আসাম বা অসম ভারতের একটি রাজ্য। উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত এবং এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর পূর্ব ভারতের আরও ছয়টি রাজ্য, যথা অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, এবং মেঘালয় দ্বারা আসাম বেষ্টিত এবং আসামসহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সংকীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত। এছাড়াও আসামের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে।
১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়াণ্ডাবু চুক্তির মাধ্যমে আসাম প্রথম ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই রাজ্য মূলত চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য বিখ্যাত। আসাম সাফল্যের সঙ্গে একশৃঙ্গ গণ্ডার সংরক্ষণ করে তাদের অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে। এছাড়াও এখানে বাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষিত হয়েছে। এশীয় হাতির অন্যতম বাসস্থান হল আসাম। এই রাজ্যটি বন্যপ্রাণী পর্যটনের ক্ষেত্রে ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠছে।
শহর
[সম্পাদনা]- গুয়াহাটি - ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর৷ গুয়াহাটি মহানগরের মধ্যে কামাখ্যা মন্দির, অসম রাজ্যিক সংগ্রহালয়, গুয়াহাটি চিড়িয়াখানা, শংকরদেব কলাক্ষেত্র, উমানন্দ ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যটন স্থান আছে৷ এছাড়াও, গুয়াহাটি শহর থেকে কিছু নিকটে অবস্থিত বাইহাটা চারিআলির মদন কামদের দেবালয় ও দক্ষিণ কামরূপ চানডুবি বিল আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল।
- উত্তর লখিমপুর
- করিমগঞ্জ
- কামপুর
- খারুপেটীয়া
- গহপুর
- চাপর
- ডিফু
- তিনসুকিয়া
- তেজপুর
- দিসপুর
- ধেমাজি
- নগাঁও
- বঙাইগাঁও
- বরপেটা
- বাঁশকান্দি
- বিশ্বনাথ চারিআলি
- ভেটাপাড়া
- মঙ্গলদৈ
- যোরহাট
- রঙ্গিয়া
- লঙ্কা, আসাম
- শিবসাগর
- শিলচর
- শুয়ালকুচি
- হাইলাকান্দি
পর্যটন
[সম্পাদনা]- মঠ মন্দির
- কামাখ্যা
- বশিষ্ঠ মন্দির
- উমানন্দ, গুয়াহাটি
- নবগ্রহ মন্দির, গুয়াহাটি
- অশ্বক্লান্তা, উত্তর গুয়াহাটি
- ভিমেশ্বর ধাম, গুয়াহাটি
- দীর্ঘেশ্বরী দেবালয়, উত্তর গুয়াহাটি
- দৌল গোবিন্দ মন্দির, উত্তর গুয়াহাটি
- গরখীয়া দৌল
- ঢেঁকীয়াখোরা বর নামঘর
- বিল্বেশ্বর দেবালয়
- শির দোল
- মহাভৈরর মন্দির, তেজপুর
- ভৈররী মন্দির, তেজপুর
- কেতেকেশ্বর দেবালয়, তেজপুর
- মহামায়া ধাম, ধুবুরী
- কীর্তন ঘর, বরপেটা
- শ্রীশ্রীপরিহরেশ্বর দেবালয়, ডুবি
- জাতীয় উদ্যান
- কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান
- মানস জাতীয় উদ্যান
- ডিব্রু-চৈখোরা জাতীয় উদ্যান
- ওরাং জাতীয় উদ্যান
- নামেরি জাতীয় উদ্যান
- অভয়ারণ্য
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]ইতিহাস
[সম্পাদনা]আসাম এবং এর আশপাশের এলাকগুলোতে প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। সতেরোশো থেকে আঠারোশো শতকের মধ্যে লেখা কালিকাপুরাণ অণুসারে আসামের প্রাচীনতম শাসক ছিলেন মহীরঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আসামসহ পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হতে শুরু করে। যার ফলে ওই অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব দাবী করে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই আসামে অধুনা বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) থেকে শরণার্থীরা আসতে শুরু করে। ১৯৬১ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চালিহার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পরিচালিত আসাম সরকার বিধানসভায় একটি বিল পাশ করে, যার মাধ্যমে পুরো রাজ্যে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে অসমীয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দক্ষিণ আসামের কাছাড় জেলার বাঙালিরা ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে এই ভাষা আন্দোলন চলাকালীন আধা-সামরিক বাহিনীর গুলিতে এগারোজন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। এর পরে চাপের মুখে ভাষা বিলটি প্রত্যাহৃত হয়। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের পর থেকে আসামে বিভিন্ন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যথা, আলফা এবং ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড ইত্যাদি জন্ম নেয়।
ভাষা
[সম্পাদনা]অসমীয়া ভাষা প্রায় দেড় কোটি মানুষের মাতৃভাষা। এদের অধিকাংশই ভারতের অসম রাজ্যে বাস করেন। এছাড়াও ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র ভুটান এবং বাংলাদেশেও অসমীয়া প্রচলিত। পূর্ব ভারতীয় মাগধী প্রাকৃত থেকে অসমীয়া ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৮২৬ সালে অসম ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে এবং ১৮৩৬ সালে বাংলা ভাষাকে অসমের রাষ্ট্রভাষা করা হয়। এর প্রায় ৩৬ বছর পরে ১৮৭২ সালে অসমীয়া ভাষা রাজ্যটির সরকারি ভাষা হিসেবে ফিরে আসে। বর্তমানে অসমীয়া ভারতের অসম রাজ্যের সরকারি ভাষা এবং রাজ্যের সমস্ত কর্মকাণ্ডে এটি ব্যবহৃত হয়।
ধর্ম
[সম্পাদনা]আসামের প্রধান ধর্মগুলো হল হিন্দুধর্ম (62.9%) এবং ইসলাম (34.9%)। এছাড়া অন্যান্য ধর্মগুলির মধ্যে রয়েছে খ্রিস্ট ধর্ম (3.7%), শিখ ধর্ম (1%), বৌদ্ধ ধর্ম, ইত্যাদি।