ভ্রমণ বিষয় > নিরাপদ থাকুন > যুদ্ধক্ষেত্রে নিরাপত্তা
সতর্কীকরণ: এমন অঞ্চলে যাওয়ার আগে ঝুঁকি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং কীভাবে এটি মোকাবেলা করা যায় তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। অধিকাংশ ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য এই এলাকাগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। অন্য ভ্রমণকারীরাও (যারা প্রয়োজনে ভ্রমণ করে) এই অঞ্চলগুলি এড়ানোর কথা বিবেচনা করা উচিত।
এই নিবন্ধটি তাদের জন্য, যারা একান্ত প্রয়োজনের তাগিদে সেখানে যেতে বাধ্য অথবা যেখানে হঠাৎ করে সংঘাত শুরু হওয়ায় তারা সেই জায়গায় আটকা পড়ে। | |
(সর্বশেষ হালনাগাদ: মার্চ ২০২৪) |
যুদ্ধ অঞ্চল বা প্রাক্তন যুদ্ধ অঞ্চল–যাকে শত্রুতাপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিবেশও বলা হয়–অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট মিশনের জন্য প্রেরিত পেশাদার বা যারা সেখানকার স্থানীয় এবং কোন বিশেষ কারণে সেখান থেকে সরে যেতে পারছে না, তারা ব্যতীত অন্য কারো এমন যুদ্ধ অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অস্বাভাবিক কার্যক্রম। এসব এলাকায় ভ্রমণরত নাগরিকদের সহায়তা প্রদান করা কূটনৈতিক মিশনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
কিছু মানুষকে নিজেদের কাজের অংশ হিসেবে এসব এলাকায় যেতে হয়; এদের মধ্যে রয়েছেন সেনাসদস্য, সাংবাদিক, কূটনীতিক, সামরিক/ নিরাপত্তা ঠিকাদার। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিওতে কর্মরত লোকজনকে যুদ্ধাঞ্চলে যথাসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ততা কমিয়ে আনা, শরণার্থী সমস্যার সমাধান করা অথবা যুদ্ধের পর পুনর্গঠনের জন্য এসব অঞ্চলে কাজ করতে হয়। এশ্রেণীর লোকেরা সাধারণত বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন এবং সংগঠন থেকে তাদের ব্যাপক সহায়তা প্রদান করা হয়; যুদ্ধাঞ্চলে তাদের নিরাপত্তায় থাকে পেশাদার নিরাপত্তারক্ষী দল, আবাসন হিসেবে শক্তিশালী সুরক্ষিত ভবন, বর্মযুক্ত আধুনিক যানবাহন এবং বাইরে যাতায়াতের সময় তাদের সাথে মোতায়েন থাকে সশস্ত্র প্রহরী। এছাড়াও তারা কূটনৈতিক সুরক্ষা, সাংবাদিক পরিচয়পত্র, রেডক্রসের প্রতীক, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের জন্য বরাদ্দ নীল হেলমেট বা এ জাতীয় কোন প্রতীক বহন করার মাধ্যমেও আংশিকভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
পর্যটনের উদ্দেশ্যে বেসামরিক ও অসুরক্ষিত লোকের এমন এলাকায় যাওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ এর জন্যে আপনার প্রশিক্ষণ নাও থাকতে পারে। উপরন্তু পেশাদার বাহিনী বা কর্মীদের মতো সুরক্ষা বা সমর্থন তো অবশ্যই থাকবে না। আপনার দেশ যদি সেই অঞ্চলে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে থাকে অথবা সংঘর্ষের কোনো পক্ষকে সমর্থন করে, তবে আপনার দেশ পর্যটকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিবে না; কিন্তু অন্য পক্ষ ঠিকই আপনাকে শত্রু মনে করতে পারে। এছাড়া কোনো শত্রুভাবাপন্ন উদ্দেশ্য থাকা ছাড়াই একজন পর্যটকও উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে; যেমন: আপনাকে একজন গুপ্তচর হিসেবে ভুল বোঝা হতে পারে এবং এর ফলে একজন পর্যটকও শত্রুভাবাপন্ন প্রতিক্রিয়ার তেমনই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে যেমন একটি সামরিক বাহিনী হতে পারে। পর্যটকেরা মূলত একটি সহজ লক্ষ্য হয়, যাদের পেশাদারদের তুলনায় আক্রমণ করা সহজ হয়। কিছু ক্ষেত্রে কোনো পর্যটক নিজের দেশ, ধর্ম বা জাতিগত গোষ্ঠীর কারণে বিশেষভাবে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
পূর্বে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ ফিলিপাইনের মত কিছু অঞ্চলে, পর্যটকরা অপহরণের প্রধান লক্ষ্য ছিল। অপহরণ এড়াতে ( কার্যকরভাবে ) ভর্তুকি দেওয়ার জন্য অপহৃত নাগরিকদের মুক্তিপণ না দেওয়ার নীতি অনেক জাতীয় সরকারের রয়েছে। এমনকি আপনার সরকার, নিয়োগকর্তা বা পরিবার যদি মুক্তিপণ দিতে ইচ্ছুকও হয়; তবুও কিছু অপহরণকারী মুক্তিপণ গ্রহণ করার বিপরীতে অপহৃত ব্যক্তির শিরশ্ছেদের একটি ভিডিও প্রচার করা অধিক পছন্দ করবে, যা তাদের সাংগঠনিক প্রচারকার্যে অনেক সাহায্য করতে পারে।
নিরাপত্তা পরামর্শ
[সম্পাদনা]বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র সাধারণত, যে কোনো কারণে যুদ্ধ অঞ্চল পরিদর্শনের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পরামর্শ দেয় এবং শুধুমাত্র কূটনীতিক ও অন্যান্য সরকারি প্রতিনিধি দলকে তখনই সেখানে পাঠানো হয়, যখন তারা একটি নিরাপত্তা দলের সঙ্গে থাকে বা একটি সুরক্ষিত এলাকায় অবস্থান করে। এছাড়াও অন্যান্য সংস্থা; যেমন: এনজিও ও মানবিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে যুদ্ধাঞ্চলে কাজ করার সময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা হয়।
তথ্য ও ভ্রমণ পরামর্শের উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স- স্মারট্রাভেলার (Smartraveller) দেশ ও সংঘাত বিবেচনা করে ভ্রমণবিষয়ক পরামর্শ, ভ্রমণ সম্পর্কে নির্দেশনা ও নিরাপত্তা তথ্য প্রদান করে।
- কানাডীয় ফেডারেল সরকারের ভ্রমণ এবং পর্যটন ওয়েবসাইটে বিদেশ ভ্রমণের জন্য ভ্রমণ পরামর্শ এবং নির্দেশিকা রয়েছে।
- ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ অফিসও ভ্রমণ পরামর্শ প্রদান করে।
- আন্তর্জাতিক এনজিও নিরাপত্তা সংস্থা (ngosafety ) এনজিওগুলির জন্য নিরাপদ পরিস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য তথ্য ও সহায়তা প্রদান করে।
- মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভ্রমণ পরামর্শ, সতর্কতা ও বিভিন্ন দেশের তথ্য প্রদান করে।
উইকিপিডিয়াতে চলমান সংঘাতসমূহের একটি ছোট তালিকাও রয়েছে। যদিও এটিকে সর্বশেষ ও সম্পূর্ণ সঠিক বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। সেটিও বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।
পাসপোর্ট
[সম্পাদনা]আপনি যদি দ্বৈত নাগরিক হন, তবে কিছু দেশ ভ্রমণের সময় কেবল একটি পাসপোর্ট সাথে রাখা সম্ভবত বুদ্ধিমানের কাজ হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কাছে ইসরায়েলি ও রুশ উভয় পাসপোর্ট থাকে, তবে আপনি কিছু দেশে রুশ হিসাবে চিহ্নিত করা আরও নিরাপদ হতে পারেন। যাইহোক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন দেশগুলিতে যেতে আপনাকে ইসরায়েলি পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হতে পারে। অবশ্যই বেশিরভাগ স্থানে আপনি উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন। তবে এমন জায়গাও থাকতে পারে, যেখানে উভয় পছন্দনীয় নয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক আফগান রুশ এবং ইসরায়েলি উভয়কেই ঘৃণা করে।
কিছু ভ্রমণকারী একটি ছদ্মবেশী পাসপোর্ট বহন করে, যা একটি অস্তিত্বহীন দেশ দ্বারা জারি করা একটি ভুল পাসপোর্ট। ছদ্মবেশী পাসপোর্ট সাধারণত সন্ত্রাসবাদী এবং অপহরণকারীদের দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার জন্যে ব্যবহার করা হয়, যারা কেবল একটি নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের আলাদাভাবে খুঁজছেন। ছদ্মবেশী পাসপোর্টগুলি সরকারী কাজ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ যে কেউ এই পাসপোর্ট কিনতে পারে, যেখানে পরিচয় যাচাই প্রায়শ থাকে না। এর কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক আছে; এটি হয়ত কোনো বোকা আক্রমণকারী ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করতে পারে; কিন্তু যারা আপনাকে তল্লাশি করে আসল পাসপোর্ট পেয়ে যায় বা জানে যে এটি ভুয়া বা যাদের কাছে ভিসা স্ট্যাম্প পরীক্ষা করার অভিজ্ঞতা আছে, তারা অবশ্যই বুঝবে যে, এটি একটি প্রতারণামূলক নথি। এমন পরিস্থিতিতে ভুয়া পাসপোর্ট আক্রমণকারীকে আরও রাগান্বিত করে তুলতে পারে।
প্রশিক্ষণ কোর্স
[সম্পাদনা]যারা যুদ্ধ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত কোনো দেশে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের পেশাদার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। এমন কোর্স এখন অনেক সহজেই পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে ‘হোস্টাইল এনভায়রনমেন্ট কোর্স’ খুঁজলে স্থানীয় বহু কোম্পানির ঠিকানা পাওয়া যাবে। একটি কোর্স সাধারণত এই বিষয়ে আলোচনা করা সমস্ত বিষয়ে অনেক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে, যা প্রায়ই বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংগৃহীত হয়। এসব অনেক মজারও হতে পারে। একটি কোর্স সাধারণত ২-৫ দিন সময় নেয় এবং এতে রোল প্লেসহ প্রাথমিক চিকিৎসা এবং কখনো কখনো অস্ত্র প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। সাধারণত অধিকাংশ এনজিওকর্মী, কূটনীতিক ও সাংবাদিক প্রমুখ এই কোর্সগুলি গ্রহণ করে থাকেন।
- পিলগ্রিমস গ্রুপ যুক্তরাজ্যে এমন প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
- এথেনা সিকিরিটি এন্ড ইন্টেলিজেন্স কন্সালট্যান্টস (এএসআইসি) যুক্তরাজ্য ও বিশ্বব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করে। তারা অপহরণ এড়ানো ও জিম্মি বেঁচে থাকা প্রশিক্ষণে বিশেষজ্ঞসহ পাশাপাশি অন্যান্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণও প্রদান করে।
- অনপয়েন্ট ট্যাকটিক্যাল যুক্তরাষ্ট্রে বেসামরিক ও সামরিক উভয়ের জন্য বেঁচে থাকা, পালিয়ে যাওয়া, প্রতিরোধ ও পলায়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
- ওয়ার জোন ট্যুর বিশ্বের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের জন্য নিয়মিত প্রতিকূল পরিবেশ/অপহরণ-বিরোধী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে।
- জাতিসংঘের এমন কোর্স রয়েছে, যা এই ধরনের এলাকায় পাঠানো সমস্ত কর্মীদের জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
যদি একজন নিয়োগকর্তা আপনাকে যুদ্ধের অঞ্চলে পাঠাতে চায়, তাহলে তাদের প্রশিক্ষণের জন্যে অর্থ বরাদ্দ করতে বলুন।
প্রকাশনা
[সম্পাদনা]বন্যজীবন বেঁচে থাকা নিয়ে প্রচুর বই এবং ম্যাগাজিন পাওয়া যায়; কিন্তু যুদ্ধ অঞ্চল নিয়ে প্রকাশনা খুব কম।
- রবার্ট ইয়ং পেল্টনের দ্য ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট ডেঞ্জারাস প্লেসেস" একটি এক হাজার পৃষ্ঠার বই, যা পরামর্শ, যোগাযোগ এবং দেশভিত্তিক তথ্য প্রদান করে। তার ওয়েবসাইট কমব্যাকঅলাইভ (Comebackalive)-এ একটি ফোরাম ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ ক্যাফে, আপডেট ও যোগাযোগের জন্য রয়েছে।
- এছাড়া বিবিসি টিভি সিরিজ হলিডেইস ইন দ্য ডেঞ্জার জোন উল্লেখযোগ্য।
স্থল মাইন ও অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ
[সম্পাদনা]অস্ত্রধারী সংঘাত হওয়া অধিকাংশ জায়গায় মাইন বা অবিস্ফোরিত অস্ত্র (UXO) মাটির নিচে অঘবা উপরে থাকতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে, সংঘাত শেষ হওয়ার কয়েক দশক পরেও সেখানকার অবিস্ফোরিত অস্ত্র বিপজ্জনক হতে পারে— উদাহরণস্বরূপ, চীনে ২১ শতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফেলে যাওয়া গোলাবারুদ থেকে কিছু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এবং সেই একই যুদ্ধের বোমা এখনও জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে আবিষ্কৃত হচ্ছে (এবং তা বিপজ্জনক)। প্রকৃতপক্ষে, পুরনো যন্ত্রপাতি কখনও কখনও নতুনের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হয়; কারণ বিস্ফোরক বা এর সক্রিয়করণ পদ্ধতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়।
বিশ্বের অনেক জায়গায় যেখানে সংঘাত কয়েক দশক আগে শেষ হয়েছে, সেখানে এখনও কিছু স্থান মাইনের কারণে বন্ধ রয়েছে। কয়েক বছর পর ঘনবসতিপূর্ণ বা বেশি ভ্রমণ করা জায়গাগুলি সাধারণত পরিষ্কার করা হয়ে থাকে; তবে নির্জন বা দূরবর্তী স্থানগুলো এখনও বিপজ্জনক থাকতে পারে।
মাইন সাধারাণত দুই ধরনের হয়: অ্যান্টি-পার্সোনেল (ব্যক্তিবিরোধী) এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক (ট্যাঙ্ক-বিরোধী)।
- সবচেয়ে সাধারণ হল, অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় এবং কেউ এর ওপর পা রাখলে সক্রিয় হয়। আরেক ধরনের মাইন গাছ বা দেওয়ালে লাগানো থাকে এবং এতে একটি ট্রিপিং তার থাকে; এগুলো একসঙ্গে বেশ কয়েকজনকে আঘাত করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি যদি একটি অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন সক্রিয় করেন, তবে এটি সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরিত হয়; সিনেমার মতো কোনো ক্লিক বা অন্য কোনো সতর্কবার্তা থাকে না। এই মাইনগুলি সাধারণত হত্যার উদ্দেশ্যে তৈরি হয় না। কারণ শত্রুদের যোদ্ধাকে আহত করা হত্যা করার চেয়ে বেশি কার্যকর; আহত ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়া এবং চিকিৎসার জন্য সম্পদ ও সময় উভয় প্রয়োজন হয়।
- ট্যাঙ্ক-বিরোধী মাইনগুলি সাধারণত আপনার পায়ের চাপে সক্রিয় হবে না; কারণ সেগুলো যানবাহনের দ্বারা সক্রিয় হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়। তবে ব্যক্তিবিধ্বংসী মাইনের তুলনায় এসব অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।এসব একটি ট্যাঙ্ক থামাতে বা একটি ট্রাক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে সক্ষম।
- কিছু এলাকায় উভয় ধরনের মাইন থাকে, যাতে মাইন পরিষ্কার করাটা আরও কঠিন হয়।
যদিও বুবি ফাঁদে বিস্ফোরক নাও থাকতে পারে, তবে এর উদ্দেশ্য ও গোপনীয়তার কারণে এসবকে মাইনের আরেক ধরণ বলা যেতে পারে।
এ ধরনের যে কোনো যন্ত্র থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে ভালো পরামর্শ। কখনও কখনও এগুলোর উপস্থিতির সতর্কবার্তা থাকে এবং সতর্কবার্তা হতে পারে একটি ব্যতিক্রমী চিহ্নহীন। মাইন কৃষিকাজে ব্যবহৃত জমির মাঝে বা একটি পরিত্যক্ত ঘর বা একটি ব্যস্ত এলাকায় পড়ে থাকতে পারে। কোথাও মাইন বা গোলাবারুদের বাক্সগুলি থাকতে পারে, যেগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং এটি একটি সুবিধাজনক ব্যবহৃত পথ নাও হতে পারে। যেই স্থানে মাইন বা অবিস্ফোরিত অস্ত্র পাওয়া যায়, সেই এলাকা চিহ্নিত থাকতে পারে। পাথরে লাল রং একটি নিশ্চিত চিহ্ন। একটি বেড়ার সঙ্গে কাপড়ের টুকরো বা ক্যান ঝুলানো আরেকটি চিহ্ন। মৃত গবাদি পশু বা গর্তের ধারাবাহিকতা, এরকমও হতে পারে। স্থানীয় মানুষ এবং জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বা সেই এলাকায় কাজ করা জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার মতো মানবিক সাহায্য সংস্থা থেকে পরামর্শ পাওয়া সবচেয়ে ভালো হতে পারে।
যদিও মাইনফিল্ডগুলি চিহ্নিত থাকে; বৃষ্টি এবং নদীর স্রোত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে অন্য এলাকায় নিয়ে যেতে পারে। এটি বলকান অঞ্চলে একটি সমস্যা, যেখানে নদীর তীরে মাইন থেকে মৃত্যু এবং আঘাতের ঘটনা অতি সাধারণ।
যদি আপনি এমন একটি এলাকায় থাকেন, যা মাইন পোঁতার জন্য পরিচিত বা সন্দেহভাজন, তাহলে সম্ভব হলে পাকা রাস্তা ব্যবহার করুন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে গাড়ির ট্র্যাক বা ব্যবহৃত পথ অনুসরণ করুন। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আপনি যদি মাইন আক্রান্ত এলাকায় নিজেকে খুঁজে পান, তাহলে থামুন। যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন এবং এমন কারও সহায়তা চান, যিনি জানেন কীভাবে এটি মোকাবিলা করতে হবে। যদি এটি সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার সঠিক পথে পেছনে ফিরে যান (এটি খুব বিপজ্জনক)। যদি আপনার কাছে একটি লম্বা দণ্ড থাকে, তাহলে আপনি মাইন খুঁজে বের করে এলাকা থেকে বের হতে পারেন। দণ্ডটি খুব নিচু কোণে মাটিতে ঢুকান। মাইন সাধারণত পাশ থেকে আঘাত করলে সক্রিয় হয় না। আপনার পা দ্বারা যথেষ্ট বড় একটি এলাকাকে পরীক্ষা করতে হবে। প্রতিটি পায়ের ধাপকে পরীক্ষা করুন। এলাকা থেকে বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা এমনকি দিনও লাগতে পারে; কিন্তু আপনি বেঁচে থাকবেন। মাইনে কলম বা অন্যান্য ছোট বস্তু ব্যবহার করা একটি ভুল ধারণা। মনে রাখবেন, মাইন শরীরের কাছাকাছি অঙ্গগুলিকে আঘাত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে!
জাতিসংঘ মাইন অ্যাকশন সার্ভিস (UNMAS) একটি মোবাইল অ্যাপ প্রকাশ করেছে, যা এখন গুগল প্লেতে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি মূলত সাহায্যকর্মীদের জন্য তৈরি করা হয়। তবে এতে মাইন ও অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ (UXO) নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু উপকারী পরামর্শ রয়েছে। ব্যবহারকারীরা অ্যাপের পরীক্ষাগুলি পাস করলে ERW/IED সচেতনতার সার্টিফিকেটও পেতে পারেন।
জাতিসংঘ মাইন অ্যাকশন সার্ভিস, হালো ট্রাস্ট (Halo trust) ও ম্যাগ ইন্টারন্যাশনাল (Mag International) এর মত কিছু সংগঠন মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাসেবক অথবা বেতনের ভিত্তিতে কিছু কর্মী নিয়োগ করে, যারা বিভিন্ন স্থানে ভূমি মাইন অপসারণে সহায়তা করে। সাধারণত এই সব কাজ গোলাগুলি এবং বোমাবর্ষণ বন্ধ হওয়ার পর শুরু হয়; তবে এটি ঝুঁকিহীন নয়।
ভূমি মাইন নিষিদ্ধকরণ আন্তর্জাতিক প্রচারণা এবং ১৯৯৯ সালে অটোয়া কনভেনশন অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন নিষিদ্ধ করে এবং বর্তমানে ১৫০টিরও বেশি দেশ সেই চুক্তিতে সই করে। তবে সেই কনভেনশন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে না এবং বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি; যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন এটি স্বাক্ষর করেনি। উত্তর কোরিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়া কেউ এটি স্বাক্ষর করেনি; উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে মাইনগুলো অপরিহার্য মনে করে এবং তাদের সীমান্ত বরাবর বিপুল সংখ্যক অ্যান্টি-পার্সোনেল ও অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন পোঁতা রয়েছে।
বেশিরভাগ মাইনে ধাতু থাকে। তাই সেসব শনাক্ত করা তুলনামূলক সহজ। যেগুলিতে নেই, সেসব আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ সেগুলির ফলে সাবেক মাইনফিল্ডগুলো সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা প্রায় অসম্ভব এবং এর দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকি থেকে যায়। তবে, সতর্ক থাকুন, সব দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এবং সব মাইন এই মানদণ্ড মেনে তৈরি হয় না।
বীমা
[সম্পাদনা]ভ্রমণ বীমা সাধারণত আপনাকে যুদ্ধ অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য সুরক্ষা দেয় না। যারা কাজের অংশ হিসেবে যুদ্ধ অঞ্চলে যান, তারা সাধারণত বিশেষ বীমার মাধ্যমে সুরক্ষিত হন, যার প্রিমিয়াম (বীমা ফি) সাধারণত খুব বেশি হয় এবং এর খরচ সাধারণত নিয়োগকর্তার দ্বারা বহন করা হয়।
রাস্তা অবরোধ ও চেকপয়েন্ট
[সম্পাদনা]রাস্তা অবরোধ এবং চেকপয়েন্টগুলি সাধারণত যুদ্ধের এলাকা ছাড়াও অন্য স্থানে দেখা যায়। এগুলি প্রায়শই রাস্তার একটি কোণে লুকানো থাকে ( বিশেষ করে যদি এসব সরকারী না হয়) এবং মাঝে মাঝে পথচারীদের কাছ থেকে টাকা অথবা অন্যান্য সামগ্রী জোরপূর্বক আদায় করার সুযোগ নিয়ে থাকে।
রাস্তা অবরোধকারী নিরাপত্তাকর্মীরা সাধারণত সশস্ত্র এবং ক্লান্ত হতে পারে এবং কিছু উগ্রপন্থীও হতে পারে। তাই তাদেরকে উত্তেজিত করা এড়িয়ে চলা উচিত।
এক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- আপনার হাত সবসময় দৃশ্যমান রাখুন, যাতে তারা মনে না করে যে, আপনার কাছে অস্ত্র আছে।
- ধীরে ধীরে চলুন এবং হঠাৎ কোন তাড়াজনিত কাজ করবেন না।
- অবরোধকারী ব্যক্তিদের প্রতি নিজেকে খুবই খুশি দেখানোর চেষ্টা করুন, যদিও আপনার তাদের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি থাকতে পারে।
- বিনীত এবং শান্ত থাকুন; আতঙ্কিত ব্যক্তি সন্দেহের কারণ হতে পারে।
- সম্ভব হলে গাড়িতে থাকুন এবং যদি গাড়ি থেকে নামতেই হয়, তাহলে অন্যদের সঙ্গেই থাকুন; বিশেষ করে মহিলা সদস্যদের ক্ষেত্রে।
- সব দরজা বন্ধ রাখুন এবং জানালাও বন্ধ রাখুন।
- ক্যামেরা লুকিয়ে রাখুন এবং মৌলিক স্থানীয় ভাষা শিখুন, যাতে আপনার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তা বুঝতে পারেন।
কোনো সামরিক চেকপয়েন্ট, কর্মী বা রাস্তা অবরোধের ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া সেতু, সীমান্ত চেকপয়েন্ট, যোগাযোগ কেন্দ্র এবং বিমানবন্দরগুলির মতো সংবেদনশীল এলাকার ছবি তোলা উচিত নয়। যদি সন্দেহ থাকে, পূর্বে অনুমতি চাওয়া ভাল। অনেক দেশে শান্তিপূর্ণ সময়েও এসব জায়গায় ছবি তোলা নিষেধ। কারণ সামরিক বাহিনী মনে করতে পারে যে, আপনি শত্রু বাহিনীর জন্য তথ্য সংগ্রহ করছেন।
অপরহণ ও জোরপূর্বক নিখোঁজ
[সম্পাদনা]অপহরণ বা জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার ঝুঁকি কমানোর কিছু কৌশল রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এড়ানো এবং পেশাদার নিরাপত্তা রক্ষক বা নিরাপত্তা দলের ব্যবস্থা করা। আপনাকে যদি অপহরণ করা হয়, তাহলে নিরাপদে ফিরে আসার সুযোগ বাড়ানো এবং আপনাকে বা অন্যান্য বন্দীদের উপর অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি এড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় কাজ করার পরিকল্পনা করা বা যারা ব্যক্তিগত বা কর্পোরেট পেশার কারণে অপহরণের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য অপহরণ এড়ানো এবং বন্দি থেকে বাঁচার বিশেষ প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় এবং তা নেওয়া উচিত।
অপহরণের ক্ষেত্রে অপহরণকারীদের নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে কম থাকে প্রথম দিকে। সময় যত বাড়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ ততই বাড়ে এবং ভুক্তভোগীর কার্যকলাপের সুযোগ কমে যায়। অনেক অপহরণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়; কারণ ভুক্তভোগী অপহরণের সময় এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা অপহরণকারীরা আশা করেনি। যদি আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন, তবে অপহরণ থেকে বাঁচতে সেই স্থান থেকে পিছু হটে যাওয়া বা দিক পরিবর্তন করা সহায়ক হতে পারে ( কিন্তু এতে গুলি লাগারও সম্ভাবনা থাকে)। চালকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সও পাওয়া যায়।
অনুগ্রহ করে সর্বদা মনে রাখবেন যে, অনেক সরকার অপহরণকারীদের কাছে মুক্তিপণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তারা অপহৃত নাগরিকদের মুক্ত করতে চেষ্টা করে, যা সেই দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করে এবং বন্দিদের পরিবারের ও কর্মীদের জন্য কনসুলার সমর্থন প্রদান করে। বিরাট ঝুঁকির কারণে, সরকারী সংস্থাগুলি কেবলমাত্র সবশেষ উপায় হিসেবে এবং সাধারণত খুব নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে অপহৃতদের মুক্তির জন্য আক্রমণ পরিচালনা করে; এই অপারেশনগুলির ফলে প্রায়শই বন্দীদের হত্যা বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। অস্ট্রেলীয় সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নির্দেশনার মাধ্যমে অপহরণের শিকারদের জন্য সরকারের প্রদত্ত সহায়তার উদাহরণ হিসেবে এটি দেখা যেতে পারে।
এছাড়াও, আপনি নিশ্চিত করুন যে, দেশের বাইরের কেউ সবসময় আপনার পরিকল্পনা সম্পর্ক অবগত আছেন এবং আপমার নিয়মিত ভ্রমণসূচী তার কাছে রয়েছে, যাতে আপনি যদি নিখোঁজ হয়ে গেলে দ্রুত সতর্কতা জারি করা যেতে পারে।
শুটিং বা গুলিচালনা
[সম্পাদনা]যদি আপনি আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে অপরিচিত হন এবং এসবের ক্ষমতা সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকে, তাহলে কোনো শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশে প্রবেশ করার আগেই অবশ্যই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন এবং নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে আপনার সর্বোত্তম পদক্ষেপ হবে সক্রিয় সংঘাতের এলাকাগুলো এড়িয়ে চলা। মনে রাখবেন যে, সব বন্দুকই এক ধরনের অস্ত্র, যা হত্যার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়।
লড়াইয়ের পরিস্থিতি ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক সময় উদযাপন বা অন্যান্য আবেগ প্রকাশ করার জন্য গুলি চালাতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও বলকান অঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সাধারণ ঘটনা। ভুলবশত ছোড়া গুলি মৃত্যুর কারণও হতে পারে; তাই তখন আপনার সেরা বিকল্প হবে মজবুত কোন আড়াল খুঁজে নেওয়া। কারণ দুর্বল ছাদ; যেমন টাইলস উপর থেকে নেমে আসা গুলি সহজেই ভেদ করতে পারে।
সিনেমা বা টেলিভিশনের গুলির শব্দের সাথে বাস্তবের গুলির শব্দের অনেক পার্থক্য রয়েছে। পিস্তল অথবা সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্রের শব্দ অনেকটা ফেটে যাওয়া বেলুন বা আতশবাজির মতো শোনায়; আর রাইফেল ও শটগানের শব্দ তুলনামূলকভাবে বেশি প্রচলিত 'বুম' ধরনের (বিকট) শব্দ হয়।
যদি আপনার দিকে গুলি করা হয়, তাহলে দ্রুত এবং ক্রমাগত চলতে থাকুন। যতটা সম্ভব গুলির সরাসরি লাইন ধরে না গিয়ে গুলির গতিপথের বিপরীত দিকে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং আড়াল নিন। যদি আপনি কোনো দলের মধ্যে থাকেন, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ুন। এটি গুলি করা ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং আপনাকে আড়াল খুঁজে নিতে সময় দিতে পারে। সম্ভব হলে গুলি কোন দিক থেকে আসছে এবং কোন দিকে যাচ্ছে তা লক্ষ্য করুন; যেন আপনি সহজে ও নিরাপদে আড়াল নিতে পারেন। শ্বাস নেওয়া ও শান্ত থাকার চেষ্টা করবেন।
যখন নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে গুলির সম্মুখীন হন, তখন মার্ফির যুদ্ধ-আইনের একটি উক্তি খুব মনে রাখুন: আপনি যা করবেন তা আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে, এমনকি কিছু না করলেও।
কোনো অবস্থাতেই গাড়ির আড়ালে আশ্রয় নেবেন না। পিস্তলের গুলি খুব সহজেই গাড়ির উভয় দরজা ভেদ করতে পারে; রাইফেলের গুলি পুরো গাড়ির দৈর্ঘ্য পাড়ি দিতে পারে; গ্রেনেড, মর্টার ও কামানের গোলা বেশিরভাগ যানবাহনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। থেমে থাকা বা বিকল গাড়িগুলো সাধারণত 'বুলেট চুম্বক' হয়ে দাঁড়ায়, যা আগুনের নিশানা হয়। একটি গাড়ি বা ট্রাক যে সুরক্ষা দিতে পারে তা হলো, এর দ্রুতগতিতে স্থানান্তর করার ক্ষমতা। যদি বাধ্য হয়ে গাড়ির আড়ালে বা ভেতরে আশ্রয় নিতে হয়, তবে ইঞ্জিন ব্লকটি নিজের ও শ্যুটারের মাঝে রাখুন; ছোট অস্ত্রের গুলি সাধারণত এটি ভেদ করতে পারে না। এমনকি গাড়ি বুলেটপ্রুফ হলেও; কারণ বুলেটপ্রুফ বাতাযান যদি একই জায়গায় দুই বা তার বেশি গুলি লাগে, তখন তা ভেদ হতে পারে।
দেয়াল, গাছপালা ও অন্যান্য কাঠামো আড়াল হিসেবে কাজ করতে পারে, কিন্তু সুরক্ষা দিতে পারে না। একটি একে-৪৭ এর ৭.৬২ মিলিমিটার রাউন্ড (যা যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারণ একটি অস্ত্র) কংক্রিট ব্লক ভেদ করতে পারে। কম শক্তির ৯ মিমি পিস্তলের গুলি এক ডজন শিটরক (দেয়াল) পেরিয়ে যেতে পারে। ১২.৭ এবং ১৪.৭ মিমি রাউন্ড, যা ভারী মেশিনগান এবং বস্তুবিধ্বংসী স্নাইপার রাইফেলে ব্যবহৃত হয়, তা প্রায় সবকিছুই ভেদ করতে পারে, যার মধ্যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হেলমেটও রয়েছে।
একটি সাধারণ নিয়ম হল 'তিন সেকেন্ডের নিয়ম', যার অর্থ হল, যদি আপনাকে অন্য কোনো আড়ালে যেতে হয়, তবে এটি তিন সেকেন্ডের বেশি সময়ের দৌড়ের দূরত্বে থাকা উচিত নয়। মনে রাখার মতো একটি বাক্য হলো: 'আমি উঠে আছি, সে আমাকে দেখেছে, আমি নিচে নেমে গেছি।' এর মানে হল আপনি আড়াল থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছেন এবং আপনি ধরে নিচ্ছেন শ্যুটার আপনাকে দেখেছে এবং লক্ষ্য করছে; আপনি গুলি করার আগে আড়ালের পেছনে ফিরে যাচ্ছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এ ধরনের চিন্তাভাবনা থেকেই 'তিনটি মিলে খোলা খারাপ' কথাটি প্রচলিত হয়েছিল।
তবে মনে রাখবেন, কিছু ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রয়োগ করা প্রায় নিশ্চিতভাবেই আপনাকে হত্যা করতে পারে। যদি শত্রু জানে আপনি কোথায় আছেন এবং সে আপনার চলার জন্যে অপেক্ষা করছে বা সে শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকা লক্ষ্য করে অপেক্ষা করছে, তাহলে সে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে সঠিকভাবে গুলি করতে পারবে। এছাড়াও যদি তার কাছে স্বয়ংক্রিয় কোন অস্ত্র থাকে ( যা অধিকাংশ সামরিক বা গেরিলা যোদ্ধার কাছে থাকে), তাহলে তাক করতে সময় লাগবে না; সে শুধু আপনার দিকে গুলি ছুড়বে এবং আশা করবে যে গুলিগুলির একটি অবশ্যই আপনাকে আঘাত করবে।
যদি আপনাকে বা অন্য কাউকে গুলি করা হয়, তবে বুলেটটি বের করার চেষ্টা করবেন না ( তা হাসপাতালে বের করানো উচিত)। আপনার প্রধান অগ্রাধিকার হবে যত দ্রুত সম্ভব রক্তপাত বন্ধ করা; পাশাপাশি আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ নিশ্চিত করা। রক্তপাত বন্ধ করার জন্য তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ ও ক্ষত নির্দিষ্ট করার পর হাসপাতালে পাঠানো বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও হাড় ভেঙে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনাজনিত আঘাত এড়ানো যায়। অঙ্গের ক্ষতের জন্যে টুর্নিকেট (রক্তবন্দক ) ব্যবহার করতে শিখুন।
বিমান হামলা
[সম্পাদনা]যুদ্ধক্ষেত্রে বৈমানিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে শত্রুদের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান আক্রমণ করা ও মিসাইল হামলা চালানো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
২০১০ এবং ২০২০-এর দশকে ব্যাপকভাবে বাজারে উপলব্ধ ড্রোন ও ৩ডি প্রিন্টারের কারণে সন্ত্রাসী অথবা বিভিন্ন অনিয়মিত বিদ্রোহী বাহিনীও নিজদের ড্রোন তৈরিতে জড়িয়ে পড়েছে। কিছু ড্রোন কেবল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়; তবে কিছু বিস্ফোরক বা আকাশ থেকে মাটিতে মিসাইল সজ্জিত থাকে, যা সাধারণত সামরিক যানবাহনের উপরিভাগের দুর্বল বর্মের সুবিধা নেয়।
সামরিক ড্রোনের একটি পরিচয় হলো এগুলোর উচ্চ শব্দযুক্ত ভৌঁভৌঁ আওয়াজ, যা মৌমাছি বা ঘাস কাটার মেশিনের মতো শোনায়। আপনি ড্রোনটিকে মাথার উপরে চক্কর দিতে দেখতে পারেন।
যা করবেন না:
- রাস্তায় শুয়ে পড়া এবং হাত থেকে কিছু ফেলে দেয়া (এটি অস্থায়ী বিস্ফোরক যন্ত্রপাতি স্থাপনের মতো দেখায়);
- দৌড়ানো;
- বিমানটির দিকে ইশারা করা;
- মুখ গোপন করার চেষ্টা করা, বিশেষ করে কিছু পরিস্থিতিতে চিকিৎসা মাস্ক পরা।
এই কাজগুলি ড্রোনটিকে আপনার উপর গুলি বর্ষণ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। কেবল মনে করুন যে আপনি ড্রোনটিকে লক্ষ্য করেননি।
এমন কোনো কিছু বা কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকুন, যাদের আপনি লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে সন্দেহ করেন। কারণ আপনি বিমানটির অস্ত্রের বিস্ফোরক ব্যাসার্ধে আটকে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
যদি আপনার গন্তব্যস্থল নাগরিক প্রতিরক্ষা ক্ষমতা রাখে, তাহলে আসন্ন বিমান হামলার জন্য সতর্কতার উদ্দেশ্যে সাইরেন বাজানো হতে পারে। আপনি এমন পরিস্থিতিতে ( সাথে বিস্ফোরণ অধ্যায়টিও দেখুন):
- প্রস্তুত করা একটি ব্যাগে জরুরি খাদ্য ও পোশাক নিন এবং এটি সঙ্গে নিয়ে যান।
- একটি আশ্রয়ে ঢুকে পড়ুন। যদি খুব অগভীর না হয়, তবে মেট্রো/সাবওয়ে স্টেশনগুলি সাধারণত বিমান হামলার জন্য ভাল আশ্রয় হয়। এগুলি ১৯৪০ সালে লন্ডন থেকে ২০২২ সালে কিয়েভে পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
- যদি আপনার আশেপাশে কোন আশ্রয় না থাকে, তাহলে একটি ভবনের দিকে যান এবং যতদূর সম্ভব জানালা বা অন্য কোনো নাজুক বস্তু থেকে দূরে অবস্থান করুন।
- যদি কোন ভবন নিকটবর্তী না থাকে, তাহলে পেটের ওপর শুয়ে পড়ুন এবং আপনার হাত মাথার পেছনে রাখুন।
বিস্ফোরণ
[সম্পাদনা]বিস্ফোরণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সর্বদা আপনার অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে। লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এমন লোকদের সাথে চিহ্নিত স্থান; যেমন রেস্টুরেন্ট বা বার এড়িয়ে চলা একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হতে পারে।
যদি আপনার এবং বিস্ফোরণস্থলের মধ্যে কিছু দূরত্ব থাকে, তাহলে আপনি তার আঘাত ও শব্দ আপনার অবস্থানে পৌঁছানোর আগে সেই বিস্ফোরণটি দেখতে পাবেন। সে সময়টা ভালোভাবে ব্যবহার করে নিজেকে দ্রুত সুরক্ষিত করে নিচু হয়ে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করুন।
বিস্ফোরণের সময়:
যদি আপনি একটি ভবনের ভেতরে থাকেন:
- নিচে নেমে একটি মজবুত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আড়াল নিন। চোখ বন্ধ করুন, কান ঢেকে রাখুন এবং মুখ খুলে রাখুন যেন বিস্ফোরণের আঘাত কম হয়।
- বিস্ফোরণের পর দ্রুত বেরিয়ে যান এবং স্পষ্টভাবে দুর্বল তল ও সিঁড়ির দিকে নজর রাখুন। যদি ধোঁয়া থাকে, তাহলে নিচু হয়ে চলুন।
- আগুন ও অন্যান্য বিপদগুলি পরীক্ষা করুন।
আর যদি আপনি ধ্বংসাবশেষে আটকে পড়েন, তাহলে আপনার অবস্থান উদ্ধারকারীদের জানাতে ফ্ল্যাশলাইট বা সিটি বা পাইপে ঠুকাঠুকি করুন। এছাড়া ভূমিকম্প নিরাপত্তার টিপসও অনুসরণ করুন।
- বিপজ্জনক ধুলোবালি শ্বাসে টেনে নেওশার আশঙ্কা এড়াতে চিৎকার করুন।
- একবার বের হয়ে গেলে জানালা, কাঁচের দরজা বা অন্যান্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক এলাকায় দাঁড়াবেন না।
- যা কিছু আপনার কাছে আছে, তা দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন।
যত দ্রুত সম্ভব বিস্ফোরণস্থল চলে যান; কারণ একটি সাধারণ কৌশল হলো এক বিস্ফোরণের পর অন্যটি শুরু করা, যাতে ভিড় এবং উদ্ধারকারীদের ধরে ফেলা যায়।
সিবিআরএন প্রতিরক্ষা
[সম্পাদনা]যদিও যুদ্ধবাজরা রাসায়নিক, জৈবিক, পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহারে সাধারণত সতর্ক থাকে, তবুও এসব শক্তিশালী অস্ত্র এবং সময় ও সুযোগ বুঝে ব্যবহার করা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়ার গৃহ যুদ্ধের সময় বেসামরিক জনসংখ্যার উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অনেক ঘটনা ঘটেছিল।
পারমাণবিক অস্ত্র
আপনি যদি বিস্ফোরণস্থলের ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকেন, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। কৌশলগত পরমাণবিক অস্ত্র (ট্যাক্টিক্যাল নিউক) একটি আর্টিলারি থেকে ছোঁড়া হতে পারে, যার বিস্ফোরণের ব্যাসার্ধ কয়েকশ মিটার হতে পারে। তবে বাতাসে বিস্ফোরিত একটি বড় বোমা বিস্তৃত প্রভাবের কারণে কয়েক কিমি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তীব্র তরঙ্গিত তাপ, গামা রশ্মি বা কিছু বোমার নিউট্রনও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যদি আপনি বিস্ফোরণস্থল থেকে দূরে থাকেন, তবে তখন আপনার প্রধান উদ্বেগ হবে রেডিওএকটিভ ফলআউট বা "পদার্থ বিকিরণ ফলন" অর্থাৎ সেই পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর তার যেসব উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে বেচে থাকা।
সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র ফলআউট উৎপন্ন করে, যা হচ্ছে রেডিওএকটিভ ধূলা, যা বাতাসে উড়ে যায় এবং একটি বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। "গন্দা বোমা" বিশেষভাবে ফলআউট বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা হয়. উদাহরণস্বরূপ, একটি হাইড্রোজেন বোমাকে U238 এর একটি স্তরের সাথে মোড়ানো হতে পারে, যাতে আরও বেশি ফলআউট তৈরি হয়।
এছাড়াও, রেডিওএকটিভ পদার্থ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রচলিত বিস্ফোরক ব্যবহার করে একটি যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। কিছু লোকের কাছে এটি আকর্ষণীয় হতে পারে। কারণ এটির জন্য কম প্রযুক্তি এবং সম্পদের প্রয়োজন হয়; কিন্তু এর প্রভাব পারমাণবিক বোমার ফলআউটের তুলনায় ততটা গুরুতর বা ব্যাপক নয়।
ফলআউটের সঠিক উপায় হল এমন কোনো এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া, যেখানে এটি সম্ভবপর হয় অর্থাৎ পারমাণবিক বিস্ফোরণের পদ্মবিন্দুর কোনো স্থান। যদি এটি সম্ভব না হয়, তবে আপনি যদি পারেন একটি ফলআউট শেল্টারে চলে যান। তা না হলে, নিম্নলিখিত ব্যবস্থা আপনাকে সাহায্য করবে:
- রেডিওএকটিভ ধুলো বা ধোঁয়া শ্বাস নেবার ঝুঁকি কমাতে আপনার নাক ও মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- বিস্ফোরণ দ্বারা ছড়িয়ে পড়া বস্তু বা টুকরা স্পর্শ করবেন না।
- একটি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করুন, যেখানে দেয়াল ও জানালা অক্ষত আছে, যাতে আপনি রেডিয়েশন থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
- সব জানালা ও বাইরের দরজা বন্ধ করুন। বাইরের বায়ু প্রবাহিত হওয়া ফ্যান ও 'গরম ও এসি সিস্টেম' বন্ধ করুন।
যদি ভবনের দেয়াল, জানালা ইত্যাদি ভেঙে যায়, তবে একটি অভ্যন্তরীণ কক্ষে যান এবং বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না। যদি ভবনটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে দ্রুত অন্য একটি ভবনে চলে যান, যেখানে দেয়াল ও জানালা ভাঙা নেই।
একবার ভিতরে গেলে, আপনার বাইরের পোশাকটি খুলে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে সীলবদ্ধ করুন, যদি তা উপলব্ধ হয়। যদি না থাকে, তবে এমন কিছু ব্যবহার করতে পারেন, যা পোশাক ধারণ করতে পারে এবং বন্ধও করা যায়। কারণ বাইরের পোশাক খুলে ফেলা অধিকাংশ রেডিওএকটিভ ধুলো দূর করতে সহায়ক হবে।
প্লাস্টিকের ব্যাগটি এমন স্থানে রাখুন যেখানে অন্য কেউ স্পর্শ করবে না। সম্ভব হলে প্লাস্টিকের ব্যাগটি বৃহত্তর জিনিস থেকে বিচ্ছিন্ন করুন।
কোনো অবশিষ্ট ধুলো সরাতে স্নান করুন বা সাবান ও জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
আরও বিস্তারিত নির্দেশনার জন্যল স্থানীয় রেডিও বা সংবাদে চোখ রাখুন। এরপর আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে নিষ্কাশিত করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্র
কিছু রাসায়নিক অস্ত্রের স্বতন্ত্র গন্ধ থাকলেও (যেমন ক্লোরিনের জন্য একটি বিশেষ শক্তিশালী ফ্যাকাশে গন্ধ) কিছু (যার মধ্যে সারিন ও VX অন্তর্ভুক্ত) গন্ধহীন এবং বর্ণহীন হতে পারে। তাই আপনার পরিস্থিতিগত সচেতনতা বজায় রাখুন এবং যদি আপনার অনুভূতি বা পরিবেশে কিছু ভুল লাগে, তবে আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন।
একটি রাসায়নিক বা জৈবিক অস্ত্রের হামলার সময়:
- যেকোনো স্পষ্ট ধোঁয়া বা বাষ্প মেঘ এড়িয়ে চলুন।
- যদি একটি রাসায়নিক বা জৈবিক অস্ত্র ভিতরে (যেমন ১৯৯৫ সালের টোকিও সাবওয়ে সারিন হামলার ক্ষেত্রে) মুক্ত হয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব স্থান ত্যাগ করুন এবং উচ্চ বা বাতাসের অবস্থানের দিকে চলে যান।
- সাইট থেকে নিজেকে সরিয়ে একটি অক্ষত ভবনে আশ্রয় নিন।
- দরজা বন্ধ করুন; জানালা, বায়ু ভেন্ট এবং অন্যান্য প্রবেশপথ বন্ধ করুন।
- ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনিং এবং ফোর্সড এয়ার হিটিং সিস্টেম (বাধ্যতামূলক বায়ু গরমকরণ) বন্ধ করুন।
- কম জানালা আছে এমন একটি কক্ষে যান।
- সব জানালা, দরজা ও বায়ু ভেন্ট প্লাস্টিকের শীট এবং ডাকটেপ দিয়ে সিল করুন।
- কোনো সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ফাঁকগুলি সিল করার জন্য হাতে যা আছে তা প্রয়োগ করুন।
- বাইরের পোশাকটি খুলে একটি সীলবদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখুন।
- স্নান করুন বা সাবান ও জল দিয়ে ধোন। যদি চোখে অস্বস্তি হয় তবে পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা করুন।
- পরিষ্কার পোশাক পরুন।
- যদি সম্ভব হয় তাহলে চিকিৎসা সহায়তা চাইবেন, এমনকি কোনো লক্ষণ তৈরি না হলেও।
- যদি সম্ভব হয় তবে টিভি দেখুন, রেডিও শুনুন বা ইন্টারনেট চেক করুন। আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে নিষ্কাশিত করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
উপকরণ
[সম্পাদনা]যুদ্ধক্ষেত্রে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বহনের সময় আপনাকে সব শুল্ক ও আমদানি-রপ্তানি নিয়ম শতভাগ মেনে চলতে হবে। কারণ আপনার গন্তব্যস্থল আইনহীন হতে পারে; কিন্তু আপনার যাত্রা শুরুর স্থান সাধারণত কখনো তেমন হবে না। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সাংবাদিক বুলেটপ্রুফ ভেস্ট বা হেলমেট সঠিক নিয়ম না মেনে বহন করার কারণে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে শুল্ক কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বুলেটপ্রতিরোধক ভেস্ট (জ্যাকেট)
বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ( বা বডি আর্মার) কিছু পরিস্থিতিতে আপনার জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে; তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ ভেস্ট শরীরের সেসব অংশকে রক্ষা করতে পারবে না, যাকে তা ঢেকে রাখে না এবং সব বুলেটপ্রতিরোধক ভেস্ট ছুরির আঘাতকে প্রতিরোধ করতে পারে না। যদি ছুরির আঘাতের ঝুঁকি থাকে, তাহলে এমন একটি ভেস্ট বেছে নিতে হবে, যা ছুরি প্রতিরোধ করতে পারে অথবা দুটি ভেস্ট ব্যবহার করতে হবে। ভেস্ট সাধারণত বুলেটের শক্তি কমাতে পারে না বরং শক্তিটিকে শরীরের বেশি অংশে ছড়িয়ে দেয়। গুলিবিদ্ধ হলে মনে হবে যে, যেন ঘোড়ার লাথি খেয়েছেন; তত বড় আঘাতের চিহ্ন হবে এবং হয়তো কিছু পাঁজরও ভাঙবে। যদিও এটি মৃত্যুর চেয়ে ভালো, তবে তা কখনো সুখকর নয়।
পিস্তলের গুলি ও শার্পনেল প্রতিরোধে তৈরি হালকা ও আরামদায়ক ভেস্ট আছে; কিন্তু এগুলো ভারী গুলি ঠেকাতে পারবে না। বিশেষ করে, IIIa রেটিংযুক্ত ভেস্ট অ্যাসল্ট রাইফেলের গুলি থামাতে পারবে না। বর্তমান রাইফেলের গুলি থামানোর মতও শক্তিশালী আর্মার পাওয়া যায়; কিন্তু এগুলো ভারী, বিশাল, অস্বস্তিকর এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বুলেট ঠেকাতে ইস্পাত বা সিরামিক প্লেট প্রয়োজন; শুধু কাপড় দিয়ে কাজ হবে না। কোনো বডি আর্মারই ভারী মেশিনগান বা স্নাইপার রাউন্ড (যেমন: 50 ক্যালিবার) ঠেকাতে পারে না; কিছু ক্ষেত্রে বুলেট ভেদ করতে পারবে না, কিন্তু এর আঘাত আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
কিছু বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান; যেমন মিগুয়েল ক্যাবালেরো, বুলেটপ্রুফ জোন, বুলেট ব্লকার ও থাইক স্কিন দেখতে সাধারণ এমন বুলেটপ্রতিরোধক পোশাক বিক্রি করে। এগুলি কম দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সর্বদা পরা সহজ। বুলেটপ্রতিরোধক ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক ও ল্যাপটপ কেসও পাওয়া যায়, যেসব অদৃশ্য থেকে ভারী গুলি প্রতিরোধ করতে পারে। কারণ এইনধরনের জিনিসের মধ্যে সুক্ষ্ম বুলেটপ্রুফ প্লেট রাখা যায়। তবে, এ সকল পণ্যের দাম বেশি— কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে— কিন্তু যদি আপনার জীবন ঝুঁকিতে থাকে এবং আপনার তহবিল থাকে, তাহলে এটি কার্যকর। যদি কোনো নিয়োগকর্তা আপনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে চায়, তাহলে তাদের এ সকল সরঞ্জামের ব্যয়ভার বহন করা উচিত।
স্টিল-যুক্ত বুট, যা নির্মাণ শ্রমিকরা ব্যবহার করে, মাইন বিস্ফোরণে ক্ষতি কমাতে পারে, কিন্তু পুরোপুরি রক্ষা করতে পারবে না। তবে এগুলো কাচ ভাঙা বা তীক্ষ্ণ ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়।
অস্ত্র
কিছু এলাকায় ভ্রমণকারীরা অস্ত্র বহন করেন; যেমন ইরাকের বেসামরিক ঠিকাদারদের মাঝে মাঝে অস্ত্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ ভ্রমণকারী বা পর্যটকদের অস্ত্র বহন করা ঝুঁকি বাড়াবে; কমাবে না।
প্রথমত, আপনি যদি যথেষ্ট সশস্ত্র প্রশিক্ষণ না নিয়ে অস্ত্র বহন করেন, তবে এটি আপনার কাজে আসবে না, বরং বিপদ বাড়াবে। আর আপনি যদি প্রশিক্ষিতও হন, অস্ত্রধারীদের একাধিক সদস্যের সামনে একটি পিস্তল টানার চেষ্টা করা আত্মঘাতী হতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, অস্ত্র বহন করলে আপনি আর বেসামরিক ব্যক্তি থাকবেন না। তখন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি আপনাকে সৈনিক অঘবা গুপ্তচর হিসেবে গণ্য করতে পারে। জেনেভা কনভেনশন কেবল ইউনিফর্ম পরা বা দূর থেকে দৃশ্যমান চিহ্নধারী ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুয়ান্তানামো বে কারাগারে বন্দীদের এমনভাবে আচরণ করে, যা জেনেভা কনভেনশনের অধীনে অবৈধ। ফলে চিহ্নহীন অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র বহন করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
নিজে অস্ত্র বহন করার চেয়ে সশস্ত্র প্রহরীর সাথে ভ্রমণ করা বেশি নিরাপদ বিকল্প।
প্রাথমিক চিকিৎসা
[সম্পাদনা]এ প্রবন্ধে প্রাথমিক চিকিৎসার বিস্তারিত বিবরণ নেই।
যদি আপনাকে কখনও প্রাথিমক চিকিৎসা দিতে হয়, তাহলে প্রথমে শান্ত থাকুন; তারপর নিরাপদ স্থানে যান এবং চিকিৎসা শুরু করুন।
মৌলিক প্রাথমিক চিকিৎসা যেমনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার স্থানীয় রেড ক্রস শেখায়, আপনাকে ছোটখাটো আঘাতের চিকিৎসা এবং সিআরপি (CPR: কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) শেখানো হবে। এই ধরনের কোর্সগুলো প্রায়ই সস্তায় বা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ, যুদ্ধক্ষেত্রের প্রাথমিক চিকিৎসা বা 'প্রতিরক্ষামূলক চিকিৎসা' কোর্সে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ, শক, শ্বাসনালী ব্যবস্থাপনা এবং ট্রমা চিকিৎসার উপর জোর দেওয়া হয়। এসব সাধারণত ট্যুর্নিকেট, এইচ-ব্যান্ডেজ, ন্যাসাল এয়ারওয়েজ এবং রক্ত বন্ধ করার ওষুধ; যেমন: কুইকক্লট (QuikClot) অথবা সেলেক্স (CELOX) ব্যবহারের প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এলএমএস ডিফেন্স যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধক্ষেত্রের চিকিৎসা প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]- ব্যবসায়িক ভ্রমণ: এমন ভ্রমণে সাধারণত দর্শনার্থীরা আনন্দের জন্য আসে না।
- দুর্নীতি ও ঘুষ: স্থানীয় শাসনের অবক্ষয় দুর্নীতির জন্য অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।
- অপরাধ: আইনগত প্রতিষ্ঠানের পতন ও সম্পদের ঘাটতি অপরাধকে উৎসাহিত করতে পারে
- অসম্ভব গন্তব্যস্থল; কিছুটা যুদ্ধক্ষেত্রের মত।
- সুস্থ থাকুন: স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ধসে যাওয়া একটি নিরাময়যোগ্য রোগকে প্রাণঘাতী করে তুলতে পারে; ইয়েমেনে কলেরার প্রাদুর্ভাব এর একটি প্রধান উদাহরণ।