চীনের মহাপ্রাচীর (万里长城 wàn lǐ chǐng chéng) চীনের লিয়াওনিং হতে হেবেই, তিয়ানজিন, বেইজিং, ইনার মঙ্গোলিয়া, শানসি, শাংসি এবং নিংজিয়া হয়ে গ্যানসুতে প্রসারিত একটি ধারাবাহিক দেয়াল।
জানুন
[সম্পাদনা]চীনের মহাপ্রাচীরটি কয়েক হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হওয়ায় অনেক জায়গায় ঘুরে দেখা যায়। এর অবস্থা চমৎকার থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং প্রবেশ্যযোগ্যতার মধ্যে রয়েছে সোজা থেকে শুরু করে বেশ কঠিন। উল্লেখ্য যে বিভিন্ন বিভাগের প্রত্যেকের নিজস্ব ভর্তি ফি রয়েছে, যেমন আপনি যদি জিনশালিং থেকে সিমাতাইয়ে হাইক করতে চান তবে আপনাকে সম্ভবত দ্বীগুণ ভাড়া দিতে হবে। যদিও এর নির্মাণটি প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং ডি-এর ২য় খৃষ্টপূর্ব শতাব্দীর টাইরানিক্যাল রাজত্বের সাথে জড়িত, তবে যে প্রাচীরটি পর্যটকরা বর্তমানে দেখেন তা মিং রাজবংশের অনেক পরে হয়েছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আমাদের পরিচিত মহাপ্রাচীরটি আসলে বিভিন্ন সম্রাটের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে নির্মিত বেশ কয়েকটি দেয়ালের একটি ধারাবাহিক।
- প্রথম মহাপ্রাচীর: ২২১-২০৭ খৃষ্টপূর্বাব্দে কিন রাজবংশ দ্বারা নির্মিত
- দ্বিতীয় মহাপ্রাচীর: ২০৫-১২৭ খৃষ্টপূর্বাব্দে হান রাজবংশ দ্বারা নির্মিত
- তৃতীয় মহাপ্রাচীর: ১২০০ খ্রিস্টাব্দে জিন রাজবংশ দ্বারা নির্মিত
- চতুর্থ মহাপ্রাচীর: ১৩৬৭–১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে মিং রাজবংশ দ্বারা নির্মিত
অন্যান্য দেয়ালগুলির বেশিরভাগই এখন ধ্বংসাবশেষ। সকল ছবিতে মিংদের প্রাচীরই দেখা যায়।
প্রথম মহাপ্রাচীর
[সম্পাদনা]প্রথম মহাপ্রাচীরটি খ্রিস্টপূর্ব ২১৪ সালে কিন শি হুয়াং ডি দ্বারা তাঁর শাসন সুসংহতকরণ এবং প্রথমবারের মতো একটি একক চীন তৈরি করার পরে নির্মিত হয়েছিল। উত্তর থেকে জিয়াংনু আক্রমণকারীদের আক্রমণ থামানোর জন্য এই প্রাচীরটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম মহাপ্রাচীর তৈরির জন্য ৩২ বছরের নির্মানকালে ৫,০০,০০ শ্রমিক কাজ করেছিল।
যদিও প্রাচীরটি শত্রুদের দূরে রাখতে কাজ করেছিল, অভ্যন্তরীণ চাপগুলি থামানোর জন্য এটি কিছুই করেনি যা খ্রিস্টপূর্ব ২০৬ সালে শাসন পরিবর্তনের এবং হান রাজবংশের নতুন নেতৃত্বের দিকে পরিচালিত করে। প্রথম হান সম্রাট গাওজু আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রাচীরের সুবিধাগুলি দ্রুতই প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলেন এবং গানসু প্রদেশের ঝাওচিয়াং পর্যন্ত প্রাচীর প্রসারিত আরও করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় মহাপ্রাচীর
[সম্পাদনা]মহাপ্রাচীরের অনেক স্থান ধ্বসে যাওয়ায় এবং অনেক স্থানে আক্রমণকারীরা প্রাচীর ভেদ করতে সক্ষম হওয়ার কারণে ৭০ বছরের অধিক পরেও হান রাজবংশ আক্রমণকারীদের সাথে যুদ্ধ করেই চলছিল। ১৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হান রাজবংশের সম্রাট উ মূল প্রথম মহাপ্রাচীরটি প্রসারিত, পুনর্নির্মাণ এবং দূর্গকরণের কাজ শুরু করেন। ১২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট তাঁর শাসনে আরও অনেক অঞ্চল যোগ করার পরে একটি বড় সম্প্রসারণ কর্মসূচির আদেশ দেন যার ফলে দ্বিতীয় মহাপ্রাচীর তৈরি হয়। মহাপ্রাচীরটি হেক্সি করিডোর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল যার মাধ্যমে সিল্ক রোডের ট্রেডাররা পশ্চিমে এবং পশ্চিম থেকে ভ্রমণ করতে পারতো।
হান রাজবংশটি ওয়েই, শু ও উ নামক তিনটি রাজ্যে পৃথক হয়ে গেলে উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াই রাজ্যটি মহাপ্রাচীর বজায় রাখার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যাতে তারা উত্তর সমভূমি থেকে রুরান ও ক্বিদান যাযাবরদের রুখতে পারে। অবিচ্ছিন্ন রক্ষণাবেক্ষণ সত্ত্বেও, রৌরান যাযাবররা অনবরত প্রাচীরটি ভেদ করতে থাকে। মহাপ্রাচীরটি অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিভিন্ন রাজ্য অতিরিক্ত দেয়াল নির্মান করেছিল। অবশেষে ওয়েই রাজ্যটি জিন রাজবংশ (২৬৬ - ৪২০ খ্রিস্টাব্দ) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
লিয়াও ও সং রাজবংশের শাসনকাল অবধি মহাপ্রাচীরটির আর অতিরিক্ত কিছুই করা হয়নি। খিতান (মান্ড্যারিন ভাষায় কিদান (契丹)) নামে পরিচিত একটি সংখ্যালঘু উপজাতি দ্বারা শাসিত লিয়াও রাজবংশ উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো এবং সং রাজবংশ দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো। লিয়াওরা মূলত চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জুরচেন (ম্যান্ডারিন ভাষায় নিউজেন (女真)) হিসেবে পরিচিত) উপজাতিদের দ্বারা সমস্যায় পরছিলো বলে তারা হিলং এবং সোংহুয়া নদীর তীরে প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর তৈরি করেছিল। তবে এগুলো আক্রমণকারীদের দক্ষিণে আসতে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
তৃতীয় মহাপ্রাচীর
[সম্পাদনা]১১১৫ খ্রিস্টাব্দে জুরচেনরা জিন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। তারা উত্তরাঞ্চল থেকে আসার ফলে মঙ্গলদের বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে। তারা হেলংজিয়াং এবং মঙ্গোলিয়ায় তৃতীয় মহাপ্রাচীর নির্মাণ করে। এই প্রাচীরটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যজুড়ে পরিখা ছিলো।
এই অসাধারণ দুর্গ নির্মাণ সত্ত্বেও মঙ্গোলরা ১২৭৬ খ্রিস্টাব্দে জিনদের সরিয়ে ইউয়ান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। ইউয়ান রাজবংশের শাসন চলাকালীন প্রাচীরটি মেরামত বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দে চীনা মিং রাজবংশ এসে ক্ষমতা দখল করে নেয়।
মিং রাজবংশ জিনদের সরানোর পরে নিজেদের শাসন স্থায়ী করতে উদ্যোগী হয়। মিং রাজবংশের প্রথম সম্রাট হোংউ প্রাচীরটি পুনরায় তৈরি করেন এবং প্রাচীরব্যাপী দুর্গ নির্মাণ করে।
চতুর্থ মহাপ্রাচীর
[সম্পাদনা]তামু যুদ্ধের ফলে মঙ্গোলরা প্রাচীর নির্মানে আরও অধিক মনোযোগী হয়। ১৫৬৯ থেকে ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীরের সর্বাধিই পরিচিত অংশই নির্মাণ করা হয় যাকে চতুর্থ মহাপ্রাচীর বলে চিহ্নিত করা হয়। এই চতুর্থ মহাপ্রাচীর মঙ্গোলদের অনেক আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে।
জুরচেনরা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে ম্যানচাস নাম ধারণ করে এবং ১৬৪৪ সালে চীন দখল করে কিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এই সময় থেকে প্রাচীরটি নষ্ট হতে শুরু করে। স্থানীয়রা নিজেদের বাড়ি এবং অন্যান্য প্রকল্প তৈরির জন্য প্রাচীর থেকে পাথর নিতে শুরু করে।
১৯৮৪ সালে দেং জিয়াওপিং প্রাচীরটির পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সুরক্ষার কাজ শুরু করে। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত দেয়।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]দেখুন
[সম্পাদনা]করুন
[সম্পাদনা]- দুর্ভেদ্য প্রাচীরে হাইকিং করুন। প্রাচীরের বন্য এবং দুর্ভেদ্য অংশসমূহে হাইকিং করে চীনের মহাপ্রাচীর ভ্রমণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করুন।
ঘুমান
[সম্পাদনা]আপনি যদি একটি বন্য অংশে একাধিক দিনের ট্রাকে যান বা সূর্যাস্ত দেখতে যান তবে আপনি ঘুমানোর ব্যাগ এবং মাদুর বিছিয়ে টাওয়ারই ঘুমাতে পারেন। তবে এটি পর্যটকদের অংশে করবেন না, অবশ্যই শুধুমাত্র বন্য অংশে করতে পারবেন। তবে প্রস্থানের সময় সবকিছু পরিষ্কার করে এবং আপনার বর্জ্য আপনার সাথে নিয়ে যাবেন।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]শীতল ঋতুতে বাতাস বা ঠান্ডা আটকাতে সাথে জ্যাকেট নিয়ে যাবেন। শীতকালে, প্রাচীরের তাপমাত্রা বেইজিং অপেক্ষা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম হতে পারে। এই কম তাপমাত্রা এবং পর্বত থেকে আসে বাতাসের কারণে আপনাকে আপনার নিকটে থাকা জামাকাপড় ব্যবহার করতেই হবে। আপনি কিছু ভুলে গিয়ে থাকলে তা বিক্রেতাগণের নিকট থেক কিনতে পারবেন, তবে এখানে মূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
এখানে শীতকালে ভিড় অনেক কম হয়। শীতকালীন সূর্য এবং, যদি আপনি ভাগ্যবান হন, তবে তুষারের কারণে আপনি প্রাচীরের অসাধারণ রূপ দেখতে পাবেন। গ্রীষ্মকালে আপনার প্রচুর পানির প্রয়োজন হবে, অবশ্য অধিক পরিদর্শিত অঞ্চলে প্রচুর বিক্রেতারা রয়েছে যারা প্রয়োজনীয় নানান জিনিস বিক্রি করে থাকে। বজ্রঝড়ের সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন, কেননা এখানে প্রায়ই হঠাৎ করে অল্প সময়ের জন্য তবে বেশ মারাত্মক বজ্রঝড় হয়ে থাকে।
আপনার ভ্রমণের কোন চিহ্ন কোথাও ছেড়ে যাবেন না। এমনকি প্রত্যক্ষ করা কঠিন এমন স্থানেও আপনার নাম লিখবেন না বা স্মারক হিসেবে প্রাচীরের অংশ সাথে নিয়ে যাবেন না। যদি আপনার কোনো কাজের কারণে প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহল কর্তৃপক্ষ আপনাকে চড়া জরিমানা এবং অন্যান্য শাস্তি দিতে পারে।
আপনি প্রাচীরে হাইকিং করতে যেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন প্রাচীরটির বেশিরভাগ স্থানই কাদামাটি এবং হালকা পাথরের এবং যদি আপনি রক্ষিত জায়গাগুলির বাইরে যান তবে আপনার নিজের দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। এমনকি আপনি যদি প্রাচীর দিয়ে নাও হাঁটেন, মাঝে মাঝে আপনি অগ্রসর হওয়ার জন্য পথ পাবেন, তবে সেগুলো খাড়া এবং নিরাপদ নয়। তাছাড়াও এখানে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া কঠিন এবং কিছু কিছু অঞ্চলে পানি একেবারেই নাও থাকতে পারে। মাঝে মাঝে রাস্তার বা মোটরসারণির মতো বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। সাহায্য পেতে পারেন এমন জায়গা বা গ্রাম অনেক দূরে অবস্থিত। সেখানে যেতে আপনাকে মাইলখানিক পথ পাড়ি দিতেও হতে পারে। এই প্রাচীরের ভালো মানচিত্রও পাওয়া যায় না। আবার এখানে ভালো পথনির্দেশক পাওয়াও বেশ কঠিন।