বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে

মুর্শিদাবাদ ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলা এবং শহর। মুর্শিদাবাদ এক সময়ে বাংলা, বিহার, এবং উড়িষ্যার রাজধানী ছিল। মুর্শিদাবাদ স্বাধীন বাংলার শেষ রাজধানী ছিল এবং বাংলা, বিহার, এবং উড়িষ্যার দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁয়ের নামানুসারে এই স্থানের নাম হয়। ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশরা মুর্শিদাবাদ থেকে রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তর করে।

কীভাবে যাবেন

[সম্পাদনা]

স্থলপথে

[সম্পাদনা]

কলকাতা শহর মুর্শিদাবাদের নিকটবর্তী একটি বড়ো শহর। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লোকাল, লালগোলা প্যাসেঞ্জার এবং এক্সপ্রেস ট্রেন করে মুর্শিদাবাদ যাওয়া যায়। এছাড়া আপনি বহরমপুরে (মুর্শিদাবাদ জেলার সদর) বাসে করে এসে, সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ শহরে পৌঁছানোর জন্য একটি অটো রিক্সা বা গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। এটি বহরমপুর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার।

আকাশ পথে

[সম্পাদনা]

মুর্শিদাবাদ শহরে কোনো বিমানবন্দর নেই। আপনি যদি ভারত বা ভারতের বাইরে থেকে আসেন, তা হলে আপনাকে প্রথমে কলকাতা শহরের নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসতে হবে, এবং সেই স্থান থেকে আপনাকে স্থলপথে আসতে হবে।

ঘুরে দেখুন

[সম্পাদনা]

আপনি অটো বা টোটো (ছোটো অটো), সাইকেল রিকশা করে শহরের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারেন। প্রাইভেট গাড়িও ভাড়া পাওয়া যায়। এই সকল গাড়ি করে যাত্রা শুরুর আগে ভাড়া নির্ধারন করে নিন।

দর্শনীয়

[সম্পাদনা]
হাজারদুয়ারি প্রাসাদ এবং তৎসংলগ্ন ঘড়ি
কাটরা মসজিদ

মুর্শিদাবাদ অতীতে বাংলার রাজধানী ছিল, তাই আজো বহু ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য রয়েছে।

  • হাজারদুয়ারি প্রাসাদ: শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। একটি সাধারণ ভুল ধারণা যে এই প্রাসাদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা নির্মাণ করান, যদিও এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮২৯ সালে, এবং নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ১৮৩৭ সালে, সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর ৮০ বছর পরে, অতএব সিরাজউদ্দৌলার সাথে এই প্রাসাদের সরাসরি কোনো সম্পর্কই নেই। নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহের আদেশানুসারে ডানকান ম্যাকলয়েডের তত্ত্বাবধানে এই প্রাসাদ নির্মিত হয়। হাজার দুয়ার সমন্বিত, তাই নাম হাজার দুয়ারি, যদিও এই হাজার দুয়ারের কিছু দুয়ার নকল, দেয়ালের গায়ে দরজার অনুকরণে ছবি আঁকা। বর্তমানে এই প্রাসাদটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। টিকিট কেটে (ভারতীয়দের জন্য ৫ টাকা, এবং না-ভারতীয়দের জন্য ২০০ টাকা) আপনি ভিতরে যেতে পারেন। জাদুঘরের বাইরে সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত গাইড থাকবে, যারা টাকার বিনিময়ে আপনাকে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের ইতিহাস বুঝিয়ে দেবে। মনে রাখবেন, সরকারি আদেশানুসারে এই গাইডরা জাদুঘরের ভিতরে যেতে পারেন না, অতএব আপনাকে এরা জাদুঘরের বাইরে থেকেই ইতিহাস এবং দর্শনীয়র বর্ণনা দেবেন। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ভালোভাবে দেখতে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে।
  • খোশবাগ: হাজারদুয়ারির নিকটেই ভাগীরথী নদীতে বোটে চড়ে আপনি খোশবাগে যেতে পারেন। খোশবাগে আলিবর্দি খান, সিরাজ, সিরাজপত্নী লুৎফউন্নিসা, এবং সিরাজের পরিবার পরিজনের কবর রয়েছে।
  • বড়া ইমামবরা: হাজারদুয়ারি প্রাসাদের অপর পাশেই এইটি একটি মুসলমান ধর্মস্থান, মূলতঃ শিয়া মুসলমানদের জন্য। এই ইমামবরার দৈর্ঘ্য ৬৮০ ফুট। মহরমের সময় এখানে প্রচুর জনসমাগম এবং পরব পালন হয়। যদিও মুসলমান ধর্মস্থান, মহরমের সময়ে এই স্থান সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। বছরের অন্যান্য সময়ে এই ইমামবড়া বন্ধ থাকে, ফলে আপনি শুধু বাইরে থেকেই দেখতে পারেন।
  • কাটরা মসজিদ: নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭২৩ সালে এই মসজিদ নির্মাণ করান। এই মসজিদের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়েছে, তবে সরকার এই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এই মসজিদের ৫টি গম্বুজ ছিল, কিন্তু ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দুইটি গম্বুজ ভেঙ্গে পড়ে। এই মসজিদে একসময়ে একসাথে ২,০০০ ব্যাক্তি প্রার্থনা করতে পারেন। কাটরা মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আগে একটি তোপখানা ছিল। এই স্থানে এখনো জাহান কোষা (জাহান কোষা শব্দের অর্থ বিশ্বের ধ্বংসকারী) নামে একটি বড় কামান আছে। জনশ্রুতি অনুসারে মুর্শিদ কুলি ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের সময় এই কামানটি সঙ্গে নিয়ে আসেন।
  • মোতিঝিল: এইটি একটি ঝিল এবং তৎসনলগ্ন বাগান যা সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগমের পতি নওয়াজেশ মহম্মদ নির্মাণ করান। এই স্থান কোম্পানি বাগ নামেও পরিচিত। এই ঝিলটি দেখতে ঘোড়ান নালের মত। এর তৎসংলগ্ন স্থানে রবার্ট ক্লাইভ সুবে বাংলার (বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা) দেওয়ানিপ্রাপ্তি উদযাপন করেন (যদিও সেই উদযাপনস্থান এখন ধংসপ্রাপ্ত হয়েছে)। এই মোতিঝিলের প্রাসাদে ওয়ারেন হেস্টিংস কিছুদিন বসবাস করেন। বর্তমানে পশ্চিম্বং সরকার মোটিঝিলের কাছেই একটি উদ্যান তৈরি করেছেন, এই স্থানের আলোকশোভা আপনি সন্ধ্যাবেলা দেখতে পারেন।
  • নাসিপুর প্রাসাদ: রাজা কীর্তিচন্দ্র বাহাদুর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এই প্রাসাদ নির্মাণ করান। প্রাসাদের উদ্যানে রাম ও লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির রয়েছে। কাছেই মোহনদাসের আশ্রম এবং জাফরগঞ্জ দেউড়ি রয়েছে। জগৎ শেঠের কুঠি এই স্থানের সন্নিকটেই।
  • কাঠগোলা বা কাঠগোলা বাগানবাড়ী: রাজা ধনপত সিং দুগর এবং রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগরের বাগানবাড়ী শতাব্দীপ্রাচীন। এখানকার আদিনাথ মন্দিরটি ১৮৭৩ সালে হেরেক চাঁদ নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের দেওয়ালের কারুকার্য অতি সুন্দর।
  • কাশিমবাজার রাজবাড়ী: এইটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত একটি রাজবাড়ী।

পলাশীপ্রান্তর - পলাশীর যুদ্ধের স্মৃতিনিয়ে পলাশীর প্রান্তর।

কী কিনবেন

[সম্পাদনা]
  • বালুচড়ি শাড়ি: বালুচড়ি সিল্কের শাড়ি অত্যন্ত বিখ্যাত। শাড়ির দাম প্রায় ৪,০০০ ভারতীয় মুদ্রা থেকে শুরু হয়। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, এবং টকটকে লাল (স্কারলেট) বর্ণের বালুচড়ি শাড়ি সবার্ধিক জনপ্রিয়।
  • মুর্শিদাবাদ সিল্ক: অধিকাংশ বালুচড়ি সিল্কের দক্ষ কারিগর বিষ্ণুপুরে চলে গেছেন, তাই মুর্শিদাবাদ আর আগের মতো বালুচড়ি শাড়ির জন্য প্রসিদ্ধ নয়। আপনি যদি বালুচড়ি শাড়ি কিনতে না চান, তার বদলে মুর্শিদাবাদ সিল্কের শাড়ি কিনতে পারেন। মুর্শিদাবাদ বাস স্ট্যান্ডের কাছে এবং বহরমপুর এবং খাগড়ার বিভিন্ন খাদির দোকানে আপনি এই শাড়ি পাবেন।

কী খাবেন

[সম্পাদনা]

আপনি যদি কলকাতা বা এই জাতীয় শহর থেকে মুর্শিদাবাদ শহরে যান, আপনি খাবারে অভিনব অনেক কিছু পাবেন না, কিন্তু আপনি মুর্শিদাবাদি বিরিয়ানি খেতে পারেন, বিশেষতঃ মুর্শিদাবাদের নিরামিষ বিরিয়ানি বেশ প্রসিদ্ধ। এ'ছাড়া নবাবী ঘিয়ে ভাজা ছানাবড়াও বেশ প্রসিদ্ধ। খাবার কেনার বা অর্ডার দেওয়ার আগে অবশ্যই দাম জেনে নিন, এবং প্রতারিত হওয়া রক্ষা পান।

কোথায় থাকবেন

[সম্পাদনা]

অনেক পর্যটক মুর্শিদাবাদে না থেকে বহরমপুরে গিয়ে থাকেন।

  • বহরমপুর সরকারি লজ: বহরমপুর মেন বাস ডিপোর কাছে।
  • হোটেল সাগ্নিক: