"কোরিয়ান রন্ধনপ্রণালী" উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর-পূর্ব চীনের পাশাপাশি সারা পৃথিবী জুড়ে বসবাসকারী কোরিয়ান প্রবাসীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।
খাদ্য
[সম্পাদনা]কোরিয়ান রন্ধনপ্রনালী প্রায়শই চীনের রন্ধনপ্রনালী এবং জাপানের রন্ধনপ্রনালীর মতোই ভাত ও নুডলসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যদিও দেশীয় উপাদান যেমন গাঁজানো মশলাদার বাঁধাকপি( কিমচি " - 김치), ভাতের কেক(떡) এবং নানা প্রকারের গাঁজানো বিন সস্ দ্বারা তৈরি হওয়া অনেক খাবারই সাধারণ জাপানি ও চীনের খাবারের থেকে বেশ আলাদা হয়।
কোরিয়ার ভেতরের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং বিশেষত্ব অবশ্যই বিদ্যমান, যদিও সাধারণত ' মূল বিষয়গুলো ' সর্বত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
বারবিকিউ
[সম্পাদনা]অনেকে গরুর, শুয়োরের এবং মুরগির মেরিনেট করা কোরিয়ান মাংসকে ধর্মসম্মত কোরিয়ান খাবার হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। আসলে, এইসব রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন সাধারণত বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো উপলক্ষে হয়ে থাকে। আপনি সাধারণত একটি বড় দলে যান এবং প্রচুর পরিমাণে কাঁচা মাংসের অর্ডার দেন যা আপনি নিজের হাতে কেটে টেবিলের মাঝখানে থাকা একটি গ্যাস বা কাঠকয়লার উনুনে ওপরে রাখেন। রান্না হয়ে গেলে, সেই মাংস মরিচের সসে ডুবিয়ে লেটুস বা পেরিলা পাতায় মুড়িয়ে নিতে হবে।আপনার উপর অত্যধিক ধোঁয়া অবতরণ এড়াতে একটি উচ্চ শক্তির বায়ু ভেন্ট কুকারের উপরে স্থাপন করা থাকে।
ফ্রায়েড চিকেন
[সম্পাদনা]দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু ভালো সংখ্যক খাবার অনুপ্রাণিত হয়েছে মশলাদার দ্বিগুণ ভাজা মুরগির(양념 치킨) মত আমেরিকান খাবারের দ্বারা, যা সাধারণত আরো বেশি মুচমুচে এবং তার আমেরিকান প্রতিপক্ষের তুলনায় কম তেল দিয়ে তৈরি। এটি সাধারণত সরল বা আঠালো অথবা উভয়ের সংমিশ্রণে তৈরি মিষ্টি মেরিনেডের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
সুনদে
[সম্পাদনা]সুনদে(순대) হল একটি কালো সসেজ যা রক্ত এবং গ্লাস নুডলস দ্বারা তৈরি হয় এবং অন্ত্র দ্বারা মোড়ানো থাকে। এর নিজস্ব কোনো প্রকৃত স্বাদ থাকে না, কিন্তু মরিচের সংমিশ্রণে একটি সুস্বাদু অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এই মরিচ লবণের সঙ্গে বা হট পটের মধ্যেও পাওয়া যায়। "সোকচো" তে সম্পূর্ণভাবে স্কুইড থেকে তৈরি ভিন্ন ধরনের সুনদে পাওয়া যায়।
অন্যান্য
[সম্পাদনা]কোরিয়ানরা প্রায়শই কিমবাব (김밥) দ্বারা নিজেদের জলখাবার সম্পন্ন করে, যেটা দেখে মনে হয় বড়ো আকারের জাপানিজ সুশি কিন্তু সাধারণত এটি সবজির আচার, মাছের কেক, তিলের তেল এবং কখনও কখনও রান্না করা মাংস দ্বারা ভরা থাকে। এটা সবসময় শুকনো সামুদ্রিক শৈবাল দ্বারা জড়ানো থাকে।
বিতর্কিত খাদ্য
[সম্পাদনা]কোরিয়ায় এমন অনেক রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে তিমি ও কুকুরের মাংস পাওয়া যায়। এগুলো কখনই বিদেশীদের নজরে পড়ে না তাই যদি ওসব জায়গায় যেতে চান তাহলে আপনাকে ওখানকার আশেপাশের মানুষদের বলতে হবে আপনাকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এই রেস্টুরেন্ট গুলোর আইনি ব্যবস্থা অস্পষ্ট হলেও একটাতে গিয়ে পৌঁছালে আপনি সম্ভবত বিপদের সম্মুখীন হবেন না। ওই মাংসের উৎস অবশ্যই উচ্চমানের স্বাস্থ্যকর হবে না এবং তিমির বা ডলফিনের মাংসে থাকা উচ্চ মাত্রার বিষাক্ত পদার্থ খাওয়ার পক্ষে বিপজ্জনক হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে, কুকুর খাওয়ার প্রথা বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত বিল সংসদে পাস হয়েছে তবে তিন বছরের অতিরিক্ত সময় সহ।
পানীয়
[সম্পাদনা]সজু
[সম্পাদনা]সজু (소주) চাল বা ভাত ও গম বা বার্লি এবং কখনও কখনও রাঙা আলু বা অন্যান্য মূলজাতীয় শাকসবজি থেকে তৈরি একপ্রকার পরিষ্কার, পতিত পানীয় যা কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়। ভদকার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও অতটাও শক্তিশালী নয় এবং কিছুটা মিষ্ঠত্বের ছোঁয়াও আছে।
চা
[সম্পাদনা]চা(차) পূর্ব এশিয়ার প্রায় সর্বত্র ব্যাপকভাবে পান করা হয়। কোরিয়ান চায়ের ও কয়েকটা শ্রেনী আছে, যেমন -
- ইনসাম চা হলো জিনসেং নামক একপ্রকার উদ্ভিদের মূল থেকে তৈরি হওয়া চা।
- বোরি চা হলো ভাজা বার্লি ভেজানো জল থেকে তৈরি চা।
- সেজাক চা হলো কোরিয়ার সর্বোচ্চ উৎকৃষ্ট মানের সবুজ চাগুলোর (গ্রীন টি) মধ্যে অন্যতম।
রন্ধনসম্পর্কীয় গন্তব্যস্থল
[সম্পাদনা]নিম্নলিখিত গন্তব্যগুলি খাঁটি আঞ্চলিক খাবার সন্ধানের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে অনেকগুলি কিছু ভিন্ন রূপে দক্ষিণ কোরিয়ার শহরগুলির বিশেষ রেস্তোরাঁগুলিতে এবং সারা পৃথিবীর কিছুটা কম পরিমাণ কোরিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোতেও পাওয়া যায়।
- নায়েঙম্যেওন (S) / রায়েঙম্যেওন (N) ((냉면 / 랭면))। এই বরফের মতো ঠান্ডা নুডলস এর তৈরি খাবারের উৎপত্তি হয় উত্তর কোরিয়ার 1 পিয়ংইয়া। এবং 2 হামহাঙ। শহরে, প্রতিটি শহরের নিজস্ব স্বতন্ত্র শৈলী বা ধরের সঙ্গে। অক্রিউগোয়ান (옥류관) নামের উত্তর কোরিয়ার রাজধানীর একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্টই একমাত্র স্থান যেখানে এটি পরিবেশন করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার জিনজু। শহরেও এর একটি বিখ্যাত সংস্করণ আছে এবং তা পরিদর্শন করাও কিছুটা সহজ। চীনের 3 ইয়ানজি। শহরেও এই খাবারের একটি বিখ্যাত সংস্করণ জাতিগত কোরিয়ান সম্প্রদায় দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে।
- 4 স্কুইড সুনদে ((오징어 순대))। স্কুইড সসেজের একটু স্থানীয় সংস্করণ যেটা সকছো তে পাওয়া যায়, একটি বার্ষিক স্কুইড উৎসব সহযোগে।
- 5 হয়াং-প্যাং ((황남빵, 경주빵))। গ্যাংজুর বিখ্যাত পেষ্ট্রি যা হালকা ভাবে সেঁকা ও সামান্য মিষ্টি স্বাদযুক্ত লাল রঙের বিন পেস্ট দ্বারা ভরা থাকে। প্রথানুযায়ী শহরের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার পর বাড়ি ফেরার পথে ওই পেস্ট্রিগুলো এক বাক্স কিনে আনা হয়।
- 6 জাগালছি মাছের বাজার (자갈치시장)। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান সমুদ্রবন্দর হলো বুসান, এবং সেটা এখানে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য করা সামুদ্রিক খাবারের ওপরে প্রতিফলিত হয়। আপনি স্থানীয় বাজারে ঘোরাঘুরি করে ও তারপর আশেপাশের অনেক রেস্টুরেন্ট এ খেয়ে খুব সহজেই এখানে একটা দিন কাটিয়ে দিতে পারেন। এখানকার বাজার খুব ভোরের দিকে খুলে যায়, সুতরাং ভোর পাঁচটায় একপ্রকার মশলাদার খাবার বাইরের একটা কঠিন রাতের নিখুঁত সমাপ্তি হতে পারে।
- 7 গিজাং ক্র্যাব মার্কেট (부산 기장시장)। বুসানের বাইরে কিছুটা কম জনপ্রিয় জায়গা, তা সত্ত্বেও এটি কাঁকড়া বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি শীর্ষ আঞ্চলিক গন্তব্যস্থল। ছোট বড়ো সবরকমের কাঁকড়া রান্না করা এবং কাঁচা (সয়া সসে মেরিনেট করা) দুটো অবস্থাতেই পাওয়া যায়।
- 8 হংহাপ জিম - মাসেল স্টু (홍합찜)। কোরিয়ার মূল ভূখণ্ডের পূর্ব দিকের উল্লেয়াংদো দ্বীপে পৌঁছতে অনেকটা সময় লাগে, কিন্তু এখানে ঝিনুকের স্যুপের মতো আরো অনেক অসাধারণ কোরিয়ান খাবার খুঁজে পাওয়া যায়।
- 9 উইজেংবু। বুদে জিগের জন্য পরিচিত, আক্ষরিক অর্থে " মিলিটারি ইউনিট স্টু " , সসেজ, টিন বন্দী রান্না করা মাংস, কাঁচা নুডলস, কিমচি এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি একটি খাবার।
কোরিয়ান ওয়ার বা কোরিয়ায় যুদ্ধের সময় ইউনাইটেড স্টেটসের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে তৎকালীন দরিদ্র কোরিয়ানরা আমেরিকান সৈনিকদের ফেলে দেওয়া বাড়ন্ত খাবার ও এঁটোকাটা একসঙ্গে একত্রিত করে তার সঙ্গে সস্তা ও ব্যাপকভাবে উপলব্ধ এমন ঐতিহ্যগত কোরিয়ান উপকরণ মিশিয়ে এই খাবারের উৎপত্তি ঘটায়।