য শহরের তুলনায় এখানে ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্টে কোনো নির্দিষ্ট পোশাকের নিয়ম নেই। #ড্রেস কোড অংশটি দেখুন।
ড্রেস কোড
[সম্পাদনা]অস্ট্রেলিয়ানরা সাধারণত বেশ ক্যাজুয়াল থাকে, তাই আপনি যা পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটাই পরতে পারেন। যদিও বেশিরভাগ মানুষ উচ্চমানের রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সময় কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে পোশাক পরেন, তবুও এখানে পোশাকের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং রেস্টুরেন্ট ও গ্রাহকরা পোশাকের মান নিয়ে খুব একটা কঠোর নন। তাই রেস্টুরেন্টে জিন্স পরা মানুষ দেখা খুবই স্বাভাবিক (বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে)।
ঘুমানোর ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডের সিবিডি-তে (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বা শহরের কেন্দ্রস্থল) থাকার শত শত ব্যবস্থা রয়েছে, ব্যাকপ্যাকার্স হোটেল থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল পর্যন্ত। তবে এই অঞ্চলের বাইরেও বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে।
যদি আপনি ব্যবসার জন্য ভ্রমণ করেন, তাহলে আপনার কাজের স্থানের কাছাকাছি ব্যবসায়িক হোটেল থাকতে পারে। তবে সাধারণত শহরের কেন্দ্রে বেশি থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়।
শহরের সবচেয়ে কাছের ক্যাম্পিং এলাকা হলো বেলেয়ার ন্যাশনাল পার্ক, যা অ্যাডিলেডের দক্ষিণ-পূর্ব উপশহরে অবস্থিত। এই পার্কটি শহর থেকে ১০ কিলোমিটারের কম দূরে এবং পার্কের কাছাকাছি ট্রেন পরিষেবা রয়েছে।
যদি আপনি সমুদ্রের ধারে থাকতে চান, তাহলে উপকূলের কাছাকাছি উপশহরগুলোর মধ্যে বেছে নিতে হবে। শহরের সবচেয়ে কাছের উপকূলীয় এলাকা হলো গ্লেনেলগ, তবে পোর্ট অ্যাডিলেড বা আউটার হারবারেও কিছু বিকল্প রয়েছে।
বাজেট-বান্ধব
[সম্পাদনা]কেন্দ্রীয় বাস স্টেশনের চারপাশে ব্যাকপ্যাকার থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়। সিবিডির কিছু অংশ এবং অ্যাডিলেডের দক্ষিণ ও উত্তর উপশহরে এ ধরনের অনেক ব্যবস্থা রয়েছে।
মধ্যম মান
[সম্পাদনা]মধ্যম মানের থাকার ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়ার জন্য সিবিডি (শহর ও নর্থ অ্যাডিলেড) সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এগুলো প্রায়ই ভিক্টোরিয়া স্কয়ারের সঙ্গে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। সিবিডির বাইরের রাস্তার পাশে মোটেল-স্টাইলের সস্তা থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়। সিবিডির বাইরে বেশিরভাগ থাকার ব্যবস্থাই মধ্যম মানের হবে। তবে দাম কিছুটা কম হতে পারে এবং সুবিধা বেশি থাকতে পারে।
ব্যয়বহুল
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেডে হিলটন বা নভোটেলের মতো চেইন হোটেল রয়েছে, যেগুলো মূলত সিবিডিতে কেন্দ্রীভূত। অ্যাডিলেডের বিভিন্ন জায়গায় বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে, বিশেষ করে শহরে এবং পশ্চিম অ্যাডিলেড-এ। পশ্চিম অ্যাডিলেড সমুদ্রের দৃশ্যের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]অস্ট্রেলিয়ার জরুরি নম্বর হলো ০০০। এই নম্বরে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ সেবা পাওয়া যায়। জরুরি নয় এমন পুলিশের সহায়তার জন্য ১৩১ ৪৪৪ নম্বরে ফোন করতে হবে।
অ্যাডিলেডকে একটি নিরাপদ শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি অন্যান্য মূলধারার অস্ট্রেলিয়ান শহরের তুলনায় অনেক নিরাপদ। তবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রতি সচেতন থাকা উচিত (বিশেষ করে রাতে)। অ্যাডিলেডের বেশিরভাগ সহিংস অপরাধ মদ্যপানের কারণে ঘটে। তাই মদ্যপদের সাথে ঝগড়া বা সংঘাত থেকে বিরত থাকুন।
শহরের পার্কল্যান্ডগুলো রাতের বেলা খুব একটা আলোতে থাকে না এবং মদ্যপ লোকজনের কারণে রাতের পর এসব এলাকা এড়িয়ে চলা ভালো। যদি উপশহরে পৌঁছানোর জন্য পার্কল্যান্ড পার হতে হয়, তাহলে রাস্তার কাছাকাছি থাকুন। রাতে ট্যাক্সি বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেওয়া পরামর্শযোগ্য।
অ্যাডিলেডের ট্রেন সাধারণত নির্ভরযোগ্য এবং সময়মতো আসে ও যায়। তবে বাসের সময়সূচি কিছুটা অস্থির হতে পারে। সন্ধ্যা ৭টার পর সব ট্রেনে নিরাপত্তারক্ষী থাকে এবং অনেক ট্রেন পরিষেবার বাস সংযোগও রয়েছে।
রাতে পুলিশ শহরের কেন্দ্রে (বিশেষ করে হিন্দলি স্ট্রিটে) টহল দেয়। নর্থ টেরেসের কাছে, ভিক্টোরিয়া স্কয়ারে হিলটন অ্যাডিলেড হোটেলের কাছে এবং রন্ডল স্ট্রিট ও পাল্টনি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে হাংরি জ্যাকস ফাস্ট ফুড আউটলেটের সামনে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডগুলো রয়েছে। অধিকাংশ নিয়মিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সেবা মধ্যরাতের আগে শেষ হয়, তবে শনিবার রাতে বিশেষ 'আফটার মিডনাইট' বাস পরিষেবা শহর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে চালু থাকে।
অ্যাডিলেডে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হয়, তবে সেগুলো সাধারণত তীব্র নয় এবং বড় ধরনের ক্ষতি করে না।
সুস্থ থাকুন
[সম্পাদনা]অ্যাডিলেড বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক মহাদেশে অবস্থিত, তাই এর সমস্ত পানীয় জল মারে নদী বা স্থানীয় জলাধার থেকে সংগ্রহ করা হয়। যদিও এই জল পান করার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ, তবে যারা এতে অভ্যস্ত নন তাদের কাছে এটি ভালো নাও লাগতে পারে। তাই ফিল্টার করা জল পান করাই ভালো।
সংযোগ
[সম্পাদনা]সিবিডি এবং বিমানবন্দরে ইন্টারনোড এর মাধ্যমে বিনা মূল্যে ব্যাপক ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যায় (শুধুমাত্র পোর্ট ৮০)।
সহায়তা
[সম্পাদনা]কনসুলেট
[সম্পাদনা]একটি অপেক্ষাকৃত ছোট শহর হিসেবে, অ্যাডিলেডে খুব বেশি কনসুলেট নেই। অনেক দেশের নিকটতম কনসুলেট মেলবোর্ন বা সিডনি-তে অবস্থিত।
- জার্মানি, পিও বক্স ৯০ - রন্ডল মল,, ☎ +৬১ ৮-৮২২৪-০৬৮। সোম-শুক্র ১০টা এএম-১টা পিএম শুধুমাত্র অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী। সম্মানসূচক কনসুলেট মাত্র।
- থাইল্যান্ড, রুম ৯, ১৪৪ সাউথ টেরেস, ☎ +৬১ ৮ ২৩১১৩৩৩। সোমবার-শুক্রবার ১১টা এএম-৩টা পিএম, থাই এবং অস্ট্রেলিয়ান ছুটির দিন ছাড়া। সম্মানসূচক কনসুলেট।
এখানে আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী সহজ ভাষায় অনুবাদ করা হলো:
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]- অ্যাডিলেড হিলস। এর মধ্যে মাউন্ট লফটি সামিট অন্তর্ভুক্ত, যা অ্যাডিলেড মহানগর এলাকার চমৎকার দৃশ্য উপহার দেয়। অ্যাডিলেড হিলস হলো একটি গ্রামাঞ্চল, যেখানে প্রতিটি গ্রামের নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষত, হাহ্নডর্ফ এবং স্টারলিং শহর দুটি অবশ্যই দর্শনীয়।
- ক্যাঙ্গারু দ্বীপ। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘুরে দেখুন।
- ফ্লিন্ডার্স রেঞ্জেস। উত্তরে যাত্রা করে ফ্লিন্ডার্স রেঞ্জেস এবং উইলপেনা পাউন্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পুরোনো ঐতিহ্য আবিষ্কার করুন।
- ভিক্টর হারবার। অ্যাডিলেড থেকে ড্রাইভ করে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। গ্রানাইট আইল্যান্ডে ফেয়ারি পেঙ্গুইনদের তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে দেখা যায়। এখানে নিকটবর্তী সার্ফ বিচগুলোতে ঘুরে দেখুন, যেমন পোর্ট এলিয়ট, মিডলটন এবং গুলওয়া।
- বারোসা রিজার্ভারে অবস্থিত উইস্পারিং ওয়াল।
- ইয়র্ক উপদ্বীপ। এটি অ্যাডিলেডিয়ানদের জন্য একটি জনপ্রিয় ছুটির গন্তব্য এবং এখানে ভিক্টর হারবারের তুলনায় কম পর্যটক আসে। এই উপদ্বীপের পাদদেশে ইনেস ন্যাশনাল পার্ক অবস্থিত।
- অ্যালিস স্প্রিংস। এটি প্রায় ১,৫০০ কিমি দূরে। যাত্রাপথে উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলো হলো পোর্ট অগাস্টা এবং কুবার পেডি।
- মেলবোর্ন। যাত্রাপথে কুরং ন্যাশনাল পার্ক, লিমেস্টোন কোস্ট এবং গ্রেট ওশান রোড হলো উল্লেখযোগ্য জায়গা।
- আইরে উপদ্বীপ। পোর্ট লিংকন শহরটি দেখতে যান, যেখানে টুনা ফার্মগুলো দেখা যায়। এখানে গ্রেট হোয়াইট শার্কের সাথে ডাইভিং (খাঁচায়) অথবা ডলফিন ও সিলের সাথে সাঁতার কাটার সুযোগ পাবেন। এছাড়াও আইরে উপদ্বীপের কফিন বে দেখুন, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ঝিনুক পাওয়া যায়।
Port Augusta ← Port Pirie ← | N E | → END |
Port Augusta ← Port Pirie ← | W E | → Gladstone, Peterborough → Broken Hill |
END ← | W E | → Murray Bridge → Melbourne |
Port Augusta ← Port Wakefield ← | N টেমপ্লেট:AURটেমপ্লেট:AUR S | → jct টেমপ্লেট:AUR → Adelaide Hills |
END ← | N টেমপ্লেট:AUR S | → Aldinga → Kangaroo Island|}
|