উইকিভ্রমণ থেকে

দামতুয়া ঝর্ণা বা ডামতুয়া ঝর্ণা বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলায় অবস্থিত। এই ঝর্ণাটি একাধি নামে পরিচিত। ঝর্ণাটি মুরং এলাকায় অবস্থিত। মুরং ভাষায় ঝর্ণাটি যে ঝিরিতে অবস্থিত তাকে তুক অ বলে। তুক অর্থ ব্যাঙ এবং অ অর্থ ঝিরি। তুক অ অর্থ ব্যাঙ ঝিরি। ডামতুয়া অর্থ খাড়া আকৃতির দেয়াল যা বেয়ে ব্যাঙ বা মাছ উপরেউঠতে পারেনা। ওয়াজ্ঞাপারাগ অর্থ পাহাড় বা উচুঁ স্থান থেকে পানি পড়া। তুক অ ডামতুয়া ওয়াজ্ঞাপারাগ সহ ঝর্ণাটিকে একাধিক নামে ডাকা হয়। এখানে দুই দিক থেকে পানি পড়ার কারনে ঝর্ণা সহ খোলা স্থানটিতে চাঁদের আলোতে অন্য রকম সৌন্দর্যের কারনে স্থানীয় মুরং ভাষায়” লামোনই” ঝর্ণা বলা হয়। লামো অর্থ চাঁদ ও নই অর্থ আলো। লামোনই অর্থ চাঁদের আলো।

যাতায়াত[সম্পাদনা]

দুইভাবে দামতুয়া ঝর্ণায় যাওয়া যায়। বান্দরবন>থানচি হয়ে অথবা আলীকদম হয়ে। আলীকদম হয়ে দামতুয়া যাওয়া তুলনামূলক সুবিধাজনক। ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহন ও হানিফ এন্টারপ্রাইজ বাস সরাসরি আলীকদমে চলাচল করে। ঢাকা থেকে আলীকদম বাস ভাড়া ৮৫০ টাকা। এছাড়া কক্সবাজারগামী বাসেও যাওয়া সম্ভব। এজন্য আপনাকে কক্সবাজার হতে প্রায় দক্ষিণে চকোরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। অপরদিকে কক্সবাজার হতে দামতুয়া যেতে চাইলে কক্সবাজার হতে শুরুতে চকোরিয়া যেতে হবে। কক্সবাজার হতে চকোরিয়া বাস ভাড়া ৫০/৬০ টাকা। চকোরিয়া হতে এরপর যেতে আলীকদম। চকোরিয়া হতে আলীকদম যাওয়ার জন্য জিপ এবং বাস সার্ভিস রয়েছে। জিপে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭০ টাকা আর বাসে ৫০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত এই রুটে বাস পাওয়া যায়।

আলীকদম থেকে দামতুয়া ঝর্ণা[সম্পাদনা]

ঝর্ণায় যাওয়ার মেঠো পথ

আলীকদমে এসে সেখানে পানবাজার হতে মোটর বাইকে করে ১৭ কি.মি. আদুপাড়াতে যেতে হবে। এই আদুপাড়া থেকেই ট্র্যাকিং শুরু করতে হয়। মোটর বাইকে সেখানে যেতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া পড়বে। এছাড়া বেশি জন হলে আলিকদম থেকে জিপ ভাড়া করে যাওয়া যেতে পারে। আদুপাড়া যাওয়ার পথে ১০ কি.মি. পোঁছানোর পর সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে আইডি কার্ড এর ফটোকপি ও ফোন নম্বর জমা দিয়ে ভ্রমণের অনুমতি নোট হয়। ফেরার পথে বিকেল ৫ টার আগেই সেখানে আবার রিপোর্ট করতে হবে। সে জন্য যাওয়ার সময় সকাল ১০ টার আগে চেকপোস্ট অতিক্রম করতে পারলে স্বাচ্ছন্দ্যে ৫ টার আগে ঘুরে আসা সম্ভব।

আদুপাড়া যাওয়ার পর সেখান থেকে ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে। আদুপাড়ায় রাস্তের পাশেই গাইড সমিতির একটি চালাঘর আছে। সেখান গাইড ফি ১,০০০ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে একজন গাইড পাওয়া যাবে। যাত্রা শুরুর আগে চাইলে বাঁশের লাঠি নিয়ে নিতে পারেন, যাত্রাপথে এটি উপকার দেবে। ট্র্যাকিং করে যাওয়া আসা মিলিয়ে ৬ ঘণ্টার মত সময় লাগে। ট্র্যাকিং এর রাস্তা বেশ কিছু জায়গায় খুব ঢালু, তাই বৃষ্টির সময়ে এখানে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া প্রখর রৌদ্রে ট্র্যাকিং পানিশূন্যতাজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

দামতুয়া থেকে ফেরার পথে একটি পারা পড়বে যেটির নাম মেম্বার পাড়া। এই পাড়া ফেলে ডান দিকে সরু রাস্তা ধরে নেমে গেলে দেখা মিলবে ওয়াং-পা নামক ঝর্নার।

থাকার ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

ঝর্ণার কাছাকাছি থাকা গ্রামগুলিতে রাতে ক্যাম্পিং করা যেতে পারে। তবে এর কাছাকাছি কোন থাকার হোটেল নেই। আলিকদম উপজেলা সদরে থাকার জন্য হোটেল রয়েছে। এছাড়া ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামে চলে যেতে হবে।

  • 1 দ্যা দামতুয়া ইন, আলীকদম উপজেলা সড়ক, +৮৮ ০১৭৪৮ ৯১২১২৭, ইমেইল: আগমন: ১২.০০, প্রস্থান: ১১.০০নন এসি ঘর, গাড়ি পার্কিং ও কফারেন্সের সুবিধা এবং হোটেল সংলগ্ন রেস্তোরা রয়েছে ৳১,০০০

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

ট্র্যাকিং শুরু করার পূর্বেই দুপুরে খাওয়ার জন্য সেখান থেকে শুকনো খাবার নিতে পারেন। পথিমধ্যে আদিবাসী গ্রামে পেঁপে, আখ, কলা বা বাতাবী লেবু পাওয়া যায়, তবে সেটির উপর নির্ভর করা উচিত হবে না। আদুপাড়াতে কিছু চায়ের দোকান রয়েছে। তবে ভাত বা ভারী খাবার খেতে চাইলে যেতে হবে আলীকদমে। আলীকদমের খাবার হোটেল গুলো মাঝারি মানের। তবে দ্যা দামতুয়া ইন ও রেস্তোরাঁয় তিন বেলা বেশ ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।

  • 1 দামতুয়া ইন ও রেস্তোরাঁ, আলীকদম উপজেলা সড়ক, +৮৮০ ১৮৮৩ ৫৩৫২০০ রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত

পরবর্তিতে যান[সম্পাদনা]