বরগুনা জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা। এটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত। বরগুনা জেলার উত্তরে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী জেলা; দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলা ও বঙ্গোপসাগর; পূর্বে পটুয়াখালী জেলা এবং পশ্চিমে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা অবস্থিত। এই জেলাটি আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বরগুনা সদর, বামনা উপজেলা ও বেতাগি - এই ছয়টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত।
কীভাবে যাবেন?
[সম্পাদনা]রাজধানী ঢাকা থেকে বরগুনা সদরের দূরত্ব ২৪৭ কিলোমিটার আর বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে ৯০ কিলোমিটার। এই জেলাটি একটি উপকূলীয় ও নদীবহুল অঞ্চল হওয়ায় এখানকার যেকোনো স্থানে আসার জন্য নৌপথ সবচেয়ে সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা। তবে, সড়ক পথেও এখানে আসা সম্ভব; সেক্ষেত্রে ফেরী পারাপার হতে হবে। বরগুনায় রেল যোগাযোগ বা বিমান বন্দর নেই বলে এই দুটি মাধ্যমে এখানকার কোনো স্থানে আসা যায় না।
সড়কপথে
[সম্পাদনা]- ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল, বিকাল রাত থেকে এবং রাত পদ্দা সেতু হয়ে, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে সাকুরা, সুগন্ধা, মিয়া, আব্দুল্লাহ্, পটুয়াখালী এক্সপ্রেস প্রভৃতি কোম্পানীর বাস ছাড়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে। এছাড়া গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসা যায়।
- ঢাকা থেকে বরগুনা আসার ভাড়া : ননএসি বাসে ২২০/- হতে ৬৫০/-।
- চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়ার বাস আসে বরগুনায়; ভাড়া পড়ে ৬৫০/-।
- বরগুনা সদর থেকে সড়ক পথে পায়রা, লেবুখালী ও কির্তনখোলা ফেরি নাই, সড়ক পথে এখন সহজ পারাপারের মাধ্যমে পটুয়াখালী হয়ে বরিশাল বিভাগীয় শহরে পৌছান যায়। এ পথের মোট দূরত্ব প্রায় ৯০ কি.মি. এবং সময় লাগে প্রায় ০৪ ঘণ্টা। বর্তমানে এ পথের বিকল্প হিসেবে বরিশাল বিভাগীয় শহরে যাতায়াতের জন্য বরগুনা-বেতাগী-মির্জাগঞ্জ-বাকেরগঞ্জ-দপদপিয়া সড়কটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পথে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগলেও সড়কটিতে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় এ পথটি কম ব্যবহৃত হয়।
- বরগুনার পাথরঘাটা হতে সড়ক পথে কাকাচিড়া-শতকর-মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাট ও খুলনা বিভাগীয় শহরে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে।
- বরগুনা জেলা হতে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেশের যেকোন স্থানে যাওয়া সম্ভব।
- বরগুনা সদর থেকে পায়রা নদী ফেরী পারাপারের মাধ্যমে আমতলী উপজেলায় পৌছান যায়, এতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে। আমতলী উপজেলা হতে সরাসরি সড়কপথে তালতলী উপজেলায় পৌঁছান যায় যাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। এছাড়া বেতাগী উপজেলার সাথে বরগুনা সদর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে, এতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে। বরগুনা জেলা সদর থেকে বড়ইতলা-বাইনচটকী ফেরী পারাপারের মাধ্যমে পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান এতে সময় লাগে যথাক্রমে ১.৩০ ঘণ্টা এবং ২ ঘণ্টা।
নৌপথে
[সম্পাদনা]প্রতিদিন একাধিক লঞ্চ ঢাকা সদরঘাট হতে বরগুনা যায়। লঞ্চ ছাড়ে ৪.৩০টা হতে ৮.০০টার মধ্যে। লঞ্চ ভাড়া ২০০ টাকা করে (ডেক), আর কেবিনে গেলে ৯০০ টাকা সিঙ্গেল, ১৮০০ টাকা ডাবল।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]- সোনাকাটা ফরেস্ট
- মাঝেরচর
- 1 লালদিয়া সমুদ্রসৈকত (লালদিয়ার চর) (পাথরঘাটা থেকে অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মটর বাইকে হড়িনঘাটা ইকোপার্ক বা লালদিয়া বনে আসতে হবে। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত বা ইঞ্জিন ছাড়া নৌকায় করে লালদিয়া সমুদ্রসৈকতে যাওয়া যাবে। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া বন ধরে হেটে গেলে সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েক।)। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। এক পাশে সমুদ্র অন্য পাশে বন, মাঝে সৈকত, এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিতে বিরল। লালদিয়া সমুদ্রসৈকত পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ঝাউবন। ১০৳।
- 2 টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (হড়িনঘাটা বন) (পাথরঘাটা থেকে অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মটর বাইকে হড়িনঘাটা বনে আসতে হবে।)। এই ম্যানগ্রোভ বনটি সুন্দরবনের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ। সুন্দরবনের মতো এতো বেশি প্রাণী বৈচিত্র না থাকলেও ভাগ্য ভালো হলে হরিণের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। হরিণবাড়িয়া বনে নির্মিত ৯৫০ মিটার দীর্ঘ ফুটট্রেল (পায়ে হাঁটার কাঠের ব্রিজ) সম্প্রসারিত করে লালদিয়া সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। বন দর্শনের জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। রয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ।
- আশার চর। এটি বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম কোলে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ। এটি প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ। বাংলাদেশের বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় পায়রা নদী নদীপথ বরাবর এটি অবস্থিত।
- 3 বিবি চিনি মসজিদ। বরগুনা বেতাগী উপজেলা সদর থেকে আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে উত্তর দিকে ১০ কিলোমিটার পথ অগ্রসর হলেই বিবিচিনি গ্রাম। দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মোঘল স্থাপত্যকর্মের এই ঐতিহাসিক মসজিদ। প্রাচীন এই মসজিদের দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এবং মসজিদটি খিলানের সাহায্যে বানানো হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি ৩৩ ফুট লম্বা, ৩৩ ফুট চওড়া এবং মসজিদটির দেয়াল প্রায় ৬ ফুট প্রশস্ত। এছাড়া মসজিদের পাশে ৪০ ফুট থেকে ৪৫ ফুট লম্বা তিনটি কবর রয়েছে যেগুলো আজ বিলীন হবার পথে।
- 4 হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র, পাথরঘাটা। ১৯৬৭ সাল থেকে বন বিভাগের সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির গাছ রোপণের মাধ্যমে বনটি সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার একরজুড়ে দৃষ্টিনন্দন এ বনে কেওড়া, গেওয়া, পশুরসহ সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এখানে ২০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বনায়ন করা হয়। এটি এখন বন্যপ্রাণীর অভয়রন্য।
সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য উৎকৃষ্ট জায়গা এটি। সাগরের তীর দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ফুট ট্রেইল। এছাড়া বনের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও গোলঘর। এ বনের সবেচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো- বনের ভেতরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা ছোট-বড় প্রায় ১০-১২টি খাল। জোয়ারের সময় খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় বনের মধ্যকার সবুজের সমারোহ।
- রাখাইন পল্লী।
খাওয়া দাওয়া
[সম্পাদনা]বরগুনায় খাবারের জন্য বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সবধরণের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
- রহমান রেস্তোরা - সদর।
রাত্রি যাপন
[সম্পাদনা]বরগুনায় থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্যে উন্নতমানের -
- জেলা পরিষদ ডাকবাংলো - বরগুনা।
- হোটেল তাজবিন - সদর।
- হোটেল বে অব বেঙ্গল - সদর রোড, বরগুনা; মোবাইল: +৮৮০১৭১২-২৩৪ ৩৩২।