উইকিভ্রমণ থেকে
পানাম নগরীর পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবহ দালান কাশীনাথ ভবন সন-১৩০৫

পানাম নগর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁতে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর - প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে। পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর -প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে বার ভূইয়ার দলপতি ঈশা খাঁ ১৫ শতকে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনারগাঁওতে। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

স্থলপথে[সম্পাদনা]

পানাম সিটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার মোগরাপাড়া পয়েন্টে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তরে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার অদূরে সোনারগাঁও থানার একটি নিকটতম শহর। ঢাকার অদূরে ২৭ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে এই শহরের অবস্থান।

সড়কপথ[সম্পাদনা]

গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক, দোয়েল ও সোনারগাঁ নামক বাসে উঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে। মোগরাপাড়া থেকে লোকশিল্প জাদুঘরের দূরত্ব প্রায় ২ কি.মি.। চাইলে রিক্সা অথবা সিএনজি তে করে যেতে পারেন। যদি তাড়াতাড়ি যেতে চান তাহলে সিএনজি নিয়ে নিন। তা নাহলে রিক্সাতে যাওয়াই ভাল। গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে রিক্সায় যেতে খারাপ লাগবেনা। তাছাড়াও নিজস্ব যানবাহন নিয়েও যেতে পারেন। জাদুঘরের সাথেই আছে পার্কিং স্থান। এখান থেকে পানাম নগর খুব কাছেই। চাইলে হেঁটেই যেতে পারবেন। বাস ভাড়া গুলিস্তান থেকে ৪০ হতে ৫০ টাকা হবে - পরিবহন কোম্পানী ভেদে।

রেলপথ[সম্পাদনা]

সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই এখানে; যেতে হবে ঢাকা বা নারায়নগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে বাসে বা সিএনজি অটোতে।

আকাশপথে[সম্পাদনা]

সরাসরি বিমান পরিবহন ব্যবস্থা নেই; যেতে হবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাসে বা সিএনজি অটোতে।

নৌপথে[সম্পাদনা]

এখানে সরাসরি নৌপরিবহনের ব্যবস্থা নেই।

দেখুন[সম্পাদনা]

পানাম নগরে ঢুকেই চোখে পড়বে একটি সরু রাস্তার ধারে সারি সারি পুরনো দালান। কোনটা দোতলা কোনটা আবার এক তলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্য নিদর্শন দেখে বোঝা যায় এখানে ধনী বণিক শ্রেণীর লোকেরা বসবাস করতেন। বাড়ীগুলোতে মোঘল ও গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায় এবং প্রতিটি বাড়ির কারুকাজ স্বতন্ত্র। কারুকাজ, রঙের ব্যবহার এবং নির্মাণকৌশলের দিক থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের প্রমাণ পাওয়া যায় এখানে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরি ব্রাকেট। জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার গ্রিল এবং ঘরে বায়ু চলাচলের জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বাড়িগুলোতে কাস্ট আয়রনের নিখুঁত কাজ আছে, এবং ইউরোপে ব্যবহৃত কাস্ট আয়রনের কাজের সাথে এই কাজের অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও মেঝেতে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ লক্ষ্যনীয়। নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও আছে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর।

এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরনো টাঁকশাল বাড়ি। পানাম নগরে টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। পানাম সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি বহির্বাটী এবং অন্যটি অন্দর-বাটি এবং বাড়ির সামনে উন্মুক্ত উঠান আছে। প্রতিটি বাড়ি পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত। নগরীর মাঝখান দিয়ে একটি সরু রাস্তা পানাম নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে। এই রাস্তার দুপাশেই মূলত পানামের বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে। সংস্কারের অভাবে ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লাগানো আছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভবনের জানালাগুলো ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পানাম পুলের কাছে দুলালপুর সড়কের খুব কাছেই রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক তৈরিকৃত নীলকুঠি। নীল চাষের নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে পানামের নীলকুঠি।

এছাড়া এখানে আছে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহীর শাসনামলে নির্মিত একটি মসজিদ। মসজিদটির নাম গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ। সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর থেকে পশ্চিম দিকে রয়েছে এই মসজিদ। মগরাপাড়া থেকে দক্ষিণ দিকে আরও কিছু ইমারত আছে যেমন বারো আউলিয়ার মাজার, হযরত শাহ ইব্রাহিম দানিশ মন্দা ও তার বংশধরদের মাজার, দমদম দুর্গ ইত্যাদি। পানাম নগরে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঈসা খাঁর ছেলে মুসা খাঁর প্রমোদ ভবন যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ফতেহ শাহের মাজার, সোনাকান্দা দুর্গ, পঞ্চপীরের মাজার, চিলেকোঠা সহ অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।

থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান[সম্পাদনা]

ঢাকার আশে পাশে হবার কারণে এখানে দিনে যেয়ে দিনেই ফিরতে পারবেন। রাতে থাকার জন্য এখানে কোন ব্যবস্থা নেই। রাতে থাকতে হলে একটু দূরে সোনারগাঁ উপজেলা সদর বা নারায়ণগঞ্জ শহরে এসে থাকতে হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা সদরে থাকার জায়গার নাম ও ঠিকানা দেয়া হলোঃ

  • রয়েল রিসোর্ট - কাশনগর দিঘীরপাড়, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ। মোবাইল: 01709371680, 01709 371 681, 01709 371 682। Email- info@sonargaonroyalresort.com, reservations@sonargaonroyalresort.com। কর্পোরেট অফিস - রয়েল প্লাজা (3য় তলা), এইচ -8/এ, আর -4, ধানমন্ডি, ঢাকা- 1205, বাংলাদেশ। মোবাইল: 01715 724 533।

নারায়ণগঞ্জের কিছু হোটেলের নাম ও ঠিকানা দেয়া হলোঃ

  • হোটেল মেহেরান - সনাতন পাল লেন রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • হোটেল সোনালী - ১নং রেলগেট, সনাতন পাল রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • হোটেল নারায়ণগঞ্জ - ১নং সিরাজউদ্দৌল­া রোড, নারায়নগঞ্জ।
  • হোটেল সুগন্ধা - লিয়াকত সুপার মার্কেট, ১২/২০ দিগু বাবুর বাজার, নারায়ণগঞ্জ।
  • হোটেল মীনা - ১৬ মহিম গাঙ্গুলী রোড, টানবাজার, নারায়নগঞ্জ।

খাওয়া-দাওয়া[সম্পাদনা]

স্থানীয়ভাবে কিছু রেস্তোরা রয়েছে এখানে; তবে দাম-দর করে নিতে হবে সেখানে - অত্যধিক মূল্য নেয়ার অভুযোগ রয়েছে এসব দোকানে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহর ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে হওয়ায় সেখানে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। একটু দূরে সোনারগাঁ উপজেলা সদরেও যেতে পারেন।

সোনারগাঁ উপজেলা সদরের কিছু হোটেলের নাম ও ঠিকানা দেয়া হলোঃ

  • কলাপাতা রেস্তোরা - সোনারগাঁ সপিং কমপ্লেক্স ২য় তলা, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। মোবাইল: ০১৭৬০ ১৪৪ ১৪৪।
  • খাজা রেস্তোরাঁ - মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। মোবাইল: ০১৮১৫ ৭০৮ ০৭৯।
  • রয়েল রিসোর্ট - কাশনগর দিঘীরপাড়, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ। মোবাইল: 01709371680, 01709 371 681, 01709 371 682। Email- info@sonargaonroyalresort.com, reservations@sonargaonroyalresort.com। কর্পোরেট অফিস - রয়েল প্লাজা (3য় তলা), এইচ -8/এ, আর -4, ধানমন্ডি, ঢাকা- 1205, বাংলাদেশ। মোবাইল: 01715 724 533।

নারায়ণগঞ্জের কিছু রেস্তোরার নাম ও ঠিকানা দেয়া হলোঃ

  • মনির রেস্তোরা - ২নং রেল গেট, বি.বি. রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • ফুড গার্ডেন রেস্তোরাঁ - ২নং রেল গেট, বি.বি. রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • আজমীরী বিরানী হাউস - ২নং রেল গেট, বি.বি. রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • আলহাজী বিরানী হাউস- ২নং রেল গেট, বি.বি. রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • আমান হোটেল - রহমতউল­াহ মুসলিম ইনস্টিটিউট, রেলগেট, নারায়ণগঞ্জ।
  • আল­াহু রেস্তোরা - রহমতউল­াহ মুসলিম ইনস্টিটিউট, রেলগেট, নারায়ণগঞ্জ।
  • খাবার ঘর - আলী আহমেদ চুনকা সড়ক. নারায়ণগঞ্জ।
  • আল হাদীস - আলী আহমেদ চুনকা সড়ক. নারায়ণগঞ্জ।
  • পিন্টু সুইটস - ১২৫ এল. এন রোড, নারায়ণগঞ্জ।
  • জন খাবার - ১২৫ এল. এন রোড, নারায়ণগঞ্জ।

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন