উইকিভ্রমণ থেকে

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে এলিফ্যান্ট সাফারি
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে হাতির দল

জানুন[সম্পাদনা]

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের আগে নাম ছিল জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই জাতীয় উদ্যানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬১ মিটার উচ্চতায় তোর্সা নদীর তীর বরাবর ২১৬ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এটি মূলত নদীকেন্দ্রিক বনাঞ্চলময় একটি সুবিস্তৃত তৃণভূমি। এই অভয়ারণ্যের বেশিরভাগই লম্বা ঘাসে আচ্ছাদিত। এখানে প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ প্রকৃতির বৈচিত্রময় সমাবেশ দেখা যায়। এখানকার চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই বনের ভিতরে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল হাতি এবং টেরেন ভেহিকেল সাফারি। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের প্রাণীদের মধ্যে অবলুপ্তপ্রায় একশৃঙ্গ গণ্ডার বিশেষভাবে উল্লেখ্য। জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নদীকেন্দ্রিক এই জঙ্গলকে ১৯৪১ সালে অভয়ারণ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১০ মে জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে "জাতীয় উদ্যান" হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

উদ্ভিদ ও প্রাণী[সম্পাদনা]

উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

এই বনভূমি প্রধানত লম্বা এলিফ্যান্ট ঘাসবিশিষ্ট সাভানা অঞ্চল।

প্রাণী[সম্পাদনা]

জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের মুখ্য আকর্ষণ এশীয় একশৃঙ্গ গন্ডার। অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের পর ভারতে এই অভয়ারণ্যেই সর্বাধিক সংখ্যক গন্ডারের দেখা মেলে। এই অভয়ারণ্যে বসবাসকারী অন্যান্য বন্যপ্রাণীগুলি হল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিতল হরিণ, হগ ডিয়ার, বুনো শুয়োর ও বন্যগরু।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি স্বর্গ। এটি ভারতের খুব কম জায়গাগুলির মধ্যে একটি, যেখানে বেঙ্গল ফ্লোরিকান দেখা যায়। এখানে পাওয়া অন্যান্য পাখি হল ক্রেস্টেড ঈগল, প্যালাসের ফিশিং ঈগল এবং শিকরা ছাড়াও জঙ্গল ফাউল, ময়ূর, তিতির এবং কম পাইড হর্নবিল। পাইথন, মনিটর টিকটিকি, ক্রেট, কোবরা, গেকো এবং প্রায় 8 প্রজাতির কচ্ছপও এখানে অভয়ারণ্য খুঁজে পেয়েছে।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

সারা বছর উষ্ণ এবং আর্দ্র। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত ভ্রমণের সেরা মৌসুম।

প্রবেশ[সম্পাদনা]

মাদারিহাট হল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। এটি জাতীয় সড়ক ৩১ ( এনএইচ ৩১) (শিলিগুড়ি-হাসিমারা) রোডের ধারে এবং শিলিগুড়ি শহর থেকে ১৪০ কিলোমিটার পূর্বে, কোচবিহার থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে এবং আলিপুরদুয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।

আকাশপথে[সম্পাদনা]

বাণিজ্যিক বিমান পরিসেবাসহ নিকটতম বিমানবন্দর হল নিম্ন আসাম অর্থাৎ পশ্চিম আসামের রূপসী বিমানবন্দর (RUP  আইএটিএ)। আরেকটি বিকল্প হল শিলিগুড়ি শহরের বাগডোগরা বিমানবন্দর (IXB  আইএটিএ), যা ভারতের সমস্ত বড় শহর থেকে দৈনিক বিমান পরিসেবা পরিচালনা করে। তাছাড়া এই বিমানবন্দর পারো এবং ব্যাঙ্কক থেকে সপ্তাহে দুবার আন্তর্জাতিক বিমান পরিসেবা পরিচালনা করে।

রেলপথে[সম্পাদনা]

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল মাদারিহাট। জাতীয় উদ্যান থেকে এর দূরত্ব ৭ কিমি। সব যাত্রীবাহী ট্রেন এখানে থামে।

  • 1 মাদারিহাট রেলওয়ে স্টেশন উইকিপিডিয়ায় মাদারিহাট রেলওয়ে স্টেশন (Q60212472)

সড়কপথে[সম্পাদনা]

ঘুরে দেখুন[সম্পাদনা]

মানচিত্র
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের মানচিত্র

১৫ জুন থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কাল বাদে বছরের অন্যান্য সময় জলদাপাড়া অভয়ারণ্য পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হলো জিপ সাফারি এবং বা হাতি সাফারি। ভারতের বন বিভাগের নির্দেশিকা অনুসারে সাফারি বুকিংয়ের সমস্ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। সাফারি রাইডের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকে।

রাত্রিযাপন[সম্পাদনা]