![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/0c/Santiniketan-Griha-Southern-View.jpg/220px-Santiniketan-Griha-Southern-View.jpg)
শান্তিনিকেতন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় শহর। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে এটি গুরুকুল শিক্ষাপদ্ধতি সহ একটি বিশ্ববিদ্যালয় শহরে পরিণত হয়েছে। শান্তিনিকেতন বাঙালি নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখন থেকে বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যাক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছে, যার মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী (একদা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন), সত্যজিৎ রায় (অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রকার) ও অমর্ত্য সেন (নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শান্তিনিকেতন তার বাউল সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। বছরে প্রায় ১২ লক্ষ লোক শান্তিনিকেতনে আসেন। সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
অনুধাবন
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/67/Clock_tower_of_the_old_building_complex_at_Santiniketan.jpg/220px-Clock_tower_of_the_old_building_complex_at_Santiniketan.jpg)
১৮৬৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে দুই ছাতিম গাছ সহ ২০ একর (৮১,০০০ বর্গমিটার) জমি স্থায়ী ইজারায় গ্রহণ করেছিলেন। একদা এই এলাকায় কুখ্যাত ডাকাতদের ডেরা ছিল। ডাকাতদের নেতা দেবেন্দ্রনাথের কাছে আত্মসমর্পণ করার পর ডাকাতেরা সেই এলাকার উন্নয়নের তাঁকে সাহায্য করেছিল। দেবেন্দ্রনাথ সেখানে একটি অতিথিশালা তৈরি করেছিলেন এবং নাম রেখেছিলেন "শান্তিনিকেতন"। ক্রমে সমগ্র এলাকা এই নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল।
১৯০১ সালে দেবেন্দ্রনাথের পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে "ব্রহ্মচর্যাশ্রম" নামক একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের মস্তিষ্কপ্রসূত এই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এক অনন্য শিক্ষাকেন্দ্র, কারণ এখানে ক্লাসরুমের পরিবর্তে গাছতলায় ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয়। ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পিতা ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পীরা শান্তিনিকেতনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যার মধ্যে নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য। পুরো শহর জুড়ে তাঁর বিভিন্ন শিল্পকর্ম পাওয়া যায়।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]শান্তিনিকেতনের জলবায়ু সামান্য উষ্ণ, এবং গ্রীষ্মকালে এর তাপমাত্রা ৩৫–৪২ °সে (সর্বোচ্চ) ও শীতকালে ১০·১৫ °সে (সর্বনিম্ন)। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস ধরে গ্রীষ্মকাল অনুভূত হয়। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস ধরে শীতকাল অনুভূত হয়। জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.২ °সে। বছরে ১৪৮০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/09/Santiniketan_Prayer_Hall.jpg/220px-Santiniketan_Prayer_Hall.jpg)
আকাশপথে
[সম্পাদনা]নিকটতম বিমানবন্দর হচ্ছে দুর্গাপুরের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর (RDP আইএটিএ), তবে খুব কম শহর থেকে এই বিমানবন্দরে বিমান আসে। শান্তিনিকেতনে সহজে আসার জন্য আপনি কলকাতা বিমানবন্দর (CCU আইএটিএ) ব্যবহার করুন।
রেলপথে
[সম্পাদনা]রেলওয়ে স্টেশন ভেদে শান্তিনিকেতন কলকাতা থেকে দুই বা তিন ঘণ্টা দূরে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ও শতাব্দী এক্সপ্রেস হচ্ছে শান্তিনিকেতন যাওয়ার দ্রুততম উপায় এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন হচ্ছে ধীরতম উপায়।
শান্তিনিকেতনে দুটি রেলওয়ে স্টেশন আছে, 1 বোলপুর শান্তিনিকেতন (BHP) ও 2 প্রান্তিক। বেশিরভাগ এক্সপ্রেস ট্রেন বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশনে থামে।
একাধিক মালপত্র নিয়ে ভ্রমণ করলে এমনকি সংরক্ষিত রেল কামরায় আপনার জায়গা পেতে অসুবিধা হবে, এবং এক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া করে শান্তিনিকেতন যাওয়ার ভাল বিকল্প।
বোলপুর শান্তিনিকেতনে থামে এমন এক্সপ্রেস ট্রেন:
- হাওড়া থেকে: কবিগুরু এক্সপ্রেস, গণদেবতা এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (দ্রুততম), নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেস, মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ও সরাইঘাট এক্সপ্রেস।
- শিয়ালদহ থেকে: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও দার্জিলিং মেল।
- নিউ জলপাইগুড়ি থেকে: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, দার্জিলিং মেল, হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ও হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস।
বাসে
[সম্পাদনা]শান্তিনিকেতন পশ্চিমবঙ্গের সকল স্থান থেকে বাস মাধ্যমে ভালভাবে সংযুক্ত। কলকাতা থেকে বাসে যাওয়ার সময়, তাহলে আপনাকে কলকাতা–আসানসোল বা কলকাতা–সিউড়ি রুটের বাসে যেতে হবে। আসানসোল রুটের বাসের ক্ষেত্রে আপনাকে পানাগড়ের কাছাকাছি যেতে হবে এবং সিউড়ি রুটের বাসের ক্ষেত্রে আপনাকে ইলমবাজারের কাছে যেতে হবে এবং উভয় ক্ষেত্রে আপনাকে শান্তিনিকেতনের জন্য আরেকটি বাস ধরতে হবে।
- 3 বোলপুর বাস স্ট্যান্ড।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]গাড়িতে শান্তিনিকেতন কলকাতা থেকে ২১২ কিমি। ভাল গাড়িচালক প্রায় ৩ ঘণ্টার মধ্যে এই দূরত্ব অতিক্রম করবেন।
শান্তিনিকেতন একটি চমৎকার ৪-লেনের এক্সপ্রেসওয়ে দ্বারা কলকাতার সাথে সংযুক্ত। কলকাতা থেকে আপনি ডানকুনি গিয়ে সেখানে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে (এনএইচ ১৯) ধরুন। এটি শক্তিগড়, বর্ধমান ও পানাগড়কে বাইপাস করে। পানাগড়ে (দার্জিলিং মোড়) পৌঁছে ডানদিকে বাঁক নিন। অজয় নদী পার করার পর ডানদিকে ইলামবাজার হয়ে বোলপুরের দিকে গাড়ি চালিয়ে যান। শান্তিনিকেতন–শ্রীনিকেতন মোড়ে (সুরুল মোড় নামেও পরিচিত) আপনি বাঁদিকে বাঁক নিন। এছাড়া আপনি এনএইচ ১১৪ ধরে তালিত, গুসকরা, ভেদিয়া ও সুরুল মোড় হয়ে শান্তিনিকেতন যেতে পারেন। এর জন্য আপনি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমান পেরিয়ে যাওয়ার পর নবাবহাট মোড়ে সোজা রাস্তা ধরুন।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]আপনি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মানচিত্র দেখতে পারেন।
রিকশা করে
[সম্পাদনা]বৈদ্যুতিক রিকশা, যা স্থানীয়ভাবে "টোটো" নামে পরিচিত, শান্তিনিকেতনের পরিবহনের সবচেয়ে সুবিধাজনক ও সস্তা মাধ্যম। পুরনো কালের সাইকেল রিকশা এখনও পাওয়া যায় ও ভাড়া করা যায়, কিন্তু এর খরচ বেশি।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]ভাড়া গাড়ি ও ট্যাক্সি সর্বদা পাওয়া যায় না।
সাইকেল করে
[সম্পাদনা]বেশিক্ষণ থাকতে গেলে আপনাকে স্থানীয় সাইকেল দোকান থেকে একটি সাইকেল কিনতে পারেন। একটি নতুন সাইকেলের দাম ₹৩,২০০–৩,৬০০।
দেখুন
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/7e/Kala_Bhavana_%28cropped%29.jpg/220px-Kala_Bhavana_%28cropped%29.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/9/96/At_Prakriti_Bhavan%2C_a_museum_of_natural_sculptures_-_9416740762.jpg/220px-At_Prakriti_Bhavan%2C_a_museum_of_natural_sculptures_-_9416740762.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/71/Santiniketan-Griha-Northern-View.jpg/220px-Santiniketan-Griha-Northern-View.jpg)
শান্তিনিকেতনে ঠাকুর পরিবার সম্পর্কিত একাধিক ভবন বর্তমান, যেমন শান্তিনিকেতন গৃহ, নতুন বাড়ি, উপাসনা গৃহ ইত্যাদি। বিদ্যালয়ের পড়ানো ও প্রধান উৎসব আম্রকুঞ্জতে সংঘটিত হয়। কিছু দূরে পূর্বদিকে একটি টিলা ও একটি বটগাছ আছে, যা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পছন্দের ছিল। পড়াশুনোর সময় পর্যটকদের শিক্ষাকেন্দ্রে এদিকওদিক ঘোরাফেরা করার অনুমতি নেই, কারণ এর ফলে পড়াশুনোতে ব্যাঘাত ঘটবে।
- 1 কলা ভবন। ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শিল্পকলার কেন্দ্র। সেখানে একটি আর্ট গ্যালারি রয়েছে, যার নামে নন্দন। সেখানে ভাস্কর্য, ফ্রেস্কো এবং ম্যুরাল প্রদর্শন করা হয়েছে।
- 2 কোপাই নদী। শান্তিনিকেতনের উত্তর ও পশ্চিম দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি চিত্তাকর্ষক নদী। এটি লাভপুরে বক্রেশ্বর নদীতে মিলিত হয়। সেখানে একাধিক পর্যটক জড়ো হয়ে নদীটির ছবি ও ভিডিও তোলেন। নদীপারে একাধিক রিসর্ট বর্তমান।
- 3 বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (ডিয়ার পার্ক)। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি শান্তিনিকেতনের নিকটে অবস্থিত। অভয়ারণ্যটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হরিণ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কিনুন
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/64/Saturday_Haat.jpg/220px-Saturday_Haat.jpg)
পৌষ মেলার সময় হচ্ছে কেনাকাটার সবচেয়ে ভাল সময়। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সম্পর্কিত সূচিকর্ম "কাঁথা স্টিচ" নামে পরিচিত। অ্যান্ড্রুজ পল্লীর "সুধা কারু শিল্প", কোপাই নদীর পারে "আমার কুটির" ও সোনাঝুরির "বসুন্ধরা"-তে শাড়ি ও দুপাট্টার আকারে এই সূচিকর্ম পাওয়া যায়। এছাড়া ডোকরা (আউশগ্রাম থেকে কাঁসার দ্রব্য), চামড়ার ব্যাগ, বাঁশের খেলা ও স্থানীয় তাঁতের পোশাক শান্তিনিকেতনের হস্তশিল্পের কিছু নিদর্শন।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]- 1 বোলপুর লজ, ভুবনডাঙ্গা, ☎ +৯১ ৩৪৬৩ ২৫২৬৬২, +৯১ ৩৪৬৩ ২৫২৭৩৭।
- 2 কৃষ্ণচূড়া হোমস্টে, পূর্বপল্লী, ☎ +৯১ ৯৭৪৮৪৪৫৫৪৪।
- 3 মহর্ষি নিবাস, ☎ +৯১ ৩৪৬৩-২০২৮২১।
- 4 হোটেল সাথী, ভুবনডাঙ্গা।
- 5 হোটেল বসুন্ধরা, বাগানপাড়া, সিমন্তপল্লী, ☎ +৯১-৯৪৩৪১৩২৫৪৯, ইমেইল: info@hotelbasundhara.in।
- 6 ক্যামেলিয়া হোটেল, প্রান্তিক, ☎ +৯১ ৩৪৬৩ ২৬২০৪৩, +৯১ ৩৩ ২৩৩৪ ৪০৬৯, +৯১ ৩৪৬৩ ২৩২১ ৯৬৮৮, +৯১ ৯০০৭০৩০১৯৯।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]