ইসলামী স্বর্ণযুগ বলতে ৮ম থেকে ১৪শ শতাব্দীতে উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ায় ইসলাম ও আরব্য সংস্কৃতির বিস্তারের সময়কালকে বোঝানো হয়।
জানুন
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: প্রাক-ইসলামি আরব
ইসলামের নবী মুহাম্মাদ যিনি অমুসলিমদের নিকটে ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং মুসলিমদের নিকটে আল্লাহর শেষ বার্তা বাহক হিসেবে পরিচিত একজন অনুপ্রেরণীয় এবং যোগ্য নেতা ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি ৬৩২ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ আরব ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। খলিফা হিসাবে পরিচিত তাঁর অনুসারীরা তাঁর প্রকল্পকে আরো সামনে নিয়ে গিয়েছেন। তারা আরও অনেক অঞ্চল জয় করেছেন এবং সেখানে ইসলাম প্রচার করেছেন। ৭৫০ সালের মাঝেই উমাইয়া খিলাফতের নেতৃত্বে ইসলামি সাম্রাজ্য স্পেন ও মরক্কো হতে ভারতবর্ষ ও মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
এই সময়ের খলিফাগণ মনে করতেন ইসলামি সমাজে জ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ হওয়া প্রয়োজন। তারা বিশ্বাস করতেন ইসলামি সমাজ এমন হওয়া উচিত যেখানে বিজ্ঞান, দর্শন ও সংস্কৃতি ইসলামের সাথে ও ইসলামের অংশ হিসেবে বিকশিত হবে। তারা মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদী, খৃষ্টান, মুক্ত চিন্তার মানুষ এবং অন্যান্যদেরও বাগদাদ এবং কায়রোর মতো বিখ্যাত শহরগুলোয় অবস্থান করতে দিয়েছেন এবং সেখানে একটি উন্নত সভ্যতার সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী কয়েকশ বছরব্যাপী উন্নতির শীর্ষে থাকা এই সভ্যতাই খ্রিস্টীয় ইউরোপে মধ্যযুগ হিসেবে পরিচিত।
৬৩২ থেকে ৬৬১ সাল পর্যন্ত খোলাফায়ে রাশেদীন বর্তমানের মধ্যপ্রাচ্য শাসন করেছে এবং উমাইয়া খিলাফত উত্তর আমেরিকা, আইবেরিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল এবং ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে রাজত্ব করে। এভাবে তারা সেসময়ের বৃহত্তম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। উত্তরাধিকারী হিসেবে আব্বাসীয় খিলাফত ৭৫০ থেকে ১২৫৮ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসন করে। আব্বাসীয়রাও খ্রিস্টান, ইহুদি ও অন্যান্য অমুসলিমদের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা করে।
সেসময় ইসলামি রাজ্য এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপের খ্রিস্টান অঞ্চলের মাঝে শান্তিপূর্ণ বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় চলমান ছিল।
মঙ্গল সাম্রাজ্যের উত্থান, মুক্তচিন্তা এবং প্রাকৃতিক ঘটনা ব্যাখায় স্বর্গীয় বিষয়াদি বিশ্বাস না করে গণিত ও বিজ্ঞানের উপরে নির্ভরতায় কতিপয় মুসলিম পণ্ডিতদের বিরোধিতা, অ্যান্ডালাস এবং মাঘরেব অঞ্চলে আলমোহাদ রাজবংশের আবির্ভাবসহ নানা কারণে ইসলামি সাম্রাজ্যের বিকাশে বিঘ্ন ঘটে। তারপরে ১৪ শতকের শুরুর দিকে উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫৬৬ সালের মাঝে উসমানীয় সাম্রাজ্য মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপের বিশাল এলাকা জয় করে এবং নিজেদের ইসলামি খেলাফত হিসেবে ঘোষণা দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসমানীয় খেলাফতের বিলুপ্তি ঘটে।
জ্ঞান ও শিল্প
[সম্পাদনা]ইসলামি বিশ্বের পণ্ডিতরা প্রাচীন গ্রীক ও রোমানদের জ্ঞান দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। সমস্ত ধরণের বিষয়ে অসংখ্য গ্রিক এবং রোমান বই অনুবাদ করার মাধ্যমে তারা খ্রিস্টীয় ইউরোপে হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান শতাব্দী ধরে সংরক্ষণ করেছেন।
ইসলামি পণ্ডিতরা গণিতের অগ্রদূত ছিলেন। তারা ভারত থেকে দশমিক পদ্ধতি নিয়ে ইউরোপীয় গণিতে যুক্ত করেছিলেন এবং বীজগণিত এবং আধুনিক সময়ে ব্যবহৃত অন্যান্য গাণিতিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন।
আরবি ভাষাটি মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং সাহেলের কিছু অংশ জুড়ে প্রচলিত একটি ভাষা। অপরদিকে ধ্রুপদী আরবি ধর্মীয় অধ্যয়নের জন্য টিকে আছে।
ঐ সময়ের বিখ্যাত কয়েকজন পণ্ডিত নিম্নরূপ:
- আল খোয়ারিজমি ছিলেন একজন গণিতবিদ। তার থেকেই ইংরেজি শব্দ algebra ও algorithm এসেছে। তিনি ইসলামি বিশ্বে দশমিক পদ্ধতি যোগ করেন।
- আবু সিনা একজন চিকিৎসক এবং দার্শনিক ছিলেন। তার একটি চিকিৎসার বই ১৬৫০ সাল পর্যন্তও ইউরোপে ব্যবহার হয়েছে।
- ওমর খৈয়াম একজন গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। তবে তিনি দর্শন, গতিবিদ্যা, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়েও লিখেছেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোয় তিনি তার কবিতার জন্য বিখ্যাত।
গন্তব্য
[সম্পাদনা]বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি কেন্দ্রস্থল পরিদর্শন করা কঠিন হতে পারে। সিরিয়া এবং ইরাকে প্রায়ই জঙ্গি হামলা হয় বলে তা ভ্রমণকারীদের জন্য নিরাপদ নয়। অপরদিকে মক্কায় অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
মধ্যপ্রাচ্য
[সম্পাদনা]- 1 বাগদাদ। আব্বাসীয়রা ৭৬২ সালে বাগদাদ প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছরব্যাপী এটি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করেছে।
- 2 দামেস্ক। গ্রেট উমাইয়া মসজিদের অবস্থান এখানে, এটি প্রথম স্মারক মুসলিম মসজিদ, যেটি স্থানীয় দেবতার মন্দির হিসেবে শুরু হয় এবং জুপিটারের একটি রোমান মন্দির হিসাবে পুনঃনির্মিত, যা সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্টকে উৎসর্গ করে একটি গির্জায় পরিণত করা হয়। সেখানে তার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে (একটি সোনালি মার্বেল মন্দিরের ভিতরে এগুলো আজও বিদ্যমান)। ৭০৬ থেকে ৭১৫ সাল পর্যন্ত আমরা আজ যে স্মৃতিসৌধের ভবনটি দেখতে পাচ্ছি, সেখানে ২০০ জন দক্ষ বাইজেন্টাইন কারিগর, স্থপতি, পাথরের কারিগর এবং মোজাইসিস্ট নিয়োগ ছিলো বলে জানা গেছে, যাদের উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদের ব্যক্তিগত অনুরোধে সম্রাট জাস্টিনিয়ান দ্বিতীয় পাঠিয়েছিলো।