চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলায় অবস্থিত একটি অভয়ারণ্য। ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে ঢালে চিরসবুজ এ অভয়াশ্রমে ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে উপভোগ্য হবে নিঃসন্দেহে।
জানুন
[সম্পাদনা]১৯৮৬ সালে লোহাগড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া এলাকার সাতটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ১৯,১৭৭ একর জায়গা নিয়ে ঘোষণা করা হয় চুনতি সংরক্ষিত এলাকা। ২০০৩ সালে চুনতি অভয়ারণ্যে বন বিভাগের দুটি রেঞ্জ কার্যালয় স্থাপন করা হয়। তন্মধ্যে, একটি চুনতি রেঞ্জ। এ রেঞ্জের অধীনে বনবিভাগের তিনটি বিট কার্যালয় আছে।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলায় অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই এ বনাঞ্চলের অবস্থান।
কক্সবাজারগামী বাসে চড়ে নামতে হবে লোহাগড়া বাজার বাস স্টেশনে। বাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে চুনতি যেতে হবে থ্রি হুইলারে। ঢাকা-কক্সবাজারের পথে গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, হানিফ, টিআর ইত্যাদি পরিবহনের তাপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাস চলাচল করে। ভাড়া ১১৫০ টাকা ১৬৫০ টাকা। এ ছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৬০০-৭৫০ টাকা।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন থেকেও কক্সবাজারের বাসে চড়ে লোহাগড়া নামা যাবে। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]প্রায় ৪৭৭ প্রজাতির বারো লাখেরও অধিক গাছ রয়েছে। তন্মধ্যে, ১৫ প্রজাতির গাছ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। এ বনে রয়েছে বেশ কিছু শতবর্ষী গর্জন গাছ। এছাড়াও, শাল, সেগুন, আকাশমণি, গর্জন, বট, হারগোজা, চাঁপালিশ, হরিতকি, বহেরা, বাঁশ, আসাম লতা, ছন প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়।
বন্য হাতিসহ নানা প্রাণীর নিরাপদ আবাস্থল এটি। সাধারণত লালমুখো বানর, মুখপোড়া হনুমান, খেঁকশিয়াল, সজারু, মায়াহরিণ, বন্য শুকর, শিয়াল, নানা রকম গিরিগিটির দেখা মেলে। এছাড়াও, বনের সাপের মধ্যে কালান্তর, দাঁড়াশ, গোখরা, অজগর, লাউডগা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নানান জাতের পাখিরও অভয়াশ্রম এ বনাঞ্চল। বনমোরগ, লাল মৌটুসি, নীলকণ্ঠী, পাহাড়ি ময়না, মথুরা, ঘুঘু, ফিঙে, কাঠঠোকরা, ধনেশ, টিয়া, বুলবুলি অন্যতম।
বেশকিছু নির্দিষ্ট ভ্রমণস্থান আছে চুনতি অভয়ারণ্যে। এগুলোতে পর্যটকেরা খুব সহজেই বেড়িয়ে আসতে পারেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া থেকে শুরু এ পায়ে হাঁটা পথটির। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ ট্রেইলটির নাম জাঙ্গালিয়া ফুট ট্রেইল। পথেই দেখা মিলবে বেশ পুরনো গর্জন গাছ, বাঁশ ঝাড়সহ নানান জাতের গাছপালা। এ পথে রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণকেন্দ্র এছাড়াও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। জঙ্গলটি বেশ সাজানো ছবির মতো দেখতে।
দোতলা একটি প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এ অভয়ারণ্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। বন্যপ্রাণী সম্পর্কে নানান তথ্য আর ছবি মিলবে।
কোথায় থাকবেন
[সম্পাদনা]ছাত্র, গবেষক ও পর্যটকদের জন্য চুনতি বিট কার্যালয়ে রয়েছে ছাত্রদের যৌথ শয়নালয়। এছাড়া, বনবিভাগ ও জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারও আছে। তবে, সেখানে অবস্থান করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
লোহাগড়া বাজারে রাত যাপনের জন্য সাধারণমানের হোটেল আছে। ভাড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। বিদেশীদের জন্য ৩ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা। ভ্রমণের জন্য ইকো গাইডের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। ভ্রমণকালীন নীরবতা বজায় রাখতে হয়। বনে ধূমপান করা যাবে না। প্লাস্টিকজাতীয় কোন প্যাকেট, বোতল জঙ্গলে ফেলা যাবে না।