খেজুরি হল ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বঙ্গোপসাগরের তীরে একটি প্রাচীন জনপদ।
ষোড়শ শতকের প্রথমের দিকে বঙ্গোপসাগরের হুগলি নদীর মোহনার পশ্চিমদিকে পলি জমে প্রথমে হিজলি ও পরে খেজুরি নামে দুটি দ্বীপ জেগে উঠেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের প্রথমের দিকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে খেজুরি বন্দর ইংরেজরা পত্তন করে। ১৮৩০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজা রামমোহন রায় তখনকার খেজুরি বন্দর থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। ১৮৪২ ও ১৮৪৫ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরও এই বন্দর দিয়েই বিদেশযাত্রা করেন। বিদেশি নাবিকরা সেইসময় খেজুরিকে ‘কেডগিরি’, ‘ক্যাজুরি,’ ‘কাদজেরী’ ও ‘গ্যাজুরী’ প্রভৃতি নামে সম্বোধন করতেন। জাহাজে করে বিদেশ থেকে চিঠিপত্র খেজুরি বন্দরে আসত বলে খেজুরিতেই গড়ে উঠেছিল ভারতের প্রথম ডাকঘর বা কেডগিরি পোস্ট অফিস। দুঃখের বিষয় ১৮৬৪ সালের এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় খেজুরি বন্দর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
ইংরেজরা প্রায় দুশো বছর ভারত শাসন করেছিল। তার পরও কেটে গেল সাড়ে সাত দশক। এই সময়কালে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রোপকূলের ভূমিরূপ আমূলভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই জেলার হলদিয়া থেকে দিঘা পর্যন্ত দক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগর চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে সরে গিয়েছে। ফলস্বরূপ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রায় পাঁচশো বর্গকিলোমিটার বাড়তি নতুন সমুদ্র সৈকত লাভ করেছে। যার মধ্যে পড়েছে খেজুরি সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের জলে গা ভেজানোর আগে দিঘায় আছে ঝাউবন; আর খেজুরিতে আছে কাজু বাদামের বন! এখানে কাজু বাদামের সিজনে আসলে কাজুর পাকা ফল অতি সস্তায় পেয়ে যাবেন। কেননা, জানেন তো? কাজু বাদামের বীজ, অর্থাৎ আমরা যেটা খাই, সেটা থাকে ফলের বাইরে! পাকা ফলের বীজটা প্রসেসিংয়ের জন্যে চলে যায়, আর টকটকে লাল কিংবা হলদে রংয়ের পাকা ফলটা এখানে জলের দরে বিক্রি হয়। তবে সাবধান, একটুও কাঁচা থাকলে কিন্তু কামড় দেবেন না। তাহলেই মুখে ঘা হয়ে যাবে! টসটসে পাকা কাজুর ফল ঘরে রাখলে সারা পাড়া জানতে পারবে এমন তীব্র সুগন্ধ।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]- কলকাতা থেকে ট্রেন অথবা বাসে হেঁড়িয়া। হেঁড়িয়া থেকে কলাগাছিয়া, বিদ্যাপীঠ হয়ে খেজুরি প্রায় তিরিশ কিলোমিটার।
- কলকাতা থেকে সরাসরি হেঁড়িয়ার বাসও পেয়ে যাবেন।
- নিজের গাড়িতে কলকাতা থেকে বিদ্যাসাগর সেতু, ছ-নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে কোনা এক্সপ্রেস, উলুবেড়িয়া, বাগনান, কোলাঘাট, মেচেদা, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, হেঁড়িয়া, কলাগাছিয়া, বিদ্যাপীঠ হয়ে খেজুরি প্রায় একশো আশি কিলোমিটার।
দেখুন
[সম্পাদনা]- 1 খেজুরির পুরোনো ডাকঘর। দেশের প্রথম ডাকঘর ও টেলিগ্রাফ কেন্দ্র আজ খণ্ডহরে পরিণত।
কাছাকাছি যান
[সম্পাদনা]- 2 পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দর। এটি রসুলপুর নদীর দক্ষিণ তীরে, খেজুরি থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে। রসুলপুর নদীর মোহনার কাছে গড়ে ওঠা একটি মৎস্য বন্দর।