উইকিভ্রমণ থেকে

কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ। কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হলে রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে যায় এবং এ হ্রদের সৃষ্টি হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র

পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে আমেরিকার অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৬২ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ ও ৫৪.৭ মিটার উচ্চতার এ বাঁধটি নির্মাণ করে। এ বাঁধের পাশে ১৬টি জলকপাট সংযুক্ত ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি পানি নির্গমন পথ বা স্প্রিলওয়ে রাখা হয়েছে। এ স্প্রিলওয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক ফিট পানি নির্গমন করতে পারে। এ প্রকল্পের জন্য তখন প্রায় ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হলেও পরে তা ৪৮ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

কাপ্তাই হ্রদের কারণে ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে যায় যা ঐ এলাকার মোট কৃষি জমির ৪০ শতাংশ। এছাড়া সরকারি সংরক্ষিত বনের ২৯ বর্গমাইল এলাকা ও অশ্রেণীভুক্ত ২৩৪ বর্গমাইল বনাঞ্চলও ডুবে যায়। প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের মোট এক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়।

প্রথমে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার কিলোওয়াট। প্রথমে ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১ ও ২ নম্বর ইউনিট স্থাপন করা হলেও পরে ১৯৬৯ সালের ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিটের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে মোট পাঁচটি ইউনিট চালু আছে যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।

পর্যটন[সম্পাদনা]

কাপ্তাই হ্রদের ঝুলন্ত ব্রীজ

প্রকৃতি প্রেমিরা বোট বা নৌকা ভাড়া করে হ্রদের জলে ভাসতে ভাসতে চারপাশটা দেখে নেওয়া যাবে। পাহাড় থেকে হ্রদের সৌন্দর্য দেখতে কাপ্তাই হ্রদ প্যারাডাইস পিকনিক স্পট থেকে ঘুরে আসা যাবে। দল বেঁধে নৌ বিহার কিংবা প্যাডেল বোটে চড়ে হ্রদ ভ্রমণ করার সুযোগও রয়েছে এখানে। এছাড়া স্পিডবোট/নৌকা রিজার্ভ নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ঘুরে দেখার পাশাপাশি রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, রাঙ্গামাটি শহরসহ আরও অনেক স্পট ঘুরে দেখা যাবে। কাপ্তাইয়ের কাছেই কর্ণফুলি নদীতে কায়াকিং করার ব্যবস্থা আছে। চাইলে সেই অভিজ্ঞতাও নেওয়া যাবে। ক্যাবল কারের চড়ার মজা নিতে চাইলে যেতে হবে শেখ রাসেল ইকোপার্কে। কাপ্তাই বিপিডিবি রিসিভসন গেইট হতে অনুমতি নিয়ে স্পিলওয়ে দেখতে যেতে হবে।

যাতায়াত[সম্পাদনা]

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন মানের বাসে করে সরাসরি কাপ্তাই যাওয়া যায়। প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও কাপ্তাই যাওয়া যায়। বদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর কাপ্তায়ের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ৮০-১২০ টাকা। সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মত। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম এসে বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই যাওয়া যায়।

বান্দরবান থেকে কাপ্তাই যেতে চাইলে রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটি গামী বাসে করে গিয়ে বড়ইছড়ি নেমে সিএনজি দিয়ে কাপ্তাই যেতে হবে। রাঙ্গামাটি থেকে সড়ক পথে বাসে কিংবা সিএনজিতে অথবা ট্রলার নৌকায় কাপ্তাই হ্রদ হয়ে কাপ্তাই বাজার যাওয়া যায়।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

কাপ্তাই হ্রদে মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে চাইলে সেখান থেকে দুপুর কিংবা প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে নেওয়া যাবে। কাপ্তাই এর কাছে আছে বেরাইন্যে হ্রদ শোর ক্যাফে, জুম রেস্তোরা, প্যারাডাইস ক্যাফে ইত্যাদি। কিংবা নিজের পছন্দের খাবার খেতে ঘুরে আসা যায় নৌবাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন ভাসমান রেস্তোরাঁ থেকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই রেস্তোরাঁ খোলা থাকে।

রাত্রিযাপন[সম্পাদনা]

কাপ্তাইয়ে রাত্রি যাপনের জন্য এখনো তেমন ভালো মানের বাণিজ্যিক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেনি। তাই রাত কাটানোর ইচ্ছা থাকলে আগে থেকেই কাপ্তাইয়ের সরকারি রেস্ট হাউস কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আসা উত্তম। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষ্যে সেনাবাহিনী, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউসগুলোতে কম খরচে রাত্রি যাপন করা যায়। হ্রদ প্যারাডাইস পিকনিক স্পটেও রাত্রি যাপনের সুযোগ রয়েছে তবে এজন্য বাড়তি অর্থ গুনতে হতে পারে। রাঙ্গামাটি কাপ্তাই এর কাছে হওয়ায় কিংবা ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই হলে রাঙ্গামাটি থাকা যেতে পারে।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]