উইকিভ্রমণ থেকে

ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। এটি দেশের রাজধানী ঢাকা হতে ২৫০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত যা ২০০৭ সালে অভয়ারণ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৩০২ হেক্টর জমি নিয়ে এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি গঠিত।

বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

কক্সবাজার শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে চকরিয়া উপজেলায় রয়েছে ফাঁসিয়াখালী বনাঞ্চল। এখানকার বনের প্রকৃতি হলো ক্রান্তিয় চিরহরিৎ বন। এটি কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধিক্ষেত্রাধীন। ১৯৫০ সালের দিকে বন বিভাগ এখানে ১১২ সদস্যের ২টি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রত্যেককে ২ একর করে জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। এরা বন জায়গিরদার নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে প্রবল জনসংখ্যার চাপে, জলবায়ূ পরিবর্তন ও রহিংগা শরনার্থীদের আগমনের ফলে বর্তমানে এ বনের উপর প্রায় ২০,০০০ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।

চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ি বনভূমি হলেও বর্তমানে এ বনে প্রাচীন বৃক্ষজাতিয় উদ্ভিদ কম দেখা যায়। এই অভয়ারণ্যে গর্জন, সেগুন, তেলসুর, ঢাকিজামসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বৃক্ষের পাশাপাশি সৃজিত বাগানও রয়েছে। এখানে এলে প্রকৃতির সানিধ্য লাভ করা যায়। সুবিশাল গর্জন গাছের ছায়ায় রয়েছে নানান লতা গুলম ও প্রাকৃতিক বাঁশ ঝাড়। বুনোশুয়র, চিতা, হরিণ ইত্যাদি ছাড়াও দেখা মিলবে বুনো হাতির পাল। ফাঁসিয়াখালী অত্যন্ত ঘন বন। এখানে বিরল প্রজাতির শুশুক পাখি, বিরল প্রজাতির উল্টো লেজ বানর রয়েছে।

ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক ও মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের কাছাঁকাছি অবস্থিত হওয়ায় এ বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যটি একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষন হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশে প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে। নীরবে নিরাপত্তায় বন্যপ্রাণী দেখার পাশাপাশি ইকো অ্যাডভেঞ্চারের নানা ব্যতিক্রম আইটেম রয়েছে এথানে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ২৭ কিলোমিটার বন্যহাতির জন্য মরণফাঁদে পরিণত হতে যাচ্ছে যার মধ্যে ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকাও রয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ১২৮ কিলোমিটারের মধ্যে ২৭ কিলোমিটারের মতো পড়ছে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ফাইস্যাখালী (ফাঁসিয়াখালী) বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের ভেতর; ওই রেললাইনের অন্তত ২১টি স্থানে পড়বে হাতির বসতি এবং চলাচলের পথ। ১২৮ কিলোমিটারের এ ডুয়েল গেজ রেললাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে; এর মধ্যে চুনতি দিয়ে যাবে ১৫.৮ কিলোমিটার, ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অঞ্চল দিয়ে ১০.৩ কিলোমিটার এবং দশমিক ৯ কিলোমিটার পথ যাবে মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের মধ্য দিয়ে। এই প্রকল্পে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপকহারে ক্ষতি হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের এই ২৭ কিলোমিটার বন্যহাতির জন্য মরণফাঁদে পরিণত হবে। ওই রেললাইনের অন্তত ২১টি স্থানে পড়বে হাতির বসতি এবং চলাচলের পথ। পৃথিবীর কোনো দেশে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে রেললাইন নিয়ে যাওয়ার নজির না থাকলেও বাংলাদেশে তা করা হচ্ছে এবং এতে জীববৈচিত্র্য হুমকীর মুখে পড়ছে।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

রাজধানী ঢাকা থেকে চকরিয়ার দূরত্ব ২৫৫ কিলোমিটার আর কক্সবাজার শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও বিমান সকল পথেই কক্সবাজার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার থেকে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে চকরিয়ার যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক হতে উত্তর দিকে এ অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। সড়ক পথে চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার হতে চকোরিয়া নেমে সেখান থেকে সিএনজি অটোরিক্সা কিংবা জীপ গাড়িতে এ অভয়ারণ্যতে যাওয়া যায়।

ঢাকার কমলাপুর হতে রেল যোগে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকে চকরিয়ার যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে বিমান যোগে কক্সবাজার এসে চকরিয়ার যাওয়া যায়। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান হতেও এখানে আসা যায়।

নৌপথে বিভিন্ন এলাকা হতে এবং দেশের বাহির হতেও সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম এসেও এখানে আসা যায়।

ঘুরে দেখুন[সম্পাদনা]

নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পারেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো -

  • ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক - চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন সড়কের পূর্বপাশে অবস্থিত ৬০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে এ সাফারি পার্কের অবস্থান। যে কোন যানবাহনে যাওয়া যায়।
  • শাহ্ ওমরের মাজার - কাকারা ইউনিয়নে অবস্থিত। চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • বিজয়ানন্দ বৌদ্ধ বিহার - মানিকপুরে অবস্থিত। চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।

এছাড়াও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ফজল কুকে ষাট গম্বুজ মসজিদ;
  • হাঁসের দীঘি;
  • বীর কামলা দীঘি;
  • মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান।

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

চকরিয়ায় থাকার জন্য সরকারি পরিচালনাধীন উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন সুলভ মূল্যে থাকার মত হোটেল রয়েছে। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম ও জেলা শহর কক্সবাজার মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই অবস্থিত বলে পর্যটকরা সেখানেই চলে যায়; কারণ সেখানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্যে রয়েছে উন্নতমানের হোটেল। থাকার জন্য যেতে পারেন -

  • জেলা পরিষদ ডাক বাংলো - চকরিয়া।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

চকরিয়ায় যে কোন রেস্টুরেণ্টে সুলভ মূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলার মানিকপুরের মহিষের দই বিখ্যাত। তবে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম ও জেলা শহর কক্সবাজার মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই অবস্থিত বলে পর্যটকরা সেখানেই চলে যায়; কারণ সেখানে রয়েছে উন্নতমানের জামান হোটেল, খুশবু, মেজবান প্রভৃতি হোটেল ও রেস্তোরা।

সতর্কতা[সম্পাদনা]

যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন -

জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
  • ওসি, রাঙ্গুনিয়াঃ মোবাইল: ০১৭১৩-৩৭৩ ৬৬৭।