বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে
দিনাজপুর জেলা > ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি

এই পাতাটি অপসারণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। অপসারণ নীতিমালাটি পড়ে, উইকিভ্রমণ:অপসারণ ভোটাভুটি পাতায় আপনার মতামত দিন। আলোচনাটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দয়া করে এই বিজ্ঞপ্তিটি সরিয়ে ফেলবেন না। আপনি যদি এই নিবন্ধের লেখক হন তবে মনে রাখবেন, এই মনোনয়নটি আপনার কাজের সমালোচনা নয়, বরং এটি আপনার নিবন্ধের শিরোনাম বা বিষয় উইকিভ্রমণের নিবন্ধের মানদণ্ড পূরণ করতে পারে কিনা তার একটি বিজ্ঞপ্তি।
ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর প্রবেশ পথ

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বংশের আদি পুরুষ নবীর মোহাম্মদ এর পুত্র ফুল মোহাম্মদ চৌধুরী নির্মিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে ৩০টি থানা নিয়ে গঠিত অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার মুসলমান জমিদারদের মধ্যে ছিল ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার।

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বংশের আদি পুরুষ ছিলেন নবীর মোহাম্মদ। তিনি জলপাইগুড়ি থেকে নদীপথে ব্যবসা উপলক্ষে ঘুঘুডাঙ্গার কিছু দূরে পাথর ঘাটায় আসেন এবং বাসাবাড়ী নির্মাণ করে ৫০০টি ধানভাঙ্গা ঢেঁকি স্থাপন করে নদীপথে কলকাতার চিৎপুরেও ধান চাউলের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। তার পুত্র ফুল মোহাম্মদ চৌধুরী ক্রমান্বয়ে বহু জমিদারী ক্রয় করেন এবং পাথর ঘাটা হতে ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। ফুল মোহাম্মদের তিন পুত্র ছিল ওলি মোহাম্মদ চৌধুরী, মোজহর মোহাম্মদ চৌধুরী ও হাজী জমির উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। হাজী জমির উদ্দিনের ৫ পুত্রের নাম মহিউদ্দীন আহাম্মদ চৌধুরী, সিরাজ উদ্দীন আহমদ চৌধুরী, এমাজউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, হাজী আমিনউদ্দীন আহমদ চৌধুরী এবং হাজী রহিমউদ্দীন আহমদ চৌধুরী। ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারী এলাকা ছিল ১১টি থানার মধ্যে। এগুলো হচ্ছে-

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারীর বার্ষিক ইজারা ছিল প্রায় ১ লক্ষ টাকা। ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারী এলাকায় ছিল ৪১ টি তহশিল অফিস এবং প্রায় ৮০জন বরকন্দাজ, পেয়াদা। দিনাজপুর শহরের বড় ময়দানের পূর্ব পার্শ্বে ঈদগাহ বস্তী মহল্লায় ২টি প্রাচীন কুটিবাড়ী সহ এক বিরাট এলাকা এ জমিদার পরিবারের সম্পত্তি ছিল।১৯৪৭সালে দেশ বিভাগের পর ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারীর বেশীর ভাগ এলাকা ভারতের অর্ন্তভূক্ত হয়। দেশ বিভাগের পর পরই দিনাজপুর জেলা প্রশাসন জরুরি শাসন কার্য পরিচালনার নিমিত্তে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারী হতে কিছু টাকা কর্জ হিসাবে গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অবশ্য এ টাকা পরিশোধ করা হয়। পঞ্চাশের দশকে জমিদারী উচ্ছেদ আইনের ফলে এ পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার ক্রমাবনতি ঘটে।১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাত্রিতে গণহত্যা শুরুর কয়েকদিন পর দিনাজপুরের বাঙ্গালী, আর্মি, ইপিআর, পুলিশ সহ মুক্তি বাহিনীল প্রায় ১৫০০সদস্য, ২২পি যানবাহন ও প্রচুর অস্ত্রসহ ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামে ক্যাম্পে স্থাপন করে। এছাড়া দিনাজপুর শহরের সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বহু কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ পাক আর্মির অত্যাচারের ভয়ে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার পরিবারের সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতায় এ বিপুল সংখ্যক মুক্তিবাহিনী, কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের কয়েকদিন যাবত আহার বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। পাক সৈন্যগন ঘুঘুডাঙ্গা অভিমুখে অগ্রসর হলে জমিদার পরিবারের সদস্যসহ সাধারণ মানুসগণ ঘুঘুডাঙ্গা পরিত্যাগ করে ভারতীয় এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করে। হানাদার পাকা সৈন্যরা মুক্তি ফৌজকে আশ্রয় ও সাহায্য সহযোগিতা দানের কারণে ঐতিহাসিক ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ীতে বোম সেলের আঘাতে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে। বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর জমিদার পরিবারের সদস্যরা দেশে ফেরত আসেন। জমিদার বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়ায় তারা ক্রমে দিনাজপুর শহরের ঈদগাহবস্থী মহল্লায় তাঁদের নিজস্ব জায়গায় বাড়ীঘর নির্মাণ করেন।১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধ শুরু হবার পূর্বেও ঘুঘুডাঙ্গা এষ্টেটে দুর্লভ সামগ্রীর মধ্যে ছিল একটি সোনার চেয়ার দেশের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে, ১০১ ভরি ওজনের সোনার একটি কৃত্তিম কইমাছ,রূপার বাটযুক্ত একটি সুদর্শন ছাতা, রূপার বাট নির্মিত একটি বিরাট হাত পাখা ৪টি রৌপ্য নির্মিত্ত আসা (লাঠি) ইত্যাদি। এ ছাড়া বড় বড় ভোজ সভার রান্নার নিমিত্তে ১৩/১৪টি বিরাট তামার ডেকটি, বিরাট সামিয়ানা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছিল, যা এককালে দিনাজপুর শহরেরর গন্যমান্য ব্যক্তিগণ বিবাহ বা অন্যান্য ভোজসভার রান্নাবান্নার জন্য ঘুঘুডাঙ্গা থেকে নিয়ে আসতেন। কারণ স্বাধীনতার পূর্বে দিনাজপুর শহরে কোন ডেকরেটরের দোকান ছিল না। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার পাক বাহিনী ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি ধ্বংসের সময় এ সব দূর্লভ সামগ্রী লুট হয়।

যাতায়াত

[সম্পাদনা]

ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে দিনাজপুর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে করে দিনাজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলি ছেড়ে যায়। বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, এস এ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ,কেয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি। এছাড়া রাজধানীর উত্তরা থেকে বেশকিছু বাস দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়। অন্য আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে। একতা এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার বন্ধ থাকে। দিনাজপুর থেকে অটোরিক্সা ভাড়া করে সহজেই দেখতে যেতে পারবেন, এটি দিনাজপুর শহর থেকে মাত্র ৬ মাইল দক্ষিনে কোতয়ালী থানার আউলিয়াপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।

রাত্রিযাপন

[সম্পাদনা]

দিনাজপুর শহরে ভাল মানের হোটেলে থাকতে চাইলে পর্যটন মোটেলে থাকা যাবে। সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল ডায়মন্ড, নিউ হোটেল, হোটেল আল রশিদ, হোটেল রেহানা, হোটেল নবীন, ইত্যাদি। এছাড়া রামসাগরে অবস্থিত স্থানীয় বন বিভাগের বাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন।

খাওয়াদাওয়া

[সম্পাদনা]

দিনাজপুরে রুস্তম, ফাইভ স্টার, দিলশাদ হোটেলে গরুর ভুনা মাংস, কাঠি কাবাব ইত্যাদি খেয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া দিলশাদ রেস্তোরাঁর পাটিসাপটার বেশ সুনাম রয়েছে। এছাড়া পুলাহাট বিসিক এলাকায় আবুল হোটেলে ভাত, গরু কিংবা মুরগির মাংস, ডাল আর সবজি খেতে পারেন।