- একই নামের অন্যান্য জায়গার জন্য দেখুন মক্কা (দ্ব্যর্থতা নিরসন).
মক্কা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে মক্কা আল-মুকাররামা (আরবি: مكة المكرمة, মক্কা আল-মুকাররামাহ ) নামে পরিচিত–হল সৌদি আরবের একটি প্রাচীন শহর এবং ইসলামের পবিত্রতম শহর ।
মক্কা হল ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদের জন্মস্থান এবং ইসলামি বিশ্বাস মতে, এখানেই মুহাম্মদের ওপর সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছিল। মক্কার বড় মসজিদ, যা আল মসজিদুল হারাম (আরবি: المسجد الحرام ) নামেও প্রসিদ্ধ, এটিকে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ বলে মনে করা হয়। এই মসজিদেই পবিত্র কাবা শরীফ অবস্থিত এবং মুসলমানরা যখন নামাজ আদায় করে তখন এর দিকে মুখ করে দাঁড়ায়।
প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান হজ যাত্রার উদ্দেশ্য মক্কায় ভিড় করে, যা সমস্ত সামর্থবান মুসলমানের জন্য অবশ্যই পালনীয় একটি ধর্মীয় আজ্ঞাবহ। এ সব কারণ মক্কাকে সৌদি আরবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা শহর করে তুলেছে ।
অনুধাবন
[সম্পাদনা]
তীর্থযাত্রা মক্কার তীর্থযাত্রা যা হজ নামে পরিচিত, তা সমস্ত মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামূলক আদেশ, যদি তারা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। প্রতি বছর হিজরি সালের জিলহজ মাসে প্রায় ত্রিশ লাখেরও অধিক মুসলমান হজের উদ্দেশ্য শহরটি পরিদর্শন করেন। এই মাসের বাইরের সফরগুলি ছোট তীর্থযাত্রা বা ওমরাহ হিসাবে পরিচিত, যা বাধ্যতামূলক নয়; তবে এতেও দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করা হয়। ওমরাহ মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সম্পাদন করা যায় যেখানে হজ অধিক সময়সাপেক্ষ এবং এতে আরো অনেক আচার-অনুষ্ঠান জড়িত। ওমরাহ হজ্জের বিকল্প নয়; তবে, উভয়ই স্রষ্টার (আল্লাহর) কাছে আত্মসমর্পণের একটি প্রদর্শনী। |
ইতিহাস
[সম্পাদনা]মক্কাকে সাধারণত "ইসলামের ঝর্ণাধারা ও দোলনা" বলে মনে করা হয়।
প্রারম্ভিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: ইসলাম , প্রাক-ইসলামি আরব, ইসলামী স্বর্ণযুগ, উসমানীয় সাম্রাজ্য
ইসলামি ইতিহাস অনুযায়ী মক্কার ইতিহাস নবি ইব্রাহিম (আব্রাহাম) থেকে শুরু হয়েছিল, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে তার বড় ছেলে ইসমাইলের সাহায্যে কাবা নির্মাণ করেছিলেন। এর আগে এটি ঠিক বিরাণ এবং জনশূন্য জায়গা ছিল। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। সেই দিন থেকেই মক্কার ইতিহাস ও পরিচয় ইসলামের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যায়।
মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে, ৬১০ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ ৪০ বছর বয়সে যখন মক্কায় ছিলেন ( জাবালে নুরের হেরা গুহার ভিতরে ধ্যানমগ্ন) তখন জিবরাঈল নামের একজন ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথমবার তার কাছে ওহী (ঐশী বার্তা) নিয়ে আসেন। মুহাম্মদ তখন থেকে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। ৬২২ সালে তিনি মক্কার স্থানীয় কুরাইশ শাসক গোষ্ঠী দ্বারা অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়ে ইয়াসরিবের ( বর্তমানে মদিনা বলা হয়) উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেছিলেন। তারা মুহাম্মদ ও আনিত বিশ্বাসকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল এবং ইসলামের অনুসারীদের ওপর অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছিল। মুহাম্মাদ যখন মদিনায় চলে যান এবং সেখানে স্থায়ী হয়ে ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার শুরু করেন, তখন মুহাম্মদের অনুসারী এবং মক্কার স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়; বিশেষ করে ৬২৮ সালে যখন মুহাম্মাদের অনুসারীরা হজযাত্রার জন্য মক্কায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তাদের কাউকেই শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে উভয়ের মাঝে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে মুহাম্মদের অনুসারীরা মক্কায় ফিরে যান। ৬২৯ সালে মুহাম্মদ নিজের হাজার হাজার অনুসারীসহ মদিনা থেকে মক্কায় ফিরে আসেন ( যেখানে ইতিমধ্যে তিনি তের বছর অতিবাহিত করে ফেলেছেন) এবং হজের উদ্দেশ্য মক্কায় প্রবেশ করার ইচ্ছা প্রকাশ, যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম হজযাত্রা হিসাবে পরিচিত। মুসলিমদের মতে, ৬২৮ সালের শান্তি চুক্তিতে ১০ বছর যুদ্ধবিরতির কথা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও চুক্তির মাত্র দুই বছর পরেই মক্কার কুরাইশরা একদল মুসলিমকে হত্যা করে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। ফলে মুসলিমদের জন্য চুক্তি রক্ষা করা জরুরি নয়। মুহাম্মদ এবং তার অনুসারী, সঙ্গী এবং মিত্ররা তখন সংখ্যায় অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল; তাই পাল্টা লড়াই করার পরিবর্তে তারা কেবল মক্কা শহর অভিমুখে অগ্রসর হন এবং এর ফলে মক্কার কুরাইশদের আত্মসমর্পণ করে। অবশেষে, মুহাম্মদ নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি বাদে সবার জন্যেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন ( যদিও তাদেরও কয়েকজনকে পরবর্তীতে ক্ষমা করে দেওয়া হয়)। এর ফলে সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মক্কাকে মুহাম্মদ মুসলিম তীর্থস্থান বা হজের কেন্দ্রে পরিণত করেন, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।
মধ্যযুগ
[সম্পাদনা]মক্কা বিগত ১৫০০ বছর যাবত বিভিন্ন রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে। নবী মোহাম্মদের পরে মক্কা রাশিদুন খেলাফত, উমাইয়া রাজবংশ, আব্বাসি রাজবংশ ও উসমানীয় সাম্রাজ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম শাসক শাসিত হয়েছে। ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে মাঝে একটি সংক্ষিপ্ত সময় ব্যতীত পতনের আগ পর্যন্ত মক্কা এবং হেজাজের বাকি অংশ উসমানীয় সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দশম শতাব্দী থেকে মক্কার স্থানীয় হাশেমি (নবি মুহাম্মদের বংশীয় ) আমিররা এর ধর্মীয় ও অস্থায়ী নেতা ছিলেন এবং তারা শরীফ নামে পরিচিত হতেন। তারা কেন্দ্রীয় ইসলামি সাম্রাজ্যের পক্ষ থেকে মক্কার গভর্নর বা শাসক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। মক্কার সর্বশেষ হাশেমি আমির বা শরীফ ছিলে হুসাইন বিন আলী, যিনি ১৯০৮ থেকে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মক্কার আমির ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি নিজেকে মক্কার শাসক ঘোষণা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৬ সালে বিন আলী উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের সূচনা করেন। ১৯২৪ সালে তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর নিজেকে মুসলিমদের খলিফা ঘোষণা করেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি হেজাজে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন
২০ শতক
[সম্পাদনা]উসমানীয় সাম্রাজ্যে বিভক্তি সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত ব্রিটিশ গোয়েন্দা অফিসার লরেন্সের সাথে কাজ করা হাশেমীয় আমিররা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসমানীয় তুর্কিদের বিরুদ্ধে একটি সফল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়। যুদ্ধের পরপর ( আরবদের মতে) ব্রিটিশরা নিজেদের মিত্রদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। যুদ্ধকালীন প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও লেভান্টে (বৃহত্তর সিরিয়ায়) কোনো স্বাধীন আরব রাষ্ট্র গঠন করা হয়নি; বরং এ অঞ্চলকে ব্রিটিশ ও ফরাসি উপনিবেশে পরিণত করা হয়।
১৯২৪ সালে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে মক্কার তৎকালীন শরিফ হুসাইনের বিপক্ষে বর্তমান সৌদি আরবে ক্ষমতাসীন ইবনে সৌদ পরিবার মক্কা জয় করে। এটি ছিল আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার অংশ।
এদিকে, ব্রিটিশরা জর্ডান এবং ইরাকে হাশেমীদের ক্ষমতায় বসাতে সাহায্য করেছিল। তবে তাদের ক্ষমতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
বড় মসজিদ দখল
[সম্পাদনা]১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ নভেম্বর একদল সশস্ত্র চরমপন্থী তৎকালীন ক্ষমতাসীন সৌদি রাজপরিবারকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়ে মক্কার বড় মসজিদে আক্রমণ করে এবং দখল করে অবরোধ করে রাখে। অবরোধ দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়, যতক্ষণ না পাকিস্তান ও ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনী সৌদি কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য হস্তক্ষেপ করে।
বড় মসজিদ দখল মুসলিম বিশ্বের উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং সৌদি আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। সৌদি সরকার কর্তৃক চরমপন্থীদের বন্দী ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পরে সৌদি আরব আরো রক্ষণশীল অবস্থান গ্রহণ করে এবং দেশটির ধর্মীয় কর্তৃপক্ষকে আরো ক্ষমতা প্রদান করে। এরপর থেকে পূর্বের মত( ব্রিটিশ উপনিবেশের আগে ) ইসলামি আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করে। এরপর সৌদি সমাজে নারীদের ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে হ্রাস পায় ( অবরোধের আগে নারী টিভি উপস্থাপক একটি সাধারণ দৃশ্য ছিল ) এবং এর ফলে সৌদি আরবে অমুসলিম বিদেশীদের ভ্রমণ আরো সীমাবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে।
আধুনিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]বিশ্বের অন্যান্য শহরের মতো, মক্কাতেও শহরকেন্দ্রিক কিছু সমস্যা রয়েছে। সৌদি সরকার নিয়মিতভাবে হজ চলাকালীন ঘটনার তীব্রতা কমিয়ে না আনা, শহরটির দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং শহরের ইসলামী ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোকে ধ্বংস করার জন্য সমালোচিত হয়। এটি অনুমান করা হয় যে, মক্কার ঐতিহাসিক ভবনগুলির ৯৫% এক হাজার বছরেরও বেশি পুরানো, যা সৌদি সরকার ভেঙে দিয়েছে। একে সাংস্কৃতিক ভাংচুর এবং ইসলামের উৎপত্তি ও পরিচয়কে মুছে ফেলা ও মুছে ফেলার অপচেষ্টা হিসেবে দেখে বিশ্বের অনেক মানুষ এতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সৌদি সরকার দাবি করে যে, তারা হজ তীর্থযাত্রীদের থাকার জন্য এবং তাদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার চেষ্টা করছে; কিন্তু অনেকেই এর সাথে একমত নন। দাবি করা হয় যে, সৌদি সরকার মক্কাকে একটি পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করতে বেশি আগ্রহী। সৌদি সরকার নিয়মিতভাবে তারা কীভাবে শহর পরিচালনা করছে তা প্রচার করে এবং বিরোধীদের সকল সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে। সমালোচকদের উদ্দেশ্য বলা হয় যে, তারা "রাজনীতি খেলছে" বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে "হস্তক্ষেপ করছে"।
মক্কা শহরটিতে সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনার একজন উল্লেখযোগ্য সমালোচক হলেন তুর্কি সরকার। শহরের উসমানীয় সাম্রাজ্যের বেশ কিছু কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে, যেটিকে তুর্কি সরকার নিজেদের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে।
২০০২ সালে উসমানীয় আমলে নির্মিত আজিয়াদ দুর্গ সৌদি সরকার আবরাজ আল বাইতের জন্য পথ তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে ফেলেন। এটি মক্কার বড় মসজিদের কাছে একটি পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। আবরাজ আল বাইত একটি ১৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ছিল, যা মূলত বিশাল ও ক্রমবর্ধমান হজযাত্রীদের আবাসন সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তুর্কি সরকার এবং তার সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক ব্যক্তিবর্গ সৌদি সরকারকে দুর্গটি ধ্বংস করা থেকে বিরত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনা, ২০১৫ সালে মিনায় পদদলিত হয়ে কিছু হজযাত্রীর মৃত্যুবরণে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে৷ ইরান পৃথক ঘটনায় বেশ কয়েকজন ইরানী তীর্থযাত্রী নিহত হওয়ার পরে কয়েকবার হজের জন্য তার নাগরিকদের মক্কা যেতে নিষেধ করেছিল। ইরানের সাথে পূর্ব থেকে সৌদি সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনৈতিক মতবিরোধ চলে আসছে।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]টীকা: ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, অমুসলিম ও আহমদিয়া আন্দোলনের অনুসারীদের জন্য মক্কায় প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। এর ব্যতিক্রমে, মক্কার বাস টার্মিনাল (যা মক্কার সীমানার বাইরে) অমুসলিম মুসলিম সবার জন্য খোলা থাকে। | |
(তথ্য সর্বশেষ হালনাগাদ হয়েছে- অক্টো ২০২৪) |
ভিসার প্রয়োজনীয়তা
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: সৌদি আরব#প্রবেশ
সৌদি অভিবাসন নীতি সম্পর্কে আরো তথ্যের জন্যে দয়া করে সৌদি আরব নিবন্ধের "প্রবেশ" অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
আপনি যদি হজের সময় পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই হজ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
বিমানে
[সম্পাদনা]যেহেতু মক্কা একটি পবিত্র ভূমি হিসাবে বিবেচিত হয়, তাই মক্কা একটি নো-ফ্লাই জোন। তাই শহরে কোন বিমানবন্দর নেই। বাণিজ্যিক বিমানগুলিও শহরের উপর দিয়ে উড্ডয়ন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- মক্কার প্রধান প্রবেশদ্বার: 1 1 হকিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (জেদ্দায় ) একটি সংরক্ষিত হজ টার্মিনাল রয়েছে, যা শুধুমাত্র হজের সময় ব্যবহার করা হয় এবং হজের সময় লক্ষ লক্ষ হজযাত্রী এই টার্মিনাল দিয়ে যান, তাই আশা করি টার্মিনালটিতে প্রচুর ভিড় থাকবে।
- মক্কার অপর একটি প্রবেশদ্বার হলো 2 তায়েফ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (তায়েফ)। তবে এটি অপেক্ষাকৃত একটি ছোট বিমানবন্দর হওয়ায় খুব কম বিমান এই বিমানবন্দর দিয়ে চলাচল করে। এখানেও সরকার হজযাত্রীদের জন্য একটি হজ টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল; কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২২ সাল পর্যন্ত এর নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়েছে।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]বিমান থেকে জেদ্দা বা তায়েফে অবতরণ করার পরে আপনার পরবর্তী ধাপ হবে গাড়ি চালিয়ে শহরের দিকে রওনা হওয়া। মক্কায় দুটি প্রধান হাইওয়ে ব্যবহার করে চলাচল করা যায়: হাইওয়ে ৪০ ও হাইওয়ে ১৫ ।
- আপনি যদি জেদ্দা থেকে গাড়ি চালিয়ে আসেন, তাহলে হাইওয়ে ৪০ ধরে যান। হাইওয়ে ৪০ একটি সুরক্ষামূলক, আধুনিক ও বহু-লেনের মহাসড়ক।ট্রাফিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এতে ভ্রমণে আপনাকে কমপক্ষে ৬০ মিনিট সময় লাগবে। তবে হজ বা ওমরাহ চলাকালীন মহাসড়কটি সম্পূর্ণ জ্যাম হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
- মক্কায় প্রবেশের আরেকটি সহজ উপায় হল তায়েফ এবং এর জন্য শুধু হাইওয়ে ১৫ ধরে গাড়ি চালান। আপনি ৬০ মিনিটের মধ্যে মক্কা পৌঁছাবেন। যেহেতু অধিকাংশ হজযাত্রী বিমান থেকে জেদ্দায় অবতরণ করেন; তাই এই মহাসড়কটি সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত হবে বলে আশা করেন। আপনি যদি দ্রুত মক্কায় প্রবেশ করতে চান তবে আপনাকে এই পথটি গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আপনার নিজের গাড়ি না থাকলে, আপনি নিম্নলিখিত কাজগুলি করার বিবেচনা করতে পারেন:
- জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে আপনাকে মক্কায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি ভাড়া করুন । আপনি যদি এটি করতে চান তবে, তাহলে আপনি অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের সাথে ভাড়া খরচ ভাগ করতে পারেন। হজ মৌসুমে দাম একটু বেশি হতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
- আপনাকে মক্কায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উবার অনুসন্ধান করুন। উবার সৌদি আরবের সব বড় শহরে কাজ করে।
ট্রেনে
[সম্পাদনা]শহরে প্রবেশের দ্রুততম উপায় হল ট্রেন। জেদ্দা থেকে মক্কাগামী ট্রেনে যেতে আপনার কমপক্ষে ৩০ বা তার চেয়ে কয়েক মিনিট বেশি সময় লাগবে। হারামাইন হাই-স্পিড রেলওয়ে জেদ্দা হয়ে মক্কা ও মদিনাকে সংযুক্ত করে এবং আপনি কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রেন স্টেশন থেকে সরাসরি শহরে যেতে পারেন ।
3 মক্কা রেলওয়ে স্টেশন
বাসে
[সম্পাদনা]সৌদি আরবীয় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি (SAPTCO; সাপটিকো) বিভিন্ন শহরে বাস পরিষেবা প্রদান করে। জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত একটি বাসে যাত্রায় সাধারণত ট্রাফিক অবস্থার উপর নির্ভর করে আপনার ১¼ ঘন্টা সময় লাগবে।
সাপটিকো মক্কায় ভিআইপি পরিষেবাও প্রদান করে। ভিআইপি বাসগুলো অনেক প্রশস্ত ও আরামদায়ক হয় এবং এসব বাসে বিনামূল্যের ওয়াইফাই সুবিধাও রয়েছে। তবে আপনি যদি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (GCC) অন্তর্ভুক্ত কোন দেশের নাগরিক না হন, তাহলে ভিআইপি বাসে ওঠার আগে নিজের কাছে একটি বৈধ পাসপোর্ট ও একটি মেয়াদযুক্ত বৈধ ভিসা আছে, তা নিশ্চিত করুন।
আপনি মক্কা যাওয়ার জন্যে বাসের টিকিট বুক করতে পারেন এমন অনেক উপায় রয়েছে। আপনি একটি সাপটিকো শাখায়, সাপটিকো অ্যাপে ( iOS অথবা Android ) বা ওয়েবসাইটে এটি করতে পারেন৷ সাপটিকো অ্যাপটি শুধুমাত্র আরবি ভাষায় উপলব্ধ।
- 1 মক্কা সাপটিকো স্টেশন (ابتكو محطة حفلات الطائف), তানইম পাড়া, মদিনা রোড, মক্কা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের কাছে, ☎ +৯৬৬-১২ ৫২০৪৯৪৯, ইমেইল: eidmm@saptco.com.sa। এটি মক্কার সাপটিকো স্টেশন। আপনি সৌদি আরবে নিজের পরবর্তী গন্তব্যে যেতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
- 2 সাপটিকো আল-হারাম স্টেশন, ☎ +৯৬৬-৫১৫২৩৪৪২৭, ইমেইল: saptcoallehapi@gmail.com। এটি সাপটিকো ভিআইপি বাস স্টেশন।
ঘোরাঘুরি
[সম্পাদনা]মেট্রো
[সম্পাদনা]মক্কার পরিবহন নেটওয়ার্ক খুবই উন্নত ও অত্যাধুনিক মানসম্মত। তবে হজ্জের সময় ঘুরে আসা আক্ষরিক ঝামেলা হতে পারে বলে আশা করা যায়; কারণ তখন লক্ষ লক্ষ হজযাত্রী শহরের প্রতিটি কোণায় কোণায় ছড়িয়ে ছটিয়ে থাকে। তাই তখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে প্রচুর সময় লেগে যেতে পারে।
মেট্রোতে
[সম্পাদনা]আল মাশায়ের আল মুকাদ্দাসাহ মেট্রো রেললাইন ( আরবি: قطار المشاعر المقدسة الخط الجنوبي) হল মক্কা শহরে সেবাপ্রদানকারী একমাত্র মেট্রো লাইন। মেট্রোটি ২০১০ খ্রিস্টাব্দে একটি চীনা রেলওয়ে নির্মাণ সংস্থা (China Railway Construction Corporation Limited ) দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান যেকোনো মেট্রোর চেয়ে সবার্ধিক ক্ষমতাবান বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি সত্যই; আপনার অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী কীভাবে প্রতি বছর হজের উদ্দেশ্য মক্কায় আসেন তা বিবেচনা করলে বিষয়টি বুঝা যায়।
অদূর ভবিষ্যতে আরো একটি নতুন মেট্রো নেটওয়ার্ক যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং নতুন নেটওয়ার্কটি মক্কা মাস রেল ট্রানজিট নামে পরিচিত হবে, যা ৪টি লাইন নিয়ে গঠিত হবে: লাইন A, লাইন B, লাইন C এবং লাইন D। মোট ৮৮টি স্টেশন এই সম্প্রসারণের আওতাভুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক শোনাচ্ছে; তবে নির্মাণ চুক্তি এখন পর্যন্ত কাউকে প্রদান করা হয়নি। একবার নির্মাণ চুক্তি প্রদান করা হলে এবং প্রকল্পটি শেষ হয়ে এলে আপনি আরো অধিক আরাম ও সুবিধার সাথে মক্কা যাওয়ার আশা করতে পারেন। কিন্তু এটা এখন থেকে কয়েক যুগ পরে সম্ভব হতে পারে।
আল মাশায়ের আল মুকাদ্দাসা মেট্রো স্টেশনসমূহ
[সম্পাদনা]আল মাশায়ের আল মুকাদ্দাসা মেট্রো লাইনে মোট নয়টি স্টেশন রয়েছে এবং এটি মক্কা, আরাফাত পর্বত, মুজদালিফা এবং মিনার মতল পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি একচেটিয়া শাটল ট্রেন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। হজের সময় অন্য সব পরিবহনের মত মেট্রোতে ঘন ঘন ভিড় এবং বস্তাবন্দী হয়ে চলতে হতে পারে। তাই পরিকল্পনা করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।
- 3 জামারাত/ মিনা ৩ ( قطار المشاعر - محطة منى 3 - الجمرات), বাদশাহ আব্দুল আজিজ। এটি আল মাশাইর মেট্রোর একেবারে প্রথম স্টেশন। এটি মসজিদ আল-হারাম থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে অবস্থিত। আপনি পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে (যদি গাড়িতে যান) বা দুই ঘণ্টা (যদি পায়ে হেঁটে যান) মসজিদ আল-হারামে পৌঁছাতে পারেন।
- 4 মিনা ২ (محطة منى 2)।
- 5 মিনা ১ (১ محطة منى )।
- 6 মুজদালিফাহ ৩ (قطار المشاعر - محطة مزدلفة 3)।
- 7 মুজাদালিফাহ ২ (قطار المشاعر - محطة مزدلفة 2)।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]মক্কায় বাহনসেবা দুটি প্রধান হাইওয়ে দ্বারা পরিবেশিত হয়। আপনি খুব সহজেই গাড়িতে করে পুরো শহরটি দেখে নিতে পারেন। মক্কার সড়ক পরিবহন নেটওয়ার্ক অত্যন্ত সুরক্ষামূলক, সংগঠিত এবং উন্নত। হজের পর রাস্তাগুলো সাধারণত যানজটমুক্ত থাকে।
উবার মক্কায় কাজ করে। আপনি যদি সৌদি রাস্তায় গাড়ি চালাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, বা আপনার নিজের গাড়ি না থাকে, তাহলে আপনি একটি উবার গাড়ি ভাড়া করে প্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি সেরে নিতে পারেন।
পায়ে হেঁটে
[সম্পাদনা]হজ্জের সময় প্রচুর হাঁটাহাটি করার আশা রাখুন। শহরের কেন্দ্রস্থলে অনেক আকর্ষণীয় স্থান হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত। তাই যানজটে পড়ে সময় অপচয় রোধে হেঁটেও অনেক জায়গায় যেতে পারেন।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]ইসলামের পবিত্রতম শহর হিসেবে এখানে অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থান ও বস্তু রয়েছে।
প্রধান আকর্ষণ
[সম্পাদনা]- আল মসজিদ আল হারাম: (পবিত্র মসজিদ) মক্কা ও ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা হল মসজিদে হারাম বা বড় মসজিদ। বিশাল এ মসজিদটি বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ এবং এতে একবারে ২ মিলিয়নের মত লোক একত্রে নামায পড়তে বা অবস্থান করতে পারে। মসজিদটি ক্রমাগত প্রসারিত হয়েছে এবং এখনও বড় সম্প্রসারণ ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই মসজিদটি হজ ও ওমরাহ তীর্থযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু।
- পবিত্র কাবা: সেই বিশাল মসজিদের কেন্দ্রে রয়েছে কাবা, যা মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে হযরত ইব্রাহিম এবং তার পুত্র নবী ইসমাইল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মূলত কাবার দিকেই চেহারা ফিরিয়ে গোটা বিশ্বের মুসলিমদের নামাজ আদায় করতে এবং তা একটি অগ্রাহ্য আদেশ। কাবা কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত চারকোণাবিশিষ্ট একটি উঁচু ঘর। হজযাত্রীরা এর চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করেন। কাবার পূর্ব দিকের প্রাচীরে মুহাম্মদ নিজে যে কালো পাথরটি অক্ষত রেখেছিলেন তা একটি ইসলামি ধ্বংসাবশেষ এবং মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে তা ইসলামের প্রথম নবী আদম ও হাওয়ার সময়কার। তাওয়াফ করার সময় অনেক মুসলিম তীর্থযাত্রী পবিত্র পাথরকে চুম্বন ও স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। তবে, ভিড়ের কারণে এর জন্য সাধারণত অনেক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।
- মাকামে ইব্রাহিম: কাবার পাশে মাকাম-ই-ইব্রাহিম নামে একটি স্ফটিক গম্বুজ রয়েছে, যেখানে একটি শিলা রয়েছে, যাতে ইব্রাহিমের পায়ের ছাপ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। ঐতিহ্য অনুসারে, কাবার উঁচু দেয়াল নির্মাণের সময় ইবরাহীম সেই পাথরের উপর দাঁড়িয়েছিলেন, যা অলৌকিকভাবে উঠেছিল এবং ইব্রাহিমকে নির্মাণ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।
- আল-সাফা ও আল-মারওয়াহ: এটি দুইটি ছোট পাহাড়। এ দুইটি এখন দীর্ঘ গ্যালারিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যার মেঝে মার্বেল দিয়ে সুগঠিত এবং এটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় সুসজ্জিত। ইসলামের ঐতিহ্য বলে যে, ইব্রাহিমের স্ত্রী হাজেরা তার পুত্র ইসমাঈলের জন্য পানির সন্ধানে এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। এটিও বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি প্রথমে সাফা এবং পরে মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। বর্তমানে মুসলিমরা এখানে সাঈ নামে হজের একটি আচার-অনুষ্ঠান পালন করে, যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যে সাতবার হাঁটা হাঁটি করতে হয়। প্রতিবার আনুমানিক ৩০০ মিটার হাঁটার প্রয়োজন এবং সাতবারে মোট ২.১ কিমি হয়।
- হেরা গুহা (গারে হীরা): জাবাল আল নূরে (যা মক্কা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে) অবস্থিত হেরা গুহা একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এ পাহাড়টি স্থানীয়ভাবে জাবাল আল নূর নামে পরিচিত। কারণ মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতা জিবরাঈল সর্বপ্রথম ওহি (বার্তা) মুহাম্মদের কাছে এ পাহাড়ের হেরাগুহায় অবস্থানকালে নিয়ে আসেন; তাই এটিকে জাবালে নুর বা আলোর পাহাড় নামে ডাকা হয়। তীর্থযাত্রীরা প্রায়ই ২৭০ মিটার উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা গুহাটিতে আরোহণ করে সেই স্থানটি দেখার জন্য এবং সেখানে কিছুক্ষণ প্রার্থনাও করা হয়। কারণ বিশ্বাস করা হয় যে, এখানে দোয়া কবুল করা হয়।
- সাওর গুহা ( গারে সাওর ): এটি জাবালে সাওরের একটি গুহা। এটি সেই গুহা যেখানে হিজরতকালে নবী মুহাম্মদ লুকিয়ে ছিলেন, যখন তিনি মক্কা থেকে ইয়াসরিব (বর্তমান মদিনা) চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কারণ মক্কার কুরাইশরা তাকে ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেছিল। ঐতিহ্য অনুসারে, মুহাম্মদ ও তার সঙ্গী গুহায় প্রবেশ করার সময়ে প্রবেশদ্বারটি একটি মাকড়সা দ্বারা বন্ধ দেওয়া হয়েছিল, যা একে ঢেকে রাখার জন্য একটি জাল ফেলেছিল এবং কুরাইশ সদস্যদের ধারণা জন্মল যে, দীর্ঘকাল ধরে কেউ গুহার ভিতরে প্রবেশ করেনি। তখন এভাবেই এটি মুহাম্মাদের জীবন রক্ষা করেছিল। বর্তমানও অনেক তীর্থযাত্রী গুহাটি দেখতে ১,৪০৫ মিটার উঁচু পাহাড়ে আরোহণ করেন।
- জান্নাতুল মুয়াল্লা: এটি সেই কবরস্থান যেখানে নবী মুহাম্মদের সঙ্গী ও আত্মীয়দের সমাধিস্থ করা হয়; যাদের মধ্যে তাঁর প্রথম স্ত্রী, চাচা, দাদা, প্রপিতামহ এবং প্রপিতামহও রয়েছেন।
- আল-হারামাইন জাদুঘর ( متحف الحرم) : এই জাদুঘরে বিভিন্ন যুগের অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে।
- মক্কা গেট: মক্কার হাইওয়েতে একটি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার। এটি সেই এলাকার সীমানা চিহ্নিত করে যেখানে শুধুমাত্র মুসলমানদের প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।
- আল সাক্কাফ প্রাসাদ: ১৯২৭ সালে নির্মিত এই প্রাসাদটি ছিল সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সৌদের সরকারের প্রথম রাজসিংহাসন।
- আল-জাহের প্রাসাদ যাদুঘর: এটি ঐতিহাসিক যাদুঘর, যা মক্কার ইতিহাস এবং বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ প্রদর্শন করে।
হজের স্থান
[সম্পাদনা]- মিনা: মিনা মক্কার একটি এলাকা। এই এলাকায় হাজার হাজার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু রয়েছে, যেগুলি হজের সময় তীর্থযাত্রীদের জন্য অস্থায়ী আবাসন হিসেবে কাজ করে এবং এজন্যে একে তাঁবুর নগরী বলা হয়। শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য জামারাত সেতু এখানে অবস্থিত, যেখানে শয়তানকে পাথর মারার প্রতীকী অনুষ্ঠান করা হয়।
- আরাফাত পাহাড় ( জাবালে রহমা ): আরাফাতের ৭০ মিটার (২৩০ ফুট) উঁচু একটি পাহাড়। এটি হল মক্কার উপকণ্ঠে সেই ঐতিহাসিক পাহাড়, যেখানে নবী মুহাম্মদ দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাঁর জীবনের শেষ দিনে মুসলমানদের বিদায়ের সংবাদ প্রদান করেছিলেন। হজের সময় তীর্থযাত্রীরা সারা দিন এই পাহাড়ের চারপাশে প্রার্থনা করে কাটায়।
করণীয়
[সম্পাদনা]মক্কায় আপনি অনেক কিছু করতে পারেন; যদি সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার পরিকল্পনা করেন।
কলকারখানা
[সম্পাদনা]- 1 পবিত্র কাবার কিসওয়া কারখানা। সৌদি আরবের একমাত্র জায়গা যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে হজের শুরুতে কিসওয়া তৈরি করা হয়।
জাদুঘর
[সম্পাদনা]- 2 আল-জাহের প্রাসাদ যাদুঘর। এই জাদুঘরে ইসলামি নিদর্শনগুলির একটি চিত্তাকর্ষক সংগ্রহ রয়েছে, যা সমস্ত মক্কা এবং এর সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আকর্ষণীয় গল্প বলে।
- 3 দুই পবিত্র মসজিদের স্থাপত্য প্রদর্শনী জাদুঘর। জাদুঘরটির লক্ষ্য হল দুই পবিত্র মসজিদের স্থাপত্য নকশা সম্পর্কে মুসলিম সম্প্রদায়কে অভিহিত করা।
- 4 ক্লক টাওয়ার। যাদুঘরআবরাজ আল-বাইত টাওয়ারে অবস্থিত একটি বিজ্ঞান জাদুঘর।
পার্ক
[সম্পাদনা]কেনাকাটা
[সম্পাদনা]মক্কায় থাকাকালীন অনেক তীর্থযাত্রী পরিবার ও নিজ বন্ধুদের কাছে ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শন এবং নিজের স্মারক হিসেবে অনেক কিছু ক্রয় করেন। জমজমের পানি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি মক্কায় খাওয়া হয় এবং বরকত (ধর্মীয় মহত্ত্ব) হিসাবে বাড়িতে আনা হয়।
মক্কা এবং এর আশেপাশে যে সকল জিনিস কিনতে পারবেন তা হল: জায়নামাজ, টুপি, তাসবিহ ও সুগন্ধি।
আহার
[সম্পাদনা]বিশ্বের সর্বাধিক পরিদর্শন করা শহরগুলির একটি হল মক্কা। আপনি এখানে সারা বিশ্বের খাবারের নমুনা নিতে পারেন!
- 1 আলবাইক আলাজিযিয়াহ। অ্যালবাইক রেস্তোরাঁর শাখা রয়েছে, যেখানকার বাজেট আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হবে এবং সেখানে সুস্বাদু অ্যালবাইক মেনু বিশেষ করে তাদের বিখ্যাত ভাজা চিকেন পাবেন। তাদের শাখা-প্রশাখা সমগ্র মক্কায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। হারামের কাছেও এর শাখা পাওয়া যায়। ২৫-৩০ রিয়াল।
বাজেট
[সম্পাদনা]পবিত্র মসজিদ সংলগ্ন একটি আল-বাইক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আপনি কম দামে ফুলসেট-চিকেনও ট্রাই করতে পারেন, এমনকি কেএফসি থেকেও সস্তা।
মাঝারি
[সম্পাদনা]- 3 ফয়সালাবাদ রেস্তোরাঁ, ☎ +৯৬৬ ৫৫ ২০২ ৭৪৪৪, ইমেইল: faisalabadrestaurant@gmail.com। এটি একটি পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট। এখানে সকল প্রকার পাকিস্তানি খাবার পাওয়া যায়।
- 4 রিলেইস জয় অফ টেস্ট, ☎ +৯৬৬ ৫৩ ০২০ ৯০০০। এটি একটি লেবাননী রেস্টুরেন্ট।
উচ্চ
[সম্পাদনা]- 5 আল কাসর, মক্কা হারামাইন ট্রেন স্টেশন থেকে ১০-১০ মিনিট, ☎ +৯৬৬ ১২৫৭১ ৭৮৮৮, ইমেইল: dining.makkah@raffles.com। এখানে বিভিন্ন ধরণের খাবারের আইটেম রয়েছে: আরব, ভারতীয়, মরোক্কান ও পশ্চিমা।
- 6 আল ওয়াইস, মরুদ্যান, জাবাল ওমর, ইব্রাহিম আল খলিল স্ট্রিট (মসজিদ আল হারামের কাছ), ☎ +৯৬৬ ১২ ৫৫৭ ১২৩৪। এটি বিস্তৃত পরিসরে খাবার পরিবেশন করে। ২৫০ ( দুই জনের জন্য গড় মূল্য)।
- 7 আল রিহাব রেস্তোরাঁ। দুপুর ১টা - রাত ১১টা.। এটি একটি ইসলামি-থিমযুক্ত রেস্তোরাঁ, যেখান থেকে মসজিদ আল-হারামের দুর্দান্ত দৃশ্যাবলী অবলোকন করা যায়।
- 8 আল-তায়েবাত রেস্টুরেন্ট। সকাল ৬ টা - ১০ টা। এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল দার আল তাওহিদের একটি রেস্তোরাঁ। এখান থেকে মসজিদ আল-হারামের একটি দুর্দান্ত দৃশ্যাবলী দেখা যায়।
- 9 গুরকান শেফ স্টেকহাউস, ☎ +৯৬৬ ৫৫ ৯২৮ ৮৬৮৪। এটি তুর্কি স্টেকহাউস চেইনের চারটি শাখার একটি।
পানীয়
[সম্পাদনা]হজের সময় আপনি জমজম জল সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে পারেন, যা ঐশ্বরিক আশীর্বাদপূর্ণ বলে বিশ্বাস করা হয়। যেহেতু এটি সৌদি আরব; তাই এখানে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বিক্রি এবং সেবন কার্যত অস্তিত্বহীন।
- 12 জমজম ক্যাফে সকাল ৯টা থেকে ১টা। সকাল ৯ টা–রাত ১ টা। এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল দার আল তাওহিদের একটি ক্যাফে। আপনি ঠাণ্ডা পানীয়, চা ও কফির সাথে সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারেন।
ঘুমানোর স্থান
[সম্পাদনা]মক্কায় হোটেলের আধিক্য রয়েছে এবং প্রতিটি হোটেল আধুনিক মানের সেবা প্রদান করে। পবিত্র মসজিদের সান্নিধ্যের ওপর নির্ভর করে দাম পরিবর্তিত হতে পারে; মসজিদ থেকে যত কাছাকাছি অবস্থিত হবে তত বেশি ভাড়া গুনতে হতে পারে এবং বিশ্বের সেরা কয়েকটি হোটেল মক্কায় অবস্থিত। এসব সারা বছর সেবা প্রদান করে। আপনার ভ্রমণের তারিখ নিশ্চিত করার সাথে সাথে এসব হোটেলের যেকোনো একটিতে তাড়াতাড়ি বুকিং নিশ্চিত করুন।
- 13 আবরাজ আল বাইত (মক্কা রয়্যাল ক্লক টাওয়ার হোটেল), বড় মসজিদের পাশে। ৬০১ মিটার উঁচু এই বৃহৎ লম্বা ভবনটি মক্কার আধুনিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটি বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম ভবন এবং বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি এর মধ্যে রয়েছে। ভননটির একটি পাঁচতারা হোটেল ১০,০০০ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে একটি বড় মসজিদ, একটি ৫ তলা বড় শপিং মল এবং অসংখ্য খাবারের জায়গা রয়েছে।
- 14 আন্তর্জাতিক দার আল তাওহিদ, মক্কা ইব্রাহিম আল খালিস সেন্টার (মক্কার ঠিক বাইরে), ☎ +৯৬৬-২-৫৪১-১১১১।
- 15 র্যাফেলস মক্কা প্রাসাদ, ☎ +৯৬৬-১২৫৭১-৭৮৮৮, ইমেইল: BookUs.Makkah@Raffles.com।
- 16 হিলটন মক্কা কনভেনশন হোটেল, ☎ +৯৬৬ ১২ ৫২৬ ০০০০। হোটেলটি দেখতে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ এবং মসজিদ আল-হারামের কাছাকাছি।
- 17 পার্ক ইন রেডিসন, মক্কা আজিজিয়াহ , 2516 আল মসজিদ আল হারাম রোড, আল মুরসালাত জেলা, ☎ +৯৬৬ ১২৫৫ ৯৯১০০।
- 18 সুইসোটেল আল মাকাম ,বাদশাহ আব্দুল আজিজ এনডাউমেন্ট, ☎ +৯৬৬ ১২৫৭ ৭৫৮৮৮, ইমেইল: RESERVATIONS.ALMAQAM@SWISSOTEL.COM।
- 19 শেরাটন মক্কা, আল নাসিম চার পয়েন্ট ,তৃতীয় রিং রোড, আল রাজি মসজিদ, আল নাসিম জেলা, ☎ +৯৬৬ ১২ ৫৫০ ৮৯৯৯।
- 20 পুলমান জমজম মক্কা, আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্স, বাদশাহ আবদুল আজিজ এনডাউমেন্ট, ☎ +৯৬৬ ১৫৭১৫৫৫৫, ইমেইল: H6036@accor.com। এটি মসজিদ আল-হারাম সংলগ্ন আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্সে অবস্থিত।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]
প্রয়োজনীয় নাম্বার
|
সাধারণভাবে মক্কা একটি নিরাপদ শহর। তবে বার্ষিক হজ যাত্রার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সৌদি আরব নিবন্ধে পাওয়া বিভিন্ন নিরাপত্তা টিপস আপনার কাজে আসবে। সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য এটি অবশ্যই পড়ুন।
উপচে পড়া ভিড় এবং পদদলিত হওয়া
[সম্পাদনা]হজের সময় মক্কায় উপচে পড়া ভিড় ও পদদলিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিমানে ভ্রমণ সহজ হওয়ার পর থেকে তীর্থযাত্রীরা আগের তুলনায় অনেক সহজেই শহরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন ( আগেকার লোকেরা নৌকা বা অন্য উপায়ে মক্কা যাতায়াত করত) এবং এর ফলস্বরূপ শহরের সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে অপ্রতিরোধ্য হতে ওঠে।
আপনি যদি পরিবারের সদস্যদের সাথে বা বন্ধুর সাথে ভ্রমণ করেন তবে একসাথে থাকুন এবং নিজেদের বাচ্চাদের (যদি আপনার সাথে থাকে ) নিবিড়ভাবে তদারকি করুন, যাতে তারা আপনার কাছাকাছি থাকে এবং ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে না যায়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনুমানিক ২,২৩৬ জন তীর্থযাত্রী পদদলিত হয়েছিল এবং তারা মিনায় নিহত হয়েছিলেন এবং এটি মক্কা শহরের সবচেয়ে খারাপ পদদলিত ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয়। যদিও অসংখ্য সেচ্ছাসেবী ও সরকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকে; তবুও অধিক জনসংখ্যার কারণে এটি ঘটে। পদদলিত হওয়া ঘটনাটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি থেকে অত্যন্ত জোরালো প্রতিক্রিয়া টেনেছিল এবং কেউ কেউ সৌদি সরকারকে অবহেলা করার জন্য দোষারোপ করেছে। বিশেষ করে ইরান সরকার ( ইরানে পদদলিত হওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের সংখ্যা ছিল) এত বড় ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছে। ২০১৬ সালে তারা তাদের নাগরিকদের হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
চরম আবহাওয়া
[সম্পাদনা]মক্কার একটি উষ্ণ মরুভূমির জলবায়ু রয়েছে এবং গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৫০°সি (১২০°ফ.) পর্যন্ত পৌঁছায়।
পুরো মধ্যপ্রাচ্যের মতোই সবসময় আবহাওয়ার অবস্থা পরীক্ষা করুন এবং প্রায়শ জলজ খাবার গ্রহণ করুন। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করলে আপনি খুব সহজেই ক্লান্ত, অলস ও তৃষ্ণার্ত হতে পারেন।
পকেটমার
[সম্পাদনা]অনেক অসাধু লোক ও গোষ্ঠী রয়েছে, যারা প্রায়ই হজ যাত্রা বা ওমরার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে মানুষকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য। আপনি এটি অনুমান করবেন না যে, মক্কা শহর কেবল সৎদেরই আকর্ষণ করে। অন্যান্য স্থানের মত এখানেও সব শ্রেণীর মানুষ আগমন করে।
ভিড়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়, আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদে রাখুন। নিরাপত্তার দিক থেকে ভুল করবেন না এবং কোন অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নেবেন না। আপনি যদি চুরির শিকার হয়ে থাকেন, পুলিশকে কল করুন। সৌদি কর্তৃপক্ষ চুরিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা
[সম্পাদনা]সৌদি কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের জন্য পরিকল্পিত নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেন এবং এটি মাঝে মাঝে কিছু নির্মাণ-সম্পর্কিত দুর্ঘটনা ঘটায়।
২০১৫ সালে গ্র্যান্ড মসজিদে একটি ক্রলার ক্রেন ধসে পড়ে এবং ১১১ তীর্থযাত্রী নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়। কিছু সংস্কার বা নির্মাণ করা হচ্ছে এমন কোন নির্মাণ সাইটের কাছাকাছিও হাঁটবেন না।
মহিলা যাত্রী
[সম্পাদনা]২০১৮ সালে কিছু মহিলা তীর্থযাত্রী হজের সময় যৌন নির্যাতন ও হয়রানির অভিজ্ঞতার বিষয়ে কথা বলেন। যদিও এটি অসম্ভব যে, আপনি গুরুতর হয়রানির সম্মুখীন হবেন। তবে এটি সর্বদা মাথায় রাখবেন এবং কেউ আপনাকে হয়রানি করলে ভদ্র হওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন না; কোনো নারীর কাছ থেকে এমন পচা আচরণ আশা করা যায় না। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ অথবা সেচ্ছাসেবীদের জানাবেন।
হজ সময়সাপেক্ষ ও আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর একটি বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। হজের সময় অনেক গর্ভবতী হজযাত্রীর গর্ভপাত হয়। আপনি যদি শীঘ্রই বাচ্চা জন্মদানের আশা করেন বা আপনি যদি কোনো অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাহলে আপনার ভ্রমণ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করা হচ্ছে।
সুস্থ থাকুন
[সম্পাদনা]মক্কায় বেশ কয়েকটি আধুনিক মানসম্মত হাসপাতাল রয়েছে এবং হাজিদের সকল হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
- 4 কিং ফয়সাল হাসপাতাল (مستشفى الملك فيصل) ☏ +৯৬৬ ১২ ৫২৬ ৩২০০
- আজইয়াদ হাসপাতাল ( مستشفى أجياد)
- বাদশাহ আব্দুল আজিজ হাসপাতাল ( مستشفى الملك عبدالعزيز بحي الزاهر)
- আল নূর বিষেশায়িত হাসপাতালl ( مستشفى النور التخصصي)
- হিরা হাসপাতাল ( مستشفى حراء)
- মা ও শিশু হাসপাতাল ( مستشفى الولادة والأطفال)
- বাদশাহ আব্দুল্লাহ মেডিকেল সিটি ( مدينة الملك عبدالله الطبية)।
শিষ্টাচার
[সম্পাদনা]মক্কা ইসলামের পবিত্রতম শহর হিসাবে যথাযথ ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা এবং মনোভাব ক্রমানুসারে হওয়া উচিত। যখন আপনি এখানে হজ অথবা ওমরাহ করার জন্য অবস্থান করবেন, তখন নিম্নলিখিত কাজ থেকে বিরত থাকতে ভুলবেন না: ধূমপান, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা, শিকার করা, নিজের চুল কামানো এবং নিজের নখ কাটা ।
স্থানীয় শিষ্টাচার
[সম্পাদনা]সৌদি আরব নিবন্ধে উল্লেখিত শিষ্টাচারমূলক বিভিন্ন টিপস আপানকে অপরিসীম সাহায্য করবে। মক্কায় প্রবেশের আগে নিজেকে অবশ্যই সৌদি শিষ্টাচারের সাথে পরিচিত করুন।
শহরে সৌদি সরকারের সমালোচনামূলক কথা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। কারো মধ্যে এই বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল এবং এর ফলে শাস্তির মুখোমুখিও হতে পারেন।
সাধারণ শিষ্টাচার
[সম্পাদনা]সেখানে আপনি সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে দেখা করতে পারবেন। নতুন অভিজ্ঞতার জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রাখুন এবং কোন বিষয়ে কারো সাথে যোগাযোগ করতে ভয় পাবেন না। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে লোকেদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং প্রমাণ করুন, আপনি বন্ধুত্ব করতে উপযুক্ত। সৌদিরা খুবই অতিথিপরায়ণ হয়ে থাকেন।
আলোকচিত্রগ্রহণ
[সম্পাদনা]মূলত মসজিদ আল-হারামের ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ। তবে এই নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে, মসজিদের অভ্যন্তরেই মানুষদেরকে নিজেদের স্মার্ট ফোন নিয়ে খুশিতে ছবি ক্লিক করতে দেখা খুবই সাধারণ ঘটনা। যাহোক, নিজস্ব মোবাইল ছাড়া আপনি যদি সাথে করে অভিনব ক্যামেরা নিয়ে আসেন তাহলে কর্মীদের মনে সন্দেহ জাগতে পারে।
মসজিদ আল-হারামের ভিতরে লোকেদের ছবি তোলা উচিত কিনা, তা নিয়ে কিছু মতানৈক্য রয়েছে। যদিও কেউ কেউ এটিকে বড় কিছু হিসাবে দেখেন না এবং নিজেদের আনন্দঘন মুহুর্তের ছবিগুলি অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করাকে খারাপ কিছু মনে করেন না। অপর পক্ষে অনেকে, মক্কা সম্মানিত জায়গা ও ইবাদতখানা হওয়ার কারণে এখানে ( বিশেষ করে কাবার সামনে) ছবি তোলাকে অবিশ্বাস্যভাবে অসম্মানজনক বলে মনে করেন।
আপনি যদি নিজের জন্য ছবি তোলার প্রয়োজন বোধ করেন, তাহলে কখনো 'পর্যটকসুলক' আচরণ করবেন না ( যেমন; আপনি চিরকালের জন্য প্রথমবারের মত জায়গাটি দেখছেন ) এবং নিজেকে এমনভাবে প্রকাশ করবেন না, যাতে আপনাকে বিরক্ত মনে করা হয় বা আপনি অন্যের জন্য বিরক্তিকর হয়ে যান। আপনার আশেপাশের লোকেদের প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখবেন। কারণ সম্ভাবনা আছে যে, অন্যান্য লোকেরা আপনার চেয়ে আপনার কার্যক্রমকে অধিক গুরুত্ব সহকারে নেয়!
সংযোগ
[সম্পাদনা]সৌদি আরবে চারটি প্রধান মোবাইল অপারেটর সেবা প্রদান করে। বর্তমান সৌদিতে আল জাওয়াল, এর আমিরাতি প্রতিদ্বন্দ্বী মোবিলি, কুয়েতি জাইন (ভোডাফোন নেটওয়ার্ক) এবং নবাগত জাউই ভালো সেবা প্রদান করে ( জনবসতিপূর্ণ এলাকায়)। এসব অপারেটর উচ্চ মূল্যের ক্ষেত্রে একে অপরের তীব্র প্রতিযোগী।
আপনি প্রধান বিমানবন্দর অথবা কাছাকাছি স্থানীয় দোকানে একটি প্রিপেইড সিম পেতে সক্ষম হবেন৷
পরবর্তী ভ্রমণ
[সম্পাদনা]আপনি যদি মক্কা প্রদেশে আরো কিছু সময় কাটানোর পরিকল্পনা করেন, তাহলে নিম্নলিখিত শহরগুলিতে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
- মদিনা— ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর। এটি মক্কার বিপরীত দিকে অবস্থিত। মদিনা মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত।
- তায়েফ—সৌদি আরবের অনানুষ্ঠানিক গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। এখানে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ।
- জেদ্দা— সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যা তার পুরানো শহরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রবাল ঘরের জন্য পরিচিত।
{{#assessment:শহর|guide}}