দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ। দুবলার চরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই টেলিটক মোবাইল অপারেটর এর সংযোগ বা সিম কার্ড নিতে ভুলবেন না, কারণ দুবলার চরে টেলিটক(আমাদের ফোন) ব্যাতীত আর কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
জানুন
[সম্পাদনা]আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত।
হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর।
দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। মেহেরআলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাফরাখালী ও শ্যালারচর ইত্যাদি এলাকায় জেলে পল্লী স্থাপিত হয়। এই চার মাস তারা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারী বাজারে মজুদ ও বিক্রয় করা হয়। সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের সদর দপ্তর বাগেরহাট থেকে মাছ সংগ্রহের পূর্বানুমতিসাপেক্ষে বহরদার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করে থাকেন।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]এটির অবস্থান মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দক্ষিণে, সমুদ্রের কোল ঘেঁষে এবং কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। দুবলার চর সুন্দরবনের ৪৫ এবং ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত।
খুলনা শহর কিংবা বাগেরহাট জেলার মোংলা বন্দরে এসে সেখান থেকে আপনাকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া করে যেতে হবে দুবলার চরে।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]শুটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরনের জন্য দুবলার চরের খ্যাতি রয়েছে। সেখানে মাছের শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরন প্রত্যক্ষ করুন, মাছ ধরা দেখুন। দুবলার চরে হাঁটলে আপনি নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা পেতে পারেন। এছাড়া চরের চারপাশে পানি থাকায় এখানে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদের দেখা পাবেন।
প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পূণ্যস্নানের আয়োজন হয়। এ উপলক্ষে মেলা হয়। তিনদিনব্যাপী এ মেলায় অনেক বিদেশি পর্যটকেরও সমাগম হয়।
কোথায় থাকবেন
[সম্পাদনা]পর্যটন জাহাজ বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা, কচিখালীতে প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা, কটকাতে প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা খরচ পড়বে।
সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে।
মংলায় পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে।
সতর্কতা
[সম্পাদনা]দুবলার চরের জেলে পল্লীতে বনদস্যুদের উৎপাত ছিল যা বর্তমানে অনেক কমে এসেছে যমুনা টিভির সাংবাদিক মহসিন উল হাকিম ও র্যাবের যৌথ উদ্যোগ এ, খাবার পানির অভাব, স্বাস্থ্য সেবা সংকট, বাঘ ও কুমিরের আক্রমণ, নিম্ন মজুরি ইত্যাদি প্রায় প্রতি মৌসুমের নৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়া বড়সড় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাসে বিপর্যস্থ হয় দুবলার চরের জেলে পল্লী। বনদস্যুদের উৎপাত ঠেকাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ ও বন বিভাগের প্রহরীরা থাকলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে।