উইকিভ্রমণ থেকে

সিংড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত। এটি দেশের রাজধানী ঢাকা হতে ২২৫ কিমি উত্তরে অবস্থিত, যা জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয় ২০১০ সালে। এই বনভূমির মোট আয়তন ৩৫৫ হেক্টর এবং এর মধ্যে সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানের পরিমাণ ৩০৫.৬৯ হেক্টর।

বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত এলাকা যা দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার আওতাভূক্ত। দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৪০ কি.মি. উত্তরে এবং বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৫ কি.মি. দূরে ভোগনগর ইউনিয়নে এর অবস্থান। এটি মূলতঃ শাল প্রকৃতির বৃক্ষের বন, যার মধ্য দিয়ে নর্ত নদী বয়ে গেছে।

ডালাগ্রাম, চাউলিয়া, সিংড়া ও নর্ত নদী এ ৪টি মৌজায় সিংড়া জাতীয় উদ্যান বিস্তৃত; স্থানীয়ভাবে যা সিংড়া শালবন নামে পরিচিত। সিংড়া বনকে ১৮৮৫ সালে অধিভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বনবিভাগের অধীনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধার উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর বনবিভাগ এটিকে উত্তরাঞ্চলে অন্য তিনটি বনাঞ্চল এর সাথে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সিংড়া মৌজার নামানুসারে এই সংরক্ষিত বনের নামকরণ করা হয় সিংড়া জাতীয় উদ্যান।

সিংড়া জাতীয় উদ্যানে মূলত পত্রঝরা শালবৃক্ষের প্রাধান্য দেখা যায়। তবে শাল ছাড়াও এখানে জারুল, তরুল, শিলকড়ই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমনি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরতকি, বয়রা, আমলকি এবং বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতা-গুল্ম রয়েছে।

এক সময়ে এই বনে বাঘ, নীল গাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য জীবজন্তুর আবাস ছিল। তবে বনভূমি ধ্বংস ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে এ বনভূমি থেকে জীবজন্তু হারিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে এই বনে খরগোশ, শেয়াল, সাপ, বেজি সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গের দেখা পাওয়া যায়।

দেশী শুমচা, হাঁড়িচাচা, ব্রঞ্জ ফিঙ্গে, নীল গলা বসন্ত বৌরি, বড় তিত, খুরুলে পেঁচা, মেঘ হও মাছরাঙা, ইউরেশীও-কণ্ঠী ঘুঘু, তিলা ঘুঘু, বাংলা কাঠ-ঠোকরা, বেনে বউ, বুলবুলি, টুনটুনি, লম্বা লেজ রাতচরা ইত্যাদি পাখি বর্তমানে এখানে দেখা যায়।

পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে একটি ছোট পরিসরের রেস্ট হাউজ ও দুটি পিকনিক স্পট রয়েছে। শীত মৌসুমে এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সিংড়া শালবনের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে আরডিআরএস বাংলাদেশ এর সহযোগীতায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করছে।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

রাজধানী ঢাকা থেকে বীরগঞ্জ উপজেলার দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটার এবং জেলা সদর দিনাজপুর থেকে দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। দিনাজপুর জেলাটি একটি সমভূমি অঞ্চল হওয়ায় এখানকার যেকোনো স্থানে আসার জন্য সড়কপথ সবচেয়ে সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা। তবে, রেল পথেও এখানে আসা সম্ভব। তবে, নৌ এবং বিমান পথে এখানে সরাসরি পৌছানোর কোনো সুযোগ এখনও গড়ে ওঠেনি।

ঢাকার গাবতলী-কল্যাণপুর ও মহাখালী থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলি ছেড়ে যায়। বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, এস এ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি।

ঢাকা থেকে দিনাজপুর রেলে যেতে প্রায় ১০ ঘণ্টা লাগে। একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে সকাল ১০ টায় এবং দিনাজপুর থেকে রাত ৯ টা ২০ মিনিটে আর দ্রুতযান ঢাকা থেকে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিট এবং দিনাজপুর থেকে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে বাস করে সেখান থেকে যাওয়া যায়।

ঘুরে দেখুন[সম্পাদনা]

নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পারেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো -

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

দিনাজপুর থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। দিনাজপুর শহরে ভাল মানের হোটেলে থাকতে চাইলে পর্যটন মোটেলে থাকা যাবে। সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল ডায়মন্ড, নিউ হোটেল, হোটেল আল রশিদ, হোটেল রেহানা, হোটেল নবীন, ইত্যাদি। এছাড়া রামসাগরে অবস্থিত স্থানীয় বন বিভাগের বাংলোতে জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে থাকা যায়। এছাড়াও রয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্যে রয়েছে উন্নতমানের -

  1. জেলা পরিষদ ডাকবাংলো - দিনাজপুর।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

দিনাজপুর খাবারের জন্য বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • খাবার ঘর;
  • রুচিতা;
  • আনন্দ রেস্তোরা;
  • বনফুল এন্ড কোং।

যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন -

জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
  • ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বীরগঞ্জ থানা; মোবাইল: ০১৭১৩-৩৭৩ ৯৬৭।

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন