বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে

বরাহনগরদক্ষিণেশ্বর হচ্ছে কলকাতার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত দুই শহরতলি। উভয় শহরতলির মধ্যে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিদ্যমান।

অনুধাবন

[সম্পাদনা]

মূলত ওলন্দাজদের হাত ধরে বরাহনগরের পথ চলা শুরু হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ওলন্দাজ বণিকেরা এখানে বসতি স্থাপন করে একে এক বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র ও পাট শিল্পের কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। ক্রমে এটি কৃষি ও শিল্প যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, ক্যাস্টর অয়েল, বিভিন্ন পাট দ্রব্য, দেশলাই ইত্যাদি প্রস্তুতির এক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বরাহনগরের উত্তরে রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি স্থাপন স্থাপন করেছিলেন, এবং এটি হিন্দুদের এক অন্যতম তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা প্রতিদিন এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। এই কালীবাড়ি ছাড়াও আদ্যাপীঠ, সারদা মঠ ইত্যাদি বর্তমান। এই এলাকার গুরুত্ব এবং গঙ্গার উপনদী হুগলির প্রবাহের জন্য স্থানীয়রা একে বারাণসীর যমজ বলে গণ্য করেন।

প্রবেশ

[সম্পাদনা]
মানচিত্র
বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বরের মানচিত্র।
কুঠি ঘাট, বরাহনগর

বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বর পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এবং শহরটির বিভিন্ন দিকে যাওয়ার জন্য একটি ভাল পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। বাস, রিকশা, অটোরিকশা, টোটো রিকশা ভ্রমণের জন্য উপলব্ধ।

রেলপথে

[সম্পাদনা]

কলকাতা শহরতলি রেলের কর্ড লিঙ্ক রেলপথ গামী লোকাল ট্রেন 1 দক্ষিণেশ্বর2 বরাহ নগর রোড স্টেশনে দাঁড়ায়।

মেট্রোতে

[সম্পাদনা]

কলকাতা মেট্রোর নর্থ–সাউথ লাইন উপরে উক্ত কর্ড লিঙ্ক রেলপথ বরাবর বিস্তৃত এবং দক্ষিণেশ্বর, বরাহনগর ও নোয়াপাড়ায় এর স্টপ আছে।

গাড়িতে

[সম্পাদনা]

বরাহনগরের উপর একাধিক রাজ্য সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে বর্তমান, যার মধ্যে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড (এসএইচ ১) ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে উল্লেখযোগ্য। উভয় সড়ক ডানলপ ফ্লাইওভারে মিলিত হয়।

ফেরিতে

[সম্পাদনা]
  • 3 কুঠি ঘাট সপ্তদশ শতাব্দীতে ওলন্দাজরা এখানে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন, যা "ডাচ কুঠি" নামে পরিচিত। এটি কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য এলাকা। এই ডাচ কুঠি থেকেই ঘাটের নাম "কুঠি ঘাট" হয়েছে।
  • 4 দক্ষিণেশ্বর ঘাট আপনি বেলুড় মঠ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত ২০–৩০ মিনিটের নৌকা যাত্রা উপভোগ করতে পারেন।

দেখুন

[সম্পাদনা]
কৃপাময়ী কালী মন্দির
বরাহনগর মঠ

বরাহনগর

[সম্পাদনা]
  • 1 আলমবাজার মঠ রামকৃষ্ণ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় মঠ। বিদেশ থেকে ফেরার পর স্বামী বিবেকানন্দ এখানে এসেছিলেন। উইকিপিডিয়ায় আলমবাজার মঠ (Q17001290)
  • 2 কাচের মন্দির, ১, প্রাণ কৃষ্ণ সাহা লেন
  • 3 কৃপাময়ী কালী মন্দির (জয় মিত্র কালীবাড়ি)। একটি নবরত্ন কালী মন্দির, যেখানে তিনি "কৃপাময়ী" হিসেবে পূজিত হন। এখানে দ্বাদশ শিবমন্দির বর্তমান। উইকিপিডিয়ায় কৃপাময়ী কালীমন্দির, বরানগর (Q6437106)
  • 4 বরাহনগর মঠ রামকৃষ্ণ সম্প্রদায়ের প্রথম মঠ। শ্রীরামকৃষ্ণের পরলোকগমনের পর স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের অন্যান্য কিছু শিষ্যগণ চিরকালের জন্য এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখানেই তাঁরা প্রথম বার বেলুড় মঠ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। উইকিপিডিয়ায় বরানগর মঠ (Q14947352)

দক্ষিণেশ্বর

[সম্পাদনা]
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি
দ্বাদশ শিব মন্দির

আদ্যাপীঠ মন্দির ছাড়া নিচে দেওয়া দক্ষিণেশ্বরের সমস্ত আকর্ষণে পৌঁছতে আপনাকে লোকাল ট্রেন বা মেট্রো করে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে কালীবাড়ি পৌঁছনোর জন্য ৩৩০ মিটার দীর্ঘ স্কাইওয়াক রয়েছে এবং সেখান থেকে আপনি দক্ষিণেশ্বর এলাকার এক ভাল দৃশ্য পাবেন।

  • 5 আদ্যাপীঠ মন্দির, +৯১ ৩৩ ২৫৬৪-৬৯৯৯ দেবী আদ্যার ত্রিরত্ন মন্দির।
  • 6 দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, রানি রাসমণি রোড, +৯১ ৩৩ ২৫৬৪-৫২২২ ৬:০০ পূর্বাহ্ণ–১২:৩০ অপরাহ্ণ এবং ৩:০০–৮:৩০ অপরাহ্ণ এক বিরাট মন্দির চত্বর, যার মধ্যে দেবী কালীকে উৎসর্গ করা একটি নবরত্ন মন্দির বর্তমান। এখানে কালীকে "মা ভবতারিণী" নামে পূজা করা হয়। ১৮৫৫ সালে রানি রাসমণি এই মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। ১৮৫৬ থেকে ১৮৮৬ পর্যন্ত রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরের প্রধান ও একমাত্র পূজারী ছিলেন। তিনি তাঁর বেশিরভাগ জীবন মন্দিরটির নহবতখানায় কাটিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর মন্দিরটি তৎকালীন বাংলা সরকারের হাতে চলে গিয়েছিল, যা ক্রমে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে এল। প্রতি বছর এই মন্দিরে হাজার হাজার মানুষ আসেন, বিশেষ করে শ্যামা পূজা, শিব চতুর্দশী, পয়লা বৈশাখ, অক্ষয়া তৃতীয়া, ইংরেজি নববর্ষ ও কল্পতরু উৎসবের দিনে। এই মূল নবরত্ন মন্দির ছাড়াও আছে হুগলি নদী বরাবর দ্বাদশ শিব মন্দির, স্নান ঘাট ইত্যাদি বর্তমান। বিনামূল্যে উইকিপিডিয়ায় দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি (Q1157765)
  • 7 পঞ্চবটি (কালীবাড়ির উত্তরে)। বট, অশ্বত্থ, নিম, আমলকী ও বেল, এই পাঁচ গাছের সমারোহ। ১৮৬৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ এখানে তাঁর অদ্বৈত সাধনা করেছিলেন।
  • 8 রানি রাসমণি মন্দির (কালীবাড়ির প্রবেশদ্বারের কাছে)। কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রানি রাসমণির উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দির।

শিখুন

[সম্পাদনা]
ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান সংস্থা
  • 1 ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান সংস্থা ১৯৩২ সালে রাশিবৈজ্ঞানিক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি রাশিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য পরিচিত। উইকিপিডিয়ায় ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান সংস্থা (Q3105568)

কিনুন

[সম্পাদনা]
  • 1 চন্দ্রাণী পার্লস, ১৫৩/১, বিটি রোড, +৯১ ০৩৩ ২৫৭৮৯০২৫ পূর্বাহ্ন ১০:৩০–অপরাহ্ন ৯:০০ মুক্তার অলঙ্কার।

আহার ও পানীয়

[সম্পাদনা]

বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বর জুড়ে পানীয়র জন্য বিভিন্ন বার পাওয়া যায়। আপনি বিভিন্ন মিষ্টির দোকানগুলিতে লস্সি পেতে পারেন। এখানকার আনন্দময়ী সুইটসে অনেক ধরনের আম, দই ইত্যাদির লস্সি পাওয়া যায়। আলমবাজার এলাকায় মিষ্টির দোকানেও আপনি লস্সি পেতে পারেন। বরাহ নগর রেলওয়ে স্টেশন এবং সোনালী সিনেমা হলের কাছাকাছি ডানলপ এলাকায় কয়েকটি ফলের রসের দোকান রয়েছে। কফির জন্য আপনি "ডানলপ কফি হাউস"এ ঢুঁ মারতে পারেন।

  • 1 আনন্দময়ী সুইটস, ২০৯, বিটি রোড, +৯১ ২৫৭৭ ০১২০ ৭:০০ পূর্বাহ্ণ–১০:০০ অপরাহ্ণ ঐতিহ্যবাহী বাংলার মিষ্টি, দই, আইসক্রিম, লস্সি।
  • 2 গাঙ্গুরাম সুইটস, ২৬৯/২, বিটি রোড (বরাহনগর থানার কাছে), +৯১ ০৯৮৩১৭৩৬৩৩২ ৭:০০ পূর্বাহ্ণ–১০:০০ অপরাহ্ণ
  • 3 ঢাকা বিরিয়ানি হাউস, ১৪৪, বিটি রোড (বরাহনগর রোড স্টেশনের কাছে), +৯১ ০৯৯০৩৯৬৮৬১০ ১১:০০ পূর্বাহ্ণ–১০:৩০ অপরাহ্ণ
  • 4 দ্য ক্রিক ওয়ার্ল্ড, ৪৪/৫১, বিটি রোড, +৯১ ০৯৮৩০৪১৫২১৩ মধ্যাহ্ন–১১:০০ অপরাহ্ণ বিভিন্ন রন্ধনশৈলীর খাবার পাওয়া যায়।
  • 5 নিউ শের-ই-পাঞ্জাব হোটেল, ১৩১, বিটি রোড (ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান সংস্থার কাছে), +৯১ ০৭৮৯০১০১৩১৩ ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ–১০:৪৫ অপরাহ্ণ
  • 6 ফুড ভিলেজ, ১৪৪, বিটি রোড (বরাহনগর রোড স্টেশনের কাছে), +৯১ ০৯৯০৩৯৪৩৬৪৮ মধ্যাহ্ন–১০:৪৫ অপরাহ্ণ
  • 7 ভোজনালয়, রানি রাসমণি রোড, দক্ষিণে (কালীবাড়ির সন্নিকটে)। ৭:০০ পূর্বাহ্ণ–৮:০০ অপরাহ্ণ নিরামিষ আহার, ছোলা ভাটোরা।

রাত্রিযাপন

[সম্পাদনা]
এই নির্দেশিকাটি একটি আদর্শ ডাবল রুমের জন্য নিম্নলিখিত মূল্য সীমাগুলি ব্যবহার করে:
বাজেট₹১০০০ পর্যন্ত
মধ্য-পরিসীমা₹১০০০ থেকে ₹৩০০০
খরুচে₹৩০০০-এর বেশি

মিড-রেঞ্জ

[সম্পাদনা]
  • 1 দেবালয় গেস্ট হাউস, ১, টিএন মুখার্জি রোড, দক্ষিণেশ্বর, +৯১ ৭০৪৪১ ৭৪৫৭০

সাবধানে থাকুন

[সম্পাদনা]

বরাহনগর কলকাতার সবচেয়ে দূষিত এলাকার মধ্যে একটি। অনেক গাড়ি ডানলপ মোড় হয়ে যাতায়াত করে, তাই এই এলাকা খুব দূষিত। এই এলাকার জন্য মাস্ক ও রুমাল ব্যবহার করুন।