কটকা সমুদ্র সৈকত সুন্দরবনের দক্ষিণ পূর্বকোনে খুলনা ও বাগেরহাটে অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]মংলাবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কি.মি. দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবনের পূর্ব অভয়ান্যে গুলোর মধ্যে প্রধান ও জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।
কটকা যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে সুন্দরবন অঞ্চলে (খুলনা, বাগেরহাটের মংলা) যেতে হবে। কটকায় বেড়াতে যাবার প্রধান মাধ্যম হল লঞ্চ। খুলনা থেকে রুপসা বা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে লঞ্চ পাবেন। এছাড়া বাগেরহাটের মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকে পাবেন সুন্দরবনে যাওয়ার নৌযান পাওয়া যায়। পর্যটকদের নিয়ে এই লঞ্চ নোঙ্গর করা হয় কটকা খালে। খালের পশ্চিম পাড়ের জেটি পেরিয়ে উপরে উঠলেই বন কার্যালয়। এখান থেকে খানিকটা পশ্চিমে এগুলেই ইট বাঁধানো সংক্ষিপ্ত একটি পথের দেখা মিলবে। এর পরে আরেকটু সামনে গেলে সমুদ্র সৈকত। কটকা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের ক্ষেত্রে টেলিটক মোবাইল অপারেটর এর সিম কার্ড নিতে ভুলবেন না, তাহলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। কারণ ওখানে টেলিটকের একটি টাওয়ার ছাড়া অন্য কারো মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার নেই
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]- সমুদ্র সৈকত - এ সৈকত বুনো সুন্দরী। প্রায় তিন কিলোমিটার ঘন সুন্দরী, গেওয়া, গরান, এবং কেওড়ার বন পেরিয়ে সৈকতে যেতে হয়। জামতলা সমুদ্র সৈকতের পথে শুধু ম্যানগ্রোভ বন নয়, বেশ খানিকটা ফার্নের ঝোপও পেরুতে হয়। পথে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও আছে। সৈকতটির আবার দুইটি ভাগ আছে। একটাতে ঝোপঝাড় বেশি, অন্যটা একটু বেশি খোলামেলা। মাটির স্তুপ করা পলি। ধুয়ে যাওয়া মড়া গাছের শেকড়, সব মিলিয়ে এক অপুর্ব সৌন্দর্য আপনি এই সৈকতে দেখতে পাবেন।
- কটকা অভয়ারণ্য - এখানে প্রায়ই দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এ ছাড়া মনোরম চিত্রা হরিণের দল, বিভিন্ন জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি এবং বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপস্থিতি রয়েছে।
কটকার জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকর দেখা যেতে পারে। আবার শীতের সময় রোদ পোহানো লোনা জলের কুমির দেলহা যাবে। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্ব দিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। ৪০ ফুট উচ্চ টাওয়ার থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।
সতর্কতা
[সম্পাদনা]জামতলা বা কটকা সমুদ্র সৈকত হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক সমুদ্র সৈকত। কটকা সৈকতটি সোজা পূর্বদিকে কচিখালিতে গিয়ে মিশেছে। এই সৈকতে ঢেউয়ের আকার অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং অজ্ঞাত চোরাবালি জন্য পানিতে নামা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সৈকতের পানিতে গোসল করতে যাবেন না।
কোথায় থাকবেন
[সম্পাদনা]কটকাতে বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউস আছে। রেস্ট হাউসে লঞ্চ থেকে ওঠার জন্য এখানে কাঠের জেটি আছে। এ জেটি বেয়ে কিছু দুর হাটলেই রেষ্ট হাউস।
পর্যটন জাহাজ বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা।
এছাড়া সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও দল নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। থাকার জন্যে মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে।