উইকিভ্রমণ থেকে

গাঙ্গেয় সমভূমিকে ভারতের কেন্দ্রভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গঙ্গা ও যমুনা (বাংলাদেশের যমুনার সঙ্গে বিভ্রান্ত হবেন না) হচ্ছে এই অঞ্চলের দুই প্রধান নদী। ভারতের ইতিহাসের প্রধান প্রধান ঘটনা এই অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে। এই অঞ্চলে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশবিহারের মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ও জাতীয় রাজধানী নতুন দিল্লি বর্তমান। মূলত গঙ্গা ও তার উপনদীদের জন্য উত্তর ভারতে এই সুবৃহৎ সমভূমি এলাকা গঠিত হয়েছে। প্রায় ৭,০০,০০০ বর্গকিমির এই সমভূমিতে প্রায় ১০০ কোটি ব্যক্তিদের বাস। এর পশ্চিমে রাজস্থানের থর মরুভূমি, উত্তরে হিমালয় (পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী), পূর্বে গঙ্গা বদ্বীপ (পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী বদ্বীপ) এবং দক্ষিণে বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতমালা এবং ছোটনাগপুর মালভূমি।

অঞ্চল[সম্পাদনা]

মানচিত্র
গাঙ্গেয় সমভূমির মানচিত্র
  উত্তরপ্রদেশ
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য এবং বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল থেকে প্রাচীন বারাণসী শহর পর্যন্ত বিভিন্নরকম আকর্ষণ এখানে বর্তমান।
  চণ্ডীগড়
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার যৌথ রাজধানী, স্বাধীন ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর।
  দিল্লি
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল শহর, জাতীয় রাজধানী নতুন দিল্লি এখানে অবস্থিত।
  পাঞ্জাব
শিখদের মাতৃভূমি। এখানে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির অবস্থিত।
  বিহার
যদিও এটি ভারতের দরিদ্রতম রাজ্যের মধ্যে অন্যতম, মৌর্য যুগ থেকে বিহারে প্রচুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বর্তমান।
  মধ্যপ্রদেশ
  হরিয়ানা

শহর[সম্পাদনা]

লালকেল্লা, দিল্লি
  • 1 অমৃতসর — শিখদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান, স্বর্ণমন্দির এখানে অবস্থিত।
  • 2 আগ্রা — বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল সহ বিভিন্ন মুঘল স্থাপত্য এখানে অবস্থিত।
  • 3 চণ্ডীগড় — পাঞ্জাব ও হরিয়ানার যৌথ রাজধানী, স্বাধীন ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর।
  • 4 ঝাঁসি — পাহাড়ি দুর্গের জন্য বিখ্যাত।
  • 5 দিল্লি — ভারতের সবচেয়ে জনবহুল শহর, জাতীয় রাজধানী নতুন দিল্লি এখানে অবস্থিত।
  • 6 পাটনা — বিহারের রাজধানী, বৌদ্ধ ও জৈন তীর্থস্থানের প্রবেশদ্বার।
  • 7 বারাণসী (কাশী, বেনারস) — গঙ্গাপারে হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র শহর।
  • 8 ভোপাল (ভূপাল) — মধ্যপ্রদেশের রাজধানী, একদা গ্যাস দুর্ঘটনার জন্য কুখ্যাত ছিল।
  • 9 লখনউ — উত্তরপ্রদেশের রাজধানী, অযোধ্যার নবাবের শহর।

অন্যান্য গন্তব্য[সম্পাদনা]

  • 3 সাতপুরা জাতীয় উদ্যান, মধ্যপ্রদেশ — সাতপুরা পর্বতের রুক্ষ ভূমিতে অবস্থিত এই উদ্যান হচ্ছে বাঘ, চিতাবাঘ, বুনো কুকুর, চিত্রা হরিণ, বুনো শুয়োর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বসতি। এছাড়া হাতি, সিংহ ও জলহস্তী কদাচিৎ দেখা যায়।

অনুধাবন[সম্পাদনা]

দশাশ্বমেধ ঘাট, বারাণসী

পবিত্র গঙ্গা ও তার উপনদীদের দ্বারা পুষ্ট গাঙ্গেয় সমভূমি হচ্ছে ভারতের শস্যগোলা হিসেবে বিবেচিত। এই অঞ্চলটি হিন্দি বলয় বা আর্যাবর্ত নামেও পরিচিত। এই অঞ্চলে একাধিক অত্যন্ত জনবহুল শহর ও গ্রাম বর্তমান, যেমন: দিল্লি, লখনউ, বারাণসীপাটনা। এই অঞ্চলে হাজার বছরের নিরবিচ্ছিন্ন বসতি এবং বিভিন্ন রাজবংশের অধীনে জনগণের সৃজনশীলতার জন্য বিশ্বের কিছু সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত।

ভাষা[সম্পাদনা]

পাঞ্জাবচণ্ডীগড় বাদে এই অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র হিন্দি ভাষা প্রচলিত, তবে সেখানকার মুসলিমদের মধ্যে উর্দু ভাষাও প্রচলিত। পাঞ্জাব ও চণ্ডীগড়ে পাঞ্জাবি ভাষা প্রচলিত।

প্রবেশ[সম্পাদনা]

তাজমহল, আগ্রা

আকাশপথে[সম্পাদনা]

এই অঞ্চলে সমস্ত প্রধান শহরে বিমানবন্দর বর্তমান, যার মধ্যে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যস্ততম। এছাড়া অমৃতসর, ইন্দোর, গয়া, চণ্ডীগড়, পাটনা, বারাণসী, লখনউ ইত্যাদি বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক পরিষেবা বর্তমান। এছাড়া ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকে অভ্যন্তরীণ উড়ান বর্তমান।

রেলপথে ও বাসে[সম্পাদনা]

ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকে এই অঞ্চলে দূরপাল্লার ট্রেন পরিষেবা বর্তমান। দূরপাল্লার বাস পরিষেবার ক্ষেত্রেও এটি সত্য।

ঘুরে দেখুন[সম্পাদনা]

এই অঞ্চলের প্রধান শহরের মধ্যে একাধিক ট্রেন ও বাস সংযোগ বর্তমান। বেশি দূরত্বের জন্য অভ্যন্তরীণ উড়ানও সম্ভব।

দেখুন ও করুন[সম্পাদনা]

স্বর্ণমন্দির, অমৃতসর

গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিশ্বের কিছু সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান বর্তমান। আগ্রায় বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল অবস্থিত, যা মুঘল আমলে ভালবাসার উপাখ্যান হিসেবে পরিচিত। আগ্রার নিকটে ফতেহপুর সিক্রি নামক প্রাক্তন মুঘল রাজধানী অবস্থিত, যা লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরি। বারাণসী নিছক পর্যটন স্থান নয়, এটি এক ধরনের অভিজ্ঞতা। সেখানে একাধিক ব্যক্তি নদীতে ধার্মিক স্নান সম্পন্ন করেন, নদীর ধারে একাধিক ঘাটে গঙ্গারতি সম্পন্ন করা হয়। ছোট শহর খাজুরাহোতে বিভিন্ন তান্ত্রিক মন্দির বর্তমান, যেগুলিকে কলা ঐতিহাসিকগণ একে প্রেমমূলক শিল্পের উপাখ্যান বলে অভিহিত করেছেন। বুদ্ধ গয়াসারনাথ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম কেন্দ্র, বিশেষ করে বুদ্ধ গয়াতে একাধিক চিত্তাকর্ষক মন্দির বর্তমান। অমৃতসরের প্রধান দর্শনীয় স্থান হচ্ছে স্বর্ণমন্দির, যা শিখ ধর্মের সদরদপ্তর। এছাড়া দিল্লিতে সুলতানি ও মুঘল আমলের একাধিক দর্শনীয় স্থান বর্তমান, যেমন কুতুব মিনার, জামে মসজিদলালকেল্লা

আহার[সম্পাদনা]

সুগন্ধযুক্ত অবধি গোভি, লখনউয়ের এক জনপ্রিয় আহার।

গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিভিন্নরকম উত্তর ভারতীয় ("নর্থ ইন্ডিয়ান") খাদ্য পেশ করে, যার মধ্যে বিভিন্ন তন্দুরি খাদ্য অন্যতম। যেহেতু এখানে প্রচুর গম চাষ করা হয়, সেহেতু এখানে রুটি ও নানের মতো খাদ্য সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এছাড়া এখানে ভাত খাওয়াও প্রচলিত এবং বাসমতী চাল উত্তর ভারত থেকেই উদ্ভূত।

তবে এখনকার কিছু এলাকায় রাজস্থানগুজরাতের মতো নিরামিষ খাদ্য তেমন প্রচলিত নয়, আংশিকভাবে বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের বসতির জন্য। এছাড়া এই এলাকায় শত শত বছরের সুলতানি ও মুঘল শাসনের জন্য এখানে বিভিন্নরকম আমিষ খাদ্য প্রচলিত। এর ফলে রেস্তোরাঁয় ছাগল, মটন ও মুরগির মাংস পাওয়া তেমন কঠিন নয়। তবে এখনকার বিভিন্ন হিন্দু ও জৈন পবিত্র শহরের প্রায় বেশিরভাগ বাসিন্দা নিরামিষাশী।

হিন্দুধর্মে গোরুকে পবিত্র হিসেবে মনে করা হয়, সুতরাং এখানে বিভিন্নরকম আমিষ খাদ্য পাওয়া গেলেও দয়া করে পাঁচতারা হোটেল ছাড়া গোমাংস আশা করবেন না। এখানে শুয়োরের মাংসও বিরল।

পানীয়[সম্পাদনা]

উত্তর ভারতে বিভিন্নরকম দুগ্ধজাত পানীয় পাওয়া যায়, যার মধ্যে লস্সি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এখানে মশলা চা প্রচলিত।

সাবধানে থাকুন[সম্পাদনা]

পশ্চিম ভারতের তুলনায় গাঙ্গেয় সমভূমিতে অপরাধের হার বেশি। শহরের মধ্যে একাধিক পকেটমার বর্তমান। দয়া করে আপনি আপনার মূল সম্পত্তি, পাসপোর্ট ও কার্ড কোনো সুরক্ষিত জায়গায় রেখে নিজের ওয়ালেট বা অন্যত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য কিছু টাকা নিয়ে যান। তবে ২০১৬ সালে ডিজিটাল পেমেন্টের (ইউপিআই) আবির্ভাবের জন্য টাকা নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা হওয়ার কথা নয়।

বিহারের মতো নিম্ন স্বাক্ষরতা হারবিশিষ্ট রাজ্যে অপরাধ ও ডাকাতির জন্য ভয়ানক কুখ্যাত।