এশিয়া> দক্ষিণ এশিয়া> শ্রীলঙ্কা> উত্তর পশ্চিম প্রদেশ (শ্রীলঙ্কা)
উত্তর পশ্চিম প্রদেশ হল শ্রীলঙ্কার একটি প্রদেশ, যা সিংহলিতে ওয়ায়াম্বা নামে উল্লেখ করা হয়।
অঞ্চলসমূহ
[সম্পাদনা]প্রদেশটি কুরুনেগালা ও পুত্তলাম জেলা নিয়ে গঠিত। এর রাজধানী হল কুরুনেগালা।
শহরসমূহ
[সম্পাদনা]- 1 কালপিটিয়া—কাইটসার্ফিং, ডলফিন ও তিমি দেখা এবং স্কুবা ডাইভিঙের জন্য ৫০ কি. মি. দীর্ঘ বালির সৈকতের জন্য বিখ্যাত, যা একটি দীর্ঘ মাছ ধরা অঞ্চলচ কৃষি গ্রাম, খালি বন্য সৈকত, বালির টিলা এবং বাদাবনের আবাসস্থল।
- 2 কুরুনেগালা— এটি আটটি খুব বড় শিলা দ্বারা বেষ্টিত, যার মধ্যে ছয়টির নাম প্রাণীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এবং এরা সেই ছয়টি প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করে বলে কল্পনা করা হয়।
- 3 পুট্টালাম— পর্যটকরা এখানে দেশটির অন্যতম বৃহত্তম লেগুন, উইলপাট্টু জাতীয় পার্ক, কালপিটিয়া এবং সমুদ্র সৈকত দেখতে আসে।
- 4 চিলাও—আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি পর্যটন আকর্ষণসহ চিলাও একটি শিল্প এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শহর।
অন্যান্য গন্তব্য
[সম্পাদনা]অনুধাবন
[সম্পাদনা]ওয়ায়াম্বা প্রদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই সিংহলী জাতিগোষ্ঠীর। উদাপ্পু ও মুনেশ্বর্মে পুট্টলাম ও শ্রীলঙ্কান তামিলদের পাশপাশি যথেষ্ট শ্রীলঙ্কান মুর সংখ্যালঘু রয়েছে।
মাছ ধরা, চিংড়ি চাষ এবং রাবার গাছ লাগানো এই অঞ্চলের অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্প।
প্রদেশটি প্রধানত অসংখ্য নারকেল বাগানের জন্য পরিচিত।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]একটি চিহ্নিত শুষ্ক ঋতুসহ এর জলবায়ু গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং তাপমাত্রা জানুয়ারিতে ২০° সেলসিয়াস থেকে মার্চ মাসে ২৫° ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ মিমি বৃষ্টিপাতসহ প্রদেশের দক্ষিণ অংশটি আর্দ্র থাকে। তবে প্রদেশের উত্তরাংশ শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি, যেখানে কিছু অংশে গড়ে ১,১০০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]অঞ্চলটি গোটা দেশের প্রধান শহর এবং বন্দরগুলির সাথে সংযোগ প্রদানকারী একটি বিস্তৃত রেল এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা দ্বারা সংযুক্ত।
সড়কপথে
[সম্পাদনা]কিছু প্রধান সড়কের মধ্যে রয়েছে:
- A3: পুত্তালাম - চিলাও - নেগম্বো - কলম্বো (১৬২ কিমি)
- A6: আম্বেপুসা- কুরুনেগালা- ডাম্বুলা- ত্রিনকোমালি (১৯২ কিমি)
- A10 : কাতুগাস্তোতা- কুরুনেগালা - পুত্তলাম (১২৫ কিমি)
- A12 : পুত্তালাম -অনুরাধাপুরা- ত্রিনকোমালি (১৭৯ কিমি)
ট্রেনে
[সম্পাদনা]রেল লাইন:
- কলম্বো, রাগামা জংশন, পোলগাহওয়েলা জংশন, কুরুনেগালা, মাহো জংশন, অনুরাধাপুরা–এই রেল পথে রাজারাটা রজনী (উত্তর মধ্য অঞ্চলের রানী) নামী ট্রেন দ্বারা পরিষেবা প্রদান করা হয়।
- কলম্বো, রাগামা জংশন, নেগম্বো, চিলাউ, পুত্তলাম (১৯২৬ থেকে)। এই রেলপথটিতে মুথু কুমারী (মুক্তা রাজকুমারী) ট্রেন সেবা প্রদান করে এবং তা উত্তর-পশ্চিম উপকূল বরাবর ৮৩ মাইল (১৩৪ কিমি) দীর্ঘ একটি রুট।
ঘোরাঘুরি
[সম্পাদনা]দর্শনীয়
[সম্পাদনা]দীপ্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ওয়ায়াম্বা প্রদেশটি ১২ এবং ১৪ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কার চারটি মধ্যযুগীয় রাজ্যের মূলকেন্দ্র ছিল এবং এটি প্রত্নতত্ত্বের একটি ভান্ডার। বিদেশী আগ্রাসনের কারণে রাজধানী স্থানান্তর করতে বাধ্য হওয়ার পরেও শ্রীলঙ্কার রাজারা ইয়াপাহুওয়া, পান্ডুওয়াসনুওয়ারা, ডাম্বাদেনিয়া ও কুরুনেগালায় দুর্দান্ত দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। সেই দুর্গ, প্রাসাদ, বৌদ্ধ মন্দির ও মঠের চিত্তাকর্ষক ধ্বংসাবশেষ দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় দৃশ্য দেখায়।
শিলা মন্দির। ওয়ায়াম্বা ও কুরুনেগালা অন্যান্য অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ শিলা মন্দিরের জন্যও বিখ্যাত, যাদের বেশিরভাগই খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে নির্মিত। তবে প্রাচীর ও ছাদের ফ্রেস্কো, বিশাল বুদ্ধের ছবি, পাথরের শিলালিপি ও ভাস্কর্যগুলি মধ্যযুগ থেকে ১৮ শতকের শুরুর দিকে নির্মিত হয়েছিল।
ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক স্মৃতিস্তম্ভ। ১৬৭০ সালের কালপিটিয়ার (পুত্তলাম জেলা) সু-সংরক্ষিত ডাচ ফোর্ট ওয়ায়াম্বার ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক সময়ের একটি প্রমাণ। দুর্গটি ব্যারাক, স্টোর হাউস ও আবাসন কোয়ার্টার, ডাচ ঔপনিবেশিক স্তম্ভ ও প্রাচীন সমাধির পাথর দিয়ে পূর্ণ। কুরুনেগালায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ১৯ শতকের অনেক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি এজেন্টের বাসভবন ও রাজাপিহিল্লা রেস্ট হাউস অন্তর্ভুক্ত।
করণীয়
[সম্পাদনা]সৈকত
[সম্পাদনা]ভারতীয় মহাসাগরের ঝকঝকে নীল জলরাশি এবং ওয়েয়াম্বা প্রদেশের পশ্চিম তীরে অবস্থিত প্রাকৃতিক ক্রান্তীয় উপহ্রদগুলি প্রায় ২৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত, যা সূর্যালোকিত সৈকতে ভেসে চলে। সৈকতগুলি দক্ষিণ প্রান্তে ওয়াইক্কাল থেকে পুত্তলাম জেলার ডাচ বে পর্যন্ত বিস্তৃত। ওয়ায়াম্বার সেরা রিসোর্ট এসব সৈকতের মধ্যে অবস্থিত। তাদের কয়েকটি হল: মারাউইলা, তালভিলা, কালপিটিয়া ও ওয়াক্কালে। সৈকতগুলি একটি উপহ্রদ বা নদীর সাথে মিলিত রয়েছে। সৈকতগুলি ছুটি কাটানোর একটি চমৎকার জায়গা হতে পারে।
কিছু সমুদ্র সৈকত রিসোর্ট কান্দাকুলিয়া ও কারাইটিভু অঞ্চলের জলের নিচে অবস্থিত প্রবাল আশ্চর্যভূমি দেখানোর আয়েজনও করে। উপকূলীয় এলাকায় অনেক মাছ ধরার গ্রাম রয়েছে।
উৎসব
[সম্পাদনা]ওয়ায়াম্বার লোকেরা বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপন করে।
সমস্ত বৌদ্ধ মন্দির বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলিকে স্মরণ করে ভেসাক, পোসন ও এসেলা উত্সব উদযাপন করে এবং এই উত্সবগুলিতে রঙিন সজ্জা, লণ্ঠন, আলোকসজ্জা ও প্রতিযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী নাচ, ড্রামিং, পোশাকধারী বিশিষ্ট ব্যক্তি ও হাতির প্যারেড হয়। দুটি উল্লেখযোগ্য বর্ণাঢ্য বৌদ্ধ মিছিল উইলবাওয়া রাজা মহা বিহারায় (প্রধান মন্দির) এবং অথান্ডা রাজা মহা বিহারায় দ্বারা সংগঠিত হয় এবং কুরুনেগালা শহরে প্যারেডও হয়। সেন্ট অ্যাননের রোমান ক্যাথলিক গির্জাটি পুত্তলাম জেলার তালাভিলায় একটি দুর্দান্ত সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। গির্জা মার্চ ও জুলাই মাসে প্রধান উত্সবে হাজার হাজার তীর্থযাত্রীকে আকর্ষণ করে।
মুনেশ্বরম ও উদপ্পু হিন্দু মন্দির অনেক হিন্দু ভক্তের তীর্থস্থান। মানুষ দেবতাদের পূজা করতে এবং অনুগ্রহ খোঁজার জন্য জড়ো হয়। মুন্নেশ্বরমে ঈশ্বর শিবের প্রধান মন্দিরগুলি নিয়ে গঠিত এবং ঐতিহ্যগত হিন্দু শৈলী অনুসারে নির্মিত হয়েছে। মুনেশ্বরম আগস্টে তার প্রধান উত্সব উদযাপন করে, যেখানে আগুনে হাঁটার অনুশীলন করা হয়। এছাড়া উদাপ্পুয়া হিন্দুদের তিনটি বিখ্যাত উপাসনালয়ের মধ্যে একটি, যা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত। এটি একটি মন্দির কমপ্লেক্স এবং আগস্ট মাসেও একটি বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
রমজান, হজ ও মিলাদ-উন-নবী উৎসবও ওয়ায়াম্বার সংখ্যালঘু মুসলিমরা বিশেষত পুত্তলাম, কুরুনেগালা এবং চিলাওয়ের ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত সব মসজিদে উদযাপন করে। এই উদযাপনগুলি মূলত ধর্মীয় চরিত্র, কোরান তেলাওয়াত এবং রান্না করা খাবার ও মিষ্টি বিতরণ।
তিনটি মন্দিরই কুরুনেগালা থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায়। যথাক্রমে মুন্নেশ্বরম প্রায় ৭০ কিমি, উদপ্পুওয়া ৯৫ কিমি এবং সেন্ট অ্যানস প্রায় ১১০ কিমি।